উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #পর্ব৩০ (বিবাহ স্পেশাল) #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
32

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৩০ (বিবাহ স্পেশাল)
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আদ্র ভাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। কান্না করতে করতে হেঁচকি উঠে গেছে। শরীর অসম্ভব রকমে কাঁপছে। ঠিক করে দাঁড়াতে পারছি না। আদ্র ভাই আমাকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিলেন। মাথায় ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বললেন,
“কাঁদছিস কেন? তোর আদ্র ভাই চলে এসেছে তো। আদ্র থাকতে তোকে অন্য কেউ তার বানাতে পারবে না। তুই শুধু আদ্র’র”

তাও আমার কান্না থামছে না। হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে উঠলাম,
“তুমি কোথায় ছিলে আদ্র ভাই? এতো দেরি করে আসলে কেন? আর একটু হলেই তো আমি শেষ হয়ে যেতাম। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও আদ্র ভাই, আমি বাড়ি যাবো”

“কাঁদতে বারণ করছি রোদ। তুই জানিস না তোর চোখের অশ্রু আমায় পীড়া দেয়। আঘাত করে আমার বুকে”

আমার কান্না থামার নাম নেই। আদ্র ভাই আমাকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে শুভ ভাইয়ের কাছে দিয়ে বলল,
“শুভ ভাই ওকে একটু ধরো। ওর শরীর প্রচন্ড দুর্বল পড়ে দেখা যাবে মাথা ঘুরে পরে যাবে”

শুভ ভাই আমাকে আগলে নিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। একটু আগের দৃশ্য মাথায় ঘুরছে। ইভান ভাই পুনরায় এসে আমায় এভাবেই কাঁদতে দেখে কিছুটা রেগে গিয়েছিলেন। রাগী কণ্ঠে বলল,
“এভাবেই কার জন্য কাঁদছিস? কেউ আসবে না তোকে বাঁচাতে। বিয়ের ড্রেস পড়িস নি কেন? বলছি না বিয়ের সাজে সাজতে”

তেজ দেখিয়ে বললাম,
“বিয়ের সাজে সাজবো তো আমি বটেই তবে তোমার মতো নি*কৃষ্ট মানুষের জন্য না”

“তাহলে কার জন্য সাজবি শুনি? সারাজীবন তোকে আমার জন্য সাজতে হবে মাথায় ঢুকিয়ে নে কথাটা”

আমি মনে মনে শুধু আল্লাহ কে ডেকে চলেছি। তিনি যেন আমায় এর হাত থেকে বাচিয়ে নেন। আমার আদ্র ভাই যেন আমাকে খুঁজে পায়। আচ্ছা আদ্র ভাই কি জানে আমাকে ইভান ভাই এখানে নিয়ে এসেছে? আমি চিন্তায় মশগুল এমন সময় ইভান ভাই বলল,
“ঠিক আছে তোকে বউ সাজতে হবে না। কিন্তু বিয়ে এখনই হবে”

অতঃপর বাহিরে থাকা কারো উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“কাজী সাহেব আপনি ভিতরে আসেন”

রুমের দরজা দিয়ে হুজুর মতো একটা লোক হাতে কয়েকটা খাতার মতো কিছু নিয়ে ঢুকলেন। তার সাথে আরো একজন মধ্যেবয়স্ক লোক। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। আমি শুধু এক মনে আল্লাহ কে ডেকে চলেছি। কাজী সাহেব বলল,
“এই বিয়েতে আপনি রাজি থাকলে বলেন মা কবুল”

আমি কিছুই বলছি না। ‘থ’ মেরে বিছানার এক কোণে বসে রয়েছি। কাজী সাহেব আবার বললেন আমি তাও কিছু বলছি না। ইভান ভাই আমার সামনে বসে ধমক দিয়ে বললেন,
“কি হলো কবুল বলছিস না কেন?”

