“এইযে ম্যাডাম, ওয়ালেটটা ধরুন।”
“আমি কি আপনার পারসোনাল মালবাহী কর্মচারী যে আপমার ওয়ালেট ধরব আশ্চর্য! আমি আপনার ওয়ালেট কেন ধরবো?”
ছেলেটা নোরার উত্তর শুনে অবাকচোখে তাকাল। নোরাও এতোক্ষণে ঘুরে তাকাল ছেলেটির দিকে। কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে এটা কোনো সাধারণ ছেলে নয়। কারণ ছেলেটা বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর। মনে হয় না এতো সুন্দর ছেলে সে আগে কখনো দেখেছে।
ছেলেটি অনেকটা প্রায় ধমকের সুরে বলল,
“আপনার ওয়ালেট। ব্যাগ থেকে পড়ে গিয়েছিল। ধরুন।”
নোরা চমকে উঠল। ছেলেটার হাতের দিকে তাকাল। পার্সটা তারই। এই পার্সে পাঁচশো টাকার নোটও আছে। নোরার হৃদস্পন্দন থেমে গেল। পাঁচশো টাকার নোটটা যদি এখন না পাওয়া যায়? সে এতোটা বেখেয়ালি কেন? নিজের উপর রাগ হলো।
ছেলেটা বলল,
” ফোনে কথা বলার সময় এতোটাও মগ্ন হতে নেই যে আশেপাশের কোনো খেয়াল থাকে না। আমি আপনাকে অনেকক্ষণ ধরেই ডাকছিলাম।”
ওই পাশ থেকে অন্তরা আওয়াজ দিল,” এই নোরা, কি হয়েছে রে?”
” অন্তু, তুই এখন ফোনটা রাখ। পরে কথা বলছি হ্যাঁ?”
নোরা লাইন কেটেই ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলল। তারপর ছেলেটার হাত থেকে পার্সটা নিতে নিতে হালকা হেসে বলল,
” সরি। আসলে আমি আপনার ডাক শুনেছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি যে আপনি এজন্য আমাকে ডাকছেন।”
“কমন সেন্স থাকা উচিৎ। ”
নোরা ভ্রু কুঁচকে বলল,” কমন সেন্সের কথা আসলো কেন?”
“কেউ নিশ্চয়ই আপনাকে অকারণে ডাকাডাকি করবে না? এটুকু বোঝা উচিৎ ছিল যে কোনো দরকারেই ডাকা হচ্ছে। ”
“কমন সেন্স আপনারও নেই। আপনার উচিৎ ছিল আমাকে ডেকে বলা যে আমার পার্স পড়ে গেছে৷ কিন্তু আপনি কি করলেন? পার্সটা হাতে নিয়ে ঘ্যান ঘ্যানাতে লাগলেন। ম্যাডাম ওয়ালেট ধরুন, ওয়ালেট ধরুন। আমি কিভাবে বুঝবো? আপনি আমাকে পার্সের কথা বলেছেন? আর এটাকে পার্স বলে। ওয়ালেট না”
” এক্সকিউজ মি! এটা ওয়ালেটের মতো দেখতে তাই আমি ওয়ালেট বলেছি। আর কারো কোনো জিনিস পড়ে গেলে সেটা তুলে দেওয়া ভদ্রতা। আমি যাস্ট ফরমালিটির খাতিরে আপনার পার্সটা তুলে দিয়েছি। আর আপনি হয়তো ভাবছিলেন আমি আপনাকে হ্যারেস করার জন্য ডাকছি। আসলে কি আর বলবো? মানুষের মেন্টালিটি এতো মিন…”
” আপনি কি আমাকে নিচু ম্যান্টালিটির মানুষ বললেন?”
” সেরকম কিছু না। ফরগেট ইট।”
ছেলেটা সামনে হাঁটতে শুরু করল। নোরা তার পার্সটা খুলে দেখল পাঁচশো টাকার নোট ঠিকঠাকই আছে। সে ছেলেটার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ডাকল,” এইযে মিস্টার, শুনে যান।”
ছেলেটা থামল। ঘুরে তাকাল,” জ্বী? কিছু বলবেন?”
