ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড #পর্ব_১১ #সারিকা–হোসাইন

0
32

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_১১
#সারিকা–হোসাইন
———
যেই মেঘ গুলো একটু আগেও পুরো আকাশ কে থমথমে করে রেখেছিলো সেই মেঘ গুলো এখন গলে গলে হালকা বর্ষণে রূপ নিয়েছে।গুমোট নিস্তব্ধ রাত মুহূর্তের ব্যাবধানেই বৃষ্টির টুপটাপ ছন্দে মূর্ছনা তুলেছে।যুবরাজের গোল্ডেন ডুডল পোষা কুকুরটিও বোধ হয় এতক্ষনে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আছে।এমন শীতল রোমাঞ্চকর পরিবেশে ঘুম উধাও হয়েছে যুবরাজের।আজকাল এলকোহল ও তাকে কাবু করতে ব্যার্থ হচ্ছে।

রাজ্যের নিষ্পাপ মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে যুবরাজ।

“এটা কি হলো?সামান্য এই টুকুন দেখেই মেয়েটা জ্ঞান হারালো?এরকম পিঁপড়ের আত্মা নিয়ে এই মেয়ে পুলিশের স্পেশাল ফোর্স এ কিভাবে নিয়োগ পেয়েছে?

রাজ্যের হাত ভালো করে পরখ করে নিলো যুবরাজ।ধবধবে ফর্সা হাতটি একদম কব্জি থেকে কুনুই পর্যন্ত লম্বা মোটা হয়ে ছিলে দগদগে হয়ে আছে।পুরোটা হাত গরম হয়ে গোলাপি বর্ন ধারণ করেছে।মেয়েটির পুরো গলা জুড়ে যুবরাজের হাতের আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট।কপালেও সামান্য লালচে ফোলা দেখা যাচ্ছে।
ফুঁস করে লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চট করে রাজ্যকে কোলে তুলে নিজের বেডরুমের দিকে অগ্রসর হলো যুবরাজ।

“না চাইতেও মেয়েটা বারবার সামনে এসে মুসিবত খাড়া করছে।এই মেয়ে কি জানে আমি তার জন্য কতোটা খতরনাক?

নিজের ধবধবে সাদা তুলতুলে নরম বিছানায় আলতো করে পরম মমতায় ভালোভাবে রাজ্যকে শুইয়ে দিলো যুবরাজ ।বালিশ টা একটু নিচু করে মাথায় হাত বুলিয়ে পায়ের কাছের পাতলা কাঁথা টা কোমর পর্যন্ত টেনে এসির পাওয়ার কমিয়ে দিলো।

রাজ্যের ঘুমন্ত মুখশ্রী যুবরাজকে বার বার খুব করে টানছে।গোলাপি খসখসে ঠোঁট জোড়া যুবরাজের মনকে অশান্ত করে তুলেছে থেকে থেকে। অস্থির মনকে শান্ত করতে না পেরে টুপ করে নিজের উষ্ণ মসৃন অধর জোড়া ছুঁইয়ে দিলো রাজ্যের শীতল খসখসে ওষ্ঠে।
এরপর দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে উঠে দাঁড়ালো

“নিজের এহেন সর্বনাশের জন্য তুমি নিজেই দায়ী মেয়ে।পরে আমাকে দোষ দিলে সেটা আমি মানবো কেনো?ভালোবাসার ব্যাপারে যুবরাজ একশো তে একশো।

নিজেকে নিজেই ভুজুং ভাজুং বুঝ দিয়ে মেডিকিট বক্স টা নিয়ে রাজ্যের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো যুবরাজ।
রাজ্যের চিকন সরু হাতটি টেনে নিয়ে একটা কটন প্যাডে হ্যাক্সিসল লাগিয়ে সামান্য ফু দিয়ে দিয়ে ক্ষত টা পরিস্কার করে নিলো।হ্যাক্সিসল লাগানোর সাথে সাথেই হুশ হীন মানবীর শরীর কিঞ্চিত ঝাকুনি দিয়ে কপাল টা কুঁচকে উঠলো।
যুবরাজ বুঝতে পারলো হাতে জ্বলুনি হচ্ছে।
রাজ্যকে এই মুহূর্তে যুবরাজের কাছে অসহায় ছোট একটা বাচ্চা মনে হচ্ছে।যেই বাচ্চা একটু ব্যাথা পেলেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদে।

