গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে #পর্বঃ2 #প্রথম_দেখা #নবনী_নীলা

0
23

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ2 #প্রথম_দেখা
#নবনী_নীলা
” জামাই,নওরীনের গায়েতো জ্বর রয়েছে তার উপর ওর ঘাড় তেরামির অভ্যাস আবার সাথে ওটাও আছে। তুমি ওকে সামলাতে পারবে তো?” এটা আমার মা নাকি আমার সতীনের মা? আমি নাকি ঘাড়তেড়া আবার আমার সাথে নাকি ঐটা আছে।

-” আপনি একদম চিন্তা করবেন না আমি দুদিনের ছুটি নিয়েছি। আর আমি সাথে থাকলে ওইসব ওর কাছে আসে না।” বুঝাই যাচ্ছে অভি মজা নিচ্ছে , আবার আমার দিকে তাকাচ্ছে দেখো। এই জ্বিনের অপবাদ কি সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে আমাকে?

” তুমি থাকলে আমার চিন্তা নেই, আমার মেয়েটা তো একটা বদের হাড্ডি।” বলতে বলতেই আমার দিকে তাকালো আম্মা।

বাহ্! কি সুন্দর আমার সামনেই আমার বদনাম করা হচ্ছে। মায়ের কাছে এলাম কোথায় একটু শান্তিতে থাকবো কিন্তু না আমার কি এতো ভালো ভাগ্য। আজকেই আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। এমন তো না যে আমাকে না দেখলে ওনার রাতে ঘুম আসে না, হুদাই আমাকে নিয়ে গিয়ে জ্বালাতন করবে। বিয়ের আগে আমার মা আমার জীবনটাকে তেজপাতা বানিয়েছে বিয়ের পর এবার এই লোকটা আমার জীবনটা তেনা তেনা করে দিচ্ছে।

” নওরীন তোমার হলো? চল বের হই এবার।” বলেই নিজের চশমা পরে উঠে দাড়ালো অভি।

সব লম্বা ছেলেদের কি চশমা পড়লে এতো সুন্দর লাগে। অভি এমনেই এতো সুন্দর, চশমা পড়লে আরো তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। মনে হয় চশমা জিনিসটা আবিষ্কার হয়েছে হয়তো ওনার জন্যই। একি! আমি এই লোকটার প্রশংসা করছি কেনো? মনে মনে হলেও এই লোকের প্রশংসা করা যাবে না। আমাকে কি কম জ্বালিয়েছে এই লোকটা? ছি ছি নওরীন তুই আবার মনে মনে এর প্রসংশা করছিস? পুরা মান ইজ্জত সব ডুবিয়ে ছাড়বি আমার।

চুলে একটা খোঁপা করে, আঁচলে সেফটিপিন টা লাগিয়ে গাড়িতে এসে বসলাম। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আজ যথাসম্ভব নড়াচড়া কম করবো আর কম কথা বলবো। অভি এসে আমার পাশের ড্রাইভিং সীটে বসে নিজে সিটবেল্ট পরে নিলো গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে একবার আমার দিকে তাকালো চেক করছে আরকি আমি সিট বেল্ট পড়েছি কিনা। আজকে আমি নিজে নিজে সিট বেল্ট পরে ভদ্র মেয়ের মতন বসে আছি ব্যাপারটা ওনার হজম হয়নি বুঝাই যাচ্ছে। কিছু না বলে অভি গাড়ি স্টার্ট দিলো। তারপর বললো,

” বাহ্ আজকে সিটবেল্ট পড়ার সময় দেখি আমার তোমার কাছে যেতে হলো না আগে থেকেই পড়ে নিয়েছো।”

-” কাছে আসতে হলো না মানে?”

” আই মিন আমার হেল্প নেও নি।” বলেই হালকা হেসে আমার দিকে তাকালো তারপর আবার গাড়ি চালানোতে মনযোগ দিলেন।

-” আপনি তো আর সারাজীবন আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে দিবেন না তাই নিজেই শিখে নিয়েছি।” জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললাম।

অভি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,”হটাৎ তোমার এটা মনে হওয়ার কারণ?”

-” এমনেই ” বলেই আমি চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরলাম। প্রতিবার সিট বেল্ট লাগানো নিয়ে আমাদের মাঝে ছোটো খাটো একটা ঝগড়া হয়ে যেতো। আজ এমন কিছুই হলো না।

সিটবেল্ট পড়াটা আমার একদমই পছন্দ না মনে হয় দড়ি দিয়ে সিটের সাথে কেও বেধে রেখেছে।তাই এটা পড়তে না পারার ভান করতাম আর অভি জোড় করে আমাকে পড়াতো। আমার হটাৎ এমন আচরণের পরিবর্তনে হয়তো ওর অন্য রকম লাগছে।

