প্রিয়তোষ #পর্ব_১৪ লিখা: Sidratul muntaz

0
82

#প্রিয়তোষ
#পর্ব_১৪
লিখা: Sidratul muntaz

প্রায় একঘণ্টার মতো নৌকাভ্রমণ শেষে ওরা পাড়ে উঠে এলো। নোরা চাইছিল আরো কিছুক্ষণ ঘুরতে। কিন্তু মাঝি বেশি গভীরে যেতে চাইল না। রাতেরবেলায় বন্যপ্রাণীর উপদ্রব থাকতে পারে। অনিক নৌকা থেকে নেমে মাঝিকে বলল,” থ্যাঙ্কিউ ভাই।”

মাঝি আবার সেই দাঁত বের করা হাসিটা দিল। নোরা ভয়ে অনিকের হাত জড়িয়ে ধরল। নৌকায় থাকাকালীন পুরোটা সময় এই মাঝি বেটাকে কেন জানি সন্দেহ হচ্ছিল নোরার। মনে হচ্ছিল এই বেটা ইচ্ছে করে নৌকা উল্টে অনিককে ফেলে দিবে৷ তারপর তাকে নিয়ে চলে যাবে। সীতাকুন্ডের দূর্ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনও গা শিউরে ওঠে।

গাড়িতে বসেও রাতারগুলের দৃশ্য স্মৃতিতে ভাসছে নোরার। ঘোর এখনও কাটেনি। অনিকের কাঁধে মাথা ঠেঁকিয়ে সুন্দর মুহুর্তগুলো কল্পনা করছে সে। অনিক বলল,” কেমন লাগল নৌকাভ্রমণ?”

নোরার কোনো উত্তর নেই। অনিক আবার ডাকল,” নোরা!”

এবারও কোনো সাড়াশব্দ নেই। তারপর খেয়াল করে দেখল মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে। অনিক মৃদু হাসল। নোরাকে আর ডাকল না। বরং সে খানিকটা সিটের সাথে হেলে নিচু হয়ে বসল। যেন নোরা আরাম করে ঘুমাতে পারে। অনিক সুবিধাজনকভাবে বসতেই নোরা একটু নড়েচড়ে আরো ভালো করে কাঁধে মাথাটা রাখতে পারল।

সে অনিককে জড়িয়ে ধরে এক পা অনিকের উপর তুলে দিয়েছে। অনিকের ভালোও লাগছে। আবার নোরার নরম কোমল স্পর্শে তার শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে।রিসোর্টে পৌঁছাতে বেশ রাত হয়ে গেছে। গ্রুপ মেম্বাররা সব ঘুমে কাবু। নোরার ঘুম ভাঙেনি। তাই এবারও নোরাকে কোলে নিয়ে রিসোর্টে ঢুকল অনিক। তারপর বিছানায় শুয়িয়ে দিল। অন্তরা এখানে নেই। হয়তো ফেরেনি এখনও৷ এদিকে নোরা অনিকের একহাত ধরে আছে। হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করেও লাভ হলো না। নোরা আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরেছে।

অনিক নোরাকে ছেড়ে উঠল না। হাত ছাড়াতে গেলে নোরা বিছানা থেকেই পড়ে যাবে৷ এখন উপায় হল নোরাকে ঘুম থেকে জাগানো নাহলে এভাবেই বসে থাকা। নোরাকে ডাকতে ইচ্ছে করছে না। একদম বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। কি যে মিষ্টি লাগছে! অনিক ওকে এমনি এমনি মিষ্টিপরী ডাকেনা।

সারারাত কেটে গেল। অনিক একইভাবে বসেছিল। অন্তরা রাতে রিসোর্টে ফেরেনি। যখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করল, অনিক চমকে উঠল। এতো দ্রুত সকাল হয়ে গেছে? নোরা একসময় নিজে থেকেই অনিকের হাত ছেড়ে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ল। অনিক তারপর উঠে বিছানায় বসল। তারপর নোরার পাশে শুয়ে পড়ল। নোরার হাতের সাথে অনিকের শরীর লাগতেই সে শক্ত করে অনিককে জড়িয়ে ধরল। অনিকের শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। এই মেয়ে কি তাকে আজকে ঘুমাতেই দিবেনা?

অনিক ঘুমালনা। জেগেই থাকল। সারাটাসময় নোরার কোমল শরীরের উষ্ণতা অনুভব করে জেগে থাকা।

সকালে ঘুম ভাঙতেই নোরা আবিষ্কার করল সে একদম কোলবালিশের মতো অনিককে ব্যবহার করে শুয়ে আছে৷ চ’মকে উঠে অনিককে ছেড়ে দিল। ওরা রাতারগুল থেকে রিসোর্টে কখন এলো? তার তো কিছুই মনে পড়ছে না। অন্তরা কোথায়?

