অনপেখিত পর্ব ৮ লিখা Sidratul

0
26

#অনপেখিত
পর্ব ৮
লিখা Sidratul Muntaz

মেহেকের সাজ দেখে ফারদিন অবাক। কটকটে গোলাপী রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। মাথায় বাচ্চাদের মতো গোলাপি ফুলের ব্যান্ড পড়েছে। ঢেউ খেলানো চুলগুলো পিঠময় ছড়ানো। তার মাথাটাকে এখন মনে হচ্ছে গোলাপ ফুলের বাগান। ফারদিন কতক্ষণ হাঁ করে চেয়ে থেকে হঠাৎ হেসে ফেলল। ওর হাসি দেখে মেহেকের উজ্জ্বল মুখ চুপসে গেল। কোমড়ে হাত রেখে বলল,” কি ব্যাপার? আপনি হাসছেন কেন?”

” তুমি মাথায় কি লাগিয়েছো এটা? তোমাকে মালিনীর মতো লাগছে। মালিনী চেনো? মালির বউ!”

” তো কি হয়েছে?”

” কি হয়েছে মানে? এইটা খোলো। ভালো দেখাচ্ছে না।”

” সত্যি খুলে ফেলবো?”

” হুম। নাহলে এই অবস্থায় বাহিরে গেলে আমার মতো সবাই হাসবে।”

মেহেক মাথার ব্যান্ডটা খুলে রাখল। ক্লাস ফোরে থাকতে শখ করে আব্বা মেলা থেকে কিনে এনেছিলেন এইটা মেহেকের জন্য। কখনও পরা হয়নি। আজকে মেহেক একটু আগ্রহ নিয়ে পড়েছিল। অথচ সে ভুলেই গেছিল, এখন তার এইগুলো পরার বয়স নেই। সে তো বড় হয়ে গেছে! ফারদিনের ব্যঙ্গাত্মক হাসি দেখে মনটা খারাপ হলো মেহেকের। ফারদিন ওইভাবে না হেসে মেহেককে বুঝিয়ে বললেও তো পারতো! তার হাসিটাই ইনডিরেক্টলি প্রমাণ করে,মেহেকের ফ্যাশন সেন্স কতটা বাজে!

ড্রয়িংরুমে সবাই রেডি হয়ে গল্প করছে। ফারদিন আর মেহেক এখনি বের হয়ে যাবে। বাকিদের জন্য উবার ডাকা হয়েছে। উবার আসতে আরও সময় লাগবে। তাই ওরা একসাথে বসেছে আড্ডা দিতে। এদের মধ্যে সুজি নেই। ফারদিন সবার উদ্দেশ্যে বলল,” টাটা, আমরা চলে গেলাম।”

আনজীর বলল,” বায়। ”

ওয়াসীম প্রশ্ন করল,” আচ্ছা তোদের সাথে আমাদের কোথায় দেখা হবে?”

ফারদিন ইশারায় বুঝালো ফোনে জানাবে। পূর্বিতা মেহেকের দিকে চেয়ে বলল,” তোমাকে সুন্দর লাগছে মেহেক।”

ঠিক সেই সময় সুজানার আগমন হলো। খুব সুন্দর লাগছিল তাকে দেখতে। হলুদ রঙের একটা কূর্তি তার গাঁয়ে। পায়ে কালো জিন্স। মুখে ভারী মেকাপ। তার সুন্দর, লম্বা, সোনালী চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে। সে বার-বার হাত দিয়ে চুল ঠিক করছে। ড্রয়িং রুমে ঢুকেই সে সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,” হাউ এম আই লুকিং গাইজ?”

সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,” গর্জিয়াস!”

