অনপেখিত পর্ব ১১ লিখা Sidratul Muntaz

0
91

#অনপেখিত
পর্ব ১১
লিখা Sidratul Muntaz

মেহেক হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে এসেছে। তখন শেষ গোধূলির সময়৷ সূর্য পশ্চিমাকাশ ঘেঁষে সমুদ্রের কোলে ডুবে যাচ্ছে। সেই মনোমুগ্ধকর আকর্ষণীয় দৃশ্যটি দেখার জন্য অধিকাংশ পর্যটক ভীর জমিয়েছে সমুদ্র তীরে। তাই আশেপাশে এখন মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। প্রায় সব মানুষ ব্যস্ত সূর্যোদয় উপভোগ করতে। সেই সময় চোখে পানি নিয়ে, ধীর পায়ে, অর্ধভেজা জামা-কাপড়ে, চোখ জুড়ানো সুন্দর এক ফুটফুটে কিশোরী হেঁটে যাচ্ছিল নিরুদ্দেশভাবে।

সুজানার সাথে কথা কাটাকাটির পর ফারদিন যখন ঝাউবন থেকে ফিরে এলো তখনি পূর্বিতা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করল,” দোস্ত, মেহেক কোথায়? মেহেককে দেখেছিস?”

ফারদিনের মেজাজ আগে থেকেই বিগড়ে ছিল। এই প্রশ্ন শুনে আরও রেগে বলল,” আমি কি জানি? আমি কি ওকে পকেটে নিয়ে ঘুরি?”

এই উত্তর দিয়েই পূর্বিতাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল ফারদিন। পূর্বিতা সুজানার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল,” এর আবার কি হয়েছে?”

সুজানা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,” বাদ দে। ও তো এমনি।”

পূর্বিতা অস্থিরচিত্তে বলল,” দোস্ত, মেহেককে তো কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।”

” বলিস কি? ভালো করে খুঁজেছিস?”

” অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছি। কোথাও নেই।”

” ও কি সাতার জানে? ঢেউয়ের সাথে ভেসে গেল না তো আবার?”

” ধূর, নেগেটিভ কথা বলিস না। এমনিতেই ভয়ে আছি।”

” ফারদিনকে জানিয়েছিস?”

” জানাতেই তো গেছিলাম। দিল তো এক ঝারি।”

” চল, আমি বলছি।”

সুজানা পূর্বিতাকে নিয়ে ফারদিনের কাছে গেল,” ফারদিন, মেহেককে দেখেছিস কোথাও?”

ফারদিন রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাল,” তোদের কি মনে হয়? ওকে দেখা ছাড়া আমার অন্যকোনো কাজ নেই? আমি কি সারাক্ষণ শুধু ওকেই দেখি?”

পূর্বিতা বুঝানোর চেষ্টা করে বলল,” মেহেককে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দোস্ত। সেজন্য জিজ্ঞেস করলাম তুই দেখেছিস কি-না?”

ফারদিন নির্বিকার ভঙ্গিতে সিগারেটে টান দিয়ে বলল,” দ্যাখ আশেপাশেই আছে। যাবে আর কোথায়? এতো সহজে চলে গেলে তো বেঁচেই যেতাম।”

এই কথা শুনে সুজানা আর নিজেকে সামলাতে পারল না। সটন ফারদিনের গালে একটা তাৎক্ষণিক চড় বসিয়ে দিল৷ ফারদিন হতভম্ব! সুজানা কটমট করে বলল,” ভাবতেই ঘৃণা লাগছে তোর মতো একটা মানুষকে আমি ভালোবেসেছিলাম!”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পূর্বিতা সুজানার হাত ধরে টেনে বলল,” ধূর, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করিস না। এখন সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট মেহেককে খুঁজে বের করা।”

“ও কি কথাটা বলল শুনলি? এতোটা ফালতু ও কিভাবে হয়ে গেলরে? আমার অবাক লাগে!”

” এখন মাথা ঠান্ডা কর। মেহেককে খুঁজতে হবে!”