একটা হাই তুলে অনিকের দিকে তাকাল নোরা। ছেলেটা কি সুন্দর করে যে ঘুমায়! কি নিষ্পাপ মুখ। নোরা কিছুক্ষণ অনিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কপালে একটা চুমুও দিল৷ এই পর্যন্ত যতবার অনিকের ঘুমন্ত মুখ ও দেখেছে, কপালে চুমু না দিয়ে থাকতে পারেনি। এতো কিউট ফেসটা দেখে চুমু না দিয়ে কি থাকা যায়?

আচ্ছা অনিককে এভাবে ঘুমাতে তিথি কি কোনোদিন দেখেছে? যদি দেখে থাকে তাহলে সেও নিশ্চিত অনিককে চুমু দিয়েছে। ওই মেয়ে তো জাগ্রত অবস্থাতেই নির্লজ্জের মতো অনিককে লিপকিস করে বসে। কি সাহস! তাহলে ঘুমন্ত অবস্থায় কি করবে আল্লাহ মালুম। অনিককে একবার জিজ্ঞেস করতে হবে। সে ঘুমন্ত অবস্থায় তিথি কখনও তার রুমে এসেছিল কিনা। নোরা এইকথা ভেবে নিজের মাথাতেই গাড্ডা মারল। অনিক ঘুমন্ত অবস্থায় থাকলে কিভাবে বুঝবে তার রুমে কে এসেছে আর কে আসেনি! তবে এইটা জিজ্ঞেস করা যায়, অনিক ঘুমানোর সময় দরজা খুলে ঘুমায় নাকি বন্ধ করে। তাহলেই বুঝা যাবে।

নোরা ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। অনিক চোখ খুলে তাকাল। তারপর নিজে নিজেই হাসল।ওরা আজকেও সারাদিন ঘুরে কাটিয়েছে। তবে আজ সবাই একসাথে। প্রথমে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, জাফলং,ঝর্ণা আরো বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পরের দিন ঠিক করা হয় বিছানাকান্দি যাবে। কিন্তু নোরা রাজি হলো না৷ তাকে কালকেই ঢাকায় ফিরতে হবে। সন্ধ্যায় তারা দু’জন ক্লান্ত শরীরে রিসোর্টে ফিরে এলো। বাকিরা তখনও ঘুরাঘুরি আর শপিং-এ ব্যস্ত। জাফলং এর স্বচ্ছ পানিতে প্রায় আধঘন্টার মতো শুয়েছিল নোরা। ওর এখন ঠান্ডা লেগে, গলা ভেঙে যা-তা অবস্থা।

অনিকেরও তাই। রিসোর্টে ফিরে অনিক ভেজা জামা-কাপড় চেঞ্জ করল। আর নোরা ঢুকল গোসলে। বিশ পঁচিশ মিনিটের গোসল শেষে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখল অনিক সোফাতে গা এলিয়ে টিভি দেখছে। নোরা অনিকের কাছে গিয়ে বসল। আহ্লাদী গলায় বলল,” এই! কি করছেন?”

অনিক মুচকি হেসে নোরার গাল টিপে দিয়ে বলল,” টিভি দেখি।”

,” দেখবেন না টিভি। টিভি পঁচা।”

” তাহলে কি করবো?”

” আমাকে দেখবেন।”

” তুমি দেখালেই না দেখবো।”

অনিকের কথার অর্থ ধরতে পেরেই নোরা চোখ বড় করে তাকাল। তারপর তার হাতে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিল। অনিক কঁকিয়ে উঠল,” আহ!”

” আর বলবেন এসব কথা? হুহ।”

নোরা নিজ দায়িত্বে টিভি বন্ধ করল। রিমোর্টটা একসাইডে ফেলে কঠিনগলায় বলল,” নিন, এবার গল্প করুন।”

” কি গল্প শুনবে?”

নোরা আগ্রহ নিয়ে বলল,” তিথির গল্প।”

অনিক বিরক্ত হয়ে বলল,” ওর আবার কি গল্প?”

” বলুন না শুনি?”

” কি বলবো? তুমি প্রশ্ন করো আমি উত্তর দেই।”

” আচ্ছা তিথির সাথে যে ঘটনাটা আপনি ফোনে লিখে রেখেছেন ওইরকম ঘটনা কি আর কখনো ঘটেছে?”

অনিক গম্ভীরমুখে বলল,” না। ভুলেও না।আর কখনো ঘটলে ওই মেয়েকে শুন্যে তুলে আছাড় মারতাম আমি।”

নোরা হেসে উঠল। অনিক রাগী গলায় বলল,” টপিক চেঞ্জ করো। ওর বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না।”

” তাহলে আমার বিষয়ে বলুন।”

” তোমার বিষয়ে কি?”

” আমাকে আপনি কবে থেকে ভালোবাসেন?”
” ডায়েরীতে লেখা ছিল, ১৬ই জানুয়ারি, ২০২০।”

” আচ্ছা এত্তোদিন ওয়েট করে কিভাবে থাকলেন? তার উপর আমাকে কিছু বুঝতে পর্যন্ত দেন নি। দিনের পর দিন আমাকে ফলো করে গেছেন অথচ আমি জানতেও পারিনি। ক্ষুণাক্ষরেও কিছু টের পাইনি। কিভাবে সম্ভব বলুন না।”

অনিক হালকা হাসল,” আসলে ইচ্ছে করেই কোনোদিন তোমার সামনে আসিনি। ভয় লাগতো।”

নোরা অবাক হয়ে বলল,” কিসের ভয়?”

