প্রিয়তোষ পর্ব ১৮ লিখা Sidratul

0
32

#প্রিয়তোষ
পর্ব ১৮
লিখা Sidratul Muntaz

পরদিন সন্ধ্যায় অনিক বাইক নিয়ে চলে গেল নোরাকে বাসা থেকে আনতে। বাসার নিচে দাঁড়িয়ে নোরাকে ফোন করল সে। এর আগেই নোরা বাইকের আওয়াজ শুনে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিল। ফোন ধরে বলল,” তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি নামছি।”

” ওকে।”

অনিক বাইকে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। নোরা আজকে আবার ওকে তুমি করে বলছে। যতবার নোরার মুখ থেকে তুমি ডাকটা শুনে অনিক বুকের মধ্যে ধাক্কা অনুভব করে। তার আশেপাশে সবকিছু রঙিন মনে হয়। অদ্ভুত এক অনুভূতি! নোরা পাঁচমিনিটের মধ্যে নিচে নামল। ওকে দেখে অনিক কয়েক সেকেন্ডের জন্য পলক ফেলতেই ভুলে গেল। হাবার মতো হাঁ করে তাকিয়ে রইল।

নোরাকে অন্যরকম লাগছে। নেভি ব্লু আর কালো রঙের সেলোয়ার কামিজ পরেছে। চোখে কাজল আর কালো আইশ্যাড, ঘন পাপড়িতে মাসকারা, ঠোঁটে ন্যুড কালার লিপস্টিক। সামনের চুলগুলো বোধহয় কার্লও করেছে। ঠিক যেন রাতপরী। এতোসুন্দর! নোরা সামনে এসে মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করল,” আমাকে কেমন লাগছে?”

অনিক তখনো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল। ঘোর লাগানো গলায় বলল,” রাতপরী।”

নোরা লজ্জা পেয়ে হাসল৷ অনিক বলল,” সামনে বসো।”
” মানে?”

” বাইকের সামনে বসতে বলছি।”

নোরা সামনে উঠে বসল। অনিকের সাথে এই পর্যন্ত যতবার বাইকে উঠেছে অনিক ওকে সামনেই বসিয়েছে। আর নোরার এটা ভীষণ ভালো লাগে। নোরা সামনে বসতেই অনিক ওর চুলে মুখ ডুবাল। তারপর লম্বা একটা শ্বাস নিল। কি মিষ্টি গন্ধ! অনিক আসক্ত এই গন্ধে। নোরার পিঠের চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে একটা গভীর চুমু দিল অনিক। নোরা কেঁপে উঠল। অস্থিরগলায় বলল,” কি করছো? রাস্তার মাঝখানে এসব.. কেউ দেখলে?”

” দেখবে কিভাবে? সব তো অন্ধকার।”

” তবুও। তুমি প্লিজ বাইক স্টার্ট দাও তো। নাহলে কিন্তু আমি পেছনে বসবো।”

অনিক হেসে বাইক স্টার্ট দিল। রেস্টুরেন্টে পৌঁছানোর পর অনিক নোরাকে নিয়ে লিফটে উঠল। লিফটে আরো মানুষ ছিল। নোরা জিজ্ঞেস করল,” আমরা কয় নম্বর ফ্লোরে যাচ্ছি?”

” টপ ফ্লোর।”

” মানে ছাদে?”

” হ্যাঁ।”

” কিন্তু ছাদে কেন?”

” দরকার আছে তাই।”
নোরা বুঝতে পারল কি দরকার। লাজুকমুখে বলল,” দেরি হয়ে যাবে না?”

” হোক দেরি। দেরি করে যাওয়াই ভালো, দাম বাড়ে।”

ছাদে প্রচন্ড বাতাস। নোরার চুলগুলো এলোমেলোভাবে উড়ছে। অনিক ওকে টান দিয়ে একটা উঁচু জায়গায় দাড় করাল। তারপর দেয়ালের সাথে চেপে ধরেল। নোরা বলল,”মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে তো।”

“মেকাপ বেশি ইম্পোর্ট্যান্ট নাকি আমি?”

