রং #পর্বঃ১৬ Tonni-Tonu

0
14

#রং
#পর্বঃ১৬
Tonni-Tonu

সকলের উদ্ধার কার্যক্রম শেষ। আরাফ এখনো ফিজিক্যালি এন্ড মেনটালি আনফিট।রিমা আর শুভ্র দু”জন ই মোটামুটি সুস্থ।শুভ্র”র ফোন থেকে যা যা তথ‍্য পাওয়া গেছে!তার আগে আপনারা কিছু বিষয় আগে জেনে নিন।

জুয়া খেলার এক অনন‍্য আসর হলো ক‍্যাসিনো। এটি একসময় ভুমি-ভিত্তিক ছিলো। এই ক‍্যাসিনো বার,হোটেল,রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশে করা হতো।একসময় মানুষ লাইভে সামনাসামনি টেবিল স্লট,কার্ডের মাধ‍্যেমে জুয়া খেলতেন। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির অপব‍্যবহার করে সেই ক‍্যাসিনো উঠে এসেছে স্মার্টফোনে। জুয়া এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। এর সবচেয়ে ভুক্তভোগী তরুণ সমাজ। তবে ছেলে,মেয়ে,বৃদ্ধরাও এসবে জড়িয়ে গেছে। পৃথিবীতে অনেক ধরণের ফাঁদ আছে। তবে মরণ ফাঁদের প্রথম স্থান দখল করে আছে অনলাইন জুয়া। আর এর মধ‍্যে ক্রিকেট বেটিং তরুণ সমাজে বেশী প্রভাব ভেলছে। যেহেতু ছেলেরা খেলা সম্পর্কে ভালো বোঝে। সুতরাং এটিকে কেন্দ্র করে তৈরী হয়েছে মানি লন্ডারিং। কতো শত টাকা পাঁচার হচ্ছে তার হিসেব নেই। তবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন তরুণ সমাজ। জুয়ায় হেরে টাকা উসুল করতে বারবার বা*জি ধরতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ক্রাইমের সাথে জড়িত হচ্ছে। জুয়া এক অকল্পনীয় মরণ ব‍্যাধি, এটি এমন এক জাল- একবার ঢুকবেন তো ধ্বংস নিশ্চিত। বাকি কথা আরেকদিন হবে…..

এই সমাজের সাদা-মাটা সৎ,সুন্দর, নম্রভদ্র আপনার ছেলেমেয়ে রাতের আধারে অথবা দিনের ফুটফুটে আলোতে হাতের মোবাইল ব‍্যবহার করে কখন যে ডুবে গেছে জুয়া নামক চোরাবালিতে।তা খালি চোখে দেখে বুঝতেও পারবেন না। বুঝবেন তখন! যখন হাবুডুবু খেতে থাকা ছেলেটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিবে অথবা কোনো ক্রাইম এ জড়াবে।তেমন-ই একটি গল্প হতে যাচ্ছে-আমাদের শুভ্র!কথায় বলে, “লাভ ইজ ব্লাইন্ড।” এই বাক‍্যেকে অনুসরণ করে আজ ভুক্তভোগী রিমা। তাই পুরো পৃথিবীর সকল মেয়েকে একটা ক্ষুদ্র সংকেত- ভালোবাসা ভালো! তবে অন্ধ ভালোবাসা কিন্তু ভালো নয়। পৃথিবী খুব জটিল সমীকরণ-টিকে থাকতে হলে আগে নিজেকে ভালোবাসুন। না হলে ভুগবেন,জ্বলবেন,পুড়বেন-কেউ কিন্তু দেখবে না।

ছোট্ট একটি টেস্টে-ই জানা গেছে রিমা প্রেগন‍্যান্ট! খোলা হয়েছে লুকিয়ে রাখা “শুভ্র-রিমা” নামক সম্পর্কের ময়লা মাখা ঝুলি। অসুস্থ শরীর! তার উপর কয়েক-শো থাপ্পর পড়েছে তার তার গালে। কখনো মা আর কখনো আত্মীয় স্বজন কেউ বাদ রাখেনি।

