একটি_অপ্রেমের_গল্প #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৩২।

0
122

#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৩২।

রেস্টুরেন্ট এর ভেতরে খুব একটা কোলাহল নেই। নার্সিংহোমের পাশেই এটা। মাহিরকে বলে জরুরি তাগিদে এই ভর দুপুরে অন্বিতা এখানে এসেছে। অমিত তাকে কেন ডেকেছে তা পুরোপুরি ধারণা করতে না পারলেও কিছুটা যেন করতে পারছে। তবে আপাতত নিজের কৌতুহল সুকৌশলে দমিয়ে রেখে অমিতের সামনে চেয়ার টেনে বসল সে। মুখে ঝুলাল মৃদু হাস্যরেখা। বলল,

‘হঠাৎ এত জরুরি তলবে ডাকলেন যে?’

অমিত সৌজন্যতার সহিত হাসল। অন্বিতার দিকে ম্যনু কার্ডটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘খাবার অর্ডার দিন, তারপর বলছি।’

‘এই দুপুরে কফিটুকুই খেতে পারব। আর কিছু খাব না।’

ওয়েটার ডেকে দুই কাপ কফি অর্ডার দিল অমিত। ওয়েটার চলে যেতেই অন্বিতা বলল,

‘এবার বলুন।’

অমিত কথাগুলো আগে পরপর মাথায় গুছিয়ে নিল। কিছু যেন এলোমেলো না হয় সেই ব্যাপারে সচেতন রইল সে। নিজেকে যথাসম্ভব ধাতস্ত করে বলল,

‘আমি জানি না, সবটা জেনে আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। তবে আমার মনে হচ্ছে সবটা আপনাকে জানানো উচিত, তাই জানাচ্ছি।’

অন্বিতা তাকে অভয় দিয়ে বলল,

‘আপনি নিশ্চিন্তে আমায় বলতে পারেন।’

অমিত ভাবল, এত ভণিতা দেখিয়ে লাভ নেই। সত্য কথা সহজ ভাবে বলে দেওয়াটাই উত্তম। তাই দ্বিধাদ্বন্দ্ব না দেখিয়ে সে আচম্বিত বলে বসল,

‘আমার বন্ধু অয়ন আপনাকে ভালোবাসে।’

কথাটা কর্ণগুহরে পৌঁছাতেই কপাল কুঁচকাল অন্বিতা। অনেক কিছু আগ থেকে ভেবে রাখলেও এমন কিছু শুনবে সেটা সে আশা করেনি। তাই যথেষ্ট চমকেছে সে। নিগূঢ় ভঙিতে চেয়ে রইল অমিতের অস্থির বদন পানে। অন্বিতার পরিশ্রান্ত চাহনি অমিতকে চিন্তায় ফেলে। কোনো প্রতিক্রিয়া কেন নেই? সে উত্তেজিত সুরে বলে,

‘আপনার কি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না, অন্বিতা?’

এই মুহুর্তে অন্বিতা ঈষৎ হাসল। মেঘমন্দ্র গলায় বলল,

‘ভালোবাসে বন্ধু, আর সেই কথা আপনি জানাচ্ছেন? আপনার বন্ধু কি আমাকে ভয় পায়?’

এমন প্রশ্নে খানিকটা ভড়কে যায় অমিত। মাথা চুলকে বলে,

‘না, ঠিক তা না। আসলে আপনার পরশু বিয়ে বলে ও আপনাকে কিছু জানাতে চায়ছে না। কিন্তু, ওর কষ্ট দেখে আমি আর থাকতে না পেরে আপনাকে জানিয়েছি।’

তন্মধ্যে ওয়েটার এসে কফি রেখে গেল। কফির কাপ হাতে নিয়ে সোজা হয়ে বসল অন্বিতা। চরম আগ্রহ দেখিয়ে বলল,

‘আচ্ছা, বুঝলাম। এখন তাহলে আমি কী করতে পারি?’

অমিত মূঢ় হয়ে রইল। কী করতে হবে সেটা সেও অবগত নয়। বন্ধুর কষ্টে তার বুকও পুড়ছে। তাই বলে এখন মেয়েটাকে নিশ্চয়ই নিজের বিয়ে ভাঙার কথা বলতে পারে না। অমিতকে নির্বাক দেখে কফির কাপে চুমুক বসায় অন্বিতা। রাশভারী স্বরে বলে,

‘ই-ফোর ফ্ল্যাটে আপনারাই থাকেন, তাই না? প্রতিদিন বারান্দায় যে গান গাইত, সে আপনার বন্ধু অয়ন; ঠিক বলছি না আমি?’