নোরা মিষ্টি হেসে বলল,” তুমি।”

আধঘন্টা পর ওরা নিচে নামল। ইলোরা, ইসহাক, আনিকা সবাই একটা ফ্যামিলি টেবিল বুক করে বসেছে। অনিক-নোরা পৌঁছাতেই দেখল সেখানে তিথিক উপস্থিত। তিথিকে দেখে দু’জনের হাসিই মিলিয়ে গেল। আনিকা আর ইসহাকের মুখেও অন্ধকারের ছাপ। শুধু ইলোরার মুখে মিষ্টি হাসি।

অনিক গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিথি এখানে আসবে জানলে নোরাকে কখনোই আনতো না সে। সবাইকে চুপ দেখে ইসহাক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে বললেন,” এইতো এসে গেছে ওরা। অনিক, তোদের এতো দেরি হলো কেন?”

অনিক চুপ। নোরাও কি বলবে বুঝতে পারছে না। আনিকা বলল,” রাস্তায় জ্যাম ছিল বোধহয়। নোরা, তুমি আমার পাশে এসে বসো। এসো।”

ইলোরা হেসে বললেন,” এসো নোরা! ”

নোরা গিয়ে আনিকার পাশে বসল। তিথি ইলোরার একপাশে বসেছে। অনিক শান্তভাবে গিয়ে নোরার পাশে বসল। কিন্তু ওর ডানপাশে পড়ে গেল ইলোরা। অনিক ফিসফিস করে মাকে বলল,” মা এসব কি? ও এখানে কেন?”

ইলোরা বললেন,” তিথি আমার মেয়ের মতো। ওকে আমি ফ্যামিলির অংশই মনে করি সবসময়। তাই ডিনারেও নিয়ে এসেছি। আশা করি এতে তোমার কোন সমস্যা হবে না?”

অনিকের ভীষণ রাগ উঠছে। ইচ্ছে করছে নোরাকে নিয়ে এখনি এখান থেকে উঠে চলে যেতে। কিন্তু এই হাসি-খুশি পরিবেশটা নষ্ট হবে বলে ও সেটা করতে পারছেনা। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই ইলোরা নোরার হাত ধরে ওকে নিয়ে গেল একটা নিরিবিলি জায়গায়। হাঁটতে হাঁটতে বলল,” কেমন আছো নোরা?”

নোরা নরম সুরে বলল,” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি। আপনি ভালো আছেন?”

” হুম। এখন বলো আমাকে তোমার কেমন লেগেছে?”

” খুব ভালো। ”

” সত্যিই ভালো লেগেছে? নাকি খুশি করার জন্য বলছো?”

” আমি খুশি করার জন্য কাউকে কিছু বলিনা আন্টি। যা বলি মন থেকে বলি।”

” তাই? তাহলে মন থেকে একটা কথা বলোতো।”

” কি কথা?”

” লম্বা করে মেয়েটাকে দেখলে না আমার সাথে? ওর নাম তিথি। চেনো নিশ্চয়ই? ওর সাথে আমি অনিকের বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অনিক তোমাকে বিয়ে করতে চায়। এখন তুমিই আমাকে বলো নোরা, তিথিকে দেখে তোমার কি মনে হলো? অনিকের জন্য তোমাদের দুজনের মধ্যে কে বেশি যোগ্য? তুমি না তিথি? আর সাথে ব্যাখ্যাটাও দিও। কেন বেশি যোগ্য।”

নোরা হাঁটা থামিয়ে দিল। ইলোরাও থেমে গেলেন। নোরা বিব্রতবোধ নিয়ে তাকাল। ইলোরা হাত ভাঁজ করে বললেন,” বলো।”

নোরা মাথা নিচু করে বলল,” আমার মনে হয়, উত্তরটা আপনার প্রশ্নের মধ্যেই আছে আন্টি। ”

” কিরকম?”

” আপনিই তো বললেন, অনিকস্যার আমাকে বিয়ে করতে চান। যেখানে উনি নিজেই আমাকে চান, সেখানে কি যোগ্যতা বিচারের আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে?”

ইলোরা ভ্রু কুঁচকালেন। তারপর হেসে বললেন,” ভালোই তো কথা জানো দেখছি। আর কি বললে? অনিকস্যার? ওহ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম। অনিক এখন তোমাদের ভার্সিটির লেকচারার তাই না? আর তুমি ওর স্টুডেন্ট। আচ্ছা স্টুডেন্ট হয়ে টিচারের সাথে এমন একটা সম্পর্কে জড়ানোর রুচি তোমার কিভাবে হলো বলোতো? ”

