তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(০৬)

0
47

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(০৬)
________________________

১৫.
মিঠির মামীরা নিজেদের ফ্ল্যাটে ফিরতেই হঠাৎ মিঠিদের ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে শুনতে পেলেন মোশাররফ সাহেব আর মনিরা খাতুন ভীষণ ঝগড়া লেগেছেন,সম্ভবত কালরাতের ব্যপার নিয়ে। উনাদেরকে কিছু না বলে ফিরে গেলেন বাসায়। বড় মামী উনার স্বামীকে বললেন,”মেয়েটাকে এইভাবে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে দিয়ে কী ঠিক কাজ করেছেন?”

মতিউর রহমান বললেন,”কী হয়েছে?”

“ছেলেটাকে মে’রে অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। মাথা থেকে পা অব্ধি কিছুই রাখেনি। নিচে আসার সময় শুনলাম,মিঠির বাবা-মা ঝগড়া করছে। হয়তো মিঠির বিয়ে নিয়ে।”

চুপ রইলেন মতিউর রহমান।

“মিঠি সুন্দরী,স্মার্ট,মডার্ন মেয়ে,ঢাকার নাম্বার ওয়ান সেরা কলেজে পড়াশোনা করছে। খুব ভালো স্টুডেন্ট মিঠি। তাছাড়া ক্যারিয়ার গড়লে আরো ভালো জায়গায়,ভালো পাত্রের সাথে বিয়ে হতো। ওর সাথে এটা করা ঠিক হয়নি। মিঠি আরো ভালো ছেলে ডিজার্ভ করে আমার মতে। এছাড়াও মেয়েটার বয়স একদম কম।”

“শেহজাদ কী খারাপ ছেলে?”

“আমি তা বলছি না। যার যার অবস্থান থেকে সে উত্তম। তবে মেয়েটার বয়স কম। এখনো ছোটো। আমার মতে শেহজাদের সাথে যায় না।”

“তো এতোক্ষণ আমায় জ্ঞান দিচ্ছিলে?”

“জ্ঞান দিতে যাবো কেনো! যা সত্যি তাই বলছি। আর মালিকানা সূত্রে এই বাড়িটা মিঠির,ওর বাবার না। যার বাসায় থাকছেন,যার বাড়ি ভাড়া তুলে তার টাকা-পয়সায় চলছেন তার সাথে কিভাবে এতো বড় বেইমানি করতে পারলেন? আর মিঠির আপন মামা জানতে পারলে আপনাকে ছেড়ে দিবে ভেবেছেন?”

কষিয়ে একটা থাপ্পড় মা’র’লে’ন স্ত্রীর গালে। হতভম্ব হলেন মিঠির মামী।

“বেয়াদব মহিলা! বেইমানি না করলে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করা লাগতো সবার। এই যে এতো বড় বাড়ি,সবটা মেয়েটাকে তার মা দিয়ে গেছে। আঠারো বছর হলেই এই সম্পূর্ণ বাড়িটা পেয়ে পাবে মেয়েটা। এজন্যই কন্ট্রোলে রেখেছি মিঠিকে। আরো ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারতাম,কিন্তু ইচ্ছে করে দিইনি। মনিরাও চায়নি। তার কারণ বেশি বড় ঘরে বিয়ে দিলে মিঠি এই বাড়ি পেয়ে গেলে অবশ্যই স্বামীর শলাপরামর্শে দখল করতে চাইবে,তখন আমরা থাকবো কোথায়?তোর বাপের বাড়িতে?এইজন্য শেহজাদের থেকে বিয়েটা দিয়ে দিয়েছি,কারণ ছেলেটাকে মে’রে ফেললেও কারো ক্ষমতা নেই আমাদেরকে কিছু করার। আর ছেলেটা চাপা স্বভাবের,দেখো না মিঠির অত্যাচার সহ্য করে চুপ রয়েছে। এছাড়াও অজপাড়া গাঁয়ের এক সাধারণ পরিবারের ছেলে সে। আমাদের কিছু করতে পারবে না কেউ। আর আমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানা আছে সবার। গ্রামের ছেলে,আমাদের ক্ষমতার সাথে ওর বাপের সেই সাহস কুলাবে না। ওদের দু’জনকেই কন্ট্রোল করছি এজন্যই। আর মিঠি আর মিঠির বাবাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সেই ছোট থেকেই কন্ট্রোল করছি মূলত এই বাড়িটার জন্যই। এতো বড় বাড়ি কিভাবে ছেড়ে দিই? মাসে কতো লাখ টাকা ভাড়া আসে এই বাড়ি থেকে সেই খবর আছে তোমার? আর মনিরাকেও এইজন্য জোর করে বিয়ে দিয়েছি আমার চাচাতো ভাই অর্থাৎ মোশাররফের কাছে। মোশাররফ তো বিয়েই করতে চায়নি। ম’রা বউয়ের স্মৃতি আঁকড়ে পাগলের মতো রয়েছিলো। আরেকটা কথা হলো,শেহজাদের সন্তান হবে না। তাই মিঠিও মা হতে পারবে না। তাই বাড়িটাও তাদের সন্তান’রা পাবে না। এজন্যই যেভাবেই হোক শেহজাদের কাছে মিঠিকে রাখতেই হবে।”

