#প্রিয়তোষ
পর্ব ১১
লিখা Sidratul Muntaz
সময় কেটে যায়, নোরার কান্না থামে না। খুশির অশ্রু বাঁধ মানে না। অপ্রত্যাশিত ভাবে পেয়ে যাওয়া এই তুমুল সুখের স্রোত সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তার কিশোরী মনকে। অনিকও বহুদিনের তৃষ্ণার্ত ছিল। প্রেয়সীকে এতো কাছে পেয়ে বেচাল হয়ে উঠেছে তার মন। দুই হাতে আঁকড়ে ধরেই রেখেছে তারা একে-অন্যকে। হঠাৎ পেছন থেকে কাশির শব্দ কানে আসতেই দু’দিকে ছিটকে সরে গেল দু’জন। আনিকার মুখে প্রশস্ত হাসি। সে হৃষ্টচিত্তে ফোড়ন কাটল,” ভাগ্যিস, বাবা-মা কেউ বাসায় নেই!”
অনিক লাজুক মুখে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাথরুমে ঢুকে গেল। বড় আপুর সামনে কোনো কথাই বলতে পারল না সে। নোরা সংকোচে কাঁপছে। চোখের অশ্রুধারা তখনিও থামেনি। বাঁধ ভাঙা আনন্দ হচ্ছে শরীর জুড়ে। আনিকা নোরার কাছে এসে তার চিবুকে হাত রেখে বলল,” ভাইয়ের কাছে অনেক আগেই শুনেছিলাম তোমার কথা। কিন্তু দেখার সৌভাগ্য হয়নি কখনও। সেদিন যে বাড়ি এসেছিলে ভাইয়ের অসুস্থতার সময়, তখনি অনিক বলেছিল তোমার কথা। তুমিই সেই মিষ্টি মেয়েটা। আমার ভাইয়ের হৃদয় হরণকারীনি।”
নোরা চ’মকে তাকাল। তিরতির করে কাঁপছে তার চোখের পাতা। এ কোনো স্বপ্ন নয়তো? আনিকা নোরাকে জড়িয়ে ধরে বলল,” সত্যি খুব মিষ্টি তুমি। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে।”
রীতিমতো মাথা ঝিমঝিম করছে নোরার। খুশির একটা তীব্র স্রোত প্রবাহিত হলো সারা শরীর জুড়ে। এতো লজ্জা আর বাঁধন ছাড়া অনুভূতি তার কখনও হয়নি।
ঈদের ছুটির পর কোচিং খুলে গেল। অনিক-নোরার মধ্যে তখন চলছিল ভয়াবহ রকমের প্রেম। দিন-রাত ফেসবুকে চ্যাটিং,ভিডিও কল, দিনে একবার করে দেখা করা, কোচিং এই প্রতিদিন দেখা হতো ওদের। কিন্তু এতেও অনিকের মন ভরতো না। ছুটির পর অনিক ওকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যেতো। কিন্তু বেশিক্ষণ ঘোরা যেতো না। নোরার বাসায় ফেরার তাড়া থাকতো।
একদিন রাত বারোটার দিকে নোরা ল্যাপটপ কোলে নিয়ে মুভি দেখছিল। আর ম্যাসেজে অনিকের সাথে কথা বলছিল। অনিক জিজ্ঞেস করল,” কি করো?”
” এইতো মুভি দেখছি।”
” কি মুভি?”
” তামিল।”
” তুমি তামিল বোঝো?”
” সরাসরি তামিল না তো। হিন্দি ডাবিং।”
” ও আচ্ছা।”
” হুম। আপনি কি করেন?”
” কিছুক্ষণ আগে বাসায় আসলাম।”
” এতো দেরি? রাতে খেয়েছেন?”
” খাচ্ছি।”
” খেতে খেতে ম্যাসেজ করছেন? কষ্ট হয়না?”
” না। কোনো কষ্ট নেই। বরং আরাম।”
” কিভাবে?”
” বলা যাবেনা।”
” এই প্লিজ বলুন না। বামহাত দিয়ে আপনার ম্যাসেজ লিখতে আরাম কিভাবে লাগে? আপনাকে দেখে তো মনে হয়না আপনি বামহাতী।”
অনিক অনেকগুলো হাসির ইমোজি দিল। নোরা বলল,
” প্লিজ বলুন না বামহাত দিয়ে এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে ম্যাসেজ লিখছেন?”
“আমি তো একবারও বলিনি আমি বামহাত দিয়ে ম্যাসেজ লিখছি।”
” তাহলে কোনহাত দিয়ে লিখছেন?”
“ডানহাত দিয়ে।”
” তাহলে কি বামহাত দিয়ে খাচ্ছেন?”