চার বন্ধু মিলে সারা সমুদ্র সৈকত খুঁজেও মেহেকের কোনো হদিশ পেল না। তারা সবাই মেহেককে শুধু এক জায়গাতেই খুঁজছিল। যেহেতু মেহেক এখানকার কিছু চেনে না তাই সে দূরে কোথাও যেতে পারে বলে কারো ধারণা হয়নি। কিন্তু ফারদিন কি মনে করে যেন ঝাউবন পেরিয়েও সামনের খোলা রাস্তা দিয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে গেল। আর সে আশেপাশের মানুষদের মেহেকের একটা ছবি দেখিয়ে খুঁজছিল। বেশিরভাগ মানুষই মেহেককে চিনতে নাকচ করল। কিন্তু একজন লোক জানাল, তিনি নাকি মেহেককে এই রাস্তায় হাঁটতে দেখছেন। পরে ফারদিন সেই আগন্তুকের অনুসরণকৃত রাস্তা বরাবরই এগিয়ে গেল।

ফারদিন অস্থির হয়ে মেহেককে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। মেয়েটা হারিয়ে গেলে তাকেই দাদুর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। খুঁজে পাওয়ার পর তাকে কষে একটা চড় লাগাতে হবে। ফাজিল মেয়ে! শুধু শুধু সবাইকে হ’য়রানি করা! ফারদিন চিৎকার করে মেহেকের নাম ধরে ডাকছিল আর সামনে যাকেই পাচ্ছিল, মোবাইল থেকে মেহেকের ছবিটা বের করে দেখাচ্ছিল।

কয়েকটি ছেলে কখন যেন মেহেককে পেছন থেকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে মেহেক তা টেরও পায়নি। অনেক দূর চলে আসার পর যখন তার সম্বিৎ ফিরলো, সে আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো জায়গাটা কই? তখনি খেয়াল করল এই নীরব, অচেনা জায়গায় তাকে কারা যেন অনুসরণ করছে। তাদের নজর ভয়ংকর, নোংরা! ব্যাপারটি উপলব্ধি হতেই মেহেকের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। সে দ্রুত হাঁটা ধরলো। কিন্তু কালো বর্ণের, লাল চোখের উশকোখুশকো চুলওয়ালা ছেলেগুলো তার পিছু ছাড়লো না।বরং মেহেকের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই হাঁটতে লাগল তারা। গান গাইতে লাগল, একে অন্যকে ইশারা করে মেহেকের দিকে বাজে ইঙ্গিত দিতে শুরু করল, শিষ বাজাল কয়েকবার। এদের উদ্দেশ্য যে মোটেও শুভ নয় সেটুকু বোঝার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি মেহেকের আছে। এইরকম ভয়ংকর নিস্তব্ধ জায়গায় তার চিৎকার শোনার জন্য কেউ নেই। মেহেক কোনো জায়গা পাচ্ছিল না লুকোনোর। মনে হচ্ছে যেকোনো সময় জানোয়ার গুলো তার উপর হামলে পড়বে!

মেহেক নিজেকে বাঁচানোর পথ খুঁজতে লাগল। আরও কিছুদূর সামনে যেতেই একটি পাবলিক টয়লেটের দালান দেখতে পেল। কোনোকিছু চিন্তা না করেই ঢুকে গেল সেখানে। আর দূর্ভাগ্যবশত সেখানেও মানুষের উপস্থিতি অত্যন্ত ক্ষীণ। মেহেক দুরু দুরু আত্মা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল। বাথরুমে ঢোকার আগে সে এক মাঝবয়েসী ভদ্রলোককে বাইরে দাঁড়ানো দেখেছিল। মেহেক যদি সেই লোকটির কাছে এখন সাহায্য চায়, তিনি কি মেহেককে বাঁচাবেন? বিপদে পড়লে শুধু খারাপ আশংকাই মাথায় আসে।

মেহেকের মনে হচ্ছে এখন কেউ তাকে সাহায্য করবে না। সবাই শুধু তার একাকিত্বের সুযোগ নিতে চাইবে। মেহেক আল্লাহকে ডাকতে লাগল এক মনে। অতিরিক্ত চিন্তায় তার প্রস্রাবের বেগ পাচ্ছিল। বাথরুমেই যেহেতু আছে আর এখানেই তাকে থাকতে হবে যতক্ষণ না ওই আগন্তুকটি চলে যায়, তাই মেহেক নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে নিচ্ছিল। তখনি হঠাৎ দ্রিম দ্রিম শব্দে দরজায় করাঘাত শুরু করে তারা। যেন এখনি ভেঙে ফেলবে দরজাটা। মেহেকের কলিজা তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। সে মুখে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখল। কিছুতেই দরজা খুলবে না সে। দরজা খুললেই তার বিপদ। ভয়ংকর বিপদ! এইভাবে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর হঠাৎ দরজা ধাক্কানো বন্ধ হয়ে গেল। মেহেক দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে থরথর করে কাঁপছিল৷ এই পৃথিবীতে নিজেকে বড় একা মনে হচ্ছে। কেউ কি নেই যে তাকে একটু সাহায্য করতে পারে?

মেহেক আরও কিছুক্ষণ বাথরুমেই বসে রইল। বের হওয়ার সাহস তার মধ্যে নেই। শুধু নিষ্পাপ চোখ দু’টি থেকে অবিরাম অশ্রুপাত হচ্ছিল!