“বলেছি না আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। কথা কানে যায় না”

ইভান ভাই কাজীর উদ্দেশ্যে বললেন,
“কাজী সাহেব আপনি কাবিন নামা দেন। ও কবুল পড়ে বলবে”

কাজী সাহেবের কাছ থেকে কাবিন নামা নিয়ে আমার সামনে রেখে বললেন,
“কবুল বলা লাগবে না। সাইন করে দে”

“বললা তো আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। দরকার পড়লে ম*রে যাবো তাও আপনার মতো নি*কৃষ্ট মানুষকে বিয়ে করবো না”

ইভান ভাই আমাকে জোর করছেন সাইন করার জন্য এমন সময় বাহিরে গন্ডগোলের শব্দ হচ্ছে। দরজায় এক লাত্থি দিয়ে কেউ দরজা ভেঙ্গে ফেলল। সোজা এসে এক লাত্থি দিয়ে ইভান ভাইকে দূরে ফেলে দিলো। সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে বিস্মিত হয়ে গেলাম। রাগান্বিত রূপে আদ্র ভাই। এতক্ষন তো এই মানুষটার জন্য আমি অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম। আদ্র ভাইকে দেখে মনে সাহস পেলাম। এক দৌড়ে বিছানা থেকে নেমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম আদ্র ভাইয়ের প্রশস্ত বুকে।
——

শুভ ভাই আমায় বোঝাচ্ছেন। আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আমি তাকিয়ে আছি আদ্র ভাইয়ের দিকে। উনি গাঁয়ের কোট খুলে পাশে ছুঁয়ে ফেলে দিলেন। শার্ট এর হাতা তুলে কনুই পর্যন্ত গোটালেন। নিচে পড়ে থাকা ইভান ভাইকে তুলে নাক বরাবর ঘুসি দিলেন। ইভান ভাই ছিটকে দূরে পরে গেলেন। আদ্র ভাই ইভান ভাইকে তুলে ইচ্ছে মত মারছে। আদ্র ভাইকে ভয়ংকর মনে হচ্ছে। উনার মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে। চোখ লাল হয়ে গেছে। উনি যেন নিজের মাঝে। বেধড়ক ভাবে মারছে ইভান ভাইকে। ইভান ভাইয়ের অবস্থা নাজেহাল। নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, ঠোঁটের কোণ কেটে গিয়েছে। আদ্র ভাই থামার নাম নিচ্ছে না। দিগ্বিদিক শুন্য হয়ে ইভান ভাইকে মেরেছেন। এক পর্যায়ে ইভান ভাইয়ের শার্ট এর কলার ধরে বলে উঠলেন,
“প্রথম বার তোকে ছেড়ে দিয়েছিলাম কারণ তখন রোদ তোকে পছন্দ করতো। কিছু বলিনি তোকে। তোকে রোদ পছন্দ করে বলে নিজে শেষ হয়েছি তাও তোদের মাঝে আসিনি। ওকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলি। আমি নতুন রূপে গড়ে নিয়েছিলাম আবার এসেছিস ওর জীবনটা নষ্ট করতে? এইবার তোকে সেই সুযোগ দিবো না। তোকে বলেছিলাম না রোদ এর আশেপাশে না যেতে। কথা কানে যায় না? তোর অনেক শখ তাই না রোদকে বিয়ে করার? আজকে তোর সব শখ আমি মিটিয়ে দিবো। কার কলিজায় তুই হাত দিয়েছিস টা তুই নিজেও জানিস না। ভাই বলে ছাড় পাবি সেটা ভাবিস না। আমার রৌদ্রময়ীকে যে আঘাত করবে তাকে পস্তাতে হবে। অনেক বাজে ভাবে পস্তাতে হবে”

