#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৮
“মা কী আমার রুমে এসেছিল? বাবার ছবিটা কাপড়ের ভেতর কে রাখল? আজকে নাহয় কাপড় ঝাড়তে গিয়ে ছবিটা নালায় পড়ে যেতো। তবে কী মা বাবার ছবি স্পর্শ করে ছিল? মায়ের থেকে জিজ্ঞেস করতে হবে।”
শেহরীনা সারোয়ার এর পিছু গিয়েও বাসায় ফিরে আসে। আচমকা মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টির প্রভাব আরম্ভ হওয়ায় সে পিছু যেতে পারেনি। সে সময়ের কথা বাদ দিয়ে তাৎক্ষণিক মনে জাগ্রত হওয়া প্রশ্নের উত্তর জানার তাগিদে ধীরস্থিরে কাঁধের ব্যাগ আলনায় ঝুলিয়ে প্রথমে গোসল সারতে গেল। একঘণ্টা পর শরীর মুছে জামা পরে রান্নাঘরে ছুটল। রূপালি বেগম কড়াই এর মধ্যে খুন্তি নেড়েচেড়ে দেশি মুরগির দুধ মিশ্রিত রোস্ট বানাচ্ছে। এই দেশি মুরগির রান খুব পছন্দের শেহরীনার। লোভে তার জিভে লালা চলে এলো। রূপালি বেগম উদাসীন মনে খুন্তি নাড়িয়ে যাচ্ছে। তার মন ধ্যান সেই ছবির মানুষটির মাঝে আবদ্ধ। হঠাৎ কাঁধের উপর কারো হাতের স্পর্শ পড়ায় চমকে সটান দাঁড়িয়ে যান তিনি। ঠোঁট কামড়ে চোখ বুঁজে মনে নানান কল্পনা সাজিয়ে নিলেন যা এই মুহূর্তে বয়ান করার প্রচেষ্টা করবেন। মুখ ফুটে পেছন ফিরতেই শেহরীনাকে দেখে স্বস্তির শ্বাস নিলেন। পরক্ষণে রেগে শেহরীনার হাত সরিয়ে উত্তপ্ত কণ্ঠে বলেন,
“দেখছিস না রান্না করছি। তাও তোর থেকে এসে বাঁ হাত ঢুকাতেই হলো। এসেছিস তো কোনো কারণ ছাড়া আছিসনি। এসেছেন যেহেতু মহারানী মনের কথা বলেই বিদায় হোন যতসব উটকো ঝামেলা।”
বিড়বিড় করে শেষের শব্দগুলো আওড়ে পুনরায় চুলোর দিকে নজর দিলেন রূপালি বেগম। পেঁয়াজ কুচি করে তা যখন কড়াইয়ে ঢাললেন তখনি শেহরীনা বলে উঠে।
“বাবার ছবি কী তুমি ধরেছিলে মা?”
ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে সাঁই সাঁই ধোঁয়া কড়াইয়ের মধ্যে থেকে উড়ে বাষ্প হচ্ছে। এর মাঝে মেয়ের প্রশ্নে থমকে দাঁড়ান রূপালি বেগম। তার হাত আপনাআপনি কাঁপছে। তবুও মেয়ের সামনে দুঃখকে লুকিয়ে চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলেন,
“তোর রুমের দ্বারপ্রান্তে ঘেঁষাও মানা সেটা কী তুই ভুলে গেছিস? তোর জন্য কী আমি আমার স্বামীর হাতের মাইর খাবো এখন? তোকে পেলেটেলে এত বড় করতেছেন উনি এটার শোকর কর অকৃতজ্ঞ মেয়ে।”
শেহরীনার কৌতুহলী মন তখনো শান্ত হয়নি মায়ের কটু তিক্ত কথা হজম করে হলেও পুনরায় প্রশ্ন করে।
“মা তোমার আসল সত্য কী হুম? কেনো উনি তোমাকে এতো হেয়ো করে কথা বলেন? তোমার সাথে কী অন্য কারো?”
