#মনশহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
#২৬তম_পর্ব
“ওটা অভ্র না?”
অভ্রের নাম শুনতেই তড়াক করে চাইলো ঐন্দ্রিলা। সাথে সাথেই বিষন্নতা ছেয়ে গেলো হৃদয়। হ্যা সেই রেস্টুরেন্টের কাঁচের ওপারের মানুষটি অভ্র। তার পাশে একজন রমনী। তারা হাসছে। কাঁচের মোটা পরদ ভেদ করে রমনীর মুখখানা স্পষ্টত দেখা গেল না বটে কিন্তু অভ্রের হাস্যোজ্জ্বল, মুখখানা যেনো দৃষ্টি এড়ালো না। ঐন্দ্রিলার মুখখানা ম্লান হয়ে গেলো। যে শুন্যতাকে স্মরণ করতে চাইছিলো না সেই শুন্যতাই আবার নিজের উপস্থিতি প্রকাশ করলো। কে এই রমনী? তার সাথে দিনে দুপুরে রেস্টুরেন্টে বসে হাসিঠাট্টার কি মানে? দুশ্চরিত্রতা কি এখন প্রকাশ করা খুব প্রয়োজন? অভ্র কি একটিবারও ভাবলো না তার কথা? বাড়িতে বউ থাকা সত্ত্বেও বাহিরে কোনো নারীর সাথে ঘনিষ্ঠতাকে দুশ্চরিত্রতা ছাড়া আর কোনো উপাধি কি দেওয়া যায়? জানা নেই ঐন্দ্রিলার. ম্লান মুখখানা রাগে কিঞ্চিত শক্ত হয়ে গেলো।নিন্মোষ্ঠ কাঁমড়ে ধরলো সে। ক্ষত বিক্ষত হলো নরম নরম ঠোঁট। বান্ধবীর শক্ত মুখখানা দৃষ্টির আড়াল হলো না পিউয়ের। নিজের ভুল কাজটা টের পেলো ভালোভাবে। জোর করে হেসে বললো,
“কি গরমটাই না পড়েছে! চল এখান থেকে দাঁড়িয়ে কাজ নেই”
ঐন্দ্রিলার হাতখানা ধরে টানতে গেলো পিউ। কিন্তু এক ইঞ্চি নড়লো না ঐন্দ্রিলা। বরং বললো,
“কফি খাবি? কোল্ড কফি? আমার খেতে ইচ্ছে করছে”
“এই মাঝরাস্তায় কফি পাবি কই?”
“কেনো রেস্টুরেন্ট কি মরে গেছে!”
কথাটা বলেই পা বাড়ালো সেই রেস্টুরেন্টের দিকে। তার পায়ের গতি ক্ষিপ্র। পিউ প্রায় ছুটে টেনে ধরলো ঐন্দ্রিলাকে। উদ্বিগ্ন স্বরে শুধালো,
“পাগল হয়ে গেলি নাকি? ওদিক যাচ্ছিস কেনো?”
“কেনো? দিনে দুপুরে কেউ নির্লজ্জের মতো অন্য মেয়ের সাথে বসে আছে বলে আমি সেইখানে যেতে পারবো না? ও কি রেস্টুরেন্ট কিনে রেখেছে”
“বোন আমার, সিন ক্রিয়েট করিস না”
“তুই কি যাবি?”
কঠিন স্বরের সামনে হাটু ভেঙ্গে পড়তে হলো পিউয়ের। ঐন্দ্রিলার জেদ ভালো করেই জানা। রেস্টুরেন্টে একটা কান্ড না ঘটাতে মেয়েটির শান্তি নেই। পিউয়ের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। জার্মান আর বান্দরবানের জোড়া পাগলের অত্যাচার থেকে দুদন্ড মুক্তি চেয়েছিলো। ভুল হয়ে গেছে। সাংঘাতিক ভুল। পিউয়ের রাগ হয় না। কিন্তু আজ হচ্ছে। প্রচন্ড হচ্ছে তাও অভ্রের উপর। বাড়িতে টিকিং বোম্ব ফেলে সে বাহিরে হেসে খেলে বেড়ানোর দুঃসাহস দেখায় কি করে?
