যাতনা_আমার #সানজিদা_ইসলাম_সূচনা #পর্ব: ১১

0
50

#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব: ১১

( কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ।)

ইনায়া আর নিধি জলদি ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে আজ। ইশান ড্রাইভ করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের। নিধি একটু পর পর এটা সেটা বলে ইশানের সাথে হাসছে। ইনায়া চুপচাপ বসে ভাবছে। মিজানুল করিম তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, ফাহাদ এসে হোস্টেলর সব ফর্মালিটি ঠিক করে যাবে। তাকে জলদি গিয়ে ফাহাদের সাথে দেখা করতে। ইনায়া, সোহানা আর নাহিদ মির্জার সাথে এই বিষয়ে কথা বলে এসেছে। সোহানা প্রথমে গাইগুই করলেও ইনায়ার যুক্তির উপর কথা বলতে পারেনি। সে চায়না নাভান কে ফেস করতে। সব শুনে নাহিদ মির্জাও চুপ করে ছিলেন। সে বুঝতে পারছে না কিছু। ইনায়া চলে যাবে। সোহানাও রাগ করে বসে আছে। নাভানও আসবে কয়দিন পরে। কি জানি হয়। তারা একটা এতিম মেয়েটাকে ভালো রাখতে পারেননি। তিনি ইনায়ার কাছে অনেক লজ্জিত ভাবে মাথা নুইয়ে ছিলেন। আচমকা নিধির ডাকে ধ্যান ভাঙে ইনায়ার। সে নিঃশ্বাষ ফেলে নিধির দিকে তাকায়।

-” ভাবিইই? কই হাড়িয়ে গেলে? কখন থেকে ডাকছি। ”

-” আমাকে আর ভাবি না ডাকলে হয় না? তুমি এখন থেকে, নাম ধরে ডেকো। ”

ইনায়ার কথায ইশান আর নিধি দুজনেই, তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়। নিধির মিষ্টি মুখটা আধারে ডেকে যায় তৎক্ষনাৎ। ইশান মিরর গ্লাসে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। দুজনের এমন তাকানো তে, অসস্থিতে পরে যায় ইনায়া। মুখটাকে মলিন করে বলে ওঠে,

-” আসলে, কদিন পরেই তো তোমার ভাইয়ের সাথে ডিভোর্স। তখন ভাবি ডাকলে কেমন দেখায় না? ”

-” আমি তেমাকে ভাবিই ডাকবো। এতে তোমার সমস্যা হলেও, আমার কিছু করার নেই স্যরি। ”

নিধি চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠল। ইশান নিধির কথার প্রেক্ষিতে ভয়ংকর ধমক দিয়ে বলল,

-” আজকে থেকে নাম ধরেই ডাকবি। যেখানে তোর ভাইয়ের দেখা নেই। সেখানে ভাবি কিসের? আর লিসেন ভাবি! এখন থেকে তোমাকে আর ভাবি বলবো না। শুধু তুমি বলে সম্মোধন করবো। আমি জানি, ভাবি ডাকলে ভাইয়ার কথা মনে পরে যায় তোমার। ”

ইনায়া হালাকা হেঁসে ইশানের দিকে তাকায়। এই লোকটার সাথে তার, কখনো বেশি কথা হয়নি। ইশান তার থেকে বয়সে অনেক বড়। এতো বড় ছেলে তাকে ভাবি ডাকতো। এটা ইনায়ার কাছে অসস্থিতে লাগতো খুব। সে সব সময়ই ইশান কে এড়িয়ে চলতো।

-” ধন্যবাদ ভাইয়া। আর নিধি? তুমি প্লিজ নাম ধরেই ডেকো। ”

করুন কন্ঠে বলে উঠে ইনায়া। যেখানে স্বামীই নেই সেখানে স্বামীর বাড়ির পদবি দিয়ে কি করবে সে? এর চেয়ে ভালো আস্তে আস্তে মায়া কাটানো। নিধি তখন ইশানের বকা খেয়ে ঠোঁট উলটে দিয়েছিল প্রায়। গম্ভীর মুখে সে কাঠকাঠ গলায় বলে,

-” আমি তোমাকে ভাবিই ডাকবো। ব্যাস আর কিছু শুনতে চাইনা আমি। ”

ইশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইনায়া তাকে ইশারায় চুপ করায়। নিধি কে আরও কিছু বললে এই মেয়ে কেঁদে দুনিয়া উলটে ফেলবে। তাই আর কিছু বলে নিধিকে ঘাঁটল না ইশান। বাকিটা রাস্তা নিরবতা দিয়ে কেটে গেল তাদের। ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামতেই নিধি মুখ ফুলিয়ে বের হয়ে যায়। ইনায়া ফোন বের করে ফাহাদের নাম্বরে কল ঢুকাতেই, ফোন রিসিভ করে ফাহাদ। তারপর শান্ত স্বরে বলে ওঠে,

-” ভাল আছো ইনায়া? ”

-” আলহামদুলিল্লাহ! ভাল আছি। আপনি কোথায় ভাইয়া? ”

ইনায়ার কথায় ফাহাদ প্রথমে কথা ঘুড়িয়ে বলে,

-” আসলে,আমার ছোট বোন তিথি। তার রুমমেট হবে তুমি। আমার মনে হলো, একজন চেনা মানুষ তোমার সাথে থাকার দরকার। তিথি অনেক রাগী আবার ফ্রেন্ডলিও, তোমার সাথে মিশে যাবে সহজেই। তুমি একটু মানিয়ে নিও। ”

-” সমস্যা নেই কোনো। আমি ঠিক মানিয়ে নেব। ”

ফাহাদ ফোনের ওপাশে থেকে কিছুটা আমতা আমতা করে বলে ওঠে,

-” আসলে ইনায়া আমি আজকে আসতে পারছি না। একটু সিক আছি। আমার লোক পাঠিয়েছি, তোমার কোনো সমস্যা নেই তো? ”

-” না কোনো সমস্যা নেই। আপনি কি বেশি অসুস্থ ভাইয়া? কি অসুখ করেছে? ”

ইনায়ার কথায় ফাহাদ মুখ কুঁচকে ফেলে। কি অসুখের কথা বলবে এখন? তার তো কোনো রোগ নেই। শুধু মাত্র গতকালকের গরম গরম ছ্যাঁকা খাওয়া ছাড়া। সে এখন দিব্যি ঘরের দরজা জানালা দিয়ে বসে আছে। বাবার সামনে কিছুতেই পড়বে না আজ। ফাহাদ ইনায়া কে তড়িৎ গতিতে বলে ওঠে,

-” আসলে, আমার একটা কল আসছে ইনায়া। ফোনটা রাখতে হবে স্যরি। তুমি এবার হলের গেইটের সামনে যাও। আমার লোকজন দাড়িয়ে আছে। বাই, ভালো থেকো। ”

বলেই চট করে ফোন রেখে দেয় ফাহাদ। ইনায়া আর কিছু বলার মতো পায় না। ফোন রেখে ইশান কে সব বলে ইনায়া।

-” ভাইয়া আপনি চলে যান। আমি নিধি কে নিয়ে ঠিক খুজে বের করব। ”

ইশান আর রা করলো না। আজকে অফিসে ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। সোহানা আর নাহিদ মির্জা অফিসে আজকাল তেমন যায় না। তার দরুন প্রচুর কাজের চাপে আছে ইশান। সে নিধিকে একবার আপাদমস্তক দেখে, ইনায়া কে সম্মতি জানিয়ে বিদায় নেয়। ইনায়া নিধির হাত চেপে ধরে, হলের দিকে এগিয়ে যায়। মেইন গেইটের সামনে আসতেই পা থেমে যায় ইনায়ার। তড়িৎ গতিতে নিধিকে নিয়ে একটা বড় গাছের পিছনে লুকিয়ে পরে ইনায়া। নিধি হকচকিয়ে ইনায়াকে প্রশ্ন করে,

-” কি হলো ভাবি? এখানে দাঁড়ালে কেনো? চলো সামনে যাই। ”

ইনায়া নিধির কথার জবাব না দিয়ে সামনে তাকায়। রাস্তার একপাশে, গাড়ির সামনে সঙ্গপাঙ্গ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জায়ান। পরনে কালো পাঞ্জাবি আর তার পিছনের কলারে ঝুলে আছে কালো চশমা। চুল গুলো সুবিন্যস্ত ভাবে কপালে ছিটিয়ে আছে। আর ঠোঁটে গোজা সিগারেট। বাতাসের সাথে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে দিচ্ছে। আর এমন বিরক্তি মুখে আসেপাশে তাকাচ্ছে। যেন কেনো রাজ কুমার ভুল করে বস্তিতে চলে এসেছে। ইনায়া জায়ান কে দেখে মুখ বাকায়।

-” এই সন্ত্রাসী টা এখানে কি করছে?