” শুনেছিলাম তুমি নাকি ছেলেদের সাথে প্রেম করো আর ছ্যাকা দাও। এটা নাকি তোমার প্যাশন? এমনকি তোমার ফেসবুক প্রোফাইলের বায়োতেও ছিল,’ ফ্লার্টিং ইজ মাই প্যাশন। ফ্লার্টিং ইন মাই ভেইন। সো বয়েস,থিংক টোয়াইজ।’ এসব দেখে আমার ভয় লাগতো। যদি আমার সাথেও এমনকিছু করো? আর রিজেক্ট হওয়ার ভয় তো ছিলই। তুমি আমাকে রিজেক্ট করলে আমি মরেই যেতাম।”

” আপনি কি পাগল? আপনি কি করে ভাবলেন আপনার মতো ছেলেকে আমি রিজেক্ট করবো? সেই যোগ্যতা আছে আমার? শুধু একবার প্রপোজ করেই দেখতেন! নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যেতাম।”

” এইখানেই তো ভয়। আমি তোমাকে প্রপোজ করলে তুমি হয়তো আমার হাইট,ওয়েট,ফিগার,এসব দিয়ে আমাকে বিচার করতে। তখন কিন্তু সেটাকে বলা হতো মোহ। যা সাময়িক। খুব অল্প সময়ের জন্য। তার উপর তোমার বয়সটাও ছিল সেরকম। চোখের দেখায় ভালোলাগাকেই তখন ভালোবাসা মনে হয়। আমি তোমাকে প্রপোজ করলে তুমি ভাবতে, ছেলেটা তো সুন্দর! একটু বাজিয়ে দেখি,এক্সেপ্ট করে ফেলি! কিন্তু আমার ভালোবাসার গভীরতাটা বোঝার সাধ্য তোমার হতোনা। তারপর একটা সময় আমার থেকেও বেটার কাউকে পেলে তোমার মনে হতো সে আরো পারফেক্ট। তুমি কারো গুরুত্বটা বুঝতে না। কিন্তু যখন আমি তোমার টিচার হলাম, তুমি আমাকে দেখলে, জানলে,পরিচিত হলে, বুঝতে পারলে আমি কেমন মানুষ। কিন্তু সত্যি করে বলোতো, অনিকস্যার মানে আমার মধ্যে তুমি যেমন এ্যাটিটিউড দেখেছো তা কি সত্যিই তোমার পছন্দনীয়? তুমি কি এমন ছেলে আগে পছন্দ করতে?”

নোরা ঠোঁট উল্টে বলল,” উহুম!”

” তাহলে আমাকে তোমার কেন ভালো লাগলো? আমার কোনোকিছুই তো তোমার পছন্দ ছিলনা। আমি তো এক্সট্রা ভাবওয়ালা ছিলাম তাইনা?”

নোরা লজ্জা পেয়ে হাসল। অনিক বলল,” এইযে সবসময় এতো রুড বিহেভ করতাম তোমার সাথে, আজাইরা লেকচার দিতাম, ধমকাতাম, বোরিং বোরিং কথা বলতাম, তবুও তুমি আমার সবকথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে। আমি যেটাই করতাম সেটাই তোমার পছন্দ হতো এমনকি যেটা তোমার সবথেকে অপছন্দ সেটাও যদি আমি করতাম তাও তোমার ভালো লাগতো। ”

নোরা মাথা নেড়ে বলল,” হ্যাঁ লাগতো।”

অনিক বলল ” আর আমার কাছে একটু কম এ্যাটেনশন পেলেই তোমার মনখারাপ হয়ে যেত।”

” হুম, হতো। খুব মনখারাপ হতো।”

” আমি অন্যকারো প্রশংসা করলে, অন্যকারো সাথে হেসে কথা বললেও তোমার রাগ হতো, হিংসা হতো।”

” অবশ্যই হতো। বিশেষ করে তন্নী।”

অনিক হো হো করে হেসে দিল। বলল,” জানি তো। এসব কেন হতো জানো নোরা? কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসতে। এটা তুমি নিজে রিয়েলাইজ করেছো। আমি তোমার কাছে কতটা ইম্পোর্টেন্ট সেটা এখন তুমি নিজেই বুঝো। কিন্তু যদি আমি তোমাকে সরাসরি প্রপোজ করতাম, তাহলে হয়তো আমার জন্য এসব ফিলিংস তোমার কখনোই আসতো না। তুমি আমাকেও আর পাচঁটা সাধারণ ছেলের মতো ট্রিট করতে। কিন্তু এখন আমি তোমার কাছে সাধারণ কেউ নই। খুব স্পেশাল আমি তোমার কাছে। তোমার বেস্ট চয়েস। আমি তো এটাই চেয়েছিলাম, তোমার বেস্ট চয়েস হতে।”

নোরা হঠাৎ অনিকের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,” আপনিও এমনিতেও আমার বেস্ট চয়েস। শুধু আমার কেন? আপনি যে কারো জন্য বেস্ট। বেস্ট বেস্ট বেস্ট! আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবতী যে আমি আপনাকে পেয়েছি। আল্লাহর দেওয়া সবথেকে দামী উপহার হলেন আপনি। আমি আপনাকে কক্ষনো হারাতে চাইনা।”

” ডট ডট ডট।”

” মানে?”