” মেহেক! এই মেহেক!”

মেহেকের চিনতে এক মুহুর্ত দেরি হলো না। সাড়া দিতে মন চাইল সাথে সাথে। কিন্তু পারল না। ছেলেগুলো তো বাইরেই দাঁড়িয়ে। সে বের হলেই যদি তাকে আক্রমণ করে?

ফারদিনের কণ্ঠস্বর গাঢ় হয়ে আসছে। সে নিশ্চয়ই আশেপাশেই আছে। এদিকে ফারদিনের ডাক শুনে ছেলেগুলোর চেহারায় ভ*য় আর আতঙ্কের স্পষ্ট সংমিশ্রণ ফুটে উঠল। তারা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ধীরে ধীরে সেখান থেকে চলে গেল। মেহেক দরজার ফাঁকা দিয়ে সেই দৃশ্য দেখেই বড় করে হাঁফ ছাড়ল। ঠিক সেই মুহূর্তেই দেখা গেল ফারদিনকে। তাকে দেখেই কেঁদে উঠল মেহেক। দরজা খুলল শব্দ করে। সেই শব্দ ফারদিনের কানে পৌঁছে গেল। দৌড়ে সে প্রবেশ করল পাবলিক টয়লেটের ভেতরে।

ফারদিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেকের দিকে। মেহেক দৌড়ে এসে ফারদিনের গলা জড়িয়ে ধরল। ঝড়ের বাতাসে ছটফট করা বুলবুলি পাখির মতো কাঁপছে তার শরীরটা। ফারদিন সেই কম্পন খেয়াল করল না। সে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,” সবাইকে টেনশনে ফেলে এই একমাইল দূরে এসে এখানে কি করছিলে তুমি? কত বিপদ হতে পারতো কোনো আইডিয়া আছে? পা বেশি লম্বা হয়ে গেছে তাই না? কিছু বলি না দেখে মাথায় চড়ে উঠেছো! এক থাপ্পড় দিয়ে…”

আর কিছু বলতে পারল না ফারদিন। মেহেক তার সম্পূর্ণ শরীর ফারদিনের উপর ছেড়ে লুটিয়ে পড়ল অচেতনের মতো।

বন্ধুরা মেহেকের পাশাপাশি ফারদিনকেও খুঁজতে শুরু করেছে। প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই তারা শুধু খোঁজাখুঁজি করছে। এতোক্ষণ তো ফারদিন আশেপাশেই ছিল। এখন তাকে দেখাই যাচ্ছে না। কি আশ্চর্য! একটু পরেই পূর্বিতা চেঁচিয়ে উঠলো,” ওইতো ওরা আসছে!”

আনজীর বলল,” কোথায়?”

সবাই দেখল ফারদিন মেহেককে কোলে নিয়ে দূর থেকে হেঁটে আসছে। ওই মুহুর্তে দু’জন দু’জনের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ছিল। অন্ধকার বালুভূমিতে এমন দৃশ্য দেখতে সুন্দর লাগছিল! প্রত্যেকের চেহারাতেই একটা আনন্দের ঝলকানি ফুটে উঠলো। সুজানার মনটা ভালোলাগায় ভরে গেল। ওয়াসীম মুচকি হেসে বলল,” তোরা যা-ই বলিস, দে আর ভেরি কিউট।”

সুজানা তৃপ্ত কণ্ঠে বলল,” হুম। একদম মেইড ফর ইচ আদার।”

আনজীর পকেট থেকে ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নিল।

সেদিন বিচ থেকে ফেরার পর মেহেক কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। রাতে সে পূর্বিতার সাথে শুয়েছিল। মাঝরাতে পূর্বিতা খেয়াল করে মেহেকের জ্বর এসেছে। আর জ্বরের ঘোরে সে কি যেন আবোল-তাবোল বলেই যাচ্ছিল।

পরদিন এই নিয়ে সুজানার সাথে আলাপে বসে পূর্বিতা,” ফারদিনকে বোঝাতে হবে। মেহেক খুব কষ্টে আছে রে সুজি।”

” কি হয়েছে ওর?”

