হালকা ঠান্ডা বাতাসে আমার ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম ভাঙ্গা চোখে বাম পাশে তাকাতেই দেখি অভি আমার পড়ার টেবিলের চেয়ারটায় বসে আছে। খুব মনযোগ দিয়ে সে কিছু পড়ছে। আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম সত্যিই কি অভি? কিন্তু অভি আমার ঘরে কি করে আসবে? ভাবতে ভাবতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আমি তো গতকাল সকালে মায়ের বাসায় চলে এসেছি। নিশ্চয়ই আমি জ্বরের ঘোরে ভুল দেখছি। আমি চোখ খুলে আবার তাকালাম অভির দিকে। সেকি অভি সত্যি সত্যি আমার রূমে! তাহলে তার জ্বর হয়েছে শুনে বুঝি তাকে দেখতে এসেছে অভি।
নওরীন চোখ বন্ধ করে এই ধাক্কাটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়লো অভি তার টেবিলে বসে কি পড়ছে? তার টেবিলে তো কোনো থ্রিলার কিংবা ফিলসোফির বই নেই যে সে এতো মনোযোগ দিয়ে পড়বে।
চোখ বন্ধ করে অভির হাতের বইটার কথা ভাবছি, কালো রঙের বই একচুয়ালি বই না একটা ডায়রি। ডায়রি মানে আমার ডায়রি। কি! আমার ডায়রি পড়ছে অভি, ভেবেই ঝড়ের গতিতে সোয়া থেকে উঠে লাফ মেরে বসে পড়লাম। কত বড় সাহস আমার ডায়রি পড়ছে! আমি কিনা একটু অসুস্থ হয়েছি তাই বলে আমার অনুমতি ছাড়া ডায়রি পড়বে?
আমার হটাৎ এমন উঠে পড়ায় অভি হতভম্ব হয়ে গেছে, একটু ঘাবড়েও গিয়েছে।
অভি ডায়রি রেখে চট জলদি করে আমার পাশে এসে বসলো। তারপর দুইহাতে আমাকে জড়িয়ে নিয়ে আমার মাথা নিজের বুকে রেখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। একি মুসিবত! উনি এমন করছে কেন? উনি কি ভেবেছেন আমার সাথের জ্বীনটা ঘুমের মাঝে আমার গলা চেপে ধরেছে।
কোনো কারণ ছাড়াই আমার বাসার সবাই বিশ্বাস করে আমার সাথে জ্বীন আছে। ভয় দেখাতে একবার ছোটো বোনকে বলেছিলাম যে আমার সাথে একজন আছে। ব্যাস নিজের অজান্তেই ভূত, জ্বিনের সাথে আমার বসবাস শুরু। বাসায় সবাই জেনে গেলো তার উপর আমাকে নিজের সাথে কথা বলতে দেখে এই বিষয়ে তাদের প্রখর ধারণা তৈরি হয়েছে। আমি এই চক্করে কম ঝাঁটার বাড়ি, ধোঁয়ার ঘন্ধ সহ্য করিনি । ওই ভুয়া ফকির বাবা গুলাকে পেলে কি যে করবো।
বিয়ের পর ঘুমের মাঝে অভিকে একটা লাথি মেরে ছিলাম মাঝের কোলবালিশটা ছিলো না তাই লেগেছিলো অভির গায়ে।
এই কথা মজা করে ছোটো বোনকে বলেছিলাম ব্যাস অভির কানেও জ্বিনের কথা ভরে দিয়েছে আমার বোন। অভি যদিও সেদিন একটু হেসেছিলো কথাটা শুনে।
আমি আবার কেনো এখন এইসব ভাবছি, না ফ্ল্যাশ ব্যাক এ যাওয়ার সময় এটা না।
-” তুমি কি খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছ? ভয় পেয়ো না আমি আছি।”, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো অভি।
যাক বাবা ! জীনে গলা টিপে ধরেছে এইটা ভাবিনি সে। একটা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়া সে আমার ডায়রি কেনো ধরবে?
আমি মাথা তুলে অভির দিকে তাকিয়ে বললাম,” আপনি আমার ডায়রি কেনো পড়ছিলেন?”
-” আচ্ছা, তার মানে তোমার সাথের জ্বীন ঘুমের মধ্যে আসে পাশে কি হয় না হয় সেটাও তোমাকে বলে দেয়।” অভি খুব ভালো করে জানে জ্বীন টপিকটা আমার খুবই অসহ্য লাগে। তাও আমাকে এইগুলো বলে রাগায়। খুব বিরক্তিকর এই লোকটা।
আমি রেগে বললাম,” আপনি কথা ঘুরাবেন না, আপনি আমার ডায়রি ধরেছেন কেনো?”
অভি আমার কথায় কান দিলো না। আমার কাছে আসতে লাগলো। তারপর আমার মাথায় হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে। কেমনটা লাগে? আমার কথার কোনো গুরুত্ব নেই লোকটার কাছে। কি সাবলীল ভাবে আমার কথা ইগনোর করে সে বললো,” হুঁমম, জ্বর কমেছে কিন্তু পুরোপুরি সেরে যায় নি।”
টেবিল থেকে গ্লাসটা নিয়ে আমার সামনে ধরে বললো,”পানি খাও তোমার ভালো লাগবে।”
আমিও নাছোড়বান্দা এতো ছাড়বো নাকি ওনাকে আমিও বললাম-” খাবো না। আগে বলুন আমার অনুমতি ছাড়া আমার ডায়রি কেনো ধরেছেন? ”
অভি সুন্দর করে পানির গ্লাসটা নিজের হাতে নিলো। তারপর আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটু হাসলো তারপর বললো,” নওরীন আমাকে রাগিও না। ইউ নো রাইট রাগলে আমি কি কি করতে পারি। আমাকে না রাগানোটা তোমার জন্যই ভালো তাই নয় কি?”
