#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৮
#সারিকা_হোসাইন
_______
অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকের বিকেলটা অদ্ভুত।এই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে তো এই বৃষ্টি থেমে বাতাসের দমক বয়ে চলেছে।এমন অলস বিকেলে রাজ্যের দুই চোখের পাতা ভরে ঘুম এসে হানা দিচ্ছে।কিন্তু সে ঘুমুতে পারছে না।এদিকে দুপুরের পর থেকে এনিকেও ফোন করে পাওয়া যাচ্ছে না।একা একা কিভাবে একটা কফিশপে অপরিচিত ছেলের সাথে দেখা করবে সেটা ভেবেই সে কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।সব মিলিয়ে রাজ্য আরামের বদলে অশান্তি জনক এক বিকেল পার করছে।
হঠাৎ খট করে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন তনুজা চৌধুরী।রুমে এসে দেখতে পেলেন বিছানায় মাথা রেখে দালানে পা ঠেকিয়ে ইয়োগা স্টাইলে শুয়ে আছে রাজ্য।আলমারির দরজা খোলা।এলোমেলো করে কিছু ড্রেস বের করে রিডিং টেবিলের উপর ছড়িয়ে রাখা হয়েছে।মেয়ের এহেন অগোছালো অবস্থা দেখে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করলেন মিসেস তনুজা।
“কি ব্যাপার তুই এখনো এভাবে শুয়ে আছিস।ওদিকে তোর বাবা সমানে বকবক করে যাচ্ছে।ছয়টার মধ্যে তোর ওখানে থাকার কথা।এখন বিকেল পাঁচটা বাজতে চললো।রেডি কখন হবি?আর যাবি ই বা কখন?
এক দমে কথা গুলো বলে মেয়ের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করলেন তনুজা।
রাজ্য নিজের পোজে বহাল থেকে অসহায়ের মতো করে বলে উঠলো
“একটা ড্রেস ও পড়তে ইচ্ছে করছে না মা।এদিকে এনিটাও ফোন তুলছে না।একা একা যেতে মন সায় দিচ্ছে না।তুমিও চলো না মা আমার সাথে।
তনুজা ছড়িয়ে রাখা জামা কাপড়ে জহুরী নজর বুলাতে বুলাতে বলে উঠলেন
“জীবনে কখনো দেখেছিস মেয়ের ব্লাইন্ড ডেটে মা গিয়েছে?
তনুজার কথায় আশাহত হয়ে ধীরে ধীরে বিছানায় বাবু হয়ে আসন করে বসলো রাজ্য।এরপর মিনমিন করে বলে উঠলো
“পাত্র পছন্দ না হলে আমাকে কিন্তু কেউ বিয়ে দিতে পারবে না মা আগেই বলে দিলাম।
“তুমি এখনো বসে বসে নিজের ক্যাসেট বাজিয়েই যাচ্ছ?এদিকে ছেলেটা কফিশপে বসে আছে।তোমার আর রেডি হতে হবে না।এভাবেই চলে যাও।
বাজখাই গলায় কথা গুলো বলে চশমার উপর দিয়ে চোখ পাকিয়ে রাজ্যের দিকে তাকিয়ে রইলেন রেজোয়ান চৌধুরী।
বাবার এমন অদ্ভুত রূপ দেখে বিড়ালের মতো বিছানা থেকে নেমে একটা ক্রপ টপ,লং স্কার্ট আর শ্রাগ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো রাজ্য।
ফ্রেশ হয়ে ড্রেস পাল্টে মুখে হালকা প্রসাধনী লাগিয়ে নিলো রাজ্য।মেরুন রঙের ড্রেসের সাথে মিলিয়ে ছোট ইয়ার রিং আর পেন্ডেন্ট পরে নিলো।হাতে সিম্পল ব্রেসলেট পরে বড় বড় চোখের কিনারা ঘেষে মোটা করে কাজল লেপে দিলো।সামান্য ব্লাশ অন টাচ করে ঠোঁটে ম্যাট লিপস্টিক লাগিয়ে কাঁধ পর্যন্ত চুলগুলো এক সাইডে সিঁথি করে ঘাড়ের দুই পাশে ছেড়ে দিলো।নিজেকে ভালো করে খুটিয়ে আয়নায় দেখে ফুঁস করে লম্বা শ্বাস ছেড়ে ছোট হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে এলো।
ড্রয়িং রুমে মিসেস তনুজা এবং রেজোয়ান চৌধুরী বসে বসে অপেক্ষা করছিলেন।
রাজ্যকে দেখতে পেয়েই রেজোয়ান চৌধুরী উঠে দাঁড়ালেন।কন্ঠে খানিক নম্রতা ঢেলে রাজ্যকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন
