#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৬ #রাগী_অভি
#নবনী_নীলা
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। আমি রচনাকে শাকিলের পাশে বসিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখি অভি আমার দাঁড়িয়ে আছে। এখন আসার সময় হলো তার? হালকা হলুদ রঙের পাঞ্জাবির সাথে সাদা প্যান্টে সুদর্শন লাগছে তাকে। অভি বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব মনযোগ সহকারে আমাকে দেখছে। আসে পাশের সবার দৃষ্টিও যেনো আমাদের দিকে। আমার অসস্তিবোধ হলো আমি রচনার পাশে গিয়ে বসলাম।
অভি এগিয়ে এসে শাকিলের সাথে হ্যান্ডশেক করলো। শাকিল দাড়িয়ে অভিকে জড়িয়ে ধরলো। রচনা আর আমি একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি। এ বাবা এদের এতো ভাব? আগে থেকে চিনে নাকি একে অপরকে?
অভি বলে উঠলো,” তাহলে শাকিল শেষমেশ বিয়ে করছো। বেশ কড়া মেজাজের একটা বউ পেয়েছো।”
” বুঝে শুনে কথা বলো আমাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কিছু বললে তোমাদেরই বিপদ।”, রাগ করার ভান করে বললো রচনা।
” নাহ্ আমরা তোমাকে কি কিছু বলেছি?”,শাকিল বললো।
একটা প্রজেক্টের কাজে শাকিল আর অভির দেখা হয় তখন থেকেই ভালো বন্ধু তারা। হোটেলের ছাদে আমরা সবাই। যেই ফ্লোর এ হলুদের অনুষ্ঠান হবে সেখানে কিসের আয়োজন চলছে বড়রা আমাদের সেখানে যেতে দিচ্ছে না।
আমি আমাদের কিছু ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম। ঋতু,নীলিমা, শৌভিক ওরা সবাই এসেছে। অনেক দিন পর সবার সাথে দেখা, ওদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি। আমরা সবাই দাড়িয়ে আছি সুইমিং পুলের কাছে।
হটাৎ আমার মোবাইল বেজে উঠলো দেখলাম অভির কল। মনে হয় আমাকে খুঁজছে। এদিকে এতো গান চলছে আমি তাই একটু দূরে আসলাম যাতে কল রিসিভ করতে পারি। কিন্তু হোচট খেয়ে ফোনটা হাত থেকে পড়ে সুইচ্ অফ হয়ে গেছে। আমি ফোনটা তুলে ঠিক করার চেষ্টা করছি।
এদিকে সবাই যে নিচে যাচ্ছে সেদিকে আমার খেয়াল নেই আমার ফোন কেনো অন হচ্ছে না এটাই এখন আমার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা।
হাটতে হাটতে সামনে তাকিয়ে দেখি রাহাত ভাই এদিকেই আসছে। উনি আমার সামনে এসে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে আছেন। ওনাকে পাত্তা দেয় কে? যতক্ষণ পারে দাড়িয়ে থাকুক।
” কি করছো নওরীন?”,বললেন রাহাত ভাই। একে আমার দেখতেই ইচ্ছে করে না অসহ্য।
” আমি নৌকা চালাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছেন না ফোনটা বন্ধ ঠিক করছি আবার জিজ্ঞেস করছেন কেনো?”,রেগে বললাম আমি।
” মনে হচ্ছে তুমি রেগে আছো। আজকে কিন্তু তোমাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।”,বলেই একটু হাসলেন রাহাত ভাই।
আজকে যখন থেকে সেজেছি সবাই এসে একই কথা বলছে অন্যরকম সুন্দর, আগের থেকে সুন্দর হয়ে গেছিস। এক দিনে রূপবতী হয়ে গেলাম নাকি? রাহাত ভাই আবার কথা বলা শুরু করেছে।ওনার কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে। আমি ওনাকে পাত্তাই দিলাম না ফোনটা খুলার চেষ্টা করছি।
” তোমার থেকে চোখ সরাতে পারছি না। তোমার বরের একটা ব্যাবস্থা করতে পারলে তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।”, নির্ভয়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছে রাহাত ভাই। এইযে এই সভাবের কারণে লোকটাকে আমার পছন্দ না। আশ্চর্য রকমের বেহায়া উনি। দাড়ান আপনাকে আমি পড়ে দেখে নিচ্ছি আগে আমার ফোনটা ঠিক হোক।
আমি কিছু বলার আগে দেখি রাহাত ভাইয়ের চোখ মুখ কেমন জানি হয়ে গেছে। আমি পিছে ফিরতেই অভির বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম। চোখ তুলে দেখি অভি মুখ আর হাত শক্ত করে দাড়িয়ে আছে। অভি কি সবটা শুনেছে। এমন রাগী চেহারা আগে কখনো আমি দেখিনি অভির।
অভি আমাকে টেনে দূরে সরিয়ে রাহাত ভাইয়ের সামনে গেলো। পাঞ্জাবির হাতা গুঁজতে গুঁজতে বললো,” ভাই আপনি কি বলছিলেন যদি আরেকবার বলতেন। একটু স্পষ্ট করে আমার সামনেই বলুন। কিসের ব্যাবস্থা করতে চাচ্ছেন শুনলাম।”, অভির কথার গাম্ভীর্যতায় আমি ভয় পাচ্ছি।
আমি একটু চিন্তা করলাম আমি ভুল ভাল কিছু বলেছি কিনা? কারণ শেষ বোমাটা তো আমাকেই মারবেন উনি। নাহ্ চিন্তা করে আমার কোনো দোষ খুজে পেলাম না।
রাহাত ভাই একটু বেশি কথা বলে উনি পারে না এক আনা কথা বলে দশ আনা।
রাহাত ভাই হেসে ব্যাপারটা সামলে নিতে চাইলেন কিন্তু অভির মুখের গাম্ভীর্য ভান যায় নি। পরে রাহাত ভাই বললো,” মজা করছিলাম।” আসছে মজা করেছি বলবে আর অভি বিশ্বাস করে নিবে?
