ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড #পর্ব_১৪ #সারিকা_হোসাইন

0
126

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_১৪
#সারিকা_হোসাইন

ঝকঝকে সাদা টাইলসে মোড়ানো বিশাল ওয়াশরুমের বেসিনের বেদিতে দুই হাতে ভর দিয়ে কিঞ্চিৎ ঝুকে দাঁড়িয়ে আছে যুবরাজ।বুকের বাম পাশের উপরের দিকে গভীর এক ক্ষত থেকে চুইয়ে চুইয়ে ঘন টকটকে লাল তরল পদার্থ গড়িয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে যুবরাজের সারা শরীর।এতে যুবরাজের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।আয়নার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে তার নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।তার জলন্ত চোখ জোড়া কোনো হায়েনার থেকে কম নয়।নিজেকে নিজের কাছেই পশুতুল্য লাগছে।এমনটাই কি হবার কথা ছিলো?

“যেই হাতে মানুষের জীবন রক্ষা করতো আজ সেই হাতেই মানুষের মৃত্যু!”

আর ভাবতে পারে না যুবরাজ।রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে শরীরের পেশী গুলো ফুলে ফেঁপে উঠেছে।গলার আর কপালের শিরা গুলো ছিড়ে যাবার উপক্রম।রাগে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে থরথর করে কাঁপছে যুবরাজ।নিঃশ্বাসের ফস ফস শব্দ ব্ল্যাক ম্যাম্বা বিষাক্ত সাপকেও হার মানাচ্ছে।
মুহূর্তেই যুবরাজ সজোড়ে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো চকচকে সুন্দর দামি বেসিনের আয়নায়।ওই ঠুনকো জড়বস্তু কি আর পাথর রূপী মানুষের শক্তি সামলাতে পারবে?
নিমিষেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ঝনঝন শব্দ তুলে মেঝেতে পড়ে গেলো শখের বহু দামি আয়না।পরে যাবার আগে অবশ্য সেই আয়না যুবরাজের থাবার ন্যায় হাতকে রক্তাক্ত করতে ভুললো না।

বাইরেই ল্যাপটপে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সারছিলো রায়াফ।হঠাৎ ওয়াশরুমের ভেতরের এমন শব্দে ঘাবড়ে গিয়ে কোলের ল্যাপটপ সোফায় ফেলে দৌড়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ভেতর থেকে আর কোনো আওয়াজ আসছে না এখন।রায়াফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ধীর কন্ঠে দরজায় সামান্য নক করে বলে উঠলো।

“কাম ডাউন ইউভি”

ভেতর থেকে কোনো উত্তর এলো না।রায়াফ তার কথা শেষ করে ধীর পায়ে ড্রয়িং রুমে চলে এলো।ল্যাপটপের কাজে আর তার মন বসলো না।ডিভানে গা এলিয়ে মাথার পেছনে দুই হাত রেখে চোখ বন্ধ করতেই দৃষ্টি পটে ভেসে উঠলো বছর দুই আগের হাস্যজল স্মৃতি।

যুবরাজ তখন নিউইয়র্ক মাউন্ট সিনাই হসপিটাল এর বেস্ট কার্ডিও লজিস্ট।নিউ ইয়র্ক শহরের নামি দামি মানুষের একমাত্র আস্থা ছিলো “ডক্টর ইউভরাজ”যেকোনো হার্ট রিলেটেড সার্জারি যুবরাজের কাছে ছিলো ডাল ভাত।যেখানে প্রবীণ ডক্টর রাও জটিল হার্ট অপারেশন করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতো সেখানে যুবরাজ কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই সার্জারির সাইন করে ফেলতো।যুবরাজের জীবনে হার বা ভয় নামক কিছুই ছিলো না।না ছিলো কোনো পিছুটান।যখন যুবরাজ তার সাফল্যের সোপানে তরতর করে উঠে অগ্রসর হচ্ছে সেই সময় হঠাৎই মেগান গ্যাব্রিয়েলা নামক এক সুন্দরী বিদেশি তরুণীর আবির্ভাব হয় যুবরাজের জীবনে।মেয়েটি তার বাবাকে নিয়ে এসেছিলো যুবরাজের কাছে।প্রভাব প্রতিপত্তি সমৃদ্ধ অতীব সুন্দরী মেগান যুবরাজের হাত খামচে ধরে নীল নীল চোখে কেঁদে কেটে বলেছিলো

