#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৭
#সারিকা_হোসাইন
★★★★★★
পুরো সোয়াট অফিস জুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজমান।সিলিং ফ্যানের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ,আর কম্পিউটার কীবোর্ড টাইপের খটখট শব্দ ছাড়া সকল কিছু নিস্তব্ধ।রাজ্য আজ দেরি করে অফিসে এসেছে।গত রাতে দেরিতে ডিউটি থেকে ফেরার কারনে সকালে সে আর ঘুম থেকে উঠতে পারেনি।
কমান্ডারের ভয়ে দুরু দুরু বক্ষে অফিস রুমের দরজার সামনে আসতেই সব কিছু এতো নীরব দেখে তার ভয়ের মাত্রা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।ঠান্ডা মেঘ মেদুর আবহাওয়া তেও মাথা বেয়ে ঘাম ঝরে পড়লো।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো।
আশেপাশে নজর বুলিয়ে বেনজির আশফী কে কোথায় দেখতে পেলো না রাজ্য।
দুই হাতে চিবুকের ঘাম মুছে চোরের মতো নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে দ্রুত কম্পিউটার ওপেন করলো।
মিনিট দশেক কাজ করার পরেও যখন কমান্ডারের গলার উঁচু আওয়াজ পেলো না তখন তার মনে খটকা লাগলো।
“যেই লোক অফিসার দের ঘাড়ের উপর বসে বসে কাজ নিয়ে চিল্লাচিল্লি করে সে আজ একদম নীরব!এমনকি তার ছায়া পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না কাহিনী কি?
কাজ ফেলে আশেপাশে উকি দিয়ে নিজের সহকারী এনিকে খুজলো রাজ্য।
“হারামজাদী কোথায় গিয়েছে আজকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না তাকে!
মুহূর্তেই এই অফিসকে রাজ্যের কাছে ভুতুড়ে ঠেকছে।ঘটনা কি ঘটেছে তা জানার জন্য কৌতূহলে দম আটকে আসছে তার।
হঠাৎই পিওন ছেলেটা সকলের জন্য কফি নিয়ে এসে হাক ছেড়ে উঠলো।
এবারও বেনজির আশফী কে না দেখে রাজ্য অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।কাজ ফেলে পিওন ছেলেটাকে হাতের ইশারায় ডেকে উঠলো রাজ্য।
ছেলেটি আশেপাশে তাকিয়ে রাজ্যের কাছে যেতেই সে ফিসফিস করে বলে উঠলো
“কি ব্যাপার সাদিক তোমার চিপ কে কোথায় দেখছি না উনি কি অসুস্থ?
পিওন সাদিক আশেপাশে তাকিয়ে ফাঁকা ঢোক গিয়ে ভয়ার্ত চোখে বলে উঠলো
“ম্যাডাম চিপ কমান্ডারকে নাকি ঘুমের ভেতর ভুত এসে হাত ভেঙে দিয়েছে।
সাদিকের কথা শুনে রাজ্য কপাল কুঁচকে মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে উঠলো
“দেখো সাদিক এই মুহূর্তে তোমার সাথে ইয়ার্কি করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।তাই হেয়ালিপনা না করে সাফ সাফ উত্তর দাও।
সাদিক অসহায় বদনে আবার ঢোক চেপে মৃদু ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি মোটেও ইয়ার্কি করছি না ম্যাডাম।ঘটনা সত্যি।শুধু হাত ভেঙেই ক্ষান্ত হয়নি,আঙ্গুল গুলোও মট মট করে ভেঙে দিয়েছে।আর…..
রাজ্য উদ্বিগ্ন হয়ে নিজের আঙ্গুল কামড়ে ধরে বলে উঠলো
“আর কি সাদিক?