রেস্টুরেন্টটা একেবারে রাস্তার ধারে। নতুন ওপেনিং হয়েছে। চাকচিক্যভাবটা বেশ ঠিকরে উঠছে। মডার্ণ ভাষায় “ভাইব আছে”। পিউয়ের চোখ ঘুরে ঘুরে দেখছে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে প্রকাশ পাওয়া রেস্টুরেন্টের ইন্টেরিয়ার ডিজাইন। আধুনিকতার প্রকাশ পেলেও একটু বাঙ্গালী ছোঁয়া আছে। কিন্তু ঐন্দ্রিলার নজর সেখানে নেই। সে দেখছে অভ্রকে। তারা বসেছে ঠিক অভ্রের দু টেবিল পর। যেখান থেকে তাদের দেখা যায়। কিন্তু আফসোস হচ্ছে কথা শোনা যাচ্ছে না। শুধু মেয়েটির হাসির কলতান। যা রাগে গা জ্বলিয়ে দিচ্ছে। কি কথা বলছে? হঠাৎ চোখ আটকালো অভ্রের চোখে। সে তাকিয়ে রয়েছে ঐন্দ্রিলার দিকে। শান্ত দৃষ্টি। ঘাড়টা একটু হেলিয়ে ভ্রু একত্র করে যেনো খুতিয়ে দেখলো অভ্র। ব্যাস গলা শুকিয়ে গেলো ঐন্দ্রিলার। সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো। মনে মনে নিজেকে বকলো এখানে আসার জন্য। তীব্রভাবে চেষ্টা করলো যেনো সে অভ্রকে দেখেই নি। কি নিঁখুত অভিনয়। অভ্রের হাসি প্রসস্থ হলো। সে তোয়াক্কা না করেই তার সামনে বসা রমনীর দিকে কিঞ্চিত ঝুকে গেলো। কিছু বললো একেবারে ধীর স্বরে। সাথে সাথেই রমনী পিছনে ঘুরলো। সাথে সাথেই ঐন্দ্রিলা মেনু দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। পিউ ঐন্দ্রিলার এমন কাজে শুধালো,
“মেনু কি মুখস্থ করছিস নাকি?”
“দেখে ফেলেছে আমাদের”
“হ্যা?”
“অভ্র দেখে ফেলেছে”
পিউ আড়চোখে দেখার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। ভীত স্বরে বলল,
“কি করবি এখন?”
“জানি না”
“বলেছিলাম এখানে না আসি। কি দরকার ওদের ফলো করার। মান সম্মান আর রাখলি না। এখন মেন্যু কার্ড দিয়ে মুখ লুকানো লাগছে।”
পিউয়ের কথাটা অহমিকায় লাগলো। মেনুকার্ড নামিয়ে বললো,
“কেনো রে রেস্টুরেন্ট কি আমার শ্বশুরের যে শুধু ওই বদের হাড়িটাই টাল্টু ফাল্টু করতে আসতে পারবে? কোল্ড কফি খেতে এসেছি। কোল্ড কফি খেয়েই যাবো”
বলেই একটা ওয়েটারকে ডাকলো সে। অর্ডার করলো। ভেবেছিলো অভ্র হয়তো উঠে আসবে কিন্তু এমন কিছু হলো না। সে কথা বলায় মত্ত। ঐন্দ্রিলার অশান্তি লাগছে। দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। তাও চিন্তা যাচ্ছে না। মেয়েটার পিঠ তাদের দিকে। তাই তার মুখখানা দেখার উপায় নেই। যখন পেছনে ফিরলো তখন ঐন্দ্রিলা ভয়ে মুখের সামনে কার্ড ধরে রেখেছিলো। তাই চাইলেও দেখতে পারে নি। তবে পিউ কিছু ভাবছে। সে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ। সে কিছু চিন্তা করলেই ভ্রু কুচকে ফেলে। কপালে ভাঁজ ফেলে। এক নজরে অন্যমনস্ক হয়ে চেয়ে থাকে। তাকে ভাবতে দেখে ঐন্দ্রিলা বললো,
“আমেরিকা আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে আম্মা। তারা এখন আমাদের সেন্ট মার্টিনে দখলও জমিয়ে দিবে। তুই চিন্তা করেও কিছু উদ্ধার হবে না”
“চুপ কর। আমি ভাবছি অন্য কথা”
“কি?”
