#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৮
#নবনী_নীলা
জামার পিছনের চেইনটা কিছুতেই পুরোটা লাগতে পারছি না, হাত পৌঁছাচ্ছে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক্ষন চেষ্টা করলাম। বিরক্ত হয়ে রুমে হাটাহাটি শুরু করেছি এবার। রচনাটাও নেই ওকে সবাই পার্লার এ নিয়ে গেছে। উফফ হাতটা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার। কি করি? এ অবস্থায় তো আমি রুম থেকে বের হতে পারবো না। রচনার ছোটো বোন রুহিকে ফোন করে আসতে বললাম। কিন্তু এখনো আসেনি মেয়েটা। আমি ফোন হাতে নিয়ে আবার কল দিতেই মনে হলো পিছন থেকে কেউ আমার জামার চেইনটা লাগিয়ে দিয়েছে।
রচনা কি চলে এসেছে? কারণ রুমের পাঞ্চ কার্ড ওর কাছেই থাকার কথা। আমি পিছনে তাকিয়ে রীতিমত একটা শক খেলাম।
অভি দাড়িয়ে আছে তারমানে অভি চেইনটা লাগিয়েছে। অভিকে দেখেই আমি ভুত দেখার মতন চিৎকার করে উঠলাম। অভি এগিয়ে এসে আমার মুখ চেপে ধরে বলল,” চিৎকার করছো কেনো? লোকে শুনলে কি বলবে?”
একটা মেয়ের ঘরে ঢুকে না বলে তার জামার চেইন লাগিয়ে দেওয়ার মতন অন্যায় করেও অভি স্বাভাবিক ভাবেই এইসব বলছে। এইসবের পরেও আমি চুপ করে থাকবো ভেবেছে? আমি মুখের উপর থেকে অভির হাত সরিয়ে বললাম “আপনি এটা কি করলেন?”
” কি করেছি?”, এমন একটা ভাব যেনো কিছুই করেনি।
” আপনি আমার জামার চেইন আটকে দিলেন কেনো?” অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম। লজ্জায় তাকাতেই পারছি না।
” আচ্ছা। তারমানে চেইনটা তুমি খোলাই রাখতে চাইছিলে?”, বলেই অভি দুইপা এগিয়ে এলো।
আমি ভরকে গিয়ে বললাম,” একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না। আপনাকে কে বলেছে আমার হেল্প করতে আমি কি হেল্প চেয়েছি আপনার থেকে?”
” ঠিক আছে আসো খুলে দিচ্ছি চেইনটা। তাহলে তো খুশি হবে?” কথা শুনেই আমার চোখ ছানবড়া হয়ে গেলেও।সত্যিই কি এমন করবে ? কি বিপদে পরলাম। আমি দেওয়ালের সাথে ভয়ে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালাম। নিজেকে এবার একটু সুরক্ষিত মনে হচ্ছে।
তারপর বিরক্ত হয়ে বললাম,” আপনি এই রুমে এলেন কিভাবে? কোনো মেয়ের ঘরে আসার আগে নক করে আসতে হয় জানেন না?” কথাগুলোতে রাগও প্রকাশ পেয়েছে।
অভি আমার দিকে এগিয়ে এলো। এবার আমি কোথায় যাবো এমনেই দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছি। এভাবে বলা ঠিক হয় নি মনে হয়। এবার যদি রাগের মাথায় সত্যি সত্যি চেইনটা খুলে দেয়। অভি আমার দুই পাশের দেওয়ালে হাত দিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে দাড়ালো।
এবার আমার ভয় লাগছে। অভি হাত দিয়ে আমার মুখের সামনের চুল গুলো কানের পাশে সরিয়ে দিয়ে বলল,” তোমার কালকে রাতের কথা মনে আছে।” এতটুকু বলে অভি তাকিয়ে আছে।
লজ্জায় আমি লাল টমেটো হয়ে গেছি। আমাকে কোলে করে রুমে রেখে গিয়েছে তখন হয়তো আমার কার্ডটা ওনার কাছে রয়ে গেছিলো।
অভি আমার কানের কাছে এসে আরও বললো,” অন্য মেয়ের রুমে যাওয়ার প্রয়োজন আমার নেই, তাই নক করার প্রশ্নও উঠছে না। আর নিজের বউয়ের রুমের দরজায় নক করে আসার ভদ্রতা আমি করি না।”বলে আমার দিকে তাকালো।
নিজের বউ বলে রুমে নক করার দরকার নেই কেনো প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি তাকালাম একবার। তাকানোর পর রেগে আবার চোখও সরিয়ে নিলাম।
” তোমাকে ওইদিন যে মেরুন রঙের শাড়িটা দিলাম ওটা পড়নি কেনো?”, আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো অভি।
” এক মিনিট আপনি দিয়েছেন মানে? আপনি না বললেন ঐটা আম্মু দিয়েছে।”, আচ্ছা কথা বের হয়েছে তাহলে।
” হ্যা কিন্তু তোমাকে তো আমিই দিলাম তাই না।”অভি প্রচুর চালাক। কিন্তু আমিও কম না আমি বললাম,” তাহলে বুঝলেন কি করে শাড়িটা মেরুন রঙের? আপনি কি বক্সটা আগে থেকে খুলে দেখেছিলেন?”