পূর্বিতা রাতের ঘটনা বলল। সুজানা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।

” ডাক তো ওকে।”

মেহেক রুম অন্ধকার করে শুয়েছিল। পূর্বিতা তাকে উঠিয়ে ব্যালকনিতে নিয়ে এলো। সুজানা সেখানেই বসেছিল।চারদিকে শীতল বাতাস। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আকাশে বিদ্যুৎ চ’মকাচ্ছে। তাদের সাথে আছে চা আর পিঠা। পিঠাটা সুজানা খুব শখ করে বানিয়েছে।

গতকালকে একটা বড় দূর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল মেহেকের সাথে। ফারদিন সময়মতো না এলে কি সর্বনাশ হতো তা কল্পনা করেও মেহেক শিউরে উঠছে। এই নিয়েই তার মনখারাপ। সারাদিন ওই ঘটনার কথা ভাবতে ভাবতে সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। কাউকে এই ব্যাপারে কিছু বলেনি। তাই সুজানা আর পূর্বিতা মেহেকের মনমরা অবস্থা দেখে ভাবছে তার বুঝি ফারদিনের জন্যই মনখারাপ।

মেহেকের চিবুকে হাত রেখে সুজানা জিজ্ঞেস করল,” কি হয়েছে তোমার মেহেক? আমার সাথে শেয়ার করো।”

” কিছু হয়নি আপু। শরীরটা খারাপ লাগছে একটু।”মেহেক হাসার চেষ্টা করল।

” কাল থেকেই তোমার মনখারাপ। আমি খেয়াল করেছি। সত্যি করে বলোতো, এর কারণটা কি ফারদিন?”

মেহেক দুইপাশে মাথা নেড়ে বলল,” না, উনার কোনো দোষ নেই।”

বলেই কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল আবার। পূর্বিতা আর সুজানা গা ঘেঁষে বসেছিল। পূর্বিতা ফিসফিস করে বলল,” আমার মনে হয় ফারদিন ডিভোর্সের কথাটা ওকে বলে দিয়েছে। এজন্যই মেয়েটার এতো মনখারাপ। কাঁদছিল শুয়ে শুয়ে। দেখছিস না চোখ দু’টো কেমন লাল?”

সুজানা চোয়াল শক্ত করে বলল,” এই ফারদিনের একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ও খুব বাড়াবাড়ি করছে।”

” কিছুই হবে না। ফারদিনকে তো চিনিস। প্রচন্ড ঘাড়ত্যাড়া। ও কারো কথা শুনবে বলে মনে হয় না।”

সুজানা ফিচেল হেসে বলল,” শুনবে, শুনবে, পৃথিবীতে এমন কোনো পুরুষ নেই যে আকর্ষণীয় নারীমূর্তি দেখেও নিজেকে সামলে রাখতে পারে।”

পূর্বিতা অবাক হয়ে তাকাল। সুজানা বলল,” তুই জানিস আমি কি বলতে চাই।” বলেই এক চোখ টিপল সে। পূর্বিতা অবাক হয়ে বলল,” এর মানে তুই বলতে চাস মেহেকের সাথে ফারদিনকে বাসর করাতে হবে? তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে?”

” এক্সাক্টলি!”

তাদের কথাবার্তায় মেহেকের মনোযোগ নেই। সে নিজস্ব ধ্যানে ব্যস্ত। পূর্বিতা হতাশ গলায় বলল,”কিন্তু দোস্ত, শারীরিক সম্পর্কটাই কি সবকিছুর সমাধান?”

সুজানা শ্রাগ করে বলল,” সবকিছুর সমাধান বলিনি। তবে এর মাধ্যমে ওদের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই কমবে।”

পূর্বিতা গালে হাত রেখে বলল,” সেটা কিভাবে?”

সুজানা বলল,” ফারদিনের মেইন প্রবলেমটা হচ্ছে মেহেকের বয়স নিয়ে। ও মেহেককে একদমই বাচ্চা মনে করে। যদিও সেটা মেহেকের আচার-আচরণেই স্পষ্ট! কিন্তু ওর মধ্যেও যে মেয়েলী জাদু আছে সেটা তো ফারদিনকে বোঝাতে হবে।”

পূর্বিতা মেহেকের দিকে চেয়ে বলল,” মন দিয়ে শুনছো তো?”

মেহেক জবাব দিল না। অবুঝ মুখে চুপচাপ বসে রইল।

পূর্বিতা হতাশ গলায় বলল,” এই মেয়ের দ্বারা আসলেই কিছু হবে না।”

মেহেকের চেহারায় স্পষ্ট অসহায়ত্ব ফুটে উঠল। সুজানা বলল,” আমার মনে আছে, ফারদিন একবার আমাকে বলেছিল ক্যাট্রিনা কাইফের স্লিভলেস ব্লাউজ দিয়ে শাড়ি পরা লুক ওর নাকি খুব পছন্দ।”

মেহেকের মুখ চুপসে গেল। মনের মধ্যে সূক্ষ্ম একটা জ্বলুনি টের পেল হঠাৎ। যা ধীরে ধীরে উঠে আসতে লাগল গলা অবধি। ফারদিনের স্লিভলেস ব্লাউজ দিয়ে শাড়ি পরা লুক পছন্দ – এই কথা সে সুজিকে কেন বলবে?

