গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে #পর্বঃ৫ #এটা_কি_আমার_জন্যে? #নবনী_নীলা

0
15

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৫ #এটা_কি_আমার_জন্যে?
#নবনী_নীলা
আমি আগে রেডি হয়ে গাড়িতে এসে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর অভি নিজের সিটে এসে বসলো। তারপর আমার দিকে তাকাতেই আমি বাইরের দিকে তাকালাম। হটাৎ আমার দিকে ঝুঁকে আসতে লাগলো। আমি একটা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে ওড়নাটা শক্ত করে ধরলাম। সকালে যা হয়েছে তারপর আবার উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছে কেনো? এমনেই ওনার দিকে তাকালে নিজেকে হার্টের রোগী মনে হয়। আমি অনেক্ষন হলো চোখ বন্ধ করে আছি কিন্তু কিছুই তো হলো না। তাহলে লোকটা আমার দিকে এগিয়ে আসছিল কেনো?

আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখি অভি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার এইসব আচরণ দেখে কি ভাবছে কে জানে? আমি এদিক সেদিক তাকাতে লাগলাম। অভি আমার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিতে একদম কাছে চলে এলো। অভির চেহারা একদম আমার মুখের সামনে। আমি জোরে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলাম নিশ্বাস যেনো আটকে আসছে আমার। অভি সিট বেল্ট লাগিয়ে সরে গেলো।

আমার একি হাল হয়েছে? অভি কি সুন্দর স্বাভাবিক থাকে আমি যে কেনো এমন পাখির ছটফট করতে থাকি?
আমি গাড়ির ড্রয়ার খুলে পানির বোতলটা বের করে পানি খেলাম। অভি মনযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, যেনো গাড়ি চালানোটাই তার জীবনের আসল উদ্দেশ্য।

রচনাদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামায় অভি। আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না নিজের সিট বেল্ট খুলে নেমে পড়লাম। তারপর আমি চলে যেতেই,

” নওরীন দাড়াও।”, অভির আওয়াজ শুনে পিছে ফিরলাম।

অভি গাড়ি থেকে নেমে পিছনের সিট থেকে কিছু গিফট বক্স এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,” এতে রচনার জন্য কিছু গিফট আছে ওকে দিয়ে দিও।”

আমার বেস্টফ্রেন্ড রচনা ওর সাথে অভির গলায় গলায় ভাব।যেনো কোন জন্মে দুইজন ভাই বোন ছিলো। রচনাকে গিফট দিচ্ছে এতে আমার খুশি হবার কথা কিন্তু কেনো জানি মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমাদের বিয়ের দুইমাস হতে চললো আমাকে তো কিছু দেয় নি কখনো।

আমি বক্স গুলো নিয়ে আচ্ছা বলে বাড়ির দিকে ঢুকতেই অভি আবার আমাকে ডাকলো। আবার কি হলো? যেতে যেতে আবার পিছু ডাকছে কেনো? আমি মহা বিরক্তি নিয়ে ফিরে তাকালাম।

অভি আমার দিকে আরেকটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,”এটা নিতে ভুলে গেছো।”
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,” আজকে রচনারই দিন।”

অভি না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” এটা রচনার জন্য না।”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,” তাহলে এটা কার জন্যে? ওর বরের জন্যে?”

অভি ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” না ওর বরের জন্য না?”

” তাহলে এটা কার জন্যে? ওর অনাগত সন্তানের জন্য? আপনি ভানিতা করছেন কেনো বলুন তো? এই গিফটটা কার জন্যে ?” একটানা না থেমে বললাম।

” এটা তোমার জন্যে?”,বলেই অভি থামলো।

আমি হা করে অভির দিকে তাকিয়ে আছি। আমার জন্য মানে? আমার জন্যে উনি গিফট কিনেছেন? কথাটা ভাবতে না ভাবতেই অভি বলে উঠলো,” মা পাঠিয়েছে তোমার জন্যে।” বলেই আর এক মুহুর্ত দাড়ালো না সাই করে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।

রাগ এবার আমার মাথায় উঠেছে। আমার শাশুড়িই ভালো এর মতো নাকি। করলার রসের মতন জামাই পেয়েছি একটা। এর নাকি আবার এককালে প্রেম ছিলো। এর সাথে কেউ কিভাবে প্রেম করেছে আল্লাহ্ই ভালো জানে।অবশ্য আমার জন্যে কিছু কিনবেন কেনো? আছে না অথৈ ওনার। ফিরে আসবে ওনার অথৈ ওনার কাছে যত্তসব। অসহ্য লাগে, ব্লক মেরে রেখেছি ওই ডাইনির নাম্বারটা আমি। আমাকে হুমকি দেয় এদের দুই জনের নামে আমি মামলা করবো, অসহ্য। আমাকে চিনে না দুইটাকেই জেলে পাঠাবো বলে রাখলাম।

