#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা
২৫.
মেঘালয়ার শরীরের অবনতি চোখে পড়ার মতো আজকাল। শরীর বেশ ফুলে উঠেছে, বিশেষ করে পা দুটো। মাথার ব্যথাও কিছুসময় তীব্র থাকে। অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে, রেগে যায়। খাওয়া দাওয়া ছেড়েই দিয়েছে প্রায়।
গতকাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে ছুটেছিল ইরাজ। যখন ডাক্তারের কেবিনে যাওয়া হয়, মেঘালয়াকে বাইরে রাখা হয়। এটা অবশ্য মেঘালয়ার জন্য বিরক্তিকর। তবে কোন ওষুধ দেওয়া হয়নি। ইরাজের যত্ন-আত্তি আর আনতারা খানমের নীরব স্নেহে ভালোই আছে মেঘালয়া। তবুও যেন ইরাজের উদ্বেগের সাগরে বাঁধ ভেঙেছে।
রাতের ঘুমটা একেবারে নেই বললেই চলে মেয়েটার। সে যে একা নির্ঘুম রজনী কাটায়, তা নয়। বরং সে একটু-আধটু ঘুমিয়ে গেলেও জেগে থাকে ইরাজ। বসে কেবল অটল চাহনিতে চেয়ে থাকে মেঘালয়ার মুখের দিকে। এ-প্রাপ্তিতে নজর না লাগুক ইরাজের।
সকালে মেঘালয়ার ঘুম ভেঙে গেলেও ইরাজ ঘুমে অচেতন। শেষ রাতের দিকে শুয়েছে। যেহেতু এসি চলছে, মেঘালয়া পাতলা চাদরটা ইরাজের গায়ে তুলে দেয়। এসি অফ করলেও জেগে উঠবে ইরাজ। মেঘালয়া আস্তে করে উঠে দাঁড়াল। সে বুঝে পায়না, এত অসুস্থ হয়ে পড়ছে কেন দিন-দিন। আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে যেতে অগ্রসর হলে আবারও মাথা ঘুরে উঠল, সঙ্গে পেটে মোচর দিয়ে বমি ঠেলে এলো। সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ল মেঝেতে। জোরে জোরে শ্বাস নিল কয়েকটা। তাতেই যেন ইরাজের কলিজার পানি ছুটে যায় ঘুমন্ত অবস্থাতেই। হন্তদন্ত উঠে এসে মেঘালয়ার পাশে বসে পড়ে। ওকে একহাতে ধরে বুকের সঙ্গে আগলে নেয়। মেঘালয়ার চেয়েও জোরে জোরে শ্বাস নেয় ইরাজ। কিছুক্ষণ পর একটু শান্ত হয়ে মেঝেতে ঠেসে বসে ধপ করে। মেঘালয়া মাথাটা বুক থেকে তুলে অপর হাত থাপ্পর মারার ভঙ্গিতে এগিয়ে নিয়ে কঠিন স্বরে বলল,
“মারব এক থাপ্পর? বলেছি না একা মাতব্বরি করতে যাবি না। আমাকে ডাকতে বলেছিলাম না?ʼʼ— শেষের কথাটা ধমকে বলে ইরাজ।
“কী এমন হয়েছে? এ সময় এরকম একটু হওয়াই বরং স্বাভাবিক।ʼʼ
মেঘালয়ার কথায় ইরাজ আরও ক্ষেপে উঠল, “বেশি বুঝতে শিখেছিস?ʼʼ
মেঘালয়া ইরাজের রাগকে উপেক্ষা করে বলল, “বুঝব না? বাচ্চার মা হতে যাচ্ছি। না বুঝলে বাচ্চাকে বুঝাব কী?ʼʼ
ইরাজ গাল ফুলিয়ে একটা শ্বাস নিলো। নিজের ক্রোধকে সামলে নিল যেন। ইরাজকে দেখতে খুব উদ্বিগ্ন লাগছে। অসুস্থ মেঘালয়া, স্বাভাবিক অসুস্থতা তার। এ-সময় শতভাগ সুস্থ কোন নারীই থাকে না। তবুও ইরাজের চিন্তা বিরামহীন।