যুবরাজ একটা অয়েন্টমেন্ট নিয়ে ছিলে যাওয়া জায়গা টায় এমন আলতো হাতে লাগিয়ে দিলো যেনো শরীর টের ই পেলো না এখানে কারো আধিপত্য বিস্তার হচ্ছে।
এরপর সাদা রিবন গজ নিয়ে কব্জি থেকে কুনুই পর্যন্ত ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিজের কাজ শেষ করলো।
এরপর মেডিকিট বক্স রেখে স্টেথোস্কোপ আর প্রেসার মাপার মেশিন নিয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের ন্যায় কার্যক্রম চালালো।
প্রেসার একদম লো,পালস খুব ধীর গতিতে চলছে।মনে হচ্ছে কয়েকদিনের স্ট্রেচে শরীর দুর্বল হয়ে গিয়েছে।

“মেয়েটা ঠিক ঠাক খায়না নাকি?আমি এই মেয়ের বস হলে প্রথম দিনেই চাকরি থেকে আউট করে বউ বানিয়ে খাঁচায় বন্দি করে রাখতাম আর সারাদিন তুলে তুলে খাবার খাওয়াতাম।এত্তো কেয়ারলেস কোনো মেয়ে হয়?

যুবরাজ নিজে নিজেই বকবক করতে করতে একটা ইলেক্ট্রোলাইট স্যালাইন এনে রাজ্যের হাতে লাগিয়ে দিলো।

“এই মেয়েকে বিয়ে করলো তো বাসাতেই একটা ডাক্তার খানা খুলতে হবে দেখা যাচ্ছে।কি সাংঘাতিক মুসিবত!নিজের জন্য আনা মেডিসিন তো এখন দেখছি আমার আগে আমার বউয়েরই লাগবে।ধ্যত খেলবো না!

***********
এদিকে এনি বেনজির আশফীর বাসার নিচে দুই ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাজ্যকে ফোনের উপরে ফোন দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু বেচারি রাজ্য ফোন তো রিসিভ করছেই না মেসেজ দিয়েও কোনো ফিডব্যাক জানাচ্ছে না।

“আমাকে মেসেজ পাঠিয়ে এই মেয়ে কোথায় গেলো?গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে অলরেডি।এতো রাতে একা একা বাড়ি ফিরবো কিভাবে?

একা একা বিড়বিড় করতে করতে চতুর এনি চারপাশে তীক্ষ্ণ নজর বুলালো।এরিয়াটা একদম ফাঁকা।কেমন একটা গা ছমছমে ভাব।নিজের ফোনের স্ক্রিন অন করে সময় দেখে নিলো এনি।রাত প্রায় দেড়টার কাছাকাছি।ফোন পকেটে পুড়ে টর্চ জ্বালিয়ে এপার্টমেন্ট এর ব্যাক সাইডে চলে গেলো সে।এপার্টমেন্ট এর পিছনে বড় একটা আম গাছ রয়েছে সেটা দিয়ে ইজিলি বেনজির আশফির বেলকনিতে যাওয়া যায়।
“ভুত যেহেতু ধরতেই এসেছি তাহলে একদম গাছের গুঁড়ি থেকেই শুরু করা যাক”!

টর্চ জ্বালিয়ে গাছের দৃশ্যমান সকল অংশ পরখ করে নিলো এনি।সন্দেহ জনক কিছুই পাওয়া গেলো না এখানে।
“দুনিয়াতে ভুত প্রেত বলতে কিছুই নেই।আমি ড্যাম সিউর এটা কোনো মানুষের কাজ।কিন্তু কাজটা করলো কোন ব্যাটা?

