#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_২৩
#সারিকা_হোসাইন
——
রায়াফের দিকে বিস্ময়ের ভাবে অশ্রু সিক্ত নয়নে পলক হীন তাকিয়ে আছে রাজ্য।এই অপরিচিত ব্যাক্তির কন্ঠস্বর হুবুহু তার দাদা ভাই এর মতো।শুধু তাই নয় শরীরের গড়ন থেকে শুরু করে উচ্চতা পর্যন্ত কাট কাট।তাহলে চেহারা টা কেনো আলাদা?
নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না রাজ্য।আহত কন্ঠে রায়াফের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“আমি কি আপনাকে একবার দাদা ভাই বলে ডাকতে পারি?
এই প্রশ্নের জবাব কি দেবে রায়াফ মাথা নিচু করে ভাবতে লাগলো।তার দুই চোখ জলে ছলছল।জোর করে অশ্রু কণা দের আটকে রাখার কারনে চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে উঠেছে।।
রায়াফের উত্তরের আশা না করেই রাজ্য সিক্ত কন্ঠে ডেকে উঠলো
“দাদা ভাই”!
রাজ্যের করুন স্বরের দাদা ভাই কথাটা রায়াফকে পুরোটাই নাড়িয়ে দিলো ভেতর থেকে।বুক ভেঙে জলোচ্ছাস এর মতো ফুলে ফেঁপে উঠলো অশ্রু ফোয়ারা।সেটাকে কঠিন ভাবে নিপীড়ন রোধ করে শক্ত চোখে রাজ্যের পানে দৃষ্টি দিলো রায়াফ।
নিজের চোখের গড়িয়ে পড়া জল দুই হাতের উল্টো পিঠে দ্রুত মুছে নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো রাজ্য।
“আম সরি,আসলে আপনাকে দেখে আমি বেশি আবেগী হয়ে পড়েছি।কিছু মনে করবেন না প্লিজ”
রায়াফ কোনো প্রতিত্তর না করে আহত দৃষ্টিতে শুধু রাজ্যের ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে রাজ্যের অবলীলায় বলা কথা গুলো শুনে যাচ্ছে।এই মেয়েটিকে এমন বিধস্ত অবস্থায় দেখতে তার মোটেও ভালো লাগছে।সব কিছু সহ্যের বাইরে লাগছে।দম বন্ধকর পরিস্থিতিতে রায়াফ হাঁসফাঁস করতে লাগলো।
“হসপিটালের ভেতরে কি হচ্ছে একবার জানা দরকার।হঠাৎই হসপিটালে আসার মতো কি এমন ঘটলো?
রায়াফকে নির্বাক দেখে রাজ্য কান্নাভেজা কন্ঠে বলে উঠলো
আমার একটা দাদা ভাই ছিলো।হুবুহু আপনার মতো শুধু চেহারা টা ভিন্ন।বাবা শখ করে বিদেশ পড়তে পাঠিয়েছিলো কারন দাদা ভাই ডক্টর হতে চেয়েছিলো।দাদা ভাই বিদেশ গিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু আমাদের কাছে আর ফিরে আসেনি।শুনেছি কেউ তাকে মে*রে ফেলেছে।কিন্তু আমরা কেউই সেই লাশটা পর্যন্ত দেখিনি।দাদা ভাইয়ের হঠাৎ মৃত্যুর খবরে মা স্ট্রোক করে বসেন।এরপর থেকে নানান শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।উনার হার্টে সমস্যা হয়েছে।ডক্টর বলেছে যেকোনো সময় হার্ট এট্যাক হয়ে উনি মারা যেতে পারেন।
কথা গুলো বলতে বলতে রাজ্যের গলা ধরে এলো।বোবা কান্না গুলো দলা পাকিয়ে কন্ঠ রোধ করার পরিস্থিতি হলো।একমাত্র ভাইকে হারিয়ে ফেলার চিনচিনে ব্যাথায় বুক ভার হয়ে উঠলো,এখন যদি এই মা টাও হারিয়ে যায় তাহলে কি আকড়ে ধরে বেঁচে থাকবে তারা বাপ মেয়ে মিলে?