মনে হয় কাজ হয়েছে অভি দেওয়াল থেকে একটা হাত সরিয়ে নিজের চশমা ঠিক করলো,” আমি কোনো বক্স খুলতে যাবো? মা বলেছিল আমাকে।”
বাহ্ আবার মিথ্যা কথা বলছেন, আমার নামও নওরীন আফরোজ একদিন না একদিন কথা ঠিক বের করে ছাড়বো। আজকে আর কথা বাড়াবো না আমি। যত তাড়াতাড়ি পারি অভিকে এ রুম থেকে বের করতে হবে।
” আচ্ছা, বুঝেছি। আপনি কি জন্যে এসেছেন সেটা বলুন।”, বিরক্ত নিয়ে বললাম।
” আমার ফোনের চার্জ শেষ তোমার চার্জারটা লাগবে।” এটা কোনো অজুহাত কিনা বুঝতে পারলাম না। আমি আড় চোখে তাকিয়ে নিজের ব্যাগের কাছে গেলাম।
ব্যাগের ভেতর থেকে চার্জার নিয়ে ওনাকে দিলাম। কিন্তু কি মুশকিল অভি চার্জার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু ভাবছে মনে হলো। আমি বললাম,” কি ব্যাপার আপনি যাচ্ছেন না কেনো?”
” তোমাকে কি যেনো বলতে এসেছিলাম সেটা মনে পড়ছে না।” বলেই বিছানায় বসে পড়লো।
” সেকি আপনি বসে পড়লেন কেনো? আপনি গিয়ে বাদাম কিনে বাদাম খান। খাওয়া শেষ হলে যদি মনে পড়ে তখন আমাকে এসে বলবেন। এখন আমি রেডি হবো আপনি রুম থেকে যান।”, বলে অভির হাত ধরে টানতে লাগলাম।
” তুমি আমাকে অর্ডার দিচ্ছো?”, বলেই এবার শুয়ে পড়ল। এই লোকটা খালি কথা বাড়াচ্ছে। সমস্যাটা কি বুঝি না?
” আচ্ছা থাকুন। আমার অনেক কাজ আছে এখানে আপনার সাথে কার শক্তি কতো দুর খেলার সময় নেই।”,বলে আমি আয়নার সামনে চলে গেলাম।
অভি কিছুক্ষণ পর চুপ করে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বলে উঠলো,” আজকে তুমি ঝগড়া করছো না কেনো?”