একে বলে ঠান্ডা মাথায় সুন্দর করে বাঁশ দেওয়া। এর আগে একদিন বলেছিলো রাগাতে না আমি যে জন্মগত ঘাউরা একবারে শুনি নাকি কোনো কথা। আমিও ঘাউরামি করেছি।আমাকে টেনে নিয়ে পানি ভর্তি বাথটাব এ ভিজিয়ে দিয়েছিলো। তখন সারাদেশে শৈত্য প্রবাহ বইছিল। এবার আবার কি করবে কে জানে। আমার এতো সকালে বাথটাব এ ভিজার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই অনেক ঠান্ডা থাকবে পানি।
” হ্যা আমাকে নিরীহ পেয়ে মানুষ খালি আমাকে হুমকি দিয়ে যায়। আজ আমি অসুস্থ বলে, আপনা টাইম আয়েগা। হুহ!” বলে পানিটা খেয়ে ফেললাম এক ঢোকে পরে বুঝলাম পানির নাম করে স্যালাইন খাওয়ানো হয়েছে আমাকে। এই দফায়ও প্রতারণার শিকার হতে হলো।
আমি কোথায় মায়ের বাসায় আসলাম একটু শান্তিতে থাকবো বলে কিন্তু এই লোকটা এখানেও জ্বালাতন করতে চলে আসছে। কোথাও আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।
“আপনি এখানে কেনো এসেছেন?”, প্রশ্ন করে অভির চোখের দিকে তাকালাম।
” তুমি যা শুরু করেছ না এসে উপায় ছিলো বুঝি? পরে তো লোকে বলবে আমি খেয়াল রাখিনি তাই এমন হয়েছে। আর তুমি যে আসবে আমাকে তো বলোনি। আমাকে না জানিয়ে এসেছো কেনো?”
আমি কোনো উত্তর দিলাম না অথৈ এর বলা কথাগুলো মনে হতে লাগলো। অথৈ ফিরে আসতে চায় অভির জীবনে। গতকাল অথৈ ফোন দিয়েছিলো আমাকে । আমাকে বলেছে অভিকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে, অভি নাকি কখনো নিজের দায়িত্ববোধের কারণে আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইবে না। আমাকে আরো বলেছে ওদের মাঝে একমাত্র কাটা শুধুমাত্র আমি।
অভি আর অথৈ এদের ভালোবাসার গল্প কে না জানে? এই পাড়ার সব ছেলে মেয়েরাও জানে। ওদের এই গল্পে আমি কে? এই গল্পে আমি কেনো জড়িয়েছি? আমার উপস্থিতির অভির জীবনে কোনো প্রয়োজন নেই। আমাকে কি সরে যেতে হবে? নিজের অজান্তে এইগুলো ভাবতে ভাবতে কখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো আমি বুঝলাম না। হটাৎ অভির হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম অভি আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে উঠে যেতেই অভির আমার হাত ধরে টেনে আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আমি অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকে রাখতে পারছি না। কেনো জানি খুব কষ্ট হচ্ছে।
” নওরীন কি হয়েছে তোমার? কালকে আমকে না বলে চলে এলে, শুনলাম রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজেছো এখন আবার কাঁদছো। আমাকে বলো তোমার কি হয়েছে?” বলে আমার খোলা চুলে মুখ ডুবিয়ে একটানিশ্বাস ছাড়লো অভি। এই নিঃশব্দের ভাষাটা আমি বুঝি। এটা একপ্রকার অনুরোধ, অভি চায় আমি যেনো ওকে আমার কষ্টের কারণটা বলি। অভি কখনো আমার মন খারাপ থাকলে মন খারাপের কারণ জানার জন্য জোর করে না। কারো মন খারাপ হলে কি করতে হয় সেটাও অভি জানে না।
এই গল্পটাই যখন অন্য কারোর তাহলে কিসের এত পিছুটান? অথৈকে পেলে হয়তো আমার আর কোনো প্রয়োজন থাকবে না তখন। আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। অভি খানিকটা অবাক হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
যেই জিনিসটা তোমার না তার প্রতি মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই নওরীন। একদিন তোমাকেই সরে যেতে হবে। আমি বুঝেছি এবার আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আমি পিছে না তাকিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে নেওয়ার সময় চলে এসেছে।
#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১ #এটা_গল্প_কার?
#নবনী_নীলা
[চলবে]
আমাকে মনে আছে তো সবার? অনেক কারণে এতদিন অ্যাক্টিভ ছিলাম না সময় করে একদিন সবটা বলবো। #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে গল্পটি আমার লিখা প্রথম গল্প ছিলো। গল্পটিতে অনেক ভুল ত্রুটি ছিলো সেইসব সংশোধন করে গল্পটি আবার পোস্ট করছি। ভালো লাগলে জানাবেন।
🍁কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।🍁