আমার আর অভির বিয়েটা এতো ধুমধাম করে দেওয়া হয়েছে যে লোকে ভেবেই নিয়েছে এরা চিরসুখী।
একদিন সকালে আমাকে দেখতে অভির বাবা, অভির বড়ো বোন আর বোনের জামাই আমাদের বাড়িতে এসে। কেউ দেখার জন্য খবর পাঠালেই বাবা না করে দিতো কারণ আমার পড়ালেখা শেষ না হলে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো না তার। এরা এসেছিলো আগাম কোনো খবর না দিয়ে।

কিন্তু কি এমন হলো আমি রুমে থাকা অবস্থায় খবর পেলাম বাবার নাকি ছেলে পছন্দ হয়েছে। স্বর্ণা আমার বোন আমার মাথায় বেণী করে দিচ্ছিলো কথাটা কানে আসতেই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো। এযুগের প্রেম, ভালোবাসার উপর বিশ্বাস আমার অনেক আগেই উঠে গেছিলো। বিয়ের প্রতি তাই কোনো আগ্রহ ছিল না। বিয়ে মানে আমার কাছে ছিলো অনিশ্চয়তার এক যাত্রা।

তাদের সামনে আমাকে বসানো হলো মনে হচ্ছিলো একটু পর আমার মৃত্যুদণ্ডের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তারা আমাকে কোনো প্রশ্ন করেনি। আমার মা আমাকে এতো বছর যত আজগুবি ট্রেনিং দেওয়ার চেষ্টা করেছে আফসোস তার কোনোকিছুই সেদিন কাজে লাগেনি। আমি নিজের রুমে এসে চুল খুলে দিয়ে ফ্যানের নীচে বসলাম। রচনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কিছুক্ষণ পর নাচতে নাচতে আমার ঘরে এলো ছেলের ছবি নিয়ে।

” কিরে ছবি দেখবি না ? কি যে সুন্দর! দেখলে প্রেমে পড়ে যাবি।”বলেই রচনা আমার পাশে বসলো।

” তোর এতো পছন্দ হলে তুই বিয়ে করে ফেল। আমার ভালো লাগছে না।” বলেই আমি অন্যদিকে তাকালাম।

” কিরে কি হয়েছে তোর? ”

” আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা হুট করে এভাবে সব হওয়ার মানে কি? আমার তো মনে হচ্ছে আমার লাইফটা এখানেই শেষ।”

” তোকে ধরে একটা চর লাগবো। উল্টা পাল্টা কথা ভেবে বসে আছিস। সব গল্প একরকম হয় না। কারো কারো গল্প স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর হয়। তোর সাথেও এমন হবে দেখিস।” বলে রচনা আমাকে জড়িয়ে ধরে।

কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না একটা মানুষ কি করে এত পারফেক্ট হয়। নিশ্চই ছেলেটার কোনো খারাপ অভ্যাস আছে নয়তো ব্যাবহার ভালো না। আর যদি সব ঠিক থাকে তাহলে এই ছেলে কেনো আমাকে বিয়ে করবে? এইগুলো ভেবেই আমার দিন কাটছিলো।

হটাৎ একদিন শুনলাম অভি আমার সাথে সামনা সামনি কথা বলতে চায়। শুনেই আমার মনে হয়েছিলো বিয়ে ঠিক হয়েছে এবার আসল চেহারার সন্ধান মিলবে দেখা করতে গিয়ে যদি উল্টা পাল্টা কিছু দেখি ব্যাস এই আপদ থেকে বিদায়। আমি কতো কি প্ল্যান করলাম তাকে নাস্তানাবুদ করতে।

আমি দেখা করতে যাবো শুনে রচনা এককান্ড বাধিয়েছে আমাকে নাকি ওই রেস্টুরেন্ট এ শাড়ী পরে যেতে হবে। সাথে আমার মাও জোট বেঁধেছে। এদের বাড়াবাড়ি কখনো কমে না। ইচ্ছে করছে রচনাকেই এইগুলো পড়িয়ে পার্সেল করে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু আমি যার তার জন্য কেনো শাড়ি পড়বো। শাড়ি পরার মাঝে একটা আবেগ কাজ করে। যাকে চিনি না জানি না আজ পর্যন্ত দেখিনি তার জন্যে কিসের এত সাজসজ্জা।

অনেক কষ্ট করে তাদের বুঝিয়ে একটা সেলোয়ার কামিজ পরে রিক্সা দিয়ে ওই রেস্টুরেন্ট এ যাই। রাস্তায় জ্যামের কারণে দেরি হয় একটু।

আমি গিয়ে দেখি অভি আগে থেকেই বসে আছে। আমি ফোনের রেকর্ডটা অন করে সেখানে গিয়ে বসলাম। সব কথা বার্তা রেকর্ড করে নিবো প্রমাণ লাগবে আমার।

” সরি রাস্তায় জ্যাম ছিলো তাই দেরি হয়েছে।”, ফর্মালিটি রক্ষার্থে বলতে হয় আমায়।

” নট এ বিগ ডিল। ইটস ওকে।”বলতে বলতেই আমার দিকে তাকালো সে। আমিও অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। সেদিন অভিকে সত্যিই অনেক সুদর্শন লাগছিলো। নেইভি ব্লু রঙের একটা শার্ট গায়ে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো সে। চেহারা আর কথা শুনে যে করোর তাকে পছন্দ হবে।