ঠাসস অতিরিক্ত শব্দের ফলনে নাসমা দৌড়ে এলো। ছোট মেয়েটা মায়ের বিপক্ষে কথা বলতে চাইলে শেহরীনা তাকে চেপে ধরে। তবুও নাসমা তার বোনের হয়ে কথা বলতে ছটফট করছে। নাছির উদ্দিন ইতিমধ্যে চড়ের শব্দ শুনে রান্নাঘরে চলে এলেন। মনে একটা ভীতি ছিল যে, কোনোভাবে তার কর্মের জন্য রূপালি তার মেয়ে অথবা ছেলেকে শাস্তি দেয়নি তো? এমনটা করলে তিনিও রূপালির অতীত ছেড়ে কথা বলবেন না। অতীত টেনে টেনে আঘাতে জর্জরিত করে দেবেন তিনি। শেহরীনার চোখ জ্বলছে মাথা নত তার। নাসমা তার কোলে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আহারে ছোট মেয়েটা বোনের দুঃখে কান্না ভাসিয়ে দিচ্ছে অথচ সে বয়সে বড় হওয়ায় কান্নার ছিটেফোঁটাও তার চোখের মাঝে নেই। যাও ছিল তাও হয়ত হারিয়ে গেল। ঢোক গিলে নাসমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“বোন যা খাবার খেয়ে নেয়। নাহলে মা তোকে ও বকবে। খাওয়া শেষে আমরা পড়ব তারপর গল্প করব কেমন?”
নাসমার চোখমুখ ফোলে লাল হয়ে গেল। মনে হচ্ছে মেয়েটাকে বিয়ের আসরে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। কী কান্নাকাটি না করল সে। তবুও শেহরীনা স্বস্তি পায় কেউ তো তাকে আপন ভাবে এই তার জন্য ঢের। নাসমা সরল মেয়ের মত মাথা নেড়ে দৌড়ে খেতে গেল। খিদে শেহরীনারও পেয়েছে তবুও আজ তার কপালে অন্নের দানাপানি নেই। সে সময় নাছির উদ্দিন রান্নাঘরে এসে রূপালি বেগম কে জিজ্ঞেস করলেন।
“কী হয়েছে চড় মেরেছো কেন এতো বড় মেয়েকে হুম?”
রূপালি বেগম চোখ রাঙিয়ে শেহরীনার দিকে তাকিয়ে জবাব দিলেন।
“তা না হয় কী করব? এটুকুন মেয়ে নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করেছে। আমায় নিজের মাকে মুখের উপর প্রশ্ন করে আবার পাল্টা প্রশ্ন করতে উদ্যত হয়ে বিরক্ত করছিল। একেবারে ভরে দিলাম গালে।”
নাছির উদ্দিন ভাবল এই মোক্ষম সুযোগ। সৎ এর মেয়েকে খানিক শাস্তি দেবার সুযোগ তিনিও হাতছাড়া করলেন না। গম্ভীর গলায় শেরহীনাকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলেন,
“আজ থেকে কাল অব্দি তোর মুখে কোনো দানাপানি পড়লে এ ঘরের সবার অন্ন বন্ধ করে দেবো। কেউ যদি আমার কথার খেলাপ করেছো তাহলে সেও একই শাস্তি পাবে।”
নাছির উদ্দিন এর কথার বিপরীতে কেউ টু শব্দ করতে পারল না। তবে রূপালি বেগম শক্ত হাতে আঁচল চেপে ধরে ছিলেন। মেয়ের উপর এরূপ শাস্তি তিনি আশা করেননি। মেয়েটা আজ নাস্তা সেরে যাওয়ার পর ভার্সিটির মধ্যে কিছু খেয়ে ছিল কিনা ও সন্দেহ। স্বামীকে মানানোর চেষ্টা করলে নাছির উদ্দিন চোখ রাঙায়। রূপালি বেগম সেখানেই থেমে গেলেন।