” মানে আমার ক্ষেত্রেও তাই। আমিও তোমাকে কক্ষনো হারাতে চাই না। সারাজীবনের জন্য চাই।”

নোরা হেসে অনিককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ ফোনের শব্দে দু’জন আলাদা হল। নোরার ফোনটা বাজছে। অনিক ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল ‘বাবা’ লিখা। সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” শ্বশুরমশাইয়ের ফোন।”

” ওহ। বাসার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। এখানে আসার পর বাবার সাথে বেশি কথা হয়নি।”

নোরা তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করল,” হ্যালো আব্বু, আসসালামু আলাইকুম। ”

” কেমন আছো মা?”

” আমি ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো আব্বু?”

” এইতো আল্লাহ রাখছে! তুমি কি করো?”

” অন্তুর সাথে বসে টিভি দেখছি আব্বু। তুমি কি করো?”

” আমি তো অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম। রিকশায় উঠে ভাবলাম তোমার সাথে একবার দেখা করে যাই। একবার বারান্দায় আসতে পারবে মা? আমি অন্তরাদের বাসার সামনে দিয়েই যাচ্ছি।”

নোরার গলায় শব্দ আটকে গেল। এখন কি জবাব দেবে?আমতা- আমতা করে বলল,” বারান্দায়? ওদের বারান্দার দরজায় তো তালা দেওয়া থাকে আব্বু। দরজা খোলা নিষেধ। আসতে পারবো না। আর তুমি এই কিছুক্ষণের জন্য আবার রিকশা থেকে কেন নামবে? চলে যাও না থাক।”

” রিকশা থেকে নামতাম না। রিকশায় বসেই দেখতাম একনজর। আচ্ছা আসতে না পারলে থাক। অন্তরার মায়ের কি অবস্থা এখন?”

” আন্টি তো এখনও হসপিটালেই আছে। অবস্থা ভালোই। আউট অফ ডেঞ্জার। তুমি টেনশন করো না আব্বু। দুই-একদিনের মধ্যেই আন্টিকে রিলিজ দিয়ে দিবে। তারপর আমিও বাসায় চলে আসবো।”

” ও তাই? আচ্ছা সাবধানে থেকো মা, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করো, আর কিছু দরকার লাগলে বাবাকে অবশ্যই ফোন করবে।”

” আচ্ছা আব্বু, তুমি টেনশন করোনা। আমি একদম ঠিকাছি। আর তুমিও ভালো থেকে, মাকে টেনশন করতে নিষেধ করো।”

” আচ্ছা মা রাখছি।”

” আচ্ছা বাবা।”

নোরা ফোন কেটে একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ল। অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,” খুব জোর বেঁচে গেছি। বাবা আমাকে দেখার জন্য অন্তরাদের বারান্দায় যেতে বলছিল। কি একটা বিপদে পড়তাম বলেনতো?”

অনিক নোরাকে কাছে টেনে বলল,” শ্বশুরমশাই দেখছি নিজের মেয়ের জন্য একটু বেশিই চিন্তা করে। কিন্তু উনি তো এইটা জানেন না উনার একমাত্র আদরের মেয়ে জামাইয়ের কাছে খুব আদরেই আছে। জানলে আর টেনশনই করতেন না।”

নোরা হেসে বলল,” ধ্যাত!”

অনিক নোরাকে কিস করতে যাচ্ছিল এমন সময় আবারও ফোন বেজে উঠল। অনিক ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে বলল,” শালির ঘরে শালি।”

নোরা অবাক হয়ে বলল,”মানে?”

বলতে বলতেই ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল অন্তরার ফোন। অনিক কেন একথা বলেছে সেটা এবার বুঝল। একটু হেসে নোরা ফোন রিসিভ করল,” হ্যালো অন্তু! বল, কি খবর? কোথায় তোরা?”

ওই পাশ থেকে ভেসে এলো অন্তরার আতঙ্কিত কণ্ঠ,” দোস্ত! ঘটনা হ্যাজ ঘটেক্টেড বাই দুর্ঘটনা।”

” মানে?”

” মানে দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।”

” কি ঘটছে? তালবাহানা না করে সোজাসুজি বল।”

” আরে আজকে আমার মা’র সাথে আঙ্কেলের আরএকে টাওয়ারে দেখা হইছিল।”

” আঙ্কেল মানে? আমার বাপ?”

