#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৭
চারদিকে ফুড় ফুড়ে বাতাস। আকাশটাও ঘনকালো মেঘে ছেয়ে আছে আবার হুটহাট করে মেঘ সরে সেথায় জায়গা নিচ্ছে সূর্যের আলো। পর্দার ফাঁক ফোকর দিয়ে মৃদু আলোক ছটা এসে হানা দিলো পৌষ’র চোখে মুখে। ঘুমের মাঝেই বিরক্ত হয়ে তৌসিফে’র বুকে আরেকটু লেগে নাক মুখ গুজে ঘুমালো পৌষ। একে বাইরে ঠান্ডা তার মধ্যে সারারাত রুমে চলে এসি। তৌসিফ ও ঠান্ডায় বউয়ের উষ্ণতা পেয়ে ওকে চেপে ধরলো নিজের বুকে। গভীর উষ্ণ আলিঙ্গনে আপ্লুত এক পরিবেশ সৃষ্টি হলো।
ভোর কেটেছে অল্প। তৌসিফের টাইমলি ঘুম ভাঙলো। চোখ খুললো ধীরে ধীরে তখনই খেয়াল হলো সে কাউকে নিজের মাঝে নিয়ে আছে। অধরের কোণ ঘেঁষে তখন হাসির ঝলক। তৌসিফ একটু ঝুঁকে চুমু দিলো পৌষ’র মাথায়। এত আদুরে, শান্ত অথচ একে সজাগ করে দেখো চিৎ পটাং করে রেখে দিবে। আরেকটু বুকে নিয়ে কপালে চার পাঁচটা চুমু দিলো তৌসিফ। মেয়েটা তার এক অন্যতম ভালোবাসা। তার প্রতি দিন কে দিন তৌসিফ শুধু দূর্বল হচ্ছে। এতদিন তার কোন দূর্বলতা ছিলো না। এখন যেন তৌসিফের ভয়টা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ভালোই শত্রুর আক্রমণের শিকার সে। হায়না দৃষ্টি আকর্ষণ করা ভালোই আয়ত্তে তার। সামনে জ্বি হুজুর বলা মানুষ গুলোই পিছনে ছুঁ’ড়ি হাতে দাঁড়িয়ে। সুযোগ বুঝেই ঝোঁপে কোপ মা’রবে তারা।
উঠতে মন চায় না তৌসিফের। এত সুন্দর বউ রেখে কার ই বা ভালো লাগে উঠতে? কিন্তু সমস্যা একটাই তার এক রান দিতে হবে। জিমে না গেলে তার ফিটনেস ঠিক থাকবে না৷ সে আরেক মহা কাব্য। উঠে যত্ন করে পৌষ’কে গুছিয়ে রাখলো তৌসিফ। গলা অবদি কম্বল দিয়ে ঢেকে এসি অফ করে নিজে ফ্রেশ হয়ে জিম সুট পরে নিলো। ফোনটা পকেটে ভরে অতি বিড়াল পায়ে সে রুম ত্যাগ করলো পাছে যদি বউটা উঠে যায়?
