ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড #পর্ব_১৫ #সারিকা_হোসাইন

0
154

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_১৫
#সারিকা_হোসাইন

ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট জুড়ে সকলের মধ্যে বিশাল অস্থিরতা পরিলক্ষিত।পোস্টমর্টেম করেও মোকাদ্দেস এর খুনি কে তা শনাক্ত করা যায়নি।এদিকে মোকাদ্দেস এর চোখ দুটো তুলে নেয়া হয়েছে সাথে কিডনি,হৃদপিন্ড, গুলো ও উধাও।শুধু তাই নয়।খুব সুনিপুণ ভাবে দাঁতের কপাট উপরে ফেলা হয়েছে।টেনে তুলা হয়েছে কাঁচা কাঁচা আঙ্গুলির নখ গুলিও। জিভটাও টেনে ধরে মুড়িয়ে কেটে দেয়া হয়েছে।এরকম রক্ত হিম করা খুন না কেউ দেখেছে না শুনেছে।
হাতে একটা পেপার ওয়েট নিয়ে বেনজির আশফী সেটিকে ঘুরাচ্ছেন আর একমনে চিন্তা করে যাচ্ছেন
“এরকম একজন মধ্য বয়সী লোকের সাথে কার এমন জঘন্য শত্রুতা?যেই শত্রুতায় এমন নিষ্ঠুর মৃত্যু?

********
যুবরাজের বিশাল বড় এপার্টমেন্ট এর থমথমে বেডরুমে সামিনার কোলে মাথা রেখে ফ্লোরে বসে আছে যুবরাজ।না সামিনা তার মাথায় ভালোবাসার হাত বুলাচ্ছেন না কোনো মমতার বাণী শুনাচ্ছেন।কীয়তখন এভাবেই কেটে যাবার পর সামিনা লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সকল নিস্তবতা ভেঙে শক্ত কন্ঠে শুধালেন―

“আজ পর্যন্ত তোর কোনো কিছুতেই আমি বাধা প্রদান করিনি।না তোকে কখনো কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করেছি না কোনো জবাব চেয়েছি।তবে আজ তোকে একটা প্রশ্ন করার জন্য মন বার বার আগ্রাসী হয়ে উঠছে।

“কি এমন প্রশ্ন মা যেটা করতে তোমাকে এতো বার ভাবতে হচ্ছে?

কিঞ্চিৎ মাথা তুলে অসহায় ভঙ্গিতে সামিনাকে প্রশ্নটা করে আবার সামিনার হাটু জড়িয়ে শুয়ে পড়লো যুবরাজ।

সামিনা কিছুক্ষন মৌন থেকে নিজের সরু হাতটা যুবরাজের মাথায় পরম মমতায় রাখলেন।এরপর ধীরে ধীরে ঘন চুলগুলোতে বিলি কাটতে কাটতে বলে উঠলেন
“হঠাৎ নিউ ইয়র্ক থেকে দেশে ফিরে এলি কেনো?আর এখানেও কোনো হসপিটালে জয়েন করলি না কি জন্য?আর মানুষ খুন??এই হাতে খড়ি কবে থেকে হলো তোর?

সামিনার এসব কৌতূহলী প্রশ্ন শুনে পুরোনো দিনের হৃদয় বিদারক স্মৃতি গুচ্ছ চোখের সামনে ভেসে উঠতেই যুবরাজের বাদামি চোখ দুটো থেকে খসে পড়লো মুক্ত দানার মতো চকচকে দু ফোটা নোনতা জল।সেই জল তৎক্ষণাৎ মুছে সামিনার দুই পা জড়িয়ে মুখ লুকালো যুবরাজ।

সামিনা বুঝতে পারলেন যুবরাজ কাঁদছে।যুবরাজের কান্নায় বুক ভেঙে এলো সামিনার।তবুও সামিনা কঠোর রইলেন।ছেলেটি তার দিনে দিনে অমানুষ হয়ে যাচ্ছে ,এই অমানুষ হবার পিছনের গল্প তাকে জানতেই হবে।হোক কষ্ট তবুও তিনি আজ গলবেন না।

“কবে থেকে আমাকে এভাবে মনের বাইরে দূর করে দিলি বাবা?আমি তো তোর মা ছিলাম না ! আমি ছিলাম তোর বন্ধু।তবে আজ কেনো সেই জায়গা থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়েছিস?

