যাতনা_আমার #সানজিদা_ইসলাম_সূচনা #পর্ব: ৯

0
252

#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব: ৯

(কপি পোস্ট নিষিদ্ধ)

মিজানুল করিমের সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে আসে তার বড় ছেলে ফাহাদ করিম । মূলত কথা নয় ঝগড়াই বেশি হচ্ছে তার বাবার সাথে। কেউ কারো থেকে দমবার পাত্র নয়। মিজানুল একেবারে স্যুট- বুট পড়ে আছেন। ফাহাদ শুভ্র সাদা রঙের পাঞ্জাবির উপর মুজিব কোট পড়েছে। দু’জনেরই মিটিং আছে। তারপরও কথা-কাটাকাটি শেষ হচ্ছে না তাদের। ইনায়া আর মিনারা বেগম দু’জনেই সামনে তাকায়। তাদের কথার বিষয় বস্তু আগে থেকেই জানা মিনারার। তিনি স্বামীর চোখে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইনায়ার দিকে ইশারা করেন। মিজানুল স্ত্রীর চোখ রাঙানি খেয়ে তার পাশে দাঁড়ানো ইনায়া কে দেখে। তৎক্ষনাৎ তার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফাহাদও বাবার মতো মুখ বন্ধ করে ইনায়াকে গম্ভীর দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।

-” ভালো আছেন মামা? আমাকে চিনতে পেরেছেন তো? ”

মিহি কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ইনায়া। মিজানুল ইনায়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয়। এক পলক নিজের ছোট বোনের মতো দেখতে পায় ইনায়া কে।
মেয়েটা পুরো তার মায়ের মতোই দেখতে।

-” আমিতো আছি বেশ। তা তুই কেমন আছিস ইনায়া?

-” জ্বি মামা, এইতো চলে যাচ্ছে কোনো রকম। ”

ম্লানমুখে ইনায়া বলে ওঠে। মিজানুল এবার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে বলে,

-” শুনেন মেয়র সাহেব, এই হচ্ছে ইনায়া। তোমার ফুপির মেয়ে। যার কথা একদিন বলেছিলাম। ”

ফাহাদ ইনায়ার দিকে তাকিয়ে অবাক হয় প্রচুর। ফুপি বেচে থাকতে তার সাথে দু একবার দেখা হয়েছিল। কিন্তু ইনায়াকে দেখেনি সে কখনো। ইনায়া মিষ্টি হেসে সালাম দেয় ফাহাদ কে। সেও সালামের উত্তর দিয়ে বলে,

-” সত্যিই তুমি একদম ফুপির মতো। বাবার বলার সাথে মিল আছে। ”

মিজানুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইনায়া কে নিয়ে সোফায় বসে। মিনারা বসে তার দিকে চা এগিয়ে দেয়। মিজানুল সোফায় বসতেই তার পাশে ফাহাদ পায়ের উপর পা তুলে বসে। তা দেখে বিরক্তিতে চোখ কুঁচকায় মিজানুল।

-” এই যে মেয়ের সাহেব? এটা আমার বাড়ি আপনার পার্টি অফিস নয়। এখানে আমার সাথে অত্যন্ত নেতার ভাব দেখাবেন না। ”

বাবার কথায় রেগে গেলো ফাহাদ।

-” নেতা তো নেতাই হয়, বাড়ি আর অফিস কি? আর এই বাড়ি তুমি না দাদু বানিয়েছেন। তার বাড়ি যদি তুমি নিজের বলে দাবি করতে পারো। তাহলে, সেই হিসেবে এটা আমারও বাড়ি। আর আমি এখানের রাজা। ”

মিজানুল ছেলের কথায় মুখ ভেঙালেন। ইনায়া দুজন গম্ভীর পুরুষের এমন ঝগড়া দেখে থ হয়ে রইলো। বাবা ছেলে কথায় কথায় এভাবে লাগতে পারে? অবশ্য সুরেশ থেকে এসব শুনেছিল ইনায়া।
মিনারা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিজানুল কে বলে ওঠে,

-” এই ভরদুপুরে আপনারা দুজন কোথায় যাচ্ছেন?”

