#অনপেখিত
পর্ব ১৭
লিখা Sidratul Muntaz
অনেক রাত অবধি ব্যালকনিতে বসে রইল মেহেক। ছোটচাচী রান্নাঘরের বাতি নিভিয়ে শোবার ঘরে যাওয়ার পথে মেহেককে দেখে কাছে এগিয়ে এলেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,” কিরে মা, এখানে একা বসে কি করছিস? ঘুম নেই?”
মেহেক ছোটচাচীর দিকে চেয়ে কোমল হাসল। এই মানুষটিকে সে বেশ পছন্দ করে। বাড়িতে একমাত্র উনিই মেহেককে স্বার্থ ছাড়া স্নেহ করেন। মেহেক বলল,” ঘুম আসছে না।”
” এখানে বসে থাকলে ঘুম আসবে? দেখছিস কত ঠান্ডা বাতাস? বৃষ্টি আসবে মনে হয়। ঘরে যা!”
মেহেক ঘরে যেতে পারবে না। তার ঘরে ফারদিনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে যেতে মেহেকের অস্বস্তি হচ্ছে। আগ বাড়িয়ে ঘরে যাওয়া মানেই তো হার স্বীকার করে নেওয়া। মেহেক কিছুতেই সেটা করবে না। ফারদিন তাকে খুঁজতে খুঁজতে নিজেই বাইরে আসবে এটাই মেহেকের চাওয়া!
ছোটচাচী মেহেকের পাশে বসলেন। তার সংসার জীবনের কথা জানতে চাইলেন। মেহেক বলল, সবকিছু ভালোই চলছে। ছোটচাচী বললেন,” জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করেছিস নাকি তুই?”
মেহেক বিব্রত হলো। অস্বস্তি মাখা গলায় বলল,” সেরকম কিছু না।”
ছোটচাচী বললেন,” সেরকম কিছু করিসও না। পুরুষ মানুষ সংসারে অশান্তি করা বউ পছন্দ করে না। যেই বউ যত বেশি ঝগড়ুটে, তার তালাকের সম্ভাবনা তত বেশি! খুব ভাগ্য করে এমন স্বামী আর শ্বশুরবাড়ি পেয়েছিস মেহেক। অবুঝপণা করিস না যেন।”
মেহেক চুপ করে কথাগুলো শুনছে৷ এটা ঠিক যে ফারদিনকে হা’রানোর কথা সে ভাবতেও পারে না। এমন হলে তার বেঁচে থাকার ইচ্ছেও ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু সে কি করবে? মনের অভিমানকে তো দমিয়ে রাখা যায় না!
” ঘুমাতে যা মা। অনেক রাত হয়েছে। আর জামাই নিশ্চয়ই তোর জন্য অপেক্ষা করছে!”
মেহেক লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করল। ছোটচাচী উঠে চলে গেলেন। জানালার গ্রিল ধরে কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে রইল মেহেক। তার রাগী বোম্বাই মরিচ এতো সহজে হা’র মেনে ক্ষ’মা চাইবে বলে তো মনে হয় না। আসার পর থেকে একবারও মেহেকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনি সে। বউয়ের রাগ ভা’ঙাতে এসে নিজেই রেগে বসে আছে! ঘাড়ত্যাড়া কোথাকার।
মেহেকের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলা করছে। ফারদিনকে বাগে আনার উপায় তার জানা আছে। বাইরে তখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মেহেক এই শীতল আবহাওয়াতেও সুগন্ধি শ্যাম্পু মেখে গোসল করল। সুজি আপু বলেছিল ফারদিন স্লিভলেস ব্লাউজ দিয়ে শাড়ি পরা লুক পছন্দ করে৷ মেহেক ব্লাউজ ছাড়াই শাড়ি পরল। শাড়ির রঙ টকটকে লাল। চোখ ভরে কাজল দিল। তাকে পুরো আবেদনময়ী লাগছে। এই অবস্থায় নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করল।
ফারদিন বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে। মেহেক কর্কশ কণ্ঠে বলল,” জায়গা দিন, আমি ঘুমাবো।”
ফারদিন ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়েই বলল,” আমি তো তোমার জায়গা আটকে রাখিনি। নিজের জায়গাতেই শুয়ে আছি।”
মেহেক দাঁত কিড়মিড় করে তাকাল। এই লোক এমন কেন? ফোনের মধ্যে কি আছে যে সামনে একটু তাকানোও যায় না? মেহেক ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসল। বড় আয়নায় নিজের পেছনে ফারদিনের প্রতিবিম্বও দেখা যাচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে ফোনে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে সে। তবুও কি ভালো লাগছে দেখতে! মেহেক ওর দিকে তাকিয়ে টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগল।
ফারদিন বেশ কিছুক্ষণ পর সামনে তাকাল। আয়নায় মেহেকের প্রতিবিম্ব দেখে এক মুহূর্তের জন্য থ’মকাল সে। মেহেকের বুক কাঁপছে। মাথা নিচু করে লাজুক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,” কিছু বলবেন?”
