#রং( Wrong(
#পর্বঃ১০
#লেখনিতেঃ_তন্নী_তনু
–আর জিপার কে লাগাবে!
–জিপার লাগানোর কি দরকার!ঐ মেয়ে কি ভাবলো না ভাবলো তাতে তোমার কি? আর না হলে একটু লাগিয়ে দাও!সে ধন্য হয়ে যাবে সিউর। নাকি পারবে না?তোমার মতো এত বড় পুলিশ অফিসার আর ঐটুকু জিপার লাগানোর ক্ষমতা নাই?
–আজ যদি জিপার আমাকে লাগাতেই হয়। আল্লাহ”র কসম করে বলছি! আমি ওকে বিয়ে করে তবেই বাড়ি ফিরবো।
–ইরফাদ!এমন বোলোনা। আমি এখন-ই আসছি। প্লিজ গাড়ি থামাও। প্লিজ……
— তোর আসার আগে যদি ওর ঘুম ভাঙ্গে- তাহলেও বিয়ে করে বাড়ি ফিরবো।
–এতো নির্দয় হয়োনা প্লিজ…… আমি আসছি তো! এক্ষুনি আসছি!
— তুই আগে কান ধরে তওবা পাঠ কর!বল এমন ভুল কোনো দিন করবো না!
সুভা সাথে সাথে তওবা পড়ে। তারপর বলে,
— আর কোনো দিন এমন ভুল হবে না।
ইরফাদ বলে,
–থাক এতো রাতে আসতে হবে না! আমি আসছি….
__
ইরফাদ রিস্ক নিয়ে গাড়ি চালায়। সিনথিয়া ঢুলে পড়ছে বার বার। তবুও একটানে পূর্বের জায়গায় ফেরে। সুভা তড়িঘড়ি করে গাড়ির দরজা ঠেলে ঢোকে। নিশ্বাস তার হাপড়ের মতো উঠানামা করছে। ইরফাদ গাড়ি নেমে দাঁড়ায়! সুভা কাজ শেষ করে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।কাজ শেষ হওয়া মাত্র ইরফাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়। সুভা যেনো হাঁফ ছাড়ে। ইরফাদের গাড়ির স্টার নেয়া দেখে সুভা চেঁচিয়ে বলে,
–হেই পুলিশ অফিসার!একটা থ্যাংস তো দিবে!
ইরফাদ সাইড গ্লাস দিয়ে মাথা হালকা বের করে। রহস্য হাসি হেসে বলে,
–আর যাওয়ার পথে যদি বিয়ে করি!
— না! ইরফাদ!…….. তুমি এটা করবে না! প্লিজ! প্লিজ! মরে যাবো…
— সে তুই যেখানে খুশি যা!
______
ঘন্টা পেরিয়ে গেছে সিনথিয়ার ঘুম কাটলেও সে স্বাভাবিক হতে পারেনি। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। দূর্বলতায় চোখ বুজে আসছে বার বার। তবে দূর্বলতার ঘোরেও সিনথিয়া ইরফাদে’র মধ্যে একটু পরিবর্তন লক্ষ করছে। এই এক ঘন্টার মধ্যে ইরফাদ একটা কথাও বলেনি। দু”বার পানির বোতল শুধু এগিয়ে দিয়েছে। তাও সামনের দিক তাকিয়েই।একটু ঘুমের মধ্যে মানুষটা পুরোই চেঞ্জ। চোখ মুখের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে -রেগে আছে । ঘুমের ঘোড়ে কি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসেছে সে? একে দূর্বল শরীর তার উপর একজন “এসপি”কে প্রশ্ন করার সাহসিকতা না থাকায় ঠোঁটে বেজে থাকা কথাও ঢোক গিলে খেয়ে নিচ্ছে সিনথিয়া। তার পা দু”টো ঝিমঝিম করছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।ইরফাদের ফোন মৃদু কেঁপে ওঠে এর মাঝে। গাড়িয়ে থামিয়ে দূরে দাঁড়ায়,
— ইরফাদ!
–জ্বি স্যার!
— কখন ফিরবে? সব রুলস তুমি তো জান! আমি জানি -তুমি কখনো রুলস ব্রেক করোনি।
— সময় লাগবে স্যার!
— এতো দূরে না গেলে হতোনা?বুঝতে পারছো তো সব! থানার কথা কিভাবে বাইরে যাচ্ছে। এতো রাতেও ফেরোনি! কথা বাইরে যেতে পারে….আমাকে জবাবদিহি করতে হবে!