তৌসিফ যাওয়ার ঘন্টা খানিক পরই ঘুম ভেঙে পৌষ’র। আড়মোড়া ভেঙে উঠে পাশে হাতাতেই দেখে খালি। এটাই হয়। ঘুম থেকে উঠে জামাই মিলে না কাছে। কোথায় সকাল সকাল জামাই’কে আদর সোহাগ দিয়ে তুলবে তা না ব্যাটা আগেই ভেগে যায়। কি হইবে সেই পেটানো শরীরটা দিয়ে যদি তোর বউকেই সকালে সময় না দিস? পৌষ মুখ গোমড়া করে উঠে বিছানা গোছালো। রুমের সব পর্দা খুলে গেলো ওয়াশরুমে। লাইন অন করেই আয়নায় নিজেকে হেসে ফেললো ও। এই লাইট নিয়ে ও কম তো কাহিনি হলো না। সাদা লাইট লাগিয়ে ছেড়েছে পৌষ। তৌসিফ মানুষ টা খারাপ না তবে পৌষ’র ওকে গিরগিটি মনে হয়। সে রঙ বদলায় হুটহাট। পৌষ’কে প্রচন্ড আঘাত ও দিবে আবার ভালোবাসায় ও ভরে রাখবে। ব্রাশ করতে করতে পৌষ নিজেকে আয়নায় দেখলো অতঃপর শুধু পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো। সামনের কাঁচের সেল্ফগুলোতে সারি সারি দামি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট রাখা। একটা খুলে ঘ্রাণ নিলো পৌষ। মনে হলো একটু চেখে দেখতে। এত সুন্দর একটা ঘ্রাণ! লোভ বুঝি সামলানো যায়? একটু নিয়ে মুখে দিয়ে ওয়াক ওয়াক করে কুলি করে নিলো। ঘ্রাণ ভালো কিন্তু স্বাদ না। মুখ মুছে বেরিয়ে গেলো পৌষ।
নাস্তা নিজ হাতে বানাতে তার ভালোলাগে। তাই সোজা কিচেনে ঢুকলো ও। সুজি দিয়ে শুরুতে ই হালুয়া বানায় পৌষ। যদিও জানা নেই তৌসিফ আদৌ পছন্দ করে কি না৷ তবুও আজ হালুয়া বানালো ও। ব্যাস্ত হাতে রুটি বানিয়ে দিতেই বুয়া ভেজে ভেজে তুললো।
তৌসিফ ফিরেছে মিনিট দশ হলো। এখনই গোসল করে সে টেবিলে আসবে। ভিজিয়ে রাখা পেসতা,কাজু আর চিনা বাদামগুলে কেটে নিলো পৌষ। হালুয়াতে ছিটিয়ে আরেকটু নাড়া দিতেই ঘ্রাণে মৌ মৌ করে উঠলো চারপাশ। তৌসিফ রুম থেকেই ডাকলো,
— হানিই?
পৌষ ও কিচেন থেকেই উত্তর দিলো,
— কি?
তৌসিফ কথা না বলে বেরিয়ে এলো। সবেই গোসল করেছে সে। আপাতত একটা সিট মাস্ক লাগানো মুখে। পৌষ হঠাৎ পিছনে ঘুরে তৌসিফ’কে দেখেই গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে উঠলো। চোখ বড় বড় করে ওর মুখ চেপে ধরে তৌসিফ। বুয়া সহ বাকিদের দেখে অভ্যাস, পৌষ হঠাৎ দেখে চমকেছে ভালোই। কে জানে দিন দাহারে রুপের সাগর দরিয়া সেজে ঘুরে তৌসিফ? পৌষ ঝটকা মে’রে হাত সরালো ওর মুখ থেকে। হাতের খুন্তি উঁচু করে বললো,
— কি চাই?
— তোমাকে।
— কাজ করছি।
— দেখলাম।
— তো? যান এখন। মেয়েদের হার মানাবেন আপনি।
বুয়া সামনে অথচ তৌসিফের ধ্যান নেই সে পৌষ’র গালে হাতের উল্টো পিঠ ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
— তোমার জন্য ই তো।
ঝটাক মে’রে পুণরায় হাত সরালো পৌষ। মুখ ভেঙিয়ে বললো,
— জানা আছে বাবু মশাই। আপনি আজকের না পুরাতন বৈরাগী।
তৌসিফ পৌষ’র গাল দুটো টেনে দিয়ে চলে গেলো। মাস্ক তুলে ফেসটা একটু ম্যাসেজ করলো অতঃপর মুখ ধুয়ে সিরাম লাগিয়ে মশচুরাইজার দিলো। এতেও কিন্তু শেষ নয়, সানস্ক্রিন লাগিয়ে বের হলো রুম থেকে। চেহারায় তখন তার আফটার জিম গ্লো। পৌষ টেবিলে গরম গরম রুটি আর হালুয়া রাখতেই তৌসিফ’কে খেয়াল করলো। চেহারা একদম চিকচিক করছে যেন। এতটা গ্লো কোথা থেকে এলো? মন চাইলো গাল দুটো ছুঁয়ে দিতে কিন্তু সাহসে কুলালো না৷ যদি ছ্যাবলা ভাবে?
তৌসিফের সামনে বুয়া ডিম সহ এক পদের ভাজি রেখে গেলো। সোহা ও এসে বসেছে। পৌষ তৌসিফে’র দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— হালুয়া দেই?
সোহা ফোড়ন কেটে বলে উঠলো,
— এসব কি…..