ইনায়ার কথায় ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে নিধি।

-” কই সন্ত্রাসী? কি বলছো তুমি? ”

-” ওই যে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সন্ত্রাসী। তুমি জানো না ও কতো খারাপ। সেদিন তো এর কথাই তোমাকে বলেছিলাম। ”

নিধি মনে করার চেষ্টা করে। ইনায়া তাকে বলেছিল। তার মামার ছোট ছেলে নাকি সন্ত্রাসী। নিধি ভালো করে জায়ানকে দুর থেকে পরক্ষ করে। তারপর অবাক হয়ে ব’লে,

-” এই হ্যান্ডসাম ছেলেটা সন্ত্রাসী? বিশ্বাস হচ্ছে না। ”

-” হ্যান্ডসাম না ছাই? আস্ত গুন্ডা একটা। কিন্তু এই লোক এখান থেকে না গেলে, আমি যাব কি করে? ফাহাদ ভাইয়ের লোক তো এখনই চলে আসবে। ”

বিরক্তি স্বরে বলে ওঠে ইনায়া। নিধি কিছুক্ষণ চুপ করে হঠাৎ বলে ওঠে,

-” ভাবি এমন নয়তো ওই মেয়র তার ভাইকেই পাঠিয়েছেন? হতেও পারে । ”

নিধির কথায় হুঁশ আসে ইনায়ার। হতে পারে না, এমনটাই হয়েছে। জায়ান তো ফাহাদের বা হাত। এটা মাথায় আসতেই, ইনায়ার কাঁপুনি শুরু হয়। এই লোকের সামনে এখন যাবে কি করে? অন্য দিকে জায়ানের রাগটা আকাশচুম্বী। প্রায় এক ঘন্টা চল্লিশ মিনিট মূল্যবান সময় নষ্ট করে এখানে দাড়িয়ে আছে শুধু ফাহাদের কথায়। কিন্তু মেয়েটার আসার কোনো নামই নেই। এদিকে তিথির সাথেও সে এক দফারফা করে এসেছে। মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে প্রায়। এবার পকেট থেকে বিপ বের করে সেটা ফুঁকতে থাকে। তখনই ফোন আসে ফাহাদের। জায়ান রিসিভ করেই রাগান্বিত হয়ে বলে উঠে,

-” কই সে মেয়ে? এক ঘন্টা চল্লিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কোনো সময় জ্ঞান নাই নাকি? অসহ্য আর পাঁচ মিনিট। তারপর আমি চলে যাবো। ”

ফাহাদ অবাক হয়। ইনায়া তো পৌঁছে গেছে জানিয়েছিল।

-” আমি দেখছি কথা বলে। ওদিকের কি খবর ঝামেলা মিটাতে পেরেছিস? ”

জায়ান ভ্রু কুঁচকে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলে ওঠে,

-” তোর কি মনে হয়? একেতো সিট খালি ছিল না। আর এই অর্ধ বছরে সেটা সম্ভবই না। তিথির রুমের দুইটা মেয়েকে প্রথমে বের করেছি। এই নিয়ে তিথির সাথে ঝামেলা হয়েছে প্রচুর। হোস্টেল কতৃপক্ষ রাজি হচ্ছিল না। আমাকে দেখে আর তোর কথায় রাজি হয়েছে । সব ঝামেলা শেষ। কিন্তু ওই মেয়ের দেখা নাই। আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। ”

ফাহাদ ফোন কেটে চট জলদি ইনায়কে কল লাগায়। ইনায়া ফাহাদের ফোন দেখে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে। তারপর ধিরে সুস্থে ফোন ধরে।

-” তুমি কই ইনায়া? এখনও কেনো যাওনি? ওদিকে জায়ান রেগে গেলে বিশ্রী হবে বিষয় টা। ”

