#প্রিয়তোষ
#পর্ব_৫
লিখা: Sidratul muntaz
ম্যাথ এক্সাম চলছে। নোরার সিট অনেকটাই পেছনে। প্রতি বেঞ্চে দুজন করে স্টুডেন্ট। নোরার সামনের বেঞ্চে সেজুতি আর অন্তরা। পাশের সারির ঠিক সামনে তন্নী আর জবা। তাদের পেছনে রেশমি আর সাদিয়া। অনিক পুরো ক্লাসরুম পরিদর্শন করছে। রেকর্ড বলে অনিকস্যারের গার্ড মানেই ভয়ংকর কিছু। গত একঘণ্টা যাবৎ সবাই সেটা বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে। নোরা হঠাৎ ফিসফিস করে অন্তরাকে ডাকল,” অন্তু, এই অন্তু।”
অন্তরা বিরক্তগলায় বলল,” কি?”
“স্যার তন্নীকে সামনের বেঞ্চে দিয়েছে, তাহলে আমাকে পেছনের বেঞ্চে কেন?”
” সেটা আমি কিভাবে জানবো। স্যারকে জিজ্ঞেস কর!”
নোরা আর কিছু বলার আগেই তার মাথায় খট করে একটা আওয়াজ হল। সবাই লেখা রেখে নোরার দিকে তাকাল। অনিক ওর মাথায় মার্কার প্যান ছুঁড়ে মেরেছে। নোরা মাথায় হাত ডলতে ডলতে বলল,” সরি স্যার।”
সবাই হেসে উঠল। অনিক টেবিলে ডাস্টার বারি দিয়ে বলল,
” সবাই সাইলেন্ট। আর মাত্র বিশ মিনিট সময় আছে। জলদি শেষ করো। আর নোরা তোমার খাতা আমি পাঁচমিনিট আগে নিবো।”
নোরা চোখ বড় করে বলল,” কেন স্যার?প্লিজ এমন করবেন না আমি..”
অনিক নিজের ঠোঁটে আঙুল ঠেঁকিয়ে বলল,” হিশশশ! কোনো কথা না। পরীক্ষা দাও।”
নোরা আর কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর সামনে থেকে হাসির শব্দ পাওয়া গেল। তন্নী হাসছে। অনিক আবার ডাস্টার দিয়ে টেবিলে আঘাত করে বলল,” তন্নী! সাইলেন্ট থাকো। নাহলে লাস্ট টেন মিনিটস দাঁড় করিয়ে এক্সাম দেওয়াবো।”
তন্নী বলল,” সরি স্যার।”
নোরা সেজুতিকে পেছন থেকে খোঁচা মারল। সেজুতি বলল,” উফফ কি?”
নোরা বলল,” আমার বেলায় মার্কার ঢিল মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়,আর তন্নীর বেলায় শুধু একটা ধমক কেন?”
” তুই তো কথা বলেছিস। আর তন্নী তো কথা বলেনি না? শুধু হেসেছে। সেজন্য। ”
” হাসলে তো শাস্তি আরো বেশি হওয়া উচিৎ। ”
অনিক কড়াশব্দে ডাকল,” নোরা! আর জাস্ট ফাইভ মিনিটস। তারপর আমি তোমার খাতা নিবো।”
“সরি স্যার। আর হবে না। আমার এখনও অনেক কিছু বাকি।”
” লেখা রেখে কথা বললে বাকি তো থাকবেই। একটা কথা সবাইকে আমি আরেকবার মনে করিয়ে দেই, ফুল এনসার না করলে কিন্তু আমি খাতা নিবো না। এক্সাম বাতিল।”
সবাই আতঙ্ক নিয়ে শব্দ করল,” কি?”
রেশমি বলল,” স্যার প্লিজ এতো নিষ্ঠুর হবেন না। কুয়েশ্চন এতো কঠিন আসছে আমরা কিভাবে ফুল এনসার করবো? কিছু কিছু প্রশ্নের তো মানেও বুঝিনাই।”
অনিক বলল,” প্রশ্ন ঠিকই আছে। না পড়লে তো এমন লাগবেই। আর তোমাদের এখন এসব কথা বলতে লজ্জা লাগেনা? এরাই নাকি আবার এইচএসসিতে জিপিএফাইভ পেয়ে আসছে। আনবিলিভেবল!”
রেশমি চুপ হয়ে গেল। অনিক ঘড়ি দেখে বলল,” আর মাত্র দশমিনিট। সবাই জলদি শেষ করো।”
রেশমি আবার বলল,” স্যার একটু মেহেরবানি করে আর পাঁচটা মিনিট সময় কি বাড়িয়ে দেওয়া যায়না?”
