#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৮ (অর্ধ সত্য প্রকাশ)
মায়ের গালে চ’ড় এর চিহ্ন দেখে শেহরীনার বিশ্বাস হয়ে গেল এই কাজ তার সৎ বাবা ছাড়া আর কারো নয়। সে তৎক্ষণাৎ মাকে সরিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে গলা চেঁচিয়ে বলে,
“আপনার মত বাপ যেনো কোনো সন্তানের না হোক একই ভাবে আপনার মত স্বামী যেনো কোনো স্ত্রীর না হোক। আপনার না আছে বাবা হওয়ার যোগ্যতা আর না আছে একজন স্ত্রীর স্বামী হওয়ার যোগ্যতা। আপনি একজন কাপুরুষ বুঝলেন? কাপুরুষ।”
নাছির উদ্দিন এর কথাগুলো সহ্য হলো না। মধ্যরাতে মেয়ের গলা চেঁচানোয় যেমন বিরক্ত বোধ করছেন তেমনি তিক্ত কথার ফাঁদে পড়ে ‘ঠাসস’। তিনি এ প্রথম যুবতি মেয়ের উপর হাত উঠালেন। মধ্যরাত্রীতে চ’ড় এর শব্দটা যেনো পুরো ঘরময় গুঞ্জন ঘটিয়েছে। রূপালি বেগম সোজা গিয়ে শেহরীনাকে ঝাপটে ধরেন। নাছির উদ্দিন ঢোক গিলে শেহরীনার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে রূপালি বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“মেয়েটার সাহস দেখছো নেহ্! তোমাকে না কইতাম মেয়েরে ছোট থাকতে হোস্টেলে ভর্তি কইরা দাও। ঘরের ভেতর থাইকা কোনো আদব কায়দা শিখছেনি? কেমনে বাপের লগে মুখের উপর কথা কই। এইনি তোমার শিক্ষা দিক্ষার নমুনা। তোমার থেকে পুকুরে গিয়ে ডুবে মরা উচিৎ। তুমি মরো না দেখেই আমার জীবনে যতসব অশান্তি। সব ফ্যাসাদের মূল তো তুমি। অশান্তির আরেক নাম রূপালি বেগম।”
নাছির উদ্দিন এর গলা শুকিয়ে এলো। তিনি আর সহ্য করতে পারলেন না। ধপ করে বিছানার উপর শুয়ে পড়েন। এ দৃশ্য যেনো হজম হলো না তাদের। রূপালি বেগম স্বামীকে বুকে হাত চেপে নেতিয়ে পড়তে দেখেই চিৎকার করে ‘নাছির’ বলে ডাক দেন। শেহরীনা নিজেও হতবাক। রূপালি বেগম স্বামীর কাছে গিয়ে তাকে জাগানোর চেষ্টা করেন। তবে নাছির উদ্দিন কোনো সাড়া প্রতিক্রিয়া দেন না। এ দেখে তিনি রাগান্বিত দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলেন,
“এই তুই দাঁড়িয়ে আমাদের মুখ কী দেখছিস? তোর বাবাকে দেখ না। কথা বলছে না চোখ ও খুলছে না। জলদি পাশের বাড়ির তোর রুমা আন্টির জামাই ইসমাইল মিয়াকে ডাক গিয়ে। জলদি যাহ্ না মুখ কী দেখছিস?”