সবার মধ্যে ফারদিনও ছিল। সুজানা হাত দিয়ে নিজের শরীরে বাতাস করার মতো একটা ভাব নিল। যেনো সে বিশ্বসুন্দরীর এওয়ার্ড পেয়ে গেছে! মেহেকের মেজাজ বিগড়ে গেল। সে নিজে যখন সেজেছিল তখন তো ফারদিন একবারও প্রশংসা করেনি। উল্টা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছে। আর সুজির বেলায় কি-না গর্জিয়াস! গতকাল রাতের ওই ভিডিওর দৃশ্যটি আবার চোখের পর্দায় ভেসে উঠলো। ফারদিন সুজির চুল নিয়ে খেলছিল। কতটা অসহ্যকর দৃশ্য! সুজির অর্ধেক সৌন্দর্য্য তার ওই লম্বা চুলে। আর এই চুল নিয়েই তার যত অহংকার। মেহেকের এই মুহুর্তে মন চাইছে সুজির চুলগুলো কাচি দিয়ে ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে কাটতে। ফারদিন বলল,” চলো মেহেক। আমরা বের হই।”

” এক মিনিট। আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।”

” ঠিকাছে যাও। আমি তাহলে গাড়ি নিয়ে বাইরে ওয়েট করছি।”

মেহেক ওয়াশরুমে গেল না। মেজাজ খারাপ করে বিছানায় বসে রইল। তার পুরো পৃথিবী তছনছ করে দিতে ইচ্ছে করছে। ওই সুজি কেন এতো সুন্দর? কেন? মেহেক কেন সুজির মতো সুন্দর করে সাজতে পারে না? কেন তার মতো স্মার্ট হতে পারে না? সে এতো বোকা কেন? হয় সে নিজে সুজির মতো স্মার্ট হবে নয়তো সুজিকেও আনস্মার্ট হতে হবে। নাহলে মেহেকের শান্তি লাগবে না। কিছুতেই না! ভিডিওর সেই দৃশ্যটি বার-বার মনে পড়ছে। মেহেক এক মুহুর্তের জন্য ভুলতে পারছে না। এইভাবে চললে সে পাগল হয়ে যাবে। রান্নাঘর থেকে টুংটাং শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কেউ এসেছে নাকি? এই রুমের পাশেই রান্নাঘরটা। মেহেক রুম থেকে বেরিয়ে দেখল উর্মি।

” কিরে উর্মি, কি করিস?”

” মেহমানদের জন্য নাস্তা নিতাছি। আপনি খাবেন?”

” নাস্তা না সবাই সকালে খেয়েছে? এখন আবার নাস্তা কিসের?”

” সুজি আপা ইন্টারনেটের বেডাগো কাছে মুরগির রান অর্ডার করছে। এখন সবাই হেই রান খাইবো। আমি প্লেটে কইরা সাজায় নিতাছি।”

” বাহ, দেখি তো। ভালোমতো খাওয়াচ্ছি মুরগির রান। সাদা সসের বাটিটা আমার হাতে দে।”

” কি করবেন?”

” তোকে দিতে বলেছি।”

ম্যায়োনিসের বাটিটা উর্মি মেহেকের হাতে দিল। মেহেক বলল,” আচ্ছা উজান কোথায়?”

” ঘরেই আছে।”

” ডাক।”

উর্মি উজানকে ডাকল। একটু পর উজান এসে বলল,” ডাকছেন আমারে?”

” এইতো উজান, তুই না আগে ক্রাফটিং করতি? তোর কাছে কি আঠা আছে?”

” উম.. ড্রয়ারে থাকতে পারে। চেক করতে হইবো।”

” থাকতে পারে না। থাকতেই হবে। না থাকলে এক দৌড়ে কিনে আনবি। টাকা আমার থেকে নিয়ে যাবি।”

” আচ্ছা।”

উজান ঘর থেকে এসে দাঁত কেলিয়ে বলল,” ঘরেই ছিল আপা। দোকানে যাইতে হয়নাই।”

” গুড। তুই যা এইবার।”