মিজানুল করিম গম্ভীর মুখে বলে,
-” আসলে অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরে গেছে না গেলেই নয়। এই মাত্র ইনফর্ম করল। ইমপোর্টেন্স মিটিং আছে একটা। ”

-” আমারও পার্টি অফিসের লোকদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং আছে। জায়ান বলল যেতে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ”

ফাহাদ বলে উঠলো। মিজানুল সেটা শুনে রসিকতা করে বললেন,

-” তোমাদের আর কিসের মিটিং? ওই কার পেছনে পরলে ভালো হবে, কাকে মারতে পারলে ভাল হবে। সেই বুদ্ধিই তো করো দুই ভাই মিলে। আহারে, সোনার বাংলা দূর্নীতিতে ভরে গেছে। ”

বাবার কথায় রেগে ফাহাদ রেগে কিছু বলতে যাবে। তর আগেই মিনারা বেগম শান্ত স্বরে বললেন,

-” আসলে ইনায়া আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চায়। ”

মিজানুল এবার ইনায়ার দিকে গম্ভির ভাবে তাকায়। ইনায়া মনে মনে নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে
বিয়ের পরের জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলো একে একে সব বলতে থাকে। এবং কি তার ফুপু আনিলার বাড়ি নিয়ে মামলা করার বিষয়টাও জানায় সে। সব শুনে ইনায়ার সামনে বসা তিনটা মানুষের মুখ অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে যায়। এতটুকু বয়সে এসব সাফার করছে ইনায়া। কি করে মানতে পারছে সে? বাবা-মা হাড়ানোর পর আবার স্বামীর থেকে পাওয়া লাঞ্ছনা। এসব কি প্রাপ্য মেয়েটার? ভেবে পায়না কেউ। নিজের মনের সব কথা উগরে দেয় ইনায়া। ভেতরটা যেন হালকা হলো প্রচুর। মিজানুল অনেকটা দুঃখ প্রকাশ করে বললেন,

-” যা হয়েছে তা তোমার প্রাপ্য ছিল না ইনায়া। তবুও ভাগ্যের সাথে কারো হাত নেই। বাবার প্রচন্ড রাগ ছিল। তাই সে সাজিয়া আর তোমার বাবাকে কখনো ক্ষমা করেনি। সাথে আমাকেও তা করতে বাধ্য করছেন। আমি সবসময় রাজনীতি কোলাহল থেকে দুরে থাকতাম। বাবা মেনে নিতে পারেনি। যে তার মেয়ে তার শত্রুর সাথে পালাবে। তিনি সাজিয়া কে তেজ্য করেছেন। গত বছর দুই আগে তোমার মায়ের সাথে আমার আবার যোগাযোগ শুরু হয়। ভেবেছিলাম তার প্রাপ্য টুকু বুঝিয়ে দেবো। কিন্তু সে নিতে নারাজ হয়। তোমার বাবা মায়ের মৃত্যুর পর তোমাকে আমার কাছে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নাহিদ মির্জা আর সোহানা মির্জা বলেছিলেন, তোমাকে তাদের ছেলের বউ বানাবে। মির্জা বাড়ির বউ হবে তুমি তাই অনেকটা নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু নাভানের কর্মে আমি আশাহত। কাজটা ভালো করেনি সে। সাথে তার বাবা মার ও নিজের এডাল্ট শিক্ষিত ছেলের কথা মানার দরকার ছিল।

এই বলে থামলেন মিজানুল। তার সামনে বসে অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছে ইনায়া। তিনি মলিন মুখে বলেন,

-” এখন তুমি কি চাও ইনায়া? অনিশ্চিত সম্পর্কের জন্য কি তুমি এখনো অপেক্ষা করবে? যার কোনো নিশ্চয়তা নেই? আমি তোমাকে সব রকমের হেল্প করব। ”

ইনায়া অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকাল একবার। আবার মাথা নুইয়ে মিনমিনে স্বরে বলে ওঠে,

-” মায়া বাড়িয়ে লাভ কি? ওই বাড়িতে থাকতে গেলে আমার শুধু একটা পরিচয়, নাভানের ওয়াইফ। মামনী বাবা যতোই আমাকে নিজের মেয়ের মতোন দেখুক না কেনো। আজ বাদে কাল নিজেদের ছেলের জন্য মন ঠিক কাঁদবে। আর আমার জন্য তাদের একমাত্র ছেলে বাড়ি ছাড়া হোক, সেটা আমি চাই না। আমি আর ওই বাড়িতে থাকতে চাই না। এই সম্পর্কের ভার আর একা বহন করতে পারবো না আমি। আমাকে আপাতত একটা হোস্টেল থাকার ব্যবস্থা করে দিন৷ আর ছোটখাটো কোনো কাজ আমি ঠিক জোগাড় করে নিবো। ওই বাড়িতে আমি আর থাকবনা। ”

