প্রেমসুধা #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ২৫

0
170

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৫

তৌসিফ বাসায় নেই। দিন দুই রুম বন্দি থেকে নিজেকে আসামি মনে হচ্ছে পৌষ’র। এরজন্য সে দিন রাত খেয়ে না খেয়ে দায়ী করছে তৌসিফ’কে। কথা বার্তা ও কম ই বলার চেষ্টা করছে। পৌষ অবাক ও হয়। মানুষটা তার কথা শুনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। পৌষ ও কথা পেটে রাখতে পারে না। তার কষ্ট হয়। পেট ব্যথা করে। মনে হয় হাত কাটা ফকির সে তাই তো পটর পটর করা শুরু করে ও। তৌসিফ তখন শুনে। সে মুখ বুজে শুনে। বগর বগর করতে করতে পৌষ যে কখন ঘুমিয়ে যায় তা ও নিজেও জানে না। বিছানা ছাড়লো পৌষ। গা টান দিলো একদিন বিড়ালের মতো। পরণে থাকা জামাটা কুঁচকে আছে। যথাসম্ভব টেনেটুনে সোজা করলো ও। তৌসিফ মিয়া তাকে পাকিস্তানি সুট এনে দিয়েছে। কাপড় নিজের বাসার গুলো না থাকায় এগুলোই পরে দিন কাটাচ্ছে ও। সুতির এহেন আরামদায়ক পোশাক পৌষ ততটা পরতো না। পায়ের চপ্পল রাখা সামনেই। পৌষ দেখলো অতঃপর এক শট মে’রে একটা পাঠালো কাউচের নীচে আরেকটা তৌসিফের জিমের ডাম্বলের দিকে। ঢং দেখে সে ম’রে ম’রে। এত সুন্দর ঝকঝকা ফকফকা ফ্লোর এটাতে কেন চপ্পল পরে হাটবে ও? এমন ফ্লোরে তো আরামসে ভাত ঢেলে ও খাওয়া যাবে।
গায়ে ওরনা তুলেই পৌষ বেরিয়ে এলো। হাতে থাকা বাটারফ্লাই ব্যান্ড দিয়ে ঝুঁটি করতে করতে বের হচ্ছিলো ও। খেয়াল না করাতে ধাক্কা খেলো সোহা’র সাথে। পৌষ মুখে সরি সরি বলে উঠতেই খ্যাঁট খ্যাঁট করে উঠলো সোহা। মেজাজ তুঙ্গে তুলে ধমকে উঠলো,

— দেখে হাটতে পারো না মেয়ে? চোখ কোথায় থাকে তোমার? অসহ্য একদম। কোথা থেকে ধরে এনেছে এটাকে কে জানে? চলন্ত রেলগাড়ী নিয়ে এসেছে বাড়ীতে।

পৌষ বুকে হাত গুজে পরখ করলো সোহা’কে। বাড়ীতেই এক প্রকার নাইটি পরে ঘুরছে সে। মুখে আবার দেখে মনে হচ্ছে গোবর লেপ্টে দিয়েছে। পৌষ’র সন্দেহ যেন নিমিষেই ফুরালো। ও ভেবেই নিলো তৌসিফে’র বাপের অবৈধ বা বৈধ সন্তান ই এই সোহা নাহলে এত রুপ চর্চা কিভাবে করে এই মেয়ে? দেখতে তো ফর্সা ই এখন সে কি চায় চেহারার চামড়াটাও উঠে যাক? সোহা তখনই ধমকে উঠলো পুণরায়,

— এই মেয়ে কি বিরবির করছো? অসভ্য মেয়ে।

পৌষ চোখ দুটো ছোট করে তাকাতেই সোহা বিব্রত হলো। পৌষ কড়ায় গন্ডায় সোহা’র কথাগুলোর উত্তর দিলো,