— রিল্যাক্স! এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই!বলবেন মেয়েটির লাইফ রিস্ক ছিলো! তাই রাতে তার লাইফ রিস্ক এড়াতে সেইফ জোনে রাখা হয়েছে!
— তুমি কি চাচ্ছো!
— মেয়েটি দূর্বল! অসুস্থ ফিল করছে! আজ রাতে লকাপে রাখতে চাচ্ছি না!
–আচ্ছা! একটা কাজ করো মিসেস হুমায়রা”র বাসায় রেখে আসো! সেইফ থাকবে! সকালের মধ্যে নিয়ে এসো।
–ওকে…
—-
ইরফাদ গাড়ি চালাচ্ছে চুপচাপ। কোনো কথা নেই, সাড়াশব্দ নেই। সিনথিয়া নিজের মনের সাথে বুঝলো। যা হবার হবে। ভয়কে পিছনে ফেলে এসে মুখ দিয়ে কথা ঠেলে বের করে,
— আমি কখন ঘুমিয়ে গেলাম?
ইরফাদ উত্তর দেয়না। এইবার সিনথিয়া ভালোভাবে ফিল করে বিষয় টা।ইরফাদ কোনো কারণে রেগে গেছে সিউর। কিন্তু একজন “এসপি”র সাথে পরপর কি’করে কথা বলবে সে? কি করে প্রশ্ন করবে ? কেনো কথা বলছে না? ঘুমানোর আগেও তো সব ঠিকঠাক ই ছিলো।
তাহলে এখন কি হলো। অজানা ভয় নিশানা বরাবর লেগে সিনথিয়া বুকে হাত রাখে। পত্রটি”তো ঠিক জায়গাই আছে। তাহলে? কি কারণে হঠাৎ ইরফাদ কথা বন্ধ করলো? সে কি করে প্রশ্নটি করবে? সিনথিয়া তাল না পেয়ে বলে বসে,
— এখন কয়টা বাজে?
ইরফাদ নিরুত্তর। মনে হচ্ছে পুরো গাড়িতে সে একা। সিনথিয়ার কথা যেনো তার কান অবধি পৌঁছায়নি? সিনথিয়া ভেবে পাচ্ছে না- কি কারণে এমন করছে ইরফাদ! সিনথিয়া আড় চোখে ইরফাদের দিকে তাকায়। ইরফাদ সামনে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। তার কথায় কোনো হেলদোল নেই ইরফাদের! রাত গভীর হচ্ছে। বৃষ্টি শেষ হলেও রাস্তাঘাট পুরো শূন্য। জনমানবহীন শূন্য রাস্তার কিছু একটা খুঁজে বেড়ায় ইরফাদ। অনেকটা খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে একটি চায়ের দোকান খোলা পায়।দোকান দেখে গাড়ি থামায় ইরফাদ। কফির জন্য রাখা মিনি ফ্লাস্ক হাতে বাইরে বেরিয়ে যায়। সিনথিয়া তখন ইরফাদ” কেনো এমন করছে এই নিয়ে ভাবনায় ব্যস্ত। ইরফাদ ফেরে। হাতের ফ্লাস্ক এগিয়ে দেয় সিনথিয়ার দিকে। মুখে কোনো কথা বলে না। ফিরে তাকায়ও না। সিনথিয়া ভয়ে ভয়ে ফ্লাস্ক হাতে নেয়। ফ্লাস্কের ঢাকনা খুলে। ঘন জমাট বাঁধা স্বরে মেশানো সাদা শুভ্র রঙের দুধ আগুনে পুড়তে পুড়তে লালটে রঙ ধরেছে। দেখতে লোভনীয় লাগলেও পৃথিবীতে তার কাছে যদি কোনো অখাদ্য কুখাদ্য লেগে থাকে তাহলে এটিই। সিনথিয়া তা কি করে বলবে? সিনথিয়া না” ও করতে পারে না। ইরফাদ গাড়ির স্ট্রিয়ারিং ধরে আছে। ভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে- সিনথিয়ার খাওয়া শেষ হলেই সে গাড়ি ছাড়বে। সে ভয়ে ভয়ে থম মেরের বসে থাকে। মিনিট পাঁচ পেরিয়ে গেলেও খাওয়ার নাম গন্ধ নেই। ইরফাদ পাশ ফিরে তাকাতেই সিনথিয়ার বুক ধুক করে ওঠে। হাতের ফ্লাস্ক তড়িঘড়ি করে আকড়ে ধরে ঢকঢক করে গিলে ফেলে সবচেয়ে অপন্দের উষ্ণ তরলটি। এই মূহুর্তে তার কিচ্ছু করার নেই।এমনিতে ইরফাদ ভিষণ রেগে আছে। সিনথিয়া”র খাওয়া শেষ হওয়া মাত্র-ই গাড়ি আবার চলে। ইরফাদ কথা বলছে না কোনো একটা কারণে-এই বিষয় সিনথিয়া সিউর! কিন্তু কারণ না জানলে তার যে সস্তি নেই। কথা শুরু না হলে জিজ্ঞেসও করা যাবেনা। আবারও ভয়, সংকোচ দূরে ঠেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আমার এখন কোথায় যাচ্ছি?
