#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১২
#নবনী_নীলা
অভির ঘুম ভেঙেছে সকাল দশটায়।অভি উঠে বসতে বসতে খেয়াল করলো তার গায়ে শার্ট নেই। মাথাটাও ভীষণ ধরে আছে। নওরীনকে রুমে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। অভি দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকালো এতো দেরিতে ঘুম থেকে উঠা অভির অভ্যাস নেই।
অভির কাল রাতের কথা কিছু মনে পড়ছে না। অভি কিছুক্ষণ বসে মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু মনে পড়ছে না। কালকে তাকে এই অবস্থায় দেখে নওরীন কি না ভেবেছে। কেনো যে মামার কথা শুনতে গেলো সে। অভি রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে তারপর নীচে নামলো।
সব জায়গায় খুঁজলো নওরীন কোথাও নেই। নওরীনকে খোঁজার জন্যে অভি কিচেন এ এলো। নওরীন কিচেনেই আছে কিন্তু অভি এসেছে বুঝতে পেরে তাকাচ্ছে না। সে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রইলো।
অভির নওরীনের সাথে কথা বলার প্রয়োজন।কিন্তু কিচেনে মা,ফুফু,আপু সবাই আছে। অভি কি বলবে বুঝতে পারছেনা। অভিকে দেখে নওরীন অন্য দিকে ঘুরে কাজ করছে। কাল রাতে কি কিছু হয়েছে যার কারণে নওরীন রেগে আছে। অভি এইগুলো ভাবতে ভাবতে কিচেনে ঢুকলো।
অভি খেয়াল করলো মা, ফুফু, আপু সবাই মুচকি হাসছে অভিকে দেখে।অভির মা কিচেন থেকে চলে গেলো। অর্পা ছুরি দিয়ে লেবু কাটছিলো অভিকে দেখে বললো,” বাহ্ আজ ঘুম থেকে উঠে সোজা কিচেনে চলে এলি।”
অভি একটা চেয়ার বসে বললো,” আপু আমাকে চা দে তো মাথা ধরে আছে।”
” তোকে আমি চা কেনো কিছুই দিবো না। নিজে তো করেছিস আবার আমার জামাইটাকেও সাথে নিয়ে গেছিলি কালকে।”,অভির মুখের কাছে ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে বললো অর্পা।
” তোর জামাইকে আমি নিয়ে যাই নি। সে নিজেই এসেছে। নতুন একটা এক্সপেরিয়েন্স করবে বলে।”,অভি হাই তুলে বললো।
” নতুন এক্সপেরিয়েন্স ছুটাচ্ছি আমি। কালকে রাতে কি করেছে জানিস বমি করে আমার জামা কাপড় ভরিয়ে দিয়েছে। বমি করলে নিজের গায়ে করতো কিন্তু না আমার গায়ে করেছে। ঘুম থেকে উঠুক আজকে তার একদিন কি আমার।”
অভি মুচকি হেসে বললো,” কার্টুনিস্ট কোথায় আমাদের?”
” প্রভাত মামার কাছে।”, বলে শেষ না করতে ফুফু উঠে এলো।
ফুফু এসে অভির পিঠে হাত রেখে নওরীনকে ডাকলো তারপর বললো,” নওরীন মা একটু ছাদে গিয়ে দেখবা আমার আচার গুলোর উপর রোদ পড়ছে কিনা?”
নওরীন হাতের কাজ রেখে হা সূচক মাথা নেড়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অভির সামনে দিয়ে গেলো কিন্তু নওরীন অভির দিকে তাকালো না। ব্যাপারটা অভি কিছুই বুঝছে না। ফুফু তাকিয়ে আছে নওরীনের যাওয়ার দিকে।
” সাবধানে যাইও।”, বলে ফুফু অভির দিকে তাকালো। অভির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” ভালা আসস?”
“হুম, তোমার কি অবস্থা ফুফু?” বলে অভি গ্লাসে পানি ঢাললো।
“সুসংবাটা পাইসোস?”হাসি দিয়ে বললেন ফুফু।
অভি গ্লাস হাতে নিয়ে বলল,” কিসের সুসংবাদ?”
” তুই বাবা হবি।”,বলেই অর্পার দিকে তাকিয়ে হাসছে ফুফু।
অভি বললো,” হুম সে তো একদিন হবো।”বলে পানি খেলো।
” আরে একদিন হবি মনে? কিছুদিনের মধ্যেই হবি হুজুরের ওষুধ কাম করসে।”ফুফুর কথা শুনে অভি বিষম খেলো। চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো তার কাল রাতের কথা ভেবে।
অর্পা হাসতে হাসতে বললো,” ফুফু তুমি থামো তো যখন হবে তখন দেখা যাবে।”
অভি কালকে রাত নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল।ফুফু হাসতে হাসতে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলেন। অভি একটা ঢোক গিলে বললো,” ফুফু এইগুলো কি বললো?”
” আরে সকালে ফুফু সবার জন্য পায়েস রেঁধেছিলো। নওরীন পায়েসটা খাবার সময় কিসমিস খেয়ে ফেলে তাই বমি হয়। বেচারি নাকি কিসমিস সহ্য করতে পারে না। ফুফু কি আর এইগুলা শুনে উনি শুরু করছে ওনার হুজুরের ওষুধ কাজ করছে।”
অভি শান্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,” ও আচ্ছা।”
” কিরে তোর কি সন্দেহ হচ্ছে? টেস্ট করাবো নাকি?”,বলেই অর্পা হাসতে লাগলো।
” আপু তুই থামবি?”
