উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #পর্ব৮ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
56

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৮
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

বাড়িতে খুশির আমেজ। বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা। পুরো বাড়িতে আনন্দের ধুম। আমিও অনেক খুশি এই উসিলায় কয়েক দিন পড়া থেকে ছুটি। কি মজা! কিন্তু আমার খুশি নিমিষেই মাটি করার জন্য জম রূপে আগমন হলো ইভান ভাইয়ের। এখন ওনাকে দেখলেই কোনো যেন সহ্য হচ্ছে না। মনে হচ্ছে গুলি মেরে তার খুলি উড়িয়ে দেই। একটু আগে তার ওপর পানি ফালানোর অপরাধে আমাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। নির্দয়, পাষান লোক একটা। তার থেকে নজর সরিয়ে মনোযোগ দিলাম বড়োদের কথায়। আজকে যেই মেয়েকে দেখতে গিয়েছে তাকে সবার পছন্দ হয়েছে। হবু ভাবির নাম হচ্ছে প্রিয়ম। দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। বড় আম্মু ছবি দেখিয়েছে। ভাইয়ার সাথে তাকে খুব সুন্দর মানাবে। আম্মুরা সবাই বসে পড়েছে প্ল্যানিং করতে। আমরাও কাজিনরা বসে পড়লাম প্লানিং করতে। কে কি পড়বে, কোন ফাংশনে কেমন সাজ দিবে। কে কোন গানে নাচ দিবে এই নিয়ে আমাদের গবেষণা। সবাই অভ্র ভাইকে খোঁচাচ্ছে। বেচারা আমাদের জ্বালায় টিকতে না পেরে উঠে যেতে যেতে বলল,
“তোদের মতো হারামি এই দুনিয়ায় আর নেই”

আমরা সবাই তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম। আবার শুরু হয়ে গেল আমাদের প্লানিং।
——–

সপ্তাহ খানেক পর ভাইয়ার বিয়ে। আজকে সবাই বিয়ের শপিং করতে যাবে। আমিও তৈরি হচ্ছে। তৈরি হয়ে নিচে নেমে দেখি সবাই আছে তবে ইভা আর ঈশিতা আপু মিসিং। আমাকে বলা হলো তাঁদের ডেকে নিয়ে আসার জন্য। ওদের দেখে মনে হচ্ছে অভ্র ভাইয়ার না ওদের বিয়ের শপিং করা হবে। সবাই নিচে নামতেই বেরিয়ে পড়লাম।

ঘুরে ঘুরে দেখছি। কিন্তু আমার একটা ড্রেস ও পছন্দ হচ্ছে না। হটাৎ আমার থেকে একটু দূরে চোখ পড়লো। অভ্র ভাই আর হবু ভাবি হেসে হেসে কথা বলছে আর জিনিস পছন্দ করছে। অভ্র ভাই ভাবিকে শাড়ি দেখাচ্ছে। কোথা থেকে রুদ্র ভাই এসে বলল,
“ভাইয়া তোমার এক্স টিনা নাকি টিনের দিব্বা আমাকে ফোন দিয়ে জ্বালাচ্ছে। তুমি নাকি তার সাথে কথা বলছো না। সেই দুঃখে বেচারি কেঁদে কেটে যমুনা নদী বানিয়ে ফেলেছে”

ভাবি ভাইয়ার দিকে রাগী চোখে তাকালো। ভাইয়া অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। পারছে না রুদ্র ভাইকে মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দেয়। ভাবি রাগ করে সেখান থেকে চলে গেল। রুদ্র ভাইয়া দাঁত কেলাচ্ছে। অভ্র ভাই চোখ রাঙিয়ে বলল,
“তোর মতো ভাই থাকলে শত্রুর দরকার নেই। সংসার শুরুর আগেই শেষ করে দিলি”

অভ্র ভাইয়া ভাবির পিছু ছুটলেন। ভাইয়া ভাবিকে বোঝাচ্ছে তবে সে মানতে নারাজ। আমরা সবাই দাঁড়িয়ে ভাইয়ার করুণ অবস্থা দেখছি আর মিটিমিটি হাসছি। রুদ্র ভাইয়া এগিয়ে গিয়ে বলল,
“ভাবি ভাইয়ার কোনো এক্স নেই। আমি মজা করছিলাম”

এই বলে রুদ্র ভাইয়া কেটে পড়লো।ভাবি লজ্জা পেয়েছে। অভ্র ভাই বললেন,
“দেখলে আমি বলেছিলাম না আমি পিওর সিঙ্গেল। তুমি আমায় বিশ্বাস করো নি। এখন আমি তোমার সাথে রাগ করবো”

“আমি কি জানতাম নাকি। সরি। প্রথম বার ভুল হয়েছে মাফ করে দিন। আর কখনো আপনাকে অবিশ্বাস করবো না”

দুজনের মাঝে মান অভিমান শেষ। দুজন হাতে হাত রেখে হাটছে আর একেকটা জিনিস দেখছে। আমি দাঁড়িয়ে তাঁদের দেখছি। পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,
“এভাবে ক্যাবলাকান্তের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কোনো?”