এদিকে ইরফাদ রিমা কবিরকে থানায় ডেকেছেন!
তিনি মনে করেন কিছু জিনিস স্ব-চোক্ষে দেখাতে হয়। না হলে এই যুগের মেয়েরা আবেগে বলে,””নাহ! এ আমি বিশ্বাস করি না!ও এমন করতেই পারে না! আমি নিজের চেয়েও ওকে বিশ্বাস করি” ঐ সকল মেয়েদের জন‍্য আজকের “রিমা-শুভ্র”। রিমাকে বসানো হয়েছে চেয়ারে। সামনের চেয়ারে শুভ্র। আর এসপি তো আছেন-ই। শুভ্র”র মাথা ভেঙ্গে পড়া গাছের মতো নেতিয়ে আছে।ইরফাদের বলিষ্ঠ হাতের চাপর টেবিলের উপর পরে।মাথা তুলে তাকায় শুভ্র। ইরফাদের চোখের ইশারা,” ইউর টাইম স্টার্টস নাউ।” শুভ্র”র ভেজা গলা,

— আমি খুব সাধারণ ঘরের ছেলে। বাবা জব করতেন। মা ছিলেন হাউজ ওয়াইফ। আমি যখন নবম- দশম শ্রেণির ছাত্র। আমার বোন বিদেশ সেটেল ছেলের সাথে সম্পর্ক করে বিয়ে হয়। তখন থেকেই বোন দেশের বাইরে। ছোট বেলা থেকেই ভদ্র ছেলে হিসেবেই আমাকে চিনতো। কিন্তু ভেতর থেকে মনে হয় কোনোদিন-ই ভদ্র ছিলাম না। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিলো আর পাঁচটা ছেলের মতোই। আমার একটা বাইক নেই,ভালো স্মার্ট ফোন নেই। সবার তো আছে তাই আমি বাবার কাছে আবদার করতাম। এই যুগে এসব ছাড়া চলে নাকি? কিন্তু স্বল্প আয় থাকায় হয়তো বাবা দিতে পারতেন না। আমি যখন আমার চাহিদা অনুযায়ী কিছুই পেতাম না-বিগ্রে যেতাম। বাসায় ভাঙচুর করতাম,ভাত খেতাম না, অশান্তি করতাম। তখন যদিও অশান্তি মনে হতো না!এখন বুঝতে পারছি-জীবনে কি করেছি। যখন ভার্সিটি লাইফ।আমার মনে হলো-আমার একটা আইফোন দরকার। অশান্ত,অবুঝ মন বাবার অবস্থা বুঝতে চাইতো না। আইফোন কোথা থেকে আসবে আমি জানি না।আমি জানি, আইফোন ছাড়া আমি ভাত খাবো না,বাড়ি ফিরবো না। একটা মাত্র ছেলে! মা-বাবা পেরে না উঠে মায়ের শেষ সম্বল বিক্রি করলেন। মা”এর শেষ অবলম্বন বিক্রির দামে আমার মুখের হাসি কিনলেন। তবে সে হাসি বেশী দিন স্থায়ী হলো না। আবার নতুন আবদার। সবাই বাইক”কে ভার্সিটি-তে যায়। আমার পায়ে হেটে লজ্জা লাগে। বাইক লাগবে-ই। বাবা অতিষ্ঠ হতেন!কখনো হতেন আবেগী।ছেলের আবদার পূরণ না করতে পেরে তিনিও নাকি ছটফট করতেন। সকালে মা বলতেন “তোর বাবা রাতে ঘুমাতে পারে না”। কিন্তু ঐসব কানে ঢুকতো না আমার। আমার চাই বাইক। বাবা রাজিও হলেন।