” তো কি আমার বাপ? আমার বাপকে কি আমি আঙ্কেল ডাকি? তোর বাপকে তো ডাকি।”

” হায় হায় কি বলিস? আব্বু তো তাইলে সব বুঝে গেছে।”

” শুধু কি তোর বাপই বুঝছে? আমার মা বুঝে নাই? ”

” হ্যাঁ তাইতো।”

” তুই যে আমার সুস্থ স্বাভাবিক মাকে আইসিউতে ভর্তি করিয়ে সিলেট ঘুরতে এসেছিস আর আমিও যে তোর বাপকে নিয়ে মিথ্যে বলছি এটা এখন তারা বুঝে গেছে। কিন্তু ভাগ্যিস, দু’জন যে একজন-অন্যজনকে সুস্থ দেখে হার্ট এটাক করেনি এটাই বড় বিষয়। নাহলে আমরা যেই প্যাঁচ লাগিয়ে আসছি… এতোক্ষণে তাদের হার্ট ফেইল করে আসলেই আইসিউ তে থাকার কথা ছিল।”

নোরা ঘামছে। ভীত কণ্ঠে বলল, ” তোর মাকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে আব্বু যে হার্ট ফেইল করেনাই এটাই ভাগ্য। ”

অন্তরা হেসে বলল,” সেটাই তো বলছি আমি।”

” তোর হাসি পাচ্ছে? এদিকে আমার কান্না আসছে।”

” এতো ভ’য়ের কিছু নাই। আমি আম্মুকে ম্যানেজ করে ফেলছি।বলছি আমি কক্সবাজার ট্যুরে আসছি সব ফেন্ডদের নিয়ে। আম্মু হয়তো একটু গ্যাজাবে… পরে মাফ করে দিবো। তুইও এখন আঙ্কেলকে ফোন দিয়ে এটা বল আর মাফ চা৷ আঙ্কেল তো ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। মাফ করে দিবে।”

নোরা হতাশ গলায় বলল,”খুব সওয়াবের কথা বলেছিস বোন। কিন্তু আমার বাবা এতো সহজ-সরল না। উনি আমাকে একটু আগেই ফোন দিছিল। বলছিল তোদের বাসার বারান্দায় আসতে। আমাকে নাকি দেখবে। এবার বুঝতে পারছি কেন বলছে।”

” ওরে, আঙ্কেলের তো ব্যাপক বুদ্ধি। ওইদিকে আম্মুর কাছে আমার খবর জেনে নিল আর এদিকে তোকেও বাজিয়ে দেখল। ”

” কিন্তু আমি তো ফেঁসে গেছি। একটু আগেই আব্বুকে বানিয়ে বানিয়ে কত মিথ্যা বললাম,এবার আমার কি হবে রে দোস্ত?”

” আরে প্যারা নাই। নাকে তেল দিয়ে ঘুমা। আঙ্কেলকে আমি বুঝিয়ে বলবোনে।”

” কিন্তু কাহিনি তো সেই একই। আমি আব্বুকে মিথ্যে বলেছি।”

” তো সেটা তো তুই আসলেই বলেছিস। অন্তত অনিকস্যারের বিষয়টা ধামাচাপা পড়বে এটা নিয়েই শুকরিয়া আদায় কর।”

” হ্যাঁ সেটাই। আর আমার কি কপাল দেখ, জীবনে প্রথমবার মাত্র আব্বুর সাথে মিথ্যে বললাম, আর প্রথমেই হাতে নাতে ধরা। ধুর! এখন আব্বু আর কোনো কথাই আমার বিশ্বাস করবে না।”

” থাক বাদ দে। কি আর করার। আর আমরা কিন্তু সকালে উঠেই রওনা দিবো। তারপর দু’জন একসাথে গিয়ে আঙ্কেলের কাছে মাফ চেয়ে আসবো। আঙ্কেল মাফ করে দিবে চিন্তা করিস না।”

” তুই কখন ফিরবি অন্তু?”

অন্তরা ফিসফিস করে বলল,” আজরাতে আমি ফিরবো নারে। আলভীর সাথে একটা জায়গায় এসেছি। রাতটা এখানেই কাটাবো৷ তুই অনিকস্যারের সাথে ইঞ্জয় কর না? রাখছি বায়৷ সকালে দেখা হবে।”

অন্তরা লাইন কেটে দিল। নোরা হতভম্ব। চিন্তাগ্রস্ত মুখে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,” অন্তরা রাতে ফিরবে না।”

অনিক এতোক্ষণ গালে হাত রেখে সব শুনছিল। এবার বলল,” এটা আমি আগেই বুঝেছিলাম৷ এখন বলো কি হয়েছে?”

নোরা অসহায় মুখে অনিককে সব বুঝিয়ে বলল। অনিক রাগান্বিত স্বরে বলল,” আমি আগেই তোমাকে সাবধান করেছিলাম নোরা। এখন ঝামেলা হলো তো?”