অনিকের তাৎক্ষণিক জবাব,”না।”
সবাই হেসে দিল। অনিক আবার ধমকে উঠল,” সাইলেন্ট।”
তারপর আবার সবাই চুপ। একটু পর সময় শেষ হল। সবাই খাতা জমা দিল। অনিক খাতাগুলো নিয়ে পাশের রুমে চলে গেল। সবাই বসে টুকটাক গল্প করছে। কে কেমন এক্সাম দিল এসব নিয়েই চলছে আলাপ। তন্নী ম্যাথ প্রশ্নটা ইনিয়েবিনিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ জবাকে বলল,”জবা শোন,আমি না একটা কুয়েশ্চনের মানে বুঝিনি। এইটা স্যারকে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমি জিজ্ঞেস করে আসছি।”
তন্নী দ্রুতগতিতে পাশের রুমে চলে গেল। তন্নী যাওয়ার পর নোরা বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। আর অস্থিরভাব করতে লাগল। অন্তরা বলল,” নোরা তোর কি হয়েছে?”
নোরা কোমরে হাত রেখে বলল,” অনিকস্যার ওইরুমে একা। তন্নীর এখন যাওয়ার কি দরকার ছিল? স্যার এখানে আসার পর জিজ্ঞেস করা যেতো না?”
সবাই এ কথা শুনে অদ্ভুতচোখে তাকাল। অন্তরা হেসে বলল,” কন্ট্রোল!”
দিনটি শুক্রবার হওয়ায় পুরো কোচিং এ আর কোনো স্টুডেন্ট ছিলনা। শুক্রবারে কোচিং এ এক্সাম থাকে। তাই যাদের এক্সাম হয় তারাই সকালে আসে। অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও তন্নী এলো না। নোরা অন্তরা আর সেজুতির মাঝখানে বসে ফিসফিস করে বলল, ” আচ্ছা আমি একবার গিয়ে দেখবো তন্নী কি করছে?”
অন্তরা বলল,” পাগল? স্যার রেগে যাবে।”
নোরা বলল,” রাগবে কেন? আমি বলবো আমারও কুয়েশ্চনে সমস্যা আছে।”
সেজুতি বলল,” তোর সমস্যা কোথায় দেখা!”
ওদের কথার মাঝখানেই তন্নী আর অনিক ঢুকল। দরজা দিয়ে ঢোকার সময় অনিক তন্নীকে সাইড দিল। তন্নী আগে ঢুকল আর অনিক পরে। নোরা সরুচোখে তন্নীর দিকে তাকিয়ে ছিল। অনিক বলল,” সবাই জায়গায় বসো। এক্সামের সময় যে যেভাবে বসেছিলে ঠিক সেভাবে।”
সবাই তাই করল। অনিক খাতা বিলি করতে শুরু করল। নোরার খাতাটা দেওয়ার সময় অনিক ছুঁড়ে মারল। নোরা ক্যাচ ধরতে পারল না বলে খাতাটা তার নাকে-মুখে এসে লাগল। অনিক ধমকের সুরে বলল,” খাতাটাও ধরতে শিখোনি। কত মার্কস পেয়েছো গুণে আমাকে জানাও।”
নোরা নরম সুরে বলল,” আচ্ছা স্যার।”
সবাইকেই একই কথা বলা হল। তন্নীর খাতা দেওয়ার সময় অনিক খাতাটা তন্নীর বেঞ্চের উপর রাখল। তন্নী অনায়াসে খাতাটা নিয়ে নম্বর গুণতে শুরু করল। নোরা এই ঘটনা দেখে সেজুতিকে বলল, ” আমার খাতাটা মুখের উপর ছুঁড়ে মারল। আর তন্নীরটা এতো সুন্দর করে বেঞ্চের উপর রেখে দিল কেন?”
অন্তরা নোরার কথায় হেসে দিল। সেজুতি বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
” কারণ তুই পেছনে বসেছিস। আর তন্নী স্যারের সামনে ছিল তাই।”
” তাহলে স্যার আমাকে পেছনে কেন বসাল?”
” জানিনা। এখন ডিস্টার্ব করিস না, মার্কস গুণতে দে। ”
“কত পেলি?”
” গোণা শেষ হয়নি। ”
নোরা অন্তরার দিকে তাকাল,” অন্তু তুই কত?”
অন্তরা বলল,” পঞ্চাশে বত্রিশ। তুই?”
” আমি পয়ত্রিশ।”
“কংগ্রেটস।”
অনিক তন্নীকে জিজ্ঞেস করল,” তন্নী কত পেয়েছো?”
তন্নী চাপা গলায় বলল,” চৌত্রিশ।”
নোরা ফিসফিস করে বলল,” ইয়েস! আমি ওর থেকে এক মার্ক বেশি। স্যার আমাকে কখন জিজ্ঞেস করবে?”
অন্তরা বলল,” এতো কথা বলিস না। চুপ থাক।”
অনিক একে একে সবাইকে জিজ্ঞেস করছিল। নোরার সময় না আসতেই সে বলে ফেলল,” স্যার আমি পয়ত্রিশ।”
অনেক খুশি খুশি ভাব নিয়ে কথাটা বলল। অনিক দায়সারাভাব করে বলল,” তো আমি কি করবো?”