অমিত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। কথার খেই হারায় সে। কী জবাব দিবে ভেবে পায় না। মুচকি হাসল অন্বিতা। বলল,

‘আর লুকিয়ে কী হবে? সব জানি আমি।’

অমিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা ঝাঁকাল। গুমোট স্বরে বলল,

‘জি, যা জানেন সবটাই সত্যি।’

অন্বিতা হাসল। তার ধারণা সত্য হওয়ায় ভীষণ খুশি হয়েছে সে। জিজ্ঞেস করল,

‘আপনার বন্ধু কোথায়? তিনি আসেননি?’

‘না। অনেক জোর করেও আনতে পারিনি।’

‘পরশু আমার বাসায় অবশ্যই আনবেন। উনাকে বলবেন, উনার গান ছাড়া আমার বিয়ে সম্পূর্ন হবে না।’

অমিত হতাশ সুরে বলল,

‘তারমানে আপনি বিয়ে করবেন?’

‘আপনি কী চান, আমি বিয়ে না করি?’

উত্তর দিতে পারল না অমিত। সে এমনটাও চায় না। আবার বন্ধু কষ্ট পাক সেটাও চায় না। অমিতকে ভাবুক দেখে অন্বিতা জিজ্ঞেস করল,

‘আপনার বন্ধু আমাকে কতদিন চেনে?’

‘এই ফ্ল্যাটে উঠার পর থেকে। এই ধরুন, দুই বছরের মতো।’

‘উনার রুমে আমার ছবি আছে, তাই না?’

হকচকিয়ে উঠে অমিত জিজ্ঞেস করে,

‘কী করে জানলেন?’

‘এমনিতে সবসময় আপনাদের বারান্দার দরজা বন্ধ থাকলেও সেদিন খোলা দেখেছিলাম। কিছু ছবি ঝুলে থাকতে দেখেছি। দূর থেকে একবার দেখে মনে হয়েছিল আমার’ই ছবি। পরে মনে হলো, আমার ছবি ঐ রুমে যাবে কী করে। তবে আজ আপনার কথা শুনে নিশ্চিত হলাম, ঐগুলো আমার ছবিই ছিল। তবে, এটা কিন্তু আপনার বন্ধু একদম ঠিক করেননি। লুকিয়ে আমার ছবি তুলে সেগুলো আবার নিজের রুমে ঝুলিয়ে রেখেছেন, ভীষণ খারাপ।’

অমিতের চোখে মুখে আঁধার নামল। বিষন্ন সুরে বলল,

‘আপনাকে ভীষণ পছন্দ করে তো, তাই আপনার ছবি নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। কিছু মনে করবেন না।’

‘ঠিক আছে, মনে করব না। আমার বিয়েতে উপহারস্বরূপ ঐগুলো আমাকে দিয়ে দিতে বলবেন।’

‘আচ্ছা, বলব।’

অন্বিতা তার হাতঘড়ির দিকে একবার চেয়ে বলল,

‘আর কিছু বলবেন, নয়তো আমাকে এবার উঠতে হবে।’

অমিত আইঢাই করছে। বন্ধুর জন্য অন্বিতাকে বোঝানোর সাধ্য তার নেই। সে জানে, মাহির আর অন্বিতা দুজন দুজনকে ভালোবেসেই বিয়েটা করছে। সেখানে এমন এক অমোঘ সত্যি জানিয়েও লাভের লাভ কিছু হবে না। সে ঊর্ধ্বশ্বাস ফেলে বলল,

‘না, যান আপনি।’

অন্বিতা উঠে দাঁড়াল। চলে আসার জন্য পা বাড়াতে নিয়েও কী ভেবে আবার থামল যেন। অমিতের দিকে চেয়ে বলল,

‘আপনার বন্ধুকে বলবেন, পরের বার কাউকে ভালোবাসলে যেন নিজে গিয়ে সেই কথাটা তাকে জানায়। অন্যকে দিয়ে বলালে সেই ভাষার কোনো প্রাণ থাকে না।’

এই বলে চলে আসে সে। অমিত ঠায় বসে রইল। রাগ, ক্ষোভ প্রকাশ পেল চোখ জুড়ে। বিরক্ত বোধ করল ভীষণ। অয়নকে কল করে বলল,

‘শালা, তোর কপালটাই খারাপ।’

_______________

মাহিরের কেবিনে প্রবেশ করে অন্বিতা জিজ্ঞেস করল,

‘স্যার, ডাকছিলেন?’