-” আপনার সন্ত্রাসী ভাইটা কে না পাঠালে হতো না? সে তো আমাকে দেখলেই গুলি করে দিবে। সেদিন তো মামি আর সুরেশ কাকা না থাকলে মেরেই ফেলতো। তাই এখন গাছের পিছনে লুকিয়ে আছি। আমি ওই সন্ত্রাসীর সামনে যাব না। ”

ইনায়ার কথায় ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে ফাহাদ। তার তুখোড় ধারালো মস্তিষ্ক কথাটার মানে বুঝে ফেলে তৎক্ষণাৎ। ইনায়াই যে সেদিনের বাগানের মেয়েটি, সেটা ফাহাদ বুঝে ফেলে। জায়ানের মুখে সবটাই শুনেছিল সে। এবার ফাহাদ পড়ল বিপাকে। ইনায়া না গেলে জায়ান চটে যাবে। আবার ইনায়া কে দেখলে কি জানি কি রিয়াক্ট করে? ফাহাদ এবার ইনায়াকে ঝাড়ি মেরে আদেশের স্বরে বলে,

-” তুমি আমার ভাইকে সন্ত্রাসী বলেছ? সেটা যদি ও জানতে পারে তোমাকে কবর দিয়ে দিবে। এখন সুন্দর ভদ্র মেয়ের মতো সেখানে যাও। নো কমেন্টস। ”

ইনায়া ঠোঁট উলটে দেয় ভয়ে। জায়ান যদি সেদিনের বিষয়ে কিছু বলে। তখন সে ওই সন্ত্রাসীর সাথে ঝগড়া করতে পারবে না। এতো সাহস নাই তার মনে। ব্যাগ থেকে মাক্স বের করে মুখে পরে নেয় ইনায়া। তারপর দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে নিধিকে নিয়ে সামনে এগোয়।

হঠাৎ জায়ানের সামনে দুটো মেয়ে দাঁড়াতেই, সে আপাদমস্তক তাদের দেখে নেয়। একজন মুখে মাক্স আর সেলোয়ার স্যুট অন্যজন শার্ট আর পেন্ট পরা। জায়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

-” কি চাই? ”

-” আমি ইনায়া। ফাহাদ ভাই আমাকে আসতে বলেছিল। ”

ডান পাশ থেকে ইনায়া মিনমিন করে বলে ওঠে। ইনায়ার কথায় জায়ান তাকে গভীর দৃষ্টিতে পরখ করে। কেনো জানি এই কন্ঠ সে শুনেছে বলে মনে হচ্ছে আর চোখ দুটিও দেখেছে। কেমন যেন সেদিনের মেয়েটার মত। ইনায়া তরতর করে ঘামছে। এই বুঝি তাকে চিনে ফেলল। জায়ান ভাবলো সামনে দাঁড়ানো তার ফুপির মেয়ে। জায়ান একটু অবাক হলো ইনায়া মুখ ডেকে রেখেছে বলে।
তারপরও সে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,

-” যাক এসেছ তাহলে। চলো আমার সাথে। সময় অপচয় করা আমার লিস্টের বাইরে। কিন্তু তোমার মত অলস প্রকৃতির মেয়ের জন্য আমায় অপেক্ষা করতে হলো। আর যাতে এমন না হয়। ক্লিয়ার? ”

ইনায়া মনে মনে জায়ান কে বকছে। তবুও সে আস্তে নিরব সম্মতি জানায়। জায়ান গটগট হেটে ভিতরে চলল। ইনায়া ও নিধি তাকে ফলো করতে লাগলো। নিধি তো জায়ানকে দেখে প্রায় ফিদা। একটু পর পর সে ইনায়াকে বলে উঠছে। “ছেলেটা মারাত্মক ভাবি মারাত্মক ” আর তাকে তোমার সন্ত্রাসী মনে হয়? ইনায়া উত্তরে কিছু না বলে চোখ রাঙায়। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সব ঠিক করে দিল জায়ান। এক সাপ্তাহ পরে ইনায়া এখানে শিফট হবে। জায়ান ইনায়া কে কিছু জিজ্ঞেস করতেই শুধু হু হা করছে। সে একবারের জন্যও মুখ খুলেনি। সকল ধরনের ফর্মালিটি শেষ করে জায়ান ওদের নিয়ে বাইরে আসে। তখন নিধি মিষ্টি হেসে জায়ানের উদ্দেশ্যে বলে,