অনিকের ধমকে নোরা হালকা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মাথা নত করে বলল,” স্যরি।”

অনিক কিছু একটা ভেবে বলল,” থাক বাদ দাও। এখন সলিউশন কি বলো? আমাদের কাল সকালেই ফিরে যেতে হবে?”

” আপনারা যেতে না চাইলে থাকুন। আমি আর অন্তরা চলে যেতে পারব।”

” পাগল? আমি তোমাদের একা ছাড়ব?এতো রিস্ক নেওয়ার দরকার নেই।”

নোরা হঠাৎ হেসে বলল,” এখানে না এলে তো আমার জীবনের বেস্ট মুহুর্তগুলোই মিস করে যেতাম। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। কিন্তু এখন আমার মনখারাপ।”

” কেন?”

” কাল এখান থেকে চলে যাচ্ছি যে, তাই। ”

অনিক সামান্য হাসল। নোরা বিষণ্ণ স্বরে বলল,” কাল থেকে তো আবার সব আগেরমতো হয়ে যাবে। যখন তখন আপনাকে আর দেখতে পারবো না। আবার আগেরমতো দিনে মাত্র একবার দেখা। তাও লুকিয়ে লুকিয়ে। এই সময়গুলোকে খুব মিস করবো। আপনাকে খুব মিস করবো।”

এসব বলতে বলতে অনিকের বুকে মাথা রাখল নোরা। অনিক ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” এজন্যই বলেছিলাম, চলো বিয়েটা করে ফেলি। তারপর এখানেই সেটেল হয়ে যাই। ঢাকা ফিরে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু তুমি তো রাজি হওনা।”

” ধ্যাত! ইয়ার্কি করবেন না তো।”

অনিক হেসে বলল,” তোমাকে আমিও খুব মিস করবো নোরা। এখন শুয়ে পড়ো। রাত অনেক হয়েছে৷ আমি পাশের রুমে সাব্বির ভাইদের সাথে যাচ্ছি।”

” না, ওই একরুমে এতো মানুষ কি করে থাকবেন? দরকার নেই। আপনি এখানেই সোফায় শুয়ে পড়ুন না! কতবড় সোফা।”

” আমাকে রুমে রেখে তুমি ঘুমাতে পারবে তো? ভ*য় লাগবে না?”

নোরা আড়ষ্ট কণ্ঠে বলল,” না৷ লাগবে না।” পর পর আবার বলল,” আচ্ছা,কি দরকার আজরাতটা ঘুমানোর? চলুন না আমরা বসে গল্প করি।”

নোরার ভেজা চুল থেকে মিষ্টি গন্ধ আসছে। মায়াবী মুখটা কি স্নিগ্ধ। ক্রমশ ঘোর আকর্ষণের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। যতক্ষণ কাছে থাকবে ততক্ষণই বিপদ। অনিক তাকে দূর করার জন্যই বলল,” না। ঘুমাতে হবে। নাহলে সকালে উঠে জার্নি করতে পারবে না। এখন যাও ঘুমাও গিয়ে। আমাকেও ঘুমাতে দাও।”

অনিক উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পড়ল। নোরা কিছুক্ষণ বসে থেকে সেও চলে গেল ঘুমাতে।

সকালে সবাই সিলেট থেকে বাস ধরে রওনা দিল ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় পৌঁছানোর পর নোরা আর অন্তরা দু’জন মিলেই আনিস সাহেবের কাছে ক্ষমা চাইল। অন্তরা বলল,” স্যরি আঙ্কে, নোরার কোনো দোষ নেই। আমি ওকে জোর করে নিয়ে গেছিলাম।”

আনিস বললেন,” তোমাদের মিথ্যে বলাটা উচিৎ হয়নি। ট্যুরে যাওয়ার বিষয়টা আমাকে জানালেই হতো। আমি কি অনুমতি দিতাম না? এতোবড় একটা মিথ্যে সাজানোর কি দরকার ছিল? ”

নোরা মাথা নিচু করে বলল,” সরি আব্বু।”

আনিস বললেন,” এবারের মতো মাফ করলাম। আর কখনও যেন এমন না হয়।”

তারপর অন্তরার বাড়িতে গিয়েও একই কাজ। নোরা বলল,” স্যরি আন্টি, অন্তরার দোষ নেই। আমি ওকে জোর করে নিয়ে গেছিলাম।”

অন্তরার মা দু’জনকেই ক্ষ’মা করলেন। তবে তিনিও সাবধান করলেন, আর কখনও যাতে এমন না হয়। দুই বান্ধবী নিজেদের পরিকল্পনা সফল করতে পেরে গর্বিত। একসাথে বসল গল্প করতে। তিনদিন দুইরাতের ট্যুরে কে কি মজা করল, কেমন করে কাটাল সেই গল্প। নোরা অন্তরাকে ওদের ঘুরাঘুরির সব ঘটনা বলল। অন্তরা বলল,” ওয়াও! তোরা এতো মজা করেছিস?”

” হুম। এই দুইদিন আমার লাইফের বেস্ট দুইদিন ছিল। আমি কক্ষনো ভুলব না।তোরা কি করেছিস? কোথায় কোথায় ঘুরেছিস?”