নোরা মাথা নিচু করে আছে। তার চোয়াল ক্রমশ কঠিন হয়ে আসছে। ইলোরা একটু ঝুঁকে বললেন,” এটা কি ঠিক? আর তোমার মা-বাবাই বা কেমন? টিচারের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে উঠে-পরে লেগেছেন? তোমার মতো এই কাজটা যদি আমার মেয়ে করতো না, তাহলে আমি ওকে এক চড় দিয়ে সোজা বানিয়ে ফেলতাম। ছেলে-মেয়েদের ভার্সিটি,কোচিং এ পাঠানো হয় লেখাপড়ার জন্য। টিচারদের সাথে ইটিশ-পিটিশ করার জন্য নয়। যেখানে তুমি একজন ছাত্রী হয়ে তোমার থেকে আট-দশবছরের বড় শিক্ষকের সাথে প্রেম করতে পারো, আর তোমার পরিবারও তাতে প্রশ্রয় দেয়, সেই পরিবারের শিক্ষা-দীক্ষা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।”

নোরার চোখ ছলছল করছে। সে পলক ফেলতে পারছে না, চোখের জল গড়িয়ে পড়ার ভয়ে। এখন কিছুতেই কাঁদা যাবেনা। এমন পরিস্থিতিতে যারা কাঁদে তারা দুর্বল। নোরা নিজের দুর্বলতার পরিচয় দিতে চায়না। ইলোরা নোরার এক বাহু শক্ত করে ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,” শিক্ষকরা বাবার সমতুল্য। মা-বাবার পরে শিক্ষকের স্থান। সেটা জানো? নাকি এটুকু শিক্ষাও পরিবার থেকে দেওয়া হয়নি?”

নোরা কিছু বলতে পারছে না। তার সবকিছু বিষাক্ত লাগছে। ইলোরা বললেন,” অনিক তোমাকে বিয়ে করতে চায় বলে আনন্দে নাচছো। আবার আমাকেও বড়মুখ করে বলছো যোগ্যতা বিচারের প্রয়োজন নেই। বেয়াদবির চরম মাত্রা কাকে বলে সেটা তো তোমাকে দেখেই শিখতে হয় মেয়ে! তোমার বান্ধবীর অন্তরার কীর্তি তো সব শুনেছি আফিয়া আপার কাছে। প্রেগন্যান্সির নাটক করে ছেলেটাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে। তোমাদের মতো মেয়ের কাজই তো এগুলো।

চূড়ান্ত লজ্জাবোধ যদি থেকে থাকে তাহলে আর কখনও আমার ছেলের সামনে আসবে না তুমি। তোমার মতো বেহায়া মেয়ে আমার ছেলের যোগ্য কোনোদিন হতে পারবে না। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও। আর অনিক তোমাকে ভালোবাসে বলেই যে তুমি ওর যোগ্য হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই কিন্তু। আমার ছেলে ভালোমানুষ বলে তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে। নাহলে তোমার মতো মেয়েদের সাথে শুধু… আর বললাম না।

যেটুকু সম্মান অবশিষ্ট আছে, তা নিয়ে ভালোয় ভালোয় বিদায় হও। সেটাই তোমার জন্য মঙ্গল। আর অনিকের জন্যও।”

ইলোরা কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে শেষ করলেন।তারপর গটগট করে হেঁটে চলে গেলেন ভেতরে। নোরা মুখে হাত দিয়ে কাঁদছে। কান্না কিছুতেই থামাতে পারছে না। এর চেয়ে ওর দুইগালে দুটো চড় দিলেও ও কিচ্ছু মনে করতো না। তাই বলে এইভাবে অপমান? নোরা কাঁদতে কাঁদতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল। অনিক নোরাকে খুঁজতে বাইরে এসেছিল। সে দেখল নোরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। অনিক গলা উঁচিয়ে অনেকবার ডাকল। কিন্তু নোরা শোনেনি।

নোরা বাসায় ঢুকে দেখল মা-বাবা একসাথে বসে টিভি দেখছেন। ঘরের লাইট বন্ধ। টিভির আলোতে আলোকিত হয়ে আছে ঘর। কল্পনা দরজা খুলে রান্নাঘরে চলে গেল। লীরা মেয়েকে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন,” কিরে মা! কেমন হলো হবু শ্বশুরবাড়ির সাথে ডিনার?”

লীরার প্রশ্নে নোরার আরো কান্না পেয়ে গেল। অন্ধকার রুমে সেটা দেখা যাচ্ছেনা। আনিস হাসিমুখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। দুজনের দৃষ্টি উজ্জল। হয়তো গল্প শোনার জন্য মুখিয়ে আছে। কিন্তু নোরা ওদের কি গল্প বলবে? অপমানের গল্প? কিভাবে হবু শ্বাশুড়ি তাকে অপমান করে বের করে দিয়েছে সেই গল্প বলবে?