ফিরে যাচ্ছি?
কয়টা বাজে?
প্রশ্ন কয়টা কয়েকবার থেমে থেমে করলো সিনথিয়া। ইরফাদ আগের মতোই নিরুত্তর। লজ্জার’ মাথা খেয়ে সিনথিয়া সাহস নিয়ে বললো,
— আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো?
*
*
*
— আমার কোনো ভুল হয়েছে?
*
*
— ঘুমের ঘোড়ে উল্টা পাল্টা…..
তখন ই বজ্রধ্বনীতে ধমেকের সুরে ভেসে আসে ইরফাদের গলায় একটি শব্দ,
— চুপ!
সিনথিয়া পুরো জমে গেলো। সহজ আচরণে সে বারবার ভুলে যায় মানুষটির ইস্পাত সম কঠিন রূপ আছে। তব্দা খেয়ে বসে থাকে সিনথিয়া। অজানা কারণে চোখ পানিতে ভোরে ওঠে টুপটুপ করে।ইরফাদ পুরো একটা ঘন্টা গাড়ি চালায় নিশব্দে। দুজনের মাঝে পিনপতন নিরবতা। ভয়ে, সংকোচে গুটিশুটি মেরে বসে সিনথিয়া। দেড়ঘন্টা নিরবতার পর ইরফাদ ধীর গলায় বলে,
একটা গল্প বলি। একটা শূন্য রাজ্যে রাজার ছিলো একটি পুত্র। কিছুদিন যেতেই শূন্য রাজ্য আলো করে রাজকন্যার জন্ম হলো। রাজকন্যার বাবা সেদিন কি-যে খুশি। তার চেয়ে বেশী খুশি রাজকন্যার ভাই। কল্পনাতে পরী বলতে আমরা যেমনটা বুঝি রাজকন্যা ছিলো পরীর মতোই। যেনো টুপ করে আকাশ থেকে পড়েছে। রাজকন্যার ভাই তার নাম দিলো ইভা। তার ভাই ছোট বেলায় ভাবতো পরীর দু”টো ডানা গজাবে।সে আশাতে দিন পার করলো। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলোনা। পরীর ডানা গজালো না। উড়তেও পারলো না। ইভা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলো। ডানাকাটা পরী-কে কাঁধে তুলে তার ভাই সারা রাজ্য ঘুড়ে বেড়াতো। ডানা নেই তো কি হয়েছে- তার ভাই তো আছে। পুরো পৃথিবী দেখানোর জন্যে সেই যতেষ্ঠ। এভাবেই ভাই আর বাবার ভালোবাসায় ছোট্ট পরীর দিন দিন বড় হলো। ছোট বেলা থেকেই ইভা অন্যরকম ছিলো! আর পাঁচ”টা বাচ্চার মতো পুতুল নিয়ে খেলতো না। ব্যাট বল ছিলো তার ভিষণ প্রিয়! পুরো ছাদ জুড়ে ঘাস লাগানো হয়েছিলো তার ক্রিকেট খেলার জন্য।
ইভা সবে ভার্সিটিতে উঠলো,
ঐ সময়ে জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলতো রাফসান(ছদ্মনাম)।সে ছিলো বাংলাদেশের মানুষের আবেগের নাম। ব্যাটিং আর বোলিং -এ তার সুনাম ছিলো আকাশ চুম্বী।বিগত বছর গুলোতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো। এক্ষেত্রে রাফসানের অবদান ছিলো অনেক বেশী। দেশের সব পাগলা ফ্যান “রাফসান” বলতে অজ্ঞান ছিলো। ঐ সময়ে”র জাতীর ক্রাস বলা হতো তাকে।আমার বোন ছিলো তার একজন অন্ধ-ভক্ত। বাবা জানতেন! মেয়ের খুশির জন্যে বাবা সময় পেলে ইভা”কে খেলা দেখতে নিয়ে যেতেন। মাঝে মাঝে ইভা”কে রাফসান’র সাথে সাক্ষাৎ, অটোগ্রাফ নিয়ে দিতেন। এখানেই শুরু। তারপর জল অনেক দূর গড়ায়…..