ক্লাসরুমে হাসির রোল পড়ে গেল। নোরার মুখটা এতোটুকু হয়ে গেছে। অন্তরা হাসতে হাসতে বলল,” এজন্যই তোকে বলেছি কথা একটু কম বল।”
নোরা কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,” সবার থেকে আমিই বেশি মার্কস পেয়েছি। তবুও স্যার আমাকে কিছুই বলল না। একটু বাহবা পর্যন্ত দিল না। আমার জায়গায় তন্নী হলে এতোক্ষণে মাথায় তুলে নাচতো।”
সেজুতি বলল,” তন্নীর মতো কম কথা বলার অভ্যাস কর। তাহলে দেখবি তোকেও মাথায় তুলে নাচবে।”
নোরা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,” আমি মাথায় উঠতে চাইনা, আমি তো কোলে উঠতে চাই।”
সেজুতি বলল,” আস্তাগফিরুল্লাহ।”
অন্তরা সেজুতিকে বলল,” বলেছিলাম না? ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে! আসলেই মাথাখারাপ হয়ে গেছে।”
ছুটির পর কোচিং এর গেইট দিয়ে বের হয়ে নোরা আর অন্তরা স্কুটিতে উঠছিল। সেজুতি ওদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। নোরার মন খুব খারাপ। সবার চেয়ে বেশি মার্কস পাওয়ার পরেও অনিকস্যার কেন তাকে কিছু বলল না। সবাই এই বিষয়টা নিয়েই কথা বলছে। হঠাৎ কোথ থেকে যেন রেশমি এসে ডাকল,” এই নোরা!”
নোরা হেলমেট খুলে রেশমির দিকে তাকাল,” কি?”
” এদিকে এসো। তোমার সাথে একটু কথা আছে।”
নোরা সেজুতি আর অন্তরাকে দাঁড়াতে বলে রেশমির কাছে গেল,” বলো কি কথা?”
রেশমি নোরার ঘাড়ে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে বলল,” আমি জানি আজকে তোমার মনখারাপ। সেজন্য আমার কাছে তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে।”
নোরা হাঁটা থামিয়ে নিজের ঘাড় থেকে রেশমির হাত সরিয়ে বলল,”আমার মনখারাপ না। আর কি গুড নিউজ?”
রেশমি হেসে বলল,” আর দুদিন পর অনিকস্যারের বার্থডে।”
নোরা হেসে বলল,” আমি জানি।”
রেশমি উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, ” জানো? তাহলে কিছু প্ল্যান করেছো স্যারের জন্য?”
” এখনও কিছু ভাবিনি। আমি কনফিউজড। স্যার কি পছন্দ-অপছন্দ করে সেটা তো আমি জানিনা।”
” আমি জানি। স্যার কফি খেতে খুব পছন্দ করে। কফি উনার নেশা। স্যার কিন্তু একবার নিজেই বলেছিল, মনে আছে?”
নোরা খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,” হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে। তাহলে কি স্যারকে একটা ইন্সট্যান্ট কফি মেশিন গিফট করবো? স্যার খুব খুশি হবে।”
রেশমি মুখ গোমরা বানিয়ে বলল,” আমিও সেটা ভেবেছিলাম। কিন্তু একটা সমস্যা আছে।”
” কি সমস্যা? ”
” তন্নী স্যারের জন্য আগেই কফি মেশিন কিনে ফেলেছে।”
নোরার মাথায় বাজ পড়ল,” কি?”
“হুম। একই গিফট দুইটা হয়ে গেলে সেটার তো আর ভ্যালু থাকবে না। তাই আমাদের অন্যরকম কিছু ভাবতে হবে। আমি ভাবছি স্যারকে শেক্সপিয়রের একটা বই দিবো।”
” হ্যাঁ এটাও দারুণ আইডিয়া। বই তো যে কেউ পছন্দ করবে। কিন্তু আমি কি দিবো?”
“তোমার জন্য আমার কাছে অন্য প্ল্যান আছে।”
” কি প্ল্যান? আমি এমনকিছু দিতে চাই যেটা স্যারের সবথেকে পছন্দ হবে।”
” একটা জিনিস আছে। যেটা স্যারের সবথেকে পছন্দ। বলতে পারো স্যারের নেশা।”
” কি সেটা?”
রেশমি নোরার কাঁধে হাত রেখে রেশমি বলল, “শোনো নোরা, তুমি যদি চাও তোমার গিফট স্যারের সবচেয়ে পছন্দ হোক, তাহলে আমি বলি? তুমি উনাকে এক কার্টুন ব্যানসন গিফট করো।”
“ব্যানসন? মানে সিগারেট?”
