#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৩
নাছির উদ্দিন এর বে*ল্ট র*ক্তা*ক্ত হয়ে আছে। ক্লান্ত হয়ে ছেলের বিছানার উপর বসে হাঁফাচ্ছেন তিনি। তার সামনে মাটিতে অসহায় নিরীহ আঘাতপ্রাপ্ত শরীর নিয়ে পড়ে আছেন রূপালি বেগম। নাছির উদ্দিন বে*ল্টটি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলেন। রূপালি বেগম নিজেও বহু যন্ত্রণা সহ্য করে উঠে বসলেন গদির উপরে। নাছির উদ্দিন বে*ল্ট ধুয়ে ফকফকা করে আলনায় শুকাতে ঝুলিয়ে রাখলেন। লুঙ্গির মধ্যে গিট্টু মে*রে টেবিল থেকে একথোকা পান নিয়ে মুখে পুরে নেন। নিজ স্ত্রীর আঘাতপ্রাপ্ত শরীর দেখেও পাত্তা দিলেন না। উল্টো কর্কশ গলায় আদেশ করলেন।
“এই মা* এখনো বসে আছিস কেন? আমার বাচ্চারা এগারোটা বাজতে বাজতে চলে আসব। তাদের পেটে ক্ষুধা থাকব না? তোই বসে আছিস কেন? যাহ্ রান্না বসা। ন্যাকা ব্যথা দেখাইয়া লাভ নাই।”
তাচ্ছিল্য দেখিয়ে নাছির উদ্দিন পান চিবুতে থেকে এক প্যাকেট সিগারেট তার স্ত্রীর চোখের আড়ালে কৌশলে লুঙ্গির মধ্যে চেপে ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। রূপালি বেগম নির্জীব দৃষ্টিতে স্বামীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। তিনি জানেন লোকটা এ মুহূর্তে একান্ত সময় কাটাবেন। তিনি নিজ মনকে বুঝ দিয়ে নিজেকে শাস্তি দেবেন। সেই শাস্তিটি শরীরকে অকেজো বানানোর অন্যতম হাতিয়ার হলো সিগারেট। তিনি বাচ্চাদের কে নিয়ে আসার পূর্বেই সিগারেটের এক প্যাকেট শেষ করবেন। রূপালি বেগম তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করে আলমারি খুলে মলম এর কৌটা বের করে ব্যথা পাওয়া স্থানে ধীরে স্থির ভাবে লাগাতে বসলেন।
শেহরীনা টিউশনি পড়িয়ে সবে মাত্র বাসায় ফিরল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কিন্তু বাহির থেকে বাসার বাতি বন্ধ দেখে কিছুটা অবাক হলো সে। সাধারণত অন্য সময়ে বাতি জ্বালানো থাকে। আজ বন্ধ দেখে ভয়ভীতি মনে ধরে তৎক্ষণাৎ মায়ের রুমে ছুটে গেল। কিন্তু গিয়ে থমকে যায়। তার মা তার সৎ বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে শেহরীনার মুখের আদলে কষ্ট ভেসে উঠল। তার সৎ বোন নাসমার জায়গায় সে নিজেকে কল্পনা করতে লাগল। ছোট থেকে মায়ের আদরের অভাব বোধ করেছে শেহরীনার শক্তপোক্ত মন। তার সেই মনের দ্বার নরমও হতে পারতো। কিন্তু কেউই তার কাছে ছিল না যে আদর স্নেহ দ্বারা বুঝিয়ে পথ দেখাবে। শেহরীনা মুখ মলিন করে মাকে জিজ্ঞেস করে।
“মা আজ বাতি জ্বালাওনি কেনো?”
“সব কথা কী বলে বলে করাতে হবে? দেখছিস আমি আমার মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি এখানে এসে ঠ্যাং দিচ্ছিস কেন? নিজ দায়িত্বে বাতি জ্বালিয়ে দিতে পারিস না?”