দুপুরে মেঘালয়াকে গোসল করিয়ে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দেয় ইরাজ। সকালে মেয়েটা কিছু খায়নি। বমি করে ভাসিয়েছে। আনতারা খানম এলেন খাবার হাতে। ইরাজ মাথা নত করে চুলে হাত গুজে, কপালের দুপাশের চুল মুষ্ঠিবদ্ধ করে চেপে ধরে বসে আছে পাশেই। মেঘালয়া চুলের পানি ঝারছে আস্তে আস্তে। তিনি এসে খাবারটা টি-টেবিলের ওপর রেখে দ্রুত পায়ে গিয়ে ইরাজের পাশে বসলেন। ইরাজের মাথার একপাশে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন, “মাথা ধরেছে? কফি খাবি?ʼʼ
ইরাজ দুদিকে ঘাঁড় নেড়ে মুখ তুলে তাকায়। ক্লান্ত চেহারা, চোখ-মুখ বসে গেছে ছেলেটার। আনতারার ভালো লাগল না ছেলের এমন রূপ দেখে। তিনি জানেন, ইরাজ এখন মেঘালয়াকে খাওয়াতে বসবে। শান্ত স্বরে বললেন, “আমি খাইয়ে দিচ্ছি, মেঘাকে। যা গোসল সেরে আয়।ʼʼ
ইরাজ নীরবে উঠে দাঁড়ায়। মেঘালয়ার দিকে শান্ত নজরে তাকায় একবার। মেঘালয়া চুলে জড়ানো তোয়ালেটা খুলে ইরাজের হাতে দেয়। ইরাজ চলে যায় বাথরুমে। আনতারা খানম খাবারের লোকমা তুলে ধরে মেঘালয়ার সামনে। মেঘালয়ার মাঝে মিশ্র এক অনুভূতি হলো— খারাপ লাগা, ভালো লাগা, চাপা কষ্ট, সংকোচ, বিষ্ময়। সাথে আবারও আম্মুর অভাববোধটা পীড়া দিতে শুরু করল ভেতরে। কান্নাগুলো জড়িয়ে আসে ভেতরে, নাকটা সামান্য লাল হয়ে উঠল খাবারটুকু মুখে নিয়ে। আগের মেঘালয়া হলে নিশ্চিত কেঁদে উঠে আনতারাকে ‘মামনি, মামনি’ বলে জড়িয়ে ধরত। তবে সেই মেঘালয়ার দিন ফুরিয়েছে, সে বিনষ্ট হয়ে সম্মুখে উঠে এসেছে আরেক মেঘালয়া। যে বাস্তবতা ও আঘাতগুলোকে খুব যতনে কোলে পিঠে বয়ে নিয়ে বাঁচতে শিখেছে। আনতারার প্রতি তার ক্ষোভ বা রাগ নেই। তবুও আজকাল চাইলেও আগের মতো আহ্লাদি আর সহজ হয়ে উঠতে পারে না তার সঙ্গে মেঘালয়া। সে একসময় বুঝেছিল, মা তো মা-ই। যা তার নেই। মায়ের মতো বলতে যা বোঝায়, তারা স্বার্থে টান লাগলে রূপ বদলে অচেনা হতে একদম সময় নেয় না।
কঠিন চিত্তে ভেতরকে সামলে ওপরে স্বাভাবিক ভাবে খাবারটুকু শেষ করল। আনতারা খানমও বিশেষ কথা বললেন না। খাওয়ানো শেষ করে বেরিয়ে গেলেন। এর মাঝে দু-একবার অবশ্য পানি খাবে কিনা– এ কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন মেঘালয়াকে। মেঘালয়া কেবল ঘাঁড় নেড়েছে।
ইরাজ গোসল সেরে বের হতে হতে যোহরের আজান শেষ হয়ে যায়। শুক্রবার, জুমার দিন। এমনিতেই তাড়াতাড়ি আজান দেয়। মেঘালয়া তুলনামূলক সুস্থতা বোধ করছে এখন আপাতত। তার শরীর নিয়ে সে নিজেই বিভ্রান্ত। কখন কেমন লাগে, ভালো থাকতে খারাপ হয়ে যায়, বোঝা যায় না। তবে এখন ঠিকঠাকই লাগছে বেশ। ইরাজ মাথা মুছতে মুছতে এসে মেঘালয়ার সামনে দাঁড়ায়। শরীরটা যেমন-তেমন, মেঘালয়ার পা ফুলে উঠেছে বেশ। সঙ্গে মেয়েটা মাঝেমধ্যেই শ্বাস-প্রশ্বাস জোরে নেয়। দেখলেই বোঝা যায়, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তবে তা বুঝতে না দেবার কি নিদারুণ প্রচেষ্টা মেঘালয়ার। ইরাজ এটা ধরতে পেরেছে এতদিনে, মেঘালয়ার যখন শরীর খারাপ লাগে, মুখটা হাসি হাসি রাখার চেষ্টা করে মেঘালয়া, ঘন ঘন হাসে, বেশ চঞ্চলতা দেখাতে চেষ্টা করে। ইরাজ মনে মনে এটা ভেবে হতাশ হয়, পাগলি মেয়ে! ইরাজের সম্মুখে নিজেকে লুকানোর কি বৃথা চেষ্টা! অথচ ইরাজ কিনা মুখস্ত করে রেখেছে বহু আগেই ওই বোকা, পুচকি মেঘালয়াকে।