” উহুম। কোনো হাত দিয়েই খাচ্ছি না।”
” মানে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না বুঝিয়ে বলুন না প্লিজ।”
” বুঝিয়ে বলা যাবেনা। তোমার না বোঝাই ভালো। পরে এইটা নিয়ে কথা শোনাবে।”
” ও হ্যালো! আমি আপনার মতো না যে মানুষের দুর্বলতা নিয়ে কথা শোনাবো।”
” আমি কারো দুর্বলতা নিয়ে কখন কখন কথা শোনালাম?”
” আমাকে তো সবসময় বলেন কমন সেন্স নেই। এটা কি কথা শোনানো না?”
” ও এই ব্যাপার? ওইটা তো তোমার সাথে মজা করি। তোমাকে খেপানোর জন্য। ”
” নিজে খেপানোর জন্য মজা করলে দোষ নেই আর আমি করলেই দোষ?”
” আচ্ছা বাবা বলছি। আমি নিজের হাতে খাচ্ছি না, মা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। তাই আমি আরামে ম্যাসেজ টাইপ করতে পারছি। এবার বুঝেছো?”
” ও আল্লাহ! এত্তোবড় ছেলে এখনো মায়ের হাতে খায়?”
” জানতাম এভাবেই বলবে। এজন্যই বলতে চাইনি।”
” তো বলার মতো কথা হলে বলবো না? আমার তো এবার আপনাকে হিংসা হচ্ছে। আপনি এতোবড় হয়ে যাওয়ার পরেও আপনার মা আপনাকে খাইয়ে দেয়। আর আমার মা?”
“বড়-ছোট ফ্যাক্ট না। মা-বাবার কাছে সন্তানেরা সবসময় ছোট।”
” আপনার মাথা। আমার মায়ের কাছে তো আমি সেই কবেই বুড়ো হয়ে গেছি। আমার কি মনে হয় জানেন? মায়েদের কাছে শুধু ছেলেরাই ছোট থাকে, আর মেয়েরা বুড়ো হয়ে যায়।”
” আমি ছেলে-মেয়ের কথা বলিনি। আমি শুধু বলেছি সন্তান।”
” ভুল বলেছেন। সঠিকটা আমি বলছি, আপনি শুধু ছেলে বলেই মায়ের কাছে আপনি এখনো ছোট। মেয়ে হলে এতোদিনে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লাগতো।”
“তাই? তোমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লাগেনি তো?”
” এখনও লাগেনি। কিন্তু সেই সময় খুব জলদি আসবে। যখন মা-বাবা দুজনেই আমার বিয়ের জন্য উঠে-পড়ে লাগবে।”
” আমিও চাই জলদি আসুক। ”
” কেন?”
” তোমার বিয়ে মানেই তো আমার বিয়ে। বিয়ের বয়সও আমার হয়ে গেছে। কিন্তু তোমার তো হচ্ছে না। আর অপেক্ষা ভালো লাগেনা।”
” এই, আপনার না একটা আনম্যারিড বড়বোন আছে? তাকে বিয়ে না দিয়েই নিজের বিয়ের কথা ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন?”
” তোমাকে কে বলল আনিকা আপু আনম্যারিড?”
“মানে? আনিকা আপু আনম্যারিড না?”
” আপুর আরও দু’বছর আগে বিয়ে হয়েছে। মিসক্যারেজ না হলে এতোদিনে কোলে একটা বাচ্চাও থাকতো। আর আমি মামা হয়ে যেতাম।”
এ কথা শুনে নোরার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আনিকা আপু কত হাসি-খুশি মানুষ। অথচ তার কি-না মিসক্যারেজ হয়েছিল!
” আচ্ছা নোরা তুমি ঘুমাবে কখন?” অনিক আবার মেসেজ করেছে।
নোরা লিখল,” এইতো মুভিটা শেষ হলেই ঘুমিয়ে যাবো। প্রতিরাতে মুভি দেখা নেশা হয়ে গেছে বুঝেছেন? সাথে চিপস বা চকলেট থাকলে জমে যেতো।”
অনিক মেসেজটা সিন করেও কিছু রিপ্লাই দিল না। প্রায় আধঘণ্টা পর সে আবার মেসেজ করল,” নোরা একবার বারান্দায় আসবে?”
” বারান্দায় কেন? আপনি কি বাসার নিচে?”
” বাইকের আওয়াজ পাচ্ছো না?”
” না! কিভাবে পাবো? আমার কানে তো ইয়ারফোন।”
নোরা ইয়ারফোনটা কান থেকে খুলল। ভিডিও পজ করে বারান্দায় গেল। অনিক বাইকের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নোরাকে দেখেই হাত নাড়ল। নোরাও হাত নাড়ল। অনিক মাত্র কিছুদিন আগে বাইক কিনেছে। আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছে হুটহাট বাসার নিচে চলে আসা। নোরার অবশ্য বিষয়টা মজাই লাগে। অনিক পকেট থেকে মোবাইল বের করল। নোরা বুঝে গেল ওকেই ফোন করছে। তাই এক দৌড়ে বিছানা থেকে ফোন নিয়ে আবার বারান্দায় এলো। অনিক এতোক্ষণে ফোন দিয়ে ফেলেছে। নোরা বলল,” হ্যালো, আচ্ছা আপনি এতোরাতে এলেন কেন? কি দরকার ছিল?”