“সরি মা আমি তো শুধু জিজ্ঞেস কর…।”
রূপালি বেগম ‘অ’ উচ্চারণ করতে নিলে ছোট মেয়ে নাসমা ‘উহ মা মাথা ব্যথা করছে’ কাতর কন্ঠে বলে কাঁচা ঘুম থেকে জেগে উঠল। রূপালি বেগম দ্বিগুণ রেগে যান। শেহরীনার দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বকে দিলেন।
“মুখপুরী দিলি তো আমার মেয়ের সাধের ঘুমটা ভেঙ্গে। যাহ্ সামনে থেকে যখনি আছিস কোনো না কোনো অঘটন ঘটিয়ে ছাড়িস।”
মায়ের তীক্ষ্ণ কথা মুখ বুঁজে সহ্য করে নিল শেহরীনা। কাঁধের ব্যাগ শক্ত করে চেপে উঠানে গিয়ে বাতির সুইচে জোরে সরে আঘাত করে বাতি জ্বালালো। নাছির উদ্দিন এতক্ষণ দূর হতে মা-মেয়ের ঝগড়া উপভোগ করছিলেন। এ মুহূর্তে শেহরীনার রেগে করা কাজটিকে তিনি খুঁত ধরে বাঁকা হেসে এগিয়ে গেলেন। শেহরীনা দাঁতে দাঁত চেপে প্রস্থান করতে গেলে নাছির উদ্দিন কণ্ঠস্বর গম্ভীর করে ‘এই মেয়ে দাঁড়া’ বলে থামিয়ে দিলেন তাকে। সৎ বাবার ডাক অপেক্ষা করতে চেয়েও পারল না শেহরীনা। মায়ের মলিন মুখ তার চোখের সামনে ভেসে উঠায় চোখ বুঁজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সৎ বাবার দিকে তাকাল। নাছির উদ্দিন লুঙ্গির নিচু অংশ ঝাড়তে থেকে সৎ মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“সুন্দর করে আবারো সুইচটা চালু কর। এইডা তোর বাপের সম্পত্তি না। এডা আমার টাকায় কেনা সম্পত্তি। তোরা মা-মেয়ে মিলে নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু শিখিসনি?”
শেহরীনার মোটেও কথাগুলো শুনতে মন চাইছে না। অতৃপ্ত মন নিয়ে সৎ বাবার কথামত পুনরায় সুইচ বন্ধ করে আবার জ্বালিয়ে ছুটে রুমে চলে যায়। নাছির উদ্দিন তার কাজে সফল হয়ে তৃপ্তি পেলেন। লুঙ্গির মাঝ অংশ থেকে পান বের করে মুখে নিয়ে নিজের স্ত্রী কে আদুরীয় গলায় ডাক দিলেন। রূপালি বেগম নাসমার গাঁয়ে কাঁথা দিয়ে স্বামীর ডাকে ছুটে আসলেন। নাছির উদ্দিন পান চিবুতে থেকে নিজ বেগমের আপাদমস্তক পরখ করলেন। রূপালি বেগম না ঘৃণ্য, না অভিমান নির্জীব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। নাছির উদ্দিন রূপালি বেগমের গাল টেনে বলেন,
“যাহ্ আমার জন্যে খেজুর বাটা নিয়ে আয়। আজকে খেজুরের শরবত খামু। আমার মুখ থেকে নেবে কেমন? তুমি তো জানোই আমার রাগ বেশি তখনের কথা ভোলার জন্যে স্বামী স্ত্রীর মোহাব্বত বাড়াতে হবে। তোই আমরা আজ রাতে স্বামী স্ত্রীর মোহাব্বত বাড়াব। বুঝছো বেগম সাহেবা?”
রূপালি বেগমের চুলের মুঠি চেপে ধরে জোরে এক টান প্রয়োগ করেন তিনি। স্বামীর দেওয়া আঘাতে যন্ত্রণায় অসহায় হয়ে মাথা নাড়লেন রূপালি বেগম। নাছির উদ্দিন তৃপ্তির হেসে উঠান পেড়িয়ে বের হয়ে যান। রূপালি বেগম আড়চোখে দেখে ধীরস্থির ভাবে হেঁটে শেহরীনার রুমের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। শেহরীনাকে কাঁথা মুখে চেপে শুয়ে থাকতে দেখে তিনি কয়েক কদম পেড়িয়ে জানালার কাছে এগিয়ে গেলেন। জানালায় কান পেতে শুনতে পেলেন মেয়ের আর্তনাদ। শেহরীনা ঘুমোয়নি সে মুখে কাঁথা চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তার মনের অভিযোগ ফিসফিসিয়ে আত্ম অনুভূতি নিয়ে ব্যক্ত করছে। মেয়ের অগোচরে তিনি নিজেও মুখে আঁচল চেপে কান্না নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলেন। মেয়েকে যতই উপুড় উপুড় ঘৃণা দেখাক না কেনো তিনি নিজে জানেন স্বামীর হাতে তিনি অসহায় মানবী। মানুষটার কথার চাল চলনে তিনি যদি অমান্য করেন তবে তার সেদিন কপালে সুখ থাকে না। আজকের ব্যথার যন্ত্রণায় তিনি পূর্ব পরিচিত। এই যে তার যন্ত্রনার কথা তিনি শেহরীনা কে জানতে দিলেন না। কেননা নাছির উদ্দিন এর একটাই শর্ত তিনি যদি মেয়েকে কিছু বলেন তবে তাদের সংসারে শেহরীনার স্থান বিতাড়িত হয়ে যাবে। চোখ বুঁজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তিনি মেয়ের জানালার সামনে থেকে সরে গেলেন। ঘণ্টাখানেক পর রাতের খাবারের আয়োজন করতে হবে সেই কারণে তিনি ধীরস্থির পায়ে ছেলের রুমে গেলেন। কিছুটা সময় বিশ্রাম নিলে যদি শরীরটায় আরাম পান সেই উদ্দেশ্যে।
