প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার #লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) #পর্ব_১০(এলার্ট পর্ব

0
38

#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১০(এলার্ট পর্ব বোনাস)

“এই নাসমার মা শুনো গত রাতের আগের দিন পিল খাইছিলা?”

রূপালি বেগম আঁতকে উঠলেন। তিনি ভুলে গিয়ে ছিলেন নাসমার বাবার দেওয়া ওষুধটার কথা। তবুও তার চেহারার দিকে কিছুটা ভয়ভীতি নিয়ে তাকান। ভালো মন মানসিকে থাকলে সত্য বলবেন যদি মন্দ দেখেন মিথ্যে বলবেন। ঢোক গিলে কিঞ্চিৎ মুহূর্ত অব্দি চেহারাটা অবলোকন করলেন। নাছির উদ্দিন নিজ স্ত্রীকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্তির সহিতে জিজ্ঞেস করলেন।

“কী হইলো কথার‌ জবাব না দিয়ে চাইয়া আছো কেন? আমার মুখে কী উত্তর লিখা আছে যে চাইয়া জবাব দেওয়ার অপেক্ষা করছো?”

রূপালি বেগম আমতা আমতা করে ভয় কে কাবু করে হাত কচলাতে থেকে বলেন,

“আসলে আমার দ্বারা ভুল হইয়া গেছে নাসমার বাপ। আপনার রাখা পিলটা আমি ভুলে ফেলাই দিছিলাম। কসম আমি খেয়াল করি নাই। খেয়াল করলে খাইয়া ফেলতাম।”

নাছির উদ্দিন শুনে গম্ভীর চেহারা নিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকান। তার সন্নিকটে গিয়ে দাঁড়ান। রূপালি বেগম কেঁপে উঠলেন। নাছির উদ্দিন স্ত্রীর মুখ বরাবর মুখ এনে বলেন,

“যাও মাফ করলাম। আজ আমার খুশির দিন দেইখা তোমারে কিছু কইলাম না। পরে কিন্তু ভুল হতে পারব না।”

রূপালি বেগম স্বস্তি ভরা জোরালো শ্বাস টেনে ছাড়লেন। নাছির উদ্দিন লুঙ্গির ভেতর প্যান্ট পরে পরণে শার্ট জড়ানোর সময় আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। রূপালি বেগম জানেন তার স্বামী এখন দোকানে যাবেন। তার ব্যবসার মূল সূত্র সেই দোকান। তবে দোকানের নামটা রূপালি বেগমের কাছে অদ্ভুত লাগে। তিনি যতবার নামটা স্মরণ করেন ততবার তিনি নামটা রাখার কারণ জানতে চাইলে লোকটা জবাব দেন না। তখন তার চেহারায় এক অসহায় করুন চাহনী ভেসে উঠে। সেই কারণটা কী রূপালি বেগম এত বছর সংসার করেও জানতে পারলেন না। নাছির উদ্দিন লুঙ্গিটা রূপালি বেগমের হাতে ধরিয়ে শার্ট প্যান্ট টান টান করে ভদ্রলোকের বেশে বেরিয়ে গেলেন। রূপালি বেগম পিছু ডেকে আজ পুনরায় কথাটা আওড়ে নিতে চান। তবে এতে যদি তিনি চটে যান। সেই ভয়ে ডাকলেন না।
মনে মনে পুনরায় নামটি নিলেন ‘পুষ্পরীন’। নামটার সঙ্গে তিনি কারো মিলও খুঁজে পান না। তবে কী হতে পারে? হঠাৎ কারো ডাকে চমকে পিছু তাকায় সে। নাসমা ঘুম ঘুম চোখে মায়ের কাছে এলো। নাসমাকে দশটায় জেগে উঠতে দেখে মুচকি হেসে বলেন,

“কী গো মা জেগে গেলে কেনো? আরেকটু ঘুমাতে। এখনো ত্রিশ মিনিট ছিলো আমি ডেকে দিতাম। আজ বন্ধ পেলে স্কুল। ছুটিতে ঘুমাবে প্রচুর বুঝলে?”