” একবার নিচে আসবে?”
“অসম্ভব। কেউ দেখে ফেললে খবর আছে।”
” ওহ। ঠিকাছে তাহলে আমি চলে যাই।”
” আরে দাঁড়ান! এতোদূর এসে আবার চলে যাবেন কেন? থাকুন আমি আসছি।”
নোরা এ কথা বলে ফোন কেটে দিল। অনিক হেসে ফেলল। সে জানতো নোরা আসবেই। নোরা মেইন গেইট দিয়ে বের হতেই অনিক ওকে একটানে একটা সরু গলিতে নিয়ে আসল। অন্ধকার রাস্তা, আশেপাশে কেউ নেই। নোরা চোখ বড় করে বলল,” এখানে কেন নিয়ে আসলেন?”
” যেন কেউ দেখে না ফেলে।”
একথা বলে অনিক নোরার এক গাল টিপে দিল। নোরা আরেকগাল এগিয়ে দিয়ে বলল,” এ গালেও দিন।”
” কি দিবো?”
অনিকের কণ্ঠে দুষ্টুমী। নোরা রেগেমেগে বলল,” টাচ করতে বলেছি।”
” কেন?”
” একগালে টাচ করা ভালোনা। স্বামী মরে যায়।”
” ধুর! ভুয়া কথাবার্তা এসব।”
” ভুয়া হলেও আমি বিশ্বাস করি। এখন দিন তো।”
অনিক টাচ করলনা। চুমু দিল। নোরা চোখ বড় করে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,” এএটা ক-কি হল?”
অনিক অকপটে বলল,” তুমি বলেছো টাচ করতে। হাত দিয়েই টাচ করতে হবে এমন তো বলোনি। আমি ঠোঁট দিয়ে টাচ করলাম, টাচ তো হয়েছে”
দুষ্টুমি করে চোখ মারল অনিক। নোরা লজ্জায় মাথা নিচু করে গালে হাত ঘঁষতে লাগল। অনিক তার চিবুকে হাত রেখে মুখটা উপরে তুলল। নোরা আইটাঁই করে বলল,” আচ্ছা এখন আমি যাই? অনেকক্ষণ হয়ে গেছে।”
“অনেকক্ষণ কই হল? পাঁচমিনিটও তো হয়নি।”
নোরা মাথা নিচু করে ছটফট করছে। তার পা কাঁপছে সামান্য। অনিক বুঝতে পারছে মেয়েটা ভ*য় পাচ্ছে। তবুও ইচ্ছে করেই ছাড়ছে না৷ দুইপাশে হাত দিয়ে বেরিকেডের মতো আটকে রেখেছে। তার কম্পন রত মুখটা দেখতে অনিকের খুব মজা লাগছে।
নোরা অনুরোধ করে বলল,” যাই প্লিজ?”
“কেন?”
” বাবা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে আমার রুমে দেখতে আসে। তখন আমাকে না পেলে?”
অনিক অভিমানী কণ্ঠে বলল,” আধঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে এতোদূর এসেছি। অথচ তোমাকে মাত্র দশমিনিটের জন্যও পাবো না?”
” আমি কি আপনাকে আসতে বলেছিলাম?”
অনিক গম্ভীর গলায় বলল,” ওকে! আর আসবো না। চলে যাচ্ছি।”
কথাটা বলেই নোরাকে ছেড়ে সামনে এগোলো অনিক। নোরা তার হাত টেনে ধরল,” আরে, আরে, রাগ করলেন নাকি?”
” না রাগ করবো কেন? ভুল আমারই। তুমি তো আসতে বলোনি, তবুও কেন এসেছি?”
” সরি, আর বলবো না।”
নোরার মুখ কাঁদো কাঁদো। সে অনিককে জড়িয়ে ধরল। তার হাত গিয়ে ঠেঁকল অনিকের কোমরে। তখন নোরা খেয়াল করল অনিকের পকেটে কিছু একটা আছে। বড় প্যাকেটজাতীয় কিছু। নোরা ওখানে হাত দিয়ে বলল,” এটা কি?”
“তোমার জন্য চকলেট এনেছিলাম। ”
অনিক পকেট থেকে চকলেটের প্যাকেট বের করে নোরার হাতে ধরিয়ে দিল। নোরা উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল,” আপনি কিভাবে জানলেন এটা আমার পছন্দ?”