“চিপের নাক ঘুষি মেরে লাল করে দিয়েছে।”এই ঘটনা পুরো ডিপার্টমেন্ট জানে।এনি ম্যাডাম সকাল বেলায়ই হসপিটালে চলে গিয়েছে।আপনি দেরিতে এসেছেন তাই কিছুই জানেন না।
সাদিকের কাছে এমন আজগুবি ঘটনা শুনে নিজের ইউনিফর্ম না পাল্টেই অফিস থেকে বেরিয়ে এলো রাজ্য।
পার্কিং লটে এসে নিজের বাইক দ্রুত বের করে সাদিকের বলা হসপিটাল এর ঠিকানা অনুযায়ী ছুটে চললো।
রাজ্য যখন হসপিটালে এসে পৌঁছায় তখন সকাল নয়টা বেজে পনেরো মিনিট।দৌড়ে রিশিপশনে এসে নিজেকে স্বাভাবিক করে রিশিপশনিস্ট কে আন্তরিক ভাবে অনুরোধের সুরে বলে উঠে
“ক্যান ইউ টেল মি ইন হুইচ ফ্লোর বেনজির আশফী ইজ এডমিটেড?
ব্যাস্ত রিশিপশনিস্ট মেয়েটি কম্পিউটার এর দিকে দৃষ্টি রেখে নরম কন্ঠে বলে উঠলো
“ইয়েস ম্যাডাম।
“ইউ উইল ফাইন্ড হিম ইন কেবিন নম্বর 302 অন দ্যা থার্ড ফ্লোর।
রাজ্য মেয়েটিকে থ্যাঙ্কস জানিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলো লিফট লোড হয়ে গিয়েছে।
লিফট ছেড়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়েই সে তিন তলায় চলে গেলো।
সিঁড়ির পাশেই 302 নম্বর কেবিন।
অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা আর দৌড়ের কারনে অনেকটাই হাঁপিয়ে গিয়েছে সে।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন দম নিয়ে দরজায় হালকা নক করে ভেতরে ঢুকে গেলো।ভেতরে এনি এবং বেনজির আশফির স্ত্রী রুমানা আশফী কে দেখা গেলো।
এনি নার্সের সাথে কি নিয়ে যেনো কথা বলছে ।এদিকে বেনজির আশফী হাতে স্লিং সমেত বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছেন।তার চোখ দুটো লাল টকটকে গোল গোল হয়ে আছে।তাতে প্রত্যক্ষ ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।নাকটা নীলচে জখমে বীভৎস রূপ ধারণ করেছে।
রাজ্য ভেতরে ঢুকে স্যালুট দিয়ে কাঁপা কন্ঠে বেনজির আসফিকে জিজ্ঞেস করে উঠলো
“আপনার এই অবস্থা কিভাবে হলো স্যার?কে করেছে এই কাজ?আপনি শুধু হিন্টস দিন।সন্ধ্যার আগেই তাকে ধরে আনবো।
রাজ্যের কথায় নড়েচড়ে উঠলেন বেনজির আশফী।এদিক ওদিক তাকিয়ে মিন মিন করে বলে উঠলো
“ধরার হলে কি তাকে তোমার জন্য বসিয়ে রাখতাম?সে তোমার, আমার ,আমাদের সকলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।।
রাজ্য রুমানা আশফির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো একচুয়াল ঘটনা কি ঘটেছে।
রুমানা হালকা মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে কিছুই জানেনা।
নার্সের সাথে কথা শেষ করে এনি বলে উঠলো
“এই যুগে ভুত প্রেত জিনের বাদশা এসব কিছুই হয়না স্যার।আমরা আপনার বাসার সিসি টিভি ফুটেজ চেক করবো।তখনই আসল কালপ্রীট বেরিয়ে আসবে।
এনির কথা কর্ণপাত হতেই রেগে গেলেন বেনজির।
সামান্য গলার আওয়াজ চড়িয়ে বলে উঠলেন
“তোমাদের কি মনে হয় আমি ইয়ার্কি করছি তোমাদের সাথে?জলজ্যান্ত একটা লোক আমার ঘরে এসে আমাকে মেরে যাবে আমি কিচ্ছুটি টের পাবোনা?শুনো মেয়েরা ,একটা মাছি আমার শরীরে বসার আগেই আমি টের পেয়ে যাই মাছি টি আমার শরীরের কোথায় বসতে যাচ্ছে।আর আমার হাত ভেঙেছে,আঙ্গুল ভেঙেছে, নাকে আঘাত করেছে আমি কিচ্ছুটি টের পাইনি।শুধু তাই নয় তোমাদের ম্যাডাম আমার সাথে শুয়ে ছিলো সেও কিচ্ছু টের পায়নি।
রাজ্য ভ্রু কুঁচকে অবাকের স্বরে বলে উঠলো
“আপনি কি তার চেহারা দেখেছেন স্যার?