নোরার খুব কষ্ট হচ্ছে। মা-বাবাকে কত আনন্দ নিয়ে বলেছিল তার হবুশ্বাশুড়ী তাকে ডিনারে ডেকেছেন। নোরা মাথা ব্যাথার ভাণ ধরে বলল,” ভালো লাগছে না মা। আমার মাথাটা ব্যথা করছে। পরে গল্প করবো। এখন আমি রুমে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবো।”

আনিস একটু সন্দেহী গলায় বললেন,” কি হয়েছে মা? সব ঠিকাছে তো?”

” হ্যা ঠিকাছে বাবা। সব ঠিকাছে।”

লীরা বলল,” কল্পনাকে বলি তোর জন্য এক কাপ আদা দিয়ে চা বানাতে? মাথা ব্যাথাটা কমবে।”

” লাগবে না মা। আমি ঘরে যাচ্ছি।”

নোরা রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর ফ্লোরে বসেই কাঁদতে লাগল। অনিকের মা তাকে এইভাবে অপমান কেন করলেন? যেখানে তার বাবা এতো মেজাজি মানুষ হয়েও তার সাথে কোনোদিন উঁচুগলায় কথা বলেনি, একটা ধমক পর্যন্ত দেয়নি। সেখানে বাহিরের এক মহিলার এতো অপমান সে কি করে মেনে নিল? অন্যকেউ হলে নোরা ফটাফট মুখের উপর জবাব দিয়ে দিতো। কিন্তু ইলোরাকে সে কিচ্ছু বলতে পারেনি। কিভাবে বলবে? সে যে অনিকের মা!

নোরার ফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বাজছে। নোরা ফোন ধরল না। সাইলেন্ট করে রেখেদিল৷ বিছানায় সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল নোরা। ঘুম ভাঙল ফজরের আযানের শব্দে। দু একবার হাই তুলে আশেপাশে তাকাতেই দেখল ফোনের লাইট জ্বলছে। অনিক ওকে এখনো ফোন করছে? সেই যে রাতে ফোন সাইলেন্ট করেছিল তারপর আর ফোনটা হাতে নেয়নি। ঘুমিয়ে পড়েছিল।

নোরা ফোনটা নিয়ে দেখল পাঁচশো চুয়াল্লিশটা মিসডকল। পঁচাশিটা ম্যাসেজ। ম্যাসেজগুলোতে বেশিরভাগই ”সরি’ লেখা। আরো অনেকভাবে এ্যাপোলোজাইস করেছে অনিক। একটা ম্যাসেজে লেখা,” নোরা প্লিজ একবারের জন্য নিচে এসো। আমি..”

বাকিটা পড়তে পারলনা। আবার ফোন এলো অনিকের। নোরা ফোন ধরে বলল,” হ্যালো।”

ওই পাশ থেকে অস্থির কণ্ঠে ভেসে আসল,” নোরা, নোরা, নোরা, প্লিজ ফোনটা কেটো না প্লিজ। একবার আমার কথা শোনো। মা যা করেছে সবকিছুর জন্য আমি ক্ষমা চাইছি, বিশ্বাস করো আমি জানতাম না মা তোমাকে এসব বলবে। জানলে তোমাকে অপমান করার জন্য কখনো ডেকে আনতাম না। প্লিজ মাফ করে দাও নোরা। এক্সট্রিমলি সরি। প্লিজ!”

” শান্ত হোন আপনি। আন্টির কথায় আমি কিচ্ছু মনে করিনি। শুধু একটু কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই কষ্টটাও আর হচ্ছেনা। ”

” নোরা তুমি কি একবার ছাদে আসবে প্লিজ?”

” ছাদে মানে? আপনি কি আমাদের বাসার ছাদে?”

” হ্যাঁ। অনেকক্ষণ নিচে দাড়িয়েছিলাম। তারপর দাড়োয়ান গেইট খুলে দিল। তোমাদের বাসায় ঢোকার সাহস হচ্ছিল না। তাই ছাদে চলে এসেছি।”

” একটু অপেক্ষা করুন আমি এখনি আসছি।”

নোরা ওরনাটা গলায় জড়িয়েই ছাদে দৌড় দিল। অনিক কার্নিশে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিল। নোরাকে দেখেই সামনে এগিয়ে আসল। নোরা দেখল অনিকের ফোলা ফোলা দুটো চোখ,এলোমেলো চুল, অগোছালো অবস্থা। এই অবস্থাতেই কত সুন্দর লাগছে দেখতে। মানুষটা কেন এতো সুন্দর? অনিক একটা টু শব্দ করলনা। হঠাৎ নোরাকে কোলে তুলে নিল।