আহত স্বরে কথাগুলো বলে নিজের চোখের জল হাতের আঙ্গুলির সাহায্যে মুছে যুবরাজের দুই চিবুক ধরে মুখ উঁচু করে ধরলেন সামিনা।বাদামি গভীর চোখ দুটিতে আজ কোনো হিংস্রতা নেই।মায়াভরা নেত্রযুগল বিষাদে বিদীর্ণ।কান্না চেপে রাখার কারনে তা রক্তবর্ন ধারণ করেছে।ছলছল চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে উপচে পড়া জল গুলো এখনই বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়বে।

ছেলের এহেন বিধস্ত অবস্থা দেখে কলিজা মুষড়ে উঠলো সামিনার।
“তবে কি আমি যোগ্য মা হতে পারিনি?ছেলের মনের খবর ই রাখতে পারিনি আমি?এতোটা অযোগ্য ব্যার্থ মা কবে কবে হয়েছি?

অপরাধীর ন্যায় যুবরাজের দিকে দৃষ্টি পাতলেন সামিনা।ছেলের মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে অনুসন্ধান এর চেষ্টা চালালেন ।

“আমার জীবনের সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে মাম্মা,আমি কলঙ্কিত হয়ে গিয়েছি।আমার দুই হাত মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়ে থাকে সব সময়।আমার যে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সকল অবলম্বন ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মাম্মা!

কথা গুলো বলতে বলতে যুবরাজের গলা ধরে এলো।আরো অনেক কিছুই বলতে চাইলো সে কিন্তু কন্ঠ রোধ হয়ে ব্যাথায় বিষিয়ে উঠলো।ঠোঁট চেপে নিজের কান্না গিলে ফেলার বৃথা চেষ্টা চালালো যুবরাজ।যেই কান্নাটা দীর্ঘ সময় ধরে দমিয়ে রাখার কঠিন চেষ্টা চালাচ্ছিলো সেটা আর আটকে রাখতে পারলো না যুবরাজ।
সামিনাকে জাপ্টে ধরে অবুঝ ছোট শিশুর ন্যায় ফুঁপিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো।

“শেরহাম আমার জীবনের সবচেয়ে বিশ্রী কালো অধ্যায় মাম্মা।ও আমার সব শেষ করে দিয়েছে।”

শেরহামের নাম শুনে কেঁপে উঠলেন সামিনা।
“তবে কি সে ই জয়ী হলো?তার উদ্দেশ্যই ছিলো কেবল যুবরাজকে শেষ করে দেয়া?

যুবরাজের কান্নার সাথে পাল্লা দিয়ে ভারী হলো প্রকৃতি।কিছুক্ষন আগের গুমোট শান্ত পরিবেশ মুহূর্তেই ঘন বরষায় রূপ নিলো।
নীরবে টুপটুপ করে অশ্রু বিসর্জন দিলেন সামিনা।

যুবরাজের পিঠে মাথায় সমানে হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন সামিনা।আজ এই যুবরাজকে তার মোটেও ঊনত্রিশ বছরের কোনো যুবক বলে মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে পাঁচ বছর বয়সের সেই ছোট্ট যুবরাজ যে তার মাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে ফুলিয়ে কান্না করছে।

“মাম্মাকে সব খুলে বল বাবা।মাম্মা প্রমিস করছি সব মুশকিল আসান করে দেবো”

এবার যেনো একটু ভরসা পেলো যুবরাজ।সামিনার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে পুরোনো স্মৃতি চারণে ফিরে গেলো।

শেরহাম ছিলো যুবরাজের বড় মামার ছেলে।গুনে গুনে দুই বছরের ছোট বড় শেরহাম আর যুবরাজ।শেরহামের জন্ম বেড়ে ওঠা দুই ই নিউ ইয়র্ক এর ব্রুকলিন শহরে।যুবরাজের মা মারা যাবার পর সাদাফ শাহীর প্রথমেই নবনীতার বড় ভাইকে অনেক অনুনয় করে ছিলেন যাতে শেরহামের সাথে যুবরাজের দেখ ভালের দায়িত্ব যুবরাজের মামী মানে শেরহামের মা শর্মিলা নেয়।
কিন্তু শর্মিলা এক বাক্যে নিষেধ করে বলে দিয়েছেন

