মনশহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ #২৮তম_পর্ব

0
140

#মনশহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
#২৮তম_পর্ব

সবাই আনন্দ করলেও ঐন্দ্রিলার মনে মোটেই সুখ নেই। তৃষা নামক ন্যাকা চক্ষুশুল তার চোখের সামনে ঘুরছে। অবশ্য সে একাই যে দুঃখিত তা নয়। আরোও তিনজনও এই দুঃখী দলের সদস্য। পিউ, নীলাদ্রি এবং আহাশ। এই তিনজনের মুখ থেকে ছোট বাচ্চাও বলবে এরা পৃথিবী বিখ্যাত ছ্যাকা খেয়েছে। আহাশের চোখ মুখ ফুলে গেছে। কাটা অংশ এখনো শুকায় নি। বাসায় তাকে দেখে ঐন্দ্রিলার শ্বাশুড়ি কাননের কি চিন্তা! জামা ছেড়া, নাক থেকে রক্ত গলগলিয়ে পড়ছে। ছেলের চোখ ফোলা। নির্জীব চলন। আহাশ অভ্রের মত নয়। শান্ত ছেলে, সে মারামারি করতে পারে না। অথচ এমন বিধ্বস্ত অবস্থা তার। শত প্রশ্নের পরও আহাশ উত্তর দিল না। আউওয়াল সাহেব নাতীর মুখ থেকে একটা কথাও বের করতে পারলো না। অভ্র তক্ষণ বাসাতেই ছিলো। উদাসীন গলায় বলল,
“পুরুষমানুষের একটু কাটলে কিছু হয় না। এত আদিক্ষেতার কিছু নেই”

ঐন্দ্রিলা কঠিন চোখে চাইলো তার দিকে। কিন্তু অভ্র নির্লীপ্ত। পুরুষমানুষের রক্ত একটু ঝরলে কিছু হয় না। রক্ত না ঝরলে তার পুরুষত্ব প্রমাণ হবে কি করে?

এদিকে নীলাদ্রি ঘুষি খেলেও তামাটে মুখে সেই দাগ স্পষ্ট নয়। হ্যা, তবে রাতে গায়ে ব্যাথা উঠেছিলো। মনে হচ্ছিলো একশো ফোঁড়ার ব্যাথা। আজীবনে কোনোদিন মারপিট না করার কুফল বুঝি এটা। রাতে সাবেরা হলুদ মিশিয়ে দুধ বানিয়ে দিয়েছিলো। সেই দুধ খেয়ে পরদিন বেলা বারোটায় উঠেছে। সালাম সাহেব ডাইনিং টেবিলে পেপার হাতে কঠিন মুখে বসে ছিলেন। সরকার পতনের দিন তার মিলের গেট খুলে নিয়ে গেছে কেউ। এতো কিছু ছেড়ে লোহার গেট? এতো চুরির সর্বোচ্চ অবমাননা। চুরি করতে হবে সরকারের মতো থাকে থাকে লাখ কোটি টাকা হাপিস কেউ টিকি ধরতে পারবে না। অথচ তেমন কিছু না সালাম সাহেবের তেলের মিলের লোহার গেট নিয়ে পালিয়েছে। পুলিশে কমপ্লেইন করার সুযোগ হচ্ছে না। এখনো এখানের থানার অসি জয়েন করেন নি। এসব চিন্তা তো আছেই এরমধ্যে নীলাদ্রি বিয়ের সংবাদটা একেবারে বদহজম করিয়ে দিয়েছে। সকাল থেকে ঘনঘন তার বাথরুমে যেতে হচ্ছে। কিছুই যেনো সহ্য করতে পারছে না পেট। তার মুখখানা আরোও কঠিন হলো যখন দেখলো নীলাদ্রি ভোঁতা মুখে ঘর থেকে বেরিয়েছে। তার মুখ খানা দেখে মনে হলো সকাল সকাল সালাম সাহেবের ছাগল জোড়া মনে হয় তার মুখের উপর একনম্বর করে দিয়েছে। এটা একটা তৃপ্তির বিষয় হতে পারে। সালাম সাহেব গলা গম্ভীর করে শুধালেন,
“মেয়ের বাড়ি কবে যাচ্ছি?”
“তোমাদের বউ মা আমার ফোন ধরছে না। মনে হয় রেগে আছে। আমরা দু/তিনদিন পর যাব। আগে ওর রাগ ভাঙ্গাতে হবে”
“তুমি সত্যি করে বলো তো, তুমি কি প্রেম করছো?”
“ছিঃ ছিঃ কি বলেন এগুলো সালাম সাহেব? আপনার মতো বৃদ্ধের মুখে এমন অশোভনীয় শব্দ আসাও গর্হিত অপরাধ। দিনদিন বয়সের সাথে সাথে আপনার মাথায় ব্যামো হচ্ছে। সেটাকে ঠিক করা প্রয়োজন”