আমি রাগে গজগজ করে উপরে উঠতেই একটা ধাক্কা খেলাম। আমার হাতে আবার এতো কিছু অনেক কষ্টে নিজেকে পড়ে যাওয়া থেকে সামলে নিলাম। যার সাথে ধাক্কা খেলাম তার চেহারা দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল। রাহাত ভাইয়ের সাথে ধাক্কা খেয়েছি। রাহাত ভাই রচনার কাজিন এই ব্যাটা আমাকে বহুত জ্বালিয়েছে। ফুল নিয়ে আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। একবার বারান্দা দিয়ে ময়লা পানি মাথায় ঢেলে দিয়েছিলাম কিন্তু তাও শিক্ষা হয়নি।

আমাকে দেখে হাসলেন,” কি ব্যাপার নওরীন কেমন আছো?”

আমি জ্বি ভালো আছি বলে হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু একে দেখে আমার হাসিও আসছে না।

” আমাকে মনে আছে তোমার?”, এমন ভাবে বলছে দেখো মনে হচ্ছে এনার সাথে কতো জনমের পরিচয়। আমাকে কম সমস্যায় তো ফেলেনি যে একে ভুলে যাবো।

” ভাইয়া আপনার সাথে পরে কথা বলবো রচনা রেগে আছে আগে ওর সাথে দেখা করে আসি।”, বলেই কেটে পরলাম। কোনো কথা বলার সুযোগ দিলাম না। রাহাত ভাই দেখতে ভালো কিন্তু ওনার সেন্টি মার্কা অভ্যাস। অ্যাটিটিউড কম, ছেলেদের অ্যাটিটিউড না থাকলে কেমন পানসে পানসে লাগে। আবার এই অভি সাহেবের মতন অ্যাটিটিউডের বস্তা ভর্তি করে রাখলেও ভালো লাগে না।

রচনার রুমে এসে দেখি সে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আণ্টি বলেছে আজ সারারাত জাগবে তাই নাকি এখন ঘুমিয়ে পড়ে আছে। ওকে অনেক কষ্টে জাগিয়ে তুলে ওকে গিফট গুলা দিলাম।

রচনা চোখ ডলতে ডলতে বললো,” এইগুলো তুই এনেছিস?”

আমি ওর পাশে বসে বললাম,” নাহ, আমার জামাই দিয়েছে। আমার গিফট বিকালে আসবে। ”

” আরেহ অভি ভাইয়া আসেনি?”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,” না।”

” কখন আসবে কিছু বলেছে?”

আবার বললাম,” না।”

রচনা আমার মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে বললো ,” কি শুরু করেছিস তখন থেকে। না ছাড়া কিছু বলতে পারিস না।”

” রাহাত ভাই এখানে কেনো বলবি একটু আমাকে?”, আমি রেগে বললাম।

” আরে ওনাকে না বলে কি পারি? তার উপর বিয়ে বলে কথা ওনাকে তো আমারও পছন্দ না।গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে।”

রচনা আমার হাতের প্যাকেটটা টান মেরে নিয়ে বললো,” এইটা আবার কি কোলে নিয়ে বসে আছিস?”
বলেই প্যাকেট খুলে দেখলো মেরুন রঙের একটা শাড়ি। শাড়ীটা ভীষণ সুন্দর। আমারও খুব পছন্দ হয়েছে।

” বাহ্ অভি ভাই দেখি খুব রোমান্টিক।”, বলেই হাসতে লাগলো রচনা।

” জ্বি না। তোমার অভি ভাই দেয় নি। এটা আমাকে আমার শাশুড়ি দিয়েছে।”,বলে আমি শাড়িটা দেখতে লাগলাম।

“তোর শাশুড়ি তোকে দিয়েছে আর তুই এটা না দেখে এখানে নিয়ে আসলি।”,প্রশ্ন করলো রচনা।

” আরে না, আসার সময় আমাকে এটা দিয়ে বললো।আমি খোলার সময় পায় কি করে?”, মন খারাপ করে বললাম।