নোরার চোখ বড় হয়ে গেল। রেশমি বলল,” হুম৷ স্যারের সিগারেটের নেশা আছে। আর ব্যানসন তো সবার অন্যতম ফেভরেট ব্র্যান্ড। স্যার এটা পেলে অনেক খুশি হবে।”
” পাগল? স্যার যদি রেগে যায়? আমি স্টুডেন্ট হয়ে টিচারকে সিগারেট গিফট করবো? ছি ছি!”
” এখানে ছি এর কি হল? আরে যারা সিগারেটখোর ওরা এতোকিছু চিন্তা করেনা। ওরা শুধু পেলেই খুশি। তুমি এক কার্টুন ব্যানসনের সাথে একটা সুন্দর লাইটার গিফট করো। দেখবা স্যার এত্তো খুশি হবে! আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।”
“ছি! জীবনেও না। উনি টিচার মানুষ এসব আমি কিভাবে গিফট করব উনাকে?”
” আরে গাঁধী, এইটা ছেলে পটানোর একটা অভিনব পদ্ধতি। আমি জানি তুমি অনিকস্যারকে লাইন মা’রছো। তাই তোমাকে বুদ্ধিটা দিলাম। বেশিরভাগ মেয়েই সিগারেট পছন্দ করেনা। আর তুমি যদি মেয়ে হয়ে সিগারেট গিফট করো, স্যার তোমাকে ইউনিক আর স্মার্ট ভাববে। একবার ট্রাই করে দেখো! তুমি রাজি না হলে সুযোগটা আমিই কাজে লাগাবো। মানে আমিই ব্যানসন গিফট করবো। তুমি বই দিও। শেক্সপিয়রের বই।”
নোরা কিছু একটা ভেবে বলল,” না থাক! ব্যানসন আমিই দিবো। বই তুমি দিও।”
” সিউর?”
” হ্যাঁ সিউর।”
” ঠিকাছে। তাহলে ডান। আর গিফট কেনার জন্য হেল্প লাগলে আমাকে বলো। আমার চেনা-জানা একটা ব্র্যান্ডের দোকান আছে। সেখানে সব ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। দামী ব্র্যান্ড। আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।”
“আচ্ছা। আমি জানাবো তোমাকে।”
নোরা মুখে এ কথা বললেও মনে মনে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। কাজটা ঠিক হবে কিনা।রেশমির সাথে কথা বলে নোরা ফিরে আসার পর অন্তরা বলল,” কিরে, রেশমি কি বলে?”
নোরা বলল,” সোমবার অনিকস্যারের বার্থডে। সেটা নিয়েই কথা বলছিল।”
“ওহ।”
সেজুতি বলল,” অনিকস্যারের বার্থডে’র কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম।”
নোরা চিন্তিত মুখে হেলমেট পরে নিল। তারপর স্কুটারে বসল। সেজুতি ওদেরকে বাই বলে চলে গেল। নোরা অন্তরাকেও এ বিষয়ে কিছু বলল না। এখন বললে অন্তরা অযথাই বকাবকি করবে। ব্যাপারটা নিয়ে নোরা আরও ভাববে। অনিকস্যারের সত্যিই সিগারেটের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি আছে কিনা সেটা জেনে নেওয়া দরকার। সেদিনরাতে নোরা শুধু এই বিষয়টা নিয়েই চিন্তা করল। অনিককে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়েছিল কালরাতেই। সে আজ এক্সেপ্ট করেছে।
নোরা কোনোকিছু চিন্তা না করেই অনিককে মেসেজ দিল,
“আসসালামু আলাইকুম, স্যার ভালো আছেন?”