“মেয়েটাকে আমার চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেনো দেখেছি! মনে হচ্ছে অভ্রের সাথেই দেখেছি। কিন্তু মনে পড়ছে না। তোর মনে পড়ছে”
ঐন্দ্রিলা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“মহারানীর পিঠ দেখে আমার কারোর কথা মনে পড়ছে না রে”
“সত্যি বলছি”
ঐন্দ্রিলার মাথা গরম হয়ে আছে। এখন একটু মুখ ধুতে হবে। কোল্ড কফি চলে এসেছে টেবিলে। পিউ এখনো ভাবছে। তাই ঐন্দ্রিলা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“তুই ভাব, ভেবে দেশ স্বাধীন কর। আমি আসছি”
বলেই ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো সে।
পানির ঝাপটা একের পর এক মুখে দিলো ঐন্দ্রিলা। আয়নায় নিজেকে দেখলো। সে এখানে কি করছে! কেনো পিছু নিয়েছে অভ্রর! অভ্রর প্রতি এতো আগ্রহ কেনো! মস্তিষ্ক তাকে স্মরণ করিয়ে দিলো অভ্র তার কেউ নয়। তারা কেবল ই একটা কুহেলিকার আস্তরণে একে অপরের সাথে জড়িত। অভ্র যদি অন্য কারোর সাথে সুখী হতে চায় এখানে তো দোষের কিছু নয়। কথাটা ভাবতেই শ্রাবণের মেঘ জমলো মুখবিবরে। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে পেছনে ফিরতেই দেখলো ওয়াশরুমের দরজার কাছে বুকে দু হাত বেঁধে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি নিরুত্তাপ। ঐন্দ্রিলা কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। অভ্র তাকে এড়িয়ে কল ছেড়ে হাত ধুলো। খুব দায়সারাভাবে শুধালো,
“তোর কলেজের ক্লাসগুলো এখন বুঝি রেস্টুরেন্টে হয়?”
অভ্রর প্রশ্নে মেজাজ তেতে উঠলো, ঐন্দ্রিলা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লো,
“কেনো? রেস্টুরেন্ট কি কারোর নিজস্ব সম্পত্তি যে এখানে আসা যাবে না? ক্লাস নেই তাই ঘুরতে এসেছি। অন্য কারোর জন্য নির্লজ্জতামি তো আর করছি না”
অভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ঐন্দ্রিলা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকলো। অভ্র কিছুটা এগিয়ে এসে তার কানে মুখ লাগিয়ে বললো,
“কেন? জ্বলছে বুঝি?”
অভ্রর কথাটা শোনা মাত্র বিদ্রুপ টেনে উত্তর দিলো,
“বয়েই গেছে। তুই একজন কেন দশজনকে নিয়ে ঘুর। আমার কি! যত্তসব”
“মনে থাকে যেনো”
বলেই হাত মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো অভ্র। ঐন্দ্রিলা কিছুক্ষণ দাঁত পিষে দাঁড়িয়ে রইলো। ইচ্ছে করছে হ্যান্ডওয়াশের বোতলটা দিয়েই এই পুরুষের মাথা দু ভাগ করে দিতে। টেবিলের কাছে আসতেই দেখলো। রমনী বা অভ্র কেউ নেই সেখানে। ততসময়ে চিন্তাবিদের মুখ উজ্জ্বল। পিউ অধৈর্য্য কন্ঠে বললো,
“মনে পড়েছে, মেয়েটা কে”
“কে?”
“তৃষা”
“কোন তৃষা?”
“আরে স্কুলে থাকতে অভ্রের একটা ন্যাকাপ্রেমিকা ছিলো না? নাকি নাকি সুরে কথা বলতো”
“যাহ! ও চিকনে হ্যাংলা মেয়েটা? ওর এতো বড় চুল ছিলো নাকি?”