“কিন্তু মিঠি তো ডিভোর্স দিতে চাইছে। শেহজাদকে মানতে চাইছে না। শেহজাদের ঘরের মধ্যে ভাঙচুর করে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে।”

“করুক! সেটা তাদের ব্যপার। এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আসল কথা হলো,মিঠির আঠারো বছর পূর্ণ হওয়া অব্ধি ডিভোর্স করানো যাবে না। আঠারো বছর পূর্ণ হলেই কৌশলে দলিলে সাইন করিয়ে নিবো। এরপর ডিভোর্স হলে আরো ভালো। কারণ মিঠির দেনমোহর ত্রিশ লাখ করেছি। মিঠি তো নেবে না,আর নিতে দেবোও না। তাই ওই টাকাটাও আমরা পাবো।”

মিঠির মামী চুপ করে রইলেন। আজকাল মানুষ দূর্বলের সাথে বীরত্ব দেখায়,আর সবলের সাথে চামচামি করে। এই সমাজে কিছু মানুষ রুপে অমানুষ আছে যাদের উপর থেকে কখনো চেনা যায় না। যেমন এই মানুষগুলো। অন্যকে ঠকিয়ে নিজেকে সঠিক মনে করে,আর অমানুষও হয়েও সমাজের চোখে নিজেকে মানুষ দাবী করে। ইচ্ছে করছে সব শেহজাদ আর মিঠিকে বলে দিতে। অন্তত মিঠির মায়ের বাড়িতে থেকে,তাদের পুরো বাড়ির ভাড়া তুলে,খেয়ে-পরে আবার এতো বড় বেইমানি! মিঠির মামীর সহ্য হলো না। একটা নিরীহ,নিরপরাধ ছেলেকে ঠকানো হলো। মিঠি না হয় ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে। তার সমস্যা হবে না। মেয়ে সুন্দরী আছে,ভালো একটা জায়গায় বিয়ে হয়ে যাবে। কিন্তু বিনাদোষে নিরীহ,সহজ-সরল ছেলেটাকে ঠকানো হবে,হলো ও। ত্রিশ লাখ টাকা দেনমোহর দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। স্বামীর এইসব অপকর্ম আজ অনেকগুলো বছর যাবৎ দেখে আসছেন তিনি। কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারেন না। প্রতিবাদ করতে গেলেই মা’র খেতে হয়। মাঝে মাঝে উচিত জবাব দিতে গিয়েও চুপ হয়ে যান তিনি। কারণ তিনি জানেন তিনি বললে হয়তো অল্পই বলতে পারবেন এর বেশি না। আর আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলে তিনিই এর উত্তম বিচার করবেন। সেই আশায়-ই চুপ থাকেন। আল্লাহ’র ধরা বড় ধরা। তিনি ছাড় দেন তবে ছেড়ে দেন না। উনার বিচার অনিবার্য। আর সেদিনের অপেক্ষায় আছেন তিনি।

১৬.
বাটন ফোন থেকে বুয়াকে কল করে ডেকে আনলো শেহজাদ। বাসার অবস্থা দেখে গা গুলিয়ে উঠলো বুয়ার নিজেরই। একদিনেই কি হাল অবস্থা করেছে! কালও সুন্দর করে ধুয়ে-মুছে,ঝেড়ে-ঝুড়ে পরিষ্কার করে দিয়ে গেছে। শেহজাদ খুবই নাক-মুখ তোলা মানুষ। কালো হলে কি হবে,একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। সব ঝেড়ে-মুছে,পরিষ্কার করে ধুয়ে রান্না-বান্না করে দিয়ে গেলো বুয়া। যদিও বুয়ার হাতের রান্না শেহজাদ কখনো খায়নি কিংবা পছন্দ করে না। কিন্তু এখন তো শবনম নেই,তাই বাধ্য হয়ে খেতে হবে। এছাড়াও মিঠি খেলেও সে খায়নি। তাই একসাথে দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম নিলো।