নীলাদ্রির এমন ভাষ্যে বেকুবের মত চেয়ে রইলেন সালাম সাহেব। দূর্বৃত্তরা তার মিলের লোহার গেটের পরিবর্তে নীলাদ্রিকে ডাকাতি করে নিয়ে গেলে বোধ হয় একটু শান্তি পেতেন।

********

সালাদের জন্য সবজি কাটা হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে কোথা থেকে মানুষের আমদানি হয়েছে। যা আগে পয়ত্রিশ জন ছিলো সেটা এখন পঁচাশি জন্য। নতুন অনুপ্রবেশদের জন্য রাত দশটার দিকে বাজার থেকে আবার বাজার করে এনেছেন সালাম এবং ইদ্রিশ সাহেব। কমতি থাকা যাবে না। আইটেম পরিবর্তন হয়েছে। এখন পোলাও, মুরগীর লটপটি, রোস্ট এবং ডিমভুনার আয়োজন হচ্ছে। সালাদ কাটার দায়িত্ব পড়েছে ঐন্দ্রিলা এবং পিউয়ের উপর। দুশো শশা ছিলতে ছিলতে বেকায়দা অবস্থা ঐন্দ্রিলার। পিঠ ধরে আসছে। আবার ক্ষণে ক্ষণে চোখ যাচ্ছে তৃষা এবং অভ্রের দিকে। নির্লজ্জের মতো ছেলেটা হাসছে তার প্রাক্তনের সাথে। বেহায়া, চরিত্রহীন। বিড়বিড় করে বললো,
“ইচ্ছে করছে এই পিলার দিয়ে মুখটাই পিল করে দিতে”
“লাভ নেই। বেডামানুষ মানেই মাথার যন্ত্রণা”

পিউ মনমরা হয়ে উত্তর দিল। ঐন্দ্রিলা থেমে গেলো। পিউয়ের মন ভালো নেই। খুব বড় কিছু না হলে পিউ নামক নারীর মন খারাপ হয় না। সে ছোট ছোট বিষয়ে মন খারাপ করে না। গায়েই মাখায় না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঘটনা সুবিশাল। কিন্তু ঐন্দ্রিলা জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছিলো না। পিউয়ের বিষন্ন চোখজোড়া তাকে খুব ভাবাচ্ছিলো। এখন সুযোগ পেয়েছে। তাই ফট করেই শুধালো,
“কেনো তোর পুরুষ আবার কি করেছে?”

পিউয়ের হাত থামলো। হাতের ছুরিটা থেমে গেলো। কাঠের তক্তায় কাটার জন্য রাখা টমেটোটা গড়িয়ে গেলো। পিউয়ের মনের ভেতর হাজার কথা থাকলেও মেয়েটা তার প্রকাশ্যে আনে না। এটা তার বিশেষত্ব। যে সবার দুঃখ ছুয়ে দিবে কিন্তু তার দুঃখ কেউ দেখবে না, ছুবে না। কিন্তু ঐন্দ্রিলা আজ ছাড় দিবে না। বন্ধুত্বের ঋণ শোধ করতে নেই, কিন্তু বিনিময় তো করাই যায়। সে পিলার রেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো পিউকে। সেই উষ্ণ আলিঙ্গনে কিছু ছিলো যেন। নিজস্ব সেই বানোয়াট দেওয়াল নরম হলো। অতঃপর গলতে লাগলো। মনের ভেতরে খুব আগলে রাখা টুকরো কথাগুলো অশ্রুর রুপে গলে পড়তে লাগলো। একটা সময় কান্নার বেগ বাড়লো। মুখ লুকিয়ে ফেললো পিউ। ঐন্দ্রিলা বিনাবাক্যে বান্ধবীর অশ্রু মুছলো। প্রশ্ন করলো না। তার অশ্রু যে সামলেছে সে এখন কাঁদছে। এখন নরম হওয়া বারণ। নিষিদ্ধ।

