#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৭ #I_Love_You
#নবনী_নীলা
অভি আমার কোমর ধরে ওর কাছে নিয়ে বলে,” আমি অসভ্যতা করছি?অসভ্যতা কি দেখবে?”
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। আমাকে বাঁদর বলা হয়েছে ইচ্ছে করছে বাঁদরের মতন এর চুল ধরে টান মারি। দাড়ি থাকলে বেশি সুবিধা হতো। ইনি তো আবার ক্লিন শেভ করেন। অভি একহাত দিয়ে আমার মুখ ধরে নিজের দিকে ঘোরালো।
এমন সময়ে রচনা এসে হাজির মনে হয় আমাদেরকে খুঁজতেই এসেছে। রচনা একটু কেশে উঠে বললো,” জামাইর বউয়ের প্রেম শেষ হলে যদি একটু নিচে এসে আমার গায়ে হলুদে মনযোগ দেওয়া হয় তাহলে বড় খুশী হতাম।” বলেই রচনা ঠোঁট টিপে হাসছে।
এই লোকটাকে আমি অসভ্য বলেছি এবার তো দেখি নিলজ্জও বটে। একখনো আমাকে ধরে আছে। আমি ওনাকে একটা ঠেলা মেরে চলে আসি রচনার সাথে।
অনুষ্ঠান শেষ হতে প্রায় রাত 2টা বেজে গেছে সবাই বেশ ক্লান্ত। রচনা আর শাকিলকে কাল অনেক ধকল সামলাতে হবে এইসময় আবার জার্নি করে বাড়ি ফেরা ওদের জন্যে কষ্টের হবে তাই কয়েকজন অভিভাবকসহ ওরা হোটলে থেকে গেলো।
আমি রচনার সাথে রুমে এলাম। আজকে আমি ওর সাথেই থাকবো।এদিকে অভি,শাকিল আর তাদের সাথে এক বড় ভাইকে দেওয়া হয়েছে রুমে।
গোসল সেরে রিলাক্স হয়ে দেখি রাত দুইটার বেশি। পুরো অনুষ্ঠানে আমি অভির থেকে যত সম্ভব দূরে দূরে থেকেছি। তাকে পাশ কাটিয়েও চলে গেছি। রাহাত ভাইকে আমার আসে পাশে তো দূর অনুষ্ঠানের কোথাও দেখা যায়নি। রচনা গোসল সেরে এসে বললো,” ছাদে যাবি?”
আমি বললাম,” তোর কি মাথা খারাপ এতো রাতে ছাদে যাবো। এখন ছাদে গিয়ে করবিটা কী?”
” শাকিল আমাকে অনেকবার করে বলেছে রাতে যেনো ছাদে যাই।আমি না বলে মোবাইল সুইচ অফ করে রেখেছি।”, শান্ত গলায় বললো রচনা।
” না বলে এখন আবার যেতে ইচ্ছে হচ্ছে বুঝি? কিন্তু আবার জামা বদলাতে হবে আমার।”, বিরক্ত নিয়ে বললাম আমি।
” কেনো ভালোই তো লাগছে জিন্স আর শার্ট পরে আছিস। এভাবেই যাবো আমরা।”
” আমি বিয়ের পর এইগুলা পরি না। এখন যদি অভি ওখানে থাকে কেমন লাগবে না?”,একটু চিন্তিত হলাম বলে।
” জামাইর সামনে এইডি পইরা যাইতে পারো না, বাচ্চা পয়দা করবা কেমনে?” রচনার কথা শুনে আমি ভ্রু কুঁচকে ফেললাম।
রচনা মাঝে মাঝে বয়স্ক দাদিদের মতন কথা বলে। এই ধরনের কথা আমার একদম পছন্দ না।
রচনা আরও বললো,” ভাল্লাগে নাই কথা শুনে? তোর ভাগ্য ভালো তোর অভির মতন জামাই নইলে এতো দিনে…”
রচনাকে আমি আর কিছু বলতে না দিয়ে বললাম,” আচ্ছা বাবা চল তাও তুই চুপ কর।”
আমি না গেলে এই মেয়ে আমাকে আরো কথা শুনিয়ে মারতো। লিফট ছাদে এসে থামলো। আমার ধারণা ঠিক অভি আর শাকিল দুজনেই আছে। রচনা স্বাভাবিক ভাবে শাকিলের সামনে গিয়ে বললো,” কি জন্যে আসতে বলেছো তাড়াতাড়ি বলো।”
অভি নিজের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত এতো বড়ো ছাদ ফাঁকা শুধু আমরা চারজন। শাকিল আর রচনা কথা বলতে বলতে অনেকটা দূরে গেলো। অভি আমার দিকে একবার তাকিয়েছে কিন্তু কিছু বলেনি। এবার আমার ভয় লাগছে ঘড়িতে রাত ৩টা বেজে ২০ মিনিট। উপায় না পেয়ে অভির কাছে গিয়ে দাড়ালাম। পুরো শহরটা দেখা যাচ্ছে এ থেকে। চারিদিকে শুধু অন্ধকার মাঝে কিছু রাস্তার লাম্পগুলোর আলো।
ধুরো আর দাড়িয়ে থাকতে পারছি না পা দুটো ব্যাথা হয়ে গেলো আমার। আমি অভির পায়ের কাছে বসে পড়লাম। অভি ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি করছো তুমি?”