আদ্র ভাই ইভান ভাইকে আবার মারা শুরু করলো। ইভান ভাইয়ের অবস্থা করুণ। কেউ আদ্র ভাইয়ের কাছে আগাচ্ছে না। পাশে কাজী, সেই লোকটা আর ইভান ভাইয়ের এক বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। ইভান ভাইয়ের নাজেহাল অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে। শুভ ভাইয়ের হাত ঝাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
“শুভ ভাই আদ্র ভাইকে থামাও। উনি নিজের মাঝে নাই। ওনাকে থামাও। নাহয় ইভান ভাইয়ের কিছু হয়ে যাবে”

শুভ ভাই নিশ্চল কণ্ঠে বলল,
“এই শাস্তি টা ওর প্রাপ্য। ও বড্ড বেড়েছিল”

শুভ ভাইয়ের থেকে এই উত্তর আশা করিনি। আরো কিছুক্ষণ পর আদ্র ভাই থালেন। পাশে রাখা চেয়ারে ধুপ করে বসে পড়লেন। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা তার। নিচে পড়ে আছে ইভান ভাই। আদ্র ভাই বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাজী সাহেব মিনিমিনে স্বরে বলে উঠলো,
“বিয়ে টা কি হবে? নাকি হবে না”

আদ্র ভাই রক্তিম চোখে তার দিকে তাকালেন। বেচারা কাজী সাহেব ভয় পেয়ে গেছে। তিনি চুপ করে গেলেন। সত্যিই বলতে আদ্র ভাইয়ের এই রূপ দেখে আমার নিজেরও ভয় লাগছে। আদ্র ভাইয়ের এমন ভয়ংকর রূপ আমি এর আগে কখনো দেখিনি। সেদিন সেই ছেলেটাকে মারলেও এতটা বাজে ভাবে আঘাত করেনি। আজ যেন নতুন এক আদ্র ভাইকে দেখছি। আদ্র ভাই বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলেন। ঘামে ভিজে একাকার অবস্থা ওনার। সকালে ইন করা শার্ট এখন এলোমেলো হয়ে আছে। চুলগুলো পুরো অগোছালো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ছোঁয়া। আদ্র ভাই উঠে এসে আমার কাছে দাঁড়ালেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আদ্র ভাই হুট্ করে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লেন আমার সামনে। ওনার এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
“আমার হবি রৌদ্রময়ী? সারাজীবন এই বুকে আগলে রাখবো তোকে। আমার রাজ্যের রানী বানিয়ে রাখবো। আমি তোকে হারাতে চাই না রৌদ্রময়ী তোকে নিয়ে যে আমার বড্ড হয়। তোকে হারানোর ভয় আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। তোকে নিয়ে ভয় হয় আমার। সারাজীবনের জন্য আমার হাতে হাত রাখবি?”

আদ্র ভাই হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ওনার করুণ চাহনি। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। এই পরিস্থিতিতে কি বলা বা করা উচিত কিছুই মাথায় আসছে না। শুভ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। শুভ ভাই হয়তো আমার চোখের চাহনি বুঝতে পারলেন। তাই নিজ থেকেই বললেন,
“রাজি হয়ে যা পাখি। আজকে তোকে না পেয়ে ওর যেই অবস্থা হয়েছিলো সেটা বলে বুঝানোর মতো না। একপ্রকার পা*গল হয়ে গিয়েছিল আদ্র। তোকে হারানোর ভয় ওর মধ্যে স্পষ্ট ছিলো। তোকে হারানোর ভয়ে বেচারা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে ওকে শান্ত করেছি। ভাই হিসেবে বলবো রাজি হয়ে যা। বিশ্বাস করতে পারিস তোর এই ভাইকে”

শুভ ভাইয়ের কথা শুনে ভাবনায় বসলাম। আদ্র ভাই ফের বললে উঠলো,
“আমার হয়ে যা রৌদ্রময়ী। রানী করে রাখবো তোকে”

লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। হাত বাড়িয়ে দিলাম আদ্র ভাইয়ের হাতে। আদ্র ভাই উঠে আমার হাত শক্ত করে নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলেন। নিজেও পাশে বসলেন। কাজী সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেন,
“কাজী সাহেব বিয়ে আজকে হবে তবে সেটা আমার আর আমার রৌদ্রময়ীর। বিয়ে পড়ানো শুরু করেন কাজী সাহেব”

কাজী সাহেব ভিত কণ্ঠে বলল,
“পড়ে আবার আমায় কিছু করবে না তো?”