রাজ্যের উপর মেজাজের তিরিক্ষী পারদ চটিয়ে বেনজির বলে উঠলেন
“তোমাকে আমি কেনো দেখতে পারিনা জানো?তুমি বেশি প্রশ্ন করো এজন্য।তবুও যেহেতু প্রশ্ন করছো উত্তর দিচ্ছি।
বলেই বেনজির তার স্ত্রীকে হাতের ইশারা দিলেন তাকে আধশোয়া করতে।
রুমানা বেডের হুইল ঘুরিয়ে মাথার দিকটা সামান্য উঁচু করতেই ধীরে হেলান দিলেন বেনজির।এরপর লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন
“আমি তাকে দেখেছি।সে আমাদের সকলের চাইতে অনেক লম্বা।পুরা সিলিং ছুঁয়ে ছিলো।সাদা পাঞ্জাবি পড়ে ছিলো।ইয়া লম্বা দাড়ি।আর কি ভয়ানক কন্ঠ।
বলেই ভয়ে শিউরে উঠলেন বেনজির।
রুমানা তার গায়ে হাত বুলিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেন।
এনি গ্লাসে সামান্য পানি এগিয়ে দিলো
“একটু পানি খেয়ে নিন স্যার ভালো লাগবে।
বেনজির আশফী ঢকঢক করে পানি খেয়ে আবার বলে উঠলো
“সে আমার দিকে একটা সুগন্ধি যুক্ত রুমাল এগিয়ে দিতেই আমি তার রাজ্যে চলে গেলাম।সে আমাকে অনেক হুংকার দিয়ে ধামকি দিয়েছে।সেগুলো আবার কাউকে বলতেও নিষেধ করেছে।তবুও তোমাদের প্রশ্নের কারনে আমাকে মুখ খুলতে হলো।
আর একটাও প্রশ্ন করলে আমি তোমাদের দুজনকেই ক্রস ফায়ার করবো।তোমাদের কাউকেই এখন আর আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না।
এখন তোমরা ডিউটিতে যাও।আমি ঘুমাবো।আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
এনি আর রাজ্য রুমানার দিকে অসহায় নজরে তাকাতেই রুমানা নিরুপায় হয়ে বসে রইলো।
আর কোনো বাক্য বিনিময় না করে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো রাজ্য আর এনি।
বাইরে বের হতেই হো হো করে হেসে উঠলো এনি।
“আর যাই বলিস যেই করেছে এই কাজ বেশ করেছে।খুব বেড়ে ছিলো।একদম উচিত শিক্ষা হয়েছে।
এনির হাসি দেখে অবাক হয়ে এনির পানে তাকিয়ে রইলো রাজ্য।
এনিকে কোনো মতে থামিয়ে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
“আস্তে হাস,চারপাশে অনেক রোগী আছে।আর কারো বিপদে কেউ এভাবে হাসে?উনার চেহারা দেখেছিস?ভয়ে কেমন সিটিয়ে রয়েছে!
রাজ্যের কথাকে পাত্তা না দিয়ে এনি বলে উঠলো
“আরে বাদ দে তো।চল আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবো।লাস্ট কবে দিনের বেলায় ঘুমিয়েছি সেটাই মনে নেই।আজ বাসায় গিয়ে লম্বা এক ঘুম দেবো।”আহ কতো দিন পর আরাম পেতে যাচ্ছি।
_______
“আমার মনে হচ্ছে তুই নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছিস যুবরাজ।যতো যাই হোক একজন সোয়াট কমান্ডার কে তোর এভাবে মারা ঠিক হয়নি”
কথা গুলো বলে রায়াফ ল্যাপটপে নিজের কাজে ডুব দিলো।
সিগারেট সুখ টান দিয়ে যুবরাজ শূন্যে ধোয়া উড়িয়ে স্মিত হাসলো।
“মেয়েটির জন্য আমি হাজার বার বিপদে পড়তে রাজি আছি।তবুও সে খুশি থাকুক এটাই আমার চাওয়া থাকবে সমসময়।
“একবার তোর পরিচয় যদি ঐ কমান্ডার জানতে পারে তোকে কোথায় লটকিয়ে পেটাবে সেটা জানিস?