-” আমরা আজ আসি তাহলে। চলো ভাবি। ”

নিধির ইনায়াকে ভাবি বলায় ভ্রু কুঁচকে গেল জায়ানের। হঠাৎ মনে হলো ইনায়া বর্তমানে তার শশুর বাড়িতে আছে। মেয়েটা হয়তো নাভানের বোন হবে। জায়ান গলা খাকড়ি দিয়ে বলে ওঠে,

-” গাড়িতে উঠে বসো দুজনে। ”

-” আমাদের ক্লাস আছে। যেতে হবে এখনি। ”

পাশ থেকে গম্ভীর মুখে বলে ইনায়া। সে আর একমুহূর্তে জায়ানের সামনে থাকবে না।
ইনায়ার কথায় ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে জায়ান। কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিধি বলে,

-” আমাদের কি কোথাও নিয়ে যাবেন? ”

-” হুম, আইসক্রিম পার্লার। ”

জায়ানের কথায় নিধি সহ তার চেলারা লাফিয়ে উঠলো। এতক্ষণ দৌড়ে সবারই কাহিল অবস্থা। এযাত্রা একটু আনন্দ করা যাবে। কিন্তু বাধ সাধে ইনায়া সে কিছুতেই জায়ানের সাথে যাবে না। নিধিকে সে বারন করা শর্তেও বাচ্চা নিধি রাজি হয়ে গেছে। ইনায়া কে নিয়ে জোর করে জায়ানের গাড়িতে উঠে পরে। আজ ক্লাস করতে হবেনা ভেবেই ভাল লাগছে নিধির। জায়ান একটা গুরুত্বপূর্ণ কল সেরে গাড়িতে উঠতে যাবে, তখনই তার লোক বলে ওঠে,

-” ভাই আমারা কি অন্য গাড়ি দিয়া আপনারে ফলো করমু? ”

-” তোরা কই যাবি? ”

জায়ানের কথায় ওর সাঙ্গপাঙ্গদের মুখ ছোট হয়ে যায়। একজন মিনমিনিয়ে বলে ওঠে,

-” এহন না কইলেন আইসকিরিম খাওয়াইবেন? ”

জায়ান মুখটা গম্ভীর করে। পকেটে হাত দিয়ে এক হাজার টাকার দুইটা নোট বের করে। অতঃপর ওই ছেলেটার হাতে দিয়ে গম্ভীর মুখে বলে,

-” নে সামনের টঙ্গের দোকান থেকে কুলফি কিনে খেয়ে নিস। ”

কথাটা বলে গাড়িতে উঠে জায়ান। তারপর মুহূর্তেই গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। লোকগুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে বিষ্ময়কর ভাবে বলে উঠল,

-” ভাই দুই মেয়ে নিয়া ডেটে চইলা গেল। আমাদের নিলো না আর সাধলোও না। ”

ছোট্ট একটা গোল টেবিলের উপর বিভিন্ন রকম ফ্লেভারের আইসক্রিম রাখা। সব গুলোই জায়ান অর্ডার করে দিয়ে বাইরে গেছে। নিধি এক প্রকার হামলে পরেছে আইসক্রিমের উপর। ইনায়া এখনও মুখ খোলার সাহস পায়নি। চুপটি করে বসে আছে সে। নিধি খেতে খেতে ব’লে ওঠে,

-” খাওনা ভাবি। লোকটা তো বাইরে গেল। আসবেনা এখন। ”

-” এই সন্ত্রাসীর বিশ্বাস নেই। তীরে এসে নৌকা ডোবাতে চাই না আমি। মাত্র কিছুক্ষণ, আর জীবনে ও এই গুন্ডার সামনে পড়বো না। ”

গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে ইনায়া। নিধি তার কথায় ভেংচি কেটে ব’লে,

-” গুন্ডা না ছাই। আমার মনে যদি অন্য কেউ না থাকতো, তাহলে একেই আমি লাইন মারতাম। ”

নিধির কথায় ভ্রু কুঁচকে যায় ইনায়ার। সে তড়িৎ গতিতে জিজ্ঞেস করে,

-” মনে অন্য কেউ আছে মানে? তুমি কি সবার আড়ালে প্রেম করছো? ”