হঠাৎ করে শুরু হয় রাফসানে”র অধঃপতন। ক্রিকেট খেলায় যার নাম সবার আগে- সে হঠাৎ করেই বদলে যায়। তার হাতে ওঠেনা কোনো চার-ছক্কা। কখনো ব্যাটিং খারাপ কখনো বোলিং-এ খারাপ, কখনো ফিল্ডিং এ। যেখানে, লাস্ট চার বলে- চারটা” ছয় মেরে ম্যাচ জেতানোর রেকর্ড আছে। অসংখ্যবার যে সেঞ্চুরির রেকর্ড করেছে -সে কখনো এক বলে আউট,কখনো এক ওভারেই। জিতে যাওয়া ম্যাচ প্রতিবার হেরে বসে থাকে তার কারণে।সকলের চোখের মণি রাফসান হঠাৎ করেই মুখ থুবরে পড়ে। ক্রিকেট খেলা বাঙালির আবেগের নাম। খেলায় হার জিৎ থাকবে। তবে, আবেগ নিয়ে খেলার কোনো মানেই হয় না। সবার মুখে মুখে উঠে যায় রাফসানে”র অধঃপতন।খেলা শেষ তো রাস্তায় রাস্তায়, মাঠে-ঘাটে আলোচনা হয়। ইসস! রাফসান এই বল’এ হারা”র কথা না। আজকের ক্যাচ মিস হওয়ার কথাই ছিলো নাহ। আজকে রাফসানের জন্যে ম্যাচ হেরেছে।গত বিশ্বকাপে”র ফাইনাল ম্যাচ রাফসানের জন্যে’ই হেরেছে।পুলিশদের মধ্যেও আলোচনা হয়। টুকটাক তদন্তের শুরু। রাফসানের এই হার’ কি স্বাভাবিক নাকি ইচ্ছেকৃত। সন্দেহ বাড়ে- রাফসান ফিক্সিং-এ খেলে।
ঐসময়ে আমি প্রথম জানতে পারি ইভা-রাফসান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।ঐসময়ে ইভার সাথে বিষয়টি শেয়ার করি। ওকে ডেকে বলি,
— রাফসান কে নিয়ে কি পরিমাণ সমালোচনা হচ্ছে? জানিস!
— হবেই তো। আমরা বাঙালি রা তো নিকৃষ্ট জাতী। ভালো হলে মাথায় তুলি আর একটু কম বেশী হলে”ই আছড়ে ফেলি, অকৃজ্ঞ!
— ওর খেলা”য় সন্দেহজনক বিষয় আছে। তুই নিজে মাথা ঠান্ডা করে ভাব। এসব নিয়ে ইনভেস্টিগেশন হবে। ও যদি সত্যিই ফিক্সিং-এ খেলে থাকে।আর গত বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ ওর কারণে হেরে থাকে।প্রমাণ পেলে ওকে জাতীয় দল থেকে বহিঃস্কার করা হবে।
–ভাইয়া তুমিও….