১৭.
সন্ধ্যার আগে ঘুম ভাঙ্গলো মিঠির। কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে রইলো আর নীরবে কান্না করলো। শেহজাদ দেখতে পেলেও কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলো না। কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলেই তো ক্ষেপে উঠবে ক্ষ্যাপারানী। তাই চুপ রইলো। রাতে সবকিছু ওভেনে গরম করে স্বাভাবিক হয়ে সরল গলায় ডাকলো,”মিঠি,উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও,দুপুর থেকে কিছু খাওনি। এখন খাবার খাবে।”

কিছু বললো না মিঠি। চুপ করে শুয়ে রইলো। সংকোচবোধ করে মিঠির কপালে হাত রাখতেই চমকে উঠলো। শরীরে এখনও ভীষণ জ্বর। অসময়ে বৃষ্টিতে ভেজার কারণে জ্বর ছাড়ছে না। ভাবলো কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। মিঠি হঠাৎ হাঁচি দিয়ে উঠলো। ঠাণ্ডা লেগে গেছে মেয়েটার। হাত ধরে উঠিয়ে বসালো। মুখের সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে কোমল গলায় বলল,”চলো ফ্রেশ হবে। তোমার শরীরে জ্বর এসেছে।”

কর্নপাত করলো না মিঠি। এবার শক্ত গলায় বললো,”কী বলেছি? উঠো ফ্রেশ হও।”

এবার মিঠি উঠে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলো। শেহজাদ বুঝতে পারলো মিঠির সাথে নরম হয়ে কথা বললে গুরুত্ব দেয় না। সিদ্ধান্ত নিলো নরম কথায় কাজ না হলে এখন থেকে শক্ত কথার আশ্রয় নিবে।

“টেবিলে চলো।”

“খিদে নেই।”

বিরক্ত হলো শেহজাদ।

“ঘাড়ত্যাঁড়া মেয়ে একটা! সবকিছুতেই ঘাড়ত্যাঁড়ামির স্বভাব।”

হাত ধরে টেবিলে এনে চেয়ারে বসালো। প্লেটে ধোঁয়া উড়া গরম ভাত বেড়ে প্রথমে বেগুন ভাজা দিলো,তারপর এক পিস লেবু দিলো।

“বৃষ্টির দিন গরম গরম বেগুন ভাজা আর লেবু দিয়ে ভাত মাখিয়ে খেতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে তোমার। আর জ্বরের মুখে আরো ভালো লাগবে। নাও ট্রাই করো। আর ঈদার্নিং বাসার রান্না খাই না বলে বাজার করাও হয় না,এতোদিন রেস্তোরাঁয় খেতাম। বুয়ার হাতের রান্না আমার পছন্দ নয়। তবে আজ না পারতেই খেতে হচ্ছে আর আজ যা ছিলো ফ্রিজে তাই দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি। পায়ের ব্যথায় বাজারও করতে পারিনি।”

মৃদু হাসলো শেহজাদ। কিছু বললো না মিঠি। তবে শেহজাদের জন্য খারাপ লাগলো। খেতে ইচ্ছে করছে না তার। ভাত নাড়াচাড়া করছে। বিরক্ত হলেও শেহজাদ চুপ রইলো। মিঠির প্লেট টেনে নিয়ে লেবুর রস মাখিয়ে খুব সুন্দর করে বেগুন ভাজা দিয়ে গরম গরম ভাত মাখিয়ে বলল,”মিঠি হাঁ করো।”

ভণিতা করলো না মিঠি,একটু এগিয়ে হাঁ করলো। কথা শোনায় শেহজাদের ভালো লাগলো। আস্তে আস্তে খুব যত্ন নিয়ে খাওয়াতে লাগলো। মিঠির ভালো লাগছে খেতে। এক পিস ইলিশ ভাজা নিতেই মিঠি বলল,”ইলিশ মাছ খাই না।”

“কেনো?”

“কাঁটা! গলায় আঁটকে।”

এমনভাবে বললো মিঠি,শেহজাদের কাছে ভীষণ আদুরে লাগলো।

“পছন্দ করো?”