*******

পিউয়ের চোখ মুখ ফুলে গেছে। ঠান্ডা মোজো খুলে দিল ঐন্দ্রিলা। সে এক ঢোকে আড়াই মিলির বোতল ফাঁকা করে দিল। তারপর তীক্ষ্ণ চাকু বেরহমের মতো টমেটোর উপর চালাতে চালাতে বললো,
“পুরুষ মানেই ব্যাঙ্গের ছাতা। ঘটে দুআনার বুদ্ধি নেই শুধু দাদাগিরি”
“সেটার চাক্ষুস প্রমান আমার স্বামী”

বলেই শসার উপর ক্ষিপ্র চাকু চালালো ঐন্দ্রিলা। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অভ্রের দিকে। সেই কখন থেকে সে তৃষার সাথেই চিপকে আছে। এতো অসহনীয় কেনো এই পুরুষ? এদিকে তৃষ্ণা শুকনো ঢোক গিলে অভ্রকে বললো,
“তোর বউ আমাদের দেখছে”

কথাটা শুনে বিভ্রান্ত হলো না অভ্র। বরং যেনো তাকে অধিকতর পুলকিত দেখালো। সেই পুলক ঠিকরে উঠলো গাড় নয়নে। নির্ভার স্বরে উত্তর দিল,
“জানি”
“জানিস যখন জেনেবুঝে আমাকে আগুনে ফেলছিস কেনো শুনি?”
“আগুনে ফেলছি না বল ঘুমন্ত সিংহীর মুখে ফেলছি। শিকারের গন্ধে যদি সে একটু জেগে উঠে!”

তৃষা কটমটিয়ে তাকালো। অভ্রের মুখে নির্লজ্জ হাসি। তৃষা দাঁত পিষে বললো,
“তোর মত হারামী পৃথিবীতে একটাই আছে”
“কিন্তু সেটা বুকড হয়ে গেছে তাও আমার দশটা না, পাঁচটা না, একটামাত্র বউয়ের জন্য। তোর কপালে আমি নেই”
“আল্লাহর অশেষ রহমত”

তার কথা শুনে মেকি হাসির রোল উঠলো অভ্রের মুখে। তার হাসি দেখে তৃষা গায়ের জোরে চিমটি কাটলো অভ্রের হাতে। এই চিমটি অভ্রের কাছে পিপড়ের কাঁমড়। অথচ এমন একটা ভাব নিলো যেনো তার হাত খসে গেছে। “আহ” বলে শব্দ করলো। হাত এগিয়ে বললো,
“ফু দে”
“হ্যা?”
“যা বলছি কর”
“অভ্র, ভালো হবে না”
“এমনেও জীবনে খুব ভালো কিছু হচ্ছে না। খরা চলে। তোর ফু তে যদি বৃষ্টি হয়”

তৃষা দেখিয়ে দেখিয়ে ফু দিল। যাকে দেখানোর জন্য নাটক সে ঠিক দেখলো। কাজও দিলও। রাগের চোটে হাতের উপর ছুরি চালিয়ে দিল। ফলে আঙ্গুল কেটে গেলো মনের অশান্তিতে। সে নিয়ে ছোটখাটো হট্টগোল হলো। কানন ছুটে এলো। সাবেরা ব্যাস্ত হলো। যতই হোক মেয়ে তো তার আমড়া কাঠের ঢেকি। কানন রাগী স্বরে বললো,
“তোমার শসা কাটতে হবে না। আমি কেটে দিব। তুমি চলো ঘরে”