তারপর সারারাত রিপ্লাইএর জন্য অপেক্ষা করল। কিন্তু রিপ্লাই এলো না। নোরা মনখারাপ নিয়েই ঘুমিয়ে গেল। ঘুমানোর আগে কেঁদেছিল খুব। তারপর ঘুম ভেঙে দেখল চোখ ফুলে লাল টকটকা হয়ে আছে। আরেকবার ফেসবুকে ঢুকল। রিপ্লাই এখনো আসেনি। তবে অনিক অনলাইনে ছিল দুইঘণ্টা আগে। তখনো কি মেসেজটা দেখেনি? নাকি ওকে ইগনোর করছে? নোরা মেনে নিতে পারছে না। বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথাটা শুধু বেড়েই চলেছে। সাথে সেই দমবন্ধকর অনুভূতি তো আছেই। সব মিলিয়ে নোরার অসহ্য লাগছে।
এই কয়েকদিনে একটা জিনিস বেশ ভালোভাবেই টের পেয়েছে সে। অনিকের প্রতি তার অনুভূতিটা দিন দিন আসক্তির রুপ নিচ্ছে। এক মুহুর্তও অনিকের কথা না ভেবে থাকতে পারেনা সে। আর এই ব্যাথাটা যে কতটা যন্ত্রণার সেটা যে পায় সেই-ই বুঝে। সানিও কি এতোটাই কষ্ট পেয়েছিল ওর জন্য? এই প্রথম নোরার সানির জন্য খুব খারাপ লাগছে। সানিকে ফোন করে সরি বলতে ইচ্ছে করছে। ওর কাছে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার মুখ তার আর নেই।সে অন্যায় করেছে সানির সাথে। চরম অন্যায়।
সন্ধ্যার শুরুতে কোচিংরুমের সিঁড়ির পাশে কাঁচের গ্লাসের জানালায় চোখ রেখে দাঁড়িয়ে ছিল নোরা। সামনের ক্লাস থেকে একটু পর অনিকস্যার বের হবে। নোরা অনিককে একনজর দেখবে। অনিকও তাকে দেখবে। কয়েক সেকেন্ডের দৃষ্টি বিনিময়! এতেই নোরা সারাদিনের প্রশান্তি পেয়ে যাবে। নোরা অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
হঠাৎ একটা মিষ্টি কণ্ঠ শুনে ঘুরে তাকাল। তাকে কেউ ডাকছে না। একটা মেয়ে খুব শব্দ করে হেসে আফজাল স্যারের সাথে কথা বলছে। মেয়েটা আফজালস্যারকে কিছু দিচ্ছে। আফজাল স্যারের মুখ হাসি হাসি। উনি খুব খুশি হয়ে প্যাকেট টা নিয়ে বললেন,” থ্যাঙ্কিউ।”
নোরা ভালো করে তাকিয়ে দেখল ওইটা একটা সিগারেটের প্যাকেট। মেয়েটা আফজাল স্যারকে সিগারেট দিচ্ছে কেন? আবার স্যারও কত খুশি হয়ে নিচ্ছেন। মেয়েটা স্যারের সাথে দাড়িয়ে আরো কিছুক্ষণ কথা বলল। তারপর চলে গেল। মেয়েটা যাওয়ার সময় আফজাল স্যার হাসি হাসিমুখ করে অনেকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে রইলেন। ছাত্রী হয়ে এই মেয়েটা যদি আফজাল স্যারকে সিগারেটের প্যাকেট দিতে পারে তাহলে সে কেন পারবেনা? আফজাল স্যারকে দেখে মনে হল বিষয়টায় সে ভীষণ খুশি। অনিকস্যারও কি খুশি হবে?
রেশমির কথাগুলো আরেকবার মনে পড়ছে। নোরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। সে অনিকস্যারের বার্থডেতে ব্যানসন গিফট করবে। সাথে খুব সুন্দর একটা লাইটার। অনিকস্যারের রিয়েকশন কেমন হবে আন্দাজ করা যাচ্ছেনা। একটু তো রিস্ক নেওয়া যেতেই পারে। পরে কি হবে সেটা দেখা যাবে।
আজ সোমবার। অন্তরা নোরাকে বাসা থেকে নিতে এসেছে। নোরা কোচিং এ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। আলমারির সামনে একঘণ্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু পড়ার মতো কোনো ড্রেস পাচ্ছে না। অন্যান্যদিন জামা-কাপড় নিয়ে এতো ঝামেলা হয়না তার। আজ হচ্ছে। কারণ আজ একটা স্পেশাল দিন। অনিকস্যারের বার্থডে।নোরা এমন রঙের জামা খুঁজছে যেটা কোচিংয়ের সাথেও মানিয়ে যায় আবার গর্জিয়াসও দেখায়। কিন্তু এমন কোনো রঙ খুজে পাচ্ছেনা। অন্তরা এসে নোরাকে জামা চুজ করে দিল। লাল রঙের সিল্কের কামিজ। কালো ওরনা আর সেলোয়ার।
নোরা জামাটা দেখে বলল,” নারে অন্তু এটা আমি পরবো না।”
” কেন?”
” এটা বেশি গর্জিয়াস হয়ে যায়। পরে স্যার কি মনে করবে?”
” আরে ধুর! কিচ্ছু হবেনা। তোকে পরতে বলছি পর। খুব সুন্দর লাগবে। এটা পরে লাল টুকটুকে লিপস্টিক আর চোখে গাঢ় করে কাজল লাগাবি। চুলগুলো স্ট্রেইট করে পেছনে ছেড়ে দিবি। আর সামনের কয়েকটা চুল কার্ল করে কপালে ফেলে রাখবি। তোকে যে কি সুন্দর লাগবে রে নারু! সাথে যদি বড় পাথরের কানের দুল পড়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। এই তোর কাছে আছে বিগস্টোন?”
“তুই কি পাগল হয়েছিস? বিগস্টোন পড়ে কি আমি বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি? আমি এসব কিছুই করবোনা। আর আমাকে এতো কিছু বলছিস, তুই নিজে কি পরেছিস হ্যাঁ? মুখে তো স্নো টা পর্যন্ত মাখিস নাই। আর চুলও মনে হয় ঠিকমতো আচড়াস নাই। আর কি ড্রেস পড়েছিস এটা? ম্যান্ধামার্কা রং!”
