গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে #পর্বঃ১৭ #জমে_থাকা_অভিমান #নবনী_নীলা

0
18

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৭ #জমে_থাকা_অভিমান
#নবনী_নীলা

“আমি যাবো না।”, বলে নওরীন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বিষণ্ণতায় তার চেহারার ভরে গেছে।
আজই অভি ফিরে এসেছে।অভি প্রচন্ড রেগে বললো,” যাবে না মানে কি? আমি এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এসেছি আর তুমি বলছো যাবে না।”
ঘরে নওরীনের মা আর রচনা দুজনেই সেখানে উপস্থিত ছিলো।নওরীনের মা নিচু স্বরে বললো,”থাক বাবা ও যখন যেতে চাইছে না থাকুক কিছুদিন আমার কাছে। এমনেই মেয়েটার শরীর ভালো না।”

” শরীর ভালো না মানে? কি হয়েছে ওর? আবার জ্বর বাধিয়েছো?”,অভি তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্ন করে নওরীনের দিকে এগিয়ে গেলো। নওরীন অভির দিকে তাকালো না।
নওরীন একটু দূরে সরে গেলো। নওরীনের আচরণের এমন পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না অভি।

রচনা নওরীনকে ধরে ওর বিছনায় বসিয়ে দিয়ে অভিকে বললো,” অভিদা তুমি একটু আমার সাথে এসো।”বলে রচনা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

অভি কিছুক্ষণ নওরীনের দিকে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এতদিন পর ফিরেছে অথচ নওরীন তার সাথে একটা কথাও বলছে না বরং তাকে চলে যেতে বলছে। হটাৎ কি হয়েছে ওর?

রচনা অভিকে নওরীনদের বারান্দায় বসতে বললো। অভি হতাশ হয়ে বসলো। রচনা অভির সামনের চেয়ারে বসে।

— কথাগুলো কিভাবে বলবো আমি বুঝতে পারছি না। বিষয়টা তোমাদের ব্যাক্তিগত বাপার। কিন্তু আমার মনে হলো তোমাকে এইগুলো জানানো দরকার। নওরীন হয়ত কখনো তোমাকে এইসব বলবেনা।

— কি হয়েছে? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ও আমার দিকে তাকাচ্ছে পর্যন্ত না। কি করেছি আমি?

— আচ্ছা তোমাকে বলছি। তোমার যাওয়ার দুদিন পরই নওরীন ফ্ল্যাটে ফিরে যায়। ওর ভালো লাগছিলো না এখানে।

— ফ্ল্যাটে ফিরে যায়!

— হুম সেদিন বেলী ফুল কিনতে নওরীন ফুলের দোকানে যায়। সেখানে অথৈর সাথে নওরীনের দেখা হয়। আর সবসময়ের মতন অথৈ ওকে অনেক কথা শুনায়।

— এই কারণে ও আমার উপর রাগ করেছে?আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।[ অভি একটা নিশ্বাস ফেললো।]

— নাহ্ সামান্য কারণে রাগ করার মেয়ে নওরীন না। তোমার খাটের পাশের টেবিল ল্যাম্প রাখার টেবিলটার তিননম্বর ড্রয়ার। সেখানে ঠিক কি আছে তোমার মনে পড়ে?

অভি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একহাত দিয়ে মাথা ধরে বসলো। রচনা অভির উত্তরের আশায় অভির দিকে তাকিয়ে রইল। অভি হতবাক হয়ে তাকালো রচনার দিকে।

— নওরীন সেগুলো দেখেছে?, বললো অভি।

— নিজে থেকে দেখেনি। অথৈ মেয়েটা নওরীনকে অনেক কিছু বলেছে। তোমাকে সারসংক্ষেপ বলি, নওরীন চেষ্টা করলেও তোমার জীবনে অথৈয়ের জায়গা নিতে পারবেনা। তোমার জীবনে নাকি অথৈয়ের জায়গাটা অনেক স্পেশাল।কতটা স্পেশাল! তার প্রমাণ স্বরূপ সে নওরীনকে তোমার টেবিল ল্যাম্পের তিন নম্বর ড্রয়ার চেক করতে বলেছে। শুধু তাই না ড্রয়ারের চাবি যে তোমার গাড়ির চাবির সাথে থাকে সেটাও সে বলেছে।

কথাগুলো শুনার পর অভি নিজেও চমকে গেছে। কি বলবে সে নিজেও যানে না। অথৈ মেয়েটা কেনো যে নওরীন আর তার মাঝে এইভাবে ঝামেলা করছে সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছে না।