পিউ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“আট নয় বছরে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার চলে এসেছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আর তুই আছিস চুল নিয়ে? কিন্তু আমার প্রশ্ন নেকু তৃষার সাথে এখন অভ্রর কি সম্পর্ক”
ঐন্দ্রিলা মুখ শক্ত করে বললো,
“জাহান্নামে যাক সে। আমি কি তাতে? তুই আর কখনো ওকে নিয়ে আগ্রহ দেখাবি না। নয়তো তোর আর আমার বন্ধুত্ব থাকবে না”
পিউ বেকুবের মতো চেয়ে রইলো! ও কখনো আগ্রহ দেখালো? ওকে তো ঐন্দ্রিলা টেনে নিয়ে আসলো। এই ভাইবোনের মাথায় খুব বড় ধরনের সমস্যা আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
****
সালাম সাহেব বসে আছেন পায়ের উপর পা তুলে। সামনে বাদশাহ বর্ণলিপি খুলে বসে আছে। ছাগলযুগলকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। নীলাদ্রি ছাগলটা বেশি কথা বলে না। প্রশ্ন করলে ভদ্র বাচ্চার মতো বলে “ম্যা”। যা কিছুটা আশার বানী। কিন্তু হ্যাপি নামক ছাগলটা খুব জ্বালায়। সে কথা শুনে না। তাকে যতবার প্রশ্ন করা হয় সে মুখখানা অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখে। সালাম সাহেব ছাগলদের নিয়ে খুব চিন্তিত। চিন্তায় চিন্তায় সকালের চাও খান নি। চা খেলে আজকাল গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হচ্ছে। বাদশাহ মুখ কালো করে বললো,
” স্যার, ছাগলগুলো অবাধ্য। ওদের শাসনের প্রয়োজন। কথা শুনছে না”
“এখন কি তুমি ছাগলদের কান ধরে উঠবস করাবে?”
বাদশাহ মুখ ঝুলালো। ছাগলগুলো কেনার পর থেকে জীবন ছাগলময় হয়ে গেছে। সে প্রশংসা কুড়াতে চেয়েছিলো। কিন্তু তা হয় নি। নীলাদ্রির কুকুর বেশ বুদ্ধিমতী কুকুর। তাকে যা বলা হয় একেবারে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। এদিকে ছাগলগুলো শুধু কাঠালপাতা খায়। আর পায়খানা করে। পায়খানাকে পায়খানা বলা যায় না। ইংরেজিতে পটি বলতে হয়। কারণ সালাম সাহেবের ছাগলযুগল উচ্চ শিক্ষিত। বাদশাহ আকাশের দিকে তাকালো। হাত উঁচু করলো, মনে মনে বললো,
“আল্লাহ, তুমি আমার মালিকের মাথায় বুদ্ধি দিও। বেচারা বুইড়া মানুষটা বিনা বুদ্ধিতেই মইরে যাবে”
সালাম সাহেব দেখলেন বাদশাহ মোনাজাত করছে। ফলে চোখ কুচকে শুধালেন,
“কি দোয়া করলি?”
“দোয়া বলতে হয় না জনাব। দোয়া বলে দিলে দোয়া কবুল হয় না”
“হো তোমাকে বলছে”
“আমার আম্মা বলেছে”
“হইছে কথা কম। আজকে ছাগলদের ইংরেজী বর্ণমালা শেখানো শুরু কর”
বাদশাহ হতাশ মুখে ঘাড় নাড়ালো। আবার জোরে জোরে বললো,
“বলো হ্যাপি, এ ফর আপেল”
“এপেল”
“স্যার, আপেল কন আর এপেল ছাগল শুধু ম্যা ই বলবে”
“গাধা কোথাকার”
“জ্বী আচ্ছা”
সালাম সাহেব তেতে উঠলেন। বাদশাহ ছেলেটা দিন দিন গাধা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় এতো গাধার আমদানী হচ্ছে যে একদিন তিনি নিজেও গাধা হয়ে যাবেন। কথা বলার পরিবর্তন “অহচি অহচি” করবেন। ইশ! কি বিভৎস দৃশ্য।
*****
পিউয়ের বাসার নিচে আহাশ দাঁড়িয়ে আছে। এতোটা সময় সে অপেক্ষা করছিলো পিউয়ের। পিউ সারাদিন রুদ্রমূর্তি ঐন্দ্রিলাকে সামলে সামলে ক্লান্ত সে। এখন বিছানায় হাত পা ছুড়ে ঘুমাতে পারলে যেনো শান্তি। গেটের কাছে আসতেই দেখলো আহাশ দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখজোড়া রক্তিম, চোখের নিচে কালি, মুখখানা মূর্ছানো। পিউয়ের সাথে মুখোমুখি হতেই বললো,
“পিউ আপু, তোমার কাছে কি আমার জন্য সময় হবে?”