রায়াফের এমন বলদের মতো কথায় হা হা করে হেসে উঠলো যুবরাজ।দ্রুত সিগারেট শেষ করে এস ট্রে তে জলন্ত ফিল্টার ফেলে ফুঁস করে দম ছাড়লো।
“এই যুবরাজ কোনোদিন ও কাঁচা কাজ করেনি ব্রো।বেনজির আশফী কেনো পুরো টিম একশো বছর তপস্যা করেও আমার টিকির ও নাগাল পাবে না।
“তুই ঠিক কি করেছিস উনার সাথে বলতো?
কুনুই দিয়ে হাঁটুতে ভর রেখে দুই হাতের আজলায় নিজের মুখ ভরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে যুবরাজের দিকে তাকিয়ে রইলো রায়াফ।
“যেই কাজটা আমি খুব ভালো জানি সেটা “বলেই আবার হো হো করে শব্দ করে হেসে উঠলো যুবরাজ।
“তুই হিপ্নোটাইস করেছিস বেনজির কে?
যুবরাজ মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে বলে উঠলো
“শুধু হিপ্নোটাইস না ক্লোরোফার্ম দিয়ে অজ্ঞান করে মট মট করে আঙ্গুল,হাত ভেঙে জোরসে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছি।কিচ্ছুটি টের পায়নি বেচারা।
নিজের কপালে নিজেই কতক্ষন চাপড় মারলো রায়াফ।
“তোর জন্য কবে না আমাকেই জেলে যেতে হয়।খুব কপাল গুনে তোকে পেয়েছি।”
রায়াফের কথায় পাত্তা না দিয়ে কথার মোড় ঘুরালো যুবরাজ।বিষাদ জড়ানো কন্ঠে শুধালো
“মা কেমন আছে?
ল্যাপটপ বন্ধ করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো রায়াফ।প্যান্টের পকেটে এক হাত গুঁজে অন্য হাত দিয়ে থুতনি চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠলো
“এখন আপাতত ভালো আছে।বেশি স্ট্রেচ নিয়ে ফেলেছিলো বেচারি।এজন্য প্যানিক এট্যাক এসেছিলো।কিছুদিন বেড রেস্টে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে।অন্ততঃ একবার হলেও তোর ওবাড়ি যাওয়া উচিত।
“সাদাফ শাহীরের বাড়িতে আমি আর কখনো যাবোনা।যখন তখন পুলিশ এনে আমাকে ধরিয়ে দিতে এক মিনিট ও ভাববে না উনি।কাল মাকে আমার এপার্টমেন্টে আনার ব্যাবস্থা কর।
গম্ভীর কন্ঠে কথা গুলো বলেই হনহন করে নিজের বেড রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো যুবরাজ।
ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে থেকে রায়াফ ফুঁস করে শ্বাস ছেড়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো।এখন তার একটাই কাজ।
বেনজির আশফির বাড়ির সিসিটিভি হ্যাক করে রাতের ফুটেজ গুলো ডিলিট করা।
★★★★★
দুপুরের আগেই রাজ্যকে বাড়ি ফিরতে দেখে খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠলেন রাজ্যর বাবা রেজোয়ান চৌধুরী।কেবলই তিনি ড্রয়িং রুমে বসে বসে পত্রিকায় দেশের খবর পড়ছিলেন।মেয়েকে দেখে পত্রিকা ফেলে হাত বাড়িয়ে ডেকে উঠলেন
“আয় বাবা আমার পাশে এসে বস।অনেক দিন পর আজ এই সময়ে বাড়ি এলি।”
রাজ্য রোজোয়ান চৌধুরীর পাশে বসে নিজের পায়ের মোজা খুলতে খুলতে ক্লান্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“আর বলো না বাবা।কি সব ঘটনা ঘটছে দেশে।আমাদের চিপ কমান্ডারকে কে জানি মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে আর….
রাজ্যকে কথা শেষ করতে না দিয়েই থামিয়ে দিলেন রেজোয়ান চৌধুরী।
“এসব মারামারি খুনাখুনির গল্প আর শুনতে ইচ্ছে করে না রে বাবা।
মিসেস তনুজা ট্রেতে করে চা নিয়ে এসে পাশে বসতে বসতে ফোড়ন কেটে বলে উঠলেন
“তা তোমার কিসের গল্প শুনতে ইচ্ছে করে বলোতো?