“প্লিজ ডক্টর সেইভ মাই ফাদার।আই হ্যাভ নো ওয়ান ইলস ইন ডিজ ওয়ার্ল্ড একসেপ্ট মাই ফাদার”

মেয়েটিকে আশ্বস্ত করে অপারেশন এর প্রস্তুতি নিলো যুবরাজ।কিন্তু যুবরাজ কি জানতো এই অপারেশনই তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে তাকে খুনিতে রূপান্তর করবে?
শুধু কি যুবরাজের জীবন ই ধ্বংস হয়েছে?কি দোষ ছিলো সদা হাস্যজল দুস্টুমিতে মেতে থাকা ব্রিলিয়ান্ট ডক্টর রেহান চৌধুরীর?

“কি ভাবছিস এখানে শুয়ে শুয়ে?”
যুবরাজের গম্ভীর কন্ঠে চোখ মেলে তাকালো রায়াফ।উদোম গায়ে শুধু একটা হাফপ্যান্ট পড়ে যুবরাজ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে রায়াফের দিকে।লম্বা সময় ধরে শাওয়ার নেবার কারনে বুকের ক্ষত টা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।হাতের মুষ্ঠি টাও সাদা সাদা বর্ন ধারণ করেছে।
যুবরাজ সোফায় ধপ করে বসে সেন্টার টেবিলের নিচ থেকে মেডিকিট বক্স বের করে তুলায় কিছুটা ডেটল লাগিয়ে নিলো

“পুরোনো বীভৎস স্মৃতি যত তাড়াতাড়ি ভুলবি ততই নিজের জন্য মঙ্গল।আই হোপ ইউ গট আন্ডারস্ট্যান্ড!”

কথাটি বলেই যুবরাজ নিজের ক্ষততে ডেটল চেপে ধরে নির্বিকার রইলো।রায়াফ জানে এসব ব্যাথা যুবরাজের নিত্য দিনের সঙ্গী।যুবরাজকে এমন নির্বিকার দেখে প্রথম প্রথম খুব মাথা ঘামাতো রায়াফ।কিন্তু ধীরে ধীরে সেও এসবে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।

“শেরহাম তোকে পাগল কুকুরের মতো খুঁজছে।পরশু রাতে তুহিন কে খুব মেরেছে।”
ধীর কন্ঠে কথাটি বলে পুনরায় ল্যাপটপ ওপেন করলো রায়াফ।

“ভনিতা না করে যেটা বলতে চাস সেটাই বল।নাটক একদম পছন্দ করিনা”
কাট কাট গলায় কথা খানা বলে বুকে ব্যান্ডেজ লাগাতে উদ্দত হলো যুবরাজ।

রায়াফ তার ল্যাপটপ এর কীবোর্ড এ খটখট করতে করতে বললো
“আর কতো দিন এভাবে পাল্টা হামলা হবে?

“তুই কি ওকে এবারও ওকে ভয় পাচ্ছিস?আমি থাকতে তোর ভয় কিসের,?

“ভয় আমার জন্য পাচ্ছি না ।এবার সে আটঘাট বেঁধে এসেছে।

“আসুক।যমের দুয়ার থেকে যেহেতু ফিরে এসেছিস তাহলে এবার আর মরবি না।”

যুবরাজের এমন হেঁয়ালি কথায় ঠোঁট কামড়ে কপাল কুচকালো রায়াফ।যেই হাতে এক সময় শোভা পেতো স্কাল্পেল,সিজরস,ফোর্সেপ্স সেই হাতে ল্যাপটপ জিনিসটা যেনো বড়ই বেমানান!
_______
শহরের পরিত্যক্ত এক ভাগাড় থেকে আজ দুপুর আনুমানিক দুটো পনেরোর দিকে মেট্রোপলিটন পুলিশ অজ্ঞাত এক ব্যাক্তির লাশ পেয়েছে।লাশটির শরীর দেখে আসল নাম ঠিকানা কিছুই শনাক্ত করা যাচ্ছে না।অজ্ঞাত ব্যাক্তিটিকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো জন্তু জানোয়ার খুবলে খেয়েছে ।না আছে চোখ না আছে শরীরের কোনো অর্গান।এরকম বিভৎস লাশ কেউ কোনো দিন দেখেনি।পুলিশের ধারণা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে এভাবে কাউকে হত্যা করা সম্ভব নয়।যদি কেউ করে থাকে তবে সে সাইকো কিলার।