ফারদিন নিজেকে সামলে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,” তুমি এই রাতের বেলা গোসল করেছো?”
” মাইশা আপুকে নিয়ে পাশের বাড়িতে পলি আন্টির বাবু দেখতে গেছিলাম। বাবুটা আমার কোল এমনভাবে ভিজিয়ে দিল যে গোসল ছাড়া অন্যকোনো উপায়ই ছিল না।”
ফারদিন গম্ভীর মুখে বলল,” ঠান্ডার মধ্যে এসব কি পরেছো? তোমার শীত লাগে না?”
মেহেক হাসতে হাসতে বলল,” হ্যাঁ শীত লাগে। কিন্তু আমাকে দেখে যেন আপনার গ’রম লাগে তাই এতো কষ্ট করা! বুঝতে পেরেছেন?”
ফারদিন হতভম্ব। মেহেক কথা শেষ করেই হাসিতে ঢলে পড়ল। মেয়েটা এতো ঠোঁটকাটা কেন? ফারদিন সত্যিই ঘামছে। কপালের কাছে বিন্দু বিন্দু ঘামের উপস্থিতি টের পেল সে। ঢোক গিলল কয়েকবার। মেহেক উঠে এসে খুশি খুশি গলায় জানতে চাইল,” আচ্ছা, আমাকে কেমন লাগছে বললেন না তো?”
” জানি না।”
” সত্যি জানেন না? নাকি বলবেন না?”
” তোমার ঠান্ডা লাগবে মেহেক।”
” উফ, ল্যাপের নিচে একবার ঢুকে পড়লেই তো ঠান্ডা শেষ। আমি আরামের জন্য পরেছি। আপনি এমন করছেন কেন? নাকি আমাকে দেখে আপনার আরাম হারাম হয়ে গেছে? কোনটা শুনি?”
মেহেক ঠোঁট চেপে হাসল। ফারদিন বিরক্ত মুখে বলল,” খুব ফাজিল তাই না? ডায়েরীতে কি লিখে গেছিলে ওইসব? আমি যে এখনও তোমার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলছি সেটাই তোমার ভাগ্য। ওইরকম একটা কাজের জন্য প্রথমেই তোমাকে মাথায় তুলে আছাড় মা’রা উচিৎ ছিল আমার।”
মেহেকের মুখ চুপসে গেল। কয়েক মুহূর্ত আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দৌড়ে বারান্দায় চলে গেল সে। ফারদিন আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু মেহেকের কান্না দেখে আর বলতে পারল না। সে বোধহয় বেশিই মাথা গরম করে ফেলেছে। নিজেকে ধাতস্থ করে উঠে দাঁড়াল। ধীরপায়ে বারান্দায় হেঁটে গেল।
মেহেক কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুছছে। তার ছোট্ট শরীর কাঁপছে৷ ফারদিন কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকে অবলোকন করে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। কোমল গলায় বলল,” আ’ম স্যরি।”
মেহেক কোনো কথা বলল না। অন্যদিকে ফিরে চোখ মুছল। ফারদিন গলা খাঁকারি দিয়ে আবার বলল,” আ’ম স্যরি বউ।”
মেহেক চ’মকে তাকাল। আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল,” কি বললেন আপনি?”
ফারদিন মৃদু হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে আওড়াল,” তুমি যদি কথায় কথায় আমাকে স্বামী ডাকতো পারো, তাহলে আমি কেন বউ ডাকতে পারব না?”
মেহেক কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল। ফারদিন হাসল না, গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দেখতে লাগল মেহেককে। একটু পর বলল,” তোমাকে আমি খুব কষ্ট দিয়েছি তাই না মেহেক?”
হাসি থামাল মেহেক। কোনো উত্তর দিল না। ফারদিন বলল,” আমাকে আমার ভুল শুধরানোর সুযোগ তো দিবে। এভাবে পালিয়ে আসাটা তো কোনো সমাধান ছিল না। তোমার ডায়েরীর লেখাগুলো পড়ে কত আপসেট হয়েছিলাম জানো? কত ভ*য় পেয়ে গেছিলাম, খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল তোমাকে হারানোর।”
মেহেক মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। এইতো, এই আকুলতাটুকুই তো সে দেখতে চেয়েছিল ফারদিনের চোখে! অসীম সুখের ঢেউ আছড়ে পড়ল তার বুকে। সে যেই মানুষটিকে পাগলের মতো ভালোবাসে, সেই মানুষটির চোখে নিজের জন্য অস্থিরতা খুঁজে পাওয়া তো কম সৌভাগ্যের বিষয় নয়। মেহেকের নিজেকে সর্বোচ্চ ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।
ফারদিন কাছে এসে মেহেকের কানের কাছে মুখ নিল। মেহেক চোখ বন্ধ করল ফারদিনের কথা শোনার অভিপ্রায়ে। কিন্তু ফারদিন যা বলল তা শুনে মেহেকের চক্ষু চড়কগাছ।
” তোমার পেটের বামপাশের তিলটা দেখা যাচ্ছে।”
মেহেক অবাক হয়ে তাকাল ফারদিনের মুখের দিকে। মানুষটা হাসছে। মেহেক বিব্রত কণ্ঠে বলল,” তো কি হয়েছে?”
