পর্বঃ১৪ #রং(wrong) Tonni-Tonu

0
10

#পর্বঃ১৪
#রং(wrong)
Tonni-Tonu

খোলা ছাদ, দূরে থেকে ভেসে আসা দমকা হাওয়া শো শো করে কানে বাজছে।ঐতো আলো দেখা যায় মাঠ পেরিয়ে বহুদূরে। তবে যতো নিকট ততো শুধু ঝাপসা।পুরো ছাদ জুরে একটি তারহীন হলদে আলো জ্বলছে। আলো ঝাপসা হয়ে আসছে ক্রমেই। খোলা ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে দুজন। একজন রিভলবার তাক করে আছে। অপরজন রিভলভার নিজের হাতে টেনে হৃদপিণ্ডের উপর ধরে আছে। দুজনের মধ‍্যে পিনপতন নিরবতা। মায়াবীনি হরিণী চোখে যতো কোমলতাই থাকুক-সে ভাষা হয়তো কোনো কঠিন হৃদয়ের মানুষ পড়তে পারবে না। মন বোঝা কি এতো সহজ? সবাই মন বোঝে?এসব অভিনয়!সে তো ধরেই নিয়েছিলো এসপি” কতো সহানুভূতি দেখাচ্ছে,কতো নরম কতো কোমল।আসলে মানুষকে বিশ্বাস করাই ভুল!এক গুচ্ছ কথা, সীমাহীন ব‍্যাথা সিনথিয়ার চোখে যেনো স্বচ্ছ পানির রুপে থৈথৈ করে। তবে সে জানে “এ চোখের জল নিজের কাছে একসমুদ্র দুঃখ,ব‍্যাথা, যন্ত্রণার এক অপ্রকাশিত উপন‍্যাস আর অপরের কাছে দু’ফোটা স্বচ্ছ পানি অথবা সস্তা গল্প।” নিজের দুঃখ কখনো অন‍্যকে স্পর্শ করে না। কেউ দুঃখের ভাগ ও নেয় না। তবে অনেকেই গল্প শুনতে মরিয়া হয়।শোনার পর আহারে বলেই হারিয়ে যায়।তাই এই মূহুর্তে সিনথিয়ার মন থেকে কিছু বলার নেই। সে শুধু শাস্তি চায়। খানিকটা সময় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সিনথিয়া বলে,

— “শ‍্যুট মি!”

ইরফাদ সিনথিয়ার মায়াবী,ভেজা চোখ দুটো”তে প্রথম বারের মতো সরাসরি একটানা অনেকটা সময় নিয়ে তাকায়। তার তীক্ষ্ম চোখ কি মানুষ চিনতে ভুল করতে পারে,অবশ‍্যেই না! সে জানে তার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি কেবল হিংস্র জানোয়ারের জাল ফেলার একমাত্র হাতিয়ার। সে তো একারণেই সব জেনে বুঝে-সামনে দাঁড়ানো মেয়েটিকে অনেকটা সময় দিল। প্রয়োজনে কোমল হলো,বন্ধু সুলভ আচরণ করলো।যাতে সিনথিয়া স্বেচ্ছায় সব খুলে বলে। কিন্তু মেয়েটি এতোই সরল আর এতো-ই আবেগী। এত কষ্ট সয়েও সত‍্যিটা বললো না। সত‍্যি বললে কি আর এই নাটক তাকে সাজাতে হতো? এতো দুঃখ তো তাকে দিত না! ইরফাদ এর গলায় সেই আগের শীতল সুর। যা পুরো হৃদয়কে বরফ শীতল করে দিতে পারে। ইরফাদ আরও কিছু পেপারস খুলে দেখায়।তারপর ধীর গলায় বলে,

–সব বললেই তো হয়!নিজেকে কেনো কষ্ট দিচ্ছো তুমি!

–কি বলবো?