” আমি জানবো না তো কে জানবে? চারবছর ধরে ফলো করছি। তোমার সবকিছুই জানি।”
নোরা লাজুক হাসল। অনিক হঠাৎ নোরাকে কোলে তুলে ফেলল। নোরা ভয় পেয়ে বলল,” আরে আরে, রাস্তাঘাটে এ কি করছেন? নামান প্লিজ।”
” উহুম। নামানো যাবেনা। তোমাকে এভাবে নিয়েই গেইট পর্যন্ত যাবো। তারপর ওইখানে নামাবো।”
“প্লিজ এটা করবেন না। কেউ দেখে ফেললে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যাবে।”
” দেখলে দেখবে।”
” দেখলে দেখবে মানে? আপনি কি আমাকে ফাঁসাতে চান?”
অনিক উত্তর না দিয়ে সত্যি সত্যি নোরাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল। আর নোরা ছটফট করতে লাগল। গলির মোড়ে এসে অনিক ওকে নামিয়ে দিল। গেইট পর্যন্ত গেলনা। নোরা হাঁফ ছেড়ে বাচল৷ তারপর কিছু একটা মনে পড়ায় বলল,” আচ্ছা আপনি না তখন বলছিলেন আনিকা আপুর বিয়ে হয়ে গেছে? তাহলে উনার হাসব্যান্ড কোথায়?”
” বিদেশ থাকে। ইতালির রোমে।”
” তাহলে আনিকাআপুর শ্বশুরবাড়ি?”
” গ্রামের বাড়িতে। আপুর ওখানে কষ্ট হয় বলে মা নিয়ে এসেছে। এখন আমাদের সাথেই থাকে।”
” ভাইয়া দেশে আসেনা?”
” আসে..ছয়মাসে একবার।”
” ইশ, আপুর কি কষ্ট।”
অনিক মৃদু হাসল। নোরার মাথায় শয়তানি চাপল। আচমকা অনিকের গালে চুমু দিয়ে দৌড়ে চলে গেল গেইটের ভেতরে। অনিক বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইল শুধু। সে কিছু বলার আগেই নোরা ফুড়ুৎ।
পরদিন ছিল শুক্রবার। আলাদা কোনো পরীক্ষা না থাকায় কোচিং সেদিন বন্ধ ছিল। নোরার সারাদিনে একবারও অনিকের সাথে দেখা হয়নি। ফোনে কথা হয়েছে মাত্র একবার। এরপর যতবার কল দিয়েছে ফোন বন্ধ। অনলাইনেও আসেনি সারাদিন। নোরা অপেক্ষায় ছিল কখন অনিক অনলাইনে আসবে। ওর সাথে একবার কথা হবে। এই নিয়ে চিন্তাতেও ছিল প্রচুর।
এদিকে অনিক গিয়েছিল তার এক বন্ধুর বাসায়। জায়গাটা গ্রামাঞ্চল হওয়ায় নেটওয়ার্কের ঝামেলা ছিল। অনিক তাই নোরার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। আর নোরাকে সেটা জানাতেও পারেনি। নোরা সারাদিন টেনশনে ছিল। রাতে বাসায় আসার পর অনিক গোসলে ঢুকল। গরমকালে সে দিনে দুইবার গোসল করে। একবার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আরেকবার বাসায় ঢোকার সময়। অনিক বাথরুমে ঢোকার পরেই ফোনটা এলো। নোরা ফোন করছিল। হঠাৎ অনিকের ফোন খোলা পেয়ে নোরা পরপর কয়েকবার ফোন দিয়ে দিল। দিতেই থাকল। অনিকের মা ইলোরা খাতুন তখন অনিকের ঘরেই ছিলেন। বারবার ফোনটা বাজছে দেখে ধরে ফেললেন,” হ্যালো।”
ওই পাশ থেকে অল্পবয়সী মেয়ের কণ্ঠ ভেসে এলো” আসসালামু আলাইকুম। ”
ইলোরা মেয়ের কণ্ঠ শুনে প্রথমেই একটু অবাক হলেন। অনিক ইদানীং ফোনে একটু বেশিই সময় কাটাচ্ছে। রাতে খেতে বসলেও ফোন আসলে খাওয়া রেখে বারান্দায় চলে যায়। মাঝরাতে ছেলের ঘর থেকে কথার আওয়াজও শোনা যায়। এসবের কারণ এখন ইলোরার কাছে পরিষ্কার। তার একমাত্র গুণোধর ছেলে তাহলে প্রেম করছে! ইলোরা বললেন,” কে বলছো?”
নোরা কোমলভাবে বলল,” আমি নোরা। অনিকস্যারের স্টুডেন্ট। স্যারকে কি আছেন?”
” কি দরকার ওকে?”