” আমার এখন ওই তিলে চুমু দিতে ইচ্ছে করছে।”
মেহেক লজ্জায় জ’মে গেল। এতোক্ষণ নির্লজ্জের মতো নানান লাগাম ছাড়া কথা বললেও এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে মাটিতে মিশে যেতে। ফারদিনের গভীর দৃষ্টি তাকে ঘায়েল করে ফেলেছে পুরোপুরি। মেহেক মাথা নিচু করে ফেলল। ফারদিন তার মুখটা ধরে উপরে তুলে বলল,” তোমার বুকের তিলটাও দেখা যাচ্ছে। ওখানে…”
মেহেক থামাল ফারদিনকে। কাঁপা কণ্ঠে বলল,” চুপ। আমার লজ্জা লাগছে।”
” আচ্ছা, তুমি আবার লজ্জাও পাও নাকি? দেখি কত লজ্জা পেতে পারো…”
বলেই মেহেককে কোলে তুলে নিল ফারদিন। বিছানায় এনে মুখ ডুবিয়ে দিল তার পেটে। মেহেকের চোখ দু’টো অশ্রুতে ভরে উঠল।
পরদিনই মেহেক ও ফারদিন ঢাকায় রওনা হলো। ফয়জুন্নিসা তাদের অপেক্ষায় আছেন শুনেই বাসন্তী তাড়াহুড়ো করে সব গুছিয়ে দিলেন। দশকেজি দুধ, নারকেল, পিঠা, খেঁজুরের গুড়, চারটা হাঁস, ছয়টা দেশি মুরগি বস্তা ভরে দিয়ে দিলেন। ফারদিন বিরক্ত গলায় বলল,” গাড়ি থাকলেও একটা কথা ছিল৷ বাসে করে এসব কিভাবে নিয়ে যাবো? কোনো মানে হয়?”
মেহেক বলল,” আম্মা এতো ভালোবেসে দিয়েছেন, আপনি ফিরিয়ে দিবেন? তাহলে আম্মা খুব কষ্ট পাবে৷ নিয়ে নিন না প্লিজ!”
অগত্যা ওতোবড় বস্তা নিয়েই তাদের বাসে উঠতে হলো। পথে তারা একটা রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা করল। মেহেক একটুও ক্লান্ত ছিল না। বাসে সে অনেক ঘুমিয়েছে। ফারদিনেরও মেহেকের চনমনে ভাব দেখে ক্লান্তি ছুটে গেছিল।
তারা বাড়ি পৌঁছালো সকাল আটটায়। এবারও সুজানা, আনজীর,ওয়াসীম,পূর্বিতা হাজির হয়েছে তাদের ওয়েলকাম করার জন্য৷ মেহেক সবাইকে দেখে জোরে হেসে উঠল। সুজানা আর পূর্বিতা দু’দিক থেকে এসে মেহেককে জড়িয়ে ধরল।
” কেমন আছো মেহেক?”
” জ্বী ভালো। ”
” তোমার শাশুড়ী তো সেই সকাল থেকে বসে আছেন তোমার জন্য।”
মিসেস ফয়জুন্নিসা হাজির হলেন।পূর্বিতা সরাসরি মেহেককে হাত ধরে নিয়ে এসে বলল,” এইযে আন্টি, আপনার পিচ্চি বউমাকে দেখুন।”
ফয়জুন্নিসা মাথা থেকে পা পর্যন্ত মেহেককে দেখে নিলেন। মেহেকের লজ্জা লাগছিল খুব। নরম গলায় সালাম দিল সে। ফয়জুন্নিসা ঝলমল করে বললেন,” মাশাল্লাহ, একদম ডানাকাটা পরী!”
সবাই হেসে উঠলো। সুজানা হাত দিয়ে মেহেককে খোঁচা মেরে বলল” শাশুড়ী তো পটে গেছে।”
মেহেক বিনয়ী গলায় বলল,” কেমন আছেন আন্টি?”
ফয়জুন্নিসা চোখ কপালে তুলে বললেন,” আন্টি কাকে বলছো?”
পূর্বিতা ফিসফিস করে বলল,” এই বোকা মেয়ে, মা হয় না তোমার?”