ইনায়া কথায় মাথা ঝাকায় মিনারা বেগম। আসলেই তো? স্বামী ছাড়া সংসার কিভাবে? যেখানে আজ পর্যন্ত নাভান ইনায়ার মুখটাও পর্যন্ত দেখেনি। এই সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যত নেই। মিজানুল করিম খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে,

-” সেটাই ভালো। আমি নাহিদ মির্জার সাথে কথা বলে বিষয়টা ঠিক করছি। জীবন টা নতুন করে শুরু করো। আর ফাহাদ, ইনায়াদের বাড়ির বিষয়টা হ্যান্ডেল করো। ”

এতোক্ষণ সব কিছু নিরব দর্শকের মতো দেখছিল ফাহাদ। বাবার কথায় মাথা নাড়ায় সে। ইনায়ার জন্য খুব খারাপ লাগছে তার। আর নাভানের জন্য রাগ লাগছেও বটে। কিন্তু কি আর করার আজকাল ছেলেমেয়েদের উপর জিদ চাপিয়ে দিতে নেই। হঠাৎ করে ফোন বাজায় ফাহাদ উঠে দাঁড়িয়ে গটগট পায়ে বাইরে চলে যায়। ফোনটা সামনে আনতেই দেখতে পায় স্কিন জলজল করছে নাভান নামটি। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা রিসিভ করে।

ইনায়া মিজানুলের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি দেয়।

-” ধন্যবাদ মামা! আজকে তাহলে চলি।”

ইনায়া কথায় মিজানুল আর মিনারা বাধঁ সাধে।

-” কি বলিস? আর যাওয়ার দরকার নেই। ”

ইনায়া হাসে কিঞ্চিৎ। বড় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

-” মামনী আর বাবাই আমার জন্য অনেক করেছে। তাদের ঋন আমি শোধ করতে পারব না। আর বাড়িতে আমি কাওকে না জানিয়ে এসেছি। এতক্ষণে হয়তো চিন্তা করছে সবাই। ”

কেউ আর কোনো বলার মতো কথা খুজে পেলেন না। মিজানুল ঠিক করলেন ড্রাইভার দিয়ে ইনায়া কে বাড়িতে পৌঁছে দিবেন। ইনায়া ও রাজি হয়ে যায়। যত তারাতাড়ি সম্ভব বাড়িতে যেতে হবে।

মির্জা বাড়িতে হট্টগোল বেধেছে একটা। সবার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে। তার কারণ হলো ইনায়ার এখনো বাড়ি না ফেরা। ইশান নিধির দিকে তাকিয়ে চোখমুখ পাকাচ্ছে। নিধি বেচারি ভয়ে চুপসে আছে। ইশানের ভাষ্য মতে, নিধি আজকে ফাঁকি না দিলে এই সমস্যা হতো না। সোহানা আর নিপার মনে অন্য ধারণা। ইনায়া সুযোগ পেয়ে চলে গেলো না তো? আর যাবেই বা কোথায়? নাহিদ মির্জা আর নওয়াজ তারা দুজনেই ড্রাইভার আতাউর কে ইচ্ছে মতো ঝাড়ছে। আতাউরের ভিতরে অনেক হিংসা হয়। দুইদিনের মেয়ের জন্য তাকে ঝাড়ি খেতে হচ্ছে। সে বিরক্ত সহিত ব’লে,

-” মেয়েটা আমাকে আনতে যেতে নিষেধ করেছিল স্যার। কি জানি কাজ ছিল তার। বলছে ক্লাস শেষে একা একাই চলে আসবে। ”

-” সে বলল আর তুমি মেনে নিলে? ও কি এই রাস্তা ঘাট চেনে? আমাদেরও তো তুমি ইনফর্ম করতে পারতে? গর্দভ একটা। ”

নাহিদ মির্জার ঝাড়ি খেয়ে আতাউরের মন আরও বিষাদে ছেয়ে যায়। সে মিনমিন কন্ঠে বলে,

-” স্যার দেখেন, কারো সাথে নিশ্চয়ই ভেগে গেছে। এসব মেয়েদের বিশ্বাস করতে নেই। ”