” আমরা তো তেমন ঘুরাঘুরিই করিনি। আলভী আমাকে অন্য আরেকটা রিসোর্টে নিয়ে গেছিল।”

অন্তরা চোখ বড় করে শুধাল,” কি বলছিস? তোরা আলাদা আরেকটা রিসোর্টে ছিলি?”

” হুম, খুব নিরিবিলি আর এক্সপেন্সিভ সেই রিসোর্ট। তাই মাত্র একরাতই এফোর্ট করতে পেরেছে আলভী। কিন্তু সেই রাতটা আমার লাইফের বেস্ট রাত ছিল।”

নোরা দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলল,” সারারাত কি করেছিস শুনি?”

অন্তরা ঢঙ করে চিকনগলায় বলল,” বলা যাবে না।”

নোরাও আর ঘাটাল না ব্যাপারটা। সে যা আশঙ্কা করছে তা যেন না হয়। সবকিছু ভালোই চলছিল। অনিক-নোরার প্রেমকাহিনীও আগের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। আস্তে আস্তে নোরার এডমিশন টেস্টের সময় চলে এলো। কিন্তু নোরা পড়া-শুনা নিয়ে মোটেও সিরিয়াস হচ্ছে না। মেডিকেলের এডমিশন টেস্ট তার একদম ভালো হয়নি। এখন সামনে ঢাবি আর বুয়েটের এক্সাম৷ দিন-রাত এক করে পড়াশুনা করছে নোরা।

অনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে নোরাকে বাসায় এসে পড়াবে। বুয়েটে চান্স পেয়ে গেলে নোরা হবে তার জুনিয়র। তাই সে খুব ডেডিকেশন এর সাথে নোরাকে পড়াতে চাইছে। লীরা আর আনিস সাহেবের সাথে এই বিষয়ে কথা বলল নোরা। আনিস সাহেব মেয়ের পড়াশুনার প্রতি এতো আগ্রহ দেখে খুশি হলেন। তাছাড়া বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানের ছাত্র এতো অল্প বেতনে বাসায় এসে পড়াতে চাইছে, এটাই তো বিস্ময়কর ব্যাপার! যে শোনে সে অবাক হয়। আনিস সাহেব মত দিয়ে দিলেন। অনিক এখন নিয়মিত নোরাদের বাসায় যাতায়াত করে। দুই-তিন ঘণ্টা সময় তার নোরার সাথেই কেটে যায়।

দিনগুলো স্বপ্নের মতো অতিবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু জীবন কখনও স্বপ্নের মতো সুন্দর হয় না৷ শান্তভাবে বয়ে চলা নদীর পানিতেও দমকা বাতাস এসে ছন্দপতন ঘটায়।

হঠাৎ একদিন একটা ঘটনা ঘটল। রাত তখন প্রায় বারোটা বাজছে। নোরা বিছানায় মাত্র শুয়েছে। ওমনি অন্তরার ফোন।

” হ্যালো নোরা।”

“বল।”

” দোস্ত, কই তুই?”

” রমনা পার্কের গাছতলায় বসে বাদামভাজা খাই। তুই কই?”

” ইয়ার্কি মারিস না।”

নোরা হেসে বলল,” রাত বারোটা বাজে ফোন দিয়ে এই ধরণের প্রশ্ন করলে এর চেয়ে ভালো উত্তর হয়না। যাইহোক, কি কারণে ফোন দিয়েছিস সেইটা বল।”

” দোস্ত সর্বনাশ হয়েছে।”

” এইবার কিন্তু চড় খাবি। সরাসরি ঘটনা বল। আর তুই কি কাঁদছিস নাকি?”

অন্তরা এবার শব্দ করেই কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,” আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে।”

” মানে কি? আলভীর সাথে?”

” হুম।”

” কবে? কখন?কিভাবে? আর ব্রেকআপের কারণ কি?”

” জানিনা। ও ইদানীং খুব ইগনোর করতো বুঝছিস। কথায় কথায় খারাপ বিহেভিয়ার করতো। ব্যাড ল্যাঙ্গুয়েজ ইউস করতো। এমন কি বাংলা ভাষায় গালিও দিতো। আর কত সহ্য করা যায় বল? পরে রাগের মাথায় আমিও একটা গালি দিয়ে ফেলছি, তারপরই বলে ব্রেকআপ। আমার নম্বর ব্ল্যাকলিস্ট করে দিছে, সব জায়গা থেকে আমাকে ব্লক করে দিসে, অন্য নম্বর দিয়ে ফোন করলেও ধরেনা। আমার ভয়েস শুনলেই কেটে দেয়। এখন কি হবে আমার দোস্ত?”