“নিজের ছেলের সাথে আরেকজনের ছেলের আদরের ভাগ আমি করতে যাবো কোন দুঃখে?অন্য আরেক জনের ছেলেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করবার ওতো শখ নেই আমার বাপু।

সেদিন যুবরাজের মামা সুবহান শেখ ছিলেন অসহায়।এক মাত্র আদরের ছোট ভাগ্নের জন্য সেদিন তিনি কিছুই করতে পারেন নি।
খুব ছোট মুখেই তিনি সাদাফ শাহিরকে নিজের অপারগতা জানিয়েছিলেন।

এরপর সাদাফ শাহীর সামিনার দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভিখারির ন্যায়।
যুবরাজ যখন সামিনার কাছে লস এঞ্জেলস এ বড় হতে লাগলো তখন প্রায়ই সুবহান শেখ যুবরাজের খুজ খবর নিতে আসতেন এখানে।
যুবরাজের বয়স যখন ছয় শেরহাম তখন আট বছর বয়সের বালক।
হঠাৎ একদিন সুবহান শেখের সাথে সামিনার বাসায় বেড়াতে আসে শেরহাম।
শেরহাম কে দেখেই সামিনার কেমন যেনো অদ্ভুত এক অনুভূতি ঠেকে।একজন আট বছরের বাচ্চার প্রতি নিজের এমন অদ্ভুত মনোভাবের কারনে নিজেকে নিজেই ধিক্কার দিয়েছিলেন সামিনা।
সামিনার বাসাটি ছিলো শহর থেকে একটু দূরে।চারপাশে বড় বড় পাইন আর বার্চ গাছে বেষ্টিত ছিলো সামিনার বাংলো তুল্য বাড়িটি।বাড়িটির অদূরে একটা ছোট ঝিরির মতো ছিলো।শীতকালে সেই ঝিরির পানি গুলো জমে উপরে একটা শক্ত বরফের স্তর পরে যেতো।আশেপাশের এলাকার সকল মানুষ শখের বসে সেই বরফের স্তর গুলোকে কেটে ছোট ছোট কূপের ন্যায় বানিয়ে বড়শি ফেলে মাছ ধরতো।

খেলার ছলে শেরহাম যুবরাজকে কখন ওই কূপের কাছে নিয়ে যায় সামিনা সেটা টেরই পান নি।কাজকর্ম শেষ হতেই যুবরাজের চিন্তা এসে হানা দেয় সামিনার মস্তিষ্কে।সুবহান শেখ কে আদনান সাহিল এর সাথে বসিয়ে কাউকে কিছু না বুঝতে দিয়ে নিজে নিজেই সারা বাড়ি,গার্ডেন ,সুইমিংপুল সব জায়গায় খুঁজে বেড়ান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে খুঁজেও সামিনা যুবরাজের দেখা পাচ্ছিলো না যখন তখন সামিনা কান্না কাটি শুরু করে দেয়।

সামিনার কান্নায় দৌড়ে আসেন সুবহান শেখ আর আদনান।
দুজনেই উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে
“কি ব্যাপার সামিনা এভাবে কাঁদছো কেনো?কি হয়েছে?

“আমার যুবরাজকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।আমাকে না বলে ও তো কোথায় এভাবে যায় না!

সুবহান শেখ নিজের ছেলেকে না দেখে নিশ্চিতরূপে বলে উঠেন
“হয়তো শেরহামের সাথে খেলছে।ভয় পেয়ো না সামিনা।কিচ্ছু হবে না।

এরই মাঝে দেখা যায় শেরহাম দৌড়ে জঙ্গলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে।
সামিনা উদ্ভ্রান্তের ন্যায় দৌড়ে শেরহামের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
‘”কি ব্যাপার শেরহাম তুমি এখানে যুবরাজ কোথায়?

