#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব: ১৩
গাড়িতে ব্যাগ পত্র সব ঠিকঠাক করে রেখে পিছনে ফিরে ইনায়া। বাড়ির প্রতিটি সদস্য তার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। এই সুন্দর মেয়েটার সাথে এটা কাম্য নয়। শুভ্র রাঙা চুড়িদারে ইনায়া কে পুরো শুভ্র পরীর ন্যায় লাগছিল। ইনায়া সোহানা মির্জার দিকে এগিয়ে যায়। তাকে অনেকটাই বিধ্বস্ত লাগছে। ইনায়া মুচকি হেঁসে সোহানা জড়িয়ে ধরে শান্ত গলায় বলে,
-” তুমি এতো ভেঙে কেনো পড়ছো মামনী? হাসি খুশি বিদায় দাও। দেখবে, এখন থেকে আমি ভাল থাকব। আর কোনো সমস্যা হবেনা। ”
ইনায়ার কথায় সোহানার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তিনি নিজেও মানতে পারছেন না ইনায়ার চলে যাওয়াটা। সবটা তার একটা মাত্র ভুলের জন্যই হয়েছে। এই ভুলের শাস্তি তিনি কি দিয়ে চুকাবেন?
-” ক্ষমা চাওয়ার মত মুখ আমাদের নেই ইনায়া। তবুও মাফ করে দিস। ”
নাহিদ মির্জার কথায় তার দিকে তাকায় ইনায়া। সোহানা কে ছেড়ে দিয়ে শুষ্ক হেসে বলে উঠল,
-” এতে তোমাদের কোনো দোষ নেই। হয়তো এটাই আমার নিয়তি। ”
অতঃপর ইনায়া সবার থেকে বিদায় নেয়। নিপা কখন থেকেই কেঁদে যাচ্ছেন। তিনি ইনায়াকে খুব পছন্দ করতেন। আয়েশা মির্জার থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তিনিও ইনায়া কে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন। যতই হোক ইনায়ার জন্য মন তার একটু হলেও কাঁদত। কিন্তু নাভানের জন্য তিনি নিরুত্তর ছিলেন। ইনায়া গাড়িতে উঠে বসে বাড়িটার দিকে তাকালো। ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। বাবা মা ঘরবাড়ি ফেলে যে বাড়িতে ঠাঁই হয়েছিল স্বামীর বাড়ি নামে। সেটাও আজ তাকে ফেলে যেতে হচ্ছে। আয়েশা মির্জা ঠিকই বলত, স্বামীর বাড়ির সুখই স্বামী দিয়ে হয়। বাকি সবতো আজ আছে কাল নেই ভাবছে ইনায়া। নিধি যাবে ইনায়ার সাথে। সোহানা মির্জা একবারের জন্যে ইনায়ার সাথে কোনো বাক্য বিনিময় করেনি। তিনি এক ধ্যানমগ্ন ইনায়ার গাড়ির দিকে। যেটি ধিরে ধিরে শান্তি ভিলার মূল ফটকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইনায়া ও জানলা দিয়ে মাথা বের করে তাকিয়ে থাকে প্রাসাদের ন্যায় মির্জা ভিলার দিকে। ভেতর থেকে কেউ যেন বলে উঠছে
” রেখো না আর পিছুটান, ছেড়ে দাও আশা। মন গহীনে থাকুক শুধু তোমার একার ভালবাসা। ”
পুরো রাস্তা চুপচাপ বসে ছিল ইনায়া। নিধিও তাকে আর কিছু বলেনি। হলে ডুকে নির্ধারিত রুমে চলে আসে তারা। রুমের দরজা ভিতর থেকে ভিড়ানো। নিধি দরজা খুলে ভিতরে ব্যাগ নিয়ে ঢুকে পরে। রুমের ভেতর কাউকেই পায়না তারা। রুমে তিনটা স্টিলের বেড। একপাশটা সাজানো, অন্য পাশের খাটে ইনায়া আর নিধি অনেক্ক্ষণ সময় নিয়ে সব ঠিকঠাক করে নেয়। প্রায় দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে আসে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে তারা। কিন্তু তিথির কোনো দেখা পায়না।