তারপর ওকে দেয়ালের উপর বসিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। নোরা বুঝতে পারছে না অনিক কি করতে চাইছে। অনিক নোরার পা দুটো চেপে ধরল। তারপর করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” পায়ে পড়ি নোরা। প্লিজ মাফ করে দাও।”

নোরা অবাক হয়ে গেল। পা ছাড়ানোর চেষ্টাও করতে পারছে না। বেশি ছুটোছুটি করলে পেছন দিয়ে দুম করে পড়ে যাবে। অনিক যে মাঝে মাঝে কি পাগলামি করে! নোরা পা গুটিয়ে নিতে নিতে বলল,” পা ছাড়ুন প্লিজ। আপনি আমার পায়ে হাত দিলে আমার পাপ হবে।”

” আর তোমার কাছে ক্ষমা না চাইলে আমার পাপ হবে। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে।”

” এখানে আপনার তো কোনো দোষ নেই। আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন?”

” দোষ আমারই। এমন মায়ের সন্তান হয়ে জন্ম নেওয়াই আমার দোষ।”

” প্লিজ মায়ের সম্বন্ধে এসব বলবেন না।”

” তাহলে আর কি বলবো? আমার মন ভেঙে গেছে বলে আমি কষ্ট পাচ্ছি না নোরা। তোমার অপমানের যন্ত্রণাটা আমাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে খাচ্ছে। মাকে এজন্য আমি কোনোদিন ক্ষমা করবো না। মা খুব অন্যায় করেছে। খুব,খুব,খুব অন্যায়।”

” বাদ দিন এসব কথা। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর আন্টির কথায় আমি কিচ্ছু মনে করিনি। একটু কষ্ট পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু এখন সেই কষ্টটা একদম হজম হয়ে গেছে। বলতে পারেন হারিয়ে গেছে। আপনাকে দেখে, আপনার এসব পাগলামী দেখে, এখন কি মনে হচ্ছে জানেন? ভাগ্যিস আন্টি আমাকে অপমান করেছিল! নাহলে তো জানতেই পারতাম না আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন।

আমি রাগ করে ফোন সাইলেন্ট করে দিলে আপনি সারারাত ধরে ফোন দিয়ে যেতে পারেন। উতলা হয়ে বাসার সামনে ছুটে আসতে পারেন। বাচ্চাদের মতো কেদে চোখ ফোলাতে পারেন। এতো ভালো কেউ কাউকে কিভাবে বাসতে পারে? আমি কি সত্যিই এতো ভালোবাসা ডিজার্ভ করি?”

অনিক মুচকি হেসে বলল,” শুধুমাত্র তুমিই ডিজার্ভ করো।”

নোরা দেয়াল থেকে নেমে নিচে বসে পড়ল। অনিক হাটু গেড়েই সোজা হয়ে বসল৷ নোরা এতোক্ষণ অনিকের দুই হাত ধরে ছিল। এবার সেই হাত দুটো নিয়ে নিজের গালের উপর রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল,” আই লভ ইউ।”

তারপর অনিকের গলা জড়িয়ে ধরল। অনিকের বুকে মাথা রেখে আবারও কাঁদতে লাগল। অনিক ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,” কেঁদো না নোরা।”

” আমি কি কোনোদিনও আপনাকে পাবো না?”

” কে বলেছে পাবে না? আমি তো তোমারই। শুধু তোমার।সবসময় থাকব তোমার।”

” সত্যি? ”

” একদম সত্যি। ”

” আপনাকে ছাড়া আমি একদম থাকতে পারব না।”

অনিক হেসে বলল,” বোকা মেয়ে, আমি কি পারব তোমাকে ছাড়া থাকতে?”

নোরা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অনিক চোখ বন্ধ করে আছে। তার দুই চোখের কিনারা দিয়েই গড়িয়ে পড়ছে জল। কোনো শব্দ হচ্ছে না শুধু নিঃশব্দে কান্না!

তিথিদের বাসার কলিংবেল চাপছে অনিক। দরজা খুলল তিথিই। অনিককে দেখে বড়সড় একটা ধাক্কা খেল সে। জীবনে এই প্রথমবার অনিক তাদের বাসায় এসেছে। খুশিতে খৈ হারিয়ে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না তিথি। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অনিক শান্তগলায় বলল,” ভেতরে আসতে পারি?”