— দেখেই তো হাটি খালা। চোখ এই দেখুন চোখেই আছে।

বলেই বড় বড় করে তাকিয়ে চোখ দেখালো অতঃপর আফসোস করা কণ্ঠে বললো,

— আমাকে আমার বাড়ী থেকে ধরে না বিয়ে করে এনেছে আপনার ভাআআআই। ঐ যে আপনার তৌসিফ ভাই, আপনার কলিজার ভাই, গুরদার ভাই। তো বুঝলেন তো, রেলগাড়ী না বউ এনেছে আপনার তৌসিফ ভাই।

দাঁত বের করে কেলিয়ে ক্যাবলা মার্কা এক হাসি দিলো পৌষ। সেভাবেই প্রস্থান করলো সেখান থেকে। সোহা রাগে, আপমানে ফুঁসতে লাগতেই পৌষ দরজা অবদি গিয়েই বলে উঠলো,

— খালাম্মা?

আচমকা ডাকে সোহা তাকাতেই পৌষ এক পাটি দাঁত বের করে বললো,

— হ্যাঁ হ্যাঁ আপনাকেই বলছি, মুখে ঐ গোবর লাগিয়ে লাভ নেই। দেখতে একই লাগে মাঝখান থেকে আপনার কলিজার ভাই তৌসিফ আর আমার জানের জান, প্রাণের প্রাণ, যার উপর আমার জান কুরবান সেই জামাই এর টাকা বরবাদ হয়। বুঝেন ই তো স্বামীর টাকার প্রতি টান আছে একটা।

পৌষ চলে গেল। সোহা হা করে তাকিয়ে রইলো সেখানে। কি বললো এই মেয়ে? টাকার খোঁটা দিলো সোহা’কে? এত সাহস! কোথায় পেলো এত সাহস? মিনু এসে আপা’কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বললো,

— আপা কি হয়েছে?

সোহা’র ধ্যান ভাঙলো। আশ্চর্য গলায় বললো,

— আমার চেহারায় কি বল তো?

মিনু বুঝলো না তাই বলে উঠলো,

— জানি না তো আপা। ফেস প্যাক না এটা?

— এটা কি গো-বর?

মিনু ফিক করে হেসে দিলো। কুটকুট করে হেসে বললো,

— একদম ঠিক বলেছো আপা। দেখে গোবরই মনে হয়। একদম ঐ রঙের এটা। গন্ধটা ও কেমন মনে হয় রাস্তা থেকে গোবর প্যাকেট করে ঐ দোকানে বিক্রি করে।

মিনু’র কথা শুনে সোহা কথার খেই হারালো। রাগে, কষ্টে প্রস্থান করলো সেখান থেকে। ওয়াশরুমে ঢুকেই আগে মুখটা ধুঁয়ে নিলো। এই আপমান মানার নয়। এত দামী অর্গানিক ফেস প্যাক। মূর্খ গুলো জানে এটার মূল্য কত? পৌষ’কে “ফকিন্নি” বলে ডাকতেও ভুললো না সোহা। তার গা জ্বালা করছে।
.
পৌষ এসেছে সোজা নিচে। তালুকদার বাড়ীটার মেইন গেট দুটো। গাড়ি ঢুকলে বড়টা খোলা হয় অন্যথা পকেট গেইট দিয়ে ই সকলের যাতায়াত। এদিকে মানুষ আসলেও অনুমতি ছাড়া ভেতরে ঢুকা নিষিদ্ধ। পৌষ একা একা হাটলো এদিক ওদিক। পুকুর পাড়ে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখলো একটা নৌকা বাঁধা। শেষের সিঁড়ি গুলো শ্যাওলার জন্য পিচ্ছিল বটে তাই তো পৌষ নেমেও নামলো না। পানিতে পরলে রক্ষা নেই। একদম জয় বাংলা হয়ে যাবে ও। উপরে এসে কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকালো কিছুক্ষণ। বিশাল বড় গাছটা। সাইডেই সারি সারি নারিকেল গাছ। পৌষ’র মাথায় দুষ্টামি চাপলো। নারিকেল গাছ থেকে টাটকা নারকেল খেতে মন চাইলো ওর। দারোয়ান’কে বলতেই সে নগলে বলে উঠলো,

