উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #পর্ব৩২ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
196

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৩২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

রাতের আঁধারে ঢাকা চাদর সরিয়ে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে চারদিকে। সূর্যের আলোয় আলোকিত ধরিত্রী। মুখে এসে আলো পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে কারো বাহুডোরে আবিষ্কার করলাম। মানুষটা আমায় আবেশে আগলে রেখেছে নিজের হৃদয় মাঝারে। তার উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছে আমায়। আদ্র ভাই দোলনার সাইডে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে আর আমি তার বুকের মাঝে। রাতে দুজনে গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি সে খেয়াল নেই। মুখ তুলে চাইতেই আদ্র ভাইয়ের ঘুমন্ত মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কি সুন্দর লাগছে মানুষটাকে। উনাকে এতো সুন্দর হতে হবে কেন? এইযে উনি এতটা সুন্দর না হলে আমি বেহায়ার মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম না। আদ্র ভাইয়ের হাতের বাঁধন ছাড়িয়ে উঠে বসলাম। আদ্র ভাইয়ের মুখের ওপর এক গোছা চুল এসেছে পড়েছে। আলতো হাতের সেগুলো সরিয়ে দিলাম। ইচ্ছে করছে ওনার চুলগুলো এলোমেলো করে দিতে। যেই ভাবা সেই কাজ। হাত বাড়িয়ে আদ্র ভাইয়ের চুল গুলো এলোমেলো করে দিলাম। এখন ওনাকে পুরো কিউট বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। উনার এমন অবস্থা দেখে খিলখিল করে হাসতে গিয়েও হাসি আটকে নিলাম। এখন হাসা মানেই বিপদ। আমার হাসির শব্দ শুনে ওনার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমাকেই লজ্জায় পড়তে হবে। তাই হাসি আসলেও নিজেকে সামলে নিলাম। আদ্র ভাইয়ের নাক টেনে দিলাম। মাথায় ঘুরছে ওনাকে জ্বালানোর উল্টোপাল্টা বুদ্ধি। বুদ্ধি গুলো ধামা চাপা দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। এখন সকাল কেউ ছাদে আসেনি। কেউ ছাদে এসে আমাদের এই অবস্থায় দেখলে কেলেঙ্কারি লেগে যাবে। তাই এখন চলে যাওয়া টাই ভালো। আদ্র ভাইকে ডাকবো কি ডাকবো না করেই দেখেই ফেললাম।
“আদ্র ভাই, এই আদ্র ভাই। ওঠো, সকাল হয়ে গেছে”

আদ্র ভাই পিটপিট করে চোখ মেলে চাইলো। ভ্রু কুঁচকে বোঝালো,
“কি হয়েছে?”

“ওঠো, রুমে গিয়ে ঘুমাও”

উনাকে বলে আমি চলে আসলাম। সকাল সকাল মনটা যেন ফুরফুরে হয়ে গেল। প্ৰিয় মানুষটার বুকে মাথা রেখে তার মুখ দেখে সকাল হলে কার না আনন্দে মন নেচে উঠবো। রুমে এসে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিতেই ঘুম পেয়ে গেল। রাত জেগে গল্প করায় ঘুম হয়নি ঠিক মতো। চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে দশটা বেজে দশ মিনিট। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলাম। উঠে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে ড্রয়িং রুমে নজর বুলালাম। সোফায় বসে মহাশয় রোশনি, রৌশন এর সাথে দুস্টুমি করছে। তার এই দুস্টু মিষ্টি স্বভাব আমার বড্ড ভালো লাগে। এইযে নিমিষেই কারো সাথে মিশে যেতে পারে। উনার থেকেই চোখ সরিয়ে টেবিলে বসালাম। বড় আম্মু খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলল,
“কিরে আজ এতো দেরি করে উঠলি যে?”

বড় আম্মুর কথা শুনে আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। তাকাতেই চোখে চোখি হলো। আদ্র ভাই টুপ করে চোখ মেরে দিলেন। টাস্কি খেয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে উনার থেকে চোখ সরিয়ে বড় আম্মুকে বললাম,
“আরে বলো না আজকে ছুটির দিন তাই উঠতে দেরি হয়ে গেছে”

“ঠিক আছে খেয়ে নে। তোদের নিয়ে আর পারিনা। একেক জন একেক দিকে যাস। এই দেখ কাল থেকে ইভানের দেখা নেই। ছেলেটাকে এতো করে ফোন দিলাম ধরলো না। পরে শুভ বলল ও নাকি কোন ফ্রেন্ড এর বাড়ি গিয়েছে। কয়েকদিন সেখানেই থাকবে। যাবি ভালো কথা বলে যাবি না? মায়ের মন তো ছেলে মেয়ের জন্য সব সময় চিন্তা হয়। কিন্তু ওরা বুঝলে তো”