তিথি নর্ভাসনেস কাটিয়ে কম্পিত গলায় বলল,” অবশ্যই। অবশ্যই আসতে পারো। এসো।”

দরজার সামনে থেকে সরে অনিককে ভেতরে আসার জায়গা করে দিল তিথি। অনিক সোফায় বসতে বসতে আশেপাশে তাকিয়ে বলল,” বাসায় আর কেউ নেই?”

” মা বাজারে গেছে। মিথি ঘুমাচ্ছে। রান্নাঘরে ফুলী আন্টি আছে। তোমার জন্য কি আনবো? কফি খাবে?”

” আমি কিছু খেতে আসেনি। তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে এসেছি।”

অনিকের কপট উত্তরে তিথির মলিন হলো। হালকা আহত গলায় বলল,” বলো?”

অনিক পাশের সোফাটার দিকে ইশারা করে বলল,”বসো।”

তিথি বসল। অনিক জিজ্ঞেস করল সাবলীল ভঙ্গিতে,” তিথি, আমাকে ভালোবাসো?”

তিথি সলজ্জে নিচুগলায় জবাব দিল,” বাসি তো।”

” আমি বাসিনা।”

অনিকের উত্তরটা আগুনের ফুলকির মতো ছিটকে পড়ল তিথির বুকে। অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব হতে লাগল মুহুর্তেই। অনিক আবার বলল,” জোর করে যে ভালোবাসা হয়না, এটুকু তো জানো? ভালোবাসতে অনুভূতির প্রয়োজন। সেই অনুভূতিই যদি মরে যায়, তাহলে ভালোবাসা আসবে কি করে?”

তিথি কোনো জবাব দিলনা। অনিক জবাবের অপেক্ষাও করলনা। বলল,” নোরাকে আমি প্রায় পাচঁবছর ধরে ভালোবাসি। সেটা তোমার থেকে ভালো আর কেউ জানেনা। আমার প্রত্যেকটা বিষয়ে নজরদারি করা তো তোমার স্বভাব। কে জানে? হয়তো গুপ্তচরও লাগিয়ে রেখেছো আমার পেছনে। কিন্তু একটা কথা সত্যি করে বলো তো তিথি। এসব করে কি কোনো লাভ আছে? আমি কোনোদিন তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না সেটা তো তুমি জানোই। বরং এসব করে তোমার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধটাকেও নষ্ট করে দিও না প্লিজ। আই ওয়ান্ট টু রেসপেক্ট ইউ। এন্ড লেট মি ডু দ্যাট।”

তিথি অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,” তুমি যেমন আমাকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারবে না, তেমনি আমিও তো পারবো না কোনোদিন তোমাকে ভুলে যেতে।”

তিথির দৃষ্টি করুণ হয়ে এলো। চোখের পানি ছলছল করছে। উফফ এই মেয়েরা এতো কাঁদে কেন? অনিকের অসহ্যবোধ হচ্ছে। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” প্লিজ তিথি, আমার জীবনটা নষ্ট করে দিও না। তুমি প্লিজ আমার জীবন থেকে সরে যাও। মিনতি করছি তোমার কাছে।”

” আমি তোমার জীবন কোথায় নষ্ট করলাম অনিক? উল্টো তুমিই তো আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছো। তোমার জন্য তিলে তিলে শেষ হচ্ছি আমি।”

অনিক উচ্চশব্দে বলল,” আমি কি তোমাকে বলেছি আমার জন্য তিলে তিলে শেষ হতে? আমাকে ভালোবাসতে বলেছি? জোর করেছি?”

অনিকের কথার আওয়াজে ফুলী রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো। ফুলী তিথিদের বাসার গৃহকর্মী। অনিক উনাকে দেখে চুপ হয়ে গেল। পকেটে হাত দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,” দ্যাখো তিথি, ভালোভাবে বলছি। এখনো সময় আছে তুমি মাকে বোঝাও। মাকে বলো যে তোমার আমার মধ্যে বিয়ে সম্ভব না। মা যেন তোমার আশা ছেড়ে দেন।”

তিথি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল,” বলবো না। মরে গেলেও বলবো না। আমি যদি তোমাকে না পাই তাহলে নোরাও পাবেনা। ইনফেক্ট এই পৃথিবীর কোনো মেয়েই পাবেনা। তুমি আমার অনিক, শুধু আমার।”

তিথি অনিকের হাতটা ধরে কপালে ঠেঁকিয়ে কাঁদতে শুরু করল। ফুলী এই অবস্থা দেখে আবার রান্নাঘরে চলে গেল। অনিকের ভীষণ রাগ হচ্ছে। কাকে কি বুঝাতে এসেছে সে? এই মেয়ে জীবনেও বুঝবে না। চরম বিরক্তি নিয়ে অনিক উচ্চারণ করল,” ধ্যাত!”