— তোমাকে এডপ্ট করা হয়েছিলো! আমাকে বলোনি। তুমি মার্সাল আর্ট জানো আমাকে বলোনি! তুমি একজন এ‍্যাপ ডেভোলপার। তুমি কিচ্ছু বলোনি সিনথি……

সিনথিয়া পাথরের মূর্তির ন‍্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। যেনো পৃথিবীর কোনো শব্দ,কোনো কিছু তাকে স্পর্শ করে না। ইরফাদ রিভলবার সরায়।এটা তাক করা শুধু মাত্র একটু ভয় দেখানোর জন‍্যে। আসলে এই সত‍্যি ভয় দেখিয়ে বের হবে না।ইরফাদকে এর চেয়েও কোমল হতে হবে। যাতে সিনথিয়া ভরসা করতে পারে। ইরফাদ এক’পা এগিয়ে দাঁড়ায়। নিজের বলিষ্ঠ কঠিন হাত আবারও কোমল করে সিনথিয়ার মাথায় রাখে,

— ট্রাস্ট মি! আমি সব ঠিক করে দিবো।

সিনথিয়া চোখ উল্টিয়ে ভরসার হাতটা টলমল ঝাপসা চোখে দেখে। সে দীর্ঘ-শ্বাস টেনে নেয়। ফুপিয়ে উঠে। কিন্তু কিচ্ছু বলে না। ইরফাদ ধীর শান্ত বরফ শীতল গলায় আবার আশ্বস্ত করে,

–কিছু অনুভূতি প্রকাশ না করলে তুমি বাঁচতে পারবে না সিনথি! …

সিনথিয়া লম্বা শ্বাস টেনে বলে,
–“আমি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই জানতাম আমি বাবা-মায়ের অতি আদরের সন্তান। চাওয়ার আগে সব পেয়ে যেতাম।এভাবেই বড় হয়ে ওঠা।আমি তখন ক্লাস সেভেন’এ পড়ি! আমার টিউটর ছিলো আমার কাজিন।খুব ভালো ছেলে। রুপে,গুণে সকলের চোখের মণি।আমরা পাশাপাশি ফ্ল‍্যাটে থাকতাম। ভাইয়া রাতে পড়াতে আসতো। আমিও খুব উৎসাহ নিয়ে পড়তে বসতাম। খুব ফ্রেন্ডলি ছিলো ভাইয়া। সবার মতো আমার কাছেও সে ভিষণ প্রিয়।সে প্রথম বারের মতো আমাকে জানালো আমি বাবা-মা”র কেউ না। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। পরে সকল ডকুমেন্ট দেখে বাধ‍্য হলাম। সে আমাকে এটাই বোঝালো আমি এই বাসার কেউ না। আমার বাবা-মা” নিঃসন্তান ছিলো বিধায় আমাকে আনা। এর পর আমার ভাই “মুগ্ধ” হয়েছে।কিন্তু তারা আমাকে ফেলে দিতে পারে না। তাই অমনি রেখে দিয়েছে।এর পর থেকে বাবা-মা এর ভালোবাসা খাদ না থাকার পরও আমার চোখে মনে হতো হয়তো সত‍্যিই ভালোবাসেনা। নিজেকে নিজের মধ‍্যে গুটিয়ে নিতে থাকলাম,চুপচাপ হয়ে গেলাম,আলাদা হয়ে গেলাম। সেদিন রাত সাতটা আম্মু-বাবা একটা কাজে বাইরে গেলেন। মুগ্ধ ঘুমিয়ে ছিলো তাই রেখে গেলেন। মুগ্ধ তখন চার পাঁচ বছরের হবে। একটু পর জিসান ভাইয়া এলো বাসায়। আমি প্রতিদিনের মতো পড়তে বসে গেলাম। ভাইয়া আমার হাত ধরলো। আমি কিছু বুঝতে পারলা না।আমি হাত টেনে সরিয়ে নিলাম। তার চাহুনী সেদিন আমাকে শীতের মধ‍্যেও ঘামিয়ে তুলছিলো। সবটা না বুঝলেও কিছুতো বুঝি! আমি না পারছি চলে যেতে আর না পারছি বসে থাকতে। বাসায় কেউ নেই। ছুটে কতোদূর যাবো? আমার গলা ধরে আসে।কথা বলার যে একটা শক্তি আমি পুরো হারিয়ে ফেলি। তবে মৃত‍্যুর আগেও মানুষ বাঁচার চেষ্টা করে। আমি শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার দিতে চেয়েছিলাম। সে চিৎকার বাঁধা পড়লো তার লৌহশক্ত হাতের চাপায়। আমি দমে গেলাম না। হাত পা ছোড়াছুড়ি করলাম। সে আমার গলায় পেঁচানো ছোট্ট ওড়না আমার মুখে ঠেলে দিলো। হাত পা বেঁধে বিছানায় ছুড়ে মারলো। আমি প্রাণপণে আল্লাহ”কে ডাকি।আমি ভয়ে আধমরা তখন। জীবনের এমন ভয়ানক পরিস্থিতির স্বীকার হওয়া মেয়েটি প্রথম বারের মতো অনুভব করলো “ব‍্যাড টাচ” কি! সে আমাকে পর পর তিনটে জায়গায় তার জ্বলন্ত নোংরা ওষ্ঠের স্পর্শ দেয়। একটা ঘারে, একটা গলায় আর একটা হৃদয়ের উপর।এরপর কলিং বেল বাজে। সে আমার হাত পায়ের বাঁধন খোলে। আর বলে, এসব যদি বলি তাহলে কেউ বিশ্বাস করবে না।কেউ না। এতে আমি উল্টো বাবা-মা আর নিজের জায়গা হারাবো। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো। কেউ জায়গা দিবে না। সেদিন আমি প্রথমবারের মতো সব চেপে যাই।ঐ রাতে যন্ত্রণায় ঐ অবুঝ সিনথিয়া দু”চোখের পাতা এক করতে পারেনি। শুধু নিঃশব্দে কাঁদে।