” কালকে আমাদের ম্যাথ ক্লাস তো। সে বিষয়েই একটু দরকার ছিল।”
“তুমি কি ওর কোচিং এর স্টুডেন্ট? ”
” জ্বী।”
মহিলার ভারী কণ্ঠ শুনে নোরার গলা হালকা কাঁপছে।
ইলোরা বললেন,” কোচিং এর স্টুডেন্ট হলে বাসায় কেন ফোন দিচ্ছো? কোচিং এর ঝামেলা কোচিং পর্যন্ত মিটিয়ে নিবে। বাসায় কেন ফোন করা লাগবে? দিন নেই রাত নেই শুধু ফোন আর ফোন। স্যারের সাথে ছাত্রীর এতো কিসের কথা? আর কখনও ফোন দিবে না। আমাকে যেন আর বলতে না হয়। অতিরিক্ত কোনোকিছুই ভালো না। বুঝেছো মেয়ে? বি কেয়ারফুল। যত দরকার সব কোচিং এ। বাসায় এতো ফোন দেওয়াদেওয়ি চলবে না।”
নোরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ইলোরা খট করে লাইন কেটে দিলেন। নোরা চমকে উঠল। তার চোখে অজান্তেই পানি এসে গেছে। এতোটা ঝাঁঝালো ব্যবহার এর আগে কেউ তার সাথে করেনি।
অনিক গোসল সেরে এসে যখন ফোনটা হাতে নিল, দেখল নোরার অনেকগুলো মিসডকল। সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক করল। কিন্তু নোরার ফোন বন্ধ। অনিক চিন্তায় পরে গেল। অনলাইনেও নেই মেয়েটা। নোরার সাথে তার ফোন থেকে লাস্ট কথা হয়েছিল দশমিনিট আগে। প্রায় দু’মিনিটের কনভারসেশন। অনিক বুঝল সে বাথরুমে থাকাকালীন কেউ এই ঘরে এসেছিল আর নোরার সাথে কথা বলেছিল। তখন কিছু হয়নি তো?
আনিকা এইসময় ঘুমিয়ে পড়ে। ওর এই ঘরে আসার কথা না। বাবা ঘরে আসলেও ফোন ধরবে না। অনিক তার মাকে ডাকল। ইলোরা ঘরে এসে বললেন,” ডাকছিলি?”
” মা, তুমি কি আমার ফোন রিসিভ করেছো?”
” হ্যাঁ করেছিলাম। তুই গোসলে ছিলি, ফোনটা বারবার করে বাজছিল তাই ভাবলাম জরুরী হতে পারে।”
“ফোন ধরে কি বলেছো?”
” কিছুই তো বলিনি। আমি হ্যালো হ্যালো করছিলাম কিন্তু ওইপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসছিল না। পরে আমি কেটে দিয়েছি।”
” শুধু এইটুকুই?”
” হ্যাঁ, কেন কি হয়েছে?”
” কিছুনা। আচ্ছা আমি একটু বের হচ্ছি।”
” এতোরাতে কই যাবি?”
” দরকার আছে।”
” টেবিলে ভাত বেড়েছি খাবি না?”
” এসে খাব।”
” আরে, কি এমন জরুরী দরকার?”
অনিক আর কোনো কথার জবাব দিলনা। তোয়ালে দিয়ে ভালো করে চুল মুছে টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরা অবস্থাতেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাইক নিয়ে সোজা চলে গেল নোরাদের বাসার সামনে।
নোরা তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। অনিক বাইকে বসেই নোরার বারান্দার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল। ঘরের লাইট বন্ধ ছিল। অনিক নিজের মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিল না। নোরা তার সাথে কথা না বলে ঘুমাতে চলে কেন?অনিক কয়েকবার নোরার বারান্দা বরাবর ঢিল ছুঁড়ল। কিন্তু কোনো রেসপন্স পাওয়া গেলনা।
অনিক নোরাদের বাসার দাড়োয়ানকে ডেকে জিজ্ঞেস করল,” আচ্ছা ভাই, চারতলার দক্ষিণ সাইডের ফ্ল্যাটে একটা মেয়ে থাকে। নাম নৌরিন জাহান। ওকে চেনেন?”
” হ্যা চিনছি। বলেন কি দরকার?”
” কোনো দরকার না। আমি শুধু জানতে চাচ্ছিলাম সব ঠিক আছে কিনা। মানে ও কি বাসায় আছে?”
” বাসায়ই তো থাকবো। এতোরাতে তো বিল্লিং থেকা বাইর হওয়া নিষেধ। মেইন গেইট তালা দেওয়া থাকে। ”
” ওহ। আচ্ছা আপনি কি সিউর ও বাসাতেই আছে? মানে আপনি দেখেছেন?”
” দেখি নাই। এখন আপনি কি বাসায় যাইবেন?আপনি কি হন ওগো?”