— এখনই দিচ্ছি ছোট মামি। আপনি ভেতরে যান৷ মামা দেখলে রাগ করবে।

— ধুর মিয়া, আপনার মামা’র গুষ্টি কিলাই আমি। আসুন আপনি। ভয় কিসের? মনে রাখবেন ভয় পেলেন তো হেরে গেলেন। ভয়’কে জয় করতে খেতে হয় মাউন্টেন ডিউ৷ খাবেন?

দারোয়ান হতবাক। মানুষ এত বাঁচাল কিভাবে হয়? এ ও কি সম্ভব? মনে হচ্ছে কান পেঁচিয়ে ফেলবে। দারোয়ান নারিকেল পেরে দিলো। কেটেও দিলো। পৌষ একটা’র অর্ধেক খেতে খেতে বললো,

— ঐ পিচ্চিগুলো ওখানে কি করে?

গেটের বাইরে এক দল পিচ্চি খেলা করছে। দারোয়ান জানালো,

— পাশের বস্তিতে থাকে এরা৷ ওদের মা-বাবা’রা এখানে কাজ করে। ঐ যে ছোট্ট টা আমার ভাগ্নে।

পৌষ যেন হাতে চাঁদ পেলো। ঝট করে বললো,

— এদের ডাকুন ভেতরে।

দারোয়ান সাথে সাথেই না করলো। জানালো,

— বড় মামা রেগে যাবেন।

— আরে ধুর মিয়া। সরুন দেখি আমি আনছি।

বলে পৌষ নিজেই ওদের ডাকলো,

— এই পিচ্চিরা। এখানে আয়।

ডাক শুনতেই হৈ হৈ করে সবগুলো ভেতরে এলো। মিনিট পাঁচ যেতেই এরা হাউকাউ শুরু করে দিলো। ওদের খেলাধুলা শুরু হয়ে গেলো ততক্ষণে। পৌষ যেন বিয়ের পর এতদিনে মন খুলে খেলায় মনোযোগ দিলো। কখন যে বিকেল কাটলো টের ই পেলো না।
.
এক প্রকার তারাহুরো করে গাড়ি থেকে নামলো তৌসিফ। পৌষ’র রিপোর্টগুলো ওর হাতে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে তৌফিকের কল এলো কিন্তু ধরলো না তৌসিফ। আগে বউটাকে দরকার তার।নিজের ফ্লাটে ঢুকেই দেখলো শুনশান নীরবতা। রুমে যেতেই ভ্রুঁ যুগল কুঁচকালো ওর। এদিক ওদিক তাকিয়ে ডাকলো,

— পৌষরাত?

না উত্তর এলো না। পকেট থেকে মানিব্যাগ, ফোন বের করে বেডে ছুঁড়ে দিলো তৌসিফ। হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে ওয়াশরুমের দরজায় নক দিলো। নাহ নেই। বের হয়েও ডাকলো,

— হানি? কোথায় তুমি?

উত্তর না আসাতে তৌসিফ এবার চিন্তায় পরলো। জোরে বুয়াকে ডাকতেই তারা দৌড়ে এলো। তৌসিফ জিজ্ঞেস করলো পৌষ’র কথা। বুয়ারা জানালো বিকেলে পৌষ রুমেই ছিলো। তৌসিফ ভয়ঙ্কর ভাবে রেগে ধমক দিলো,

— রুমে থাকলে নেই কেন? কোথায় ও?