____
সারোয়ার কে রাস্তার মোড়ে বাজার কিনতে দেখে নাছির উদ্দিন এর চোখজোড়া লোভে ফরফরে হয়ে গেল। তিনি পানের চিলকি থুথু দিয়ে ফেলে মুখ মুছে ছুটে হবু জামাই বাবার কাছে গেলেন। সারোয়ার মিটিং শেষে তদন্ত এর উদ্দেশ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। তার সাথে দেখা করতে রাজনৈতিক নেতা খলিল বকর মুখোশধারী হয়ে কিছু দলিলপত্র নিয়ে হাজির হবে। সেই উদ্দেশ্যে সারোয়ার ঘড়ি দেখছে আর অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার মাঝে খেয়াল করে খোড়কপুর বাজারে তাজা পাকা আমের আসর বসেছে। দেশি মুরগির আনাগোনা বাজারে অহরহ চলছে। সারোয়ার তার বাবার পছন্দের মূল হলো দেশি মুরগি। সেই ক্ষেত্রে দুটা দেশি মুরগি কিনে নিলো। কয়েকটা আম কিনল বাসার জন্য।
হঠাৎ কারো কাশির শব্দ শুনে ভ্রু কুঁচকে পেছন ফেরে সে। হবু শ্বশুর কে বাজারে দেখে মৃদু হেসে কুশল বিনিময় করে। নাছির উদ্দিন উঁকি ঝুঁকি দিয়ে সারোয়ার এর হাতের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছেন। সারোয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পারল। সে শেহরীনা কে ভালো মত না জানলেও তার মহাশ্রেয় বাবাকে জেনে নিয়েছে বেশ। সারোয়ার ভদ্রতার খাতিরে মুরগির মাংস আরো দুটো কিনে নেয়। আমও বাড়িয়ে নিয়ে সেগুলো শ্রদ্ধীয় হবু শ্বশুরের হাতে ধরিয়ে দিলো। চোয়াল ফাঁকা হয়ে গেল নাছির উদ্দিন এর। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ঢোক গিলে বলতে লাগলেন।
“বাবা এর দরকার ছিল না। আমি প্রায় এই রাস্তায় আছি। আমার মুদির দোকান এখানেই কাছে। এক-দু রাস্তা পার করলেই দোকান সামনে চলে আসে। তোমাকে এখানে দেখে এমনিতে দিনকাল কেমন যাচ্ছে জানতে এসে ছিলাম।”
কথার মাঝেও তিনি পলিথিন ঘেঁটেঘুটে ভেতরের জিনিসগুলো পরখ করছেন। সারোয়ার গলা ঝেড়ে বলে,
“সমস্যা নেই আঙ্কেল আপনি আমার কথায় একসপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারলে আমি নিশ্চয় এতো টুকু দিতে দ্বিধাবোধ করব না।”
নাছির উদ্দিন পান মাখানো দাঁতের হাসি দিলেন। পলিথিন দুটো ভালো করে চেপে ধরে সারোয়ার কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“তো বাবা বাসায় আসো। শেহরীনাও বাসায় আসে। কথাবার্তা বললেও ভালো হতো।”
সারোয়ার এর চোখে সেই দিনের শ্যামাঙ্গিণী পরীর রূপটি চোখের মধ্যমণিতে ভেসে উঠল। মনে মনে ‘অপূর্ব’ আখ্যায়িত করলেও তা গোপনে হৃদয়ে দাফন করে ফেলল। নাছির উদ্দিন কে দেখে সারোয়ার কপাল চুলকে আমতা আমতা কণ্ঠে বলে,
“আসলে আঙ্কেল আজ বাসায় কাজ আছে। তাই যাই পরের বার আসা হবে।”
নাছির উদ্দিন ততটা ঘাঁটলেন না। মুক্ত হাতে জিনিস পেয়ে তিনিও বাড়িতে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে আছেন। সারোয়ার বিদায় নিয়ে রাস্তার অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ফোন বের করে খলিল বকর কে কাল দুপুর একটায় টিটো পার্কে আসার জন্য জানিয়ে দিলো। সেও ক্লান্ত বিধেয় বাড়িতে ফেরার জন্য গাড়িতে উঠে বসে।
চলবে……
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আজ #এক_উম্মাদনায়_প্রেম গল্পটা দিতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু পুরোপুরি লিখা হয়নি কালকে দেওয়ার চেষ্টা করব ইন শা আল্লাহ 🥰। আমার পেইজ লিঙ্ক সবাই লাইক এন্ড ফলো করে পাশে থাকুন https://www.facebook.com/tasmihaalraiyan)