অভি বললো,” রাতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কখন মার খেয়েছেন। কখনো বস্তায় ভরে কেউ মেরেছে আপনাকে?”
রাহাত ভাই আবার ঢোক গিললেন। আমি অভির কথা শুনে অবাক এইরকম গুন্ডা মার্কা কথাও বলতে পারেন উনি?
অভি পাঞ্জাবির হাতা নামতে নামতে বললো,” আপনাকে যেনো আমি আর কোনোদিন আমার ওয়াইফের আসে পাশে না দেখি। রাস্তায় তো বের হতেই হয় কার কখন কি হয়ে যায় বলাতো যায় না।”
রাহাত ভাই এই প্রচন্ড বাতাসে ঘামিয়ে শেষ। অভি আরও বললো,”যা বলেছি সেটা বুঝতে পারলে আসুন এবার।”
রাহাত ভাই ঘাম মুছতে মুছতে চলে গেলেন। অভি আমার দিকে ফিরে আমার হাত ধরে এনে নিজের সামনে দাড় করালো।
আমার দুইপাশের রেলিং ধরে আমার দিকে ঝুঁকে দাতে দাঁত চিপে বললো,”তুমি এতক্ষন একা একা কি করছিলে?”অভির মুখের গাম্ভীর্যতা এখনও কাটেনি। দেখেই তো আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এইখানে আমার কোনো দোষ নেই।
আমি নির্ভয়ে বললাম,” আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছিলাম।”
” আচ্ছা, তা কোথায় তোমার ফ্রেন্ডরা?”
আমি আসে পাশে তাকিয়ে দেখি পুরো ছাদ ফাঁকা শুধু আমি আর অভি ছাড়া কেউ নেই। আমার মুখ হাঁ হয়ে গেলো আমি বলে উঠলাম,” কোথায় সবাই?”
অভি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” তোমার ফোনের কি হয়েছে?”
আমি বললাম,” হাত থেকে পড়ে ফোন অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
অভি মুখ শক্ত করে আছে। এবার আমি একটা ঢোক গিললাম। বাতাসে আমার চুল গুলো উড়ছে কয়টা চুল গিয়ে অভির মুখে পড়েছে অভি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমি তাড়াতাড়ি অভির মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে বললাম,” সরি সরি।”
বলেই চুলে একটা খোঁপা করে ফেললাম। এর মাঝে অভি একটা কথাও বলল না শুধু আমার দিকে তাঁকিয়ে রইলো। এভাবে তাকিয়ে থাকায় আমার কেমন জানি লাগছে।
অভি সোজা হয়ে দাড়িয়ে দুই হাত বুকের কাছে ভাজ করে দাঁড়ালো। আমি একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়লাম। অভি আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,” এতো সেজেছো কেনো?”
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম, এটা আবার কেমন প্রশ্ন? এমন প্রশ্ন আমি এর আগে কেউ করেনি আমাকে। আমি আড় চোখে তাকিয়ে বললাম,” মানে? আমাকে কি খারাপ লাগছে দেখতে?”
অভি বললো,” হুম। বাঁদরের মতন লাগছে।”
” কি বললেন আপনি! বাঁদরের মতন লাগছে? রাহাত ভাই আর সবাই যে বললো ভালো লাগছে।”, মন খারাপ করে বললাম।
” হ্যা এক বাঁদরের তো আরেক বাদরকে ভাল্লাগবে এটাই স্বাভাবিক।”, বললো অভি।
” আপনি আমাকে বাঁদর বললেন তো আমি বাঁদর হলে আপনি কি? আপনি হচ্ছেন গরিলা। আপনার সাথে আমি কথাই বলবো না।”,বলে আমি চলে যেতেই অভি আমার শাড়ির আঁচল ধরে ফেললো।
আমি আঁচল ছড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু অভি ছাড়ছে না।আমি রেগে বললাম,” অসভ্যতা করছেন কেনো? ছাড়ুন আমার আঁচল।”
অভি আমার কোমর ধরে ওর কাছে নিয়ে বলে,” আমি অসভ্যতা করছি? অসভ্যতা কি দেখবে?”
[ চলবে ]