“আমি কখনোই তোমার উপর আমার চাওয়া পাওয়া চাপিয়ে দেইনি।এই ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে বিষয়টি এমন নয়।পাত্র পছন্দ না হলেও তার সাথে হাসি মুখে কথা শেষ করে বাড়িতে এসে আমাকে জানাবে।এমন কিছু করোনা যাতে আমার বন্ধুর সামনে আমাকে ছোট হতে হয়।
রাজ্য জানে তার বাবা কতোটা নরম মনের মানুষ।তিনি উপরে যতোটা শক্ত ভেতরে ঠিক ততোটাই নরম।একদম নারকেলের মতো।উপরে যতোই ধমকা ধমকি করুক হৃদয়ের সবটা ঢেলেই তিনি রাজ্যকে ভালোবাসেন।
রাজ্য আর কথা না বাড়িয়ে ঘাড় কাত করে তার বাবার কথায় সায় জানিয়ে ঘড়িতে সময় দেখে ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে গেলো।
*********
শহরের নামকরা কফিশপ দ্যা ব্লু মুন।তিন তলা বিশিষ্ট এই রেস্টুরেন্ট টির দূতলার পুরোটা জুড়েই বিভিন্ন ড্রিংক্স আর এপিটাইজার আইটেম দিয়ে ঠাসানো।এখানকার খাবার গুলো অত্যন্ত সুস্বাদু আর ফ্রেশ।টাকা ওয়ালা বা পশ শ্রেণীর লোকেদের জন্য এটা হচ্ছে সময় কাটানোর অন্যতম স্থান।বিভিন্ন কাজের তাগিদে এখানে বহু বার রাজ্যের আশা হয়েছে।কিন্তু আজকের আগমন টা ভিন্ন।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে সিঁড়ি ধরে দুতলায় উঠার পথে সিঁড়ির সাথে লাগোয়া সাইড মিররে নিজেকে আরেকবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিলো রাজ্য।আর যাই হোক কারো সামনে নিজেকে জোকার হিসেবে উপস্থাপন করার কোনো ইচ্ছে তার নেই।ছেলে যেহেতু বিদেশি তার সামনে স্ট্যাবল থাকাই উত্তম।
মনে মনে নিজেকে সাহস জুগিয়ে কাঁচের পুশ করা দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো রাজ্য।
নিজেদের জন্য রিজার্ভ কৃত টেবিলের দিকে নজর দিতেই চোখ কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম।মুহূর্তেই ফিনফিনে পাতলা ঠোঁট দুটো কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে বুকের জমানো কথা গলার কাছে এসে আটকে রইলো।নিজের চোখ কে অবিশ্বাস করে নিজের হাতে নিজেই চিমটি কেটে ব্যাথা উদ্ভট শব্দ করে উঠলো
“উড়ি মা রি”
চোখ দুটো কচলে পিটপিট করে দৃষ্টি সাফ করে আবার সেই টেবিলের দিকে নজর দিলো।
কালো কুচকুচে এক নাইজেরিয়ান বসে বসে ফোন ঘাটছে সেই টেবিলে ।কালোর চোটে তার গাল দুটো চকচক করছে সাথে টাক মাথা খানাও।সারা শরীর হাতড়ে বিশ কেজি মাংস ও পাওয়া যাবে না।তার মধ্যে বড় বড় বাঁকানো গোঁফ।
ছেলেটির এমন রূপে নিজের সেন্স হারালো রাজ্য।আশেপাশে তাকিয়ে খালি একটি টেবিল দেখতে পেয়ে কোনোমতে সেখানে গিয়ে বসে পড়লো।
টেবিলের উপর রাখা ফুলদানির ফুল দিয়ে মুখ ঢেকে ছেলেটির দিকে নজর দিতেই দেখতে পেলো ছেলেটি ইতি উতি তাকিমাকি করছে।ছেলেটির হলদেটে চোখ দেখে রাজ্য ভয়ে টেবিলের নীচে মাথা ঢুকিয়ে দিলো।হঠাৎই একটা আননোন নম্বর থেকে কল এসে রাজ্যের ফোনটি ভো ভো শব্দে কেঁপে উঠলো।
ফোনের সাথে সাথে ভয়ে রাজ্যও কেঁপে উঠলো।কোনো মতে ফোন সাইলেন্ট করে টেবিলের নীচে মাথা রেখেই ভাবতে লাগলো
“ইয়া মাবুদ এ কোন মুসিবতে বাবা আমায় ফাঁসিয়ে দিলো?তার সামনে গিয়ে এক মিনিট সময় কাটানোও আমার পক্ষে সম্ভব না।এখান থেকে বের হলেই যদি ছেলেটি আমাকে দেখে ফেলে তখন?