উজান রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মেহেক আঠার বোতলটা খুলে মেয়োনিসের বাটিতে ঢেলে দিল। তারপর চামচ দিয়ে মিশিয়ে নিতে লাগল। উর্মি কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল,” হায় হায়, এইটা কি করতাসেন? এইটা তো খাওনের জিনিস৷ ”
” চুপ থাক তুই। ”
মেহেক বাটিটা সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে রেখে বলল,” নে। এখন এইটা ওদের কাছে নিয়ে যাবি৷ কিন্তু কাউকে খেতে দিবি না। সুজির হালুয়ার চুলে এই আঠার মিশ্রণ যদি ঢালতে পারিস তাহলে তোকে আমি এক হাজার টাকা দিবো। সাথে অনেক সুন্দর একটা উপহার দিবো।”

” আমারে মাইরা ফালাইবো আপা। উনি যেই দজ্জাল। প্লিজ আমারে এই ঝামেলায় ফালায়েন না। উজানরে কন।”
” উজান পারবে না। তুই-ই পারবি। না পারলে তোর খবর আছে। যা এখন।”

উর্মি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো বানিয়ে খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে গেল। মেহেক চলে যাওয়ার সময় দেখল উর্মি সুজির চুলে ফট করে আঠার মিশ্রণ ঢেলে দিয়েছে। সবাই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেছে। ওইদিকে কান না দিয়ে মেহেক চলে গেল ফারদিনের কাছে। গাড়িতে উঠেই বলল,” দ্রুত চলুন। এমনিই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর এক মিনিটও দেরি করা যাবে না।”

মেহেক আর ফারদিন এখন এমন একটা রেস্টুরেন্টে আছে যেখানে বারোশো টাকার একটা বড় পিজ্জা দশমিনিটে খেয়ে শেষ করতে পারলে তেরোশো টাকা পুরষ্কার! ফারদিন এই চ্যালেঞ্জ দেখে তুমুল উৎসাহ নিয়েই টেবিলে বসলো। মেহেক বলল,” পিজ্জার সাইজ দেখেছেন? এইটা তো দশজন খেয়েও শেষ করতে পারবে না।”

” তোমার মতো দশজন হলে তো শেষ হবেই না। আমার মতো একজনই যথেষ্ট। ”

” না খেতে পারলে কিন্তু ডাবল পেমেন্ট করতে হবে। শর্তে লেখা আছে। দেখেছেন?”

” দেখেছি। আর সমস্যা কই? প্রয়োজন হলে করবো ডাবল পেমেন্ট!”

” কি দরকার শুধু শুধু এমন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার? ”

” মজা আছে। তুমি বুঝবে না৷ এটা শুধু আমাদের মতো ভোজনরসিকরাই বুঝবে। দেখো, কত মানুষ এসেছে চ্যালেঞ্জ নিতে।”

” এরা সবাই পাগল। সাথে আপনিও পাগল।”

ফারদিন হো হা করে হেসে উঠলো। কিছুক্ষণ পরেই ওয়েটার ইয়া বড় একটা পিজ্জা এনে ফারদিনের সামনে রাখল। ভিডিও করা হবে। স্টপওয়াচ ধরে একজন দাঁড়িয়ে থাকবে। অন্যজন ডিরেকশন দিতে থাকবে। মেহেকের এইসব দেখতে ভালো লাগছে না। খাবার নিয়ে এই ধরণের বাজি তার একদম পছন্দ না। কি দরকার একজন মানুষকে ঠেসে ধরে একগাঁদা খাওয়ানোর? এতে যেমন মানুষটির শারীরিক ক্ষতি হয় তেমনি খাবারও অপচয় হয়। অথচ রাস্তায় কত মানুষ না খেতে পেয়ে মরে। কত ক্ষুধার্ত কুকুর-বিড়াল আছে। এইভাবে খাবার নষ্ট করার চেয়ে তাদের বিলিয়ে দেওয়াই কি ভালো না?