“ওদের দেখছিলাম”

আদ্র ভাই ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কাদের?”

“অভ্র ভাই আর ভাবিকে। দুজনকে কি সুন্দর মানিয়েছে বলো?”

“হ্যাঁ। দুজনকে সুন্দর লাগছে। কিন্তু তুই তোর শপিং বাদ দিয়ে ওদের দেখলে হবে? নিজের জন্যও তো কিছু দেখতে হবে”

আমি মন খারাপ করে বললাম,
“আমার কিছুই পছন্দ হচ্ছে না”

“আয় আমার সাথে”

আদ্র ভাই হাত ধরে আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছেন। অন্য পাশে নিয়ে এলো। খুঁজে খুঁজে একটা লেহেঙ্গা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“দেখ পছন্দ হয় কি না?”

লেহেঙ্গাটা খুবই সুন্দর। আদ্র ভাইয়ের পছন্দ আছে বলতে হবে।
“হ্যাঁ খুব পছন্দ হয়েছে”

কেনা কাঁটা শেষে সবাই রেস্টুরেন্টে এসেছি। খাওয়া দাওয়া শেষে বাড়ি ফিরবো। আমরা সবাই অর্ডার দিয়ে বসে আছি। খাবার আসতে একটু সময় লাগবে। সবাই গল্প করছি এমন সময় একটা মেয়ের কণ্ঠ ভেসে এলো,
“ইভান”

ইভান ভাই কারো কণ্ঠে নিজের নাম শুনে উঠে দাঁড়ালেন। একটা মেয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো। আমরা সবাই অবাক। অবাক চোখে তাকিয়ে আছি তাঁদের দিকে।
“তুই কেমন আছিস? দেশে ফিরলি কবে? আমাদের একটা ফোনও দিলি না। বন্ধুরা পর হয়ে গিয়েছি তাই না”

“আরে না। তেমন কিছু না। ব্যাস্ত ছিলাম। তাই তোদের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি”

ইভান ভাই তার বান্ধবীকে নিয়ে কথা বলার জন্য দূরে গেলেন। আমার দৃষ্টি তাঁদের দিকে। দুজন হেসে হেসে কথা বলছে। মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। খাবার আসতেই খেয়ে সবাই বাড়ি চলে এলাম। তবে এখনো আমার চোখে তাঁদের দৃশ্য ভাসছে। মেয়েটা কিভাবে ইভান ভাইকে জড়িয়ে রেখেছিলো। মেয়েটা কি শুধুই তার বন্ধু নাকি অন্য কিছু? মাথায় সব আজাইরা চিন্তা। হোক মেয়েটা যে আমার কি তাতে?

ঘুমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করছি কিছুই ভালো লাগছে না। উঠে ব্যালকনিতে হাঁটাচলা করছি তবুও ভালো লাগছে না। ভাবলাম ছাদে যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। ছাদে উঠে দেখি কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। ফোনে কথা বলছে। মৃদু হাসির শব্দ ভেসে আসছে। এগিয়ে গিয়ে দেখি ইভান ভাই। আমাকে দেখে হাসি থামিয়ে দিলেন। মুহূর্তেই তার হাসি মাখা মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। ফোন কেটে পকেটে রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
“এতো রাতে এখানে কি?”

“ঘুম আসছিল না তাই”

অতঃপর দুজনেই নিশ্চুপ। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। নীরবে কেটে গেল কিছু প্রহর।
“একটা প্রশ্ন করবো ইভান ভাই?”

“কি প্রশ্ন?”

“এতক্ষন যার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলেন সে কে? আপনার গার্লফ্রেন্ড?”