মেহেক লজ্জায় চোখমুখ গুঁটিয়ে বলল,” স্যরি। মা!”
ফয়জুন্নিসা কাছে এসে মেহেককে জড়িয়ে ধরলেন। মেহেকের চারপাশ একটা মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠলো। এতো ভালো লাগলো! ফয়জুন্নিসা স্নেহ মেশানো গলায় বললেন,” আমি ভালো আছি। কেমন আছো মা?”
এইটুকু প্রশ্নেই মেহেকের সমস্ত জড়তা, আড়ষ্টতা,লজ্জা,ভয় কেটে গেল। সে সহজ-স্বাভাবিক হয়ে বলল,” আমিও ভালো আছি মা। এখন আপনাকে পেয়ে আরও ভালো লাগছে।”
” তোমাদের দেখে আমারও অনেক ভালো লাগছে।”
ফয়জুন্নিসা মেহেকের কপালে একটা চু’মু দিলেন। তারপর নিজের গলা থেকে একটা দশ ভরি স্বর্ণের নেকলেস খুলে মেহেকের গলায় পরিয়ে দিলেন। এই ঘটনায় সুজানা আর পূর্বিতা খুশিতে হাত তালি দিল। মেহেক আপ্লুত হয়ে শাশুড়ী মায়ের পায়ে ধরে সালাম করতে উদ্যত হলো। সঙ্গে সঙ্গে ফয়জুন্নিসা তাকে থামিয়ে বললেন,” একদম এটা করতে যাবে না। পায়ে ধরে সালাম আমার পছন্দ না।”
তারপর তিনি জড়িয়ে ধরলেন পুত্রবধূকে। ফারদিন এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখছিল। ফয়জুন্নিসা এবার ছেলের দিকে অগ্রসর হয়ে বললেন,” বউমা যে বাস্তবে ছবির থেকেও দেখতে এতো মিষ্টি সেটা আগে তো বলিসনি আমাকে?”
” সারপ্রাইজ ছিল।”
ফয়জুন্নিসা হেসে ফেললেন। মেহেকের চেহারা লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেল।
ফয়জুন্নিসা বললেন,” যাইহোক, আমি কিন্তু সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি। বন্ধুরাও তোদের জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করছে। যা দু’জনে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। গল্প হবে।”
ফারদিন বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,” মেহেক, কেমন লাগল আমার আম্মুকে?”
মেহেক ড্রেসিংটেবিলে দাঁড়িয়ে ওরনা থেকে সেফটি পিন খুলে রাখছিল। ফারদিনের প্রশ্ন শুনে ওর দিকে ঘুরে তাকাল।
” চমৎকার মানুষ তিনি।”
” প্রথম দেখাতেই বুঝে গেলে? নাকি আমাকে খুশি করছো?”
মেহেক চোখ ছোট করে হালকা অভিমানের দৃষ্টিতে তাকাল। ফারদিন হালকা হেসে বলল,” আরে মজা করলাম। আম্মু কিন্তু অনেক ফ্রী মাইন্ডেড। মাঝে মাঝে তোমার সাথে বেস্টফ্রেন্ডের মতো আচরণ করবে।”
” আমি মাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি সেটা। আপনি টেনশন করবেন না। কিন্তু একটা ব্যাপার নিয়ে আমার কেমন জানি লাগছে।”
” কি ব্যাপার?”
” মা যে বললেন আমাদের জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছেন? সবাই না খেয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষাও করছিল। আর আমরা কি-না রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে আসলাম! এটা এখন জানাজানি হলে কি হবে?”
” জানানোর দরকার কি? না জানালেই হলো!”
” কিন্তু আমার যে একটুও ক্ষিদে পায়নি। মা তো খেতে ডেকেছেন।”
” তুমি কি কিছুই খেতে পারবে না?”
” চেষ্টা করবো। কিন্তু যদি বুঝে যায়?”
” বুঝবে না। এতো সিলি ব্যাপার নিয়ে টেনশন করতে হয় না রে পিচ্চি!”
ফারদিন তোয়ালে বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল। মেহেক ফ্রেশ হওয়ার পর ডাইনিং রুমে গেল। সেখানে সবাই গুল্প-গুজব করতে করতে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিল।সবাই কত হাসি-খুশি! বাড়িটা গমগম করছে।
তিশা মেহেকের কাছে এসে তার চেহারায় আলতো স্পর্শ করে বলল,” কেমন আছো?”
” ভালো আছি ভাবী। আপনি কেমন আছেন?”
” খুব ভালো। এসো নাস্তা খাবে। জানো, আজকে তোমার শাশুড়ি মা নিজে রান্না করেছেন তোমার জন্য! বুঝো কত টান!”