এরপরও সুযোগের ব‍্যবহার জিসান বরাবর করার চেষ্টা করে। আমি অসংখ্য বার আম্মু’কে বলতে যেয়েও পারিনি। বাবা’কে বলতে পারিনি। নিজের ঘরেই নিজেই অসহায়ত্ত্ব, আর অসহনীয় যন্ত্রণায় ভুগতে থাকি। চোখের নিচে কালি জমে,ক্লাসে মনোযোগ নেই, পৃথিবীর কোনো কিছুতে মন দিতে পারিনা। পরে একদিন ফ্রেন্ডদের সাথে সব শেয়ার করি। ওরা আমাকে বলে – আমি যেনো একবার মা”কে বলে দেখি। আমি বাসায় এসে মা”য়ের পিছনে ঘুরঘুর করি। আম্মু জিগ্যেস করে,কিছু বলবি! আমি পুরো বিষয়টা খুলে বলি। আম্মু পুরো আকাশ থেকে পড়ে। এই বিষয়’টি আম্মু চাচিকে জানায়। চাচী-আর ভাইয়া মিলে আম্মুকে একটা চিঠি দেয়। সেখানে লেখা “আমি তোমাকে ভালোবাসি।” ভাইয়া আম্মুকে বুঝায় আমি চিঠি ভাইয়াকে দিয়েছি।ভাইয়া রাজি হয়নি বলে আমি- ঐসব বানিয়ে বলছি। আম্মু সেদিন প্রথমবারের মতো আমাকে মারে। চিঠি” আমার হাতের লেখা ছিলো। একবার পড়ানোর ফাঁকে ভাইয়া একটা ট্রান্সলেশন করতে দিয়েছিলো।ঐ সেন্টেন্স দেখে পরে মনে পড়লো।উপরের অংশ টুকু ছিড়ে ফেলা হয়েছে। আমি ফেঁসে গেলাম। বাবার কাছে ছোট হলাম। এভাবেই চলছিলো। ভাইয়া কিছু দিনের জন‍্যে আসা বন্ধ দিলো। যেহেতু তাদের সকলের মতে ভাইয়ার কোনো দোষ নেই তাই আম্মু তাকে বাবা সোনা বলে আবার নিয়ে আসলো। আমার ভয়ের দিন শুরু। তবে বেঁকে বসলাম তার কাছে আমি আর পড়বো না। মরে গেলেও না। কেউ অবশ‍্য জোড় করলো না।তবে ভাইয়ার আসা যাওয়া চলাকালীন আমি ইনসিকিউর ফিল করতাম। ঠিক ঐ সময়ে টিভিতে একবার আত্মরক্ষার জন‍্যে মার্সাল আর্ট এর কথা জানলাম।বাবার কাছে আবদার করলাম মার্সাল আর্ট-এ ভর্তি হবো।বাবা কেন যেন না করলেন না।তবে মা বেঁকে বসলেন। কিন্তু একদিন বাবা আমার স্কুলে গেলেন। সেখান থেকে চুপ করে আমাকে ভর্তি মার্সাল আর্ট একাডেমিতে ভর্তি করে দিলেন।শুরু হলো আমার নতুন যাত্রা।

এইটুকু বলেই সিনথিয়া উল্টো ঘোরে।নিজের জামার পেছনের জিপার টেনে নিচু করে। ইরফাদ তখন হাতের ভাজে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো মাটিতে নিবদ্ধ। পেছন ঘুরে সিনথিয়া বলে,