কথা শেষ করার আগেই পৌষ ওকে একদম অগ্রাহ্য করে তৌসিফ’কে বললো,
— দিব? খাবেন?
তৌসিফ গাঢ় হাসলো। প্লেট বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— অনেক বছর খাই না হালুয়া। আগে মা বানাতো।
পৌষ হাসি মুখে তুলে দিলো। রুটি দিতেই একটা রুটি হালুয়া দিয়ে খেলো পৌষ। তৌসিফ ওর প্লেটে ডিম দিয়ে বললো,
— কোন বাহানা না হানি। খেয়ে নাও।
মুখ লটকালেও পৌষ ডিম খেলো। রোজ তাকে ধরে ডিম খাওয়াবে তৌসিফ। পৌষ আজ তর্ক না করে খেয়ে উঠলো। তৌসিফ রুমে যেতেই পৌষ কাজের বুয়াকে শুনিয়ে বললো,
— খালা শিঘ্রই বিয়ে খাবে।
বুয়া না বুঝে বললো,
— কার?
— কার আবার? আপনাদের মিনুর আপার।
সোহা হঠাৎ ই দাঁড়িয়ে গেলো। তার বিয়ে মানে? তৌসিফ কি ঐ ভার্সিটির লেকচারারের সাথে তার সত্যি ই বিয়ে দিবে?
.
কফি হাতে রুমে ঢুকে তৌসিফের হাতে এক কাপ দিয়ে নিজের চা নিয়ে বারান্দায় চলে যায় পৌষ৷ তার ভালো লাগে জায়গাটা। তৌসিফ ও পিছু পিছু চলে এসেছে এখানে। পৌষ তখন রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঘাটের পাশেই রাস্তা। একদম কাঁচা রাস্তা। সেখানেই দুটো গরু ছেড়ে রেখেছে কেউ। তারা ঘাসে মুখ ডুবিয়ে খাচ্ছে। আচমকাই পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে তৌসিফ। পৌষ মৃদু কেঁপে উঠলো। হালকা স্বরে বললো,
— যদি চা পরে যেতো?
— যেতো না। আমি আছি তো।
পৌষ ছাড়ালো না আর তৌসিফ ও ছাড়লো না। তৌসিফ ধীরে বললো,
— কি দেখো?
— এই পুকুর ঘাটটা ভালো লাগতো আমার আগে থেকেই। রাস্তা থেকে তাকিয়ে দেখতাম অথচ এখন কত কাছে।
— এত ভালো লাগে?
— হুম। এখানে পা ডুবিয়ে বসলে মজা লাগবে। আর ঐ নৌকাটা কি চলে?
— চলে তো।
— আমি উঠলে আপনি বকবেন?
— খুউব।
— কেন?
— সন্ধ্যার সময় ওখানে যাবে না।
— কাল ওভাবে কেন আচরণ করলেন?
— একদিন বলব।
— নৌকায় উঠতে চাই।
— বুড়িগঙ্গা ঘুরবে নাকি পদ্মা?
— এই পুকুর।
— পৌষরাত…..
— প্লিজ।
— আচ্ছা।
পৌষ লাফিয়ে উঠতে নিলেই ওর কাঁধে চুমু দেয় তৌসিফ। জানায়,
— আজ রাতে তোমায় নিয়ে বের হব। ফ্রেন্ডরা থাকবে।
— কোথায়?
— এক ফ্রেন্ডের নতুন শোরুম উদ্ভোদন করছে তার পার্টি।
— ওহ। আমি যাব না।
— কেন?
পৌষ চায়ে চুমুক দিলো। জানালো,
— ঐ সব বড়লোক পার্টি আমার পছন্দ না। ফালতু লাগে।
— আমি থাকব তো হানি।
— নো।
— ইয়াহ।
— না ব লে ছ…
একদম ওকে থামিয়ে দিলো তৌসিফ। পৌষ বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওয়াক ওয়াক করে উঠলো। ঠোঁট মুছতে মুছতে বললো,
— কফি খেয়ে মুখ তিতা করে এখন আমার মুখ ও তিতা করে দিয়েছেন। খারাপ লোক।
বলেই চায়ে চুমুক দিলো। পৌষ অবাক ই হলো। কফি এতটাই তেতো করে তৌসিফ খায় যে ওর মুখ এখনও এতটা তেতো হয়ে আছে? এদিকে চাপা হাসছে তৌসিফ যা দেখে রেগে যায় পৌষ।
#চলবে….
