মনশহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ #২৭তম_পর্ব

0
37

#মনশহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
#২৭তম_পর্ব

পিউ স্তব্ধ তাকিয়ে রয়েছে। শুধু পিউ নয়। আরেকটি মানুষও স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রয়েছে। যে প্রতি সন্ধ্যায় তার আদুরে শকুনতলাকে হাটতে বের হয়। নীলাদ্রি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তার শান্ত অবয়ব হুট করেই অস্থির হয়ে উঠলো। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেলো সে মাঠের ভেতরে। দোলনার কাছে যেতেই তার হাত ছেড়ে দিলও শকুনতলার দড়ির বাধন। কলার ধরে আহাশকে ছাড়ালো পিউয়ের থেকে। আকস্মিক ঘটনায় পিউয়ের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আহাশ নিজেকে সামলাতে পারলো না। নীলাদ্রি গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। ফলে ছিটকে বেসামাল হয়ে ধুলোময় মাটিতে আছড়ে পড়লো আহাশ। হতবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো রুদ্রমূর্তির দিকে। নীলাদ্রির মুখশ্রী কঠিন হয়ে আছে। তার পরোয়া নেই কেউ তাদের দেখছে কি না। অগণিত চোখ একরাশ কৌতুহল নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলেও সে দায়সারা। পিউ হতভম্বের মত বসে রয়েছে। মস্তিষ্ক এখন আহাশের প্রেম নিবেদনে ধাতস্থ হতে পারে নি। তন্মধ্যেই নীলাদ্রির এমন রুপ।

নীলাদ্রি, বইপোকা মানুষ। বইপোকা মানুষের জগৎ বইয়ের মতো চমৎকার। তার মধ্যে গুনী গুনী ভাব আনার জন্য সে কখনো রাগ, ক্রোধ, হিংসা, বিদ্বেষকে স্থান দেয় নি। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে চেয়েছে। যেন তার চিত্ত শীতল থাকে। প্রকৃতির মাঝে শান্তি খোঁজা মানুষটি তার রাগে কাঁপছে। যে নীলাদ্রিকে ছেলেবেলা থেকে চিনে তার পক্ষে নীলাদ্রিকে এমন রুপে দেখা অবিশ্বাস্য। শেষ কবে এতটা রাগের বহিঃপ্রকাশ করেছিলো নীলাদ্রি? হয়তো নিজেও জানে না। সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। রাগ তার হৃদয়কে গ্রাস করছে। আহাশকে এখন নিজের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম শত্রু মনে হচ্ছে। যে শত্রুকে বধ করে ফেললেও বোধহয় আফসোস হবে না নীলাদ্রির। নীলাদ্রি তার বলিষ্ঠ হাতে কলার টেনে তুললো আহাশকে। গায়ের সকল শক্তি দিয়ে ঘুষি মারলো সে আহাশকে। ফলে নাক ফেটে গলগলিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করলো। আহাশও চুপ করে থাকার পাত্রটি নয়। নীলাদ্রি দ্বিতীয় আঘাত করার পূর্বেই সে প্রতিহত করলো তাকে। ফলে দুজনের মধ্যে বেশ কোন্দল লাগলো। দুজন দুজনকে মারছে। উপস্থিত সকলে চোখ ছেকছে এই দৃশ্যে। পিউ চুপ করে থাকতে পারলো না। কোনোমতে দুজনকে পৃথক করলো। চিৎকার করে শুধালো,
“কি করছেন নীলাদ্রী ভাই, ছাড়ুন ওকে?”

নীলাদ্রির মুখখানা শক্ত হয়ে আছে। ঠোঁট ফেটে গেছে। রক্ত গড়িয়ে সাদা টিশার্ট রক্তিম হয়ে গেছে। তবুও সে ফুসছে রাগে। যেনো এসবে কিচ্ছু যায় আসে না তার। এই মানুষটার অগ্নিরুপ কখনো দেখতে হবে কল্পনাতীত ছিলো পিউয়ের। তবুও সে সাহস করে দাঁড়িয়ে আছে দুই পুরুষের মধ্যিখানে৷ । আহাশ তার নাক মুছে নিলো। কালচিটে পড়েছে তার চোখের নিচে। কেটেও গেছে গালের কিছু অংশ। নীলাদ্রির শক্তির কাছে কিঞ্চিত দূর্বল হয়ে পড়লো যেনো সে। কিন্তু প্রেয়সীর সামনে সেই দূর্বলতা দেখাতে নারাজ সে। পরমুহূর্তেই শুনলো নীলাদ্রির অগ্নিঝরা কন্ঠ,
“ওর সাহস কি করে হলো তোমাকে ছোঁয়ার!”

