উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #পর্ব৭ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
160

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৭
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

নিকষ কালো আঁধারের চাদরে মোড়া পৃথিবী। আকাশে থালার ন্যায় চাঁদ। আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ধরণীতে। দোলনায় বসে এক দৃষ্টি দূর আকাশের ওই চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি। মনটা প্রচন্ড খারাপ। কিছুই ভালো লাগছে না। রাত আনুমানিক দুটোর মতো হবে কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। চোখের সামনে ভেসে উঠছে ইভান ভাইয়ের রক্তিম চেহারা। তার কথা গুলো। মানুষটা বড্ড পাষান। আমায় কষ্ট দেওয়ার বেলায় তিনি যেন সদা প্রস্তুত। মানুষটা আমায় এতো অপছন্দ কোনো করে? আমি কি তার বাড়া ভাতে ছাই ফেলেছি? মোটেও না। তাহলে কেন তার আমার সাথে এতো শত্রুতা? আমি ভাবনার শহরে বিচরণ করছি এমন সময় পাশে কেউ বসলো। কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি আদ্র ভাই। তিনি এতো রাতে? ঘুমাননি নাকি?
“আদ্র ভাই আপনি? এতো রাতে এখানে কি করছেন? ঘুমাননি”

“তার আগে বল এতো রাতে তুই এখানে কি করছিস”

“ঘুম আসছে না তাই”

“ঘুম না আসার কারণ?”

“মন ভালো নেই”

“আমার কাছে তোর মন ভালো করার জিনিস আছে? দেখবি?”

“দেখাও”

আদ্র ভাই পকেট থেকে কয়েক পেকেট কিটক্যাট বের করলো। কিটক্যাট দেখতেই আমার চোখ গুলো চকচক করে উঠলো। কিটক্যাট আমার সবচেয়ে পছন্দের চকলেট। আদ্র ভাইয়ার গাল টেনে দিয়ে বললাম,
“থ্যাংক ইউ ভাইয়া”

আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,
“থ্যাংক ইউয়ের দরকার নেই। সব সময় হাসি খুশি থাকবি এতেই আমি খুশি”

আমি কিটক্যাট এর এক পেকেট খুলে মুখে দিলাম। আদ্র ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“জানিস রোদ তোকে না হাসি খুশি রূপেই মানায়। মন খারাপ করলে তোকে বড্ড বিচ্ছিরি দেখায়। আকাশে যেমন কালো মেঘের আনাগোনা মানায় না তেমনই তোর মুখেও মন খারাপ মানায় না। কখনো মন খারাপ করবি না। তোর মন খারাপে কারো মনে দহন সৃষ্টি হয়। তার দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে। একটুও ভালো লাগে না তার”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
“কে সে?”

“খুঁজে দেখ। পেয়ে যাবি”

“আমার এতো সময় নেই কাউকে খোঁজার। যার ইচ্ছে হবে সে নিজে এসে দেখা দিয়ে যাবে”

“কিন্তু সে যে ভয় পায় তোর সামনে আসতে। তোর সামনে এলে তার পুরো সত্তা এলোমেলো হয়ে যায়। তার নিজেকে পাগল পাগল লাগে। সেই ভয়েই তো সে তোর কাছে আসে না”

“সে তো একটা ভীতুর ডিম”

“ঠিকই বলেছিস। সে সত্যিই ভিতুর ডিম”

এভাবেই দুজন গল্প করছি। আদ্র ভাই মজার মজার একেকটা কথা বলছেন আর আমি খিল খিল করে হেসে চলেছি। আদ্র ভাইয়ের মুখেও লেগে আছে আময়িক হাসি। তবে তার হাসি আমার মতো খিল খিল হাসি না। সে মুচকি হাসছে । আদ্র ভাইয়া মানুষটা সব সময় হাস্যজ্জল । তার মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে। আর সে সব সময় সবাইকে হাসাতে ভালোবাসে। কারো মন খারাপ থাকলে এমন এমন কথা বলবে যে সে হাসতে বাধ্য হবে। তার এই গুনটা আমার অনেক ভালো লাগে। তার বউ হয়ে যে আসবে সে নিশ্চিত খুবই ভাগ্যবতী হবে। ভাইয়ার সাথে অনেকক্ষন গল্প করলাম। এখন মনটা একদম ফ্রেশ।একটু আগের মন খারাপ যেন কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছে। মন ভালো করার ওষুধের কাছে থাকলে কি আর মন খারাপ থাকে? ভাইয়া হাত ঘড়ি দেখে বলল,
“দেখ গল্প করতে করতে প্রায় তিনটার মতো বেজে গেছে। যা গিয়ে ঘুমিয়ে পর। নাহয় চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে যাবে। তখন পে*ত্নীর মতো লাগবে”

“আদ্র ভাই!”