শেহরীনা মাথা দুলিয়ে তৎক্ষণাৎ ঘরের থেকে বেরুলো। রূপালি বেগম স্বামীর হাত-পা গরম আভার জন্য লাগাতার মালিশ করছেন। শেহরীনা রুমা আন্টির ঘরের সামনে এসে জোরে সরে দরজায় বা*রি দিতে থাকে। ইসমাইল মিয়া ঘরের বাহিরের দরজা খুলতেই শেহরীনা চিন্তিত গলায় তার সৎ বাবার কথাটা বলে। তিনি শুনেই তৎক্ষণাৎ বউ সমেত তাদের ঘরের ভেতর আসেন। ইসমাইল মিয়া নাছির উদ্দিন এর অবস্থা বেগতিক দেখে সোজা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি নিজের গাড়িতে উঠানোর জন্য নাছির উদ্দিন কে চেপে ধরেন। রূপালি বেগম সহায়তা করছেন। মাঝে নাসমা আর নাজমুর মায়ের সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি রুমা আন্টির কাছে তাদের থাকতে বলে দরজা বন্ধ করে গাড়িতে উঠলেন।
ঘণ্টাখানেক হাসপাতালের মধ্যে অসহায় হয়ে বসে ছিল তারা। শেহরীনা অনুশোচনায় ভোগে বারংবার কেবিনের দরজায় লাগোয়া আয়নার মাধ্যমে ভেতরে ডক্টর আর নার্সদের কাজ দেখছিল। ইসমাইল মিয়া নাছির উদ্দিন এর হঠাৎ খারাপ অবস্থা দেখে রূপালি বেগম কে আশ্চর্যের সহিতে জিজ্ঞেস করেন।
“নাছির মিয়া তো দিনের বেলায়ও কত না সুস্থ ছিলেন। রাতে কী এমন হয়েছে ভাইয়ের যে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়েছে?”
শেহরীনা মাথা নুইয়ে রাখল। রূপালি বেগম একপলক মেয়ের দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বলেন,
“উঠোনে ঝাড়ু দিচ্ছেন সেসময় পানি খেতে ভেতরে এসেই এমন অবস্থা হয়েছে।”
তাদের কথার মাঝে ডক্টর মাস্ক খুলতে খুলতে বের হলেন। শেহরীনা বসার থেকে দাঁড়িয়ে যায়। অধীর আগ্রহে ডক্টরের মুখপানে তাকিয়ে রইল। রূপালি বেগম তার স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করেন। ডক্টর চিন্তিত কণ্ঠে আওড়ান।
“উনার কন্ডিশন খুব নাজুক। মিনি স্ট্রোক এসেছিল। একটা ছোট অপারেশন করতে হবে। নাহলে উনার এই স্ট্রোক পুনরায় ভয়ানক রূপে আসার সম্ভাবনা আছে। অপারেশন এখন করা যাবে না। অন্ততপক্ষে দুদিন অপেক্ষা করতে হবে। শরীর একটু মানিয়ে এলে অপারেশন এর প্রিপারেশন নেওয়া হবে। ততদিন উনাকে হাসপাতালে এডমিট করাতে হবে। আর দুঃখিত পেশেন্ট এর অপারেশন যেহেতু করতে হবে সেহেতু কিছু ফর্মালিটিজ পূরণ করতে হবে আপনাদের। খরচ যাবে প্রায় বিশ হাজারের মত। কারণ হাসপাতালে উনাকে এডমিট করালে উনার খাওয়ারের ব্যবস্থা যাবতীয় খরচ মিলিয়ে এতটা লাগবে। বাকিটা আপনাদের ইচ্ছে।”
শুনে সবার মুখ থমথমে হয়ে গেল। ইসমাইল মিয়া তাদের মুখপানে তাকিয়ে বলেন,
“আপা আমার তো ঘরে কিছুটা টাকা আছে সব মিলিয়ে আশি শতক হবে আপনি চাইলে নিতে পারেন।”