প্রিয় প্রাণ’কে দেখা মাত্র ই চমকালো৷ প্রাণ তো আজ এত তারাতাড়ি বাসায় ফেরার কথা না। তখন সাহস করে বেরুলেও এখন অনেকটা ভয় পাচ্ছে ও৷ তবুও বুকে সাহস জুগিয়ে এগিয়ে এসে ব্যাগগুলো সাইডে রেখে বললো,
— আ..আজ এত তারাতাড়ি ফিরলে?
— ফিরে অসুবিধায় ফেলে দিলাম নাকি?
— কি যে বলো? আসলে আমি একটু বেরিয়েছিলাম।
বলেই এক কদম সামনে বাড়লো। প্রাণ চোখ না তুলেই জিজ্ঞেস করলো,
— কাকে বলে?
— আ..আসলে তোমাকে বলতে..চেয়েছিলাম ক..কিন্তু ভাবলাম তুমি ব্যাস্ত তাই।
— ওহ্।
প্রাণ আর কথা বললো না। প্রিয়’র ভয়ে হাত পা কাঁপা কাঁপা অবস্থা। মিনিট পাঁচ পর সাহস জুগিয়ে বললো,
— খা..খাবে না প্রাণ?
— হ্যাঁ খাবো তো। শপিং দেখাবি না?
প্রিয় যেন বুকে সাহস পেলো। একটু হাসার চেষ্টা করে বলতে লাগলো,
— হ্যাঁ হ্যাঁ দেখাব তো। জানো আজ কি হলো….
— শপিং দেখা আগে।
ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো প্রাণ৷ হাসি মুখেই ব্যাগগুলো আনলো প্রিয়। একে একে বের করলো কিছু জামা কাপড়। প্রাণ উল্টে পাল্টে দেখলো। প্রাণের জন্য ও একটা পাঞ্জাবি এনেছে। বেশ সুন্দর রং। প্রাণ দেখতে দেখতেই জিজ্ঞেস করলো,
— তোর টপস নেই?
— আছে তো।
— আমার পাঞ্জাবি নেই?
— হ্যাঁ আছে।
— তোকে ওরনা আর বিকিনি কিনে দেই না?
একথাটা বলেই মাথা তুলে তাকালো প্রাণ। ওর সেই চাহনি দেখেই প্রাণ আত্না কেঁপে উঠলো প্রিয়’র। প্রাণ পুণরায় জিজ্ঞেস করলো,
— দেই না?
— হ…হ্যাঁ দাও।
হাতে থাকা কাপড়গুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে প্রাণ বললো,
— তাহলে আজ কেন গেলি? কেন গেলি এসব কিনতে আমাকে না বলে? কুত্তার মতো সারাদিন খুঁজেছি তোকে অথচ তুই এই *** কিনছিলি!
প্রিয় ভয় পেয়ে গেলো। কিছু বলার আগেই প্রাণ ড্রয়ার থেকে একটা লাইটার বের করে একে একে সবগুলো কাপড়ে আগুন লাগিয়ে দিলো। প্রিয় ওর হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করলো। কোন ভাবেই থামানো গেলো না ওকে। মুহুর্তে ই সব ছাড়খাড় হয়ে গেলো। মুখে হাত চেপে কাঁদছে প্রিয়। প্রাণ ধীরে ধীরে হেটে ফ্রিজের কাছে এলো। বরফগুলো জমেছে। প্রিয়’র একটা সুতির ওরনাতে বরফগুলো নিয়ে শক্ত করে বাঁধলো। রুমে ঢুকে দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে সামনে আসতে আসতে বললো,
— খারাপ লাগছে প্রিয়?
ই-বুক “প্রাণ প্রিয়” র অংশ বিশেষ। এখন পাচ্ছেন বইটই অ্যাপে ২৫% ছাড়ে। এই ছাড় থাকবে ৩১ তারিখ পর্যন্ত। আপনাদের তোঁষা, আরহামের থেকে ও মাত্রারিক্ত পা’গলামিতে ভরপুর এই প্রাণ প্রিয়।