অনিক পড়ে গেল বিপাকে। সে নোরাদের কি হয় এই প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই। অনিক চুপ করে থাকায় দাড়োয়ান আবার জিজ্ঞেস করল,” যাইবেন উপরে? ফোন লাগামু?”
” না না। দরকার নেই থাক।”
অনিক এ কথা বলে আবার বাইকে গিয়ে বসল। দাড়োয়ানের সাথে কথা বলেও টেনশন একটুও কমল না তার। যতক্ষণ না নোরার সাথে কথা বলতে পারছে তার মন শান্ত হবে না। সারারাত বাইকে বসেই কাটিয়ে দিল অনিক।
সকালে ঘুম ভেঙেই নোরার বাবা শাহআলম আনিস এক কাপ চা খেতে বারান্দায় আসলেন। তখন তিনি দেখলেন খালি রাস্তার মাঝখানে বাইক নিয়ে এক যুবক বসে আছে। তখন কিছু মনে না করলেও পরে যখন বুঝতে পারলেন ছেলেটির নজর উনার মেয়ের বারান্দার দিকে তখন আনিসের মনে হালকা খোটকা লাগল।
তিনি চা খেয়ে গোসলে গেলেন। গোসল সেরে এসে দেখলেন ছেলেটা এতোক্ষণ বসেছিল এখন দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দায় বসে আনিস কিছুক্ষণ পেপার পড়লেন। বেশি না শুধু হেডলাইনগুলো পড়লেন। কারণ আজ পত্রিকায় উনার মনোযোগ নেই। মনোযোগ বাইকওয়ালা অচেনা যুবকটির দিকে। প্রায় এক থেকে দেড়ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যখন ছেলেটা গেল না আনিস দাড়োয়ানকে ফোন করলেন।
দাড়োয়ান এসে অনিককে বলল,” আনিস সাহেব আপনাকে ডাকসেন।”
অনিক প্রথমে কিছু বুঝল না। তারপর ওপরে তাকাতেই সরাসরি চোখাচোখি হল। আনিস অনিককে হাতের ইশারায় বললেন উপরে আসতে। অনিক উপরে গেল। দরজা আগে থেকেই খোলা ছিল। একটা অল্পবয়সী কালোমেয়ে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে রুটি বেলছে। খোলা দরজায় দাড়ালে রান্নাঘরটা সরাসরি দেখা যায়। মেয়েটি আঁড়চোখে অনিকের দিকে বারবার তাকাচ্ছে। বেশ কৌতুহল নিয়েই তাকাচ্ছে।
আনিস রুম থেকে বের হতেই দেখলেন অনিক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উনি দরজাটা লাগিয়ে অনিককে ভেতরে এসে বসতে বলে চলে গেলেন। ভদ্রলোকের কথামতো সোফায় এসে বসল অনিক। এরকম পরিস্থিতিতেও তার ভয় লাগছে না। সে শুধু আশেপাশে নোরাকে খুঁজছে।
আনিস ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই অনিক উঠে দাঁড়াল। আনিস হাত ইশারা করে বসতে বললেন এবং মুখেও বললেন,” বসেন বসেন।”
তারপর নিজেও বসলেন। জিজ্ঞেস করলেন,” আপনার নাম?”
অনিক কোমলচিত্তে বলল,” অনিক আবেদিন। আমি আপনার থেকে বয়সে অনেক ছোট। আমাকে তুমি করে বলুন প্লিজ।”
আনিস ছেলেটার মতিগতি বুঝতে পারছেন না।এতোক্ষণ ধরে বাসার বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল। যেই উপরে আসতে বলল ওমনি সুরসুর করে চলে এলো৷ এখন আবার অতি ভদ্রতা সহিত কথাও বলছে। বিষয়গুলো একটাও স্বাভাবিক লাগছে না আনিসের কাছে। উনি মৃদু হেসে অনিকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ডশ্যাকের উদ্দেশ্যে। অনিক উঠে দাড়িয়ে হ্যান্ডশ্যাক করল। তারপর সেই হাতটা বুকে ছোয়ালো। এটাও ভদ্রতার একটা অংশ। ছেলেটা কি সত্যিই খুব ভদ্র? নাকি ভদ্র সাজার ভাণ করছে? এতো ভদ্র হলে রাস্তার মাঝখানে বাইক নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকবে কেন? আবার মানুষের বাসার বারান্দার দিকে নজরই বা রাখবে কেন?
আনিস উচ্চস্বরে ডাকলেন,”কল্পনা!”
সেই কালো মেয়েটি দৌড়ে আসল,” জি খালু? বলেন।”
” দেখছো না মেহমান এসেছে। চা নাস্তা কই?”
মেয়েটি দাঁত কেলিয়ে বলল,” ওক্ষণি আনতাসি খালু।”
অনিক বাঁধা দিল,”আমি এখন কিছু খাবো না। আঙ্কেল আপনি আমাকে যে কারণে ডেকেছেন সেই কারণটা শুধু বলুন। আমার একটু তাড়া আছে।”
” তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না তোমার তাড়া আছে।”
অনিক হকচকিয়ে বলল,” জ্বী?”