মাহির স্মিত হেসে তার দিকে চাইল। বলল,

‘হ্যাঁ, তোমার একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। আন্টিকে নিয়ে আজকে বিকেলে বের হয়ে যা যা কেনাকাটার সব সেরে ফেলো। আমার পক্ষের তো আর কেউ নেই এসব করার, তাই তোমাকেই কষ্ট করতে হবে।’

অন্বিতা খানিকটা বিস্মিত হলো। মাহিরের ফুপি আছেন, চাইলেই তিনি সবটা সুন্দর মতো গুছিয়ে করতে পারেন। কিন্তু তাঁর যে এসবে আগ্রহ নেই, সেটা অন্বিতা জানে। মাহিরের একার পক্ষেও এত চাপ নেওয়া সম্ভব না। তাই মাথা হেলিয়ে বলল,

‘আচ্ছা, সব করব আমি। আপনি কিছু কিনবেন না?’

‘কেন কিনব না? মেয়েরা যেমন একবার’ই কনে সাজে তেমনি তো ছেলেরাও একবার’ই বর সাজে, তাই না?’

পরক্ষণেই মাহির আবার ভ্রু নাচিয়ে বলে,

‘অবশ্য তুমি চাইলে আরো তিনবার সাজতে পারি।’

অন্বিতা তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,

‘একবার সাজার ফল ভোগ করলে তিন বার সাজার ভূত এমনিতেই মাথা থেকে নেমে যাবে।’

সন্দিহান সুরে মাহির বলল,

‘ভয় দেখাচ্ছো নাকি?’

অন্বিতা ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘না, কেবল সাবধান করছি।’

মাহির হাত নাড়িয়ে বলল,

‘তোমার ঐসব হুমকিতে মাহির আশহাব ভয় পায়না। এখন বাসায় যাও। কেনাকাটা করে, বিয়ে সেরে বরকে সময় দাও। নার্সিংহোমের আশেপাশে আর এক সপ্তাহও ঘেঁষবে না।’

অন্বিতা হাসল। বলল,

‘আপনি যা বলবেন স্যার, তাই হবে।’

এই বলে হেসে চলে যায় সে।

_______________

শুক্রবারের তৃতীয় প্রহরে অন্বিতার বাড়িতে বরপক্ষ এসে হাজির হয়। আভা ছুটে এসে অন্বিতার কাছে বলল,

‘দোস্ত, ভাইয়ারা এসে পড়েছেন।’

ব্রীড়ায় আরক্ত হলো অন্বিতার কপোলযুগল। বুকের ধুকধুকানি বাড়ল অচিরাৎ। লজ্জায় রাঙা বউ, লজ্জায় আরো কুন্ঠিত হলো। আভা তার ধুতনি নাড়িয়ে বলল,

‘ইশ, কী লজ্জা।’

উত্তর দিতে পারল না অন্বিতা। মুচকি হাসল খানিক। আভা তাঁড়া দেখিয়ে বলল,

‘যাই, গেইট ধরে আসি।’

এই বলে বসার ঘরের দিকে ছুটে গেল সে। অন্বিতার বাড়িতে মেহমান তেমন কেউ নেই। মা আছেন, আছেন তার একমাত্র খালামনি। আর আছে আভা। মাহিরের পক্ষে থেকেও আহামরি কাউকে আসতে দেখা গেল না। রিসেপশন করবে বলে বিয়েতে আর এত ঝামেলা করল না মাহির। দাদু, ফুপি, আর তার এক মামাকে নিয়ে এল সাথে। আর হাসপাতাল থেকে এল কেবল তার সহকারী তাইভিদ।

চলবে….

(ধৈর্য্য হারা হবেন না, পাঠকমহল। চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়েই ঘটনার বিবরণ বাড়ছে।)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here