নিজের ভেতরের ঠেলে আসা কান্নাকে রোধ করতে কিছুক্ষন সময় নিয়ে রাজ্য মাটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।এরপর খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি পিটপিট করে বুক ভরে শ্বাস নিলো।
“আজকে দাদা ভাইয়ের জন্মদিন, মা পায়েস রান্না করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছেন।মা আজো বিশ্বাস করেন তার ছেলে একদিন ঠিক ফিরে আসবে ।বিগত পাঁচটি বছর ধরে দাদা ভাইয়ের জন্মদিন আসলেই মা এভাবে দাদা ভাইয়ের পছন্দের খাবার রান্না করেন আর সেই খাবার সামনে মেলে ধরে কেঁদে বুক ভাসান।
রায়াফ রাজ্যের কথা গুলো শুনে একটা পাথরের স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে রইলো।অবশেষে রাজ্যকে ওখানে ফেলেই দৌড়ে ইমারজেন্সি কার্ডিও কেয়ারে চলে গেলো।রায়াফের এমন অদ্ভুত আচরণের কোনো কারন খুঁজে পেলো না রাজ্য।
যুবরাজ দূর থেকে পুরো ঘটনা অবলোকন করে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আশেপাশে নজর বুলাতেই দেখতে পেলো হসপিটালের গেট দিয়ে একটি কালো রঙের মার্সিডিজ গাড়ি ঢুকছে।গাড়িটি কার এটা বুঝতে বেশি বেগ পোহাতে হলো না তাকে।নিজের এলোমেলো হওয়া চুল গুলোকে একটা ইলাস্টিকের সহিত খোঁপা স্টাইলে বেঁধে মুখে ক্রুর হাসি ঝুলিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পদে শেরহামের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে।
আকস্মিক যুবরাজকে এই হাসপাতালে দেখে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো শেরহামের।দুই হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো
“ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে নিজ ইচ্ছেয় আত্মাহুতি দিতে চাইছিস নাকি?
প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে ভাবলেশ হীন ভঙ্গিতে যুবরাজ শ্লেষত্বক হাসলো।এরপর শেরহামের বুকের উপরে শার্টের খোলা বাটন টা লাগিয়ে দিয়ে বুকে চাপড় দিলো।
“কে বলেছে তুই বাঘ?তুই তো বাঘ নস তুই হচ্ছিস পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতু অবলা প্রাণী।না হলে আমার পিছনে স্পাই লাগিয়ে ছবি তুলে সেই ছবি আমার বাবাকে পাঠিয়ে বাপ দিয়ে শাসন করতে চাস আমাকে?আমাকে কি তোর স্কুলে পড়া ছোট বাচ্চা মনে হয়?
যুবরাজের এমন তিরস্কার মুলক কথায় শেরহামের মাথার মগজে দপদপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।নিজেকে তার সদ্য খাঁচা থেকে মুক্তি প্রাপ্ত অভুক্ত সিংহ মনে হচ্ছে।তবুও যথা সম্ভব মেজাজ ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করলো।
“দেখ যুবরাজ এই মুহূর্তে তোর সাথে আমার কথা বলার একদম মুড নেই।আমি মিসেস তনুজা কে দেখতে এসেছি।শুনেছি তাকে এই হসপিটালে আনা হয়েছে।
শেরহামের মুখে এমন ভালো মানুষি কথায় হো হো করে হেসে উঠলো যুবরাজ।যুবরাজের হাসি দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সেরা জোকারের মুখে জোকস শুনছে সে।
“খুব হাসালি রে শেরু পিচাষ।তোর কথা গুলো ভুতের মুখে রাম নামের মতো ঠেকছে জানিস?একদম তোর ফর্মের সাথে যাচ্ছে না।
যুবরাজকে আর একমুহূর্ত ও সহ্য করতে পারছে না শেরহাম।মনে মনে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো শেরহাম।
“আজ রাতেই তোকে আমি আমার শেষ রূপটা দেখাবো বাস্টার্ড”
শেরহামের মুখভঙ্গি দেখে ঠোঁট টিপে ঘোর লাগা চোখে হেসে উঠলো যুবরাজ।
“মিসেস তনুজাকে বলে দেবো নাকি তুই যে তার ছেলেকে বিভৎস ভাবে খু*ন করেছিলিস?