ভয়ে কাঁপছে সকলে। তখনই ফোন এলো রুমে। দৌড়ে গিয়ে দেখলো তৌফিক কল করেছে। না চাইতেও ধরলো ও। ওপাশ থেকে তৌফিক কড়া গলায় বলে উঠলো,

— বাড়ীটাকে কি এতিম খানা বানিয়েছো তুমি? একেতো এতিম, নাজায়েজ মেয়ে বিয়ে করে আনলে সেই মেয়ে নিয়ে যত কাহিনি। ঐ মেয়ে এখন রাস্তা ঘাট থেকে মানুষ তুলে বাড়ীতে ঢোকাচ্ছে। তামশা করছে ঐ মেয়ে। একে সামলাও নাহলে…….

কল কেটে দিলো তৌসিফ। দৌড়ে নামলো বাসা থেকে। বাড়ীর পেছনে যেতে নিলেই দেখলো ঘাট পাড়ে এত এত বাচ্চা নিয়ে খেলছে পৌষ। দৃশ্যটা কিন্তু সুন্দর অথচ ঐ মুহুর্তে তা তৌসিফে’র কাছে তা সুন্দর লাগলো না। গটগট পা ফেলে সকলের সামনে দিয়ে গিয়ে পৌষ’র হাত টেনে ধরলো ও। চোখ তুলে তাকালো পৌষ। তৌসিফ’কে দেখেই হাসি মুখে বলে উঠলো,

— আপনি?

তৌসিফ তখন ভিন্ন ধ্যানে। পৌষ’র হাত টেনে ধরে বললো,

— ভেতরে চলো।

— আরে খেলছি তো। দেখুন ওরা মালা গেঁথে দিলো আমা…..

— চলো বলছি!

বেশ রেগেমেগে বললো তৌসিফ। পৌষ পাত্তা দিলো না। ও ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতেই তৌসিফ এবার সজোরে ধমকে উঠলো,

— সোজা ভেতরে চলো পৌষরাত। তোমার পা বেড়ে গিয়েছে!

বাচ্চাগুলো ভয়ে সিটিয়ে গেলো তা দেখেই পৌষ নাক ফুলালো। মান ইজ্জত রইলো না। দারোয়ান তাকিয়ে আছে ভয়ে ভয়ে। পৌষ মুখ খুলে কিছু বলতে নিলেই তৌসিফ বাচ্চাগুলোকে ধমকে উঠলো। সবগুলো ছুটে পালালো। সবচেয়ে ছোট্টটা উস্টা খেয়ে পরতেই পৌষ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো জোর করে। বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো মাটি থেকে। তৌসিফ চিৎকার করে দারোয়ান’কে ডাকতেই সে দৌড়ে এলো। তৌসিফ পৌষ’র কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে দারোয়ানকে দিয়ে বললো,

— ওর বাসায় দিয়ে এসো।

একপল অপেক্ষা না করে পৌষ’কে টেনেটুনে নিলো তৌসিফ। টলমল চোখে পৌষ। রা করলো না। রুমে এনে একদম দরজা আটকে দিলো তৌসিফ। পৌষ মুখ খুলতে নিলেই ধমকালো তৌসিফ,

— ঘাটে কি তোমার? কথা বলো, কি ওখানে? সময় দেখেছো? এই মেয়ে, সময় দেখেছো? তোমার না শরীর খারাপ? আর যদি দেখেছি….

কথা কেড়ে রেগে পৌষ বলে উঠলো,

— কি করবেন? কি করবেন আপনি?

মুখ চেপে ধরলো আচমকা তৌসিফ। চোয়ালে চাপ দিতেই পৌষ থমকে গেলো। টলমল চোখে পানি পরলো। দাঁত চেপে তৌসিফ বলে উঠলো,

— না মানে না। কি বলেছি বুঝেছো? আমার রাগ দেখতে যেয়ো না পৌষরাত। ভয়ংকর খারাপ হবে। কথা শুনবে। বাধ্য তুমি আমাকে শুনতে। আর বাইরে যাবে না। বেশি বার বাড়লে একদম ঘরের বাইরে পা রাখা নিষিদ্ধ করে দিব এন্ড ইউ নো আই ক্যান ডু দিস।