নাসমা চোখ কচলে ঘুম ঘুম কণ্ঠে প্রশ্ন করে উঠল।

“আমরা যদি ঘুমাতে পারি তাহলে আপা কেনো পারে না? আপাকে কেনো ফজরের নামাজের পর থেকে ডেকে তুলে দাও? আপা তো না‌ ঘুমানোর কারণে তার চোখের নিচে কালি জমছে। দেখতে খারাপ লাগে না বুঝি। আজকে থেকে আমিও আপার সাথে জেগে যাবো। আপা কোথায় আমাকেও ডাকল না।”

রূপালি বেগম মাথা নিচু করে অন্য দিক মুখ ফিরিয়ে চোখের জল নিয়ন্ত্রণ করে বলেন,

“তোমার আপা এখন ভার্সিটিতে। তাদের বন্ধ দেয়নি। তোমাদের প্রতিষ্ঠানে সাময়িক সমস্যার জন্য চারদিন শুধু বন্ধ দিলো। সমস্যা তোমাদের প্রতিষ্ঠানে হয়েছে কিন্তু তোমার আপুদের ভার্সিটিতে সমস্যা হয় নাই‌। তাই বন্ধ নাই ওর বুঝছো?”

নাসমার মুখ উদাসীন হয়ে গেল। ছোট মেয়ের মধ্যে বড় বোনের প্রতি লাঘব সম্পর্ক দেখে মনে স্বস্তি পান তিনি। তবে বড় ছেলেটা গম্ভীর থাকে। কেনো থাকে আদৌ জানেন না তিনি। নাসমুর এমুহুর্তে খেলার মাঠে হবে। তাই ছেলের আগমনের পূর্বেই তিনি ছেলের জন্য নাস্তা বানাতে গেলেন। নাসমাকে এখন নাস্তা দেবেন কি-না জিজ্ঞেস করলেন তিনি। নাসমা বায়না ধরল সে তার ভাইয়ের সাথে বসে খাবে। এতে রূপালি বেগম হাতে সময় পেলেন আলুর পরোটা বানানোর। আজকে একটু বেশি বানিয়ে রাখবেন বলে ভেবে নিলেন তিনি। নাসমার বাবার অগোচরে তা হট বক্সে ভরে রাখবেন বড় মেয়ের জন্য। মেয়েটার পেটে গতকাল দানাপানি পড়েনি জেনে তিনিও মুখে কোনো খাবার তুলতে পারেননি। শুধু নাসমার বাবাকে দেখানোর ভান করে ভাত তরকারি নিয়ে তা রেখে দিয়ে ছিলেন। রাত হতেই তিনি লুকিয়ে ভাত তরকারি মাখানো বাটিটি রান্নাঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে উঠানের নিয়ে যান। উঠানের বাহিরে পথ পেরুলেই একটা গরিব শুয়ে ঘুমোয় থাকে রাস্তায়। তার পাশে বাটি ভর্তি ভাত তরকারি একটা পলিথিনের ভেতর নিয়ে পলিথিনটি সেখানে রেখে চলে আসেন। মা তো মেয়ে খায়নি তিনিও কেমনে মুখে খাবার তুলবেন? মায়ের অন্তর তার সব সন্তানদের জন্যেই সমান।

___
“শেহরীনা এসব আমরা কী দেখলাম? সারোয়ার স্যার তোর গালে চুমু চুমু খাইছে। বাপরে শেষমেশ এই দেখার ছিল?”

ইপশিতার কথায় লজ্জায় মাথা নামিয়ে টেবিলে মাথা ঠেকে আছে শেহরীনা। ফারদিন স্বাভাবিক নয়নে চেয়ে আছে। ইপশিতা বার কয়েক ফারদিনের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করল। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছে না। ফারদিন শেহরীনার পিঠে ধুমধাম চাপড় মেরে বলে,

“তাহলে আপনিই সেই সুপুত্রী যে কি-না আমার ভাইকে রিজেক্ট করেছেন। মাই ডেয়ার হবু ভাবী প্লিজ একসেপ্ট দ্যা প্রপোজাল। হি ইজ সাচ এ‌্যা কাইন্ড এন্ড লাভলী পার্সন।”