এবার যেনো ভদ্রলোক একটু সুযোগ পেলেন।ট্রে থেকে চায়ের কাপ হাতে তুলে অল্প চুমুক দিয়ে বলে উঠলেন
“রাজ্য যা বলবো মন দিয়ে শুনবে।বয়স তোমার পঁচিশ পেরিয়ে ছাব্বিশে গিয়ে ঠেকতে চাইছে।তোমার বান্ধবীরা অলরেডি বাচ্চার মা হয়ে সংসার সামলাচ্ছে।অথচ আমি এক ব্যার্থ বাবা এখনো তোমার বিয়েই দিতে পারলাম না।
বিয়ের কথা শুনেই নিজের জিনিসপত্র নিয়ে উঠে চলে যেতে চাইলো রাজ্য
ভদ্রলোক গম্ভীর কন্ঠে খানিক তেজ ঢেলে বলে উঠলেন
“তোমার এসব লুকোচুরি নাটক বহুত দেখেছি রাজ্য।যদি আমার সাথে ঝামেলা বাঁধাতে না চাও তাহলে ভালোয় ভালোয় আজকে পাত্রের সাথে দেখা করতে যাবে।না হলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
কাঁদো কাঁদো মুখে খানিক উত্তেজিত রাগী কন্ঠে রাজ্য বলে উঠলো
“চিনিনা জানিনা এমন একটা ছেলেকে কিভাবে জীবন সঙ্গী করবো বাবা?
“তোমার মাকেও আমি জীবনে দেখিনি।একদম বাসর ঘরে দেখেছি।সংসার হচ্ছে না?অসুখী হয়েছি আমরা?এসব ভেলকি বাজি বাদ দিয়ে বিকেলে কফিশপে দেখা করতে যাবে ব্যাস।আর কোনো ফালতু কথা শুনতে চাইনা।
“আচ্ছা বাবা তার আগে বলো পাত্র দেখতে কি খুব সুন্দর?
কথাটি বলে অধীর আগ্রহে রেজোয়ান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইলো রাজ্য।
চায়ের কাঁপে শেষ চুমুক দিয়ে শব্দ করে কাপ পিরিচ রেখে রেজোয়ান চৌধুরী সোজা হয়ে আয়েশ করে বসলেন।এরপর একটা বিস্কুটে কামড় বসিয়ে চিবুতে চিবুতে বললেন
“পাত্র আমি নিজেও দেখেনি।ছেলে আমার বন্ধুর ছেলে।লন্ডন সিটিজেন শিপ পাওয়া ছেলে।আমার বন্ধু সুবহান শেখ বলেছে ছেলে নাকি তার মতোই হয়েছে।তুমি চিন্তা করোনা।বন্ধু আমার ইয়ং বয়সে নায়কের মতো সুন্দর ছিলো।তাহলে ছেলে কতো হ্যান্ডসাম হবে একবার ভেবে দেখো!
এতোক্ষন তনুজা চুপ থাকলেও এবার আর চুপ থাকতে পারলেন না।নিজের স্বামীর মুখে এসব আনাড়ি কথাবার্তা শুনে রাজ্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলে উঠলেন
“ছেলে সুন্দর অসুন্দর বুঝিনা।দেখা হলেই তো আর বিয়ে হয়ে গেলো না তাই না?তোর পছন্দ না হলে আমরা জোর করে কখনোই তোর বিয়ে দেবো না মা।
স্ত্রীর কথায় নিজের ইগোতে হোঁচট খেলেন রাশভারী রেজোয়ান চৌধুরী।
গলা খাকরি দিয়ে তনুজার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন
“তুমি আবার বাড়তি কথা বলো কেনো?ছেলে আলবাত সুন্দর হবে।না হলে আমার কান কেটে চিলকে দিয়ে দেবো।
রাজ্য বুঝতে পারলো তার বাবা মায়ের এখুনি ঝগড়া লেগে যাবে।তাই সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করতে বলে উঠলো
“ঠিক আছে আমি বিকেলে যাবো।প্লিজ তোমরা ঝগড়া করো না।”
#চলবে