আচমকা হালকা হাসল ইরাজ, তোয়ালেটা মৃদূ ভাবে ছুঁড়ে মারল মেঘালয়ার মুখের ওপর। মেঘালয়া কটমট করে তাকায়। এ কেমন অগোছালো ব্যাটাছেলে! কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই! ইরাজ তা দেখেও পরোয়া না করে বলে,
“চাবি-টাবি কোথায় রাখিস? যবে থেকে এসেছিস, রুমের স্ট্রাকচারই বদলে ফেলেছিস একদম! এবার একটা পাঞ্জাবী বের করে দে। আয়রন কোথায় রেখেছিস?ʼʼ
মেঘালয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, “পাঞ্জাবী?ʼʼ
“হু, আজ জুমার দিন তো!ʼʼ
মেঘালয়ার অবাক কণ্ঠস্বর, “নামায পড়তে যাবেন? আপনি?ʼʼ
ইরাজ গোমরা মুখে তাকাল, মেঘালয়ার কথা শুনে বলল, “উহ, তোকে পরিয়ে দেব। জুমার নামাযটা সেরে আসবি।ʼʼ
মেঘালয়া চোখ ছোটো ছোটো করে তাকায় ইরাজের দিকে। ইরাজ মুখ ফুলিয়ে একটা শ্বাস ফেলল। এগিয়ে এসে ধপ করে বসল মেঘালয়ার কাছে। সাফাই গাওয়ার মতো করে বলল, “আরেহ! তুই উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করবি, আর আমি উত্তর দিলেই দোষ?ʼʼ
মেঘালয়া নাক ফুলিয়ে বলে, “ইউ নো হোয়াট! আপনার জিহ্বায় সমস্যা আছে। সেখানে সোজা কথা বের হওয়ার ক্যাপাসিটিই নেই। আর জিহবার কি দোষ, যেখানে ঘাঁড়টাই জন্মের ত্যাড়া?ʼʼ
মেঘালয়াকে রেগে যেতে দেখে আকষ্মিক সামান্য হেসে ফেলল ইরাজ। বলল, “তুই যে এখন আমায় টিজ করলি? কেন আমি নামায পড়তে যেতে পারি না? সৃষ্টিকর্তা সব কেড়ে নিয়ে আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। যদিও, এত খুশি কতদিন সইবে ইরাজের কপালে, তা জানি না। তবে শুকরিয়া আদায় না করে যাই কোথায়? সঙ্গে আমার মেয়ের সুস্থতা কামনাও করে আসি এইসাথে।ʼʼ
মেঘালয়া বলে ওঠে, “মেয়ে কেন? ছেলেও হতে পারে। আর তাছাড়া ছেলে হলে আমি খুশি হব।ʼʼ
ইরাজ গম্ভীর হয়ে তাকাল। বলল, “তা কেন?ʼʼ
মেঘালয়ার মুখে মৃদূ মলিন হাসি ফুটে ওঠে, “আমার মেয়েও যদি আমার মতোই ভুল করে বসে জীবনে? ওর জীবনও নিশ্চয়ই আমার মতো দুর্বিসহ হয়ে উঠবে? ছেলেরা ভুল করে না। করলেও তাদের মেয়েদের মতো মূল্য দিতে হয় না। আর যদি এমন হয়, আম্মুর মতো আমিও…
ইরাজ থাবা দিয়ে ধরে মেঘালয়াকে। মেঘালয়া চমকে উঠে তাকায় ইরাজের দিকে। বিক্ষুব্ধ ইরাজকে দেখে ঢোক গিলল একটা। অশান্ত ইরাজ আচমকাই শান্ত নদীর মতো স্রোতহীন বহমান হয়ে উঠল যেন। মেঘালয়ার গালে হাত রাখল। নিভু স্বরে বলল, “ছেলে হলে হতে পারে না কি, সে ইরাজের মতো কোন এক মেঘকে ভালোবেসে ফেলার মতো ভুল করে বসল?ʼʼ
মেঘালয়া আস্তে করে ইরাজের বুকে মাথা রাখে। জড়ানো কণ্ঠে বলে, “আল্লাহর সিদ্ধান্তে খুশি আমি। জীবনের ওপর আর কোন অভিযোগ নেই আমার।ʼʼ