তারপর ঝারি মেরে হাতটা ছাড়িয়ে হনহন করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। তিথি ফ্লোরে বসে পড়ে কাদছে। অনিকের এমন ব্যবহার দেখলে তার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মরে যেতে। এখনো তাই ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে এটাও জানে। মরে গেলেও অনিক তার কাছে আসবে না। কেন আসবে না? তিথি চিৎকার করে উচ্চারণ করল,”কেন?”

অনিক তিথিদের বাসা থেকে বেরিয়েই একটা সিগারেট ধরালো। অনেকদিন ধরে সে সিগারেট খায়না। আজ কেন খাচ্ছে নিজেও জানেনা। ইদানীং কি করতে কি করে ফেলে কোনোকিছুরই হুশ থাকেনা তার। এভাবে চলতে থাকলে একদিন পাগল হয়ে যাবে। একদিকে মা তিথি ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না, অন্যদিকে নোরা মায়ের অনুমতি ছাড়া বিয়েও করবে না। অনিকের মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব ছেড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে। কিন্তু কই যাবে? কিভাবে যাবে? সে যে বাধা পড়ে গেছে নোরাতে। তাকে ছেড়ে কোথাও যাওয়ারও উপায় নেই।

অনিক হাটঁতে হাঁটতে অনেকদূর এসে গেছে। হঠাৎ দেখল সামনে নোরা দাঁড়িয়ে। নোরা ওদের এলাকায় কি করছে? অনিক সিগারেট টা ছুঁড়ে ফেলল। রোডসাইডের পানির ফোয়ারা থেকে কয়েকবার কুলি করে মুখ টিস্যু দিয়ে মুছে নিল। তারপর নোরার কাছে গেল। নোরা ওকে দেখে মুচকি হেসে বলল,” হায়।”

” কেমন আছো?”

” ভালো। তুমি কেমন আছো?”

” তুমি যেমন রেখেছো তেমনি আছি।”

নোরা মুখ গম্ভীর করে ফেলল। জবাব দিলনা। মাথা নিচু করে সামনে তাকাল। অনিক বলল,” হঠাৎ এইখানে?”

” আলভীদের বাসায় এসেছিলাম। অন্তুর সাথে দেখা করতে।”

” ওহ। দেখা হয়েছে?”

” হুম।”

” এখানে যে আসবে আমাকে জানাও নি কেন?”

” এমনি।”

অনিক আর কিছু জিজ্ঞেস করলনা। নোরা ওর থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে। আজকাল ভার্সটিতেও অনিকের ক্লাসে পেছনের বেঞ্চে বসে থাকে নোরা। যে মেয়ে আগে যুদ্ধ করে হলেও সামবের বেঞ্চে বসতো শুধুমাত্র অনিককে কাছ দেখার জন্য। সেই-ই আজকাল দুরে দুরে থাকতে চাইছে। অনিক ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার পদে জয়েন করেছে একমাস হলো। শুধুমাত্র নোরার জন্যই দিন-রাত খাটা-খাটনি করে চাকরিটা নিয়েছিল সে।

অনিক বলল,” এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

” রিকশা খুঁজছি।”

নোরা এই কথা বলতে বলতেই আচমকা একটা জীপগাড়ি ওদের পাশ ঘেঁষে গেল। অনিক সরে পড়লেও নোরা সরতে পারলনা। নোংরা কাদামাটিতে তার ড্রেস ভরে গেল। অনিক চেঁচিয়ে উঠল ড্রাইভারের উপর,” ওই, কমন সেন্স নাই নাকি?”

তারপর ধাওয়া করতে চাইল গাড়িটাকে। নোরা বাঁধা দিয়ে বলল,” প্লিজ বাদ দাও। সিন ক্রিয়েট করার দরকার নেই।”

” ফালতু।”

অনিক নোরার দিকে তাকাতেই দেখল কাদায় ভরে গেছে একদম কর্দমাক্ত হয়ে আছে ও। অনিক বলল,” এবার কি করবে?এ অবস্থায় বাসায় কিভাবে যাবে?”