শেহরীনা বন্ধুমহলের কথায় বিরক্তির স্বরে বলে,

“ধ্যাঁত তোরা না মেসেজ করে আসবি না বলছিলি। হুট করে আকাশ থেকে টপকায় পড়লি কেনো‌ হুম? এসে থেকে কী শুরু করেছিস। ভাই বাদ দেয় না চোখের দেখা সবসময় সত্য হয় না।”

ফারদিন,জাফরান আর ইপশিতা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাহা করে হেসে উঠল। শেহরীনা ব্যাগটা কাঁধে জড়িয়ে নিয়ে তাদের মাঝখান থেকে বেরিয়ে ক্লাসের দিকে আগাল। তার বন্ধুমহল হৈ হৈ করে তার পিছু নেয়। আড়াল থেকে একজোড়া চোখ শেহরীনার যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সারোয়ার চেয়ারম্যান এর হাতে বন্দোবস্ততার টাকা সঁপে দিয়ে বলে,

“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার। আমার কথাটুকু রাখলেন। আপনারা চাইলে স্টুডেন্টদের খাওয়ার পর আলোচনা সভা শুরু করতে পারেন। তবে একটা অনুরোধ একটায় শেষ করে ছেড়ে দিয়েন। আমি আজ শেহরীনাকে নিয়ে যেতে চাই।”

সারোয়ার এর কথায় অর্ধবয়স্ক চেয়ারম্যান তার কাঁধে হাত রেখে মুচকি হেসে বলেন,

“ওকে ইয়াংম্যান। তোমার কথা রাখব না তা কেমনে হবে? তুমি বলেছো বুঝো সেটা হয়েই গেল। এখন যায় নাহয় আবার সবাই ক্লাসে ঢুকে পড়বে।”

সারোয়ার মাথা নেড়ে সায় দিল। তিনি আর সারোয়ার একসাথে কেবিন থেকে বের হতেই শেহরীনাদের দেখতে পেল। চেয়ারম্যান কে দেখে তারা থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে যায়। কেননা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সামনে পড়ায় তারা মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল। সারোয়ার একদৃষ্টিতে লাজুক শেহরীনার দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম তার মনে হচ্ছে সে তার হবু স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির স্বাদ পাচ্ছে। প্রথম অনুভূতি, প্রথম অনুভব কারো মুগ্ধতার জোয়ারে ভাসা সে প্রথম আহাট পেয়ে আপ্লুত হচ্ছে। ফারদিন তার কাজিন ভাই সারোয়ার এর দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় পলকে শেহরীনার দিকে তাকিয়ে গলা ঝেড়ে ‘আহেম আহেম’ শব্দ বের করে মুখ দিয়ে। এতে হকচকিত চোখে সারোয়ার এদিক ওদিক তাকিয়ে মাথা চুল নেড়েচেড়ে বলে,

“আসলে স্যার আমার কোর্টে কাজ‌ আছে। একজনের সাথে দেখা করতে হবে। তার সাথে কথা বলে বের হয়। আপনি তাহলে যান। আর তোমরা ওদিকে কোথায় যাচ্ছো? আজকে আর ক্লাস হবে না ভুলে গেছো?”

ফারদিনরা খুশি হয়ে গেল। শেহরীনা খানিকক্ষণ এর জন্য ভুলে গিয়ে ছিল যে, আজ ক্লাস হবে না। এ মুহূর্তে তার মনে আসায় সেও আরাম বোধ করল। বন্ধুমহলের সাথে থেকে আড্ডা দেবে সেটাই তার জন্য আনন্দময়।
হঠাৎ দারোয়ান এসে ‘শেহরীনা কে এখানে’ বলে উঠল! তার প্রশ্নে ফারদিন ভ্রু কুঁচকে শেহরীনাকে দেখিয়ে বলে,
‘এতো এই শেহরীনা কিন্তু কেনো?’
দারোয়ান শেহরীনার আপাতমস্তক পরখ করে বলে,
‘আপনার খুঁজে আপনার বাবা আইছেন। গেইটের দৌড়ারে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।’