পরে মা বললেন,গ্রামের একটুখানি ভিটে বিক্রি করে হলেও আমাকে বাইক কিনে দিবেন। আমি একটু শান্ত হলাম। পরের মাসে-ই বাবা স্ট্রোক করলেন। ভিটে-মাটির শেষ অংশটুকুও তার পেছনে খরচ হলো। বুঝে নিলাম আমার কোনো স্বপ্ন পূরণ হবে না আর। মনমরা হয়ে থাকতাম। একসময় আমার বন্ধু সজীব আমাকে অনলাইন বেটিং এর কথা জানালো। যেহেতু ছেলে হয়ে জন্মেছি। খেলাধুলা ভালোই বুঝতাম। সেদিন রাতে অন্ধকার জগতে পা রাখলাম। নিজের স্মার্ট-ফোনে জু*য়ার সাইটে একটি একাউন্ট খুলে নিলাম। প্রথমে কিছুদিন জিতলাম। অল্প টাকা হয়ে উঠলো লাখের কোঠায়। আমি তো ভেবেই নিলাম।জীবন একটা পেয়ে গেছি। স্বপ্ন পূরণের পথে আর কে বাঁধা দিবে। নেশায় ডুবে থাকতাম। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেশা হলো টাকার নেশা।ভয়াবহ নেশা। টাকা হলো,একটা পছন্দের বাইক হলো। আকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকলো। বা*জি ধরার অংক লাখের কোঠায় দাঁড়ালো। মনে হতো একলাখ টাকা বা*জি জিতলে হবে ডাবল। স্বপ্নের বাড়ি গাড়ি আমার হাতের মুঠোয়। কিন্তু সে সময় শুরু হলো অধঃপতন। লাখের কোঠায় আমি হাড়তে শুরু করলাম। যা টাকা ছিলো সব শেষ। পছন্দের বাইকটি বিক্রি করে আবারও খেললাম। ভাগ‍্য খারাপ! সব গেলো। এর পর শুরু হলো নেশা। মাথায় চাপতো-আর কিছু টাকা হলেই সব ফিরে আসবে। বন্ধু-বান্ধবের কাছে ধার নিয়ে খেলা শুরু করলাম। সুদিন আর আসলো না। দেনা বাড়লো। টেনশনে নিশাচরের মতো রাত জাগতাম। বোনের একটি স্বর্ণের চেইন চুরি করে বিক্রি করলাম। সেইটা দিয়ে আবার শুরু করলাম।আবার “লাক” কাজ করলো। ভেবেছিলাম টাকা বেশী হলেই বোনের চেইন ফিরিয়ে আনবো। ঋণ পরিশোধ করবো। টাকা ফিরলো। আবার মাথায় ভুত চাপলো! বাইকটা কিনেই খেলা ছেড়ে দিবো। সেদিন ছিলো বাংলাদেরশের ক্রিকেট খেলা। জু*য়ার সাইটে “odd” দিলো এক হাজারে দশ হাজার। তার মানে এক লাখে দশ লাখ। সব সমস‍্যার সমাধান এক খেলায়। তাছাড়া বাংলাদেশ আজ উইন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। ধরেই দেখি লাগলেও লেগে জেতে পারে। কিন্তু জেতা ম‍্যাচ হেরে শেষ সম্বল হারালাম। টাকা রি-কভার করার জন‍্যে এখানে ওখানে ঋণ নিলাম। বাড়তে থাকলো ঋণ। এখান থেকে টেনে ওখানে আর ওখান থেকে টেনে ওখানে দিতে দিতে জানে পানি থাকতো না। এভাবেই ঋণ দাঁড়ালো কয়েক লাখের কোঠায়। এর মধ‍্যে বাবা মারা গেলেন। মায়ের দায়িত্ব আমার উপর। আমি বেকার। বোন মান্থলি একটা এমাউন্ট পাঠাতো। মাথায় ঋনের বোঝা। এ ফোন দিয়ে বলে,”শুভ্র টাকা দেস না ক‍্যান? ও ফোন দিয়ে বলে,”আজ টাকা দেয়ার কথা ছিলো তোর! কেউ কেউ ভাষা খারাপ করতো। তাই বোনের পাঠানো টাকা দিয়েও খেলতাম।