মেহেক টেবিল থেকে উঠে চলে এলো। সে দেখবে না এই তামাশা। আসার সময় ফারদিনের থেকে তার মোবাইলটাও চেয়ে এনেছিল। রেস্টুরেন্টের পেছন সাইটটা অনেক সুন্দর। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে মেহেক নিজের কয়েকটা ছবি তুলল। ফারদিনের খাওয়ার অভিযান শুরু হয়ে গেছে। কেমন রাক্ষসের মতো খাচ্ছে, ছি! কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার ওই অবস্থাতেও মানুষটিকে দেখতে চমৎকার সুন্দর লাগছে। এই লোক কেন এতো সুন্দর? মেহেকের হাতে ফারদিনের মোবাইল বেজে উঠলো। ফোন করেছে সুজানা। মেহেক নামটি দেখে আক্রোশে জ্বলে উঠল। এই মেয়ে কি তাদের একফোঁটাও শান্তি দিবে না? বিয়ের পর এই প্রথমবার ওরা কোথাও ঘুরতে এসেছে। তাও এই সুজির হালুয়ার জন্য শান্তিতে থাকা যাচ্ছে না। উর্মি যে ওর সুন্দর চুলে আঠা লাগিয়ে বারোটা বাজিয়েছে তাও কি শিক্ষা হয়নি? মেহেক সুজির ফোনটা কেটে দিল। তারপর নাম্বার ব্ল্যাকলিস্ট করে রাখল যেন সুজি আর ফোন দিতে না পারে। একটু পর কল আসলো পূর্বিতার নাম্বার থেকে। মেহেক সেটাও কেটে দিল। বার-বার সবাই ফারদিনকে কল দিচ্ছে কেন আজ? মেহেক কারো সাথে ফারদিনকে কথা বলতে দিবে না। আজকে সারাদিন ফারদিন শুধু তার সঙ্গে কাটাবে। অন্যকারো কথা ভাববে না। মেহেক পূর্বিতার নাম্বারটাও ব্ল্যাকলিস্ট করে দিল। তারপর একে একে আনজীর, ওয়াসীমের নাম্বারও ব্ল্যাকলিস্ট করল। ব্যস, এখন শান্তি! আর কেউ জ্বালাবে না তাদের। মেহেক ফিরে এসে দেখলো ফারদিনের পিজ্জা খাওয়া শেষ। মাত্র ছয়মিনিটেই সে পুরো পিজ্জা কমপ্লিট করে ফেলেছে। মেহেক আশ্চর্য হয়ে গেল। একটা সাধারণ মানুষ এতো কিভাবে খেতে পারে?

তেরোশো টাকা পুরষ্কার পাওয়ার পর ফারদিন মেহেকের কাছে এসে বিজয়ীর মতো হাসি দিয়ে বলল,” দেখেছো, বলেছিলাম না? আমি হেরে যাওয়ার ম্যাটেরিয়াল না।”

” হুম দেখলাম। আপনি হচ্ছেন খাদক ম্যাটেরিয়াল।”

” এখন বলো তুমি কি খাবে?”

” আপনার খাওয়া দেখে আমারই পেট ভরে গেছে। আমি আর কিছু খেতে চাই না। এখন চলুন এখান থেকে। ”

” এই, সিরিয়াসলি?”

” হ্যাঁ।”

মেহেক রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়েই দেখতে পেল ফুটপাথে এক লোক রঙ-বেরঙের গ্যাস বেলুন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেক আনন্দে চিৎকার দিয়ে বলল,” বেলুন কিনবো!”

” তুমি কি বাচ্চা মেহেক?”

মেহেক বক্রদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,” বাচ্চা না হলে কি বেলুন কেনা যায় না? তাছাড়া আপনিই তো আমাকে পুচকী বলেন। তাহলে এখন পুচকীকে বেলুন কিনে দিন।”

” কি করবে বেলুন দিয়ে?”

” একটা একটা করে আপনার কানের কাছে এনে ফাটাবো। হি-হি!”

” এইসব বান্দরামি করার জন্য তোমাকে আমি বেলুন কিনে দিতে পারবো না। স্যরি।”

” আরে, দুষ্টুমি করেছি। বেলুন নিয়ে আমি আকাশে উড়াবো। প্লিজ,প্লিজ কিনে দিন না!”