“অবশ্যই বলব। আপনি যে ইন্ডিরেক্টলি আমাকে অপমান করে গেলেন সেটা কি আমি বুঝিনি? শুনুন একটা কথা বলি, আমি কেয়ারলেস হতে পারি,বোকা হতে পারি, কমন সেন্সের অভাবও আমার থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে নিচু মেন্টালিটির মানুষ আমি একেবারেই নই। আমার মেন্টালিটি যথেষ্ট উঁচু। আপনার হাইটের থেকেও উঁচু। এত্তো উঁচু। বুঝেছেন?”
ছেলেটা কিছুক্ষণ চুপ রইল। তারপর মুখে হাত ঠেঁকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলল,”অন্তত এটা স্বীকার করলেন, যে আপনার কমন সেন্সের অভাব আছে। ভেরি গুড।”
ছেলেটা এই কথা বলেই আবারও সামনে হাঁটতে শুরু করল। নোরার এবার রাগ আরও হচ্ছে। রাস্তাঘাটে একটা অতিসুন্দর ছেলের ত্যাড়ামার্কা কথা শুনে এভাবে অপমানিত হওয়ার থেকে বেদনাদায়ক মনে হয় আর কিছু নেই। তার উপর ছেলেটা যদি হয় এমন ভাবওয়ালা। সুন্দর ছেলেদের ভাব থাকে। কিন্তু এই ছেলেকে দেখলে দু মিনিটের মধ্যে যে কেউ বলে দিতে পারবে তার প্রতিটি শিরায় শিরায় তিন-চার কেজি করে ভাব। যেন আস্তো একটা ভাবের গোডাউন। কোনো ছেলে তাকে ভাব দেখিয়ে অপমান করবে, আর সে চুপচাপ মেনে নিবে,এটা হতে পারেনা। নোরা এবার ছেলেটার একদম সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দুইহাত মেলে দিয়ে বলল,” ওয়েট ওয়েট ওয়েট।”
” আবার কি?”
” দেখুন, আমি কিন্তু এটা বলিনি যে আমার কমন সেন্সের অভাব। আমি শুধু আপনার আঙ্গিকে বুঝাতে চেয়েছি, যে আপনি ভাবতেই পারেন আমার কমন সেন্সের অভাব আছে। কিন্তু তাই বলে নিচু মনের মানুষ আমাকে ভাববেন না। বুঝেছেন?”
” সব বুঝেছি। কিন্তু আপনি আমার পেছনে কেন লেগে আছেন বলুন তো? রাস্তা ছাড়ুন।”
নোরা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,” পেছন কই লেগে আছি? আপনিই তো কথা শেষ হওয়ার আগেই বারবার চলে যাচ্ছেন।তাই আমাকেও পেছন পেছন আসতে হচ্ছে।”
“কথা শেষ হয়েছে? আর আসবেন না দয়া করে।”
ছেলেটা চলে গেল। নোরা মাথা চুলকে চিন্তা করছে, সে কি এবারও অপমানিত হল?
বাসস্ট্যান্ডে প্রচন্ড ভীর। সবাই ঠেলে-ঠুলে বাসে উঠছে। নোরা বসার মতো সামনে একটা আরামের জায়গা পেয়ে গেল। ছেলেটাও একই বাসে উঠেছে। পেছনে গিয়ে বসছে। নোরা তাকাল না। ছেলেটাকে দেখে মনে মনে বলল,” ভাবওয়ালা।”
বাস চলতে শুরু করেছে। যাত্রার পাঁচমিনিটের মাথায় হঠাৎ কি যেন হল। বাস থামিয়ে দেওয়া হল। সম্ভবত বাস ড্রাইভার ট্রাফিক আইন অমান্য করেছে। ট্রাফিক পুলিশ বাসে ঢুকে ড্রাইভারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে চলে গেল। সবাই হা হুতাশ করতে করতে বাস থেকে নেমে যাচ্ছে। তাও মেইন রাস্তায়। যেখানে দাড়ানোর জায়গাটুকুও নেই। নোরা হা করে দেখছে। হঠাৎ কি হলো? সেই ছেলেটা বাস থেকে নামার সময় নোরার দিকে তাকিয়ে বলল,”সবাই নেমে যাচ্ছে। আপনি কি একাই বসে থাকবেন? আসলেই কোনো কমন সেন্স নেই।”
নোরা এ কথা শুনে তড়িঘড়ি করে নামল। তারপর ছেলেটার পেছনে যেতে যেতে বলল,” ভাইয়া, বাস কি আর যাবে না?”