রূপালি বেগম মুখে হাত ঢেকে কাঁদছেন। তাদের জীবন থেকে দূর দশা যাচ্ছেই না। শেহরীনা মায়ের অবস্থা দেখে আরো ভেঙ্গে পড়ছে। তবে সে তার মাকে সাহস জোগাবে ভেবে মায়ের কাঁধে হাত রাখেন। সে মুহুর্তেই তিনি রেগে তাকে ধাক্কা দেন। শেহরীনা একটুর জন্য পড়তে গিয়ে বেঁচে গেল। করুণ চোখে মায়ের মুখ পানে তাকায়। তিনি জ্বলন্ত চোখে শান্ত গলায় আওড়ান।
“এতটা বছর স্বামী স্ত্রীর মাঝে যা হয়েছে চার দেওয়ালের মাঝে হয়েছে। তুই এতটা বড় হয়ে গেলি যে মায়ের উপর কী হয়েছে না হয়েছে তা নিয়ে বিচার করতে নিজের সৎ বাপের সাথে অন্যায় করলি। আর তুই কী জানিস উনি মুখেই তোর সাথে অন্যায় স্বরূপ কথা বলেন। কখনো তোর গায়ে হাত তুলেছে? হ্যাঁ তুই নিজের দিক দিয়ে সঠিক। তোকে মানসিক কষ্ট দিছেন তুই কাঁদছেন। তোর খারাপ লেগেছে কিন্তু কখনো ভেবে দেখছিস উনি তোকে সবার কাছ থেকে আলাদা রেখেই বড় কিছু বানানোর প্রচেষ্টা করছিলেন। আমিও আগে ভাবতাম উনি তোকে সহ্য করতে পারেন না তাই তোকে দূরে দূরে রাখেন। তবে গতরাতে সব কথা জানার পর থেকে আমি নিজেই অনুশোচনায় ভোগছিলাম। জানিস তো মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ থাকে। সেই হিসেবে তুই উনার এপিঠ দেখেছিস। কখনো উনি তোকে উনার ওপিঠ দেখাননি। তুই যেদিন সত্য জানবি সেদিন তুই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি কখনো? ইয়া মাবুদ কে জানে উনার চিকিৎসা ও করাতে পারি কি না। আমাদের হাতে দানাপানির খরচ জোগাতেই গায়ের ঘাম ছুটে যায় সেখানে বিশ হাজার টাকা জোগাড় করা সোজা কথা না।”
“তোমাগো কিছু জোগাতে হবো না রূপ আসো ঘরে যামু আমি। আমার এহানে থাকতে মন চাইতেছে না। শেহু মামুনিকে আর বকো না।”
তারা হতভম্ব। নাছির উদ্দিন এর পরণে ঘরের শার্ট-প্যান্ট তিনি হাসপাতালের পোশাক খুলে ফেলেছেন। ঘরে যাওয়ার জন্য অর্ধ চিকিৎসা করেই বেরিয়ে পড়ছেন। রূপালি বেগম তাকে গিয়ে ধরলেন। কেনো না তিনি দাঁড়ানোর মত শক্তি অব্দি পাচ্ছেন না। রূপালি বেগম উনার মুখ মুছে দিয়ে মৃদু হেসে বলেন,
“না নাগো আপনার কথাও যাওয়া হবো না। আপনি এহানে থাহেন। আপনার চিকিৎসা হওন লাগবো তো।”
“রূপ আমি বেশি কথা বলতে পারছি না ঘরে চলো। আর শেহু মামুনি ঘরে চল।”
তারা বেরিয়ে আসে। শেহরীনা সৎ বাপের ডাকে শুধু মাথা নেড়ে সাড়া দিয়েছে টু শব্দ করেনি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ইসমাইল মিয়া ও একটুর জন্য হাসপাতালের বাহিরে গিয়ে ছিলেন। তিনি রূপালি বেগম ও শেহরীনার মধ্যকার কথা সম্পর্কে জানেন না। কেননা এক মা কখনো নিজের সন্তান কে পর লোকের সামনে কটুক্তি করবেন না।