” চলে যেতে পারবো।”

” চলে যেতে পারবো মানে? এসো আমার বাসা থেকে চেঞ্জ করে যাও।”

” না না, দরকার নেই। আমি রিকশায় উঠে হুড নামিয়ে চলে যাবো। বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করবো।”

” আমার বাসায় এখান থেকে হেঁটে যেতে লাগবে দশমিনিট। আর তোমার বাসায় রিকশা করে গেলেও লাগবে পয়তাল্লিশ মিনিট। কি দরকার নোরা ভেজা কাপড়ে এতোক্ষণ থাকার? চলো তো।”

” না প্লিজ, বললাম তো আমি পারবো চলে যেতে।”

” আমি জানি তুমি কেন যেতে চাইছো না। ভয়ের কিছু নেই। মা এক সপ্তাহের জন্য খালামণির বাসায়। আপুও মায়ের সাথে গেছে। ঘর খালি, লক করা। চাবি আমার কাছে দেখো।”

অনিক পকেট থেকে বের করে চাবি দেখাল। নোরা বলল,” তোমার খালি বাসায় আমি কেন যাবো?”

” বেশি কথা বললে এখন রাস্তা থেকেই উঠিয়ে নিয়ে যাবো। সেটা ভালো লাগবে?”

নোরা উত্তর দিলনা। অনিক হাত টেনে ধরে বলল,” চলো।”

নোরা বাধ্য হয়েই অনিকের সাথে গেল। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নোরা দেখল অনিক তার জন্য বিছানায় কাপড় রেখে দিয়েছে। টিয়া রঙের একটা কামিজ৷ ওরনা আর সেলোয়ারটা হলুদ রঙের। খুব সুন্দর কাপড়টা। কিন্তু এটা কার কাপড়? আনিকার? উহুম আনিকার হবে না। কারণ আনিকা শরীর স্বাস্থ্যের দিকে থেকে নোরার দ্বিগুণ। আর লম্বাও। এই কামিজ আনিকার মাপের না। বরং এটা কাটায় কাটায় নোরার মাপের। অনিক কি এটা তাহলে ওর জন্যই কিনেছে? যদি ওর জন্যই কিনে থাকে তাহলে ওকে দেয়নি কেন?

নোরা ড্রেসিংটেবিলের আয়নাতে তাকাল। ওর চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে। চুল ঠিক করে মোছা হয়নি। তোয়ালেটা গায়ে জড়ানো। গা থেকে তোয়ালে খুলতে যাবে এমন সময় দেখল দেয়ালে অনিকের একটা ছবি লাগানো। অনিকের ছোটবেলার ছবি। এই আট/নয় বছর হবে! বাচ্চা অনিকের চোখে চশমা। চশমা দিয়েই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও। হাত ভাঁজ করা। এটুকু ছেলের কি ভাব! ওই চোখের দিকে তাকাতেই নোরার বুক কেপে উঠছে। কি মারাত্মক সেই চাহনী। মার্ডার করার জন্য এমন একটা লুকই যথেষ্ট। মানুষ হার্টঅ্যাটাক করবে এমন দৃষ্টি দেখে।

নোরারও যে ছোটখাটো হার্টঅ্যাটাক হয়নি তা নয়, ওর হাত-পা কাঁপছে। নিজেকে গুটিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে অনিক ওই চশমার আড়াল থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওকে দেখছে। লজ্জায় নোরার চোখমুখ বন্ধ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এই ছবির সামনে কিছুতেই ড্রেস চেঞ্জ করতে পারবে না সে। মনে হবে অনিক সত্যি সত্যি ওকে দেখছে। নোরা ওরনা দিয়ে ছবিটা ভালো করে মুড়িয়ে নিল। তারপর ড্রেস চেঞ্জ করল। ছবি থেকে ওরনাটা সরিয়ে নেওয়ার সময় বলল,” এভাবে কেউ তাকায়? চোখে ঘুষি মারলে তারপর বুঝবে। চোখ ফুলে আলু বের হবে তখন। দুষ্টু একটা।”

নোরা নিজে নিজেই হেসে উঠল। অনিক দরজা ধাক্কাচ্ছে,” নোরা, তোমার হয়েছে?”

নোরা মুখ আগেরমতো গম্ভীর বানিয়ে দরজা খুলল। অনিকের হাতে কফির ডিশ। ডিশে দুকাপ কফি। নোরাকে কামিজটায় খুব মানিয়েছে। প্রকৃতির মতো সুন্দর লাগছে দেখতে। ও যেন প্রকৃতির রাণী! অনিক বিভোর হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here