শেহরীনা সেই সকালে খেয়ে ছিল। ভার্সিটিতে ক্যান্টিনে অবশ্য বন্ধুমহলের সঙ্গে স্যান্ডউইচ খেয়ে ছিল। তারপর পেটে আর কিছু পড়েনি তার। তপ্ত শ্বাস ফেলে মাগরিবের নামাজের জন্য তৈরি হয়ে নিল।
বৃষ্টির প্রকোপ কমতেই নাছির উদ্দিন মসজিদে ঢুকে পড়লেন। নামাজ শেষে গলা কলকলিয়ে মসজিদ থেকে বের হলেন। বাসায় বাজার সদাই কমে গিয়েছে। নাসমার মা তাকে আসার সময় বাজারের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে ছিলেন। তিনি মসজিদের বাহিরে টং দোকানের সামনে বসে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিলেন। বাসায় সিগারেট শেষ হয়ে পড়ায় নতুন কিনে রাখলেন। একটি মুখে পুরে ফুঁকতে লাগলেন। মোঃ আবু সিদ্দিক সবেই মাথার টুপি খুলে মসজিদ থেকে বের হলেন। পায়ে জুতো জোড়া পরে টং দোকানের সামনে আসলেন। কিছু স্ন্যাকস কেনে মোড় ঘুরতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। চোখের সামনের ব্যক্তিকে দেখে তার দুনিয়া ঘুরে গেল। নাছির উদ্দিন ও দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে। সিগারেট যে হাতে সেই হাতের আঙ্গুল পুড়ছে সেই দিকে খেয়াল নেই তার লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)। যখন থেকে মোঃ আবু সিদ্দিক কে চোখে পড়েছে তখন থেকে তিনি উত্তপ্ত লাভার ন্যায় ফোঁসছেন। নাছির উদ্দিন সিগারেটটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে চলে যেতে লাগলেন। মোঃ আবু সিদ্দিক এর চোয়াল ফাঁকা হয়ে গেল। তবুও তিনি খুশি লোকটাকে এত বছর পর সামনে পেয়ে। হঠাৎ তাকে চলে যেতে দেখে তিনিও পিছনে গেলেন। তবে নাগাল পেলেন না। নাছির উদ্দিন হাঁটতে থেকে মানুষগণের ভীড়ের মাঝে হারিয়ে গেলেন। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে খানিক্ষণ এর জন্য পেয়ে হারিয়ে ফেলায় মোঃ আবু সিদ্দিক হতাশ হলেন। মন ভরা চিন্তা নিয়ে বাসায় ফিরতে উদগ্রীব হলেন।
____
সারোয়ার ক্লাবের সামনে এসে থমথমে চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে। তার মা নেশায় আসক্ত হয়ে টলছেন। জাহানারা পুষ্প এর শাড়িটাও কেমন আলগোছে হয়ে আছে। ছেলে হয়ে মায়ের রূপের ওমন দৃশ্য দেখে কোনো ছেলের মনই ঠিক থাকে না। জাহানারা পুষ্প কে ধরে সারোয়ার মুখে তালা মেরে হাঁটতে লাগল। তার মা মুখ দিয়ে আবুল তাবুল কথাবার্তা বলছেন। এতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে সে মাকে সিটে বসিয়ে দিল।
জাহানারা পুষ্প দুঃখভরা মনে নেশার ঘোরে বলছেন।
“হায়রে জীবন এ কী খেলা দেখালে?
না পাইলাম সুখ , নাই পাইলাম প্রেম,
না পাইলাম তাহাতে জীবনে।
এক নৌকায় পা ভাসিয়ে কেনো
আমায় ফেললে দু ধরিয়ার মাঝে?
কী করিলে বলো সুধরাব সেই ভুলের
স্মৃতিলিলা?”