কিছু টাকা লাভ আসতো ঋণ দিতাম। ঋণের বোঝা,সংসারের দায়িত্ব আমি পাগল প্রায়। হন‍্যে হয়ে জব খুঁজি। দশ হাজার টাকা বেতনের জব করি। ঐটা দিয়ে সংসার চলে।বোনের টাকা দিয়ে খেলা চালিয়ে যাই। কিন্তু উঠে আর দাঁড়াতে পারিনা। কিছু মানুষ টাকা না পেয়ে মা-কে সব বলে। সকলের প্রেশারে প্রেশারে আমি ঐখান থেকে মা-কে নিয়ে পালিয়ে আসি। বোনের শ্বশুরবাড়ি দেখাশোনা করতাম। ফ্রিতে থাকতাম। জব করে যা পেতাম তা দিয়ে চলে যেতো। কিন্তু ঋণ আমাকে বাঁচতে দিচ্ছিলো না। বন্ধুরা ফোন দিয়ে গালি দিত। বাবা-মা তুলেও কথা বলতো। আমি সময় চাইতাম। আমার সময় দরকার।কেউ সময় দিতো না। জু*য়া”র শিকর আমাকে ঠিকই জড়িয়ে নিচ্ছিলো। ঋণ শোধ এর প্রেশারে বারবার এই মরণ খেলায় মেতে উঠতাম। দশ টাকা পেতাম আর হাজার টাকা হারাতাম। বোনের বাসায় বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রতি মাসেই আসতো। তারা পার্টি করতো। অনেক লোকজন আসতো।আমার মা*য়ের জায়গা হতো রান্নাঘর অথবা স্টোর রুম। আমি পুরুষ এক দুই রাত রাস্তায় কাটানো ব‍্যাপার না। মা শোকে শোকেই পৃথিবী ছাড়লেন। আমি জু*য়া থেকে বেরিয়ে আসতে চাইতাম। একদিন রাতে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বললো- দশ দিনের মধ‍্যে টাকা না দিলে কেস করবে। অথবা সবাই-কে জানিয়ে দিবে। আমার মাথায় আ*ত্ম*হত্যা*র চিন্তা আসতো। এমন সময় গিয়েছে একটানা একমাস একবেলা খেয়েছি। কিছুদিন তাও পাইনি। একটা রাত ঘুমাতে পারতাম না। ঐসময়ে ছবি আঁকতাম। ছবি আঁকা একদিন প্রফেশন হয়ে দাঁড়ালো। তবে তা দিয়ে যা পেতাম তা দিয়েও আমার চললেও ঋণ তো দিতে পারতাম না।একদিন বিকেলে দুলাভাই ফোন দিলেন। বললেন তিন মাস পর তারা বাসায় আসবেন। বাসা রঙ সহ ডেকোরেশন, সকল ফার্ণিচার চেঞ্জ করার জন‍্যে দশ লাখ টাকা পাঠালেন। ঐ সময় আমি ঋণের চাপে, বন্ধুদের কথার প্রেশারে মাথা নষ্ট হয়ে যায় আমার।সেদিন দুলাভাই এর রেখে যাওয়া বাইক’এ করে ওদের টাকা পরিশোধ করতে যাই। আটলাখ সবাইকে দিয়ে- ফেরার পথে আমি এক্সিডেন্ট করি। বাকি টাকা ট্রিটমেন্টে খরচ হয়। রিমা” আমার জন‍্যে যে পঞ্চাশ হাজার দিয়েছিলো ঐটাও ব‍্যাক দিতে পারিনা। তিন মাস পর বোনের ফ‍্যামিলি আসার কথা। টেনশনে টেনশনে আমার একাত্তর কেজি ওয়েট নেমে আসে একান্নতে। পরে একটা কারণে দুলাভাই আর দেশে আসে না। আমি একটু শ্বাস নিতে পারি। তবে বাকি ছোট খাটো ঋণ গুলো শোধের জন‍্যে প্রেশার আসে। রিমা এর মধ‍্যে অনেকবার নিজের জমানো টাকা আমাকে দিয়েছে।”