— সেখানে কি ছিলো আমি জানি না। তোমার আর অথৈয়ের মেমোরি ছিলো হয়তো। এখন তুমি আমাকে বলো একটা মেয়ে যাকে বিয়ের আগে তুমি বলেছ তুমি মেয়েটার বন্ধুর থেকে বেশি কিছু হতে পারবে না। তুমি তোমার অতীতকে ভুলতে পারোনি। এবার বিয়ের পর ধীরে ধীরে তোমার ভালোবাসো পেয়ে মেয়েটা যদি তোমার সাথে সারাজীবন থাকতে চায় আর তখনই যদি তাকে প্রতিমুহূর্তে বুঝানো হয় সে তোমার আর তোমার এক্স এর জীবনে থার্ড পারসন। কে সহ্য করতে পারবে বলো।If I was in this situation I would never tolerate this. নওরীন এইসব বিষয়ে কাউকে কিছু বলেনি, এসবের পর বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি এসেছে। জ্বর বাধিয়েছে, দুইদিন ১০২ এর উপর জ্বর ছিলো। কিছুই খাচ্ছিল না অনেক কষ্টে ওর থেকে কথা বের করেছি।

অভি এখনও চুপ করে আছে।

— ” এই ব্যাপারে আমি অথৈ মেয়েটাকে সম্পূর্ণ দোষ দিতে পারছি না।তোমার যে একেবারেই কোনো ভুল নেই তা কিন্তু না। কিঞ্চিৎ ভুল তুমিও করেছো অভিদা। নিজের ভুলটা খুজে বের করো। আমি তো সবই বললাম বাকিটা তুমি কি করবে বুঝে নেও।” বলে রচনা উঠে চলে গেলো।

অভি বারান্দায় চুপ করে বসে রইল। অভি নিজের ভুল খুজে পেয়েছে। অভি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে উঠে নওরীনের রুমে গেলো নওরীন পা তুলে হাঁটুতে মাথা নামিয়ে বসে আছে। অভি রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। নওরীন মাথা উচু করে দেখে অবাক হয়ে বিছনা থেকে নেমে আসে।

“আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেনো?, বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো।অভি কিছু না বলে কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে নওরীনের দিকে এগিয়ে আসছে। নওরীন একটা ঢোক গিলে পিছনে তাকালো,পিছনে দেওয়াল।অভি নওরীনের সামনে এসে দাড়ালো।

অভি কোমল গলায় বললো,” আমার সাথে চলো।” নওরীন অন্য দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়ল।

” কিন্ত কেনো? এতদিন দূরে ছিলাম তোমার থেকে দূরে থাকাটা যে এতটা কঠিন কাজ সেটা আগে জানা ছিল না। তুমি আমার ফোন রিসিভ করাও বন্ধ করে দিয়েছিলে।”, বলে দেওয়ালে একটা হাত রেখে ঝুঁকে আসতেই নওরীন নিজের মুখের সামনে দুই হাত ধরে মুখ আড়াল করে।

” হাত সড়াও।”,বলে অভি নওরীনের মুখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলো হালকা জ্বর আছে।

অভি বিরক্ত স্বরে বলল,” মন খারাপ হলে বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস তোমার কবে বলদলাবে?।”

অভির কথায় নওরীন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।

” আমি তো কথা বন্ধ করার মতো কিছুই এখনও করিনি! কথা বন্ধ কেনো তোমার?”,বলে আরেকটা হাত দেওয়ালে রেখে নওরীনের চোখের দিকে তাকালো। অভির ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি দেখে নওরীন ঠোঁট চেপে মুখের ভিতরে নিয়ে গেলো।

অভি নওরীনের কানের পাশের চুল সরিয়ে বললো,” এবার বলো তুমি আমার সাথে যাবে কি যাবে না?”

নওরীন না সূচক মাথা নাড়ল।

” তোমার কাছে দুটো অপশন আছে হয় তুমি নিজে নিজে আমার সাথে আসবে না হলে তোমাকে জোড় করে নিয়ে যাবো। বলো কোনটা চাও?”

নওরীন রাগী স্বরে বলল,” বললাম তো যাবো না।”

” যাবো না কথাটা তো তোমার অপশনে নেই। তোমাকে এই অপশন আমি দেই নি। এবার বলো আমার হাত ধরে যাবে নাকি কোলে করে নিয়ে যাবো?”,বলে শার্টের হাত ভাজ করতে লাগলো।

” আরে কি আজব! বললাম না যাবো না। একদম জোর করবেন না।”বলে চলে যেতে নিলো।

” হুম বুঝেছি তোমার আমার কোলে উঠার শখ হয়েছে।”,বলে নওরীনের হাত ধরে কাছে নিয়ে এলো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here