মাথা নাড়ালো। পছন্দ করে। মৃদু হাসলো শেহজাদ। মিঠি তাকালো। শেহজাদ খুব সুন্দর করে হাসে। কালো মানুষের অনেক ক্ষেত্রে হাসি সুন্দর কিংবা চোখ সুন্দর অথবা মুখটা মায়াবী হয়। শেহজাদের হাসি সুন্দর আর মুখটা মায়াবী,দাঁতগুলোও মুক্তোর মতো ধবধবে সাদা। তবে দাঁতের গঠন খুব সুন্দর! খুব যত্ন নিয়ে আস্তে আস্তে কাঁটা বেছে মিঠিকে ইলিশ ভাজা খাওয়ালো। জ্বর মুখে গরম ভাতের সাথে বেগুন ভাজা,ইলিশ ভাজা খেতে মিঠির খুব ভালো লাগলো। সে খুব তৃপ্তি নিয়ে খেলো। হঠাৎ একটা হাফ প্লেটের দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করলো,”এটা কী?”

“এটা কাঁকরোল,পটল আর মিষ্টি কুমড়ো ভাজা। বৃষ্টির দিনে ইলিশ,বেগুন,কাঁকরোল,পটল আর মিষ্টি কুমড়ো ভাজা খেতে আমি খুব পছন্দ করি।”

“ওহ।”

“খেয়েছো কখনো?”

“না।”

“ট্রাই করবে একবার?”

মাথা নাড়ালো মিঠি। মৃদু হাসলো শেহজাদ। কাঁকরোল,পটল আর মিষ্টি কুমড়ো ভাজা নিয়ে আস্তে আস্তে ভাতের সাথে মেখে মিঠিকে খাওয়াতে লাগলো। কেনো যেনো শবনমকে মনে পড়ছে। মুখটা হঠাৎ মলিন হয়ে গেলো। শবনম খুব যত্ন নিয়ে শেহজাদের জন্য এইসব করতো। শবনম জানতো শেহজাদ বৃষ্টির দিনে খিচুড়ির সাথে,মাংস,নানান রকমের সবজি ভাজা,ভর্তা এইসব পছন্দ করতো। খুব যত্ন নিয়ে করতো শবনম। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মলিন হেসে মিঠিকে খাইয়ে তারপর মাংস দিয়ে খুঁটে খুঁটে খাওয়াতে লাগলো। মিঠির ভালো লাগলো। আচমকা জিজ্ঞেস করলো,”শবনমকে ও এইভাবে খাওয়াতেন? আপনার পূর্ব থেকে এক্সপেরিয়েন্স আছে তাই না?”

মুখ ফসকে সবে হ্যাঁ বলতে নিলো শেহজাদ। আসলেই খাওয়াতো। তারা খুব সুখী ছিলো। কিন্তু সন্তানের জন্যই তাদের সুন্দর সম্পর্কটায় চিঁড় ধরেছিলো। নিজেকে সামলে পরক্ষণেই বলল,”আরে না! আমার এতো সময় কোথাই! সারাদিন অফিসে থাকতাম। হিসাব-নিকাশের কাজ করতো হতো বসে বসে। একটু এলোমেলো হলেই মাথা গরম থাকতো। তাছাড়া সেই অফিস থেকে বাসায় ফিরতাম রাত এগারোটা সাড়ে এগারোটায়। খুব ক্লান্ত থাকতাম। কোনমতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। মূলত,এইজন্যই স্বাস্থ্য বেড়ে গেছে আমার। তাছাড়া ওকে খাওয়ানো তো থাক দূরের কথা সময়ও দিতে পারতাম না। এছাড়াও তুমি তো আমার থেকেও বয়সে খুব ছোটো। আর তোমাকে প্রিন্সেস ডলের মতো দেখতে লাগে আমার কাছে। তাই ভীষণ আদুরে লাগলো তোমাকে। তাই ইচ্ছে করলো তোমাকে খাইয়ে দিতে। আমি আবার যাকে তাকে খাইয়াই না। এই ফাস্ট তোমাকেই খাওয়ালাম। তাছাড়া দেখো বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে! ঘরের মধ্যে আমরা দু’জন শুধু। তাও আবার একসাথে ডিনার করতে বসেছি। খুব সুন্দর শীতল একটা রোমান্টিক ওয়েটার। তাই ভাবলাম এতো সুন্দর ওয়েদার তো মিস করা যায় না। বরং কাজে লাগাই।”

শেহজাদের কথাগুলো মিঠি বিশ্বাস করলো না কি-না কে জানে তবে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। একপলক তাকালো শেহজাদ। দেখলো কি সুন্দর মায়াবী,বড় বড় টানা টানা একজোড়া চোখ। মেয়েটার এতো সুন্দর চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে একজনম পার করে দেওয়া যাবে কোন অভিযোগ ছাড়াই। চোখ নামিয়ে ফেললো শেহজাদ। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। মেয়েটাকে চিত্রনায়িকা সুনেত্রা উপাধি দিলেও বোধহয় শেহজাদের কাছে কম পড়ে যাবে। এতো বড় বড় মায়াবী চোখের সে কি গভীর চাহনি! আমতা আমতা করে শেহজাদ বলল,”ওর কথা না তুললেই ভালো। ওতো নেই। ওর কথা তোলাটাও বোকামি। আর সে আমার অতীত,আমার জন্য পরনারী। তাকে ভাবাটাও এখন আমার জন্য পাপ। তার কথা ভুলে যেতে চাই মিঠি। প্লিজ আমাদের মধ্যে ওর কথা টেনে নিয়ে এসো না।”

