উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #পর্ব১৬ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
51

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব১৬
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

নিকষ কালো আঁধারের চাঁদরে ঢাকা পৃথিবী। ছাদের এক কোণে নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে আছি। রাতের নিস্তব্ধতায় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে হাজারো প্রশ্নের মেলা। তবে কি আদ্র ভাই আমাকে ভালোবাসতো? চোখের সামনে একটা মানুষ গোপনে আমায় এতটা ভালোবেসে গেল আমি বুঝতেও পারলাম না। মানুষটা সত্যিই খুব বিচিত্র। তখন তার ডায়েরিতে নিজের ছবি দেখে বুঝতে একটুও দেরি হলো না যে আদ্র ভাইয়ের রৌদ্রময়ী আর কেউ নয় স্বয়ং আমি। তার অনুভূতি সম্পর্কে জেনে অনেকটা সময় ‘থ’ মেরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনের মাঝে কোনো অনুভূতি ছিলো না। মনে হচ্ছিলো আমি একটা ঘোরের মধ্যে ডুবে গিয়েছিলাম। ঘোর ভাঙলো আরুর চিৎকারে।

ছাদে দাঁড়িয়ে রাতের শহর দেখছি আর হিমেল হাওয়া উপভোগ করছি। হটাৎ একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। ইভান ভাই যাওয়ার পড়ে এমনই একদিন এক আকাশ মন খারাপ নিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বুক চিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘনিশ্বাস। ধীর পায়ে পাশে এসে দাঁড়ালো আদ্র ভাই। মানুষটা আমাকে একটু মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দেয় না। সব সময় চোখে চোখে রাখে। আকাশের দিকে মুখ করে পাশে থাকা আদ্র ভাইকে বলল,
“আদ্র ভাই সে আমাকে কেন ভলোবাসলো না? আমি কি দেখতে খারাপ নাকি আমাকে ভালোবাসা যায় না। কেউ আমাকে ভালোবাসেনি, কেউ না”

আদ্র ভাই তখন বিরবির করে বলেছিলো,
“তুমি যদি জানতে রৌদ্রময়ী আমি তোমাকে কতটা চাই বা ভালোবাসি, তবে তুমি চোখ বন্ধ করে বলতে, আমি এই দুনিয়ার সবচাইতে সৌভাগ্যবতী নারী”

সেদিন আদ্র ভাইয়ের কথা গুলো নিয়ে মাথা না ঘামালেও এখন সেগুলো মনে পড়ছে। আমাকে এতটা নিঃস্বার্থ ভাবে কেউ ভালোবাসতে পারে আমি সেটা কখনোই ভাবিনি। বরাবরই আদ্র ভাইকে ভাই হিসেবে দেখে এসেছি যদিও এই কয়েক দিনে সে ভাই থেকে বন্ধুর স্থানটা দখল করে নিয়েছে। শুধু বন্ধু না খুব ভালো বন্ধু। যাকে নির্দ্বিধায় সব কিছু বলা যায়। আদ্র ভাইকে নিয়ে ভাবছি এমন সময় কারো আগমনের শব্দ ভেসে আসছে কানে। মানুষটা আর কেউ নয় আদ্র ভাই। আদ্র ভাই এসে খানিকটা দুরুত্ব নিয়ে আমার পাশে দাঁড়ালেন। ঘুরে আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। মানুষটাকে কখনো সেভাবে পরখ করা হয়নি। তার মাঝে যে এক প্রেমিক সত্ত্বা বিদ্যমান সেটা ভাবিনি। অ্যাশ কালার শার্ট কালো রঙের প্যান্ট পরিহিত আদ্র ভাইকে দেখতে একদম সুপুরুষ লাগছে। ইভান ভাইয়ের মতো ধবধবে ফর্সা না হলেও তিনি যথেষ্ট সুদর্শন একজন পুরুষ। তাকে দেখে যেকোনো মেয়ে মুহূর্তেই প্রেমে পড়ে যাবে। তার কেয়ার, তার কথা বলার ধরণ, সব সময় সবাইকে মাতিয়ে রাখা একটা মেয়েকে তার প্রতি দুর্বল করতে সক্ষম। তবে চোখের সামনে থাকা মানুষটাকে কখনো সেভাবে দেখা হয়নি। আজ যেন মানুষটাকে নতুন রূপে দেখছি মনে হচ্ছে। আদ্র ভাই আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? নজর সামলা নাহয় প্রেমে পড়ে যাবি”

আদ্র ভাইয়ের কথা শুনে একটু লজ্জা পেলাম। তবে নিজেকে সামলে গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করলাম। আদ্র ভাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,
“ভালোবাসো আমায়?”

আদ্র ভাই চমকে আমার দিকে তাকালেন। উনি হয়তো কখনো আশা করেননি আমি উনাকে এরকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো। আদ্র ভাই অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
“কি হলো বলো?”