পিউ নির্লিপ্ত স্বরে বলল,
“তো?”
“তো? ও তোমাকে ছুঁবে আর আমি বসে বসে দেখবো?”
“কেনো দেখতে পারবেন না নীলাদ্রি ভাই? আমি আপনার কে হই?”

পিউয়ের এমন প্রশ্নে থমকে গেলো নীলাদ্রি। গলায় আটকে এলো শব্দ। উত্তর নেই। সত্যিই তো তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। পিউ, ঐন্দ্রিলার বান্ধবী। আর নীলাদ্রি ঐন্দ্রিলার ভাই। ছোটবেলা থেকে একে অপরকে চিনে। এছাড়া কোনো সম্পর্ক কি আদোপি আছে? না নেই। পিউকে তার ভালো লাগে, মেয়েটি বুদ্ধিমতী, শান্ত; বিয়ে করার জন্য একেবারে উপযুক্ত ম্যাটেরিয়াল। এই মেয়েটির সাথে জীবন কাটানোর কথা চিন্তা করলে বিয়ে নামক প্রথাটিকে খুব একটা কঠিন লাগে না। কিন্তু পিউ তার প্রেমিকাও নয়। সেই অর্থে নীলাদ্রি পিউয়ের জীবনের একজন বহির্গত পুরুষ। নীলাদ্রিকে চুপ করে থাকতে দেখে পিউ তার সম্মুখে এগিয়ে এলো। কঠিন স্বরে বললো,
“আমি আপনার কে হই নীলাদ্রি ভাই? কেনো এতো অধিকারবোধ?”

নীলাদ্রি তখনো চুপ করে রইলো। সে যুক্তিতর্কের মানুষ। যুক্তিছাড়া কথা বলে না। পিউয়ের সাথে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক নেই। পিউ সম্পর্কে তার কেউ হয় না, কথাটা মিথ্যে নয়। অপরদিকে, তার এমন কাজও কাম্য নয়। সে একজন সতর্ক নাগরিক হয়ে রাস্তায় অভ্রের মতো লাফাঙ্গাগিরি করতে পারে না। সে নিজেও নিজেকে বুঝাতে পারছে না কেনো তার ভেতরটা পুড়ছে, জ্বলছে। এই জ্বলন ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। প্রেম নামক সস্তা অনুভূতিকে নীলাদ্রি সর্বদা অগ্রাহ্য করে এসেছে। তার তীব্র বিশ্বাস সে কখনো প্রেমে পড়তে পারে না। তবে কি সেই বিশ্বাস মিথ্যে? নীলাদ্রিকে বোকার মত মুখ বুজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিউয়ের মন বিষিয়ে উঠলো। রুদ্র কন্ঠে বলল,
“কি হলো চুপ করে আছেন কেনো নীলাদ্রি ভাই? উত্তর নেই নাকি? সর্বজ্ঞানী মানুষটির কাছে উত্তর নেই?”
“উত্তর নেই কারণ আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় নি। সবসময় অধিকারবোধের জন্য সম্পর্কের প্রয়োজন হয় না। আর সম্পর্ক এখন তৈরি হয় নি, তবে হতে কতক্ষণ। কিন্তু তাই বলে কেউ তোমাকে জড়িয়ে ধরবে সেটা আমাকে সহ্য করতে হবে?”
“হ্যা হবে, কারণ আপনি একটা বলদ। আপনার মত আহাম্মক আমি ইহজনমে দেখি নি নীলাদ্রি ভাই। আপনার দ্বারা কিচ্ছু সম্ভব নয়। কিচ্ছু না। তাই আপনি কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরলে সেটা আপনি শুধু দেখবেন। বুঝলেন?”