— “আমি চাই না তুই কোনো কষ্ট পাস।জানিনা কতদূর কি? আগেই জানিয়ে দিলাম। মিষ্ট ভাষী, সুদর্শন পুরুষ দিয়ে কিন্তু সংসার হয় না। মনে রাখিস সুদর্শন দায়িত্বজ্ঞানহীন পুরুষ কেবল ক্রাশ খাওয়া অবধি ঠিক আছে।সংসারের জন্যে প্রয়োজন সৎ, দায়িত্ববান পুরুষ, সে যদি কুৎসিত হয় তবুও সুদর্শনের চেয়ে শ্রেয়।” এটাই ছিলো একজন ভাই হিসেবে বোনের প্রতি দায়িত্ব, তাকে কষ্ট পাওয়া থেকে দূরে রাখার চেষ্টা,বোনের প্রতি ভালোবাসা। আর একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে ঐটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। ইভা এইসব রাফসান”কে খুলে বলে।রাফসান গুটির চাল হিসেবে আমার বোন”কে ব্যবহার করে।সেদিন সন্ধ্যা হয়ে যায় ইভা বাড়ি ফেরে না। বাবা”র চিন্তায় প্রেশার বাড়ে। আমি পুরো শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজি।সেদিন রাতে খবর আসে আমার বোন আর ফিরবে না।রাফসান ইভা’কে বিয়ে করেছে। বাবা”র শখের,আদরের নয়নের মণি যখন বাবা”র কথা অমান্য করে বাড়ি ত্যাগ করে-দু’দিনের পুরুষের জন্য!এসব দেখলে একজন বাবার হৃদয় রক্তাক্ত হয়ে যায়। তখন ঐ মেয়ের দুচোখ কল্পনার রাজ্যে রঙিন স্বপ্নে ভাসে- তাই ঐ সময়ে সন্তান বাবা”র হৃদয়ের রক্তক্ষরণ স্পর্শ করতে পারেনা।ইভাও পারেনি। রাফসানে’র ইনভেস্টিগেশন শুরু হয় আমার হাত ধরে। যত প্রমাণ মেলে ততো ভেঙ্গে পড়ি। আমার বোনের সংসার!সুখ! আনন্দ সব ধূলোয় মিশে যাবে। যে বোনের গায়ে কখনো ফুলের টোকা দেইনি- সে অসহায় এর মতো কাঁদবে। আমি মন প্রাণ দিয়ে সেদিন চেয়েছিলাম- সব মিথ্যা হোক। তবে আমার মনে ইচ্ছে পূরণ হয় না।নাইনটি পার্সেন্ট প্রুফ রাফসানের বিপক্ষে যায়। সেদিন আমার বোন বিয়ের পর প্রথম বাসায় ফেরে। কাঁদতে কাঁদতে দু”চোখে রক্ত জমে গেছে। আমার বোন দৌড়ে এসে আমার পায়ে পড়ে। দু”চোখের সিক্ত জলে আমার পা ভিজতে শুরু করে। ইভা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— সন্দেহ করা তোমার প্যাশন! শেষ পর্যন্ত বোনের বর”কে ছাড়ছো না?
আমি সেদিন বুঝলাম ভালোবাসলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। ইভা ক্রিকেট বোঝে। কিন্তু স্বামী”র প্রতি দূর্বলতায় সত্য মিথ্যা যাচাই করা ভুলে গেছে। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি,
— মাথা ঠান্ডা কর! তুই তো খেলা বুঝিস! তুই নিজেই ভালোভাবে চিন্তা কর!
–এক “বল”এ কি একটা মানুষ আউট হতে পারে না। এক অভারে এর আগে কেউ আউট হয়নি? কারো জন্যে পরপর ম্যাচ হারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল? আগে কখনো ফাইনাল ম্যাচ বাংলাদেশ হারেনি? তাহলে আজ রাফসান”কে ঘিরে এতো সমালোচনা কেনো?
–এক বলে সবাই আউট হতে পারে। ম্যাচ পরপর অংখ্যবার হারতে পারে।তবে টাকার বিনিময়ে চুক্তি বদ্ধ হয়ে- ইচ্ছাকৃতভাবে আউট হয়ে ম্যাচ হেরে যাওয়া অন্যায়।
–তার জন্য ওর ক্যারিয়ার নষ্ট কোরোনা ভাইয়া। আমি বলছি! আর এই ভুল হবে না। এইসব প্রুফ জমা দিলে মানসম্মান থাকবে না। ও মুখ দেখাতে পারবে না!
–আইনের চোখে সবাই সমান। ও জড়িত থাকলে শাস্তি ওর পেতেই হবে। ভালোবাসা’র চোখে তুই যা দেখছিস তা ভুল। যারা টাকার’ খেলায় মেতে ওঠে তারা এত সহজে সঠিক পথে আসে না।
–আইনের পথে থেকে তুমিও সন্দেহ ছাড়া কিছুই দেখোনা! তাই তুমি সামান্য আউট হওয়া নিয়ে সন্দেহ করছো!
— আরে গাধা! রাফসান ফিক্সিং-এ খেলে। আগের থেকে নির্ধারণ করা থাকে- ওকে কত বলে আউট হতে হবে? এবং যে করেই হোক ম্যাচ হারতে হবে।এতে রাফসান অবৈধ টাকা পাবে। যার অংক অনেক বড়। টাকা”র বিনিময়ে দেশের নাম ডুবানো। জাতীর আবেগ নিয়ে খেলা অন্যায় নয়?
— রাফসান না হয় টাকার জন্যে এই কাজ করছে। কিন্তু তাকে টাকা দেওয়ার কারণ কি? তাদের কি লাভ?