মেহেক আহ্লাদী হাসি দিল। তিশা হাত ধরে তাকে টেবিলে নিয়ে এলো। দাদু মেহেককে দেখে বললেন,” মেহেক,এদিকে এসো। তুমি আজকে আমার পাশে বসবে।”
তিশা মেহেককে দাদুর কাছে নিয়ে গেল। বসার জন্য চেয়ারটাও টেনে দিল। একটু পর ফয়জুন্নিসা এসে মেহেকের প্লেটে নিজের হাতে বানানো গ্রিল স্যান্ডউইচ তুলে দিলেন। ইশশ, মেহেকের আনন্দে চোখ টলমল হয়ে আসছিল৷ সবাই তাকে কত ভালোবাসছে। এতো সুখ বুঝি তার ভাগ্যে ছিল! দাদু মেহেককে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন,” তুমি একা কেন? গাঁধাটা কই?”
মেহেক হেসে বলল,” আমাকে যেতে বলে উনি ল্যাপটপ নিয়ে বসেছেন। মনে হয় একটু পর আসবে।”
” আচ্ছা ঠিকাছে।”
সুজানা, পূর্বিতারা এমনভাবে ফয়জুন্নিসার সাথে গল্প করছে যেনো মনে হচ্ছে তিনিও তাদের বন্ধু। মেহেকের সবার মাঝখানে বসে খাবার খেতে অনেক ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিল সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে!
ফয়জুন্নিসা সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন,”খাবার কেমন লাগছে?”
সুজানা খেতে খেতে উত্তর দিল,” অনেক ভালো হয়েছে আন্টি। আপনার বার্থডেতে ফারদিন যেই চিকেন স্যান্ডউইচ বানিয়েছিল একদম সেটার মতো লাগছে।”
এই কথা শুনে মেহেক বিস্মিত হয়ে বলে উঠলো,” উনি চিকেন স্যান্ডউইচ বানাতে পারে?”
সুজানা উত্তর দিল,” হ্যাঁ! শুধু চিকেন স্যান্ডউইচ কেন? বিরিয়ানি থেকে শুরু করে ইটালিয়ান, চাইনিজ, মেক্সিকান, সবকিছুই ও বানাতে পারে। আর একেকটা ডিশ যে কি ইয়াম্মি হয়! আমার তো ভাবতেই জীভে পানি চলে আসছে।”
পূর্বিতা হেসে বলল,” ওর আবার ফারদিনের রান্না খুব পছন্দ। ডোন্ট মাইন্ড, এই রান্নার গুণ দেখেই কিন্তু ফারদিনের প্রেমে পড়েছিল।”
শেষ কথাটা পূর্বিতা ফিসফিস করে মেহেকের কানে কানে বলল। মেহেক গলার খাবার গিলতে পারছিল না। অনেক কষ্টে ঢোক গিলে বলল,” উনার রান্নার এতো গুণ?”
ওয়াসীম বলল,” গুণ মানে? প্রতিভা! জ্বলন্ত প্রতিভা। যে একবার ওর রান্না খায় সেই ফ্যান হয়ে যায়। আর ইউটিউবে তো ওর দশ মিলিয়ন ফরোয়ার্স ওয়ালা চ্যানেলও আছে! আমরা মাঝে মাঝে ওর বানানো খাবার দিয়ে ভ্লগ করি। ”
মেহেক নাকে-মুখে কেশে উঠল। সুজানা অবাক হয়ে বলল,” কেন তুমি কি জানতে না এসব? ”
আনজীর ঠাট্টার স্বরে বলল,” জানলে কি আর বিষম খেতো?”
ওয়াসীম চোখ বড় করে বলল,” ফারদিন তো আস্তো শয়তান! মেহেককে কিছুই জানায়নি?”
সুজানা বলল,” আরে শয়তানির কি আছে এখানে? তোর মতো নিজের প্রশংসা ও নিজেই করবে নাকি? আমরাই তো এসব বলবো। শোনো মেহেক, কপাল করে দারুণ একটা হাসব্যান্ড পেয়েছো। সারাজীবন শুধু মজার মজার খাবার খেয়েই কাটিয়ে দিতে পারবে।”
ফয়জুন্নিসা বললেন,” তুমি এখন যেই সসটা খাচ্ছো সেটাও কিন্তু আমার ছেলের তৈরী।”
মেহেক অবাক হয়ে সসের দিকে তাকাল। তার নিজেকে এখন বড়সড় একটা ছাগল মনে হচ্ছে! ওইদিন রাতে ফারদিন তাকে কতবড় একটা মিথ্যা বলে রান্নাঘরে পাঠিয়েছিল। সেদিন মেহেকও বোকার মতো তাকে ভালোবাসার প্রমাণ দেওয়ার জন্য রান্না করতে বলেছিল। যে রান্না ফারদিনের বা’হাতের কাজ! কি যেন বলেছিল ফারদিন? নাথিং ইজ ইম্পসিবল ইন লভ! কত্তবড় চিটার! মেহেকের ইচ্ছে করছে এখনি টেবিল ছেঁড়ে উঠে গিয়ে ফারদিনকে কিছু কঠিন কথা শোনাতে। কিন্তু সবার সামনে সেটা করতেও পারছে না। ভেতরে ভেতরে সে আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলছে।
ফয়জুন্নিসা হঠাৎ বললেন,” তুমি খাচ্ছো না কেন মেহেক? খাবার ভালো হয়নি?”