ফারদিন দশটা বেলুন একসাথে সুতোয় বেঁধে মেহেকের কাছে নিয়ে এলো। মেহেক বেলুনগুলোর সুতো আঙুলের সাথে বেঁধে কি খুশি! একবার ডানে ঘুরায় তো আরেকবার বামে। পারলে নিজেই বেলুন নিয়ে আকাশে উড়ে যায়। একদম বাচ্চাদের মতো আচরণ! পুরো বিকেলটা ফারদিন আর মেহেকের নেভাল সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে কাটলো। বন্ধুরা হয়তো ওয়ার সিমেট্রি ঘুরছে। ফারদিন বন্ধুদের ফোন করতে নিয়েও মেহেকের জন্য করতে পারলো না। মেহেক বলেছে যতক্ষণ ও পাশে থাকবে ততক্ষণ ফোনে কথা বলা যাবে না। ফারদিন আজকের জন্য সব মেনে নিচ্ছে। মাত্র একটাদিনেরই তো ব্যাপার। সুজানাদের সাথে যোগাযোগ না হওয়ার কারণে ফারদিনের আর জানা হলো না যে তারা কেউই আসলে ঘুরতে বের হয়নি।

সন্ধ্যা নামার আগেই দুনিয়া অন্ধকার করে বৃষ্টি নামলো ঝমঝমিয়ে। ফারদিন আর মেহেক তখন সোজা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল। আর কিছুক্ষণ পরেই তারা ফিরে যেতো। এর মধ্যেই শুরু হলো বৃষ্টি।গাড়ির পার্কিং লট এখান থেকে অনেক দূরে। বৃষ্টির মধ্যে কিছুতেই যাওয়া যাবে না। গাড়ি পর্যন্ত যেতে হলে একটা রিকশা লাগবে। ফারদিন মেহেককে বড় একটি ছাউনির নিচে দাঁড় করিয়ে রিকশা আনতে গেল। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে সড়কে রিকশা নেই তেমন। যারা আছে তারাও যেতে রাজি হচ্ছে না। ফারদিন অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজলো। শেষমেষ পেল না। ওইদিকে মেহেক অনেকক্ষণ ধরে একা। ওর কাছে মোবাইলও নেই। ফারদিন তাই বেশি দেরি না করে মেহেকের কাছে ফিরে গেল। কিন্তু ছাউনির নিচে এসে মেহেককে পেল না। ফারদিনের হৃৎপিন্ড অজানা ভয়ে চিলিক দিয়ে উঠলো। কোথায় মেহেক? দূরে তাকাতেই দেখল মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজছে আর একা একা নাচছে। নাচের তালে সে এতোটাই বিভোর যে দিন-দুনিয়ার কোনো খবরই নেই। ওদিকে তার লেহেঙ্গার স্কার্ট পেট থেকে সরে কোমর পর্যন্ত নেমে এসেছে। সেই খেয়াল কি আছে মেয়েটার? ফরসা, মসৃণ পেটটা অন্ধকারে ঝিলিক দিচ্ছে। যে কোনো সাধারণ মানুষের মাথা নষ্ট করার জন্য এমন একটা দৃশ্য যথেষ্ট। ফারদিন এই মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবে? সামান্য কমন সেন্সও নেই মেয়েটার। সে দৌড়ে গিয়ে মেহেকের কোমড় ধরে ওকে তুলে এনে ছাউনির নিচে দাঁড় করালো।স্কার্টের নাট উপরে তুলে শক্ত করে বেঁধে দিতে দিতে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,” ইডিয়েট একটা। বৃষ্টিতে কেন ভিজতে গিয়েছো? তোমাকে না দাঁড়িয়ে থাকতে বললাম? ”

মেহেক ফারদিনের কথার উত্তরে তাকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিল। ফারদিন বিস্ময়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। তারপর ক্ষেপে বলল,” কথায় কথায় চুমু খাওয়া এটা কোন ধরণের অভ্যাস?”