সুজানা মেহেকের দিকে ফিরে বলল,” শোনো মেহেক, আমার কাছে একটা খুব সুন্দর ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি আছে। অবশ্য আমার সাইজের ব্লাউজ তোমার হবে না। তবে তুমি ইনার দিয়েও ট্রাই করতে পারো। তোমার কাছে লাল রঙের ইনার আছে? সাদা শাড়ির সাথে লাল রঙ ফুটবে ভালো। ”

মেহেক শুকনো মুখে বলল,” লাল নেই কিন্তু কালো আছে।”

সুজানা খুশি খুশি গলায় বলল,” চলবে। সাদার সাথে কালোটাও খারাপ যায় না। নিয়ে আসো তোমার ইনার। বাকি ব্যবস্থা আমি করছি। আজকে এমন আগুন লাগাবো না, ফারদিন জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবে! দেখো এই সুজানার কেরামতি।”

সুজানা মেহেককে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। পূর্বিতা শাড়িটা পরানোর সময় তাকে সাহায্য করল। মেহেকের ভীষণ লজ্জা লাগছিল। শাড়ি সে বহুবার পরেছে। কিন্তু এইভাবে কখনও পরেনি। এতোটা খোলা-মেলা ভাবেও যে শাড়ি পরা যায় সেটা মেহেক জানতোই না। আচ্ছা, এই অবস্থায় সে কি করে ফারদিনের সামনে যাবে?

পূর্বিতা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মেহেকের দিকে। বিমূঢ় বিস্ময়ে বলল,” আমি মেয়ে হয়েও চোখ ফেরাতে পারছি না৷ উফ, সুজি তুই সত্যিই আগুন লাগিয়ে দিয়েছিস। আজকে তো ফারদিন শেষ!”

সুজানা ঠোঁট কামড়ে মেহেকের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলল,” কিছু একটা মিসিং আছে।”

” কি?” মেহেক ভীত গলায় প্রশ্ন করল।

সুজানা কাছে এসে মেহেকের পেটের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে দিল। লজ্জায় নুইয়ে গেল মেহেক। সুজানা বলল,” আহ-হা! কনফিডেন্টলি দাঁড়াও না মেয়ে!মনে করো আমিই ফারদিন। এবার তুমি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলো।”

” কি বলব?” বোকা বোকা কণ্ঠে জানতে চাইল মেহেক।

সুজানা বলল,” উমমম… বলো, লেটস মেইক আউট টু নাইট। ” কেমন গভীর দৃষ্টিতে শীতল কণ্ঠে অদ্ভুত একটা অঙ্গভঙ্গি করল সুজানা।

মেহেক সেসবের ধার দিয়েও গেল না। সে রোবটের মতো বলল,” লেটস মেইক আউট টু নাইট।”

“উফ!এরকম করলে তো ফারদিন ফিরেও তাকাবে না। ইউ হ্যাভ টু বি কনফিডেন্ট!” কপালে হাত ঠেঁকাল সুজানা।

মেহেক হাল ছাড়া গলায় বলল,” আমি পারব না আপু! আমার দ্বারা এসব হবে না। আমি তোমার মতো না।”

কথাটা বলেই সে প্রায় কেঁদে ফেলল। সুজানা হকচকিয়ে গেল। কি করবে বুঝতে না পেরে মেহেকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” আরে কাঁদার কি হলো? তোমাকে আমার মতো হতে কেউ বলেনি পাগল।”

পূর্বিতা বলল,” বাদ দে সুজি। ও যেভাবে আছে সেভাবেই থাক না। সবই তুই শিখিয়ে দিলে হবে নাকি?”

সুজানা ছোট্ট নিশ্বাস ছেড়ে বলল,” ওকে। আমি আর কিছু শেখাবো না। বেস্ট অফ লাক মেহেক।”

ঘড়িতে তখন কেবল সন্ধ্যা সাতটা। মেহেক ফারদিনের বেডরুমে প্রবেশ করেছে। সুজানা আর পূর্বিতা দরজার বাইরে কান পেতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রবল আগ্রহ নিয়ে তারা শোনার চেষ্টা করছে ভেতরের কথোপকথন। ফারদিনের কোলে ল্যাপটপ। সে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপের স্ক্রিনে।

মেহেক ভ*য়ে ভ*য়ে তার দিকে তাকাচ্ছে। তার খুব শীত লাগছে। শীতে গা কাটা দিতে শুরু করেছে। এখানে আবহাওয়া যথেষ্টই ঠান্ডা। যখন তখন বৃষ্টি নামে। হিমশীতল বাতাস বয়। এমন পরিবেশে পাতলা শাড়ি গায়ে সে রীতিমতো কাঁপছে। অথচ তার কপাল জুড়ে ঘাম৷ ভ*য়ে আর লজ্জায় মেহেক তটস্থ হয়ে আছে। সে খুব সাবধানে বলল,” লেটস মেইক আউট টুনাইট।”

ফারদিন অবাক হয়ে তাকাল,”হোয়াট?’