মেহেক মিষ্টি হেসে বলল,” খুব ভালো হয়েছে মা।”
মেহেকের হাসিটা দেখে ফয়জুন্নিসা মনে মনে আপ্লুত হলেন। নতুন বউকে পেয়ে তিনি ভীষণ খুশি। তিনি তো প্রথমে বিয়েটাই মানতে চাননি। ফারদিনকে অনেক বার বুঝিয়েছেন যাতে এতোবড় ভুল না করে। কোনো আগ্রহ ছাড়া, শুধু বাগানবাড়ি ফিরে পাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি অপরিচিত, ভিন্ন পরিবেশের মেয়ে বিয়ে করা কি ঠিক? কিন্তু এখন ফয়জুন্নিসার মনে হচ্ছে ফারদিন সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিল। কারণ মেয়েটা চমৎকার! দেখে একদম বোঝা যায় না যে সে গ্রামের মেয়ে। বরং চেহারা,কথা-বার্তা,ব্যবহারে আধুনিকতার ছোঁয়া আছে।
ফয়জুন্নিসা প্রথম দেখাতেই মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছেন। মেয়েটি দেখতেও অসম্ভব রূপবতী। ছবিতে তিনি আগেও দেখেছিলেন। কিন্তু তখন ভাবেননি যে ছবির মতো বাস্তবেও মেয়েটি দেখতে এতো সুন্দর হবে। কারণ আজ-কাল ক্যামেরাতে সবাই সুন্দর। আর মেহেক বাস্তবে আরও সুন্দর! সব মিলিয়ে ফয়জুন্নিসা ছেলের বউ নিয়ে ভীষণ সন্তুষ্ট।
বিছানায় গাঁ এলিয়ে নবাবের মতো একহাতে সিগারেট অন্যহাতে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে ফারদিন। কি আরামের জীবন! আচ্ছা, এই লোক এতো সিগারেট খায় কেন? সিগারেট খেতে খেতে ঠোঁটগুলো যে কালচে বানিয়ে ফেলেছে সেদিকে খেয়াল আছে? কবে জানি সুন্দর মুখটাও কালচে হয়ে যায়। আর সবথেকে বড় কথা সিগারেট খেলে তো মানুষ হৃদরোগেও আক্রান্ত হয়। এইভাবে সিগারেট খেলে ফারদিন অতি দ্রুত মরে যাবে।
মেহেক ক্ষীপ্রবেগে গিয়ে ফারদিনের সামনে দাঁড়ালো। হুকুমের মতো বলল,” শুনুন, আপনি আর কোনোদিন সিগারেট খেতে পারবেন না।”
ফারদিন সিগারেটে টান দিতে দিতে ভ্রু কুঁচকে বলল,” কেন?”
সিগারেটের ধোঁয়া মেহেকের নাকে-মুখে এসে ঢুকে গেল। মেহেক কাশতে কাশতে বলল,” কারণ আমি সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারি না।”
” এতোদিন কিভাবে পেরেছো?”
” জানি না। কিন্তু এখন থেকে আর সহ্য করবো না। যেকোনো একটা বেছে নিন। সিগারেট নাহলে আমি।”
” সিগারেট আমার সাথে আটবছর ধরে আছে। তুমি তো মাত্র আটদিনের মেহমান। তোমার জন্য সিগারেটের সাথে বেঈমানী করবো? কাজটা কি ঠিক হবে?”
খুব দায়সারা জবাব। মেহেক হতভম্ব হয়ে বলল,” মানে আপনি কি বলতে চাইছেন? আমার থেকে সিগারেট আপনার কাছে দামী?”
” আমি তো সেটা বলিনি। মানে তুমি যখন ছিলে না তখন সিগারেট ছিল। ভবিষ্যতে যখন তুমি থাকবে না তখনও সিগারেট থাকবে। এটা তো আমার চিরকালের সঙ্গী। ছেঁড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
” আমি আপনার সাথে ভবিষ্যতে থাকবো না কেন?”
” ভবিষ্যতের কথা কি বলা যায়? যদি তুমি চলে যাও কোনো কারণে?”
” আমি কেন চলে যাবো?”
” সেটা আমি কি জানি?”
মেহেক কটমট করে বলল,” আপনি আসলে চানই আমি যেন চলে যাই। তাহলে এখনই চলে যাই। অপেক্ষা করে লাভ কি?”
যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফারদিন মেহেকের হাত ধরে বলল,” আরে শোনো, বসো এদিকে।”
” আগে সিগারেট ফেলুন। নাহলে বসবো না।”
ফারদিন আগুন নিভিয়ে সিগারেটটা ট্র্যাশক্যানে ফেলে দিল। মেহেক সন্তুষ্ট হয়ে ফারদিনের পাশে বসলো। ফারদিন বলল,” তারপর? কি কি খেলে? আম্মু কি রান্না করেছে?”
” রান্না তো করেছে অনেককিছুই। কিন্তু আমি খেতে পারিনি। ”
” কেন?”
” পেটে জায়গা ছিল না একটুও। আচ্ছা, আপনি গেলেন না কেন?”
” ইচ্ছে করেই যাইনি। ভালো লাগছিল না।”
মেহেক ফারদিনের হাতটা নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল,” প্রমিস করুন। এখন থেকে সিগারেট খাওয়া ছেঁড়ে দিবেন।”
” কি আশ্চর্য! তুমি হঠাৎ আমার সিগারেটের পেছনে পড়লে কেন?”
” সিগারেট খেলে মানুষ তাড়াতাড়ি মরে যায়। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”
” ভুঁয়া কথা। আটবছর ধরে সিগারেট খাই৷ তাও আমার স্বাস্থ্য যথেষ্ট ভালো। ”
” আপনি তার মানে আমার কথা শুনবেন না?”
” তোমার সব কথা শুনতে হবে?”
মেহেক আহত কণ্ঠে বলল,” শুনতে হবে না?আমার কথা না শুনলে আপনি কার কথা শুনবেন?”
” কেন শুনবো তোমার কথা? তুমি কি আমার কথা শোনো?”
” শুনি না? আপনি যখন যেটা বলেন আমি তো সেটাই করি।”
” তাই? তাহলে প্রমাণ দাও৷ যাও দরজাটা বন্ধ করে আসো।”
মেহেক চোখ বড় করে বলল,” ভুলেও না। এইটা ছাড়া অন্যকিছু বলুন।”
ফারদিন হেসে একটানে মেহেককে কাছে এনে জড়িয়ে ধরল। ফিসফিস করে বলল,” তাহলে শুধু চুপ করে থাকো। আগামী একঘণ্টা কোনো কথা বলবে না।”
মেহেকের ছোট্ট শরীর লজ্জায় কেঁপে উঠলো। আমতা-আমতা করে কিছু বলতে নিবে তখনি ফারদিন ওর ঠোঁট আঙুল দিয়ে চেপে ধরল,” বললাম না চুপ? একদম চুপ।”
ফারদিন মেহেককে তার ডানপাশে শোয়ালো। তারপর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিতেই মেহেক খিলখিল করে হেসে উঠলো। ফারদিন গম্ভীর গলায় বলল,” হাসাও নিষেধ। নো সাউন্ড!”
মেহেক ক্ষীণ স্বরে বলল,” সুড়সুড়ি লাগছে। কি করব?”
ফারদিন জবাব দিল না। মেহেকের হঠাৎ মনে পড়ল সে এইখানে কি জন্য এসেছিল। ফারদিন তাকে রান্নার বিষয়ে মিথ্যে বলেছে। এখনি কথাটা জিজ্ঞেস করতে হবে। মেহেক যখন এই বিষয়ে কিছু বলতে নিবে তখনি ফারদিন ক্লান্ত স্বরে বলল,” আমি সারারাত ঘুমাইনি মেহেক। খুব টায়ার্ড লাগছে। এখন তোমাকে জড়িয়ে ধরে একটু ঘুমাবো। প্লিজ তুমি এভাবেই থেকো।”
” সারারাত ঘুমাননি কেন? ঘাস কেটেছেন?”
” উহুম। বউয়ের চুলে বিলি কেটেছি।”
” মানে?”
” মানে বাসে তুমি আমার কাঁধে মাথা রেখে সারারাত ঘুমিয়েছো। আর আমি জেগে ছিলাম। ”
” সেটাই তো। কেন জেগে ছিলেন? আপনিও ঘুমিয়ে যেতেন। জেগে থাকতে কে বলেছে? আমি তো বলিনি!”
” বার-বার তুমি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ছিলে। আমি ধরে না রাখলে সিটের সাথে বারি খেয়ে মাথা ফাটতো। এমন ইনসিকিউরিটির মধ্যে তোমাকে রেখে আমি ঘুমাই কিভাবে?”
” তাহলে আপনার যখন ঘুম পাচ্ছিল তখন আমাকে ডেকে দিলেই পারতেন!”