” দেখলেনই তো সবাই নেমে গেল। গেলে কি আর কেউ নামতো? আর ট্রাফিক পুলিশ চাবি নিয়ে গেছে। বাস যাবেই বা কি করে? কমন সেন্স!”
” আপনি কথায় কথায় শুধু কমন সেন্স নিয়ে খোঁটা দিবেন না তো। এবার আমরা কিভাবে যাবো সেটা বলেন। নতুন বাস আসবে?”
” নতুন বাস কেন আসবে? এখানে আর বাস-টাস পাওয়া যাবে না। হয় হাঁটতে হবে, নাহলে রিকশা নিতে হবে।”
“আপনি কোনটা করবেন?”
” আমি ভাবছি রিকশা নিবো। এতোদূর হাঁটা সম্ভব না।”
“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
“গ্রীনরোড,ফার্মগেট।”
“আরে আমিও তো সেখানেই যাচ্ছি। চলুন একসাথে যাই?”
ছেলেটা আড়চোখে তাকাল। তাই দেখে নোরার হাস্যোজ্জল মুখ মলিন হয়ে গেল। এভাবে সরাসরি জিজ্ঞেস করা উচিৎ হয়নি। একটু অন্যভাবে জিজ্ঞেস করলেও হতো। ছেলেটা কি এখন ওকে ছ্যাঁচরা মেয়ে মানুষ ভাবছে? নোরার অপ্রস্তুত মুখ দেখে ছেলেটা হেসে ফেলে বলল,” চলুন।”
নোরা বিরাট একটা হাসি দিয়ে ছেলেটার পিছু নিল। মোড়ে গিয়ে ওরা একটা রিকশা পেয়ে গেল। রিকশা ভাড়া একশো টাকা। দুজন পঞ্চাশ পঞ্চাশ করে দিবে। নোরা রিকশায় উঠতে উঠতে বলল,”ভালোই হয়েছে। আলাদা আলাদা গেলে দুজনেরই একশোটাকা লাগতো। কিন্তু এখম কম লাগবে। পুরো অর্ধেক। একেই বলে, একতাই বল!”
ছেলেটা হাসল। নোরা বলল,”আরে আপনার নামটাই তো জানা হল না। নাম কি আপনার?”
“অনিক আবেদিন। আপনার?”
” আমি নৌরিন জাহান। ডাকনাম নোরা। নোরা বলেই ডাকতে পারেন।”
” নোরা? নামটা খুব কিউট, একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে।”
” নামে বাচ্চা ভাব থাকলে কি হবে? আমি কিন্তু বাচ্চা নই।”
“তাই নাকি? কিসে পড়েন আপনি?”
“এইতো, এবার এইচএসসি এক্সাম দিলাম!”
“এসএসসি নাকি এইচএসসি? ”
“এইচএসসি। হায়ার সেকেন্ডারি!”
“ওহ আচ্ছা।”
ছেলেটা হাসছে। কিছুক্ষণ আগের প্রশ্নটা যে উপহাসের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল নোরা সেটা বুঝতে পারল। তাই সরুচোখে বলল,” আপনার এসএসসি কেন মনে হল?”
“আপনাকে দেখে বোঝা যায়না যে আপনি কিছুদিন পর ভার্সিটিতে উঠবেন।”
“সবাই অবশ্য তাই বলে। আমার মধ্যে নাকি কেমন একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব। এটা হয়তো আমার হাইটের কারণে। কিন্তু বিশ্বাস করেন, আই এম প্রাউড অফ মাই হাইট। আর আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি লম্বা হলে আমাকে একদমই মানাতো না। আমাকে শর্ট হাইটেই মানায়। ঠিক বলেছি না? ”
“হুম। ঠিক বলেছেন। হাইট ডাজন্ট মেটার।”
“ঠিক এই কথাটাই না আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডও আমাকে বলতো। ঠিক আপনার মতো, হাইট ডাজন্ট মেটার। মিলে গেল কি করে?”