-” ভাবি কেউই তো আসছে না। আমি আর কতক্ষণ বসে থাকব? ”
-” তাইতো, তুমি বরং বাড়ি যাও। আমি এদিকটা সামলে নেব। ”
নিধি সায় জানিয়ে চলে যায়। ইনায়া দরজা লাগিয়ে ওয়াশরুমে যায়। অনেকটা সময় যাওয়ার পরে ইনায়া গোসল শেষে রুমে আসে। ব্যাগ থেকে সাদা রঙের বক্স নিয়ে খেতে বসে। নিপা বিরিয়ানি করে দিয়েছিল তার জন্য। মনটা খারাপ করে ইনায়ার। আজকে যেন সত্যিই তার পৃথিবী শুন্য মনে হচ্ছে। খাওয়া শেষে শুয়ে পরে ইনায়া। চোখটা হালকা ভিড়তেই দরজার খটখট শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ইনায়ার। দরজার আওয়াজ কঠিন থেকে কঠিন হচ্ছে। ইনায়া হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলতেই ওপাশে ট্রি শার্ট আর প্যান্ট পরহিত একটা সুন্দর মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। ইনায়া বুঝে নেয় ওই হয়তো তিথি। সে মুখে হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” আমি ইনায়া! তুমি বোধহয় তিথি? ”
-” সামনে থেকে সরো। ”
কর্কশ কন্ঠে বলে উঠা তিথির দিকে তাকিয়ে রয় ইনায়া। ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিথি তাকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে চলে যায়। আচমকা ধাক্কা খেয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় ইনায়ার। সে চোখ বড়সড় করে তিথির দিকে তাকিয়ে থাকে। তিথি রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফাহাদ বলেছিল তিথি প্রচুর রাগী। তাই বলে এমন ব্যবহার?
ইনায়া পিঠে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে খাটে বসে পরে। কিছুক্ষণ বাদে রুমের ভিতর আরও দুটো মেয়ে ঢুকে। তারা ইনায়ার সামনে এসে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-” নাম কি? ”
-” ইনায়া ”
-” শুধু ইনায়া আগে পিছে কিছু নাই?
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের বেশভুশা কিছুটা তিথির মতোই। ইনায়া নিজেকে ধাতস্থ করে চৌকস কন্ঠে বলে,
-” আমার পুরো নাম জেনে তোমারা কি করবে? আর কে তোমরা? ”
-” এই রুমের প্রাক্তন বাড়িওয়ালী আমরা। যাদের, তোমার জন্য ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। ”
ইনায়া কিছুই বুঝতে পারল না। তখনই তিথি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ওদের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়। হাত দুটো ভাজ করে কঠিন স্বরে ইনায়াকে ব’লে,
-” বের হও রুম থেকে। আমরা এখন আড্ডা দেবো।”
ইনায়া একটু অ বাক হয়ে বলল,
-” তা দাও আড্ডা! আমি বের হবো কেন? ”
তিথি এবার গলা চেচিয়ে বলে ওঠে,
-” একদম কারণ জিজ্ঞেস করবে না। তোমার মতো থার্ড ক্লাস মার্কা কোথাকার কোন ফুপাতো বোনের জন্য ভাইয়া আমার ফ্রেন্ড’দের অন্য রুমে শিফট করিয়েছে। এমনিতেই মেজাজ গরম আছে। আরও বেশি কথা বললে ওই সুন্দর মুখশ্রী আর থাকবেনা। বেড় হও এক্ষুনি বলছি।