কথাগুলো বলে তৌসিফ ছাড়লো ওকে। দুই পা পেছালো পৌষ। ঢোক গিললো দুটো তিনটা। তৌসিফ তখন ওয়াশরুমে ঢুকলো। পৌষ ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ভাবলো কিছু। ছোট্ট বাচ্চাটা মাটিতে পরে গেলো দৌড় দিতে গিয়ে। একদম ইনি-মিনির সমান বাবুটা। কত সুন্দর খেললো। সবগুলো মিলে পৌষ’কে কি সুন্দর মালা গেঁথে দিলো তৌসিফ কি না ওদের ই ধমক দিলো। মায়া ও হলো না। বড়লোকরা কি এমন ই হয়? গরীব পছন্দ না এদের? এদের কথা ই শুনতে হয়? পৌষ’কে সে আজ বলেই দিয়েছে পৌষ তার কথা শুনতে বাধ্য। কেন হবে না? মাগনা খাওয়া থেকে শুরু করে পড়াশোনা, পায়ের উপর পা তুলে থাকা, কোন কাজ নেই, সারাক্ষণ চাপা নাড়ানো, এত দামি দামি পোশাক সবই তো তার দেয়া। বিনিময়ে তো তারই গোলামী করতে হবে পৌষ’র। এটাতে ভুল নেই। নিজের কষ্ট ভুলাতে আর কত তর্ক করবে ও? আর কত অস্বীকার করবে সে এতিম। তার বাবা নেই। মা নেই। মা-বাবা ছাড়া একজন মানুষ ঠিক কতটা অসহায় তা পৌষ বাদে কে ই বা জানে? বাঁচাল তো পৌষ ছোট থেকেই। মনে কথা চেপে রাখে না। যা মুখে আসে তাই বলে দেয়। এই সাদা মনটাতে কাঁদা নেই তার। আচমকাই পৌষ ভাবলো তৌসিফ ভুল না। তার কি দায় সে পৌষ’কে পালছে? পৌষ ই বা কেন মাগনা থাকছে? বুয়ারা যেমন টাকার বিনিময়ে কাজ করছে সেভাবে পৌষ ও বাধ্য শুধু কাজগুলো ভিন্ন।

চোখ মুছে বিছানায় গিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পরলো পৌষ। খট করে দরজা খুলে ওয়াশরুম থেকে বের হলো তৌসিফ। পৌষ তখনই ঠাই শুয়ে আছে। তার চিন্তা জুড়ে হঠাৎ ই ভিন্ন কিছু। তৌসিফ ঠান্ডা মাথায় বউ’কে দেখলো। তার আচরণে ভুল নেই। কেন সে তৌসিফে’র কথা শুনে না? কেন বুঝে না তৌসিফের ভয়? কত করে বলেছে সন্ধ্যার সময় ঘাটে না যেতে। তার ফুপির মৃত্যু সেখানেই হয়েছিলো। লোকমুখে শোনা কথা হোক বা ভিন্ন কিছু তৌসিফ পৌষ’কে নিয়ে সচেতন।

পা টিপে বউয়ের কাছে এলো ও। পিঠে হাত রাখতেই পৌষ ঘুরে তাকালো। গাল দুটো লাল হয়ে আছে। আলতো হাত বুলালো তৌসিফ। ছোট্ট করে বললো,

— সরি। এতটা লেগে যাবে বুঝি নি হানি।

পৌষ চুপ রইলো। তৌসিফ ওর মুখটা ধরে বরাবরের মতো থুতনিতে চুমু দিয়ে বললো,

— সরি তো আমার তোতাপাখি।

গালে দুটো চুমু দিয়ে বললো,

— পুকুরে যেতে না করেছিলাম না হানি?

— বাচ্চাটার কি দোষ?

— কখন বলেছি ওদের দোষ?