শেহরীনা ‘বাবা আসছে’ শুনে থমকে গেল। তার কোন বাবা আসল? তার নিজের আপন র*ক্তের বাবা? তার ধারণায় সে উৎফুল্ল হয়ে সবাইকে ফেলে গেইটের দিকে ছুটল। সারোয়ার ও পিছু যায়। তার ও জানার আগ্রহ শেহরীনার আসল বাবা কে? শেহরীনা গেইটের কাছে হাসিমাখা মুখে আসলেও তার কদম গেইটের থেকে কিছুটা দূরেই থেমে যায়। মুখের হাসি মিলিয়ে মলিনতা ছড়িয়ে পড়ল। নাছির উদ্দিন ভদ্রলোকের বেশে গেইটের মধ্যে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পরপর ঘড়ি দেখছেন আর গেইটের দিকে তাকাচ্ছেন।‌ বোধ হয় শেহরীনার অপেক্ষায় তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। ফারদিনরা শেহরীনার সৎ বাবাকে কখনো দেখেনি। আজ দেখে তারাও কিছুটা অবাক। ভদ্রলোকের বেশভূষায় মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী লাগছে নাছির উদ্দিন কে। ইপশিতা শেহরীনার কাঁধে হাত রাখল। হুঁশ আসে তার। ফারদিনরা মাথা নেড়ে যাওয়ার জন্য ইশারা করে। সারোয়ার তার মত স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। শেহরীনা তপ্ত শ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল। নাছির উদ্দিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলেন,

“ভাবছিলাম একদিন না খাইয়া মরে গেছো। তাই দেখতে আছিলাম। নাহলে ঘরের মধ্যে তোর মায়ে তার কুৎসিত রূপধারী মেয়ের মৃত্যুর কারণ বোঝা হিসেবে ঠেলে দিতো। এই নেহ্ ধর একশ টাকা। নাস্তা পানি গিলে আমাকে উদ্ধার কর। তোর মত কুৎসিত মেয়েরে পালি এই তোর জন্য শোকরকর।”

“আসসালামুয়ালাইকুম আঙ্কেল আপনি হয়ত ভুলে যাচ্ছেন। আপনি কার সাথে কেমনে কথা বলছেন। মেয়েটা কোনো রাস্তার অসহায় ভিখারি না। সে আপনার স্ত্রীর প্রথম পক্ষের প্রথম সন্তান। সেই হিসেবে তারও সবোর্চ্চ হক আপনার পরিবারের উপর এবং আপনাদের জমিজমার উপর বরাদ্দ আছে।”

নাছির উদ্দিন চমকে গেলেন আকস্মিক সারোয়ারকে অর্থাৎ হবু পাত্র কে গেইটের মধ্যে দেখে। তিনি চোরা চোখে একপলক রগ্ন হয়ে তাকান শেহরীনার দিকে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)এতেই শেহরীনার সামনে সারোয়ার এসে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শেহরীনা অবাকের পর অবাক হচ্ছে যুবকের কাণ্ডে। নাছির উদ্দিন এর কদম দুপা পিছিয়ে গেল। সারোয়ার কপাল চুলকে পরণের কোর্টি টান টান করে চেহারায় এক চিলতে হাসি এনে বলে,

“বয়স তো কম হলো না আপনার আঙ্কেল। ছাড়েন না এসব কুটনামি। একদিন না একদিন পর আপনাদের বাড়িতে সম্বন্ধ আসবেই আবার। তখন তো আপনার মুখে চিরজীবনের জন্য তারা লেগে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা মেয়ে সৎ সন্তান হোক বা আপন। সেই সন্তান আল্লাহরই দান। আল্লাহর কারণে শেহরীনা পৃথিবীর আলো দেখেছে। তার কাছে কোনো যোগ্যতা নেই আপনার এত তাচ্ছিল্য সহ্য করা ছাড়া এই না ভাবেন? যদি আমি বলি সে আজ থেকে নিজ হাতে নিজের শ্রম উপার্জন করবে তখন? তখন আপনি কোন ভিত্তিতে তাকে অন্যায় কুৎসিত কথা শোনাবেন?”