বড় আম্মু বিরবির করতে করতে চলে গেল। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বড় আম্মু যদি জানতে পারে তার ছেলের কর্মকান্ড তাহলে কতোটাই না কষ্ট পাবে। বড় আম্মু আমাকে তার মেয়ের মতোই আদর করে। মাঝে মাঝে তো এমনও হয়েছে ইভা আর আমার ঝগড়া লাগলে বড় আম্মু ইভাকে বকে দিয়েছে। তাও আমায় কিছু বলেনি উল্টো আমায় আদর করে দিয়েছে। সে যদি জানতে পারে তার ছেলে আমার সাথে কি করতে চেয়েছিলো তবে বড় আম্মুও ইভান ভাইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতো। তবে ভালো হয়েছে শুভ ভাই সব সামলে নিয়েছেন। ভাবনা বাদ দিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম। খেয়ে উঠে সোফায় বসতে নিয়েও বসালাম না। এখন আদ্র ভাইয়ের সামনে বসলেই আমায় লজ্জা পেতে হবে। একবার ওনার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিবো এর আগেই আদ্র ভাই আমার দিকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিলেন। আমি চোখ রাঙিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। পাশে বসা রৌশন, রোশনি গল্পে মশগুল। বাই এনি চান্স ওরা দেখে নিলে কি হতো? এই লোকটা ইদানিং কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। আগের আদ্র ভাই এখন আর নেই,তার মাঝে ভর করছে বেশরম এক সত্ত্বা। এইযে হুটহাট চুমু দিচ্ছে, চোখ টিপ দিচ্ছে। আদ্র ভাইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ধূপধাপ পা ফেলে রুমে চলে এলাম। নাহয় ওখানে থাকলে আমায় আরো লজ্জা পেতে হতো।
——-

শুক্রবার দিন হওয়ার সবাই বাড়িতে আছে। কিছুক্ষন ব্যালকনিতে থাকা গাছগুলোর পরিচর্যা করে গোসলে ঢুকলাম। একটা নীল রঙের থ্রিপিস পড়ে বের হলাম। চুল থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। জামার পিছন দিকে অনেক টা জায়গা ভিজে গিয়েছে। এমন সময় রুমে প্রবেশ করলো আম্মু। ঢুকেই তার বকাবকি শুরু হয়ে গেল। আমার হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে চুলগুলো মুছে দিতে দিতে বলল,
“এতো বড় মেয়ে হয়েছে এখনো চুল ঠিক করে মুছতে পারে না। দুদিন পড়ে শশুর বাড়ি যেয়ে কি করবি? তখনও কি এভাবেই বেখেয়ালি হয়ে ঘুরে বেড়াবি? এমন বেখেয়ালি ভাবে ঘুরলে এক দরজা দিয়ে নিয়ে যাবে অন্য দরজা দিয়ে ফিরত দিয়ে যাবে”

আম্মুর কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দিলাম। আম্মুর এই শাসন গুলো আমার বড্ড আদুরে লাগে। এই শাসনের মাঝেও আমি এক রাশ ভালোবাসা খুঁজে পাই। আমি চাইলেই চুলগুলো সুন্দর করে মুছতে পারি কিন্তু মুছিনি কারণ শুক্রবার আমি বাসায় থাকলে আম্মু এই সময় আমার রুমে আসবে। তাই আম্মুর শাসন নামক আদর পাওয়ার জন্য আমি ইচ্ছে করেই চুলগুলো ঠিক মতো মুছিনি। আম্মু চুল মুছে দিয়ে ঘর গুছাতে গুছাতে আমার চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা শুরু করলো। আমি হাসতে হাসতে রুমে থেকে বেরিয়ে এলাম। নিচে নেমে দেখি রৌশন, রোশনি, ইভা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমিও ওদের সাথে বসে পড়লাম। ভাবি আর বড় আম্মু মিলে টেবিলে খাবার এনে রাখছে। শুক্রবার দিনটা আমাদের বাসায় প্রায় পিকনিক টাইপ হয়। শুক্রবার সবাই একসাথে বসে দুপুরের খাবার খাওয়া হয়। এমনি দিন তো আব্বুরা অফিসে থাকে, আমরা ছোটরা যার যার স্কুল, কলেজে থাকি। এই শুক্রবার দিনটাই সবার একসাথে কাটানো হয়।

আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় দরজা দিয়ে কারো আগমনের শব্দে সেদিকে তাকালাম। একে একে বড় আব্বু, আব্বু, অভ্র ভাই, শুভ ভাই ঢুকছে। সবার শেষে আসলেন আদ্র ভাই। ওনার পরনে নীল পাঞ্জাবী, সাদা পায়জামা। পাঞ্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো, বাম হতে ঘড়ি। চুল গুলো গুছিয়ে রাখা। তাকে দেখে একদফা প্রেমে পড়ে গেলাম। কেমন বেহায়ার মতো উনার দিকে তাকিয়ের থাকতে ইচ্ছে করছে। ভাবতেই অবাক লাগে এই সুদর্শন মানুষটা আমার বর। শুধুই আমার। অবাক করা বিষয় হলো আমাদের দুজনের পরণেই নীল রং। দুজনের মনের সাথে কাপড়ের রংও মিলে গিয়েছে। ওনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। একে একে সবাই এসে পুরো সোফা জুড়ে বসে পড়লো। একটু পড়েই সবার ডাক পড়লো খাওয়ার জন্য। সবাই যার যার মতো বসেছে। আমার জন্য খালি আছে একটা চেয়ার। সেটা আদ্র ভাইয়ের বরাবর। কোনো কিছু না ভেবে বসে পড়লাম। নিচের দিকে তাকিয়ে খাবার খাচ্ছি এমন সময় পায়ে কারো ছোঁয়া অনুভব করলাম। তবে আমলে না নিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম। হয়তো ভুলে কারো পা লেগেছে। তবে ক্রমশ পায়ের বিচরণ বেড়ে চলেছে। ছোঁয়া পায়ের পাতা ছাড়িয়ে ওপরে উঠতেই কাশি উঠে গেল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বড় আম্মু পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
“কি হলো? মাথায় উঠেছে?”

পাশের চেয়ারে বসা ইভা পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিল।ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। বড় আম্মু ফের জিজ্ঞেস করলো,
“ঠিক হয়েছে?”

“হ্যাঁ”

আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। ফের একই অত্যাচার। চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখলাম আদ্র ভাই মন দিয়ে খাচ্ছে। একপাশে ইভা আরেক পাশে শুভ ভাই। শুভ ভাই এমনটা করবে না এটা শিওর। ইভার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর পা ঠিকঠাকই আছে। সন্দেহ হলো। টেবিলের নিচে উঁকি দিয়ে দেখলাম এগুলো আদ্র ভাইয়ের কান্ড। উনি ওনার পা দিয়ে আমার পায়ে স্লাইড করছিলো। কি ব*জ্জাত লোক ভাবা যায়? মুখ দেখে মনে হয় কিছু বোঝেনা। চোখ রাঙিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। মিস্টারের সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। উনি এক মনে খেয়ে চলেছে। তাকে পাত্তা না দিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম। কোনো মতে খেয়ে উঠে যেতে নিবো এমন সময় উনার দুই পা দিয়ে আমার পা চেপে ধরলেন। পড়লাম ফাঁসাদে। নড়তেও পারছি না চড়তে পারছি না। কি এক অবস্থা। একে একে সবাই খেয়ে উঠে যাচ্ছে। আমি অসহায়ের মতো বসে আছি। ইভা উঠে যেতে যেতে বলল,
“কিরে উঠছিস না কেন? এখানে বসে আছিস”

“উঠছি”

আদ্র ভাইয়ের খাওয়া শেষ হতেই পা ছেড়ে দিলেন। দম ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম ওনার জন্য আমায় এতক্ষন বসে থাকতে হয়েছে। ইচ্ছে করছে ওনাকে..! না কিছু করা যাবেনা। আমার একমাত্র বর বলে কথা। নিজের রুমে চলে এলাম। বিছানায় বসে বসে ফোন চালাচ্ছি। আচমকা ধপাস করে কেউ বিছানায় শুয়ে পড়লো। তাকিয়ে দেখলাম আদ্র ভাই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ছেন। ওনাকে দেখে রাগ হলো। এতক্ষন জ্বালিয়েও শান্তি হয়নি? এখন আবার জ্বালাতে এসে পড়েছে। রাগী চোখে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে।
“কিরে এমন লাল লঙ্কার মতো মুখ করে আছিস যে? কোনো সমস্যা?”

“তুমি জানো না কেন মুখ এমন করে আছি?”

“জানলে তোকে জিজ্ঞেস করতাম নাকি?”

দেখে মনে হচ্ছে মহাশয় কিচ্ছু বোঝে না। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
“নিচে খাওয়ার সময় পায়ের ওপর সুড়সুড়ি দিচ্ছিলে কেন? পা দিয়ে পা আটকে রেখেছিলে কেন?”

“বউ হয়ে তুই জামাইয়ের কথা ভুলে বসেছিলি তাই তোকে মনে করিয়ে দিলাম তোর একটা জামাই আছে। তার খাওয়া না হওয়া পর্যন্ত তুই টেবিল থেকেই উঠতে পারবি না। আর আমি বা তোকে এতো কিছু বলছি কেন? আমার বউ আমি যা ইচ্ছে তাই করবো, তোর কি?”

“আমার কি তাইনা? দাড়াও দেখাচ্ছি মজা”

আদ্র ভাইয়ের চুল টেনে ধরলাম। উনি চিৎকার করে বলে উঠলেন,
“আরে কি করছিস? চুল ছাড় ব্যাথা পাচ্ছি তো”

“আমার জামাইয়ের চুল আমি ধরেছি, তোমার কি?”

“বাহ্ আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছিস?”

“এবার বুঝো মজা কাকে বলে”

আদ্র ভাইয়ের চুল ছেড়ে দিলাম। উনি চুল ঠিককরতে করতে বলল,
“জ*ল্লাদ বউ একটা”

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here