রাজ্য যখন নিজের চিন্তা ভাবনায় মগ্ন তখন ই কেউ গমগমে ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো
“এক্সকিউজ মি।আই হ্যাভ বুকড ডিজ টেবল!
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে রক্ত হিম করা কন্ঠে কেঁপে উঠে টেবিলে বিছানো সাদা রঙের কাপড় টাকে খামচে ধরলো রাজ্য।কিন্তু মাথা বের করলো না।
ওপাশের ব্যাক্তি এবার চটে গেলো।দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো
“কি ব্যাপার আপনি কি কানে শুনতে পাননা?নাকি কোনো ম্যানার্স জানেন না?আর এটা কি ধরনের বসার স্টাইল?
নিজের ইজ্জতের এমন ফালুদা অবস্থা দেখে ধীরে ধীরে টেবিলের নিচ থেকে মাথা তুললো রাজ্য।
টেবিলের নীচে ঝুকে থাকার কারনে তার সেট করা সিল্কি চুল গুলো এলোমেলো হয়ে সারা মুখে ভুতের মতো বিছিয়ে রয়েছে।
রাজ্য কোনো মতে দুই হাতের সহিত চুল গুলো সরিয়ে মাথা একটু তুলে অনুনয়ের সুরে বলে উঠলো
“একটু কো অপারেট করুন প্লিজ।সাংঘাতিক বিপদে পড়েছি।আপনার যা খুশি ওর্ডার করে খেয়ে নিন।আমি বিল পে করে দেবো প্রমিজ।
ওপাশের ব্যাক্তি মুখের কথা বলার ভাষা হারালো যেনো।যখন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি এসে ধরা দেয় তখন সেই সুখ লুকানোর জায়গার বড্ড অভাব দেখা দেয়।
লোকটি ধীর পায়ে রোবটের মতো রাজ্যের পাশে চুপটি করে দুম বসে গেলো।
রাজ্য মাথা তুলে দ্বিতীয় দফায় লোকটির দিকে তাকিয়ে থ্যাঙ্কস জানাতে গিয়েই শকড হয়ে গেলো।
“আরে এতো সেদিনের সেই ঘুষি মেরে দেওয়া বেত্তমিজ ছেলেটা!
নিজের চুল নিজেই খামচে ধরে রাজ্য বিড়বিড় করে বলে উঠে
“এতো এতো সারপ্রাইজ রাখা হয়েছে আজকে আমার জন্য?হায় মাবুদ সারপ্রাইজ দেখে কিডনি তে এট্যাক এসে যাচ্ছে!কোন পাপের শাস্তি এগুলো?