ভ*য়ে ভ্যাবাচেকা খেল মেহেক। কণ্ঠে শব্দরা আটকে গেল। জবুথবু হয়ে দাঁড়াল সে। শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করতে লাগল শরীর। ফারদিন অবশ্য তার দিকে তেমন ভালো করে দেখলও না। সে নিজের কাজ নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত। মেহেককে দেখার আগ্রহ বা সময়; কোনোটাই তার নেই।

মেহেক কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে বলল,” আমি যাই।”

” দাঁড়াও।” মেহেকের দিকে না তাকিয়েই বলল ফারদিন।

মেহেকের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়ল। ফাঁকা ঢোক গিলল কয়েকবার।

” কিছু বলতে এসেছিলে?”

” উহুম। আপনার কিছু লাগবে না কি-না সেটাই দেখতে এসেছিলাম।” তীব্র অস্বস্তি মাখা কণ্ঠে জবাব দিল মেহেক।

ফারদিন নির্বিকার কণ্ঠে বলল,” কিছু লাগবে না আমার। তবে যাওয়ার সময় ফ্যানটা বন্ধ করে যেও। শীত লাগছে।”

ওই পাশ থেকে ফারদিনের কথা শুনে পূর্বিতা হতাশ মুখে বলল,” চোখের সামনে জ্বলন্ত আগুন দেখেও বেটার শীত লাগছে? আশ্চর্য! ”

সুজানা কিছু বলল না। তারা দু’জনেই দেখল মেহেক ইতস্তত করে রুম থেকে বের হয়ে আসছে।

” কি হয়েছে মেহেক? ফারদিন কিছু বলেনি?” সুজানা মেহেকের হাত ধরে প্রশ্ন করল।

মেহেক ম্লান হেসে বলল,” উনি আমার দিকে তাকায়ওনি আপু।”

বলেই দ্রুত হেঁটে চলে গেল সে। পূর্বিতা বলল,” ইশরে, মেয়েটার বোধহয় খুব মন খারাপ হয়েছে। কত আশা নিয়ে এসেছিল!”

সুজানা কোনো কথা বলল না। মুখ অন্ধকার করে দাঁড়িয়ে রইল।

মেহেক গায়ের শাড়ি টেনে খুলে ফেলেছে। ইচ্ছে তো করছে শাড়িটা কুচি কুচি করে কাটতে। নিজের শাড়ি হলে সে অবশ্যই এটা করতো। মুখের মেকাপ সাবানজল দিয়ে ঘঁষে তুলতে লাগল। জীবনে আর কখনও সাজবে না সে।

ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মেঘ ডাকছে, বজ্রপাত হচ্ছে। আনজির বলল,” ওইটা মেহেক না?”

ওয়াসীম তাকিয়ে দেখল। মাথা নেড়ে বলল,” আরে হ্যাঁ তাইতো। ও এখানে কি করছে? বৃষ্টিতে ভিজছে কেন?”

আনজির গলা উঁচিয়ে ডাকল,” এইযে ছোট্ট ভাবী, ভেতরে যাও। রাতের বেলা বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে।”

মেহেক কারো কথা শুনল না। তার বৃষ্টিতে ভিজতেই ভালো লাগছে। জ্বর এলে আসুক, সে পরোয়া করে না।

সুজানা বলল,” ওকে বাঁধা দেওয়ার কিছু নেই। থাকুক নিজের মতো।”

ওয়াসীম দাঁত কেলিয়ে বলল,” ভাবীসাহেবা, আপনাদের বাসর ঘর সাজানোর জন্য ফুল এনেছি। কিন্তু এতো দেরিতে হঠাৎ তোদের বাসর করতে মন চাইল কেন? বুঝেছি, ওয়েদার ডিমান্ড!”

সুজানা হাসল। এটা তার দ্বিতীয় পরিকল্পনা। ফারদিনকে জ্বালাতে হবে। রাতে ডিনারের জন্য বের হতেই ফারদিন দেখল সবাই বাসর ঘর সাজাতে ব্যস্ত। তাদের হৈচৈ দেখে অবাক ফারদিন।

” এখানে কি হচ্ছে? ফুল-টুল দিয়ে কি করছিস তোরা?”