রাগ, ক্রোধ, যন্ত্রণায় ফেটে পড়লো পিউ। নীলাদ্রি অবাক নয়নে চেয়ে রইলো তার দিকে। কঠিন স্বরে বলল,
“না, আমি দেখতে পারবো না। যে মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই সেই মেয়েকে কেউ জড়িয়ে ধরবে আমার সহ্য হবে না। এক মিনিট, এই ছোকরার জড়িয়ে ধরায় তোমার সম্মতি ছিলো? ডন্ট সে তুমি এই ছোকরার সো কল্ড প্রেমে পড়েছো তুমি?”
“কিহ?”

পিউ হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। অন্যদিকে আহাশ বেকুবের মতো চেয়ে রইলো। মারামারিতে আহত হলেও, রক্ত ঝড়লেও সেই ব্যাথাটা অনুভূত হচ্ছিলো না। কিন্তু নীলাদ্রির কথাটা শোনার পর থেকে ভেতরটায় তীব্র দহন শুরু হলো। কি বিশ্রী চিনচিনে যন্ত্রণা। পিউ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। মাথা তার কাজ করছে না। ধীর স্বরে বলল,
“নীলাদ্রি ভাই, মাথা ঠিক আছে আপনার? কি উলটা পালটা বলছেন?
“না ঠিক বলছি। নয়তো তুমি ডিফেন্ড করছো কেনো? তোমার ওকে থাপ্পড় মারা উচিত ছিলো। ইউ নো হোয়াট। আমার ভুল ছিলো। তুমি তোমার ছোট প্রেমিকের সাথে থাকো। কংগ্রেচুলেশন”

বলেই হাটা শুরু করলো। পিউ হতভম্বের মত চেয়ে রইলো। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো নোনাজল। রাগে মাথার চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে হলো। এই প্রথম মনে হলো কেনো সে নিজের বান্ধবীর মতো রাগী নয়। কেনো বান্ধবীর মতো উত্তাল হতে পারে না। চিৎকার করে বললো,
“জাহান্নামে যান আপনি। আই ডোন্ট কেয়ার”

নীলাদ্রি পাত্তা ছিলো না। শকুনতলাকে নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। পিউ হাটু ভাজ করে বসে পড়লো ধুলোতে। দু হাত দিয়ে মুখ বুজে কান্নায় ফেটে পড়লো সে। তার তো খুশী হওয়া উচিত কারণ নীলাদ্রি তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু সেই মুহূর্তটাকে একেবারে তেতো বানিয়ে জনাব হাটা দিল। বুঝতেও চাইলো না পিউকে। আহাশ বসলো ঠিক তার পাশে। কাঁপা হাতে তার উশখো খুশকো চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“তুমি নীলাদ্রি ভাইকে ভালোবাসো তাই না পিউ আপু?”

কাতর চোখে তাকালো পিউ। তার চোখ টলমল করছে নিদারুন যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণা ছাপিয়ে এই বিক্ষিপ্ত হৃদয়ের পুরুষের বিষাদটুকুও অনুভব হলো। আহাশের চোখ ঝাপসা। মনে হচ্ছে কেউ চরম নিষ্ঠুরতার সাথে ভোতা ছুড়ি গলিয়ে দিয়েছে ঠিক অন্তস্থলে। তবুও অভিযোগ নেই। ভেতরটা চিৎকার করে বলতে চাইলো,
“ছাড় ওই গাধাকে। আমি তোমাকে মাথায় করে রাখবো”

কিন্তু বলা হলো না। ভালোবাসলে বোধ হয় স্বার্থপর হওয়া যায় না। এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো আহাশের চোখ থেকে। এজন্য কবি বলে প্রথমপ্রেম খুব কষ্ট দেয়।

***

হনহন করে বাড়িতে প্রবেশ করলো নীলাদ্রি। তার মুখখানা লাল হয়ে আছে। সালাম সাহেব এবং সাবেরা তখন চা খাচ্ছিলো আয়েশ করে। অনেকদিন তাদের জীবনে কোনো ঝামেলা নেই। ঠিক তখনই খাম্বার মতো দাঁড়ালো নীলাদ্রি। থমথমে স্বরে বললো,
“মা আমি বিয়ে করতে চাই। বিয়েটা এই সপ্তাহে হলেই ভালো হয়”