–যাদের সাথে রাফসান চুক্তিবদ্ধ হবে – তার অর্থ চুক্তীকারীরা টাকা দিয়ে রাফসানকে কিনে নিবে।টাকা দিয়ে কেনা মানে- তারা শতভাগ নিশ্চিত হবে আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম হারবে। ঐ চুক্তিকারীরা তার উপর ভিত্তি করে জুয়ার আসর বসাবে।কোটি কোটি টাকার বাজি ধরবে তারা। উপর পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত জুয়া”র সাইটের মাধ্যেমে বাজি ধরবে। তরুণ সমাজ হুমরি খেয়ে দেশের পক্ষ নিবে। কারণ তারা রাফসানের উপর ভরসা করবে- তারা জানে রাফসান ভালো খেলে।আজ ম্যাচ জিতবেই। এই ভরসায় বাজি ধরবে। আর এই এক ম্যাচে-ই তরুণ সমাজ থেকে কোটি কোটি টাকা মূহুর্তে-ই হাতিয়ে নিবে এই র্যাকেড। ফিক্সিং-এ খেলা মানে “জুয়া”র আড্ডাকে আরেক ধাপ! এগিয়ে আনা। ঐ এক ম্যাচ হারা মানেই কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে পাঁচার হবে। যুবক সমাজ জুয়া” খেলে নিঃস্ব হয়ে যাবে। ক্রাইম বাড়বে। টাকার নেশা কম বেশী সবার ই আছে।অনেকে শখের বসে ধরবে!অনেকে আবার জেতার নেশায় জুয়ায় আসক্ত হবে। এর মারপ্যাঁচে বাইরে পাঁচার হবে দেশের টাকা।
— আমি এত কিছু জানিনা।তুমি ওকে মাফ করে দাও!
একজন পুলিশ দেশের হয়ে,দশের হয়ে কাজ করে।তার কাছে আগে দেশ! অন্যায়ের ক্ষেত্রে সবাই আমার চোখে সমান। ভাই,বোন, বাবা যতো কাছের কেউ-ই হোক!অন্যায় করলে অন্যায়ের শাস্তি তাকে পেতেই হবে। তাই সেদিন ইভার কথা রাখতে পারিনি। ইভা চলে যায়। ইনভেস্টিগেশন এর সকল প্রুফ জমা দেওয়ার সময় আসে। ঐ মূহুর্তে খবর আসে ইভা’কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি প্ল্যান বুঝে যাই। আমি রাফসানে”র মুখোমুখি হই। সে আমাকে কন্ডিশন দেয়,” প্রুফ জমা দিলে আমার বোন’কে আর কোনো দিন জীবন্ত পাওয়া যাবে না। তার জীবন এমনিও ধূলিসাৎ। প্রয়োজনে মার্ডার কেসে সে যাবৎ জীবন জেল খাটবে।” আমি তবুও দমে যাই না। একহাতে প্রুফ জমা দিয়ে রাফসান”কে ধরি। সে পাগলের মতো টালবাহানা শুরু করে। কোনো এঙ্গেল থেকেই ইভা”কে খুঁজে পাওয়া যায় না। সকল প্রুফ এর ভিত্তি-তে রাফসান’কে জাতীয় দল থেকে সারাজীবনের জন্য বাদ দিয়ে দেয়া হয়। এদিকে তদন্তের জন্যে রাফসান’কে জেলে রাখা হয়। কঠিন থেকে কঠিনতম ভাবে জিজ্ঞাসা বাদের পরও তার মুখ সত্য বের হয় না। ঐদিকে ইভার চিন্তায় আমার বাবা’র হার্ট এট্যাক হয়।এক দিকে বোন অন্যদিকে বাবা আরেক দিকে আমার প্রফেশন ঐ দু’টো মাস আমার জন্যে স্মরণীয়। আমার বোন’কে পাওয়া যায় দীর্ঘ ছয়-মাস পর। পুরো দেশের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্ত তোলপাড় করেছিলাম বোনের জন্যে। রাফসানে’র এমন কোনো আত্মীয় -দূর সম্পর্কের আত্মীয় এমন কোনো জায়গা নেই বাদ রাখি নি। হসপিটাল!