ইরাজ এক ঝটকায় নিজের অভিব্যাক্তি ও প্রসঙ্গ দুটোই বদলে ফেলে, “ভালোই পেকে গেছিস? নিয়মিত হরলিকস খাচ্ছিস নাকি? ক’দিন আগেও তো হাত ধরে রাস্তা পার করতাম। আজকাল আমায় তোর জ্ঞান নিতে হচ্ছে! সবই কপাল!ʼʼ
মেঘালয়া ইরাজকে মৃদূ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মুখ ভেঙ্চি কাটে। ইরাজ চট করে মেঘালয়ার মুখটা দু আঙুলে চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরাল। ঠোঁটের হাসি সরল না তার, ওভাবেই চিবিয়ে বলল, “তোর সাহস বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন?ʼʼ
মেঘালয়া দাঁত শক্ত করে কপাল জড়িয়ে তাকিয়ে আছে। ইরাজ আবার বলে, “এত সাহস কোথায় পাচ্ছিস? এদিকে তাকা, তুই তো খুব সাহসী হয়ে উঠেছিস, চোখে চোখ রাখ এবার।ʼʼ
মেঘালয়া ওভাবেই মুচকি হেসে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে চোখের দৃষ্টি নত করে ফেলল। ইরাজ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মেঘালয়া উঠে যেতে উদ্যেত হলে ইরাজ চেপে ধরল। বলল, “আমি বের করে নিচ্ছি, চাবি কোথায় রেখেছিস?ʼʼ
মেঘালয়া শুনল না। জোর করেই উঠতে যায়। ইরাজের মেজাজ বিগড়ে যায় নিমেষেই। মেঘালয়ার হাতটা চেপে ধরে টেনে বসায় মেঘালয়াকে। চোখ-মুখে ক্ষুব্ধ ভাব স্পষ্ট। মেঘালয়া অবাক হয়, ইরাজের এমন বহুরূপী আচরণে। এই একরকম তো চোখের পলকে পাল্টে অমানুষের পরিণত হয় ইরাজ। ইরাজ তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল, “তোকে নিষেধ করেছি না বেশি লাফালাফি করতে? আমায় কথায় মন লাগে না তোর? বলেছি সবসময় নিজের খেয়াল রেখে চলবি। খুব সাবধানে থাকবি। শরীরে একটু এদিক সেদিক যেন না হয়। আমার বাচ্চার কিছু হয়ে গেলে তোকে কি করব, আমি নিজেও জানি না।ʼʼ
মেঘালয়া বিষ্মিত নয়নে থমকে চমকে একাকার হয়ে চেয়ে রইল কেবল। সহসা ভেতরে একটা কথা খেলে গেল, তার কোন মূল্য নেই ইরাজের কাছে। সবটাই কী তাহলে বাচ্চার জন্য! মেঘালয়ার জন্য কিছুই না। আজও মেঘালয়া কেবল ইরাজের কাছে অপ্রয়োজনীয় এক ত্যাগকৃত বস্তু মাত্র! এ সময় একটু আধটু অসুস্থ তো সকলেই হয়। তাই বসে এত শ্বাসরোধী সাবধানতা কেন? আজকাল ইরাজের বহুমুখী আচরণে মেঘালয়া মাঝেমধ্যেই এই ধারণা করে বসে, ইরাজ মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। মানসিকতা সুস্থ নয় ইরাজের।
নিজেই ভাবনায় নিজেই পেচিয়ে যায় মেঘালয়া। ইরাজ কেন এমন অদ্ভুত! মাঝেমধ্যেই কি হয়ে যায় ইরাজের? এত এত রূপ দেখেছে ইরাজের সে প্রেগন্যান্সির পর থেকে। কখনও বিষন্ন, কখনও খুব আবেগী, কখনও পাগল, কখনও অমানুষের মতো বদমেজাজ আবার কখনও স্বাভাবিক ইরাজ। কী চলছে তার জীবনে? কী ঘটছে! সবকিছু ঠিক আছে? ইরাজ বেরিয়ে যায় নামাযের উদ্দেশ্যে। মেঘালয়া সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল একটা।
চলবে..
[কেউ বিরূপ মন্তব্য করবেন না🙃। ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।]