” আমার তো আর অনিকস্যারের অ্যাটেনশন পাওয়ার দরকার নেই। দরকারটা হচ্ছে তোর। সেজন্য তোকে সাজতে হবে। আর কোনো কথা না। যা বলছি তাই কর। হাতে বেশি সময় নেই।”
” ধুর অন্তু তুই কিচ্ছু বুঝিস না। আমি এভাবে সেজে গেলে মানুষ কি ভাববে? আর অন্য টিচাররাই বা কি ভাববে?”
” কেউ কিছুই ভাববে না। সব তুই একাই ভাবছিস। আর অনেক মেয়েরা তো মেকআপ করেও কোচিং এ আসে। মনিকা, সানজিদা ওদের দেখিস না?”
” ওরা তো সবসময় সাজ-গোজ করে। কিন্তু আমি হঠাৎ একদিন সেজে গেলে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে। আমার খুব অকওয়ার্ড লাগবে। ভাবতেই কেমন শরীর শিরশির করছে। ও মাই গড। আমি পারবোনা।আল্লাহ!”
” এখন কিন্তু থাপ্পড় খাবি। বেশি ন্যাকামি করছিস। চুপচাপ ড্রেস পর। আমি বলছি কিচ্ছু হবেনা।”
অন্তরা একপ্রকার জোর করেই নোরাকে সাজিয়ে দিল। কানে বড় পাথরের দুলও পড়ালো। কোচিং এ ঢোকার সময় নোরার খুব লজ্জা লাগছিল। সে ওরনা দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে রাখল। আর নিকাবের মতো মুখ ঢেকে রাখল। যেন কেউ তাকে না চিনতে পারে। ক্লাসে যাওয়ার পর অন্তরা তার মাথার ঘোমটা খুলে দিল। আর স্বাভাবিকভাবে ওরনাটা পড়িয়ে দিল।
সেজুতি নোরাকে দেখে অবাক হয়ে বলল,” দোস্ত তোকে তো আজ দারুণ লাগছে। পুরাই লালকুমারী।”
নোরা হেসে দিল। সেজুতি নোরার হাতে বড় বক্স দেখে বলল,” এটা কি?”
নোরা বলল,” অনিকস্যারের গিফট।”
সেজুতি বলল,” এতোবড় প্যাকেটে? কি এমন কিনেছিস স্যারের জন্য? ”
নোরা বলল,” সারপ্রাইজ। শুধু স্যার দেখবে। তখন তোরাও দেখিস।”
সেজুতি অন্তরাকে বলল,” অন্তরা বলতো এটার ভিতর কি? তুই জানিস?”
অন্তরা বলল,” জানিনা।আমাকেও কিছু বলেনি।”
সেজুতি আর অন্তরা মিলে গেস করা শুরু করল। একজন বলছে চকলেট, আরেকজন বলছে বড় টেডি বিয়ার, আরো অনেক কিছুই বলছে। কিন্তু আসল জিনিসটা কেউই ধরতে পারছেনা।
নোরা সবার মন্তব্য শুনে মিটিমিটি হাসছে। নোরা প্রথমে ভেবেছিল সে-ই সবথেকে বেশি সেজেছে। কিন্তু তন্নী যখন ভেতরে ঢুকল সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তন্নীর দিকে। এমনিতে মেয়েটা খুব ফরসা তার উপর পড়েছে গোলাপী রঙের শাড়ি। এলোমেলো খোলা চুল। মাথায় ছোট্ট টিকলি। গলায় কিছু নেই। কানে ছোট ছোট দুল। টিকলিটাই বেশি চোখে লাগছে। আর সেজন্যই তাকে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে। ঠোঁটে গোলাপী রঙের লিপগ্লোস আর বড় করে আই লাইনার পড়েছে। সব মিলিয়ে তন্নীকে আশ্চর্যরকম সুন্দর লাগছে।
নোরা নিজে মেয়ে হয়েও তন্নীর থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। তাহলে ছেলেদের কি অবস্থা হয়েছে আল্লাহ ভালো জানে। অন্তরা তন্নীকে দেখে রসিকতা কর বলল,”বাব্বাহ! তন্নী তোমাকে তো পুরা আগুন লাগছে। রাস্তা দিয়ে আসার সময় কয়জন হার্ট অ্যাটাক করেছে শুনি?”