রচনা হাসতে লাগলো। যেনো আমি ওকে কোনো কৌতুক বলেছি।

” তুই হাসি থামাবি রচনা?”, ওর হাসি দেখে আরো রাগ হচ্ছে আমার।

রচনা কিছুক্ষনের জন্য হাসি থামিয়ে বললো,” তোর মাথায় যে বুদ্ধি সুদ্ধি নেই সেটা আমার জানা ছিলো। এটা যদি তোর শাশুড়ি দিয়ে থাকে তাহলে অভি তোকে আমার বাসার সামনে এসে দিবে কেনো? বাসায় থাকতেই দিতে পারতো তাই না। নয়তো তুই যখন বাসায় ফিরে যাবি তখন দিতে পারতো তাই না?”

রচনা কি বুঝাতে চাচ্ছে বুঝতে না পেরে বললাম,” ভুলে গেছিলো হয়তো। ওনার টাইম আছে নাকি আমাকে নিয়ে ভাবার।”

” জ্বি না ম্যাডাম, আপনার জামাই আপনার জন্যই কিনেছে। কি বলে দিবে বুঝতে না পেরে তোর শাশুড়ির কথা বলেছে। তুই আস্ত একটা গাধা রয়ে গেলি নওরীন।”, বলেই হাসছে রচনা।

আসলেই তো আম্মু যদি এটা এনে থাকে তাহলে সেটা নিজেই দিবে অভিকে দিয়ে পাঠাবে কেনো? হটাৎ একটা ভালোলাগা কাজ করছে কেনো জানি। নিজের অজান্তেই মুখে হাসি এসে গেলো। রচনা এই নিয়ে আমাকে আরো লজ্জা দিচ্ছে।

তখনই রচনার ফোন বেজে উঠতেই আমি ফোনটা রিসিভ করলাম। শাকিল ফোন করেছে। যার রচনার সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে। রচনা শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ আমি যে একটা কান্ড বাঁধিয়ে বসবো সেটা সে জানে।

আমি ফোন কানে দিয়ে বললাম,” হেলো ”

ফোনের ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,” রচনাকে দেওয়া যাবে?” আমি ফোনটা লাউডস্পিকারে এ দিলাম, রচনাও শুনছে।

” আমি রচনা। আপনি আমার কণ্ঠ চিনেন না বুঝি?”,বলেই আমি মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলাম। রচনা বসে আমার কান্ড দেখছে।

” সরি ভয়েসটা অপরিচিত মনে হচ্ছে আমার।”, ওপাশ থেকে বললো শাকিল।

” আমার ঠান্ডা লেগেছে তো, তাই হয়তো আপনার এমন মনে হচ্ছে।” এটা বলার সাথে সাথে ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ পেলাম। আমি আর রচনা কিছু না বুঝে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি। শাকিলের হাসি শুনে রচনাও হতবাক।

“কি হলো হাসছেন কেনো?”, আমি আবার বলতেই শাকিল বললো,” প্রথমত আমি ফোন দিলে রচনা শুরুতেই বলে কি চাই তোমার? আর সে আমাকে কখনো আপনি করে বলে না। তাই তুমি যেই হও না কেনো, অভিনয়টা ঠিক করে করতে পারোনি তাই হাসলাম।”

ফোনটা রচনাকে ধরিয়ে দিয়ে আমি চুপ করে বসে পড়লাম। এভাবে ধরা খেয়ে যাবো বুঝতে পারিনি। রচনা ফোন কানে নিয়ে বলে,” তোমার কোনো কাজ নেই? সারাদিন ফোন দেও কেনো?”

আমি শাড়িটার দিকে তাকাতেই আনমনে ভাবতে শুরু করি। সত্যিই কি অভি এটা আমার জন্য কিনেছে? যদি আমাকেই দিবে তাহলে সোজা বললো না কেনো? কি লেভেল এর আনরোমান্টিক হলে নিজে শাড়ি কিনে মা দিয়েছে বলে। ভেবেই হাসি পাচ্ছে আমার। আচ্ছা অভি কি চাইছে আজকের অনুষ্ঠানে আমি এই শাড়িটা পড়ি? তা না হলে আজকে আমাকে কেনো উপহারটা দিল? নিশ্চয় ভেবেছিল যে আমি কিছু বুঝবো না। কিন্তু অভি সাহেব আপনি নওরীনকে চিনতে ভুল করেছেন। আপনার শাড়ি তো আমি পড়বো না যতক্ষণ না আপনি নিজে স্বীকার করবেন এটা আপনার উপহার।

(#চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here