ইসমাইল মিয়াও নাছির উদ্দিন কে অনেকক্ষণ বুঝান যেনো তিনি চিকিৎসা পূরণ করেন। তবে তিনি নাকচ করায় হার মেনে নেন।
___
সারোয়ার ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার জন্য ডাইনিং রুমে গেল। তবে তার কদমখানা আর এগোয়নি। টেবিলে আসন দখল করা কিছু অপরিচিত চেহারাকে দেখা যাচ্ছে। তার মাও কেমন যেনো তাদের আপয়্যনে তৎপর হয়ে আছেন। সারোয়ার লজ্জা পেল সামনে আগাতে। সে পেছন পা ফেরাতেই তার মা জাহানারা পুষ্পের চোখ যায়। তিনি উৎফুল্ল কণ্ঠে ‘বাবা’ বলে ডাক শোধায়। সারোয়ার চোখ বুঁজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মায়ের দিকে তাকায়। তিনি তাদের মাঝ থেকে এসে ছেলের বাহুডোরে হাত ডুবিয়ে টেনে তাদের কাছে নিয়ে আসেন। সারোয়ার বিরক্ত। জাহানারা পুষ্প তাদের কে উৎসাহী গলায় জানান।
“এই হলো আমার ব্যারিস্টারি করা পুত্র সারোয়ার মোঃ আবু সিদ্দিক। আমার মেয়ের কথা তো আগেই বলেছি। আজ সেও আসবে। সাজিয়া আসলে তাকেও পরিচয় করায় দেবো। আপনাদের কোনো ক্ষেত্রেও সাহায্য লাগলে বলবেন আমার পুত্র সমাধান দেবে সেটা। আর সারোয়ার বাবা দেখ উনি হলেন আমার মামাতো ভাই রশিদ খানম আর তার স্ত্রী মিশকিতা। এই দুজন মেয়েকে দেখছিস না ? এরা হলো আমার ভাগ্নে তোকে ভাই বলে ডাকবে। দু’জনের মধ্যে একজন হচ্ছে মিলুনি আরেকজন হচ্ছে নিলীমা। মিলুনি ইন্টার ফাস্ট ইয়ার আর নিলীমা অনার্সের শেষ ইয়ারে আছে।”
সারোয়ার এক বাক্যে শুধু সালাম জানায়। এতে হতাশা হোন তারা। নিলীমা ক্রাশ খাওয়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার কাছে অত্যন্ত সুদর্শন পরিপাটিময় যুবকের সংজ্ঞা স্বরূপ সামনের এই যুবককেই লাগছে। ঠোঁট কামড়ে চোখের ফোলা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছে দেখে তার মা মিশকিতা হাতের বাহু দিয়ে টোকা দেন। নিলীমা ধ্যান ফিরে পেতেই চোখ নামিয়ে মনে মনে হাসল নিজের বোকামি কাজের জন্য। তবে এ দৃষ্টিকোণ মোটেও পছন্দ হয়নি সারোয়ারের। সে তার মাকে অনুরোধময় গলায় বলে,
“মা শুনেন আজ আমার কেসের জন্য কোর্টে যেতে হবে। হাতে অনেক কাজ। আমার নাস্তা টা আমাকে দিলেই হবে। আমি চলে যেতে পারব। আর যদি আপনার ব্যস্ততা থাকে তবে আমি বাহির থেকে খেয়ে নেবো।”
সারোয়ার কোর্টের জামা পড়ার জন্য রুমে চলে গেল। তার বলা বাক্য ধারায় জাহানারা পুষ্প ইতস্তত বোধ করেন। তবে রশিদ খানম কিছু মনে করেননি। তিনি হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে বলেন,
“মাশাআল্লাহ সিদ্দিক সাহেব আপনার পুত্র তো ভালোই কর্মঠ। এমন পুত্র কেই চাই আমি আমার মেয়ের জামাই বানাতে। তুমি কী বলো মামুনি?”