” আচ্ছা যা, রুমে যা। আমি রুমে চা পাঠিয়ে দিবো। চিন্তা করিস না তোর বউকে দিয়েই পাঠাবো।”,বলে আবার হাসতে লাগলো অর্পা।অভি আড় চোখে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
________
আমি ছাদে এসে কোনো আচারের বক্স পেলাম না। নীচে গিয়ে ফুফুকে বলায় উনি বললেন,” আচ্ছা কোনো সমিস্যা নাই, তুমি যাও।”
কিচেনে আসতেই অর্পা আপু আমাকে চায়ের কাপ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,” যাও তোমার বরকে চা দিয়ে এসো।”
আমি এখন অভির রুমে যাবো চা নিয়ে? আমার অভির সামনেই যেতে ইচ্ছে করছে না। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি বললাম,”আপু আমি নিয়ে যাবো?”
” তোমার বর তুমি নিয়ে যাবে না তো কি তোমার সতিনকে ডাকবো। এমন চেহারা করে লাভ নেই যাও অভিকে চা দিয়ে আসো।”,বলে অর্পা আপু ঠোঁট চেপে হাসলেন।
আমি পা টিপে টিপে দোতলায় উঠলাম দোতলার করিডোরের পাশের ঘরটা অভির। আমি অভির ঘরের সামনে গিয়ে একটা নিশ্বাস নিলাম। মনে হচ্ছে আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। না আমি কোনো পুটি মাছ না আর উনি কোনো হাঙ্গর না। নার্ভাস হওয়ার কিছুই নেই।
রুমে যাওয়ার আগে বাহির থেকে উকি মেরে দেখলে কেমন হয়? রুম ফাঁকা থাকলে সাই করে গিয়ে রেখে আসবো। আমি দরজাটা একটু ফাঁক করে দেখার চেষ্টা করলাম। মনে হচ্ছে রুমে কেও নেই। নওরীন তোমার রাস্তা পরিষ্কার যাও সাই করে কাপ রেখে মিশন কমপ্লিট করো।
আমি যথাসম্ভব আস্তে আস্তে ঢুকলাম ঢুকে দেখি উনি খাটের এক পাশে বসে আছে। আমি কি দিন দিন অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। রক্ত মাংসের একটা মানুষকে দেখতে পারিনি। ইচ্ছে করছে নিজের গালে দুটো চর মারি।
আমি চায়ের কাপটা রেখে সূরা ফাতিহা পড়তে পড়তে বের হয়ে যেতে নিবো।অভি পিছন থেকে ডাকলো,” নওরীন দাড়াও।”
দরজা আমার থেকে দূরে আছে আমি খাটের সামনে দাড়িয়ে পড়লাম। অভি উঠে এদিকে আসতে আসতে বললো,” তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
আমি একটা ঢোক গিললাম আবার কিসের কথা। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আমার অনেক কাজ আছে।”বলেই চলে যাবো অভি হাত ধরে ফেললো।
” আমি বললাম না কথা আছে।” , গম্ভীর স্বরে বলল।
আমার এবার কি হবে? আমার কপালটাই এমন। উনি এবার কি বলবে না কি বলবে? আমি অভির দিকে তাকাচ্ছি না।
” দরজার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? আমার দিকে তাকাও।” বলে অভি আমার চোখের সামনে এসে দাড়ালো।
অভির দিকে তাকানো আমার পক্ষে সম্ভব না। তাকালেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
” কাল রাতে কি কিছু হয়েছিল?”, অভির প্রশ্ন আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল বোধ হয়। এখন কি উনি বলবে যে কাল রাতের কথা ওনার মনে নেই! হে আল্লাহ এবারের মতন বাঁচিয়ে দাও আগামী এক সপ্তাহ মিথ্যা কথা বলবো না।
এমন সময় প্রভাত মামা মামা বলে এসে পিছন থেকে অভিকে জড়িয়ে ধরলো। বাচ্চারা আসলেই ফেরেশতা। আল্লাহ সত্যি এক সপ্তহ আমি মিথ্যা বলবো না দেখে নিও।
অভি আমার হাত ছেড়ে প্রভাতকে কোলে নিয়ে বললো,” কি ব্যাপার কার্টুনিস্ট কোথায় থাকো তুমি?”
প্রভাত অসম্ভব সুন্দর ড্রয়িং করতে পারে। কার্টুন আকার প্রতি তার ঝোক তীব্র। বড়ো হয়ে কার্টুনিস্ট হতে চায়, সে ড্রয়িং এর ক্লাসও করে। ওকে দেখলে মাঝে মাঝে নিজেকে বলি আমি জীবনে করলামটা কি?একটাই কাজ পারি কুম্ভকর্ণের মতন ঘুম।
প্রভাত আমার দিকে তাকিয়ে বলে,” আমি তোমাদের কার্টুন একেছি। তোমরা দেখবে? প্রথমবার ভালো হয়নি কিন্তু এবার ঠিক হয়েছে।”
ছবিটা দেখে আমি হা করে আছি। এতো সুন্দর করে একেছে প্রভাত। অভি বললো,” এই হ্যান্ডসামটা বুঝি আমি? আমার পাশের পিচ্চিটা হা করে আছে কেনো?”
আমি আড় চোখে তাকালাম।
প্রভাত বললো,” ওটা মামী পিচ্চি না। মামী তোমাকে জোর করে পিকনিকে নিয়ে যাচ্ছে তাই তোমার মুখ রাগী। আর মামী গান গাইছে।”
” ঠিক বলেছো”, বলে আমি আর প্রভাত হাইফাইভ দিলাম।
[ চলবে ]