” অনেকক্ষণ ধরে দেখছি বাইক নিয়ে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে আছো। দক্ষিণ দিকের বারান্দাটার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলে। কি আছে ওইখানে? কাউকে খুঁজছো?”
অনিক সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মনে মনে যে উত্তর প্রস্তুত করে রেখেছিল সেটাই বলল,” জ্বী। আসলে একটা বাসা খুঁজছি।”
” কার বাসা?”
” নিজামুদ্দিন স্যারের বাসা?”
” কে নিজামুদ্দিন? ”
” আমার শিক্ষক। কলেজের শিক্ষক।” খুব অকপটে মিথ্যা বলল অনিক।
আনিস গম্ভীর মুখে জানতে চাইলেন” উনার বাসা কই?”
” এখানেই। আশেপাশে কোথাও।”
” সেটা তো বুঝেছি। কিন্তু কোন লেনে? বাড়ির নম্বর কত?”
” বাড়ির নম্বরটাই তো মনে পড়ছে না। তাই খুঁজে বের করতেও পারছিনা। নাহলে কখন পেয়ে যেতাম।”
অনিক হাসল। আনিস সেই হাসিতে তাল মেলালেন না। গম্ভীরমুখে বললেন,” ঠিকমতো ঠিকানা না জেনেই বাসা খুঁজতে চলে এসেছো?”
অনিক অপ্রস্তুত ভাবে বলল,” ঠিকানা আসলে জানতাম কিন্তু ভুলে গেছি। মাথায়ই আসছে না মানে মনেই পড়ছে না।”
” সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু বাইক নিয়ে আমার বাসার সামনে দাড়িয়েছিলে কেন?”
” আসলে হঠাৎ করে বাইকটা স্টার্ট হচ্ছিল না। আশেপাশে পার্কিং এর জায়গাও পাচ্ছিলাম না। তাই ওভাবেই বসে থাকতে হল কিছুক্ষণ। ”
” আর বারান্দার দিকে তাকিয়ে কি খুঁজছিলে?”
অনিক হাসি মুখে বলল,”আসলে বারান্দাটায় সূর্যমুখী ফুলের গাছটা দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। তাই তাকিয়েছিলাম। কিছু খুঁজছিলাম না।”
আনিস এখনও সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।কথাগুলো উনার বিশ্বাসযোগ্য হল কি-না বোঝা গেলনা। ওদের কথার মাঝখানেই নোরা ঘরে ঢুকল। হঠাৎ অনিককে দেখে খুব চমকে গিয়ে কোনোকিছু না ভেবেই বলে ফেলল,” আরে স্যার, আপনি এখানে? আসসালামু আলাইকুম। ”
অনিক নোরার দিকে তাকাল। এতোক্ষণে নোরাকে দেখে মনে স্বস্তি আসল অনিকের। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। চোখগুলো হালকা লাল তবে ফুলে আছে। গালে গোলাপী আভা, তৈলাক্ত মুখ, এলোমেলো চুল। অনিক লোভাতুর দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর হাসিমুখে বলল,” নোরা,কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো স্যার। আপনি ভালো আছেন?”
আনিস এবার বললেন,” নোরা, উনি তোমার স্যার নাকি?”
নোরা বলল,” জ্বী আব্বু। কোচিং এর ম্যাথ স্যার। অনিকস্যার।”
আনিসের মুখে এতোক্ষণে হাসি ফুটল। অনিকের দিকে তাকিয়ে বললেন,” আপনি এতোক্ষণ এ কথা বলেন নি কেন?”
অনিক বলল,” আসলে আমি তো নিজেও জানতাম না, যে এটা আমার ছাত্রী মানে নোরার বাসা।”
” ও আচ্ছা। তা ভালোই হলো স্যারকে খুঁজতে এসে ছাত্রীকে পেয়ে গেলেন।”
আনিস এ কথা বলে হাহা করে হাসলেন। নোরা আর অনিকও সেই হাসিতে তাল মেলালো। অনিক বলল,” আপনি কিন্তু আবার আমাকে ‘আপনি’ করে বলে লজ্জা দিচ্ছেন। প্লিজ ‘তুমি’ করে বলবেন।”
” আচ্ছা আচ্ছা সে না হয় বললাম তবে তোমাকে কিন্তু আজকে আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করে যেতে হবে।”
” না না আঙ্কেল সেটা সম্ভব না। আমি বরং আজ উঠি।”
অনিক উঠে দাঁড়াল।নোরা বলল,” প্লিজ স্যার, ব্রেকফাস্ট করে যান না। আমাদের ভালো লাগবে।”
আনিস বললেন,” বসো বসো। ব্রেকফাস্ট করে যাও। খুব বেশি সময় লাগবে না।”
আনিস একথা বলে ডাইনিং টেবিলের দিকে গেলেন। গলা উঁচিয়ে লীরাকে ডাকছেন। অনিক বিড়বিড় করে নোরাকে জিজ্ঞেস করল,” লীরা কে?”