অন্তরার কথায় সবাই হাসল। তন্নী লজ্জা পেলেও সেটা প্রকাশ করল না। দায়সারাভাবে বলল,” একজনও না।”
অন্তরা বলল,” আরে কি বলো? তুমি দরজা দিয়ে ঢোকার সময় আমারই তো হার্টঅ্যাটাক হতে যাচ্ছিল। তাহলে রাস্তাঘাটের মাসুম ছেলেগুলোর যে কি বেহাল দশা হয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। আমার তো মনে হয় যে কয়জন তোমাকে দেখেছে সবকয়টা হার্টঅ্যাটাক করেছে। কিন্তু তুমি অন্যকারো চিন্তায় ব্যস্ত ছিলে তো, তাই দেখোনি।”
নোরা এই কথা শুনে হেসে উঠল শব্দ করে। আর কেউ না বুঝলেও সে বুঝেছে অন্তরা কোন অর্থে কথাটা বলেছে!
জবা বলল,” এই তন্নী, জিনিসগুলো বের কর! সাজাতে হবে না?”
তন্নী বলল,” ও হ্যাঁ। আমি বের করে দিচ্ছি, তোরা সাজা। আমি শাড়ি পরে এতো কাজ পারবো না।”
সেজুতি বলল,” কি সাজানোর কথা হচ্ছে?”
সাদিয়া বলল,” আজকে অনিকস্যারের বার্থডে না? তাই আমরা সবাই মিলে চাদা তুলে ডেকোরেশনের জিনিস কিনেছি। ক্লাসরুমটা সাজাবো। আর তন্নী তো স্যারের জন্য কেকও বানিয়েছে।”
তন্নী মিটিমিটি হাসছে আর ব্যাগ থেকে ডেকোরেশনের জিনিস বের করে টেবিলে রাখছে। সেজুতি, অন্তরা আর নোরা কিছুক্ষণ চোখাচোখি করল।
সেজুতি বলল,” তাই নাকি? আমাদের বললে না তো! তাহলে আমরাও জয়েন করতাম।”
জবা বলল,” আরে এটা আবার বলার কি আছে?”
সেজুতি বলল,” না বললে জানবো কিভাবে?”
নোরা সেজুতিকে থামিয়ে ফিসফিস করে বলল,” বাদ দে। ওদের কাজ ওরা করুক।”
সেজুতি আর কিছু বলল না। সবাই ক্লাসরুম সাজানোয় ব্যস্ত হয়ে গেল। দরজার উপর দড়ি টানিয়ে ঝুড়ি আটকে রাখা হয়েছে। ঝুড়িতে অজস্র ফুলের পাপড়ি। অনিকস্যার যখন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকবে দড়ির টান লেগে ফুলগুলো ঝড়ঝড়িয়ে পড়বে তার উপর। তন্নী টেবিলে কেক রেডি করে দাঁড়িয়ে থাকবে। সবাই তাকে ঘিরে থাকবে।
অনিকস্যার ঢোকামাত্রই সবাই চিৎকার করে বলবে,” হ্যাপি বার্থডে স্যার।” সবাই তন্নীকে ঘিরে দাঁড়াল। পুরো ক্লাসরুমের সবাই সমবেত হয়েছে। শুধু সেজুতি, নোরা আর অন্তরা আসল না। ওরা বেঞ্চেই বসে আছে। কারণ এই আয়োজনের কথা ওরা তিনজন ছাড়া সবাই জানতো। তাই ওরা তিনজন ইচ্ছে করেই যায়নি।
সময়মতো অনিক ক্লাসে ঢুকল। সবাই উচ্চশব্দে চিৎকার দিয়ে তাকে উইশ করল। অনিক সবকিছু দেখে মোটামোটি চমকালো। কিন্তু এতোটাও চমকালো না যতটা দরকার ছিল। হয়তো প্রায় প্রত্যেক ক্লাস থেকেই এমন সারপ্রাইজ পেয়ে এসেছে সে। এই ক্লাসেও যে সারপ্রাইজ ওয়েট করছে সেটা আগে থেকেই জানতো। তাই খুব একটা অবাক হয়নি।
কিন্তু নোরা অবাক হয়ে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ আটকে গেছে অনিকের লাল পাঞ্জাবীতে। পলক ফেলতেও যেন ভুলে গেছে সে। লাল পাঞ্জাবীর উপর কালো সুতোর এমব্রয়ডারি ডিজাইন। নোরা বুঝতে পারছে না তার কামিজের সাথে মিলে গেল কি করে? এই কামিজটা চুজ করার জন্য এখন অন্তরাকে একটা কিস দিতে ইচ্ছে করছে। অনিক মাথার ফুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল।
সবাই কেক কাটার জন্য জোরাজোরি করতে লাগল।নোরা, সেজুতি আর অন্তরা আগে বেঞ্চে বসেছিল। এবার শুধু উঠে দাঁড়াল। অনিক ওদের দেখে বলল,” তোমরা ওখানে কেন? তোমরাও আসো!”