বলে বৌমাকে নিয়ে গেলো বাসায়। ঔষধ লাগাতে হবে। বেশ গাঢ় না হলেও কেটেছে ভালোভাবেই। অভ্র নির্বিকার চোখে দেখলো সবটা। তৃষা অবাক স্বরে শুধালো,
“তুই এভাবে আঙ্গুলে আঙ্গুল ঘষে দেখবি?”
“হ্যা”
“মানে কি?”
“তুই বুঝবি না। অভাব না তৈরি হলে প্রয়োজন বুঝে না মানুষ। তাই অভাব টের পাওয়ানোটাই বেশি জরুরি”

তৃষা হাসলো। বিদ্রুপ টেনে বললো,
“আমার কথা তাহলে সত্যি হলো। আমি বলতাম না তুই ঐন্দ্রিলাকে ভালোবাসিস। তখন তো হেসে উড়িয়ে দিতি”

অভ্র মুখে বিরক্তি টেনে বলল,
“তোদের মেয়েদের কাছে ভালোবাসা, প্রেম বাদে আর কোনো কিছু নেই নাকি? কান পঁচিয়ে দিলি তো”
“তাহলে তুই ই ব্যাখ্যা দে না, ঐন্দ্রিলার প্রতি তোর অনুভূতিটার মর্মার্থ কি? এত আকর্ষণ, অবসেশন কেনো?”

অভ্র উত্তর দিল না। সে এড়িয়ে গেলো। অভ্রের এমন আচারণের সাথে খুব পরিচিত তৃষা। তাদের মধ্যে খুব দহরম মহরম সম্পর্ক নেই। তবে একটা সময় কিছু ছিলো। তৃষা মত্ত ছিলো এই ঠোঁট কাটা, অসভ্য, অভদ্র ছেলেটার জন্য। হয়তো সুদর্শন ছিলো বিধায়, হয়তো জনপ্রিয় ছিলো বিধায় অথবা তার ব্যাক্তিত্ব আকর্ষণ করতো। অপক্ক বয়সের এই মোহের কারণ নিয়ে কখনো মাথা ঘামায় নি। কারণ এই মোহ দীর্ঘস্থায়ী ছিলো না। তার স্থায়ীত্বকাল ছিলো ছয়মাসেরও কম। খুব দ্রুতই বুঝে গিয়েছিলো এই অভদ্র ছেলেটি একটি রাগী মেয়ের লালচে রাগে নিজেকে অর্পন করেছে। তার অশ্রুতে নিজেকে গুম করেছে। নারী সব সহ্য করলেও একটা বিষয় সহ্য করতে পারে না। নিজের পছন্দের পুরুষের চোখে অন্যের প্রতিবিম্ব তাকে পুড়ায়, কাঁদায়। নিঃস্ব করে। তৃষা নিঃস্ব হতে চায় নি। তাই নিজেকে সরিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের মনে হলো। অঘোষিত ব্রেকাপ হলো তৃষা এবং অভ্রের প্রেমের। প্রেম তো ছিলো না। ছিলো একটা কুহেলিকা। এর মাঝেই তীব্র চিৎকার কানে আসে। চিৎকারটি অভ্রদের বাড়ি থেকে। এবং গলাটা পরিচিত। ঐন্দ্রিলা চিৎকার করছে। সবাই তা শুনতেই ছুটে গেলো। চিৎকার অনুসরণ করে অভ্রের ঘরে ঢুকতেই একটা হ্যাংলা, কালো, বাটি সাট চুলের চোরকে দেখা গেলো। সে ঐন্দ্রিলার গলায় ছু’রি ধরেছে। বলছে,
“এগুলেই চালিয়ে দেব”