পূর্বিতা বলল,” দেখছিস না? বাসর ঘর সাজাচ্ছি। সুজি আর আনজিরের বাসর হবে আজ।”

” হোয়াট? এখন আবার কিসের বাসর?”

সুজানা বলল,” তোর তাতে কি? আমার বরের সাথে আমি যখন ইচ্ছা বাসর করব। সেই জন্যেও কি তোকে কৈফিয়ৎ দিতে হবে?”

ফারদিন চোখ-মুখ কুঁচকে চলে এলো। এসব দেখে রাগে ফুঁসতে লাগল সে। আনজির আর সুজানার বিয়ে হয়েছে গতকাল। এতোকিছু করার থাকলে তখনি করা যেতো। তা না করে আজকে এসব নাটকের কি মানে? তাকে জ্বালানোর জন্যই কি এতো ফন্দি? সবকয়টা হা’রামি! এদের কারো মুখ সে দেখতে চায় না। নিজের ঘরে এসে বসল ফারদিন। অস্থির লাগছে তার। পায়চারী করতে মন চাইছে। বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল মেহেককে। বকুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজছে। যেন তার চেয়ে সুখী মানুষ এই মুহূর্তে আর দ্বিতীয়টি নেই। কিসের এতো সুখ তার মনে?

ফারদিন গম্ভীর মুখে মেহেকের বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্য দেখতে লাগল। এই মাথা থেকে ওই মাথা দৌড়াতে শুরু করেছে মেয়েটা। তার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। আনমনে গান গাইছে, নাচছে। মাঝে মাঝেই প্রবল উচ্ছ্বাসে পা দিয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে পানির ঝাপটা!

হঠাৎ করেই ফারদিন উপলব্ধি করল, মেয়েটিকে দেখতে তার ভালো লাগছে। মনের মধ্যে কোথায় যেন একটা হুইস্টেল বেজে উঠছে। খুব জোরে বজ্রপাত হলো আচমকা।মেহেকের ভেজা চুল, গায়ের সাথে লেপ্টে যাওয়া শাড়ি, ফরসা-স্নিগ্ধ পেট এক মুহূর্তের জন্য দৃশ্যমান হয়ে উঠল। ফারদিন আচ্ছন্নের মতো তাকিয়ে থেকে হঠাৎ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। পরমুহূর্তেই আবার চিন্তা করল, সে ভুল তো কিছু করছে না। নিজের বউকেই তো দেখছে! তাছাড়া সুজানা যদি তাকে পুরোপুরি ভুলে গিয়ে আনজিরকে নিয়ে এতো সুখে থাকতে পারে তাহলে সে কেন পারবে না? তারও উচিৎ সুজানাকে দেখিয়ে দেওয়া! সেও মুভঅন করতে জানে।

বজ্রপাতের শব্দে মেহেক ভ*য় পেয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগল। বৃষ্টি তার ভালো লাগে। কিন্তু বজ্রপাতে ভীষণ ভ*য় হয়। দ্রুত ঘরে চলে এলো মেহেক। ফারদিন যে বারান্দায় ছিল সেটা সে খেয়াল করেনি। বেতের চেয়ারে তার কাপড়ের ব্যাগটা রাখা ছিল। ভেবেছিল এটা নিয়েই চলে যাবে। কিন্তু যখন দেখল ঘরে কেউ নেই তখন ভাবল দরজা আটকে এখানেই চেঞ্জ করে নিবে।

মেহেক দরজা আটকে দিল।ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথাটা মুছে নিল আগে। ফারদিন ঘরের একপাশে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে দেখছিল সেই দৃশ্য। মেহেক তখনও তাকে লক্ষ্য করেনি। সে পিঠের দিকে হাত বাড়িয়ে ভেজা ব্লাউজের হুকটা খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু পারছে না। সেই মুহূর্তে তার পেছনে এসে দাঁড়াল ফারদিন। নিচু গলায় বলল,” আমি হেল্প করব?”

মেহেক কেঁপে উঠল।পেছনে ঘুরে ফারদিনকে দেখে থতমত খেল। কাঁপা গলায় বলল,” আপনি এখানে?”

” আমার ঘরে আমি থাকব এটাই তো নরমাল!”