সালাম সাহেব ছেলের কথা শুনে গরম চায়ে জিহবা পুড়িয়ে ফেললেন। সাবেরার হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে গেলো। সে কারেন্টের বিদ্যুৎ শক খাওয়া মানুষের মতো চেয়ে রইলো। নীলাদ্রি তাকে পরোয়া না করে বললো,
“মেয়ে ভালো, তোমরা চিন। তাই আমার মনে হয় না সমস্যা হবে। আমরা দুদিনের মধ্যে মেয়ে দেখতে যাব”
“কিন্তু বাপ মেয়েটা কে”
“জানিয়ে দিবো। এখন আমার মাথায় রাগ চেপে বসেছে। আমি কাউকে খু’ন করে ফেলতে পারি। বিশেষ করে বাবার ছাগল দুটোকে। সালাম সাহেব আপনার ছাগলজোড়া আমার বিয়ের জন্য ধার দিবেন? ছাগল কেনার ঝামেলা থাকবে না। বিয়ের পর নতুন ছাগল কিনে দিব”

সালাম সাহেব এতোটা হতবাক যে তার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। নীলাদ্রি অপেক্ষা করলো না। সে শান্ত স্বরে বললো,
“আপনি ভাবুন। আমি গোসল করে আসছি। উত্তরটা যেনো হ্যা হয়”

বলেই হনহন করে নিজ ঘরে চলে গেলো নীলাদ্রি। সাবেরা এবং সালাম সাহেব এখনো হা করে বসে রইলো। তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা তাদের জীবনে কোনো ঝামেলা নেই।

***

ব্যাংকে একটি টেবিলে বসে রয়েছে বিল্লাল এবং অভ্র। বিল্লাল কপাল কুচকে বসে আছে। তার চোখে মুখে তীব্র বিরক্তির ছাপ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি টেবিলের ওপাশের রমনীর দিকে। রমনী অবশ্য সেদিকে নজর দিচ্ছে না। তার পুরো ধ্যান কাগজের মধ্যে। কোথাও কোনো ভুল করা যাবে না। দুবছরের চাকরির প্রথম লোন ক্লাইন্ট। অভ্র খুব নিশ্চিন্তে বসে রয়েছে। বিল্লাল মুখখানা কানের কাছে এনে শুধালো,
“লোন নিচ্ছিস খুব ভালো কথা, তাই বলে নিজের প্রাক্তনের কাছ থেকে কে লোন নেয়?”
“আমি”

বিল্লাল কঠিন নয়নে তাকালো। অভ্র নির্বিকার। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললো,
“পৃথিবীতে ব্যাংকের অভাব ছিলো নাকি লোন অফিসারের অভাব ছিলো?’

অভ্র উত্তর দেবার পূর্বেই তৃষা চোখ তুলে গম্ভীর স্বরে বললো,
“সাইন কর অভ্র।“

বলেই কাগজ এগিয়ে দিল। অভ্র সাইন করার জন্য কাগজগুলো নিলো। ক্ষণসময়ের জন্য বিল্লাল এবং তৃষার চোখাচোখি হলো। দুজনের চোখেই একে অপরের প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণা প্রকাশ পেলো চোখ দ্বারা কাউকে ভস্ম করার উপায় থাকলে বুঝি এই দুজন দুজনকে ভস্ম করে দিল। অভ্র অবশ্য এদের পাত্তা দিল না। সাইন করে তৃষার হাতে কাগজগুলো দিতেই তৃষা হেসে বললো,
“আশা করছি পজেটিভ নিউজ দিতে পারবো। আসলে বিনা মর্টগেজে আপাতত আমাদের ব্যাংক লোন দেবার সাহস দেখায় কি না? উপরন্তু তুই আমার বন্ধু। তাই কাজটা তাড়াতাড়ি হবে। হাজারবার ইন্সপেকশনের ঝামেলাটা কম”