ইনায়া ঠাঁই বসে রয়। কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। এখানে এসে এমন পরিস্থিতিতে পরতে পারে মাথাতেই আসেনি। তিথির পাশে দাঁড়ানো তার দুই বান্ধবী মিশু আর দিবা এবার ইনায়ার হাত চেপে ধরে। বসা থেকে উঠিয়ে টানতে টানতে দরজার বাইরে নিয়ে দার করিয়ে মেকি হেঁসে বলে,
-” টেনশন করো না বেবি গার্ল। আমরা চলে গেলে রুমে এসো। ”
বলেই দরজাটা হুট করে লাগিয়ে দেয় তারা। ইনায়া এবার কেদে ফেলে। এই রকম পরিস্থিতিতে কি করবে এখন? আর কতক্ষণ এভাবে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে। ইনায়া এবার আসে পাশে তাকায়। সন্ধা হয়ে যাওয়া তে মেয়ে গুলো হলে ঢুকে যাচ্ছে সবাই। এখানে রাত আটটার পর হলের গেইট বন্ধ হয়ে যায়। আসে পাশের রুমের মেয়েরা তার দিকে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে আছে। ইনায়া এবার চোখের পানি মুছে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রাত বাড়ছে, সময় প্রায় নয়টারও বেশি। কিন্তু এখনো মেয়ে গুলোর দরজা খুলার নামও নেই। ইনায়া দুএকবার ডেকেও সাড়া পায়নি। তিথির ব্যবহারে ইনায়া অনেক রুষ্ট। যেখানে বাবা-মা বড় ভাই এতো ভাল। সেখানে তিথির এমন উগ্রতা মানছে না। হঠাৎ জায়ানের কথা মনে হলো ইনায়ার। আছে তো, গুন্ডার বোন তো গুন্ডামীই করবে। এ পুরো জায়ানের মতোই হয়েছে। ভাই গুন্ডামি করে মিশু দিবাকে রুমের বাইরে বের করছে। আর বোন এখন ইনায়াকে। কে বলেছে এভাবে তাকে হলে আনতে? প্রচন্ড রাগ হয় ইনায়ার।
অফিসের বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছে ফাহাদ আর জায়ান। একটু পরেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে একটা। জায়ানের হাতে বিপ, সে একটু পর পর সেটা ফুঁকছে। চোখ তার নিচে হাইওয়ের দিকে। কিছু একটা গভীর ভাবনায় তার। ফাহাদ গভীর মনে একটা ফাইল ঘাটাঘাটি করছে। সে ডিসিশন নিয়েছে সামনে আর ইলেকশন করবে না। এই জীবনে এসে শুধু প্যারা। বাবা ঠিকই বলে মন মতো নিজের লাইফ লিড করা যায়না রাজনীতিতে। তবু সে বাবার কথার বিরুদ্ধে থাকত। তার মনে হত পাওয়ায়ই জীবনের সবচেয়ে বড় বিষয়। কিন্তু প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে তার চোখমুখ খুলেছে।
-” সামওয়ান হিট মি ভেরি হার্ট। ”
হঠাৎ জায়ানের কথায় ফাহাদের ভাবনারা গত হয়। সে ফাইল থেকে মুখ উঠিয়ে বিস্ময় নিয়ে বলে,
-” কখন? কোথায়? বল আমাকে। ”
-” সাপ্তাহ খানেক আগে। আমার মনে। ”
জায়ান অন্ধকারে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে বলে।
ফাহাদ চোখমুখ কুঁচকে বিরক্ত সহিত ব’লে,
-” এতো দিনে বলছিস গাধা? লোকে তো এবার আমাকে ছি ছি করবে। যে মেয়র ফাহাদ করিমের ভাইয়ের মনে কেউ আঘাত করেছে। আর গাধা মেয়র তার ভাইকে ন্যায্য বিচার করে দেয়নি। না না, এই অপবাদ নিয়ে আমি এমপির আসন ছাড়ছি না। নাম বল একবার। পুরো গুষ্ঠি তুলে নিয়ে আসব। ”
আমার একটা মানসম্মান আছে নাকি?