— ধমকে দিলেন যে? বাচ্চাটা পরে গেলো।

— বেশি ভাবছো…

–আমার মতো এতিম সে। এতিমরা বেশিই ভাবে।

— ওহহো পৌষরাত, কি বুঝাব তোমাকে আমি?

বলেই জড়িয়ে ধরলো ওকে। পৌষ চুপ রইলো। তৌসিফ জানালো,

— তোমার রিপোর্ট দেখে চিন্তায় ছিলাম হানি৷ স্বাস্থ্য ঠিক নেই তোমার। চিন্তায় ম’রে যাচ্ছিলাম। বাসায় এসে দেখি তুমি নেই। কেমন লাগে বলো? বড় ভাই ফোন দিয়ে উলোট পালোট কথা বললো তারমধ্যে বুয়ারা সঠিক খবর দিতে পারলো না। রাগ হওয়া কি স্বাভাবিক না?

— জ্বি।

পৌষ’র এহেন ঠান্ডা শব্দ হজম করা কষ্টসাধ্য। বুকটা যেন ছটফট করে উঠে। তৌসিফ অস্থির হয়ে বলে উঠলো,

— প্লিজ হানি, ডোন্ট ডু দিস টু মি। বি নরমাল টু মি।

— সোহা’কে বের করে দিন।

— দিব।

— আচ্ছা।

পৌষ’কে তখনও বুকে চাপা তৌসিফ অথচ মেয়েটা শক্ত হয়ে আছে। তার চোখের পানিতে পৌষ’র বুক ভিজছে। তৌসিফ ওকে ছাড়লো। ঠোঁটে চুমু দিয়ে ই বললো,

— কথা বলো না হানি।

তৌসিফ’কে অবাক করে দিয়ে নিজের পরনে থাকা কামিজটা খুলে নিলো ও। তৌসিফ অবাক হঠাৎ কান্ডে। পৌষ মাথা নিচু করে সহজ সরল গলায় বলে উঠলো,

— ইউ ক্যান। আমি বাঁধা দিব না৷ কাঁদব না৷ সত্যি বলছি।

লাস্যময় নারী দেহ যাকে খুব করে চায় তৌসিফ। বছরের পর বছর পুড়ে পুড়ে আঙ্গার ওর যৌবন। এহেন সময় পৌষ’র করা এহেন কান্ডে ঠিক কোথায় গড়াবে জল? স্রোতে ভেসে কোথায় যাবে তৌসিফ নাকি এখানেই ডুবে ম’রবে? পৌষের মাঝে।

#চলবে……

বদ্ধ রুমের মধ্যে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে প্রাণ। আচমকা প্রিয়র গালে শক্ত এক চড় বসাতেই আট মাসের পেটটা নিয়ে ছিটকে ফ্লোরে পরে ও। অনবরত আঘাত পরে প্রিয়’র গায়ে। প্রাণ ঝুঁকে প্রিয়’র মুখটা চেপে ধরে বলে,

— কথা শুনবি বল।

— শুনব।

— তাহলে তখন শুনলি না কেন?

বলেই প্রিয়’র চুলের মুঠি ধরে টেনে দাঁড় করায়। পুণরায় চার পাঁচটা চড় খেয়ে ফ্লোরে বসেই প্রাণে’র পা জড়িয়ে ধরে ও। হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

— আ…আর মেরো না প্রাণ।

পা দিয়ে ছিটকে ফেলে প্রাণ। মুখ থুবড়ে পরতেই চিৎকার করে প্রিয় বলে,

— পেটে না। প..পেটে মেরো না প্রাণ। এখানে বাবু আছে। প্লিজ না প্রাণ৷ পেটে মেরো না।

প্রাণ শুনলো না। সজোড়ে লাথি মারলো প্রিয়’র আট মাসের ভরা পেটটাতে……

ই-বুক “প্রান প্রিয়”। গল্পটা অতিরিক্ত রোম্যান্সধর্মী। এখন পাচ্ছেন বইটই অ্যাপে ২৫% ছাড়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here