আমার মুখ হাঁ হয়ে গেল।আমি অভির দিকে তাকিয়ে বললাম,” আজকে ঝগড়া করছি না মানে? আমি কোনদিন আপনার সাথে ঝগড়া করি। সবসময়তো আপনি আমাকে রাগ দেখান।”
অভি ফোনটা চার্জ থেকে খুলে সময় দেখতে দেখতে বললো,” এই যে আবার ঝগড়া শুরু করেছো। কপালে এমন ঝগড়ুটে বউ জুটবে ভাবিনি।”,বলে ঠোঁট চেপে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
দিয়েছে আমার পুরো মুডটাই নষ্ট করে দিয়েছে। আমি কবে ঝগড়া করেছি কেউ বলতে পারবে? সাক্ষী দিবে কেউ এই অপবাদে? আমাকে ঝগড়ুটে বলে গেলো! ঝগড়া কাকে বলে সেইটা তো উনি জানে।আমি চিরুনি হাতে আয়নার সামনে বসে পড়লাম। সবসময় আমাকে রাগিয়ে দেয় এই লোকটা।
আমি সারাদিন অভির সাথে কথাই বলিনি। রচনা আর শাকিলের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সবাই মিলে আমরা হই হুল্লোড় করেছি। সন্ধায় অনুষ্ঠান শেষ করতে হলো তা না হলে ওদের বাড়ি যেতে অনেক রাত হতো। এখন রাত সাড়ে আটটার কাছাকাছি। আমি আর অভি বাসার দিকে রওনা হয়েছি। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম, জ্যামের মাঝে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে গাড়িতে বসে থাকতে আমার অসহ্য লাগছে।
অবশেষে ১ঘণ্টায় জ্যাম ছাড়লো।বাসায় আসতে আসতে বাজলো রাত সাড়ে দশটা। আমার অসহ্য লাগছে গোসল করতে হবে তাহলে যদি শান্তি লাগে। আমি এসেই গোসল করতে গেলাম। গোসল করতে গিয়েই বুঝলাম আমার পিরিয়ড হয়েছে।
এবার আমি কি করবো? আমি সাথে করে কিছুই আনিনি, জানলেই না আনতাম। সবকিছু আছে আমার ওয়ার্ডরোবে। আমি কি করে কি করবো বুঝতে পারছি না। এইভাবে ওয়াশরুম থেকে বের হতেও পারবো না। অভি রুমে বসে আছে। প্রথমত অভিকে রুম থেকে বের করতে হবে। তারপর আমি যা করার করতে পারবো। কিন্তু লোকটাকে বের করবো কিভাবে?
সবচেয়ে বড় সমস্যা টাই তো লোকটাকে রুম থেকে বের করা। আমি ওয়াশরুমের দরজা একটু খুলে উকি দিলাম। রুমে অভি নেই আমি রুমে পা দিবো এমন সময় মনে হলো যদি বারান্দায় গিয়ে থাকে আবার ওয়াসরুমে ঢুকে গেলাম।
ওনাকে ডাকলে কেমন হয়, বুঝিয়ে বলতে পারলে ঠিক বুঝবে। কি বলে ডাকবো নাম ধরে ডাকা যাবে না তাহলে কি ওগো শুনছো? এইগুলো বলবো। ওগো শুনছো? এইগুলো অতিরিক্ত লুতুপুতু নাম। এইগুলা শুনতে কেমন কেমন লাগে। না না আমি এইসব ডাকতে পারবো না। একটা আইডিয়া অবশ্য পেয়েছি আমি।
আমি বললাম,” এই নওরীনের জামাই। এই নওরীনের জামাই।”, এই ডাকটা ভালো বলতেও বেশ মজা লাগছে।
অভি হা করে বারান্দা থেকে রুমে এলো। ভাগ্যিস রুমে নেই ভেবে ঢুকে পড়িনি। উনি এমন ডাকে বেশ অবাক হলেন। তার বউ তাকে এভাবে ডাকবে সে হয়তো কল্পনাও করেনি।
অভি নিজের হতভম্ব ভাব কাটিয়ে উঠে বললো,” কি হয়েছে কিছু লাগবে?”
আমি না সূচক মাথা নেড়ে বললাম,” আপনি একটু রুম থেকে বের হবে আমার একটু দরকার ছিলো।” এই কথা গুলো বলতেও লজ্জা লাগছে আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম।
আমার চোখের দৃষ্টি দেখে অভি হয়তো বুঝেছে। সে ব্যাস্ত হয়ে প্রশ্ন করলো” তোমার কি পিরিয়ড হয়েছে?”, আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। উনি মাঝে মধ্যে খুব সহজেই আমাকে বুঝতে পারে। অভি বকা দিয়ে বললো,” এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে ইডিয়েট!”
[ চলবে