রিমার চোখের মধ‍্যে শিরাগুলোতে রক্ত উঠে আসছে।সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টিউশন করে যে টাকাগুলো শুভ্র”র বিপদ জেনে দিয়ে এসেছে। নিজের শখ পূরণের টাকা শুভ্রকে দিয়ে এসেছে। কোনোদিন কাউকে বলেনি।যে মানুষটা”কে নিঃস্বার্থে ভালোবেসে গেলো। সে নিঃশব্দে তাকে ঠকিয়ে গেলো? একবারও সত‍্যি বললো না?

শুভ্র খানিকটা দম নেয়। তারপর বলে,” রিমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা,পবিত্রতা,শুদ্ধতা দেখে আমি সত্যিই ভালো না বেসে থাকতে পারিনি।সেদিন প্রথম বারের মতো আমি ভালো হতে চেয়েছি। লুকানো পাপ আমি লুকিয়ে কবর দিতে চেয়েছি। তবে জু*য়ার শেকল এতো মজবুত। যাকে একবার বাঁধে সে মনে হয় আর ফিরতে পারে না। দুলাভাই প্রতিদিন ফোন দিত। বাসা ডেকোরেশন এর কি অবস্থা কতো দূর জানতে চাইতো। সব মিলিয়ে পাগল হয়ে যেতাম। ইনকাম করে যা পেতাম তা দিয়ে আবার খেলতাম। যদি টাকাগুলো পরিশোধ করা যায়। হতো না। আরও ঋণ বাড়তো। ঐসময়ে আরাফ ভাই একদিন ফোন দিলো।সে আমার এলাকার বড় ভাই। আমাকে একদিন বললো,” শুভ্র তুমি একটা হেল্প করতে পারবে?” সে জানালো কয়েকটা ট‍্যাটু করে দিতে হবে। বিনিময়ে টাকা পাবো। আমার তো টাকার প্রয়োজন। গিয়ে দেখলাম -কয়েকটি মেয়ে! ঘুমন্ত নাকি মৃত আমি সিউর না। আমার টাকার দরকার তাই আমি ট‍্যাটু এঁকে দিয়েছিলাম। পরের দিন জানলাম মেয়েগুলোকে মার্ডার করা হয়েছে। এরপর আরাফ ভাই আমাকে নানা ভাবে হুমকি দিত।আমি যেনো মুখ না খুলি।এরপর আরেকটা ব্ল‍্যাকমেইল করলো- এক দুই দিনের জন‍্যে আমার বোনের বাসাটা তাদের দরকার।আমিও যেনো বাসায় থাকি। আমার সাহায্য দরকার। আমাকে কয়েকটি দোকান থেকে ইঞ্জেকশন ও কিনিয়েছিলো। বিনিময়ে বলেছিলো আমাকে মোটা অংকের টাকা দিবে। সব কিছু থেকে বেরিয়ে আসার জন‍্যে টাকা তো সত‍্যিই দরকার। তাই একটা শেষ রিস্ক নিলাম। শেষ রিস্কে জীবন শেষ হলো।আমার গল্পের সমাপ্তি”ও হলো!

——

নিজের রুমে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিমা! শুভ্র-রিমার জার্নি আরেকবার স্মৃতিচারণ করে। জীবন কখনো কখনো এমন জায়গায় মোর নেয় তখন কিছু প্রকাশ করার ভাষা থাকে না। শুধু মনে হয় সব দুঃস্বপ্ন হয়ে যাক। কালো মেঘ কেটে ঝকঝকে আকাশের মতো জীবন হোক। তাই কি হয়? হাতে ধরে যে দুঃখ সে জীবনে এনেছে তার তো ফল ভোগ করতেই হবে। ঠিক সে সময়েই তার মা আসে। তার মায়ের দৃষ্টিতে রিমা এখন বি*ষ! কথা দিয়ে পুড়িয়ে মারছে তাকে। রিমার মা রাজিয়া বেগম একটা জামা রিমার দিকে ছুড়ে বলেন,,

— রেডি হ…

রিমা ফিরে তাকায়। সে তো বোবা হয়েছে সেই কালকেই। তবুও চোখের ভাষা বলে,”কেনো?”

রাজিয়া বেগম তীব্র ঝাঝালো গলায় বলেন,

— জামা ধরোস না ক‍্যান! প‍ে*ট বাজাইয়া আইছোস। মানুষ আমারে দেখে থু থু ফালায়।সবাই বলে,”তোর বাপ না থাকায় নাকি-পর পুরুষ আমি তোর ঘরে পাঠাইছি।” দুইদিন পর আমার খবরও নাকি বের হবে।এই সব বলাবলি করছে। এখন হাসপাতালে গিয়ে আমারে উদ্ধার কর!