মায়ের কণ্ঠে কখনো আহামরি গান শুনেনি সারোয়ার। আজ হঠাৎ মায়ের মুখে অমায়িক কণ্ঠে গান শুনে তাজ্জব হয়ে গাড়ি চালাতে লাগল সে। মাকে পূর্বের চেয়েও আজ বহু দিক থেকে নিষ্প্রাণ লাগছে। জাহানারা পুষ্প একপর্যায়ে গানের তালে ঘুমিয়ে পড়েন। সারোয়ার ধীরস্থির ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। ফোন বের করে নিজের বাবাকে কল দিল। মোঃ আবু সিদ্দিক বাসায় ডাইনিং রুমের ডাইনিং টেবিলে একাকী মাথায় হাত চেপে বসে আছেন। মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে তার। কাল তাকে এসোসিয়েট ভার্সিটির মধ্যে একটা ক্লাস পিরিয়ডের লেকচারার হিসেবে জয়েন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই কারণে তিনি মনোযোগ দিয়ে হ্যাঁ বোধক এগ্রিমেন্ট এর ই-মেইল লেখার কোনো রূপ মন মানসিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না নিজের ভেতরে। গুমোটে মরছেন তিনি। স্ত্রীর কাছে থেকেও একাকী অবহেলা উপেক্ষিত মনোভাব, সন্তানদের জীবন বাঁধিয়ে দেওয়ার সবোর্চ্চ প্রচেষ্টা। তার মেয়ে সাজিয়ার একটা গতিবিধি হলেও তার বড় সন্তান আদৌ কুমার রয়ে গেলো। হিতে বিপত্নীক নামক শব্দের তর্কমা তার কপালে জুটে গেল। ছেলেটার জীবন কেমনে সামলে দিবেন সেই নিয়ে চিন্তিত তিনি। আজ ছেলের সাথে সেই পাত্রীর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিবেন বলে ধারণা মনে এঁটে রাখলেন। পরক্ষণে দরজায় বেল বাজার শব্দে তিনি মেইডকে ডাক দিয়ে দরজা খুলতে আদেশ করলেন। মেইড দরজা খুলে দিল। চমকে মালিকের বউয়ের বেহাল অস্বাভাবিক অবস্থা দেখে তৎক্ষণাৎ ‘মালিক’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠল মেইডটা। মোঃ আবু সিদ্দিক তৎপর হয়ে চিৎকারে ছুটে দেখতে আসলেন। নিজ স্ত্রীর বেগতিক অবস্থা দেখে সারোয়ার এর দিকে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকান তিনি। সারোয়ার এর লজ্জা লাগছে নিজের মায়ের নামে কথাটা বলতে। সে বাবাকে ফোনে বলতে চেয়েছিল। তবে ফোন নট রিসিভ বলায় সেও আর চেষ্টা করেনি। এই মুহূর্তে মেইডের সামনে সে মায়ের ব্যাপারে কথা তুলতে পারবে না। সে গলা ঝেড়ে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল।
“বাবা মায়ের শরীর অসুস্থ লাগছে। উনাকে রুমে নিয়ে যাচ্ছি আমি। কাপড় পাল্টে দিয়েন আপনি। স্বামী আপনি তাতে অবশ্য আপনার অধিকার আছে এতে। আমিও কম ভিজিনী। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তুমিও কিন্তু কোথাও যেও না।”
সারোয়ার কথা শেষ করে মায়ের কাঁধ চেপে কোলে উঠিয়ে নিল। সন্তপর্ণে গেইট পার করে মায়ের রুমে মাকে শুয়ে দিলো সে। তপ্ত শ্বাস ফেলে মেইডকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমার খিদে লেগেছে। খাবার লাগাও। মা অবশ্য সব তৈরি করে রেখে গিয়ে ছিলেন? আর সাজিয়া কোথায়?”
মেইডটা থমথমে মুখে হাত কচলে জবাব দিল।
“স্যার আপনার বোনকে তার ননদে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। আপা যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু আপার ননদে চিল্লাচিল্লি করায় সাজিয়া আপা বাধ্য হওয়া চলে গেছে।”
সারোয়ার শুনে মাথা নেড়ে ‘ঠিকাছে’ বলল। মেইডটা তার স্যারের আদেশ মত খাবার পরিবেশন করতে চলে গেল।
খাবার খেয়ে সাময়িক সময়ের মত বসে মাত্র এক ঘণ্টার মত হাঁটতে আরম্ভ করে সারোয়ার। আজ কেমন এক অজানা কারণে তার মন নিরাশা বোধ করছে। কিন্তু কেনো? কোনো প্রিয় অপ্রিয়ে রঙে আঘাত পাওয়ার তাড়নায়? না কোনো অহেতুক চিন্তাধারায় ভেবে কুল পাচ্ছে না সে। একঘণ্টা হাঁটার পর রুমে এসে দরজা চাপিয়ে দেয়। পরণের শুভ্র শার্ট খুলে শরীর মুছে নেয়। মনে তার মায়ের গানটি বেজে চলছে। মায়ের গানে সে স্পষ্ট কষ্ট লুকিয়ে থাকতে পেল। সেই কষ্ট কীসের? জানার জন্য তার মন আনচান করছে। সে জানে তার বাবাকে বলেও লাভ নেই। তার বাবা জবাবহীন পলকে তাকিয়ে থাকবেন। তার চেয়ে উত্তম সময় সুযোগ করে মাকে নিজের আদুরীয় ভাবনায় গলিয়ে সত্য কথা বের করা। হাঁটা আর খাওয়ার চাপে ক্লান্তিময় দিনের কারণে সারোয়ার এর চোখে একরাশ ঘুম হানা দিল। সে বেশিক্ষন জেগে থাকতে পারল না। কিছুটা সময় পেরুতেই তার চোখ বুঁজে গেল।
চলবে…….