অন্তরা হেসে বলল,” না স্যার থ্যাঙ্কিউ। আমরা এখানেই ঠিকাছি।”
অনিক কি মনে করে যেন আর কিছু বলল না। নোরার হালকা মনখারাপও হল। অনিক যেন তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। কি লাভ হলো এতো সেজে-গুজে এসে? কেক কাটার সময় জবা, রেশমি আর সাদিয়া বার বার এক কথা বলছিল,” স্যার কেক টা অনেক স্পেশাল। এটা তন্নী নিজের হাতে বানিয়েছে।”
তখন নোরা উদাশমুখে দাঁড়িয়ে ছিল। কেক কাটার পর্ব শেষ হল। কিন্তু অনিক কেক খেলনা। তার নাকি চকলেট কেকে এ্যালার্জী। এই কথা শুনে নোরা মনে মনে হেসে উঠল৷ তার যে কি আনন্দ লাগছিল। তন্নীর মুখ শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে গেছে। বেচারা যার জন্য এতো কষ্ট করে কেক বানাল সে-ই খেল না। নোরার হাসি যেন থামছেই না। তারপর আসলো গিফট দেওয়ার পালা। সবাই এক এক করে গিফট বের করছে। তন্নী সত্যি সত্যি কফি মেশিন কিনেছে। সাথে একটা হাতঘড়ি আর পারফিউমও। তন্নীর আয়োজন দেখে নোরা, সেজুতি, অন্তরা একজন আরেকজনের দিকে আড়চোখে তাকাল। রেশমি শেক্সপিয়ারের বই দিয়েছে। সাদিয়া আর জবা দিয়েছে চকলেটের বক্স। সবার শেষে নোরা গেল গিফট দিতে। অনিক গিফট তুলতে তুলতে ক্লান্ত। নোরার হাতে এতোবড় বক্স দেখে অনিক খুব কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,” কি এটা?”
নোরা হেসে বলল,”খুলে দেখুন।”
অনিক একটা সন্দেহের হাসি দিয়ে গিফট খুলতে শুরু করল। নোরার হঠাৎ মনে হল অনিক খুব আগ্রহ নিয়ে তার গিফটটা খুলছে। অন্যান্য গিফটগুলো খোলার সময় এতোটা আগ্রহ ছিলনা ওর। বেশিরভাগ গিফট তো সে খুলেওনি৷ যার গিফট সে-ই খুলে দেখিয়েছে। অনিক গিফটটা খুলার পর দেখল এক কার্টুন ব্যানসন সিগারেট। প্যাকেটের উপর বড় বড় অক্ষরে লেখা,” ধূমপান যৌনক্ষমতা হৃাস করে।”
অনিক লেখাটার দিকে তাকিয়ে ছিল। কে জানি লেখাটা শব্দ করে পড়ল। আর সবাই সঙ্গে সঙ্গে হেসে উঠল। পুরো ক্লাস জুড়ে হাসির রোল পড়ে গেল। সেজুতি আর অন্তরা হাসল না কেবল। নোরা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গিফট কেনার সময় এই লেখাটা একদমই খেয়াল করেনি সে।অনিক ক্লাসে হাসির শব্দ এমনিতেই অপছন্দ করে। এবার আরো বেশি রেগে গেল। উচ্চশব্দে বলল,” সবাই সাইলেন্ট!”
সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসরুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা তৈরি হল। অনিক নোরার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,” নোরা! তুমি এইটা দিয়ে কি বুঝাতে চাইছো?”
নোরা অবাক হয়ে বলল,” কই? আমি তো কিছু বুঝাতে চাইছি না স্যার!”
” তাহলে এ ধরণের উপহার দেওয়ার মানে কি? তুমি জানো এটা কতবড় বেয়াদবি?”
নোরা আকাশ থেকে পড়ল। কি বলবে বুঝতেই পারছেনা। অনিক ধমক দিয়ে বলল,” আমাকে এ ধরণের জিনিস দেওয়ার সাহস তুমি কিভাবে পেলে?”
নোরা আৎকে উঠল। বুকটা ধুকধুক করতে লাগল তার। পাখির মতো আত্মাটা ছটফটানি শুরু করে দিয়েছে। অনিকের রাগে কণ্ঠনালি পর্যন্ত কাপছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। শিরা-উপশিরা যেন দপদপ করে লাফাচ্ছে। নোরা সেটা স্পষ্ট টের পাচ্ছে। ক্লাসের সবাই নিস্তব্ধচোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। নোরা কাঁপা কণ্ঠে বলল,” সরি স্যার। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল আপনি খুশি হবেন।”
অনিক বিস্মিত হয়ে বলল,” জানিনা এই জিনিস তুমি কি বুঝে দিয়েছো। আবার বলছো আমি খুশি হবো? নোরা আমি তোমাকে এতোদিন বোকামেয়ে ভাবতাম। কিন্তু তুমি আসলে বোকা না, তুমি একটা বেয়াদব। ”
অনিক সিগারেটের কার্টুনটা প্রায় ছুঁড়ে ফেলল। নোরা সরে দাঁড়াল। নাহলে বক্সটা তার মাথায় বারি খেত। নোরার চোখ দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি আসছে। কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল সে।
চলবে