” জানিনা তো।”
“ধুর,ওর কথা মনে পড়লেই আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আপনি মনে করিয়ে দিলেন। আসলে ও আমাকে খুব লভ করতো।”
“লভ করতো তাহলে এক্স কেন হলো?”
“সেটা তো আমার দোষে হয়েছে। আমি কি করেছি জানেন? দাঁড়ান আপনাকে ঘটনা বলি। ”
“ইটস ওকে, বলতে হবে না।আমি বুঝেছি।”
” না শুনে কিভাবে বুঝে গেলেন? কিচ্ছু বুঝেননি আপনি।আগে শুনুন তারপর বুঝবেন। ইন্টারেস্টিং কাহিনি। সময়টা ছিল মধ্যদপুর। প্রতিদিন দুপুরেই লাঞ্চের পর ওর সাথে আমার কথা হতো। সেদিনও হচ্ছিল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ওর কোনো এক্স আছে কিনা। তখন কিন্তু আমার কোনো এক্স ছিল না। সে বলল তারও এক্স নেই। কিন্তু ক্রাশ আছে। ক্রাশের নাম তামান্না। মেয়েটাকে সে প্রপোজও করেছিল। আচ্ছা আপনিই বলুন, আমার বয়ফ্রেন্ড অন্যমেয়েকে প্রপোজ করেছে, এই ঘটনা শুনলে আমার রাগ উঠবে না? কান্না পাবেনা?”
” কিন্তু তখন তো সে আপনার বয়ফ্রেন্ড ছিল না।”
” না থাকুক। পরে তো হয়েছে। সে কেন অন্যমেয়েকে প্রপোজ করবে? আমার ভীষণ রাগ উঠল ওর উপর। দিলাম ব্লক করে। ফেসবুক, মোবাইল, সব জায়গা থেকে ব্লক। তখন অবশ্য আমি শুধু ফেসবুক ইউজ করতাম৷ ক্লাস এইটে পড়তাম তো! আমি ওকে ব্লক দেওয়ার পর ও আমাকে আলাদা আলাদা নম্বর থেকে কল দেওয়া শুরু করল। আমি সব নম্বর ব্ল্যাকলিস্ট করে দিলাম। তারপর চলে গেলাম অন্তরাদের বাসায়। অন্তরা আমার বেস্টফ্রেন্ড। ওইখানে গিয়ে দেখি, ও অন্তরাকেও মেসেজ দিয়ে ডিস্টার্ব করছে। আমি যেন ওকে আনব্লক করি। তারপর আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। ওকে শিক্ষা দেওয়ার বুদ্ধি। অন্তরাকে বললাম, ফারহানকে বলতে আমি বিষ খেয়েছি। ও বলতে ভুলে গেছি, আমার বয়ফ্রেন্ডের নাম ছিল ফারহান। অন্তরা আমার কথামতো ফারহানকে বুঝাল আমি বিষ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছি। ফারহান বিশ্বাস করলনা। প্রমাণ চাইল। তারপর আমি কি করলাম জানেন? ফ্লোরে উল্টো হয়ে শুয়ে অন্তরাকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে ফারহানকে পাঠিয়ে দিলাম। ওইটা দেখে ফারহান এতো ভয় পেল, বাসার সবাইকে ঘটনা জানিয়ে দিল। পরে অবশ্য আমি স্বীকার করেছিলাম যে আমি বিষ খাইনি। কিন্তু ওর বাসার মানুষ ওকে কি বুঝালো জানেন? আমি নাকি ধোকাবাজ। যে বিষ খাওয়া নিয়ে নাটক করতে পারে, সে সম্পর্ক নিয়েও নাটক করতে পারে। ফারহান আমার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলল। তারপর একসময় আমাকে ছেড়ে দিল। আর কোনোদিন ওর সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি। এখনো না। ”
অনিক ঝেড়ে কাশল,” এবার আমাদের নামতে হবে। এসে গেছি।”
“ও। খেয়ালই ছিলনা। নামছি।”
নোরা রিকশা থেকে নেমে পার্স বের করল। পাঁচশো টাকার নোটটা রিকশাওয়ালার দিকে এগিয়ে দিল। রিকশাওয়ালা বলল,”আপা, ভাঙতি তো নাই।”
“ওহ। আমার কাছেও তো ভাঙতি নেই। যা ছিল বাস কন্ট্রাক্টরকে দিয়ে দিয়েছিলাম৷ আপনার কাছে আছে?”