কথাটা বিল্লালকে শুনিয়ে বললো যেনো। অভ্র হাত বের করে হাসলো বিল্লালের দিকে চেয়ে। যার অর্থ, “শুনেছিস? এবার আর মাথা খাস না”। চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে অভ্র বললো,
“পরশু আসছিস তো?”
“কোথায়?”
“আমাদের পাড়াতে পিকনিক হবে। এতোদিন ডাকাত পাহাড়া দিয়েছি তো। তাই পরশু একটা ছোট গেটটুগেদার। আয় ভালো লাগবে তোর”

তৃষা উত্তর দিতে পারলো না। তার কথাটা গিলে বিল্লাল বললো,
“ওকে বলছিস কেনো? ও এসে কি করবে? তোমার আসার প্রয়োজন নেই তৃষা। আমাদের পাড়ার পিকনিকে বহিরাগত নিষিদ্ধ”

অভ্র অবাক স্বরে বললো,
“তুই তো পাড়ার কেউ নস”
“তাতে কি আমি তোর বন্ধু”
“তৃষাও আমার বন্ধু হিসেবেই আসবে”

বিল্লাল দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
“ পিকনিকের চাঁদা বেশি। ও যদি টাকা না দেয়?”

এতোক্ষণ তৃষা চুপ থাকলেও চিকন স্বরে বলে উঠলো,
“আমি চাঁদা দিতে পারব বিল্লাল। নো টেনশন”
“পিকনিক রাতে মানে দুটোর পর। তোমাকে বাসায় কে দিয়ে আসবে?”
“অভ্র দিয়ে আসবে। আর না হলে ওর বাসায় থাকবো। কোনো সমস্যা অভ্র?”

অভ্র প্রায় সাথে সাথেই বললো,
“না কোনো সমস্যা নেই। তুমি কিন্তু আসবে”

বিল্লাল কটমট করে অভ্রের দিকে চাইলো। ছেলেটাকে বোঝার শক্তি তার নেই। এদিকে তৃষার উপরেও রাগ হচ্ছে। মেয়েটি কোনোদিন শুধরাবে না। অজানা কারণেই এই মেয়েটিকে তার পছন্দ নয়। যখন অভ্রের সাথে সম্পর্ক ছিলো তখনও নয়, এখনো নয়। যেদিন তাদের বিচ্ছেদ হয়েছিলো দু রাকাত নফল নামাজ পড়েছিলো বিল্লাল। ব্যাংক থেকে বের হতেই সে প্রশ্ন ছুড়লো,
“তুই কাজটা ঠিক করলি? ঐন্দ্রিলা কি ভাববে? ক্লাস টেনের প্রাক্তন হোক সে তোক প্রাক্তন”

অভ্র মলিন হেসে বললো,
“ঐন্দ্রিলা ভাববে? ভাবলে তো ভালো। চিন্তা করিস না। ওর কিচ্ছু যায় আসে না। আমাদের ও আগেও দেখেছে”

বলেই হাটা দিল। বিল্লাল আরোও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু বলতে পারলো না।

***

রাতের গভীরতা অনেক। পাড়ায় জমজমাট আয়োজন। কয়েকদিন যাবৎ বেশ আতঙ্কতে কেটেছে তাদের। কোথা থেকে ডাকাতের একটা প্রাদুর্ভাব হয়ে ছিলো। পাড়ার সব জোয়ান ছেলেগুলো সারারাত পাহাড়া দিয়েছে। আজ তাদের শেষ দিন পাহাড়ার। তাই একটা পিকনিক মন্দ নয়। সবাই আনন্দ করলেও ঐন্দ্রিলার মনে মোটেই সুখ নেই। তৃষা নামক ন্যাকা চক্ষুশুল তার চোখের সামনে ঘুরছে। অবশ্য সে একাই যে দুঃখিত তা নয়। আরোও তিনজনও এই দুঃখী দলের সদস্য। পিউ, নীলাদ্রি এবং আহাশ। এই তিনজনের মুখ থেকে ছোট বাচ্চাও বলবে এরা পৃথিবী বিখ্যাত ছ্যাকা খেয়েছে………………

চলবে

(বইটই এর ই-বুক মেলা এখনো চলছে। আমার ই-বুক মেলার “পরানে লাগিলো নেশা” ই-বুকটি পড়েছেন তো? প্রমোকোড ব্যাবহারে কিন্তু বইটি মাত্র ৪২ টাকায় পেয়ে যাবেন)

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here