অভ্রের মুখে কাঠিন্য ফুটে উঠলো। ঐন্দ্রিলার চোখে মুখে ভীতি। চোখ টলমল করছে। তাদের চোখাচোখি হলো ক্ষণ সময়ের জন্য। সেই দৃষ্টিতে সাহস ছিলো নাকি সান্ত্বনা বোঝা গেলো না। এমন দৃশ্য সবার মনেই একটা আতঙ্কের সৃষ্টি করলো। নীলাদ্রি বলল,
“আপনি তো নিজেই কাঁপছেন। ছুরি নামান, আসুন আমরা কথা বলি”
“আপনাদের সাথে কোনো কথা নাই। আগাইলেই খতম”

চোরের গা কাঁপছে। বিল্লাল কিছু একটা বললো অভ্রকে। অভ্র মাথা নাড়ালো। অন্য সময় হলে সে এক থাবা দিয়ে তাকে কাত করে ফেলতে পারতো। কিন্তু এখন সম্ভব নয়। কারণ সে ছুরিটা ঐন্দ্রিলার গলায় ধরে রেখেছে। এগুলে হিতে বিপরীত হবে। চোরটিকে ধরার পূর্বে ঐন্দ্রিলার নিরাপত্তার প্রাধান্য বেশি। নীলাদ্রি চোরকে শান্ত করতে চাইলেন,
“দেখেন ভাই, আপনি পালাতে পারবেন না। তাই বোকামি করবেন না। আমরা এখানে পিকনিক করছি। আপনি একটা রোস্ট বেশি খাইয়েন। কিন্তু ছুরি নামান”

চোর ভয়ে ঘামছে। তবুও সে ছুরি নামাচ্ছে না। তার ঠিক পেছনেই অভ্রের ঘরের বারান্দা। বারান্দার থাইটুকু খোলা। চোরটি পিঠ করে থাকায় তার পেছনে কেউ আসলে সে টের পাবে না। সেই সুযোগটাই নিলো বিল্লাল। পাইপের মাধ্যম্যে বারান্দায় চড়লো। তারপর ঠিক পেছন থেকে খপ করে ধরলো চোরকে। প্রথমে হাতে সজোরে আঘাত দিয়ে তার ছুরি ফেলে দিল। ফলে মুক্তি পেয়ে গেলো ঐন্দ্রিলা। সে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো অভ্রকে। অভ্রের প্রশস্থ বুকের সাথে মিশে গেলো কম্পিত পেলব দেহ। অভ্র মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে ধীর গলায় বললো,
“কিচ্ছু হয় নি, কিচ্ছু হয় নি”

কিন্তু ঐন্দ্রিলার ভয় কাটলো না। সে রীতিমত ফুপাচ্ছে। অভ্র গম্ভীর স্বরে বললো,
“তোমরা সবাই চলে যাও। আমি আছি ঐন্দ্রির সাথে”

ঐন্দ্রিলা এখনো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে অভ্রকে। চোরটি তাদের ঘরেই ঘাপটি মেরেছিলো। নিজের ঘরে এসে আলো জ্বালাতেই সে বেরিয়ে এলো। আলমারীর তালা খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলো সে। ঠিক সেই সময় ঐন্দ্রিলার আগমন ঘটে। নিজেকে বাঁচাতে পুটলি থেকে ছুঁরি বের করে। কিন্তু ততসময়ে চিৎকার করে সকলকে জানান দেয় ঐন্দ্রিলা। সবাই ছুটে আসলেই চোর ঐন্দ্রিলার গলায় ছুরি ধরে। যদিও তার মাঝে হিংস্রতা ছিলো না। কিন্তু ঘটনাটি ভীত করেছে ঐন্দ্রিলাকে। অভ্র ঐন্দ্রিলাকে বসালো। পানি খাওয়ালো। তার গাল ভেজা। ভয়ে মেয়েটা কেঁদেছে। অভ্র চলে যেতে নিলেই সে হাত ধরে বসে। কাঁপা স্বরে শুধায়,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“দরজা আটকে আসি?”
“না দরকার নেই। এখানেই থাক”

অভ্র মেনে নিলো। পাশে বসলো তার। বিদ্রুপ টেনে বললো,
“ভয় লাগছে নাকি?”