নোরাও বিড়বিড় করে উত্তর দিল,” মা।”
“ও আচ্ছা, মানে আমার শাশুড়ী!”
” উফ!” লজ্জায় নোরার মুখ লালচে হয়ে গেল। ততক্ষণে নোরার মা লীরা-ও চলে এসেছেন। অনিককে দেখেই হাসিমুখে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলেন। তারপর সবাই একসঙ্গে টেবিলে খেতে বসল। আনিস অনিককে নিজের সাথেই বসালেন। নোরা অনেকটা দূরে তবে অনিকের বরাবর বসল। লীরা খেতে বসলেন না। শুধু অনিককে এটা সেটা বেড়ে দিলেন।
যেখানে হয়তো ঝাটার বারি খেয়ে বিদায় হওয়ার কথা ছিল সেখানে টিচার হিসেবে বাড়তি সম্মান অনিকের মন্দ লাগল না। বরং বেশ ভালোই লাগল। অনিক চলে যাওয়ার সময় নোরা বাবাকে বলল,” বাবা, আমি স্যারকে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দেই?”
আনিস বললেন,” আচ্ছা যাও, চাবি নিয়ে যেও।”
নোরাদের মেইন গেইট চব্বিশঘণ্টা তালা দেওয়া থাকে। তাই আনিস নোরাকে নিঃসন্দেহে যেতে দিলেন। নোরা না গেলে উনি নিজেই যেতেন। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় একটা খালি জায়গা বুঝে অনিক- নোরাকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে জড়িয়ে ধরল। তারপর সারামুখে অনেকগুলো চুমু দিতে লাগল।
নোরা ভয়ে শিটিয়ে বলল,” কি করছেন, ছাড়ুন তো।”
অনিক ছাড়ল না। আরো শক্ত করে ধরে বলল,” আগে বলো সারারাত ফোন ধরছিলে না কেন?”
নোরা একটু অপ্রস্তুতবোধ করল। খুব মনখারাপ লাগায় ফোন সাইলেন্ট রেখে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছিল সে। কালরাতের ঘটনাটা কি অনিককে বলবে? ছেলের কাছে মায়ের বদনাম করাটা কি ঠিক হবে? নোরা আমতা আমতা করে বলল,”ফোনে চার্জ ছিলনা। দূরে চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে গেছিলাম তাই হয়তো টের পাইনি।”
” তো সেটা আমাকে জানাবে না? আমি সারারাত কত টেনশনে ছিলাম কোনো ধারণা আছে তোমার? রাতে যখন গোসল সেরে এসে দেখলাম তোমার এতোগুলো মিসডকল অথচ ফোন ধরছো না, টেনশনে মাথার মগজ লাফাচ্ছিল আমার। ওই অবস্থাতেই বাসা থেকে বের হয়ে এখানে চলে এসেছি। সারারাত এভাবেই বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ট্রাউজার আর টি-শার্ট পড়ে তোমার বাবার সাথে দেখা করেছি। উনি নিশ্চয়ই ভাবছেন স্যারের মাথায় সমস্যা আছে।”
” সমস্যা তো আছেই। আপনি আসলেই একটা পাগল। এমন কেউ করে? সারারাত বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকার কি দরকার ছিল? ঘুমাননি নিশ্চয়ই? ”
” ঘুম আসতো না নোরা। কিভাবে ঘুমাতাম?”
” সরি, আপনাকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য।”
নোরা মাথা নিচু করে ফেলল। তার চোখ টলমল হয়ে এসেছে। অনিক ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,” আরে পাগলী, এতে কাঁদার কি হলো? রাত জাগার অভ্যাস আছে আমার। একরাত না ঘুমালে তেমন কিচ্ছু হয়না। তাছাড়া আমি না আসলে কি তোমাদের সাথে ব্রেকফাস্টের সুযোগটা পেতাম বলো? একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। হবু শ্বশুরমশাই আর শ্বাশুরিমায়ের সাথে পরিচয়টা হয়ে গেল।”
নোরা হাসল। অনিক বলল,” শুধু হাসলে হবেনা। এখন একটা জিনিস চাই। সারারাত আমাকে টেনশনে রাখার পানিশমেন্ট।”
অনিক কি চাইছে সেটা বুঝতে পেরে নোরা শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে বলল,” প্লিজ এখানে না। কেউ চলে আসবে।”
” আসুক। পায়ের আওয়াজ পেলেই ছেড়ে দিব, প্রমিস।”
চলবে