নিজের শখের মানুষটি যখন কারো পাশে উপস্থিত থাকে তখন তাকে ছুঁতে না পারার যে তীব্র নীল কষ্ট হৃদয়ে শেল হয়ে বিধে এটা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।
যুবরাজের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।নিজের হাত মুঠি করে সামনের দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে নিজেকে কন্ট্রোল করে যাচ্ছে যুবরাজ।
এই মানবীকে সে কখনো এতো সুন্দর রূপে দেখেনি।সাজসজ্জা বিহীন সে স্বর্গের পরী।কিন্তু এখন তাকে পরীর রানী মনে হচ্ছে।যুবরাজের ইচ্ছে হচ্ছে এখনই এই মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে হাজার খানেক চুমু দিতে।কিন্তু সেই অধিকার তার নেই।নিজেকে নিজেই হতভাগা ট্যাগ দিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।
ফুলদানি সমেত নিজের মুখ ঢেকে উঠে দাঁড়ালো রাজ্য।আশেপাশে দৃষ্টি মেলে অতীব কৃষ্ণবর্ণ লোকটিকে খুজলো।কোথাও তাকে না দেখতে পেয়ে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে যাবে ওমনি দেখতে পেলো লোকটি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
এই দৃশ্য দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে যুবরাজের কোলে মুখ লুকালো রাজ্য।
বেচারা যুবরাজ থরথর করে কেঁপে উঠলো।নিজেকে তার পাগল লাগছে,বেসামাল লাগছে।এমন কঠিন পরিস্থিতি তার জীবনে কোনো দিন আসবে সে তা স্বপ্নেও ভাবেনি।
নিজেকে বহুত শাসিয়ে ব্যার্থ হয়ে নিজের হাত পরম মমতায় রাজ্যের মাথায় রেখে চুলে বিলি কেটে উঠলো যুবরাজ।
*******
কিছু সময় পার হতেই রাজ্যের ফোনটি দ্বিতীয় দফায় ভো ভো করে কেঁপে উঠলো।দ্রুত স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে নিজের বাবার নম্বর দেখে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রাগী গর্জন ভেসে এলো
“কি ব্যাপার রাজ্য?ছেলেটি সমানে তোমাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে ফোন ও তুলছো না দেখাও করছো না একি ফাজলামো?
নিজের মুখের এলোমেলো হয়ে যাওয়া কথা গুলোকে কোনো রকমে গুছিয়ে রাজ্য মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো
“বাবা ছেলে কী উগান্ডা প্রবাসী?
“এক চড়ে সব গুলো দাঁত ফেলে দেবো ফাজিল মেয়ে।ছেলেটি বত্রিশ নম্বর টেবিলে বসে বসে অপেক্ষা করছে।পাঁচ মিনিটের মধ্যে তুমি ওর কাছে না পৌঁছালে আমি ওখানে গিয়ে তোমার গাল লাল করে ফেলবো।
কথা গুলো বলেই গজগজ করতে করতে খট করে ফোনের লাইন কেটে দিলেন রেজোয়ান চৌধুরী।
ফোনে বলা কথা গুলো মনে মনে স্বরন করে ভ্রু কুঁচকে পিছনের দিকে উকি দিলো রাজ্য।
এরপর জিভ কেটে নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মেরে বলে উঠলো
“ধুর গাঁধী এটা চৌত্রিশ নম্বর টেবিল।
আশেপাশে তাকিয়ে বত্রিশ নম্বর টেবিলের দিকে নজর দিতেই মুখের ভাষা হারালো রাজ্য।
“এ কোনো সাধারণ ছেলে নয়।সে নিশ্চিত অন্য গ্রহের মানুষ।পৃথিবীর মানুষ এতো সুন্দর হয় না,হতে পারে না।কি ধবধবে ফর্সা!ফ্রেঞ্চ কাট খোঁচা খোঁচা দাড়ি।জেল দিয়ে অভিনব কায়দায় সেট করা ঘন বাদামি চুল,গোলাপি ঠোঁট।জিম করা আকর্ষণীয় ফিগার।কি ড্যাসিং ।উফ চোখ জ্বলে গেলো!
রাজ্যের এমন উদ্ভট ভাব ভঙ্গি মোটেও সুবিধার মনে হলো না যুবরাজের।সে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না।
হঠাৎই সেখানে রায়াফের উপস্থিতি ঘটে।
“সরি ডুড একটু দেরি হয়ে গেলো।এখনো খাবার ওর্ডার করিস নি?
কথা গুলো বলতে বলতেই যুবরাজের পাশের মানবীর দিকে নজর যেতেই মুখের ভাষা হারালো রায়াফ।কিছুক্ষন চুপ থেকে রাজ্যের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে অবাক চোখে জিজ্ঞেস করে
“এই ভুতনি কে?