ঐন্দ্রিলা উত্তর দিল না। তার ভয় লাগছে। কিন্তু অভ্রের উপস্থিতিতে সেই ভয়টা খুব গাঢ় মনে হচ্ছে না। আরোও একটি কারণে সে অভ্রকে বাহিরে যেতে দিতে চায় না। সেটা অবশ্য মুখে বলা যাবে না। সেটা থাকুক মনের মাঝে।

*********

চোর বেশ মার খেয়েছে। অভ্র মারে নি। কারণ সে মারলে মরে যাবার সম্ভাবনা ছিলো। তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। নীলাদ্রি তার পাশে বসা। সে একটি কাগজে লিখছে। তারপর শুধালো,
“তাহলে বলুন, প্রথম কোথায় চুরি করেছিলেন?”
“তহন আমার বয়স সাত বছর। পেডে খানা নাই। কেউ মুখে ভাত তোলার নাই। লোকাল বাসে আসিলাম, টিকিডের পয়সা আছিলো না। তখন ওস্তাদের লগে পরিচয়। নিখুঁত হাতের কাম। কন্ডাকডরের পকেট থেইক্যা মানিব্যাগ হাপিস। হইলাম শেষ্য। ওহান দিয়া হাতেখড়ি। পত্থম চুরি তার থেকে সাত মাসের মধ্যে। ব্লেড দিয়ে হালকা চাশা দিয়া পকেট কাটতে হবে যেনো চামড়ায় আছড় না লাগে। ভিড়ের মধ্যি করতে হয়। সময় এক মিনিটেরও কম। ট্রেনিং নিছি সাতমাস ধইর‍্যা। প্রথম মার্কেটে নামছি শায়েদাবাদে। প্রথম হাতে দশটা মানি ব্যাগ। মোট মিল্লা পঁচিশ হাজার টেকা”
“বাম্পার ফলন। তো ঢাকা থেকে এখানে কেনো?”
“ভাগ্যের দোষ ভাইজান। আসলে কি হইছে বলেন তো……”

চোর তার কাহিনী শুরু করলো, নিলাদ্রি লিখছে। মাঝে মাঝে চোরকে মোজো খাওয়াচ্ছে। চোরের সাথে এরপূর্বে তার দেখা হয় নি। তাই সাক্ষাৎকার নেবার সুযোগ হয় নি। এই সুযোগ এখন হাত ছাড়া করতে চাইছে না। এর মাঝেই পিউ এসে দাঁড়ালো। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“নীলাদ্রি ভাই, রান্না শেষ। আন্টি খেতে ডাকে”

বলে পিউ যেতে ধরলেই খপ করে তার হাত ধরলো নীলাদ্রি। পিউ হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
“হাত ছাড়ুন নীলাদ্রি ভাই”

পিউয়ের কথার উত্তরস্বরুপ নীলাদ্রি বললো,
“আমি খাজুরে আলাপের জন্য হাত ধরি নি, অতিগুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিতে হাত ধরেছি। আগামীপরশু বিকালে বাসায় থাকবা। সুন্দর একটা শাড়ি পড়বা। পারলে নীল রঙ্গের শাড়ি পড়বা। হালকা সাজবা, শুধু কাজল আর লিপজেল হলেই ভালো। টিপ দিবা না। আমার অপছন্দ”
“আপনার পছন্দমত কেনো সাজবো?”
“কারণ আমি তোমাকে দেখতে আসবো”…………………

চলবে

(বইটই তে চলছে ই-বুক মেলা। EBOOKMELA প্রমোকোড ব্যাবহারে আমার সব বই এ পেয়ে যাবেন ২৫% ছাড়। ই-বুক মেলার প্রকাশিত পরানে লাগিলো নেশা মাত্র ৪২ টাকায়, মাত্র ৪৫ টাকায় চাঁদ বলে হাতটি ধরো, ৩৮ টাকায় বাদলা দিনের প্রথম বসন্ত, ৩০ টাকায় অনুরক্ত ক্যানভাস আর আমার প্রথম বই তন্দ্রাবিলাসী মাত্র ৬৪ টাকায়। দেরি না করে এখনই পড়ে নিন সব বই। মিস করলেই মিস)

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here