এবার যেন শেরহামের ক্রোধ মাত্রা ছাড়লো।চারপাশের পরিবেশ খেয়াল না করেই নাক ফুলিয়ে চোখ লাল করে শক্ত মুষ্টিতে যুবরাজের দিকে এক ঘুষি বসিয়ে দিতে উদ্দত হলো।
যুবরাজের উদ্দেশ্য যেনো সফল হলো।শেরহাম কে চূড়ান্ত রাগাতে এক পাশে সরে গিয়ে শীষ বাজাতে বাজাতে নিজের গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শেরহাম কে চোখ টিপে স্কেলেটর চেপে সাই সাই করে ছুটে চললো।
“তোর চোখ আমি উপড়ে ফেলবো যুবরাজ”
কথাটি বলে শেরহাম গাড়ি স্টার্ট দিয়ে যুবরাজের পিছন পিছন ছুটে চললো।
সকল গাড়ি ছাড়িয়ে দুটো ব্র্যান্ডেড গাড়ি সাই সাই করে ছুটে চলেছে রাস্তার পর রাস্তা।না মানছে কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল না মানছে জ্যাম।
সব কিছু পাড়ি দিয়ে শহর থেকে বেশ খানিক দূরের জঙ্গল ঘেরা পরিত্যক্ত একটা বল্ডিংয়ের সামনে এসে থামলো যুবরাজ।রাতের বেলা তো দূর দিনের বেলাতেও কেউ এখানে পা মাড়াতে আসে না।
তৃপ্তির হাসি মুখে ফুটিয়ে যুবরাজ সেই ঘরের ভারী কাঠের পাল্লার আধ ভাঙা দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
দিনের বেলাতেও ঘরের ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার।আলো থেকে হুট করে ঘরটাতে প্রবেশ করলে নিজের শরীর টা পর্যন্ত দেখা যায় না।ঘরে প্রবেশ করেই গুনে গুনে দশ কদম এগিয়ে পকেটে থাকা লাইটার বের করে আগুন জ্বালিয়ে সামান্য অন্ধকার দূর করলো।এরপর স্যাৎস্যাতে দেয়ালে আটকে রাখা মশাল দানি থেকে মশাল তুলে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে কবরের ন্যায় কক্ষটাকে আলোকিত করলো পুরো দমে।ধীরে ধীরে সব গুলো মশাল জালিহয়ে সিংহাসন এর মত দেখতে পুরোনো একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে একটা সিগারেট জ্বালালো যুবরাজ।সেটাতে একটা সুখ টান স
দিয়ে আয়েশে চোখ বুঝে চেয়ারে হেলান দিলো।কক্ষ আলোকিত হতেই যুবরাজের শরীরের গন্ধে নিজের শিকল সমেত ঝনঝন শব্দ তুলে হিংস্র দাঁত বের করে দৌড়ে এলো সাদা কালো মিশেলের সাইবেরিয়ান হাসকি কুকুর।এসেই যুবরাজের পায়ের কাছে প্রভু ভক্ত কুকুরের ন্যায় লকলকে জিভ বের করে সবুজ হিংস্র চোখে তাকিয়ে রইলো।কারন শিকার ছাড়া এই অন্ধকার কুঠুরিতে যুবরাজ কখনো আসেনি।আর মানুষের মাংস এই প্রাণীটির অত্যাধিক পছন্দের।
মিনিট পাঁচেক পরে গাড়ির শব্দে সব গুলো দাঁত বের করে প্রশস্ত হাসলো যুবরাজ সাথে নেকড়ের ভয়ংকর আওয়াজে উ উ শব্দে ডেকে উঠলো কুকুরটি ।আয়েশী ভঙ্গিতে বার বার সিগারেট ফুকে সেগুলোর ধোয়া ঘরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে উটকো গন্ধে পুরো কক্ষ আলোড়িত করে ফেললো যুবরাজ।কীয়তখন বাদেই অকেজো আধ ভাঙা দরজার ঘরঘর শব্দ পাওয়া গেলো।তবুও যুবরাজের কোনো নড়াচড়া পরিলক্ষিত হলো না।কুকুরটি বারবার দাঁত খিঁচিয়ে গড়গড় শব্দ করছে শুধু।তার যেনো আর তর সইছে না।গত তিনদিনের অভুক্ত কিনা!
কক্ষে কারো উপস্থিতি টের পেতেই যুবরাজ বিশ্রী শব্দে হাসলো সেই সাথে চার পায়ে উঠে দাঁড়ালো সাইবেরিয়ান হাসকি।সেই হাসির শব্দ বিকট ভাবে প্রতিটা দেয়ালে বাড়ি খেয়ে আরো ভয়ংকর সুর তুললো।হাসি শেষ হতেই বাদামি মনি যুক্ত চোখে দৃষ্টি মেলে এক পা চেয়ারের গদিতে তুলে আরেক পা লম্বা ভাবে মেলে দিয়ে হাঁটুতে হাতের ভর দিয়ে গালে হাত রাখল যুবরাজ।কুকুর আর যুবরাজ দুজন দুজনের দিকে ক্রুর দৃষ্টি মেললো।
“ওয়েলকাম,ওয়েলকাম ডিয়ার ব্রাদার শেরহাম।ওয়েলকাম টু মাই হেল এন্ড অলসো #ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড।
#চলবে
[পর্বটা ছোট করে দেবার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত।প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় চোখ মেলে কিছুই লিখতে পারছি না।সুস্থ হলে বড় পর্ব দেবো।আর প্লিজ সবাই একটু লাইক কমেন্টস আর ফলো করবেন যদি নিয়মিত গল্পটি পড়তে চান কারন রিচ ডাউন হয়ে গেছে।তাই অনেকের ওয়ালেই গল্পটা শো করছে না।]