আদ্র ভাই নিজেকে সামলে নিয়ে বুকে দুহাত গুঁজে দাঁড়ালেন।
“কোনটা বলবো? সত্যি নাকি মিথ্যা?”

“সত্যি”

“আমি আমার রৌদ্রময়ী কে ভালোবাসি”

“রৌদ্রময়ী টা কে?”

“তুই”

“তাহলে?”

“তাহলে আর কি, ভালোবাসি তোকে”

আদ্র ভাইয়ের মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনে মনের মাঝে অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। এই অনুভূতি যেন নতুন এক অনুভূতি। যার সাথে আগে আমার পরিচয় হয়নি। দুজনের মাঝে নীরবতা। কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমি তাকিয়ে আছি আকাশ পানে। আদ্র ভাইয়ের দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারছি উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার তাকানোতে কেমন লজ্জা লাগছে।
“রৌদ্রময়ী কি আমায় ভালোবাসে?”

আদ্র ভাইয়ের প্রশ্নে তার দিকে ফিরে তাকালাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না। সত্যি বলতে তার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি নেই। আদ্র ভাই কাতর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
“আমায় কি ভালোবাসা যায় না, রৌদ্রময়ী?”

আদ্র ভাইয়ের কাতর কণ্ঠে কি যেন ছিলো। তার কথাটা মনের কোথাও গিয়ে আঘাত হেনেছে। মনের মাঝে চিনচিন অনুভূতি হচ্ছে। সত্যিই তো মানুষটাকে কি ভালোবাসা যায় না? যায়। ফের দুজনের মাঝে নীরবতা। এভাবেই নীরবে কেটে গেল অনেকক্ষন। আজকে আদ্র ভাই কোনো কথা বলেন না। বাকিটা সময় নীরব রইলেন। অতঃপর মুখ খুলে বলেন,
“রাত অনেক হয়েছে ঘুমাতে যা”

আদ্র ভাইয়ের কথায় সায় জানিয়ে চলে এলাম। রুমে এসে মাথায় শুধু আদ্র ভাইয়ের কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। তার কাতর কণ্ঠ। করুণ চাহনি। মনের মাঝে উথাল পাথাল করছে। বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছি কিন্তু তার চিন্তা যেন মাথা থেকে যাচ্ছে না। এক সময় তলিয়ে গেলাম গভীর ঘুমে।
—–

সময়ের স্রোতে দিন গুলো কেমন চোখের নিমিষেই কেটে যাচ্ছে। আদ্র ভাইদের বাসা থেকে এসেছি সপ্তাহ খানেক হয়ে গেছে। মেডিকেল পড়াশোনা সব কিছু নিয়ে প্রেসারে আছি। তবে আদ্র ভাই মানুষ টা প্রতিদিন সময় করে আমার খোঁজ নেয়। তার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগে। উনার সাথে কথা বলার সময় মনে এক অন্য রকম অনুভূতি জাগে। যা আগে কোনো দিন হয়নি।

মেডিকেল থেকে বাসায় এসে উঁকি দিলাম ঈশিতা আপুর রুমে। তাকে ইদানিং আড্ডায় পাওয়া যায় না। সারাদিন তাকে ফোন নিয়ে থাকতে দেখা যায়। ঈশিতা আপুর রুমে ঢুকে দেখলাম সে কার সাথে যেন ফিসফিস করে কথা বলছে। কাছে যেয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“আপু কার সাথে কথা বলছো? দুলাভাই নাকি আমাদের?”

ঈশিতা আপু আমার কথা খেয়াল না করে আনমনে জবাব দিলো,
“হ্যাঁ”

“কি! সত্যি?”

ঈশিতা আপুর এবার ধ্যান ভাঙলো। আমাকে তার পাশে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল। ফোনে ওপাশের ব্যক্তিতে,
“এখন রাখছি। পড়ে কথা হবে”

বলে রেখে দিলো। আমার দিকে ঘুরে কান মুচড়ে ধরে বলল,
“বড় বোনের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে?”

“নজর না রাখলে হয়। এখন বলো অফিসিয়ালি দুলাভাই কবে পাচ্ছি?”