ইনায়া প্রশ্ন শুনে চোখ বড় হয় নিধির। খুশির ঠেলায় কি বলে ফেলেছে এখন বুঝতে পারছে। নিধি টিস্যু দিয়ে ঠোঁট মুছে, মেকি হেঁসে ওঠে,

-” ভাবি ওইরকম কিছুনা। একটু বেশীই বুঝো তুমি। থাকলে তো তোমাকেই আগে বলব। তুমি বসো, আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি। ”

বলেই নিধি হন্তদন্ত হয়ে দৌড় লাগায়। ইনায়া নিধির যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। মেয়েটা নির্ঘাত কিছু লুকচ্ছে। ইনায়া মাক্স খুলে ম্যাংগো ফ্লেভারের আইসক্রিম টা মুখে দেয়। এটা ওর অনেক প্রিয়। বাবা প্রায়ই তার জন্য নিয়ে আসতো। মনে মনে ভাবতে থাকে সে। আর এক চামচ মুখে তুলতেই, হঠাৎ করেই ইনায়ার সামনে এসে বসে পড়ে জায়ান। ইনায়া মুখে চামচ নিয়েই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে, সামনে বসে থাকা গম্ভীর তীক্ষ্ণ চোখের পুরুষটির দিকে। জায়ান এক হাত ভাজ করে অন্য হাত ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে,

-” হ্যালো মিস সাহসী হরিণী? ভালো আছেন তো?

ইনায়া চুপ করে থাকে। মুখ থেকে চামচ টা বের করে বাটিতে রাখে। ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকে জায়ানের পানে। জায়ান বাঁকা হেঁসে তার দিকে একটু এগিয়ে যায়।

-” গোপন তথ্য অনুযায়ী জানতে পারলাম, তুমি নাকি আমাকে সন্ত্রাসী বলেছ? তা সন্ত্রাসী কোন পর্যায়ে যেতে পারে, কি কি করতে পারে, তা জানো তো? ”

ইনায়ার মুখ শুকিয়ে এইটুকুন হয়ে যায়। জায়ানের বাঁকা হাসিটা তার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। আশেপাশে তাকিয়ে সে নিধি কে খুজতে থাকে। কিন্তু সে নিধির ছায়াও দেখতে পায় না। মুখের ভিতর আইসক্রিম টুকু গিলে নেয় সে। ভয়ে ভেতরটা কাঁপতে থাকে ইনায়ার। তবু সে সাহস যুগিয়ে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে,

-” কি করবেন আমার সাথে? ”

জায়ান ইনায়ার ভয়ার্ত মুখটা দেখে খুব মজা পায়। সে অত্যন্ত গম্ভীর ভরাট কন্ঠে বলে ওঠে,

-” তুমি জানো না সন্ত্রাসীরা কি করে? এই ধরো তোমার ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে দিলাম। হাত পা কেটে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দিলাম। অথবা গাড়ির নিচে ফেলে পিষে ফেললাম। এখন ডিসাইড করো তুমি কিভাবে মরতে চাও। প্রমিজ করছি তোমার ইচ্ছা পূরন করবো। ”

ইনায়ার চেহারাটা কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। ঠোঁট উলটে ফোঁপাতে থাকে সে। এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে জানলে, কখনো এখানে আসত না। অশ্রুসিক্ত নয়নে জায়ানের পানে তাকায় ইনায়া। জায়ানের গম্ভীর মুখটা আরও গম্ভীর হয়ে রয়েছে। সে তীক্ষ্ণ চোখে ইনায়াকেই পর্যবেক্ষণ করছে। জায়ান বরাবরই আবারও অবাক হয়। মেয়েটা প্রচুর ভিতুও বটে। জায়ান ইনায়া কে আগেই চিনতে পেরেছে। ফাহাদ ইনায়ার একটা ছবি তাকে সেন্ড করেছিল। জায়ান তখন ইনায়া কে চিনতে পারলেও সে ফাহাদ কে কিছু বলেনি। ইনায়ার নিজেকে তার থেকে লুকানো দেখে মনে মনে জায়ান ভাবছিল ইনায়াকে হাতেনাতে ধরার।

-” আপনি আপনার ফুপির মেয়েকে মারতে পারবেন? আমি তো আপনাকে চিনতেই পারিনি যে আপনি একটা……..