মিঠি যেমন তাই তাকে তেমন করে বুঝ দিলো। তার মনের খবর মিঠিকে জানতে দেওয়াটা বোকামি। তার মনে কি আছে সেটা শুধু সে জানবে। মিঠিকে তার মতো বুঝ দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করলো। তবে মিঠির ভাবমূর্তি উপলব্ধি করতে পারলো না শেহজাদ। কখন না জানি রণচণ্ডীর রূপ ধারণ করে ভাতের প্লেট তার গায়ে ছুঁড়ে মে’রে দেয়। এই মেয়ের তো আবার ছোড়াছুড়ির অভ্যাস। যা পাবে ছুঁড়ে দিবে। এবার কোথায় গিয়ে এট্যাক হলো তা চিন্তা করবে না। ভেতরে ভেতরে আতঙ্কিত হলো শেহজাদ। হঠাৎ আইডিয়া করলো,নারীদের রূপের প্রশংসা করলে তারা মোমের মতো গলে যায়। এটা শেহজাদ খুব ভালো করে জানে। কারণ শবনমকেও যখন প্রশংসা করতো তখন শবনম ও গলে যেতো। নিজেকে ধাতস্থ করলো। মৃদু হেসে বলল,”মিঠি তোমার চোখজোড়া ভীষণ সুন্দর! সত্যি এমন চোখ কোথাও দেখিনি।”

“কে বলেছে?”

“আমি।”

মৌন রইলো মিঠি।

“তোমাকে সুনেত্রা উপাধি দিলে মন্দ হবে না মিঠি। আল্লাহ প্রদত্ত তুমি উত্তম নেত্রের অধিকারী।”

“শবনমকেও সুনেত্রা ডাকতেন?”

শেহজাদ বুঝতে পারলো মিঠি এখন তেঁতে উঠবে।

“আরেহ ওর চোখ সুন্দর নাকি! ওর চোখগুলো গরুর মতো দেখতে। আর যাকে তাকে এতো সুন্দর একটা নাম দিলে হয়ে গেলো নাকি! যে যেটার যোগ্য তাকে সেটাই বলতে হয়। আমার মতে তুমি সুনেত্রের অধিকারী। তাই তোমাকে সুনেত্রা উপাধি দেওয়াটা ভুল হবে না। তবে তুমি চাইলে তোমাকে সুনেত্রা বলে ডাকতে পারি! নামটা তোমার চোখের সাথে পারফেক্ট আর স্পেশ্যাল। তাছাড়া আমার কাছে তোমার চোখজোড়া ঠিক চিত্রনায়িকা সুনেত্রার মতোই লাগছে দেখতে! সুনেত্রার চোখের গঠন,কাঠামো,আকৃতি আর আইল্যান্স ঠিক যেমন রঙের তোমারটাও সেইম একই রকমের। হয়তো আমি ঠিক চোখের আইল্যান্সটার কালার বলতে পারছি না; কিন্তু ঠিক সেইরকম এবং চোখের আকৃতি গঠন সেমই একই রকম। ইয়া বড় বড়,জীবন্ত,মায়াবী চোখ তোমার। তোমার চোখগুলো যেনো কথা বলে। মিঠি,তোমার চোখগুলো দেখার সাথে সাথেই আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! আচ্ছা,তুমি আয়না দেখো কিভাবে?”

চট করে শেহজাদের চোখের দিকে তাকালো মিঠি। নিজের জন্য মুগ্ধতা দেখতে পেলো। দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেললো। মিঠির মনে হলো শেহজাদ মিথ্যে বলেনি! এমনিতেই সবাই বলে তার চোখজোড়া সুন্দর! বিশ্বাস না করলেও শেহজাদের মুখ থেকে শুনে এবার শিউর হলো। তবে শেষ কথাটায় মিঠির কেমন যেনো অচেনা একটা অনুভব হলো।

“আমি আর খাবো না।”

“এটাই শেষ।”

মুখে নিলো মিঠি। পানি পান করে উঠে গেলো। শেহজাদ দ্রুত নিজের খাবার শেষ করলো।
_____________

চলবে~
কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here