“আরে মজা করলাম। যা ঘুমিয়ে পর নাহয় শরীর খারাপ করবে”

“হ্যাঁ, তুমিও যাও”

“তোকে আমার কথা ভাবতে হবে না। তুই যা”

আমি নিচে চলে এলাম। আসার আগে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মনটা এখন একদম ফুরফুরে। বিছানায় গাঁ লাগাতেই ঘুমের দেশে পারি জমালাম।

নতুন দিনের সূচনা। ফুরফুরে মন নিয়ে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছি। স্নিগ্ধ সকালটা খুবই সুন্দর লাগছে। গেটের দিকে চোখ যেতেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। ইভান ভাই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। খারাপ মানুষের দিকে তাকাবো না। সে আমাকে আঘাত করেছে। তার দিকে একটুও তাকাবো না। মুখ ভেংচি কেটে চলে এলাম রুমে। রেডি হয়ে নিচে নেমে দেখি আদ্র ভাই আর রুদ্র ভাই বসে কথা বলছে। আদ্র ভাইকে দেখে সকাল সকাল মনটা ভালো হয়ে গেল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে কলেজের জন্য বের হলাম।ইভান ভাইকে দেখেও না দেখার ভান করে এগিয়ে গেলাম। পিছন দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারছি সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকলে থাকুক এতে আমার কি?
———-

রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ইভান ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে ফেলি। বজ্জাত লোক একটা। আজকে সবাইকে অভ্র ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে। কিন্তু ইভান মহাশয় আমাকে আর ইভাকে বসিয়ে রেখেছে। পড়া শেষ না হলে যেতে দিবে না আর এদিকে আমার পড়ার কোনো লক্ষণই নেই। হাজার চেষ্টা করেও একটা পেরাগ্রাফ মুখস্ত করতে পারছি না। ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজেই বাড়ি দেই। ইভান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে করুণ স্বরে বললাম,
“ইভান ভাই প্লিজ যেতে দিন না। কালকে শিওর পড়া কমপ্লিট করে আসবো”

“কোনো বাহানা শুনতে চাই না। পড়া শেষ করে যেদিক ইচ্ছে যা। আমার ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছে। আমি তোদের মতো যাওয়ার জন্য পাগল হয়েছি? মনে হচ্ছে ভাইয়ের জন্য মেয়ে না, তোদের জন্য ছেলে দেখতে যাচ্ছে”

তার কথা শুনে আর কিছু বললাম না। এই লোক নিজেও যাবে না আর আমাদেরও যেতে দিবে না। বজ্জাত লোক একটা। এক ধ্যানে পড়ার দিকে তাকিয়ে আছি। দেখি পড়া মুখস্ত না হয়ে যায় কোথায়। দীর্ঘ এক ঘন্টা পড়ে পড়া কমপ্লিট হলো। মাঝে রোশনি দুইবার ডেকে গেছে। কিন্তু ইভান ভাইয়ের মন একটুও গোলেনি। পড়া শেষ করে স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে দেখি পুরো বাড়ি ফাঁকা। আমি, ইভা আর ইভান ভাই বাদে কেউ নেই। মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। কি আর করার মনে খারাপ করে ছাদে চলে এলাম। ছাদে এসে দেখি কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি আদ্র ভাই। তারও তো যাওয়ার কথা ছিলো।
“তুমি যাওনি?”

“না”

“কেনো?”

“আমি চলে গেলে যে তুই একা হয়ে যেতি। মন খারাপ হয়ে যেত তোর। তাই ভাবলাম থেকে যাই”

“অনেক ভালো করেছো। সত্যিই মনটা খারাপ ছিলো। কিন্তু তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেছে”

“তাহলে কি আমি তোর মন ভালো করার ওষুধ?”

আমি হেসে দিয়ে বললাম,
“তুমি তো সবার মন ভালো করার ওষুধ”

আদ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। দুজন মিলে গল্প জুড়ে দিলাম। আদ্র ভাইয়ের সাথে থাকলে মুখে সর্বদাই হাসি লেগে থাকে। আমাদের কথা বলার মাঝে ইভা আর শুভ ভাই ছাদে এলো। শুভ ভাইকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললাম। এই মহাশয় যায়নি কানো?
“শুভ ভাই তুমি এখানে? তুমিও যাওনি?”

“এখানে থাকবো না তো কোথায় থাকবো? না যায়নি। তুই তো জানিস আমার এইসব ভালো লাগে না। আমি আমার রুমে পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে মাথা ধরে গিয়েছে তাই ভাবলাম ছাদ থেকে ঘুরে আসি”

“ভালোই করেছো যাওনি। এখন আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিবো। কি মজা”

“পা*গলী মেয়ে। এই টুকুতেই এতো আনন্দ”

“হুম”

চারজন মিলে আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডার মাঝে মাঝে গেটের দিকে তাকাচ্ছি। কিন্ত লাট সাহেব আসার নাম নেই। না আসুক সে। তাকে লাগবেও না আমাদের আড্ডায়। তবুও বেহায়া মন তার আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। শুভ ভাইয়ের মাথা ধরেছে। তাই কফি বানাতে নিচে নামলাম। এক মনে কফি বানাচ্ছি। আজকে সেদিনের মতো বেখেয়ালি হলে চলবে না। কফি নিয়ে যাওয়ার সময় দেখি ইভান সাহেব দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। মুখে লেগে আছে আময়িক হাসি। দেখে মনে হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছে। সত্যিই কি তার গার্লফ্রেন্ড আছে? থাকলে থাকবে এতে আমার কি? সত্যিই কি আমার কিছু না? হয়তো না। মনকে বুঝলাম। সে আমার ভাইয়া। শুধুই ভাইয়া। কফি নিয়ে ছাদে চলে এলাম। সবাই মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দিয়ে নিচে চলে এলাম।

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। হটাৎ খেয়াল করলাম ইভান ভাই রেডি হয়ে নিচে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। হয়তো কোথাও যাবে । মাথায় দুস্টু বুদ্ধি চাপল। এক মগ পানি এনে তার গাঁয়ে ফেলে দিলাম। উনি তাকানোর আগেই নিচে বসে পড়লাম যেনো আমাকে দেখতে না পায়। উনি আমাকে যেতে দেয়নি আমিও ওনাকে যেতে দিবো না। হিসাব বরাবর। নিচ থেকে চিৎকার ভেসে এলো,
“রোদের বাচ্চা”

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here