কাজী সাহেবের কথা শুনে আদ্র ভাই হেসে দিলেন। হাসি মুখেজবাব দিলেন,
“না কিছু বলবো না। আপনি এদিকে এসে বিয়ে পড়ান”

কাজী সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছেন। হটাৎ আদ্র ভাই উঠে ইভান ভাইয়ের দেওয়া ডালা থেকে লাল রঙের ওড়না এনে আমার মাথায় পড়িয়ে দিলেন। কাজী সাহেব ফের বলে উঠলেন,
“এই বিয়েতে রাজি থাকলে বলেন মা কবুল”

আড়চোখে শুভ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। বুকের মাঝেডিপ ডিপ শব্দ হচ্ছে। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করছি এটা কি ঠিক হচ্ছে? আদ্র ভাই নিজের হাতের মাঝে হাত নিয়ে আশ্বাস দিলেন। চোখ বুঝে শ্বাস নিয়ে কাঙ্খিত শব্দটা বলে দিলাম। আদ্র ভাইকে বলতে বলা হলে উনি ফট করে একনিঃশ্বাসে বলে দিলেন। ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন এই মুহুর্তটার অপেক্ষা করছেন। সবাই একসাথে বলে উঠলো,
“আলহামদুলিল্লাহ”
——-

গাড়িতে বসে আছি। পুরো গাড়ি জুড়ে পিনপতন নীরবতা। আদ্র ভাই ড্রাইভ করছেন। আমি পাশে বসে এক মনে রাস্তা দেখছি। আজকে সারাদিনে আমার সাথে হওয়া সকল ঘটনার হিসেব মিলাতে ব্যস্ত। সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ও আমি সিঙ্গেল ছিলাম। আর এখন বিবাহিত।। জীবন আসলেই কখন কোন মোড় চলে আসে কেউ জানে না। পাশে থাকা মানুষটা এখন আমার…! আমার এ যেয়ে আটকে গেলাম। এখন তাকে আর ভাই বলা যাবে না। মানুষটা যে আমার বর। কিন্তু বাসায় যেয়ে কিভাবে কি বলবো সেটাই বুঝতে পারছি না। আড়চোখে উনার দিকে তাকালাম। মহাশয় এক মনে গাড়ি চালাচ্ছেন। গাড়ি আসে থামলো বাড়ির সামনে। উনি নেমে দরজা খুলে দিলেন। ভদ্র মেয়ের মতো নেমে এলাম। দুজনের মাঝে নীরবতা। কি বলবো খুঁজে পাচ্ছি না। চলে আসতে নিবো এমন সময় পিছন থেকে আদ্র ভাই বলে উঠলো,
“আমি কি তোকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারি রৌদ্রময়ী?”

পিছু ঘুরে তাকালাম। আদ্র ভাই হুট্ করে এসে জড়িয়ে ধরলেন। শক্ত আলিঙ্গন যাকে বলে। দুজনের মাঝে নেই কোনো দূরত্ব। কিছুক্ষন এভাবে জড়িয়ে রেখে বললেন,
“জানিস আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুই শুধু আমার। আর কারো না। আমার রৌদ্রময়ী শুধু আমার। তাকে আমার কাছ থেকে আর কেউ কেড়ে নিতে পারবে না,কেউ না”

কিছুই বললাম না। নীরবে উনার কথা শুনে যাচ্ছি। আদ্র ভাইয়ের কণ্ঠটা কেমন কাঁপছে। আদ্র ভাই কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
“আমার রৌদ্রময়ী, আমার বউ”

#চলবে?

(সারপ্রাইজ টা কেমন লাগলো? ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here