আহাশের ভাঙ্গা গলা শুনতেই কিছুটা চমকে উঠলো পিউ। কিছু শুধানোর পূর্বেই তার হাতজোড়া নিজ আয়ত্ত্বে নিলো আহাশ। ব্যগ্র কাতর স্বরে বললো,
“না করো না প্লিজ!”
***
ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিক মাঠের একটি দোলনায় বসে রয়েছে পিউ। এই মাঠটি তার বাসা থেকে দুই রোড পরে। মানুষের উপস্থিতি এখানে বেশ। বাহিরের চায়ের দোকানে মানুষের ভিড়। অপোজিটে বড় একটি হাসপাতাল আছে। অধিকাংশ মানুষ ডাক্তার দেখিয়ে এখানে আসে দুদন্ড নিঃশ্বাস নিতে। হয়তো খুব বড় রোগ ধরা পড়েছে, হয়তো চিকিৎসার টাকা দিতে দিতে জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে। এখানের মানুষের গল্পগুলোই আলাদা। পিউ খেয়াল করলো একটি মেয়ে ক্ষণে ক্ষণে চোখ মুছছে। কে জানে কি তার গল্প। প্রতিটা মানুষ নিজের গল্পের টানাপোড়েনেই ক্লান্ত। আহাশ দুটো কাপ দিয়ে হাজির হলো। দুধ চা, স্বর ভাসছে। পিউ হেসে বললো,
“দুই লোকাল পানির চা খাবি?”
আহাশ উত্তর দিলো না। তার মুখখানা থমথমে। পিউয়ের পাশের দোলনায় বসলো সে। পিউ তার দিকে তাকিয়ে আছে, তার কথা শোনার জন্য। কিন্তু ছেলেটা চুপ। পিউ ঘাটালো না। অপেক্ষা করলো নীরবতা ভাঙ্গার। কিন্তু যখন ভাঙ্গলো তখন নিজেকে সামলাতে পারলো না। আহাশ তার সামনে হাটু গেড়ে বসলো। তার হাতজোড়া নিজের হাতে নিয়ে বললো,
“পিউ, তোমাকে আপু বলতে পারছি না আর। আমাকে ছোট ভাইয়ের বদলে পুরুষরুপে দেখতে পারো না তুমি? আমার ভালোবাসাটা গ্রহণ করা কি খুব কঠিন?”
পিউ বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে থাকে। আহাশ তাকে জড়িয়ে ধরে ধীর স্বরে বললো,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি পিউ। তোমার কল্পনার বাহিরে। আমাকে একটা সুযোগ দাও। কথা দিচ্ছি, অভিযোগের সুযোগ দিবো না”
পিউ স্তব্ধ তাকিয়ে রয়েছে। শুধু পিউ নয়। আরেকটি মানুষও স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রয়েছে। যে প্রতি সন্ধ্যায় তার আদুরে শকুনতলাকে হাটতে বের হয়……….
চলবে
(বইটই এর ই-বুক মেলা এখনো চলছে। আমার ই-বুক মেলার “পরানে লাগিলো নেশা” ই-বুকটি পড়েছেন তো? প্রমোকোড ব্যাবহারে কিন্তু বইটি মাত্র ৪২ টাকায় পেয়ে যাবেন)
মুশফিকা রহমান মৈথি