সামিনার এমন প্রশ্নে চতুর শেরহাম ভড়কে না গিয়ে অবুঝ বাচ্চার মতো তাকিয়ে রয় সামিনার পানে।
“আমি কি করে জানবো যুবরাজ কোথায়?যুবরাজ তো আমার সাথে যায়নি।আমি একাই চারপাশটা ঘুরে দেখছিলাম।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এখানে ভুত আছে।আমার মোটেও ভালো লাগছে না তোমার ভুতের বাড়িটিতে।আমি এক্ষুনি বাড়ি চলে যাবো।

সামিনাকে পাশ কাটিয়ে সুবহান শেখের কাছে এসে বাড়ি ফিরে যাবার জন্য জেদ শুরু করে শেরহাম।
নিজের বোনের শেষ চিহ্ন রাজপুত্রের ন্যায় ভাগ্নের চিন্তায় গলা শুকিয়ে আসে সুবহান শেখের।কিন্তু নিজের ছেলের জেদের কাছে হার মেনে সামিনা কে ওই অবস্থায় ফেলে ব্রুকলিন এ ফিরে আসেন সুবহান শেখ।
যাবার আগে শেরহামের সেই ক্রুর হাসি আজো ভুলেননি সামিনা।ওই টুকুন একটা বাচ্চার মুখে এমন ভয়ঙ্কর হাসি কখনো দেখেনি সামিনা।
শেরহামের সেই বিদঘুটে হাসি মনে পড়লে আজো ভয়ে শিউরে উঠেন তিনি।

শেরহামের সেই হাসিকে উপেক্ষা করে আদনান সাহিল আর সামিনা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে যুবরাজকে।
সারা জঙ্গল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যখন যুবরাজের দেখা না পায় সামিনা তখন সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
একদিকে যুবরাজের চিন্তা অন্য দিকে সামিনার হাল ছেড়ে দেওয়া সব কিছুই আদনান সাহিল কে চরম অসহায় অবস্থায় এনে দাঁড় করায়।অসহায় আদনান কিভাবে কি সামাল দিবেন কিছুই যেনো সুরাহা করতে পারছিলো না।

ধীরে ধীরে চারপাশে যখন আধার ঘনিয়ে আসছিলো তখনই জঙ্গলের ভেতর ঝিরির পাশ থেকে মানুষের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসে।
জ্ঞান হীন সামিনা কে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে রেখে দৌড়ে সেই শব্দ অনুসরণ করে ছুটে চলেন আদনান সাহিল।
ঝিরির পাশে আসতেই দুই পা ভেঙে অসাড় হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আদনান।
কয়েকজন জেলে যুবরাজকে বাঁচানোর প্রানপন চেষ্টা করে যাচ্ছে।ঠান্ডায় যুবরাজের ধবধবে ফর্সা শরীর নীলচে বর্ণ ধারণ করেছে।লাল টকটকে ঠোঁট দুটো কুচকুচে কালো হয়ে নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে যুবরাজ।চোখের লম্বা ঘন পাপড়ি গুলোতে বরফ জমে সাদা হয়ে আছে ।নিজের সমস্ত শক্তি খাটিয়ে মাটি খামচে ধরে উঠে দাঁড়ান আদনান সাহিল।এরপর সেখানে জেলেদের সাহায্য নিয়ে দ্রুত গাড়িতে করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান যুবরাজকে।

সামিনা আর আদনান আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন যুবরাজের বেঁচে ফেরার।
“ওগো বিধাতা মনে হয় সারা জীবন আমাকে সন্তান হীন করে রাখবেন।এজন্য হয়তো দিয়েও আবার নিয়ে যাচ্ছে।আমি কি এতোটাই পাপী হয়ে গেলাম?ওরে আল্লাহ তুমি এতোটা নিষ্ঠুর কেনো হলে আমার প্রতি?একটা সন্তানের জন্য দিন রাত তোমার কাছে মাথা ঠুকে কেঁদেছি এটাই আমার পাপ?

সামিনার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠলো সহসাই।হয়তো সৃষ্টিকর্তা সেদিন সামিনার কান্না সহ্য করতে পারেন নি।তাইতো অভিজ্ঞ এক প্রবীণ ডক্টর এর হাতের জাদুতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন যুবরাজের মিইয়ে যাওয়া প্রাণ।

জ্ঞান ফিরেই ভরে থরথর করে কেঁপে উঠে যুবরাজ।নার্স মারফত সামিনার কাছে খবর পাঠালে উন্মাদের ন্যায় কেবিনে প্রবেশ করেন আদনান এবং সামিনা।
বাবা মা কে কাছে পেয়ে ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো তড়পাতে তড়পাতে সামিনার পেট খামচে ধরে মুখ লুকিয়ে গুঙিয়ে উঠে যুবরাজ
“ভাইয়া আমাকে মেরে ফেলেছে মাম্মা,আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here