থেমে গেল ইনায়া, তার গলা কাপছে ভিষন ভাবে। কথা আসছে না আর তার। এবার ইনায়া জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। জায়ান হকচকিয়ে যায়। এতবড় একটা মেয়ে এভাবে কেঁদে উঠবে তার জানা ছিল না। সেদিন যা তেজ দেখিয়ে ছিল আজ তার ছিটেফোঁটাও নেই। তন্মধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো নিধি। ইনায়ার মুখ আর জায়ান কে দেখেই সে পরক্ষ করে নিল সবটা। নিধি কয়েকবার ইনায়া কে থামতে বললেও সে গুনগুনিয়ে কেঁদেই চলে। ইতিমধ্যেই সবার নজর তাদের টেবিলে চলে এসেছে। জায়ান এবার অন্যদিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। তার ফুপির মেয়ে তো পুরাই ভিতুর ডিম। এই মেয়েকে তো তারা পুরো নাদান করে রেখেছিল বলে, মনে হচ্ছে জায়ানের। সেদিন তো খুব বাহাদুরি দেখিয়ে ছিল। আজ তা হুশ করে উধাও হয়ে গেল? ইনায়া কে তার সামনের জীবনের জন্য আরও কঠোর হতে হবে ভাবে জায়ান। কিছুক্ষণ পর আবার তাকায় সে বোকাসোকা ইনায়ার দিকে। মেয়েটার কান্না থামার কোনো লক্ষণ সে দেখছে না। জায়ান এবার রেগে গিয়ে ইনায়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতের আঙুল দিয়ে ইনায়ার দুই ঠোঁট চেপে ধরে। নিমিষেই ইনায়ার কান্না বন্ধ হয়ে যায়। জায়ান হিসহিসিয়ে ইনায়ার চোখে চোখ রেখে ব’লে,

-” কান্না না থামালে আরও কঠিন শাস্তি পাবে তুমি। ”

ইনায়ার ঠোঁট একটু কেঁপে ওঠে। মাথা উঠিয়ে জায়ানের দিকে তাকায় সে। নির্লিপ্তে তার দিকে তাকিয়ে আছে জায়ান। জায়ানের আঙুল হালকা নড়তেই ইনায়া আস্তে করে সুধায়,

-” কি শাস্তি? ”

জায়ান এবার বাঁকা হেঁসে ইনায়ার ঠোট থেকে আঙুল সড়িয়ে নেয়। তারপর তীক্ষ্ণ ধারালো চোখে মৃদু হেঁসে বলে ওঠে,

-” সারাজীবন এই সন্ত্রাসীর বউ বানিয়ে সামনে বসিয়ে রাখবো বোকা হরিণী। ”

ইনায়া চকিতে জায়ানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়ে থাকে। নির্বোধ সে কথাটার মানে বুঝতে একটু দেরি করে ফেলে। তৎক্ষণাৎ মুখে তেজি রুপ ফুটিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,

-” আমি বিবাহিত! আর আমি কোনো পাগল নই যে কোনো সন্ত্রাসীর বউ হব? ”

কথাটা বলে মুখটাকে গম্ভীর করে ফেলে ইনায়া। হটাৎ করেই রেগে যায় সে। জায়ান কিঞ্চিৎ হেঁসে ওঠে,

-” বাহ্ বাহ্, এবার সামনাসামনিই বলে দিলে। আমার বউ হবার ইচ্ছে আছে তাহলে?”

-” মোটেই না। খারাপ পুরুষ একটা। ”

কন্ঠে প্রচুর আক্রোশ ঢেলে বলে ওঠে ইনায়া। এই লোক ভিষণ পাজি। না একে আর ভয় পেলে তার চলবে না। জায়ান মুচকি হেসে মিনমিন করে বলে,

-” তোমাকে তেজী রুপেই মানায় সাহসী হরিণী। এতেই ভালো লাগে। ”

চলবে……………………..

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। শহিদ ভাইদের রক্ত গঙ্গা পেরিয়ে পরের পর্ব দিতে পারব কিনা জানিনা। লেখা ছিল তাই দিয়ে দিলাম। এফবি তে ঢুকতেই পারছি না। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুক।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here