রায়াফের আঙ্গুলি নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যের পানে তাকাতেই ফিক করে হেসে দেয় যুবরাজ।
তার দুই চোখের মোটা লেপটানো কাজল ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাল পর্যন্ত এসে ঠেকেছে।
যুবরাজের হাসি দেখে রায়াফ ও হো হো করে হেসে উঠলো।
দুটো ছেলের হঠাৎ এমন উদ্ভট হাসিতে বেক্কল বনে গেলো রাজ্য।
যুবরাজ নিজের ফোনের ক্যামেরা বের করে ছবি তুলে রাজ্যের সামনে মেলে ধরে বলে উঠলো
“লুকিং লাইক কিউট ভুতনি”
বলেই ঠোঁট চেপে হেসে উঠলো।
নিজের এমন ভয়াবহ রূপ দেখে অন্তর ধক করে উঠলো রাজ্যের।অপেক্ষারত ব্যাক্তি এই রূপ দেখলে এক সেকেন্ড ও সময় নেবেনা তাকে রিজেক্ট করতে।
দুই হাত দিয়ে দ্রুত সেই কাজল পরিস্কার করতে গিয়ে আরো ছড়িয়ে ফেললো সে।
যুবরাজ রাজ্যের হাত ধরে থামিয়ে বলে উঠলো
“আমি হেল্প করছি।”
টেবিলের উপর থাকা টিস্যু হোল্ডার থেকে টিস্যু নিয়ে আলতো হাতে রাজ্যের থুতনি চেপে ধরে ধীরে ধীরে কাজল মুছার কাছে লেগে গেলো যুবরাজ।
এই প্রথম রাজ্য যুবরাজের দিকে ভালোভাবে দৃষ্টি মেলে তাকালো।
চকচকে ফর্সা ক্লিন শেভ মুখটিতে যেনো রাজ্যের মায়া।বাদামি মনি যুক্ত চোখ দুটো কাউকে বশীভূত করার জন্য যথেষ্ট।ডার্ক ব্রাউন ঘাড় সমান স্টাইল করে কাটা চুল গুলো এই যুবকের সৌন্দর্য অন্য সব পুরুষের থেকে হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।ব্ল্যাক রেড ঠোঁট দুটোর সম্মোহন থেকে মুক্তি পাওয়া বড়ই দুষ্কর।জিম করা প্রশস্ত পেটানো শরীরটি যে কোনো মেয়েকে শিহরিত করতে বাধ্য।
যুবরাজের মুখের দিকে তাকিয়ে না চাইতেও রাজ্য গলার ট্যাটুর ব্যান্ডেজ লাগানো জায়গায় স্পর্শ করতেই যুবরাজের হাত থেমে যায়।
একে অপরের দিকে মোহনীয় ভঙ্গিতে কতক্ষন চেয়ে থাকে কেউ জানেনা।
দুজনের ধ্যান ভাঙে ওয়াইটার এর কথায়।
“এক্সকিউজ মি স্যার!
“হুয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু ওর্ডার?
নিজেকে ধাতস্থ করে চট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় রাজ্য।এরপর মাথা নিচু করে বলে উঠে
“সরি।আই হ্যাভ টু গো।
যুবরাজ কে পাশ কাটিয়ে রাজ্য ওয়াশরুমের দিকে ছুটে চলে।এই পুরোটা মুহূর্ত যুবরাজের বক্ষ ছাতিতে ক্রমাগত হাতুড়ি পিটিয়ে চলেছে কেউ।যুবরাজের এই মুহূর্তে ওয়াইটার ছেলেটির পিঠের ছাল তুলতে ইচ্ছে হচ্ছে।কোনো মতে চটে যাওয়া রাগ কন্ট্রোল করে নিজের বুকে হাত চেপে ধরে রায়াফ কে উদ্দেশ্য করে যুবরাজ বলে উঠে
“যা মন চায় ওর্ডার দে।আম ফিলিং সিক।
এদিকে হাপাতে হাপাতে ওয়াশরুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নিলো রাজ্য।যুবরাজের চোখে দৃষ্টি মেলানোর পর থেকে কোনো কিছুই তার ভালো লাগছে না।নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে পুনরায় নিজেকে গুছিয়ে বত্রিশ নম্বর টেবিলের দিকে হাঁটা দিলো সে।
সামনের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় মনে হেঁটে চলেছে রাজ্য।সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে রাজ্যের গন্তব্য শেষ হতেই দাঁড়িয়ে গেলো যুবরাজ।
স্টেক কাটার চাকু হাতে নিয়ে নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে চেপে ধরে আহত হিংস্র বাঘের ন্যায় আর্তনাদ করে বলে উঠলো
“শেরহাম ফাইয়াজ”!
[গল্প পড়ার সাথে সাথে পেইজ টিতে একটা ফলো দেবার জন্য অনুরোধ থাকলো।আপনারা আমাকে ফলো করলে আমার পেইজের রিচ বাড়বে আমি গল্প লেখার শক্তি পাবো।ধন্যবাদ সবাইকে]
#চলবে