রশিদ খানমের কথায় লাজুক হাসে নিলীমা। তবে মোঃ আবু সিদ্দিক ‘আ’ ধ্বনি বয়ান করতে গিয়েও স্ত্রীর চোখ রাঙানি দেখে চুপসে যান। তিনি মাথা নেড়ে কৃত্রিম সম্মতি দেন। যার অর্থ তিনি মোটেও এই সম্বন্ধে রাজি নন। তবে স্ত্রীর পাগলাটে আচরণের কারণে কথার বুলি আওড়াতে গিয়েও পিছিয়ে গেলেন। তবে কথোপকথন সারোয়ার এর কর্ণকুহরে ঠিকই পৌঁছাল। সে তার ফোন টেবিলে রেখে গিয়ে ছিল। সেটা নেওয়ার জন্য আসার মুহুর্তেই শুনে ফেলে। তবে তার কোনো ইচ্ছে জাগে না। বিধেয় পাত্তা হীন ভাবখানা বজায় রেখে তার ফোন নিয়ে চলে গেল। অপমানিত বোধ করেন রশিদ খানম আর তার স্ত্রী। তিনি জাহানারা পুষ্প কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“এ কী বোন তোর ছেলে তো আমার কথায় কোনো রিয়েক্ট করল না। তার কী আসলেই সম্মতি আছে এই সম্বন্ধে?”
“আরে ভাইজান আপনি বেহুদা চিন্তা করছেন। আমার নিলীমা মা তো রুপে-গুণে একেবারে একশোতে একশো। আমার ছেলে লাজুক প্রকৃতির। একটু গম্ভীর রগচটা। আমার জানা আছে নিলীমা অবশ্যই মানিয়ে নেবে তাই না নিলীমা মামুনি?”
নিলীমা মাথা নাড়ল। এর মাঝে তিনি চোখের ইশারায় মিশকিতাকে রুমে আসার ইঙ্গিত দেন নিজের স্বামীর অগোচরে। মিশকিতা জানত তার সাথে জাহানারা কথা বলতে চাইবে। তাই তিনিও স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে জাহানারার সঙ্গে রুমের ভেতর চলে এলেন। জাহানারা পুষ্প দরজা বন্ধ করে মিশকিতার হাত ধরে করুণ গলায় জিজ্ঞেস করে।
“দোস্ত আল্লাহর দোয়ায় তোর সাথে কন্টাক্ট করতে পারলাম। শোন না বোন আমাকে বল না আমার বিয়ের পর আনোয়ার ভাইয়া ঐক্য কে কী করেছিল-রে? সে এখন কোথায়? আমার তার সাথে শেষ দেখাও হলো না। আমার ভাইয়ার কারণে জীবনটা আমার ছন্নছাড়া হয়ে গেল।”
মিশকিতা বিরক্তির গলায় বলেন,
‘ছিঃ ছিঃ পুষ্প এসব কথা বলিস না। তুই তোর জীবনে শ্রেষ্ঠ কাউকেই পেয়েছিস। আজ পর্যন্ত ভাইয়া তোর গায়ে হাত উঠিয়ে ছিল কখনো? বিয়ের আগে তোর প্রেম ছিল জেনেও তিনি তোকে ভালোবেসে প্রায় এতটা বছর আগলে রাখছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা তুই বিবাহিত আর দুই সন্তানের জননী। তুই কেমনে পরপুরুষের নাম মুখে নিস হে?”