আতাউরের কথায় সবাই তার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাল। সব চাইতে বেশি রাগলো সোহানা। সে আতাউর কে উদ্দেশ্য করে বলল,

-” আমাদের মেয়ের সম্পর্কে একটাও বাজে কথা বলবেন না আপনি। আর আজকে থেকে আপনার আর চাকরি করতে হবে না। আপনার দায়িত্ব ছিল আমার মেয়েদের সেভলি ভার্সিটিতে পৌঁছে দেওয়া আর নিয়ে আসা, সেটাতে আপনি ব্যর্থ। যান এখান থেকে। ”

আতাউর অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইলো সোহানার দিকে। এতো সাধের চাকরি হারাতে হবে তাকে। ইশান আতাউরকে ইশারায় আপাতত বাইরে যেতে বলে।

প্রায় সন্ধেবেলা ইনায়া ফিরে আসে মির্জা ভিলায়। সুরেশ তাকে নামিয়ে দিয়ে গেছে। ইনায়া বাড়িতে ঢুকতেই সবাই তাকে একের পর এক জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এক সাথে এতো প্রশ্ন শুনে ইনায়া কান ধরে আসে প্রায়। ইতিমধ্যে নাহিদ আর নওয়াজ মির্জা পুলিশ ইনফর্ম করেছে। ইনায়া খানিকক্ষণ চুপ থেকে ভীতু গলায় বলে ওঠে,

-” আসলে আমি মামার ওখানে গিয়ে ছিলাম। ”

ইনায়ার কথায় সবাই অবাক হয় প্রচুর। সোহানা মির্জা মলিন হাসে। তারপর শান্ত স্বরে বলে ওঠে,

-” কেনো? আমাকে আর বিশ্বাস হয়না বুঝি? মনে হয় আরও ক্ষতি করব?”

-” না মামনি তেমন কিছু না। আমি চাইনি আমার জন্য তোমার আর বাবার মধ্যে কোনো সমস্যা হোক। আমি জানি তুমি আমার জন্য সবসময় বেস্টটাই করবে। কিন্তু তুমি এমনটা কি কারণে বলছো? ”

ইনায়া অত্যন্ত মলিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে। সোহানা কিছু বলার আগে নাহিদ মির্জা গম্ভীর মুখে বলে ওঠে,

-” কারণ, আমরা তোমার বেপারে সঠিক ডিসিশন নেবো ইনায়া। কিন্তু তুমি তা বিশ্বাস না করে তোমার মামার কাছে হেল্প চাইতে গেছো? আমাদের উপর সত্যিই কি তোমার ভরসা নেই? ”

ইনায়া হকচকিয়ে বলে ওঠে,

-” ভরসা আছে। কিন্তু আমার জন্য তোমাদের কোনো ঝগড়া হোক সেটা আমি চাইনি। তাই নিজেই সমস্যা ঠিক করতে চেয়েছিলাম। ”

সোহানা মির্জা ইনায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর তার ধরে সোফায় বসায় এবং সেও বসে পরে। কোমল মৃদু কম্পিত গলায় বলে,

-” আমাকে বিশ্বাস না করাই ভালো। যেখানে আমি বিশ বছরের কারো বিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি। সেখানে তুইতো মাত্র বিশ দিনের বন্ধু। তোকে আজকে অনেক গুলো কথা বলব। শুনবি? ”

ইনায়া কে জিজ্ঞেস করে সোহানা। ইনায়া হালকা মাথা নাড়ায়। বাড়ির বাকি সদস্য যেন নিরব দর্শক হয়ে তাদের দেখে যাচ্ছে। নাহিদ মির্জা সোহানার দিকে তাকিয়ে আফসোস করলেন। কালকে ওই রকম ভাবে না বললে পারতেন। কেউ কাউকে ইচ্ছে করে খারাপ বানাতে পারেনা।

-” তুই নিশ্চয়ই শুনেছিস আমি নাভানের মা নই। ”

সোহানার কথায় সবাই অবাক হয়। কারন সোহানা নিজে কখনো এটা স্বীকার করে নি। আয়েশা মির্জা রক্তচোখে নাহিদ মির্জার দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছেলে তার মস্ত বড় ভুল করেছেন। মাথা নাড়ায় ইনায়া। এই কথাটা সে ভুলে গেছিল প্রায়। সোহানা লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে।