” এটাই তো প্রবলেম। তুমি ঘুমালে তোমাকে দেখতে এতো সুন্দর লাগে যে ডাকতে খুব মায়া হয়। তখন মন চায় পুরো পৃথিবী থামিয়ে রাখতে। তবুও যেন ওই ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।”
” তাই?এজন্যই বুঝি সেদিন মাঝরাতে আমার ঘুম ভাঙিয়ে মিথ্যে কথা বলে রান্নাঘরে পাঠিয়েছিলেন?”
ফারদিন ভ্যাবাচেকা খেয়ে মেহেকের গলা থেকে মুখ সরিয়ে নিল। মাথা তুলে তীব্র বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল,” মানে?”
মেহেক খিলখিল করে হাসতে লাগল। ফারদিন তাকিয়ে আছে। হয়তো এখনও বুঝতে পারেনি। মেহেক বলল,” আজকে সুজি আপুর থেকে শুনেছি। আপনি তো খুব ভালো রাঁধুনী। আপনার নাকি ইউটিউবে রান্নার চ্যানেলও আছে! তাহলে আমাকে মিথ্যে বলেছেন কেন?”
” ও। এই ব্যাপার!”
ফারদিনের কণ্ঠে ভারী অবজ্ঞা। মেহেক বলল,” এই ব্যাপার মানে কি? এইটা কোনো ব্যাপার মনে হচ্ছে না আপনার কাছে?”
” ভেবেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো। তাই মিথ্যে বলেছিলাম।”
” মিথ্যে বলে সারপ্রাইজের কোনো দরকার নেই আমার। সেদিন আপনি আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে যেভাবে খাবার চাইলেন আমার কত মায়া লেগেছিল জানেন? আর এখন শুধু রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে আপনার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে।”
” তোমার কি সেইরাতের ঘুমের জন্য খুব আফসোস হচ্ছে?”
” ঘুম কোনো বিষয় না। বিষয় হচ্ছে আপনি মিথ্যে কেন বলবেন? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য করেছিলেন এমন তাই না?”
” আরে না পাগল! আমার উঠে রান্না করতে ইচ্ছে করছিল না। সবসময় রান্নার মুড থাকে না। কিন্তু ক্ষিদে পেলে আমি সহ্য করতে পারি না। তোমাকে যদি বলতাম আমি খুব ভালো রান্না পারি তাহলে কি তুমি আমার জন্য রান্নাঘরে যেতে?”
” একবার বলেই দেখতেন! আমি নিশ্চয়ই যেতাম। কিন্তু মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া আপনার ঠিক হয়নি।”
” মিথ্যে তো তুমিও বলেছো মেহেক। আমি কি তোমাকে সেজন্য কখনও কিছু বলেছি?”
” আমি কখন মিথ্যে বলেছি আপনাকে?”
” ভেবে দেখো।”
মেহেক মাথা নিচু করে কি যেন চিন্তা করল। তারপর মলিন মুখে বলল,” মিথ্যে বলিনি কখনও। তবে কিছু বিষয় গোপন করেছি। গোপন করা আর মিথ্যে বলা তো এক নয়।”
শেষ কথাটুকু বলার সময় মেহেকের কণ্ঠ কেমন যেন কেঁপে উঠলো। ওই কম্পনটাই ফারদিনের বুক মুচড়ে দিল। সে সাথে সাথে মেহেকের দুই গাল দুইহাতে স্পর্শ করে বলল,” মেহেক, আমি কিন্তু ওইসব মিন করে বলিনি।”
মেহেকের চোখ দিয়ে এতোক্ষণে দুই ফোঁটা অশ্রু ঝরে গেছে। ফারদিন রুদ্ধশ্বাস ছেঁড়ে আকুল কণ্ঠে বলল,” এই পিচ্চি, স্যরি! এক্সট্রিমলি স্যরি।”
মেহেক আস্তে করে ফারদিনের হাত দু’টো নিজের গাল থেকে সরিয়ে দিল। শক্ত গলায় বলল,” আমি প্রতারণা করেছি আপনার সাথে। অনেক বড় প্রতারক আমি। প্লিজ মাফ করে দিবেন।”
কথা শেষ করে এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না সে। ফারদিন তাকে ধরার আগেই সে দৌড়ে চলে গেল। ফারদিনের বিছানা থেকে নামতেও দেরি হয়ে গেল। ততক্ষণে মেহেক দরজা খুলে বেরিয়ে গেছে। ফারদিন রুম থেকে বেরিয়ে মেহেককে আর কোথাও দেখতে পেল না। কি আশ্চর্য! কয়েক সেকেন্ডে মেয়েটা কোথায় হারিয়ে গেল? ফারদিন ডানদিকে খুঁজতে যাবে নাকি বামদিকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। শেষমেষ ডানদিকেই গেল। কিন্তু সে জানলো না, মেহেক রুম থেকে বেরিয়ে বামদিকের অন্য একটি রুমের সাথে লাগোয়া ফাঁকা স্থানটিতে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছিল।
চলবে