— “সেদিন ছিলো আমার জীবনের স্মরণীয় দিন। কেউ বাসায় নেই। আমাকে চাচির কাছে রেখে যায় আম্মু।ভাইয়া সেদিন ঢাকার বাইরে। আমিও থেকে যাই নিশ্চিন্তে। আমি বিকেলে ঘুম।চাচি বিকেল বেলা ছাদে যায়।হঠাৎ অনুভব করি আমার পিঠে শুরশুরি লাগছে। আমি ঘুমে পাথর। যেনো বাকি পৃথিবীকে অগ্রায‍্য করে আরেকটু ঘুমাই। হঠাৎ আগের ভয়টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ঘুম ছুটে যায়।লাফিয়ে উঠে বসি। আমি “স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ” বিছানার উপর ভাইয়া। আমি চেচিয়ে ওঠার আগেই তার হাতের আড়ালে আমার মুখ। নিজের ওড়নাটা আবারও আমার মুখের মধ‍্যে ঠেলে দেয়। তার শক্তির সাথে আমি কূল পাই না। মার্সাল আর্টের আত্ম রক্ষার কৌশল আমি প্রয়োগ করি। সে আমার উপর থেকে দুহাত পিছিয়ে যায়। কিন্তু আবারও উঠে আমাকে উল্টো ঘুড়িয়ে রাগে, ক্ষোভে আমার পিঠে ছয়টা কামড় দেয়। সেটা মনে হয় মানুষের দেয়া আঘাত নয়। প্রতিটা দাঁত আমার পিঠকে রক্তাক্ত করে। পিঠের মাংস ভেদ করে ক‍্যানাইন দাঁতগুলো ঢুকে যায়। আমার পিঠের অবস্থা দেখলে বুঝবেন”।ইরফাদ তাকায় না। সিনথিয়া পিছু ফিরে তাকায়। পেছনের মানুষটি চোখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে। সিনথিয়া ভেজা গলায় বলে,

— “দেখুননা!কিছু আঘাত দেখতে হয়। পৃথিবীতে কত মানুষের কত দুঃখ যে হাসি মুখের আড়ালে থাকে এইটা দেখেই বুঝবেন।”

ইরফাদ একহাত দূরে দাড়ানো। সিনথিয়ার বলার পর চোখ তুলে তাকায়। পিঠ জুড়ে গোল গোল হওয়া কামড়ের দাগ। দাঁত গুলো যেনো পিঠ ফুটো করে দিয়ে গেছে। ইরফাদের চোখে রক্ত উঠে যায়। সিনথিয়া ঘুড়ে দাঁড়ায়। তারপর আবার অশ্রুশিক্ত নয়নে বলে,

— সর্বশক্তি দিয়ে প্র‍্যাকটিস এর বাস্তবায়ন করি সেদিন প্রথম। আমার ভেতরের যতো শক্তি ছিলো-ওর উপর প্রয়োগ করি।মারতে মারতে সেদিন আধমরা করি।পরে জ্ঞান হারায়। আমি সেদিন প্রথম বাবা”কে আমার পিঠটা দেখাই। আমি যদি মিথ‍্যা বলি এই জানোয়ারের মতো কামড় কে দিলো?আমি কি আমার পিছনে কামড়াতে পারি? বাবা সেদিন কেঁদেছিলো। কিন্তু এরপরও আমি ন‍্যায় বিচার পেলাম না। ভাই ভাই সম্পর্ক রক্ষার্তে তারা এই পুরো বিষয় ধামা চাপা দিলো। আমি শুধু প্রতিরাতে যন্ত্রণায় পুড়তাম। এই হলো জীবন। পুরুষ নামক শব্দটায় ঘৃণা জমলো। কারো সাথে কথা বলতাম না। বাইরে যেতাম না।এভাবেই চলছিলো। একসময় রাফি এলো। রাফি ওর বোনকে কলেজে দিতে আসতো। ঐখানে আমাকে দেখেছিলো। কত বিশ্বাস কতো ভরসার জায়গা সে নিজে তৈরী করলো। আমি তবুও বিশ্বাস করলাম না। বন্ধুরা বোঝালো সব ছেলেই এক নয়। বন্ধুত্ব করলে তো দোষের কিছু নয়। মেনে নিলাম। কাছ থেকে দেখলাম ছেলেটা সত‍্যিই ভালো।তাকে আমার সমস্ত পাস্ট খুলে বললাম- সে মেনে নিলো। আমিও মেনে নিলাম। শর্ত ছিলো বিয়ের আগে কোনো দিন স্পর্শ করতে পারবে না। রাফি মেনে নিয়েছিলো। দুই বছরের সম্পর্কে ও ওর কথা রেখেছে। কখনো স্পর্শ করেনি। তবে একদিন খুব অসুস্থ থাকায় চোখের পাতায় ওর ওষ্ঠের স্পর্শ পেয়েছিলাম। মিথ‍্যা বলবো না-তখন ভালো লেগেছিলো। এরপর দেখুন! ভাগ‍্যের নির্মম পরিহাসে তার কাছে আবার ঠকে গেলাম। বিশ্বাস শব্দটাই হারিয়ে গেছে জীবন থেকে…..