মেহেক এলোমেলো ভাবে বলল,” আ’ম স্যরি… আমি আপনাকে দেখতে পাইনি। আমি চলে যাচ্ছি।”

সে যেতে উদ্যত হলেই ফারদিন চেপে ধরল তার হাত। মেহেক দ্বিতীয়বারের মতো কেঁপে উঠল। তার ভেজা ঠোঁট, নরম দৃষ্টি, সরল মুখশ্রী দেখতে দেখতে ফারদিন কেমন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। আ’চমকাই মেহেকের কোমড় জাপটে ধরে ঠোঁটে গভীর চু’মু এঁকে দিল। তার বন্য আচরণে ভ্যাবাচেকা খেল মেহেক৷ ফারদিনের টি-শার্ট খামচে ধরল শক্তভাবে। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই বেসামালের মতো মেহেককে চু’মু খেল ফারদিন।

কিছুক্ষণ পর ছাড়া পেতেই একছুটে বারান্দায় চলে গেল মেহেক। বড় বড় শ্বাস নিতে লাগল। অস্থির লাগছে তার। অজানা শীহরণে বুক কাঁপছে। ফারদিন একহাতে কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিল। তার ভেতর থেকে উত্তপ্ত নিশ্বাস বের হচ্ছে। সে নিজের নিশ্বাসে নিজেই পুড়ে যাচ্ছে! কখন ধীরপায়ে মেহেকের দিকে এগিয়ে গেল তা নিজেও বুঝতে পারল না।

যত্ন করে মেহেকের চুলগুলো ঘাড়ের একপাশে এনে উন্মুক্ত ঘাড়ে চু’মু বসালো ফারদিন। মেহেকের পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল সেই উষ্ণ স্পর্শে। সে কাঁপা কণ্ঠে অনুরোধ করল,” “আমি ভেজা শাড়িটা বদলে আসি প্লিজ?”

ফারদিন শুনল না। তার হাতজোড়া বিচরণ করছিল মেহেকের পিঠে। গলায় অজস্র চু’মু এঁকে দিল। মেহেক লতার মতো গুটিয়ে পড়ছে লজ্জায়। ফারদিন জড়ানো গলায় বলল,” লাগবে না।”

বলেই মেহেককে সামনে ঘুরিয়ে কুচি ধরে টান দিতেই ভেজা শাড়িটা সম্পূর্ণ লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে। মেহেক চোখ বুজে ফেলল তৎক্ষণাৎ। তাকানোর সাহস তার নেই। মনে হচ্ছে সে দাঁড়িয়ে থাকার সম্পূর্ণ শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। লজ্জায় অচেতন হয়ে পড়বে যে-কোনো সময়! ফারদিন তাকে কোলে তুলে নিল। বিছানায় পিঠ ঠেঁকতেই চাদর খামচে ধরেছে মেহেক। তিরতির করে কাঁপছে তার শরীরটা৷ ফারদিন এই অবস্থা মৃদু হাসল।

বাইরে বৃষ্টির তোপ আরও বেড়েছে তখন। দমকা বাতাসের শনশন শব্দে ভেসে যাচ্ছে প্রকৃতি। ভেতরেও তোলপাড় করা ঝড়। মেহেকের চোখে অশ্রুধারা। সে জাপটে ধরে আছে ফারদিনের পিঠ। নখের আঁচরে ক্ষ-ত-বিক্ষ-ত হচ্ছে পিঠের চামড়া। ফারদিন বিছানায় যে ঝড় তুলেছে তা শান্ত হলো দীর্ঘসময় পর। তখন বাইরে বৃষ্টির প্রকোপও থেমে গেছে। টুপটাপ শব্দ হচ্ছে শুধু। জোরালো বাতাস বইছে চারদিকে। ফারদিনের চোখে-মুখে পরিতৃপ্তি ছড়িয়ে আছে। মেহেক প্রায় অর্ধচেতনের মতো শুয়ে আছে। গা জুড়ে তীক্ষ্ণ ব্যথা। ফারদিন হঠাৎ ডাকল,” মেহেক?”

” হু?”

” আর ইউ অলরাইট?”

মেহেক কথা বলল না। আলতো হাতে ফারদিনের গলা জড়িয়ে ধরল শুধু। ফারদিন তার স্পর্শ বুঝতে পেরে মৃদু হাসল। আলতো করে চু’মু দিল মেহেকের কপালে, গলায়, স্পর্শকাতর অঙ্গে। লতানো শরীর নিয়ে আবারও কেঁপে উঠল মেহেক। অসীম সুখে চোখ বুজে এলো।ভোর হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অসীম পরিতুষ্টি নিয়ে ঘুমিয়ে গেল ফারদিন। মেহেক জেগে রইল। ঘুম আসবে না তার। ঘুমন্ত ফারদিনের মুখের দিকে বুদ হয়ে তাকিয়ে রইল সে। হুট করেই মনে হলো ইশ, সময়টা থেমে যাক এখানেই।শুধু এই মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সে পুরো এক জীবন পার করে দিতে পারে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here