–আমি ভালো আছি মা। হাসপাতালে যেতে হবে না।

–তুই মর! পাপের ফল নষ্ট করে আমারে উদ্ধার কর!

–কি বলছো মা! এই বাচ্চা কি অন‍্যায় করেছে? ও তো অ*বৈধ না। আমরা তো বিয়ে করেছিলাম!

–তোরে কি সারাজীবণ ঘরের খাম্বা বানাই রাখমু। বিয়ে দিতে হবে না? তোর এই বাচ্চা কে মানুষ করবো?

— আমার জীবন থাকতে ওর কিচ্ছু হতে দিবো না মা!

— সে তোর যা ইচ্ছে কর। পাঁচ মিনিট পর বের হবো…রেডি হ…

–আমি যাবো না কোথাও….

রিমার বলা শেষ না হতেই, রাজিয়া বেগম স্টিলের স্কেল হাতে তুলে নেয়। জায়গা বেজায়গা না দেখে বেধড়ক মার মারে রিমা কে। রিমা এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সাথে সাথে কলিং বেল বেজে ওঠে। দরজা ভেজিয়ে রাখা দেখে তিথি বাসায় ঢোকে। চোখাচোখি হয় তিথি আর রাজিয়া বেগম। নিচে নিস্তেজ শরীরে শুয়ে আছে রিমা। তিথির বুকের মধ‍্যে ধুকপুক করে ওঠে। এ কেমন মা…! চোখ মুখে রাগ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।যেনো মেয়ে মরলে তিনি বাঁচেন!তিথি তড়িঘড়ি করে কাছে যায় রিমার। মাথাটুকু কোলের মধ‍্যে তুলে গালের পাশে হাত দিয়ে ডাকে,

— রিমা! এই রিমা!

ঠিক তখন ই তিথির ফোন টুং টুং করে ওঠে। এসপি”র নম্বরে দেয়া মেসেজের রিপ্লাই,

“কে গো তুমি সুহাসিনী! কিসের এতো দুঃখ তোমার? সেদিন তোমার দেয়া মেসেজের শব্দগুলো আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না! বলোনা কিসের দুঃখ এতো???”

ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে তিথির কপাল কুচকে আসে। এমন উত্তর সে কল্পনাও করেনি।
_____

ইরফাদ সিনথিয়া মুখোমুখি। মাঝখানে টেবিল। ইরফাদের সেই ধীর শান্ত গলা।

— কালকেই তোমার ছুটি!নাউ স্মাইল!

সিনথিয়া অবাক চোখে তাকায়। “এতোদ্রুত ব‍্যবস্থা হবে? কিন্তু কিভাবে?” কিন্তু মুখে কিছুই বলে না। ইরফাদ খানিকটা সময় পর আবার বলে,

— তারপর বলো চিঠি কে দিলো?

চিঠি”র কথাটা এতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলায় সিনথিয়া অবাক না হয়ে পারে না। এতোকিছু মানুষটা কিভাবে বের করে? কিন্তু তার সব সত‍্যি বলার সময় হয়েছে….আজ তাকে সব বলতেই হবে।

চলবে???

তিথির ফোনের মেসেজ কি এসপি”-ই দিলো?? সিনথিয়া কি আদও সত‍্যি বলবে?

নোটবার্তাঃ সকল পর্বে ধামাকা কিছু থাকবে এমন নয়। আর তিথির ফোনের মেসেজ নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। বিভ্রান্ত হলেই অনেক কিছু জানতে পারবেন না। নিজে বিভ্রান্ত হবেন না। অন‍্যকে বিভ্রান্ত করবেননা। গঠন মূলক আলোচনা করবেন।আর যেটা না বললেই নয়…. রানিং গল্প পড়তে ধৈর্য্য ধরতেই হবে। অনেকে ছয় মাস সময় ধরে লিখে। এর চেয়েও অনিয়মিত গল্প দেয়। আমি তো চেষ্টা করি তাড়াতাড়ি দেওয়ার।চাপ নিয়ে লিখলেই গল্পের অনেক জট খুলবে না। গল্প অসম্পূর্ণ থাকবে। ভালো কিছু পেতে হলে আমাকে সময় দিতেই হবে।আশা করি সবাই বুঝবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here