মেহেক মিষ্টি হেসে বলল,” নিজের বরকেই তো চুমু খাচ্ছি। অন্যমানুষকে তো না।”

” আর কখনও এই কাজ করবে না ”

” কেন করবো না? অবশ্যই করবো। আমার এটা করতে খুব ভালো লাগে।”

” শোনো মেহেক, তুমি যদি আর কখনও আমার পারমিশন ছাড়া আমাকে কিস করো তাহলে আমি তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবো। মনে থাকে যেন।”

” আপনি না, পুরাই একটা ভেলকা।”

” হোয়াট?”

” আপনার থেকে রুমি ভাই ভালো ছিল।”

” এই রুমি ভাইটা আবার কে?”

” আমাদের গ্রামের একটা ভাই৷ আমাকে খুব পছন্দ করেন।”

” তোমাকে তো তোমার গ্রামের সব ভাই পছন্দ করে। তাদের ঘাড়ে না ঝুলিয়ে তোমার বাপ কেন আমার ঘাড়েই তোমাকে ঝোলাতে এলো কে জানে?”

মেহেক মুখ দিয়ে ভেংচি কাটলো। অর্থাৎ ফারদিনের কথা তার পছন্দ হয়নি। বাড়ি ফিরতেই পূর্বিতা ফারদিনের হাত ধরে বলল,” দোস্ত এসেছিস? তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম৷ একটা ঘটনা ঘটেছে।”

” কি ঘটনা?”

ওদিকে মেহেকের মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেল। পূর্বিতা মেহেকের দিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ফারদিনকে বলল,” এদিকে আয়, বলছি।”

ফারদিন পূর্বিতার সাথে চলে গেল। মেহেক তখন দৌড়ে উর্মিদের ঘরে গেল। উর্মির মুখ বিমর্ষ। চেহারা কাঁদো কাঁদো। নিশ্চয়ই সাংঘাতিক কিছু হয়েছে। কিন্তু হয়েছে কি? মেহেকের এই প্রশ্নের উত্তরে উর্মি বলল,” এদিকে আহেন। বলতাছি।”
উর্মি মেহেককে ঘর থেকে বের করে আড়ালে নিয়ে এলো। এরপর পুরো ঘটনা খুলে বলল। সুজির চুল থেকে শেষমেষ আঠা ছাড়ানো যায়নি৷ মাথায় ম্যায়োনিস পড়ার পর সে প্রায় সাত-আটবার গোসল করেছে। তাও কোনো লাভ হলো না। অবশেষে বিকালের দিকে পূর্বিতা আর সুজানা পার্লারে গিয়ে চুল কেটে এসেছে। সুজির কোমড় পর্যন্ত চুল এখন ঘাড় পর্যন্ত। এই কথা শুনে খুশিতে মেহেকের মন চাইলো নৃত্য করতে। কিন্তু উর্মি বলল, সুজি নাকি সবকিছু বুঝে ফেলেছে। চুল কাটার দুঃখে সে প্রচন্ড রেগে ছিল। উজানকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছে ম্যায়োনিসে আঠা কিভাবে এসেছিল। কারণ উজান ডেলিভারি ম্যানের থেকে খাবারের পার্সেল রিসিভ করেছিল৷ তাই সুজি প্রথমেই ওকেই সন্দেহ করে।

উজানকে যখন সুজি ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করল তখন উজান ভয়ে সবকিছু সত্যি বলে দেয়। এখন সুজি ফারদিনকে তার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছে মেহেকের নামে বিচার দেওয়ার জন্য। এই কথা শুনে মেহেকের ছোট্ট কলিজা ভয়ে নিভু নিভু। সে কি করবে এখন? ওই উজানের বাচ্চাকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। ফারদিন নিশ্চয়ই খুব রেগে যাবে। মেহেক ঠিক করল সে এখন কোথাও লুকিয়ে পড়বে। যাতে ফারদিন তাকে খুঁজেই না পায়। কিন্তু কোথায় লুকাবে সে? আলমারীতে? খাটের নিচে? না,না, আরও ভালো কোনো জায়গা খুঁজতে হবে লুকানোর জন্য।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here