লজ্জা সরম বাদ দিয়ে আমি নিজেই আগ বাড়িয়ে নানা আলাপ শুরু করলাম। এই লোকের খুঁত বের করতেই হবে। বিয়েটা আটকাতেই হবে যেভাবেই হোক না কেনো। কিন্তু যত যাই করি না কেন লোকটা বেশ শান্ত আর ভদ্র সভাবের। এতো ভালো ব্যাবহার আমার হজম হচ্ছে না। এতক্ষণ বক বক করে আমিও ক্লান্ত হয়ে বসে আছি। কিন্তু তারপরেই অভি বললো,

” একচুয়ালি আমি তোমাকে কিছু কথা জানতে চাই, সেজন্যেই এখানে আসা। যেহেতু তোমার আর আমার বাসায় আমাদের বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে। তাই যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছ তার সমন্ধে সব জেনে রাখা তোমার অধিকার।” খুব সাবলীল ভাবে কথাগুলো বলল অভি। আমি তো মনে মনে মহা খুশি এইবার এই চান্দুর আসল চেহারার সন্ধান পাবো। এইবার সে নিজেই কিছু বলবে আমাকে। আমি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছু বললাম না।

” তোমার আগ্রহ না থাকলেও কিছু জিনিস তোমাকে জানানো আমার দায়িত্ব।” বলে অভি একটু বাহিরে দেখলো।আবার বলতে শুরু করলো।

আমি মনে মনে বলছিলাম যে আগ্রহ থাকবে না কেনো? সে জন্যেই তো এইখানে আসা আর এতক্ষণ বক বক করা।

” প্রতিটা মেয়ের নাকি নিজের বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে সেটা নষ্ট করার কোনো অধিকার আমার নেই। হাসব্যান্ড হিসাবে আমি আমার সব দায়িত্ত্ব পালন করবো অবশ্যই তবে আবার কাউকে ভালবাসা বা বিশ্বাস করা। এই দুটোর একটাও আমার পক্ষে হয়তো আর সম্ভব না।”

আমি হা করে তাকালাম। এইগুলা তো আমার ডায়লগ উনি কেনো এইসব বলছে? ” আপনার কথা গুলো আমি ঠিক বুঝলাম না।”

” আমার মা আমাকে বিয়ে দিতে চায় যাতে আমি আমার পুরোনো প্রেম ভুলে জীবনে এগিয়ে যেতে পারি। সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু আমি তাকে ভুলিনি আর হয়তো কোনো দিন ভুলতেও পারবনা। আমাকে বিয়ে করলে তোমায় কম্প্রোমাইজ করে কাটাতে হবে সারা জীবন। তোমার ভালো বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হতে পারবো না আমি।”

” আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে বিয়ের পর আপনি আমি বন্ধু হয়ে থাকবো আর আপনার পার্সোনাল স্পেসে আমি ঢুকবো না আর আপনিও না। মানে বিয়ের পর সিঙ্গেল থাকবো?” আমার কথা শুনে অভি একটু চমকালো তারপর নিজের মাথা নাড়লো। অভির মাঝে একটা অনুশোচনা কাজ করছে সেটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

আমি তো মহা খুশি,বিয়ের পর সিঙ্গেল থাকার সুযোগ কয়জন পায়? এমন কিছু হবে সেটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। নিজের অজান্তেই আমার মুখে হাসি ফুটলো। অভি বিষ্ময় নিয়ে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকাতেই আমি বললাম,

” ওকে তাহলে আমি আপনাকেই বিয়ে করছি। বিয়ে জিনিসটার প্রতি আমার বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই কিন্তু এই রকম অফার তো আর সবসময় পাওয়া যায় না। দেখুন বলতে গেলে আপনার আর আমার সমস্যা একই রকম। এইসব বিয়ে টিয়ে আমাদের কারোরই ইন্টারেস্ট নেই।” আমার কথা শুনে অভি হতবাক এমন মেয়েও পৃথিবীতে আছে সেটা তার জানা ছিলো না। অভির বিস্ময়ের সীমা রইলো না। সে চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দুট হাত বুকের কাছে ভাজ করে সে আমার কথা শুনে যাচ্ছে। কপালে তার একটা ভাজ পড়ে গেছে। আমার মতন অভিও সেদিন বিয়ে ভাঙতেই এসেছিল। কিন্তু কোনো মেয়ে যে এই প্রস্তাবে রাজি হবে সেটা সে কোনদিন কল্পনাও করেনি।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। চোখ খুলে দেখি আমি গাড়ীতে নেই আমি আমাদের রুমে। আমি অভির বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম এতক্ষন। উনি আমাকে নিয়ে এসেছেন। বুঝিনা এই লোকটার থেকে দূরে যেতে চাইলেই যেনো আরও কাছে চলে আসি। আমি অভির কাছ থেকে সরে যেতেই অভি আমার হাত ধরে ফেললো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here