— হারায়নি! হারালে পুরুষের কাছে ঠকে যাওয়া গল্পের চিহ্ন তুমি অন‍্য পুরুষ”কে দেখাতে না!

— আপনি মনে হয় কাপুরুষদের সাথে সুপুরুষের তুলনা করলেন।

— তারপর বলো! নিজেকে প্রোটেক্ট করার শক্তি থাকার পরও আমাকে কেনো কল দিলে?

সিনথিয়া দম নিয়ে বললো,

–“ঐ দিন…….” এইটুকু বলার পর ইরফাদের ফোনটা কেঁপে উঠলো। এক হাতে সিনথিয়া”কে থামতে বলে ইরফাদ। ফোনের ওপাশে জাবির বলে,

— স‍্যার! প্রফেশনাল সকল আর্টিস্ট দের মধ‍্যে একজনকে সন্দেহ করা যায়। সে গত সপ্তাহ”তে দোকান থেকে অনেক গুলো ঘুমের ইঞ্জেকশন কিনেছে। সকল ইনফরমেশন নেয়া শেষ। লোকেশন ট্র‍্যাক করা হয়েছে। আমাদের ইমিডিয়েটলি যাওয়া প্রয়োজন।

–কিন্তু সিনথিয়া!

— স‍্যার! মিস সিনথিয়া”কে রেখে আসতে অনেক সময়ের ব‍্যাপার। আমাদের হাতে সময় নেই। আপনি ওনাকে নিয়ে চলে আসুন।

–ওকে….

ইরফাদ ফোন রাখে। তড়িঘড়ি করে সিনথিয়া”কে বলে,

–বাকি কথা পরে শুনবো। আমাদের যেতে হবে…

সিনথিয়া নিজের পেছনের জিপার টেনে তোলার চেষ্টা করে। ইরফাদ লম্বা পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সিনথিয়া দোটানায় পরে যায়। এই রকম উন্মুক্ত পিঠ নিয়ে হয়তো গাড়ি অবধি যেতে পারবে। বাকি পথ? তবুও পেছনে জিপার টানে আর এলোমেলো পায়ে এগিয়ে যায়। ইরফাদ খানিকটা এগিয়ে গিয়ে পাশে সিনথিয়াকে না দেখে পিছন ফিরে তাকায়। সে অনেকটা পেছনে। ইরফাদ তাড়া দেয়,

–হারি আপ!

সিনথিয়া তখন অপ্রস্তুত। জিপার ছেড়ে দৌড়ে ইরফাদের পাশাপাশি হয়। ইরফাদের পায়ের সাথে দৌড়ে ছুটে চলে।গাড়ির দরজা খুলে দেয় ইরফাদ। সিনথিয়া গাড়িতে উঠার জন‍্য এক পা দেয়। তখন-ই ইরফাদের চোখে পড়ে উন্মুক্ত পিঠের সেই ক্ষতের চিহ্ন গুলো। চোখের সামনে সিনথিয়ার বলা কথা গুলো ভেসে ওঠে। কেমন যেন অশান্ত লাগে। ইরফাদ শীতল গলায় বলে,

–ওয়েট!

সিনথিয়া পিছু ফেরে। জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ইরফাদ চোখের ইশারায় বলে সামনের দিকে ঘুরতে। সিনথিয়া ইরফাদের সামনে ঘুরে দাঁড়ায়। ইরফাদ বলিষ্ট হাতে টেনে আনে জামার দুপ্রান্ত। মাঝখানের জিপার টেনে তুলে ঢেকে দেয় পুরোনো যন্ত্রণার ইতিহাস!

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here