মর্গ! এমনকি প/তি/তা/লয় পর্যন্ত বাদ রাখিনি! অবশেষে আমার বোন’কে পেয়েছিও এমন জায়গাতে-ই যেখানে দে/হ ব্যবসা চলে। আমি ছবি দেখালে তাদের মধ্যে একজন চেনেন। এবং আমাকে ইভার প্রেজেন্ট লোকেশন দেন।ভাগ্য ভালো ছিলো/আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে এতোবড় র্যাকেড এর হাতে পড়েও আমার বোন সেইফ ছিলো। কর্ণেলের কন্যা’র পরিচয় আর প্রেগন্যান্সির সাত মাসের পৃথিবীর আলো না দেখা সন্তান সেদিন আমার বোনে’র ঢাল হয়ে দাড়ায়। রাফসান ইভা’কে এইসব জায়গায় বিক্রি করে দিলেও তারা সাত মাসের অন্তঃসত্বা মেয়েটিকে খারাপ জায়গায় হস্তান্তর করেন না। বরং একটি স্বাভাবিক আশ্রমে দিয়ে দেন। তদন্তের শেষপ্রান্তে আমি আমার বোন”কে সেদিন উদ্ধার করি একটি বৃদ্ধাশ্রম থেকে।যেখানে আমার বোন রান্নার কাজ করতো।সে কি বিধ্বস্ত অবস্থা তার- চোখের নিচে কালির স্তুপ,শুকিয়ে কাঠ, পুরো রঙ’টাই চেঞ্জ। ওখানকার সকলে ইভা’কে বাসায় ফিরতে বলেছে। ইভা ইচ্ছে করে ফেরেনি। আমাদের মুখোমুখি হতে চায়নি।
ইভা বাড়ি ফিরলো। রাফসানে’র কেস আরও শক্তিশালী করার জন্যে ইভা’র জবানবন্দি’র প্রয়োজন হলে-সে সাক্ষী দিলো না। উল্টো একদিন কেস তুলে নিলো। অপরাধী সে সুযোগে দেশ ছাড়লো। মেয়েরা ভালোবাসলে এত উম্মাদ হয় সেদিন বুঝলাম। ইভা সেই থেকে আর হাসেনা! কথা বলে না! আমাদের সুখের রাজ্যে অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছিলো। কয়েক মাস পর নতুন অতিথি এলো। হরমোনাল ইমব্যালেন্সড এর কারণে ঐটুকু বাচ্চা’কে ইভা অনেক মারতো। সহ্য করতে পারতো না। সাইক্রিয়েটিকস দেখানো হলো। কাজ হলো না! এভাবে চললে আমার বোন বাঁচবে না। তাকে নিয়ে আমি সময় পেলেই-সেই আগের মতো পুরো শহর ঘুড়ে বেড়াতাম। তাকে মেডিটেশন করাতাম! গল্প করতাম। অনেক অনেক স্ট্রাগলের পর আস্তে ধীরে একটু সুস্থ হলো। পরবর্তীতে ওকে আমি আবার ভার্সিটি’তে এডমিট করলাম। বিভিন্ন ডিব্যাটে নাম দিয়ে আসতাম। ও ব্যস্ত হতে থাকলো।ওর ডিব্যাট দল একবার দেশব্যাপী সুনাম অর্জন করলো। দেশের মানুষ তাকে একনামে চিনতে শুরু করলো। পুরো দেশ-বাসীর সামনে চ্যানেলে চ্যানেলে ওর ওর ইন্টারভিউ দেখাতো।সেদিন খুশিতে বাবা আর আমি টিভি অন করে বসে রইলাম। প্রশ্নের এক পর্যায়ে তাকে একটা পারসোনাল কোয়েশ্চেন করা হলো,
— আচ্ছা মিস ইভা! শুনেছি আপনার জীবনে খুব কম জিনিস-ই আছে যা আপনি পারেন না। আপনি সর্বগুণে গুনবতী মেয়ে। কিন্তু আপনার হাতে নষ্ট হয়েছে এমন কিছু’র নাম বলুন! ইভা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলো,
— নিজের হাতে নষ্ট হওয়া সবচেয়ে মূল্যবান,দামী জিনিসটি হলো তার জীবন!