নাছির উদ্দিন সারোয়ার এর কথায় চুপসে গেল। তবুও তিনি ভেতরে রেগে আছেন প্রচুর। শান্ত গলায় সারোয়ার কে জবাব দিলেন।

“দেখো ছেলে শেহরীনা আমার ঘরের মেয়ে। তার বাবা যেই হোক তার উপর এখন অধিকার আমার বেশি। সৎ বাবা হলেও বাবা নামের তর্কমা আমার কপালে আসছে শেহরীনার কারণে। তোমাকে পাত্র হিসেবে আমাদের ঘরের পাত্রীর জন্য দেখেছিলাম। চরিত্রের দিক থেকে ভালো ভেবে ছিলাম। কিন্তু তুমি তো বড্ড বেয়াদব। মুরব্বিদের সাথে কেমনে কথা বলতে হয় তাই জানো না দেখছি। তোমার হাতে আমাদের ঘরের পাত্রী দেওয়া যাবে না। দরকার পড়লে শেহরীনাকে বিয়েই দেবো না, ঘরকুনো করে দেবো তাকে। তোমার মত বেয়াদব ছেলে জন্য কখনো মেয়ে দেবো না আমি।”

সারোয়ার মুচকি হেসে বলে,’কিছুক্ষণ আগেও আপনি শেহরীনাকে উঁচুনিচু কথা বলছিলেন। সৎ বাবার অটল পরিচয় ক্ষেপন করছিলেন। থাক মুরব্বি মানুষ ধরে নিয়ে আপনার কথাকে এড়িয়ে নিলাম। তবে বিয়ের ব্যাপারটা আপনার নয় মেয়ের উপর নির্ভর করে। বিয়ে নিয়ে একটাই শর্ত ছেলে মেয়ে উভয়ের নিজেদের কে জেনেশুনে মতামত দেওয়া উত্তম। সেখানে শেহরীনা নিজেই বুদ্ধিমান।”

নাছির উদ্দিন শেহরীনার বন্ধুমহলের সামনে আর সারোয়ার এর নজরে অপমানিত হয়ে থরথরিয়ে রেগে গেইটের মধ্যে দাঁড়ানো রিকশায় নিজেই বসে চলে গেলেন। শেহরীনা স্তদ্ধ। কী হলো, কেনো হলো, আদৌ তা হওয়া উচিৎ ছিল কী? তার কারণে কোনো ভাবে তার মায়ের উপর নির্যাতন চলবে না তো! শেহরীনাকে অন্যমনস্ক দেখে সারোয়ার গলা ঝেড়ে উদ্যোগময় কণ্ঠে বলে,

“শুনো মেয়ে তোমার বাবাকে উঁচুনিচু কথা বলে অপমান করিনী শুধু তার এতদিনকার দম্ভ ভেঙ্গেছি। দেখবে আজ থেকে তোমার সাথে সে রূপ কটু ব্যবহার করবে না। আর রইল শ্রম বিনিয়োগ এর ব্যাপারে। তুমি আইন নিয়ে পড়েছো তার মানে এই নয় তুমি কলেজ স্কুলের পড়াশোনা খেয়ে ফেলেছো। আমি জানি তোমার অবশ্য জ্ঞান আছে পূর্বের পড়াশোনার উপরে। তুমি চাইলেই দু তিনটা টিউশনি ধরতে পারো।”

সারোয়ার এর কথায় জাফরান কৌতুহলী কণ্ঠে বলে,

“আরে হ্যাঁ শেহু বোন আমার সত্যি মনে ছিল না। নাহলে তোকে গত রাতেই জানিয়ে দিতাম। আরে তুই বলছিলি না টিউশনি খুঁজে দিতে। আমার চাচাতো বোন এবার নাইনে তাকে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত মানে দুবছর পড়াতে হবে। চার বিষয়ের উপর পড়াবি টাকাও পাবি পাঁচ হাজার টাকা। সময় তুই কথা বলে ঠিক করে নিস।”

“গ্রেট ব্রো এতো দেখলে রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তুমি দুশ্চিন্তায় না থেকে সুরাহা খুঁজো দেখবে পথ আপনাআপনি বেরিয়ে আসবে। বাই দ্যা ওয়ে আমি এখন যায় তোমরা এঞ্জয় করো গাইস। আল্লাহ হাফেজ।”