” শোন অন্তু, আলভীকে আমার থেকে ভালো তুই চিনিস। ও যে এমন একটা কাজ করবে সেটা তুই ভালোভাবেই জানতিস। সো এই সিচুয়েশনটার জন্য তোর প্রস্তুত থাকা উচিৎ ছিল। এখন ন্যাকা কান্না কেদে তো লাভ নেই।”

” হ্যাঁ আমি জানতাম, কিন্তু এবার যে ও ব্রেকআপ করবে আমি সত্যিই ভাবিনি। আমরা তো অনেক বেশি ক্লোজ হয়ে গিয়েছিলাম। এখন ও কিভাবে ব্রেকআপ করতে পারে বল? আমি ওকে ছাড়া জীবনেও থাকতে পারবো না। পাগলই হয়ে যাব।”

অন্তরা আবার কাঁদতে বসেছে। নোরা অবাক হয়ে বলল,” অনেক ক্লোজ হয়ে গিয়েছিস বলতে? ফিজিক্যাল কিছু করিস নি তো?”

অন্তরার কান্নার বেগ বেড়ে গেল। নোরার যা বুঝার বুঝে গেছে৷ সে বলল,” কবে হয়েছে এসব? আমাকে বলিসনি কেন?”

” তোকে বললে তুই আমাকে আস্তো রাখতি?”

” হয়েছে তো। এবার মর। আমাকে ফোন করেছিস কেন?”

” প্লিজ এমন বলিস না। আমি কি করতাম বল? ও আমার কাছে চাইলে আমি না করতে পারতাম না।”

অন্তরা এবার হিঁচকি তুলে তুলে কাঁদছে। নোরা বলল,” থাম, থাম। আমার কাছে কেঁদে কি হবে? ঘটনা যা ঘটানোর ঘটিয়ে ফেলেছিস। আগে থেকেই আমাকে সব জানালে এমনকিছুই হতে দিতাম না আমি। আর তুই কি বোকা অন্তু? কি করে পারলি এতোবড় রিস্ক নিতে? আলভী যে তোকে ছেড়ে চলে যাবে এটা তুই জানতি না?”

” জানতাম তো। আবার ভয়ও লাগতো। যদি ওর কথা না শুনলে আমাকে ছেড়ে চলে যায়?”

” তখন চলে গেলেই ভালো হতো।কিন্তু এখন যে তোর জীবনটা মরুভূমি বানিয়ে চলে গেল? এখন কি করবি তুই?”

” মানুষের বেলাতেই শুধু ভাষণ দেওয়া যায়। আমার জায়গায় তুই থাকলে কি করতি? অনিকস্যার যদি তোর কাছে তোকে চাইতো তুই না করতে পারতি? সত্যি করে বল তো? ”

নোরা অস্বস্তিতে পড়ে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,” উনি এরকম কখনোই চাইতেন না। আর যদি চাইতেন, তাহলে তখনি আমি উনার উপর থেকে বিশ্বাস হারাতাম। তোর মতো বোকামী কোনোদিন করতাম না।”

অন্তরা আর কিছু বললনা। শুধু কাঁদছে। নোরা বলল,” আচ্ছা শোন, টেনশন করিস না। আমি দেখছি কিছু করা যায় কিনা। ওই আলভীকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েই ছাড়ব দেখিস। আচ্ছা তোদের ব্রেকআপ কবে হয়েছে?”

” ইগনোর তো অনেকদিন করেই করছিল।আজকে সন্ধ্যায় একদম ক্লিয়ারলি ব্রেকআপ করল।”

” আচ্ছা, তাহলে শোন তোকে একটা আইডিয়া দেই। তুই ওদের বাড়ির ঠিকানা জানিস?”

” না, জানিনা তো।”

” আচ্ছা অনিকস্যারের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে আমি তোকে ম্যাসেজ করে দিবোনে। সেটা সমস্যা নেই। তুই খালি শোন তুই কি করবি।”

নোরা অন্তরাকে সব প্ল্যান বুঝিয়ে দিল। অন্তরা বলল,” যদি এতেও কাজ না হয়?”

” নাহলে আর কি করার? কোর্ট-কাছারি করতে হবে, পুলিশের ঝামেলায় জড়াতে হবে। ডিরেক্ট মামলা করে দিবি। কোনো ছাড় নেই।”

” দোস্ত এটা আমার বাসায় জানাজানি হলে কিন্তু আমি শেষ।”

” তুই আগেই কেন ভয় পাচ্ছিস? এইটা বোঝ তুই নিজে অলরেডি ফেসে গেছিস। এখন আলভীকে ফাসাতে হবে। যেভাবেই হোক ফাসাতে হবে।”

অন্তরা চোখ মুছে প্রতিবাদী কণ্ঠে বলল, ” হুম।”

” ঠিকাছে, এখন তাহলে নিশ্চিন্তে ঘুমা। আর মাথায় ছকটা সাজিয়ে ফেল। কিভাবে কি করবি। আমি অনিকস্যারের কাছ থেকে এ্যাড্রেস নিয়ে তোকে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছি।”

” ওকে। গুডনাইট।”

” গুডনাইট।”

অন্তরা এরপরেরদিন বাক্স-পেটরা গুছিয়ে আলভীদের বাড়ি চলে গেল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here