জাহানারা পুষ্প রেগে গেলেন তিনি মিশকিতার হাত ছেড়ে অন্যপাশ ফিরে সহ্যহীন কণ্ঠে বলেন,
“আমি বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনো সিদ্দিকের দিকে প্রেমের নজরে তাকায়নি। সে আমার প্রেম হয় জীবনের একমাত্র ভুল তিনি। আমার প্রথম আর শেষ প্রেম ঐক্য ছিল। সিদ্দিককে আমি সম্মান করি শ্রদ্ধা করি কারণ তিনি আমার সন্তানদের পিতা।”
মিশকিতাও রেগে গেল সে জাহানারা পুষ্পের হাত চেপে নিজের দিক ঘুরিয়ে বলেন,’তুই কিন্তু ভুলে যাসছিস সারোয়ার আর সাজিয়া তোর সন্তান। তাদেরও বিয়ে হবে। সাজিয়া তো এমনিও শ্বশুরবাড়িতে। আর তুই এ বয়সে এসেও ঐ বেঈমানের কথা জিজ্ঞেস করছিস।’
‘মিশু’ চেঁচিয়ে জাহানারা পুষ্প তাকে চুপ করিয়ে দিলেন। তার হাত ধরে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে বলেন,
“আমার প্রেমের মধ্যে কোনো খুঁত নেই। তিনি বেঈমানি করতেই পারেন না।”
মিশকিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলেন,’ওহ ঐক্যের উপর এতটা বিশ্বাস। তবে কী তুই জানিস আসলে কাহিনী কী হয়েছিল সেদিন? কী ঘটেছিল তোর সাথে? আরে তোর সাথে বেঈমানি করে সে তোর স্বামীর বড় বোনকেই বিয়ে করেছে।’
মিশকিতার কথায় জাহানারা পুষ্পের মাথায় বাজ পড়ল। তিনি কথাটা আমলে উঠতে পারছেন না। এই কী শুনলেন তিনি? স্বামীর বড় বোন কথাটা তার গলায় কাঁটার মত বিঁধছে। ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়লেন অসুস্থ রূপে। মিশকিতা তার চাচাতো বোন কে আহত মনে দেখে তার পাশে গিয়ে বসে তাকে জড়িয়ে ধরেন। আসলে রশিন খানম যেমন জাহানারা পুষ্প এর মামাতো ভাই তেমনি মিশকিতা তার চাচাতো বোন।
জাহানারা পুষ্প শান্ত গলায় বলেন,
“বেঈমান তাহলে শুধু ঐক্য নয় সিদ্দিক ও। আজ পর্যন্ত তিনি আমাকে তার বোনের সাথে পরিচয় করাননি। যতবার তার বোনের ব্যাপারে জানতে চেয়েছি কৌশলে তিনি এড়িয়ে গেলেন। ওয়াও আজ বুঝলাম তিনি আমায় এতটা কেনো আগলে রাখেন।”
মিশকিতা বিপাকে পড়ে গেলেন। তিনি চেয়েছিলেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক সুস্থ আর মার্জিত করতে এইতো যেনো প্রতিকূলে চলে গেল। তিনি জাহানারা পুষ্প এর গালে হাত রেখে নিজের দিক ফিরিয়ে বলেন,
“চুপ চুপ এই কথা মুখেও আনিস না। ভাইয়ার এত বছরের গড়া আন্তরিক সংসারের দায়বদ্ধতার সাথে তোর প্রতি তার মনের প্রণয় ও শেষ হয়ে যাবে। যদি তিনি জানেন তুই সব জেনে গিয়েছিস এ কথাটা। বোন নিজের হাতে এত সুন্দর সংসার নষ্ট করিস না। আমার এও মনে হয় ঐক্য ভাই ও তার সংসারে ভালো আছেন। তুইও থাক আল্লাহর ওয়াস্তে। আচ্ছা অনেক কথা হলো চল এখন বাহিরে নাহলে তারা আবার চিন্তায় পড়বে।”
জাহানারা পুষ্প মাথা নেড়ে উঠল। তবে তার ভেতরকার রাগের কথা মিশকিতাকে বুঝতে দিল না।
চলবে…….
(আজকের পর্বে কিছু বুঝেছেন? না বুঝলে আবারো পড়বেন। তারপর ও না বুঝলে কমেন্ট করুন আমি বলব। আর কেমন হয়েছে বলতে ভুলবেন না। আমার প্রথম ই-বুক গল্প #হৃদয়ের_সঙ্গমে_অভিমান (রিজওয়ান আর অরনিয়ার নতুন মোড়) কারা কারা পড়তে চান তাদের কে দেখতে চাই। তারা হাত তুলেন সবাই। শীঘ্রই আমার গল্প আসছে ১৬ই আগস্ট ২০২৪ইং ইন শা আল্লাহ ।
আমার নতুন গ্রুপ এ জয়েন হোন
https://facebook.com/groups/469093775938467/
আমার পেজে লাইক এন্ড ফলো করে পাশে থাকুন
https://www.facebook.com/tasmihaalraiyan