মাঝারি সাইজের আম গাছটাতে উঠতে বেশ বেগ পোহাতে হলো এনিকে কারন বৃষ্টির ছিটায় গাছ পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছে অনেক।দুই মিনিটের কাজ দশ মিনিটে করে হাঁপিয়ে উঠলো এনি।
কোনো মতে তিন তলার বেলকনিতে পৌঁছে হাঁটুতে ভর দিয়ে বড় বড় দম ফেললো সে।এরপর রুমে ঢুকে বেলকনির দরজা লাগিয়ে পুরো বাসা আলোকিত করলো লাইটস জ্বালিয়ে।

বিশাল বড় ফ্ল্যাট,বেনজির আশফী আর তার স্ত্রী একাই থাকেন এখানে।দুটো ছেলেমেয়ে আছে উনাদের তারা বিদেশ পড়াশোনা করেন রুমানার বোনের কাছে।বেনজির আশফির ধারণা
বাংলাদেশের পড়াশোনার কোনো মূল্য নেই।সার্টিফিকেট অর্জন করে চাকরি পাবার চাইতে শিক্ষিত মানুষ হওয়া আগে জরুরি।

এনি মনে মনে ভাবে
“ভদ্রলোকের নীতি ঠিক আছে।এতো এতো লেখাপড়া করে যদি মানুষ ই না হওয়া গেলো তবে কিসের দাম রইলো বড় বড় ডিগ্রির?

বেনজির আশফির কক্ষ তল্লাশি চালাতে চালাতে এনি অদ্ভুত সুন্দর একটি রুমাল দেখতে পেলো বেড সাইড টেবিলের উপর।ঝটপট হাতে গ্লাভস পরে সেই রুমালটি একটা জিপার ব্যাগে ভরে নিলো।মস্তিষ্ক সজাগ হতেই এনির মনে পড়লো
“চিপ বারবার একটা সুগন্ধি রুমালের কথা বলছিলেন।এই রুমালের ভেতরই লুকিয়ে আছে আসল রহস্য।এখন এই রুমাল ই আমাকে ভুত পর্যন্ত নিয়ে যেতে হেল্প করবে।”

_________
আজকে কোনো ভাবেই যুবরাজের অক্ষিপটে নিদ্রা ধরা দিচ্ছে না।চোখ বুঝলেই রাজ্যের জ্ঞান হারানোর সময়টার কথা বার বার মনে পড়ছে।
“আচ্ছা মেয়েটা কি জাদুকরী?সে আমার পুরোটাই কিভাবে কব্জা করেছে?যদি মেয়েটাকে আমি না পাই তাহলে আমি বাঁচবো কি করে?

হঠাৎই রেস্টুরেন্টের কথা মাথা চাড়া দিতেই পায়ের রক্ত ছলকে মাথায় উঠে গেলো যুবরাজের।শোয়া থেকে দুম করে উঠে বসে রাজ্যের কক্ষের দিকে পা বাড়ালো।
“এই মুহুর্তেই আমাকে জানতে হবে শেরহামের সাথে তার কিসের সম্পর্ক?কেনো সে ওই নরখাদকের সাথে দেখা করতে গিয়েছে রেস্টুরেন্টে?

যুবরাজ রাজ্যের কক্ষে এসে রুমের লাইটস জ্বালিয়ে হনহন করে রাজ্যের বিছানার কাছে এসে দাড়ালো।রাগে তার চোখ দুটি জলন্ত অগ্নি শিখার মতো হয়ে আছে।আপনা আপনি দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মেয়েটি পরম সুখের নিদ্রা গিয়েছে।বড় বড় পাপড়ি যুক্ত বন্ধ চোখ দুটো যেনো শিল্পীর আঁকা ছবি।ভরাট গোলাপি গাল দুটো পাকা আপেলের মতো লাগছে যুবরাজের কাছে।বেঘোরে মেয়েটি দুই ঠোঁট নাড়িয়ে চুকচুক শব্দ করছে।এই দৃশ্য দেখে ফিক করে হেসে দিলো যুবরাজ।