“কয়েক দিনের মাঝেই বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাবে”

“তাহলে খুব শীঘ্রই তোমার সানাই বাজলো বলে”

ঈশিতা আপু লজ্জা পেয়ে গেল। লজ্জায় তার গাল গুলো লাল হয়ে যাচ্ছে। ঈশিতা আপুকে কিছুক্ষণ টিজ করে রুমে চলে এলাম। রুমে আসতেই কানে এলো ফোনের শব্দ। দৌড়ে দিয়ে ফোন হাতে নিতে সামনে ভেসে উঠলো আদ্র ভাইয়ের নাম। কি সুন্দর গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,
“আদীব চৌধুরী আদ্র”

তার নাম দেখে মনের মাঝে অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। হাত কেমন কাঁপছে। হৃদয়স্পন্দন বেড়ে গিয়েছে। দেখতে দেখতে কলটা কেটে গেল। সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় বসতেই যাবো এমন সময় হাতের ফোন পুনরায় বেজে উঠলো। রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে আদ্র ভাইয়ের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো,
“ফোন ধরছিলি না কেন? কোন রাজকার্য করছিলি শুনি? এই নিয়ে কয়বার ফোন দিয়েছি খেয়াল আছে?”

“সরি! আমি ঈশিতা আপুর রুমে ছিলাম আর ফোন ছিলো রুমে তাই রিসিভ করতে পারিনি”

আদ্র ভাই যেন কোমল হলেন। কোমল স্বরে বললেন,
“সেকি জানে তার কণ্ঠ শোনার জন্য আমি কেমন চাতক পাখির ন্যায় বসে থাকি। তাকে একটি বার দেখার জন্য আমার শহরে হাহাকার নামে। মনে এক আকাশ সম ইচ্ছে হয় তাকে চোখের সমানে বসিয়ে রাখি। সারাদিন বসে বসে তাকে দেখলেও আমার এ জীবনে তাকে দেখার তৃষ্ণা মিটবে না”

আমি চুপচাপ আদ্র ভাইয়ের কথা গুলো শুনছি। তার অনুভূতি গুলো অনুভব করার চেষ্টা করছি। আমার কি হলো জানি না আদ্র ভাইকে বললাম,
“এতই দেখার ইচ্ছে হলে বাসায় চলে এসো। নয়ন ভরে দেখে যেও তোমার রৌদ্রময়ীকে”

আদ্র ভাই ফট করে বলেন,
“সত্যি বলছিস, আসবো?”

আদ্র ভাইয়ের লজ্জা পেয়ে গেলাম। মুখে বললাম,
“জানি না”

কল কেটে দিলাম। লজ্জা লাগছে। ফোনটা রেখে কোলবালিশ জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।
—–

রাতের খাবার খেয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। রোশনিকে পাঠিয়ে দিলাম দরজা খোলার জন্য। কে এসেছে দেখার জন্য উঁকি দিতেই চোখ আটকে গেল কালো শার্ট কালো প্যান্ট পরিহিত ফর্মাল লুকে আদ্র ভাইকে। এলোমেলো চুল, কুঁচকে যাওয়া শার্ট সব মিলিয়ে মানুটাকে অন্য রকম লাগছে। আদ্র ভাইকে দেখে আম্মু এগিয়ে গেল।
“আদ্র বাবা তুই এতো রাতে?”

“একটা কাজে এদিকে এসেছিলাম। এখন বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না তাই তোমাদের বাড়ি চলে এলাম”

বলে আমার দিকে তাকালেন। উনি যে এখানে কেন এসেছে সেটা আর কেউ না জানলেও আমি তো জানি। আম্মু আদ্র ভাইকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলেন। আম্মু আদ্র ভাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন এমন সময় আব্বুর ডাক।
“রোদ এদিকে আয় তো”

উঠে গিয়ে আম্মুর সামনে যেতেই বললেন,
“আমাকে তোর আব্বু ডাকছে আমি যাচ্ছি। তুই দেখ আদ্রর কিছু লাগে কি না”

আম্মু চলে গেল। আমি টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্র ভাই চোখের ইশারায় পাশের চেয়ারে বসতে বলল। আমি না বসে জিজ্ঞেস করলাম,
“তোমার কিছু লাগবে? লাগলে বলো নাহয় আমি গেলাম”

“তোকে লাগবে”

আদ্র ভাইয়ের কথায় থমকে গেলাম । আদ্র ভাই পুনরায় চোখের ইশারা তার পাশে বসতে বললেন। কিছু না ভেবে বসে পড়লাম। আদ্র ভাই খাওয়ার মাঝে আড় চোখে তাকাচ্ছে। তার তাকানোতে আমার লজ্জা লাগছে। আদ্র ভাই খাওয়া শেষে উঠে আমার ওড়নার কোণা টেনে হাত মুছতে মুছতে ফিসফিস করে বলেন,
“ছাদে আয়, কথা আছে”
—–

আদ্র ভাইয়ের সমানে দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষন। উনি সেই কখন থেকে গালে হাত দিয়ে এক ধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকে এভাবে তাকাতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি দেখছো?”

“ভাবছি?”

আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি?”

“আমার রৌদ্রময়ীর এক জোড়া চোখের বর্ণনায় গোটা একটা উপন্যাস লেখা সম্ভব”

#চলবে?

(আপনাদের অপেক্ষায় রাখার জন্য দুঃখিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here