ফারদিনরা সারোয়ার কে বিদায় জানিয়ে আস্তেধীরে ভেতরে চলে গেল। সারোয়ার গাড়ির দরজায় হাত ছুঁয়েও ফিরিয়ে নেয়। পিছু মোড়ে একপলক দেখল। শেহরীনা গেইটের পাশেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সারোয়ার অবাক হলেও তার বিভীষিকাময় জীবনে পুনরায় মুগ্ধতা ফিরল। চমৎকার এক হাসি উপহার দিলো শেহরীনাকে। শেহরীনার লজ্জা লাগল। কেমন হ্যাবলার মত চোয়াল ফাঁকা করে তাকিয়ে ছিল সে। মাথা নামিয়ে চলে যেতে পা বাড়ালে ‘শেহরীনা’ নরম মোহনীয় কণ্ঠে তার নাম ডেকে উঠে কেউ। শক্ত হাতে বোরকা চেপে ধরল শেহরীনা। সারোয়ার পা বাড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে এসে মেয়েটার পেছন বরাবর এসে তার থেকে খানিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। কিছুটা ঝুঁকে শেহরীনার কানের কাছে মুখ এনে টানময় শ্বাস ছেড়ে বলে,

“আমার জন্য আজ দুপুর একটায় নামাজের পর অপেক্ষা করবেন গেইটে।”

“যদি না করি।”

চট করে সারোয়ার এর দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় সে। তার মুখশ্রীতে হতাশা ফুটল না। বরং চমৎকার সূক্ষ্ম হাসির তীর বসে আছে সেই ঠোঁটের কোণায়। মৃদু গলায় শুধু বলল।
‘আমি জানি আপনি অপেক্ষা করবেন।’
এই বলে এক পা দুপা তিন পা চার পা করে শেহরীনার দিকে তাকিয়ে থেকে পিছিয়ে তৎক্ষণাৎ শরীর বাঁকিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে দরজা খুলে বসে পড়ল। শেহরীনা বিস্মিত, তার স্তদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকার দিন আজ।

চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কালকে গল্প দিতে পারব না হয়ত। তবে চেষ্টা করব দেওয়ার। আজকে তাই গল্প বড় করে দিলাম। কেমন হয়েছে জানাবেন সাথে থাকুন। গল্পটায় ভালো দিক উপহার পাবেন। আমার পেজ লিঙ্ক সবাই লাইক এন্ড ফলো করে পাশে থাকুন
https://www.facebook.com/tasmihaalraiyan)

সামনে বড় সাগর দেখে উৎসাহিত গলায় বলে,

“আমরা এখানে কেন?”

“হানিমুন করতে এসেছি।”

চোখ টিপ দেয় রিজওয়ান। অরনিয়ার হৃদয় কেঁপে উঠে। মন বাসনায় ঢোক গিলে লাজুক লতায় পরিণত হলো তার মুখশ্রী। রিজওয়ান বউকে কোলে নিয়ে রিসোর্ট এর ভেতর ঢুকে। সবাই তাদের দেখে মিটমিটে হেসে দিল। অরনিয়া লজ্জায় রিজওয়ান এর বুকে মুখ লুকিয়ে রাখল।
আজ রাতের পর তাদের মাঝে আর কোনো রুপ দূরত্ব থাকবে না।
রাত বারোটা….
অরনিয়া লজ্জায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছে। তার শরীরে রিজওয়ান এর শার্ট। কিঞ্চিৎ মুহূর্ত পূর্বেও তার শরীরে শাড়ি ছিল। এখন রিজওয়ান এর শুভ্র শার্ট। রিজওয়ান আড়মোড়া হয়ে অরনিয়াকে জড়িয়ে ধরে। ঘুমঘুম চোখে বউয়ের শার্টের বোতাম খুলতে লাগল। অরনিয়া শক্ত হাতে বালিশ চেপে ধরে। স্বামীর স্পর্শ কতটা যে স্পর্শকাতর তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। অরনিয়ার শার্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে তাকে নিজের দিকে টেনে পুনরায় তাদের রাতকে মিলনময় করতে ব্যস্ত হলো দুনর-নারী।

আমার প্রথম গল্পের বই ‘হৃদয়ের সঙ্গমে অভিমান’ বইটই এ আসতে চলেছে সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইল। পাবলিশ হবে ২৬ তারিখ দাম মাত্র ৪০৳ সহজে ক্রয় করে পড়তে পারবেন ইন শা আল্লাহ।🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here