” দাড়িয়ে থাকতে পারছি না।”,বলেই আমি পিছনের রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে অভিকে দেখতে লাগলাম।
আমার শাশুড়ি বিয়ের আমাকে যা বলেছে সেটা যদি সত্যি হতো আমি খুশি হতাম। উনি আমাকে অভি আর অথৈয়ের সম্পর্কের সব কথা বলেছেন।
” স্ত্রী হিসাবে এইসব জানা তোমার দরকার। আমার ছেলে তোমাকে এইসব হয়তো কোনদিন বলবে না। বিয়ের প্রতি অভির কোনো আগ্রহই ছিলো না তাই সে বিয়ের আগে প্রতিটা মেয়েকে একই কথা বলেছে যাতে করে কোনো মেয়ে অভিকে বিয়ে করতে রাজি না হয়। তোমার ক্ষেত্রে তুমি কেনো রাজি হয়েছো সেটা একটা বিস্ময়। হয়তো ছেলেমানুষী করে ফেলেছো। কিন্তু সত্যি কথা হলো অথৈয়ের প্রতি অভির কোনো পিছুটান নেই। বিয়ে নিয়ে সে আমাকে সোজাসুজি না করবে না কারণ তাতে আমি কষ্ট পেতাম। তাই সে প্রতিটা পাত্রীকে সত্যের সাথে কিছুটা মিথ্যা মিশিয়ে বলেছে।”
আমি কথা গুলা মূর্তির মতন শুনছিলাম।তিনি আরো বলেন,” অথৈয়ের বিয়ে আগে থেকেই আরেকজনের সাথে ঠিক করা ছিলো। কিন্তু তা সত্বেও অভিকে ঠকিয়ে যাচ্ছিলো মেয়েটা দিনের পর দিন। একদিন অথৈয়ের হবু বর অভির অফিসে গিয়ে অভিকে সবটা বলে। তারপরের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে অথৈকে অভি আর ভালোবাসে না। মা হিসাবে আমি তোমাকে এতটুকু আশ্বাস দিতে পারি।”
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবতে লাগলাম। আকাশে কি সুন্দর তারা, চাঁদটাকেও কি সুন্দর লাগছে। হটাৎ অভি আমার পাশে বসে পড়লো। শাকিল আর রচনার কথা শেষ হচ্ছেই না। এরা আজ সারারাত জেগে থাকার প্ল্যান করেছে নাকি। অভি হটাৎ পিছন থেকে এক হাত দিয়ে আমাকে ধরে আর অন্য হাতে আমার হাত ধরে আমার কাছে এসে বললো,” ভয় পেয় না।”
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই টাস টুস শব্দ হলো। হটাৎ এমন আওয়াজে আমি চিৎকার দিয়ে অভির গলা জড়িয়ে ধরি। আমি হার্ট বিট দৌড়াচ্ছে রীতিমতন। অভি আমার পিঠে হাত রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,” সামনে তাকাও।”
আমি কিছু না বুঝে গলা জড়ানো অবস্থায় সামনে তাকিয়ে দেখি আকাশে রং বেরঙের আতশবাজি। আমি মুকগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। তারমানে এইসব হবে অভি আগে থেকেই জানতো তাই আমাকে ভয় পেতে না করেছে।
সবশেষে আকাশে আই লাভ ইউ কথাটা লেখা উঠলো। কি যে সুন্দর লাগছিল বলে বোঝানো যায় না।আমি হা করে তাকিয়ে আছি। সামনে তাকিয়ে দেখি রচনা শাকিলকে জরিয়ে ধরলো।
আমি চমকে উঠে অভির দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম আমি এখনও তার গলা জড়িয়ে ধরে আছি। আমি তাড়াতাড়ি সরে গেলাম। অভি বলে উঠলো,” এতো রাতে এমন পাগলামির কোনো মানে আছে? শাকিল যে কিসব পাগলামি করে।”
” কিসের পাগলামি? এটা যদি পাগলামিও হয় তাও সুন্দর। ভালোবেসে এমন পাগলামি সবাই করতে পারে না।” বললাম।
” ডোন্ট টেল মি তোমার এইসব ভালো লাগছে।”, আমার দিকে তাকিয়ে বলল অভি।
” হ্যা। ভালো না লাগার কি আছে। কি রোমান্টিক ছিল!”, বলেই আমি হাসলাম।
” বাহ্ এইগুলা তো দেখি ভালোই বুঝো।” বলেই আড় চোখে তাকালো অভি।
কথাটা শুনে আমি একটু লজ্জা পেলাম। অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।
______________
সকালে ঘুম ভেগে দেখি ১১টা বাজে।কিন্তু আমি তো ছাদে ছিলাম রুমে এলাম কখন? কি করেই বা এলাম? কিছুই মনে পড়ছে না আমার। রচনা মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। আমি উঠে বসতে বসতে বললাম,” আমি এখানে এলাম কি করে?”
” তোর জামাইয়ের কোলে করে।” বলেই রচনা শয়তান মার্কা হাসি দিচ্ছে। আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি।
” তুই তো অভি ভাইয়ের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলি। পরে তোকে কোলে করে রুমে দিয়ে গেছে।”
আমি বুঝি না আমি ঘুমালেই এই লোকটা আমাকে কোলে নেয় কেন?আজ পর্যন্ত আমি সেটা নিজের চোখে দেখলাম না আমাকে কোলে নিতে দুনিয়ার সবাই দেখে বসে আছে। আমি এমন কুম্ভকর্ণের মতন ঘুমাই কেনো? একটা মানুষ আমাকে ঘুমের মধ্যে কোলে নিলো অথচ আমি জানি না।
[ চলবে ]