টিভির পর্দায় খবরটি দেখে বিরক্তিতে “চ” সূচক শব্দ করে রিমোট দিয়ে টিভি বন্ধ করে রিমোটটি দূরে ছুড়ে মেরে কপাল চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো রাজ্য।প্রতিদিন কেউ না কেউ খুবই বিভৎস ভাবে মারা যাচ্ছে।এজন্য পুরো ডিপার্টমেন্ট অনেক চাপে আছে।দম ফেলার ফুসরত টুকু হচ্ছে না।এর মধ্যে আবার নতুন খুন।কিলার এতটাই চালাক কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট পর্যন্ত রাখছে না।গতো এক বছরে এপর্যন্ত সাইত্রিশ জন মানুষের খুন হয়েছে।একটার ও কোনো প্রুভ রাখেনি কিলার।
নানান ব্যাস্ত চিন্তার মাঝে হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ধ্যান ভাঙলো রাজ্যের ।বার দুয়েক কলিং বেল বাজার পর আশেপাশে মিসেস তনুজা কে না দেখতে পেয়ে নিজেই দরজা খুলতে চলে গেলো।

“একি আপনি এই অসময়ে?
দরজা খুলতেই শেরহাম কে দেখে বেশ অবাক হলো রাজ্য।বাড়ি পর্যন্ত এসে দেখা করার মতো কোনো সম্পর্ক এখনো তৈরি হয়নি তাদের মধ্যে।তাহলে এই লোক দুই দুই বার বাড়িতে এসে কি জাহির করতে চাচ্ছে?

“আমাকে দেখে অখুশী হলেন মনে হচ্ছে?”
প্রশ্নটি করে স্মিত হেসে রাজ্যের পানে গভীর দৃষ্টি ফেললো শেরহাম।

“না না অখুশী হবো কেনো?আসুন ভেতরে আসুন।”

শেরহাম কে ভেতরে আসতে বলে আগে আগে চলে গেলো রাজ্য।এইমুহূর্তে শেরহাম কে নিয়ে তার ভাবার সময় কই?এই কেইস সলভড করতে গিয়ে নিজের জীবনের মোড় কোন দিকে যাবে সেটাই ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছে না রাজ্য।

ড্রয়িং রুমে ছেলে মানুষের কন্ঠস্বর শুনে সিঁড়ি বেয়ে ধীর পদে নেমে এলেন রেজোয়ান চৌধুরী।গত রাত থেকে তার শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে।ইদানিং হুটহাট শরীর খারাপের কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

রেজোয়ান চৌধুরী কে দেখে সিঁড়ির কাছে এগিয়ে এলো শেরহাম।সম্মান প্রদর্শন শেষে কিছুক্ষন মৌন থেকে পরিস্কার কন্ঠে বলে উঠলো
“আংকেল রাজ্যকে বিয়ের ব্যাপারে বাবা আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছে।আমাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রবলেম নেই।”

আকস্মিক বিয়ের কথা শুনে কিছুটা চিন্তিত হলেন রেজোয়ান চৌধুরী ।সেই সাথে অবাক নয়নে শেরহামের পানে তাকিয়ে রইলো রাজ্য।শেরহাম উত্তরের আশায় রেজোয়ান চৌধুরীর পানেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলো।

কিছুক্ষন থমকে শেরহামের পানে তাকিয়ে নিচু কন্ঠে রেজোয়ান চৌধুরী বলে উঠলো
“তোমার বাবার সাথে আমি কথা বলবো।তার আগে আমার মেয়ের সাথে আমার কিছু কথা আছে!

“এই মুহূর্তে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয় বাবা।আসছি”
কথাটি বলেই রাজ্য গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে দুতলায় নিজের রুমে চলে গেলো।
রাজ্যের মুখে নিজের রিজেক্ট হবার ব্যাপারটা শেরহামের ইগোতে খুব বড় একটা ধাক্কা দিলো।
অদ্ভুত কিলবিলিয়ে উঠা রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে কপালের শিরা ফুলে উঠলো শেরহামের।
হাত মুষ্টিবদ্ধ করতেই পেশী ফুলে পোশাকের অভ্যন্তরের ভয়ঙ্কর ক্ষতের ব্যান্ডেজ ফেটে গলগল করে বেরিয়ে এলো তরতাজা রক্ত।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here