জায়ান একবার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে সামনে দৃষ্টিবদ্ধ করে। হালকা হেসে, তারপর কটুক্তি স্বরে বিদ্রুপের সহিত বলে,
-” তার আগে লোকে এটা বলবে যে মেয়র ফাহাদ করিম নিজের মন ভাঙারই বিচার করতে পারেনি। সে ভাইয়ের টা আবার কি দেখবে? ”
ফাহাদ এবার চটে গেল। সে কন্ঠে তেজ এনে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে,
-” সেটা তোর জন্যই আমি করতে পারিনি। নাহলে দেশবাসী জানতো ফাহাদ করিমের মন ভাঙার শাস্তি কি হতে পারে। আর তুই আমাকে কথায় কথায় খোঁচা মারিস। যা তোকে আর কোনো হেল্প করছিনা। মিটিং এর সময় হয়েছে চললাম আমি। ”
ফাহাদ রেগে গিয়ে চলে যায়৷ জায়ান তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেঁসে ওঠে। তারপর জোর গলায় বলে উঠে,
-” জায়ানের জন্য সে নিজেই যথেষ্ট ভাই। ”
-” তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? কোন রুম? কোন ডিপার্টমেন্ট? ”
হঠাৎ একটা মেয়েলি গলার আওয়াজ শুনে সামনে তাকায় ইনায়া। তার থেকে বছর দুই বড় হবে। একটা সুন্দর মেয়ে দাড়িয়ে আছে। ইনায়া একবার রুমের দিকে তাকিয়ে মাথা উপর নিচ করে।
-” ডিপার্টমেন্ট অফ পলিটিক্স। আমি ইনায়া। ”
-” আমি শ্রুতি। তোমাদের ডিপার্টমেন্টেরই স্টুডেন্ট।আমার সাথে এসো তুমি ।”
মেয়েটি যেন তার সকল প্রশ্নের জবাব পায়। সে ইনায়ার হাত ধরে তার রুমে নিয়ে যায়। সেখানে আরও দুজন ছিল। তাদের সাথে ইনায়াকে বসতে বলে ফোন নিয়ে বাইরে যায়। তারপর কাউকে ফোন ঢুকিয়ে রিসিভ হতেই বলে,
-” জায়ান স্যার আপনি যেমন ধারনা করেছিলেন তাই হয়েছে। ওরা ইনায়া কে বের করে দিয়েছে রুম থেকে। ”
অপরপাশে থাকা জায়ান যেন ভিষণ চটে গেল। সে শ্রুতিকে সর্বদাই রেখেছে তিথির আপডেট দিতে। বাজে ফ্রেন্ডদের সাথে মিশে ব্যবহার পুরোই বিগরে গেছে। তাই বুদ্ধি করেই দু’ভাই ইনায়ার সাথে তাকে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু তিথি যে এতোটা রুড বিহেব করবে ইনায়ার সাথে সে এটা ভাবেনি। জায়ান এবার শ্রুতি কে কঠিন স্বরে বলে,
-” তুমি ইনায়ার সাথে থেকো। আর সকল আপডেট দিও আমাকে। কালকে তিথির সাথে কথা হচ্ছে। ”
বলে ফোন রেখে দেয় জায়ান। পার্টি অফিসের একটা ঝামেলার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করছিল জায়ান। শ্রুতির ফোন আসায় সে মিটিং ছেড়ে বারান্দায় এসে কথা বলছিল। আচমকা তিথির উপর তার প্রচুর রাগ হয়। ইনায়ার সাথে তিথি এমন করবে সেটা তার মাথাতেও আসেনি। এতো রুড কবে হল তার বোন? কাল মুলাকাত করবে সে।
এদিকে প্রায় এগারো টার পর দরজা খুলে তিথি। তার ফ্রেন্ড গুলো যেতেই আশেপাশে তাকিয়ে ইনায়া কে খুঁজে। কই গেল মেয়েটা? আবার কিছু হলোনা তো? সে এবার বিরক্ত হয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। ভাইয়ের রাগ ইনায়ার উপর না ঝাড়লেও পারত। কিন্তু কি করবে? ফ্রেন্ডশিপের থেকে বড় কিছুই নয় এটা তার ধারনা। অনেক্ক্ষণ গল্প করে রুমে আসে ইনায়া। দরজা টা ভিড়ানো ছিল। ড্রিম লাইটের