ইভান ভাইয়ের মুখটা ফেকাশে হয়ে গেল। মনে হচ্ছে চোর ধরা পড়ে গেছে। ধমক দিয়ে বলল,
“ফালতু কথা বাদ দিয়ে, রুমে যেয়ে ঘুমা”

তার ধমকে কেঁপে উঠলাম। চোখ টলমল করছে। একটু হলেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়বে। চলে এলাম রুমে। ইভান ভাই আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারলেন? নির্দয়, পাষান লোক তিনি। ভুলটা আমারই আমি কোনো তার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি খেয়াল নেই।
———

বাড়ি ভর্তি লোকজন। প্রায় সব আত্মীয়-স্বজন চলে এসেছে। কাল বাদে পরশু অভ্র ভাইয়ের বিয়ে। আজকের হলুদের অনুষ্ঠান। সবাই হলুদ আর সবুজের মিশ্রনের শাড়ি পড়েছে। আমার পরণেও সেম শাড়ি সাথে অল্প বিস্তর সাজ। একটু পড়েই ভাইয়াকে হলুদ লাগানো হবে। সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। অভ্র ভাইকে এনে সবার মাঝে বসানো হয়েছে। বাড়ির বড়রা সবাইর আগে হলুদ দিয়েছে। এখন আমাদের ছোটদের পালা। যে যতটা পারছে হলুদ মাখাচ্ছে। ভাইয়াকে পুরো হলুদের মাখামাখি করে ফেলেছে। আমি একটু খানি হলুদ নিয়ে ইভার গালে লাগিয়ে দিলাম। ও আমাকে লাগাতে গেলেই দিলাম ছুট্টে দৌড়ে। ইভা পিছনে আসছে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে স্লিপ কেটে পড়ে যেতে নিবো তার আগে হাত ধরে কেউ বাঁচিয়ে নিল। আদ্র ভাই রাগী কণ্ঠে বলল,
“এতো দৌড়াদৌড়ি কিসের? হলুদ খেলছিস ভালো কথা। পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে কি হবে?”

আদ্র ভাইয়ের রাগী কণ্ঠে মুখটা চুপসে গেল। চলে আসতে নিবো এমন সময় হাত ধরে আটকে দিলেন।আদ্র ভাই কথা বলছিলো কারো সাথে তাকে বিদায় দিয়ে সামনাসামনি দাঁড়ালেন।
“মন খারাপ করে না রোদ সোনা। আমি ওভাবে বলতে চাইনি। তোকে পড়ে যেতে দেখে মাথা ঠিক ছিলো না। পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেলে কার কষ্ট হতো? আমার না তোর? সরি ওভাবে বলার জন্য। রাগ করে না। মজা কর ঠিক আছে, তবে সাবধানে”

আমি তখনো চুপসে যাওয়া মুখে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্র ভাই ফের বললেন,
“এখন কি আমি কানে ধরে সরি বলবো? তাহলে তুই খুশি হবি? তুই যদি তাতে খুশি হোস আমি তাহলে কানে ধরতেও রাজি আছি”

আদ্র ভাই কানে ধরতে যাবে তার আগেই তড়িঘড়ি তাকে আটকে দিলাম।
“তোমার কান ধরা লাগবে না। এইযে দেখো আমি হাসছি”

বলে হেসে দিলাম। নাহয় তিনি সত্যি সত্যিই কান ধরবে। আদ্র ভাই গাল টেনে দিয়ে বলল,
“এভাবেই সব সময় হাসিখুশি থাকবি। গোমড়া মুখে তোকে একটুও মানায় না। কেমন পেত্নী পেত্নী লাগে”

“আর হাসলে কেমন লাগে?”

আদ্র ভাই বিরবির করে বলেন,
“আমার রৌদ্রময়ী”

ঠিক ভাবে শুনতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“মানে?”

“কিছুনা। তুই না হলুদ খেলছিলি। যা গিয়ে হলুদ খেল”

আমার হাতে যে হলুদ ছিলো সেটা এতক্ষন খেয়ালই ছিলো না। খেয়াল হতেই মাথায় দুস্টু বুদ্ধি চেপে বসলো। হাত বাড়িয়ে আদ্র ভাইয়ের গালে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে দিলাম ভোঁ দৌড়। আদ্র ভাই পিছন থেকে চেঁচিয়ে বললেন,
“সাবধানে যা নাহয় পড়ে যাবি। পা*গলী মেয়ে”

#চলবে?

(যারা নায়ক নিয়ে কনফিউশনে আছেন তাঁদের বলবো একটু ধর্য্য ধরুন। কয়েক পর্ব পড় বুঝতে পারবেন নায়ক কে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা কেমন লেগেছে জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here