যেই পরিমাণ রাগ নিয়ে যুবরাজ এই কক্ষে প্রবেশ করেছিলো মেয়েটির এমন কোমল তুলতুলে আদুরে মুখশ্রী দেখে নিমিষেই সেই রাগ পানিতে পরিণত হলো।
দ্রুত রুমের লাইট নিভিয়ে ধীরে ধীরে বিছানায় উঠে রাজ্যের পাশে চুপ মেরে শুয়ে গেলো সে।
নিজের হাতের উপর রাজ্যের মাথা রেখে আরেক হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে চোখ বুঝলো
“এবার ঘুম পাচ্ছে আমার,খুব ঘুম পাচ্ছে।তোমার উষ্ণতা বিহীন আমার ঘুম ও পালিয়েছে জান।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি দিনে দিনে।আমি উন্মাদ বদ্ধ উন্মাদ।

———-
ঘুটঘুটে অন্ধকার একটি কক্ষে পঁচিশ কি ছাব্বিশ বছর বয়সের এক তরুণের গলা টিপে ধরে আছে লম্বা চওড়া শক্তপোক্ত এক লোক।সারা শরীর তার কালো কাপড়ে আবৃত যার কারনে অজ্ঞাত ব্যাক্তির সঠিক বয়স অনুমান করা দুষ্কর।এই অন্ধকার কক্ষের মাঝেও লোকটির অদ্ভুত চোখ হিংস্রতা ছড়াচ্ছে।সাধারণ মানুষের চাইতে এই লোকের চোখের মণি ভীষন আলাদা।দুই পাশে দুই রঙের মনি।
কক্ষের সকল নিস্তবতা ভেদ করে হুংকার দিয়ে উঠলো লোকটি
‘”বল তোতলা মামুন কোথায় আছে?যদি কোনো কিছু গোপন করার চেষ্টা করেছিস তাহলে এই ঘরের মেঝেতেই দাফন করে দেবো তোকে।মানুষ তো দূরে থাক কাকপক্ষী ও জানবে না তোর সমাধির খবর।

শক্ত হাতে গলা চেপে ধরায় যুবকের কথা বলার সকল শক্তি ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে গলার শ্বাস নালি এখনই ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে।আদৌ কি তার মুক্তি মিলবে এই কঠিন হৃদয়ের দস্যুর থেকে?যার কাজই মানুষকে চূড়ান্ত কষ্ট দিয়ে মেরে পৈচাশিক আনন্দ নেওয়া তার সামনে সত্য মিথ্যা কি আসে যায়?

তবুও মানুষ নিঃশ্বাসের শেষ বিন্দু দিয়ে বাঁচার জন্য লড়ে যায়।এই তরুণের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।তাকে বাঁচতে হবে।সে অবশ্যই বাঁচবে।চোখের সামনে এই শয়তানের কঠিন পরিণতি না দেখা পর্যন্ত সে মরতে পারেনা।

কঠিন মনোবলে যুবক নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে রাক্ষস তুল্য ব্যাক্তির থেকে সামান্য আলগা করতে পারে নিজের গলা।তাতেই যেনো তার মনে হলো কানের কাছে দিয়ে মৃত্যু তাকে ছুঁয়ে গেলো।
অজ্ঞাত ব্যাক্তি রাগে ফুঁস ফুঁস করতে করতে দুই হাতে ধরে ছুড়ে মারলো যুবকটিকে।
ছিটকে পড়ে অদূরে ভাঙা একটি টেবিলের সাথে লেগে মাথা ফেটে গলগল করে রক্তধারা ছুটে গেলো যুবকটির চিবুক বেয়ে।
হাত দিয়ে মাথার ফাটা অংশ চেপে ধরে জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে সর্বোচ্চ তেজ ঢেলে ছেলেটি বলে উঠলো
“যুবরাজ ভাই তোতলা মামুনকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে ”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here