কানাডায় ছিল সোহানার পরিবার। তার বাবা বিশাল বড়ো বিজনেসম্যান ছিল। বাবার সাথেই পুরোদমে বিজনেস পরিচালনা করতো সোহানা। সে এবং তার বড় বোন শায়লা আর মা বাবা কে নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার ছিল। শায়লা খুব চঞ্চল স্বভাবের ছিল। একদম সোহানার বিপরীত দিক। সোহানার বাবা আর নাহিদ মির্জা ছিল বিজনেস পার্টনার। সোহানার ফেমেলির সঙ্গে বিজনেসের খাতিরেই আসা যাওয়া হতো নাহিদের। সেখান থেকেই প্রনয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় শায়লা আর নাহিদ। সম্পর্কের তিন বছর চলা কালিন নাহিদ মির্জাকে বাংলাদেশে ফিরতে হয়। কারন তার বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে সব দায়িত্ব তার কাধে এসে পরে। শায়লা তার পরিবারকে নাহিদের কথা বলতেই সবাই রাজি হয়ে তাদের বিয়ে দেয়। শুধু অমত করেছিল সোহানা। শেষমেশ বাংলাদেশে থাকবে তার বোন। সংসার জীবনের দু বছরের মধ্যে তাদের ঘর আলো করে আসে নাভান। ভালোই সুখে কাটাচ্ছিল শায়লা আর নাহিদের সংসার। এতোকিছুর মাঝে সোহানা তখনও বিয়ে করেনি। সে সারাজীবন বিয়ে ছাড়া কাটিয়ে দিবে বলে পন করে। কারন সে মনে করতো বিয়ে হলেই জীবন টা অন্যের অধিনে চলে যাবে। এই করনে সে সংসার করতে পারবে না। হঠাৎ মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় শায়লা। নাভানের বয়স তখন ৬ বছর। অনেক চেষ্টা করেও শায়লা কে বাঁচানো যায় না। শায়লার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন নাহিদ। তখন নাভান কে মাতৃত্বের স্বাদ দেয় সোহানা। সোহানা নাভান কে তার কাছে রেখে দেয়। নাভানের ১২ বছর বয়সে সোহানা আর নাহিদ পারিবারিক চাপে পরে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। তখন নাভান আর সোহানা বাংলাদেশে ফিরে আসে। সারাজীবন বিদেশে কাটানো সোহানা বাংলাদেশে এসে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। অফিস, বাড়ি সবকিছুই তার কাছে আনকালচার মনে হয়। এই দেশে নাভানের কোনো ভবিষ্যত হবে না ভেবে। নাভান কে ১৫ বছর বয়সে কানাডায় তার নানা নানুর কাছে পাঠাবে বলে ঠিক করে সোহানা। কিন্তু এতে বাধ সাধে আয়শা আর নাহিদ মির্জা সাথে নাভান নিজেও। ছোট থেকে মা কে হারিয়ে সোহানার কাছে বড় হওয়া নাভান কিছুতেই তাকে ছেড়ে যাবে না। নাহিদ মির্জাও মা ভাইকে ছেড়ে কানাডায় শিফট হতে নারাজ। সোহানা অনেকটা যুদ্ধ করেই নাভানকে কানাডায় পাঠায়। সে নাভান কে বিদেশি কালচারে তার মতো করতে চায়। নাভান অনেকেটা মন খারাপ করে দেশ ছেড়ে নানা নানুর কাছে যায়। মায়ের প্রতি জেদ ধরে সে বিদেশের মাটিতেই পরে থাকত। সোহানা বললেও ছুটিতে দেশে আসত না নাভান। হটাৎ নানা নানুর আকস্মিক মৃত্যুর পর পুরো একা হয়ে যায় সে। তখন সোহানা শত আদেশ করেও নাভান কে দেশে আনতে পারে না। আস্তে আস্তে নাভান একাকিত্বে ডুবে যায়। সেই একাকিত্ব কাটাতেই সে বেছে নেয় একাধিক নারী সঙ্গ।

চলবে…………..

(পরবর্তী ১০ নাম্বার পর্ব পেতে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে পাশে থাকবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here