আলো মিটমিট করে জলছিল। ইনায়া টেবিল থেকে ফোন নিয়ে ফ্লাশ অন করে। বিছানায় যেতেই দেখতে পায় সেটা ভিজানো। ইনায়া ঢেড় বুঝে এটা তিথি আর তার ফ্রেন্ড’দের কাজ। ইনায়া ব্যাগ থেকে একটা কাথা বের করে,মেঝেতে বিছিয়ে শুয়ে পরে। আজ রাতে তার ঘুম আসবেনা। চোখ দিয়ে শুধু নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। এতো লাঞ্ছিত কেন তার জীবন টা? একটুকরো সুখও তো তার ভাগ্যে নেই। ইনায়ার ভাবনার মাঝেই তার ফোন বেজে উঠে। সে হাতে ফোন নিতে দেখতে পায় অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসছে। ইনায়া ফোনটা রিসিভ করে কানে নেয়। কিন্তু অপর পাশ থেকে কোন রেসপন্স পায় না। সে কান্নারত গলায় ধিরে ধিরে জিজ্ঞেস করে,
-” কে বলছেন? ”
অপর পাশের ব্যাক্তির নিঃশ্বাসের শব্দ শুনছে ইনায়া। সে অনেক বার বার জিজ্ঞেস করলেও। কিন্তু ওই ব্যাক্তি নিরুত্তর থাকে। ইনায়া এবার ফোন কাটতে গেলেই, কেউ বলে ওঠে,
-” নিজের চোখের পানির মর্ম যে বোঝেনা। সে-তো পদে পদে লাঞ্ছিত হবেই। আগে নিজের মনকে শক্ত করো, আর কাঁদবে না তুমি। তখন দেখবে, জীবন টা তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। জীবনে মনের শক্তিটা দৃঢ় রাখতে হবে। বুঝলে বোকা হরিণী? ”
ইনায়া প্রথমে কথা গুলো শুনে অবাক হয়েছিল। কিন্তু লাস্টের কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে যায় তার। নাক টেনে মিনমিনে গলায় বলে ওঠে,
-” বোন ঘড় থেকে বের করে দিচ্ছে। আর ভাই মাঝরাতে জ্ঞান দিচ্ছে। বলি আপনার কাছে খবরটা কে দিয়েছে? নিশ্চয়ই তিথি হবে। যেখানে সেখানে গুন্ডামী করা ভাল নয়। আপনার জন্য আমার সমস্যা হলো। ”
জায়ান এবার হেঁসে উঠল। মুখের হাসি বজায় রেখে অকপটে জানতে চাইল,
-” আমার কন্ঠ শুনেই চিনে ফেললে? তা আমার প্রেমে পড়ে গেলে নাকি? ”
-” একদম না, আপনিই আমাকে বোকা হরিণি ডাকেন। তাতেই অনুমান করেছি।
হুট পটিয়ে বলে ওঠে ইনায়া। জায়ান সামন্য গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” তাই? এতোটা খেয়াল করো আমাকে? ব্যাপার কি? ”
ইনায়া এবার চটে যায়। মাঝরাতে কল দিয়ে তার সাথে ফাজলামো করা হচ্ছে? না এই গুন্ডার পাল্লায় আর পড়া যাবেনা। ইনায়া ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,
-” অন্যের বউ কে কল মাঝরাতে কল দিয়ে বিরক্ত করা, নিশ্চয়ই আপনার রাজনীতিতে পড়েনা গুন্ডা সাহেব। প্লিজ ফোনটা রেখে দিন। ”
জায়ান রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই, ইনায়া ফোন কেটে দেয়। জায়ান কান থেকে ফোন সড়িয়ে সামনে আনে। এই পিচ্চি মেয়ে তাকে যা নয় তাই বলছে? ফোনে হঠাৎ ইনায়ার মেসেজ দেখে জায়ান।
-” অন্যের বউ কে আর কখনো ফোন দিবেন না মিঃ সন্ত্রাসী। আপনাকে তা শোভা পায়না। ”
জায়ান বিরবির করে বার কয়েক পড়লো লেখাটি। তারপর কুটিল হেসে বলে ওঠে, “অন্যের বউ”
চলবে……..…………….
( সবাই গঠন মূলক কমেন্ট করবেন আশা করি। যারা আমার নিয়মিত পাঠক, তাদের পেজে লাইক, ফলো করে পাশে থাকার অনুরোধ করা হলো।)