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
রিজওয়ান রেগে বসা থেকে উঠতে চাইলে অরনিয়া স্বামীর হাত চেপে ধরে। রিজওয়ান থেমে যায়। মেয়েটার শরীরের উষ্ণতা তার শরীরের উষ্ণতা সমেত হৃদয় নিংড়ে দেয়। আজ মেয়েটার শরীরের উষ্ণতায় তার ভস্ম হওয়ার ভয় আছে। ঢোক গিলে কাঁপা শক্তপোক্ত হাতে অরনিয়ার নরম হাত সরিয়ে তার শিউরে বসে। অরনিয়া দেখে অন্য কিছু ভেবে নেয়। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। রিজওয়ান বোকার মত চেয়ে রইল। অবাক তর গলায় জিজ্ঞেস করে।
“কী হলো কাঁদছো কেনো?”
“আপনি আমার হাত সরিয়ে দিয়েছেন কেনো? আমি কী খুব বড় অন্যায় করেছি? আর আমি কোনো শাড়ি পরিনী। এই দেখেন এটা থ্রিপিসের জর্জেট উড়না।”
জ্বরে ভোগান্তি অরনিয়া অবুঝের মত স্বামীকে প্রমাণ দেখাতে শরীরে পেঁচানো উড়নাটা সরিয়ে নেয়। এতে তার ব্লাউজ আর পেটিকোট দৃশ্যমান হয়ে যায়। ফর্সা কোমল পেটের মধ্য অংশের গর্তটির পাশে বাদামী তিল দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। এমুহুর্তে কান্নাময়ী নারীটিকে কোনো অপ্সরা থেকে কম মনে হচ্ছে না রিজওয়ান এর কাছে। আবেদনময়ী লাগছে মেয়েটাকে। না চেয়েও মেয়েটার উপর তার নিষেধ ভালোবাসা প্রকাশ করার তীব্র বাসনা জাগছে। অরনিয়ার বন্ধ কান্নারত চোখের উপর ঝুকে আসে রিজওয়ান। অরনিয়া নিজের মুখের উপর স্বামীর মুখের আদল অনুভব করে কান্না থামিয়ে ফেলে। বন্ধ চোখে স্বামীর নৈকট্য অনুভব করতে সক্ষম। ঢোক গিলে নিজের ঠোঁটজোড়া কামড়ে ধরে অরনিয়া। এ দৃশ্যটা যেন রিজওয়ান এর বুকে আগুনের ন্যায় লাভার বর্ষণ করতে উদ্যত করে চলেছে। আকস্মিক দুজনের মাঝে নিরবতা ভর করে। দুজনে নিজেদের ঘন নিশ্বাসের প্রতি আবেগ বয়ে নিচ্ছে। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে অরনিয়া চট করে তার মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে মেয়েটা। রিজওয়ান এর ঠোঁটে চমৎকার হাসি। তার শুকনো, উস্কো ঠোঁটজোড়া মেয়েটা ভিজিয়ে সতেজ করে দিয়েছে। অথচ এ মেয়েটা কিনা আবার তালাকনামা চাই ভাবা যায়! মিটমিটে হাসল মেয়েটার অবুঝ কথাগুলো স্মরণ করে। রিজওয়ান নিজের বউকে আর লজ্জায় ফেলল না।
আমার নতুন উপন্যাস ‘হৃদয়ের সঙ্গমে অভিমান’ বইটই এপ্যাসে প্রকাশিত হবে ২৬ তারিখ ইন শা আল্লাহ। আমার প্রথম লেখা বইটি এপ্যাসে প্রকাশিত হবে। দাম মাত্র ৪০ টাকায়। এর বেশি হবে না।
আমার পেজ লিঙ্ক https://www.facebook.com/tasmihaalraiyan
সবাই লাইক এন্ড ফলো করে পাশে থাকুন 🥰