অনিক বলল,” হ্যাঁ আছে। আমি দিয়ে দিচ্ছি কোনো সমস্যা নেই।”
“না না আপনি কেন দিবেন? আপনি আমাকে পাঁচশোটাকা ভাঙতি দেন আমি দিচ্ছি।”
“লাগবে না। আমিই দিয়ে দিচ্ছি।”
অনিক একশোটাকা রিকশাওয়ালাকে দিল। রিকশাওয়ালা চলে যাওয়ার পর নোরা হাঁটতে হাঁটতে বলল,”এটা কিন্তু ঠিক হলো না। কারো কাছে ঋণ করতে আমার একদম ভালো লাগেনা। কিন্তু আপনি আমাকে ঋণী করে দিলেন।”
” আবার যদি কোনোদিন দেখা হয়, আর আপনার কাছে ভাঙতি থাকে, তাহলে ঋণটা মিটিয়ে দিবেন! সমস্যা কই?”
“যদি আর কোনদিন দেখা না হয়?”
” তাহলে আমার নামে পঞ্চাশটাকা মসজিদে দান করে দিবেন। আমার পাওয়া হয়ে যাবে।”
নোরা হেসে বলল,” আচ্ছা ঠিকাছে। ”
অনিক বলল,” বায়।”
“বায়।”
নোরা কোচিংরুমে ঢুকল। ঠান্ডা ক্লাসরুম। আজকে তার এডমিশন কোচিং এর প্রথমদিন।নোরা অন্তরাকে সামনের বেঞ্চে দেখে সেও অন্তরার পাশে গিয়ে বসল। অন্তরা বলল,
“এতো দেরি লাগল কেন তোর? আমি কখন থেকে একা একা বসে আছি।”
” সরি রে। রাস্তায় একটা ঝামেলা হয়েছিল। তাই দেরি হয়েছে। ”
“আচ্ছা তখন কি হয়েছিল রে? ফোন কেটে দিয়েছিলি কেন?”
” বলছি বলছি সব বলছি।”
নোরা অন্তরাকে সবকিছু গুছিয়ে বলতে শুরু করল। অন্তরার প্রায় মাথা ব্যথা হওয়ার উপক্রম! এই মেয়ে এক নিশ্বাসে এতো কথা কি করে বলতে পারে? অন্তরা বলল,”এইটুকু সময়ের মধ্যে তুই ছেলেটাকে ফারহানের ঘটনাও শুনিয়ে ফেলেছিস? হাইরে! তুই পারিসও।”
নোরা হেসে বলল,” আচ্ছা আজকে কোন বিষয়ের ক্লাস?”
“ম্যাথ।”
“ও। স্যার কখন আসবে?”
” সময় তো হয়ে গেছে। এখনি আসার কথা।”
অন্তরার কথার মাঝখানেই কেউ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। সবাই সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। নোরাও দাঁড়িয়ে গেল। তার চোখ দুটো আলুর মতো গোল হয়ে যাচ্ছে। সে কি সত্যিই অনিককে দেখছে? নাকি হ্যালুসিলেশন? অনিকের সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হলে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতো জলদি দেখা হয়ে যাবে নোরা ভাবেনি।
নোরার ভীষণ লজ্জা লাগছে। লজ্জার কারণ হল সে নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপের কাহিনি অনিককে শুনিয়েছে। যেই অনিক এখন তার কোচিং এর ম্যাথ টিচার! নোরা মনে মনে উচ্চারণ করল,”লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ।”
চলবে
#প্রিয়তোষ
#পর্ব_১
লিখা: Sidratul muntaz