সেদিন পাশাপাশি বসে আমরা দুই বাবা ছেলে একে অপরের পানে তাকাতে পারিনি। বুক ভারী হয়েছিলো। ওভাবেই নড়চরহীন বসে ছিলাম কতোক্ষণ জানা নেই।
বলেই ওষ্ট দুটো গোল করে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ইরফাদ। উর্ধ্ব পানে চেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। বুকের ভেতরে লুকানো পুরোনো ব্যাথার স্মৃতি গুলো যেনো মুখ দিয়ে রক্ত আকারে জমাট বেঁধেছে। বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। ত্রিশ সেকেন্ড পড়ে ইরফাদ পাশ ফিরে তাকায়। সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
— এমন জীবন তুমি করিবে গঠন,মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ত্রি-ভুবণ।
কিন্তু এমন জীবন গঠন কোরোনো? যাতে তোমাকে আমার বোনের মতো! সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে -বিশ্ববাসীর কাছে বলতে না হয়। তোমার হাতে নষ্ট হওয়া মূল্যবান জিনিস তোমার জীবন।তোমার অবস্থা যেনো আমার বোনের মতো না হয়! ঠিক এই কারণেই তোমার কেস হাতে নিয়েছিলাম! ঠিক এই কারণে! উপর মহলের সাথে তর্কবিতর্ক করে নিজের ফর্মের বাইরে গিয়ে আদালতের অনুমতিতে, তোমার লাইফ রিস্ক এড়াতে,তদন্তের সুবিধার্থে তোমাকে সেইফ কাস্টডিতে রেখেছিলাম। যাতে খুব তাড়াতাড়ি তুমি মুক্তি পাও। এই কারণে চব্বিশ ঘন্টার বেশী তুমি সময় ধরে আছো আমার হেফাজতে।ক্লিয়ার!
চব্বিশ ঘন্টার কথাটা মনে পড়েই সিনথিয়ার বুকটা ধুক করে কাঁপে।চিঠি কি করে দেখলো ইরফাদ! তার জানার অন্তরালে কত কিছু হয়ে গেছে। এই মানুষটাষতার জন্যে কি না কি করে গেছে। এরপরও সত্যি লুকিয়ে রেখেছে সে। সে অপরাধী! সে একটা পয়সন! এইবার সিনথিয়া ভালোভাবে উপলব্দি করে! কেনো ইরফাদ এতো সময় ধরে কথা বলেনি। কিন্তু চিঠিতো তার কাছেই আছে। তাহলে চিঠি রহস্য ইরফাদ কি করে জানলো! ইরফাদ শক্ত গলায় বলে,
— আপনাকে নিতে আসবেন মিসেস হুমায়রা আহসান! রাতটুকু আপনি তার হেফাজতেই থাকবেন।এবার নামুন!
ইরফাদে’র মুখে প্রথম দিন কয়েক বারের জন্যে আপনি শুনেছিলো সিনথিয়া। এরপর থেকে সে নিজে থেকেই তুমি সম্মোধন করে এসেছে নির্দিধায়। রাগের প্রকোপ আপনি সম্মোধনেই বুঝে গেলো সিনথিয়া। কিন্তু ইরফাদ ভুল বুঝছে। সিনথিয়া দোটানায় ভুগেছে চিঠি নিয়ে। বললে যদি চিঠিতে লেখা দশ বছরের বন্দি মানুষ গুলো মুক্তি না পায়। ঐকারণে তো কিচ্ছুটি বলেনি সে! নিজের মুক্তির কথাও ভাবেনি। এটাও বুঝে দেখলো না? এর কারণে এভাবে রাগ করলো। ভুল বুঝলো? অজানা ভয় সংকোচে গলা জড়িয়ে আসে তার। একজন এসপি তার সাথে যত সহজে কথা বলতে পারে।সে তো ততো সহজে এসপি”কে বলতে পারছে না। ইরফাদ মিসেস হুমায়রার দায়িত্বে সিনথিয়া’কে রেখে গাড়ি ঘুড়ার। শক্ত চোখ মুখ তার। একবারের জন্যে নরম হয় না সে। এক বারের জন্য চোখ তুলে তাকায়না। সোজা স্ট্রিয়ারিং ঘুড়িয়ে গাড়ি একটানে দুচোখের নাগালের বাইরে চলে যায়। সিনথিয়ার চোখ রক্তলাল হয়ে আসে… এই ভুল কি সিনথিয়া কোনোদিন ভাঙতে পারবে? ইরফাদের রাগ কোনো দিন কি কমবে? সে কি আর নরম আচরণ তার সাথে করবে? সব-ই শুধু প্রশ্ন। সারারাত দুশ্চিন্তায় দু-চোখের পাতা এক হলোনা তার।
ফুরফুরে সকাল। একদিনের টানা বৃষ্টি শেষে পুরো প্রকৃতি যেনো নতুন করে সেজেছে। ফুটফুটে রোদ, আকাশ পরিষ্কার। তিথি আর রিমা আজ লুকিয়ে চুরিয়ে সিনথিয়ার সাথে দেখা করতে বেরিয়েছে! তিথি আর রিমা পাশাপাশি হাটছে আর কথা বলছে..
— শুভ্র ভাই এর কি খবর রে রিমা!
–আছে তার মতো ব্যস্ত!
— এতো কিসের ব্যস্ত !
–কত দায়িত্ব ছেলেদের।
— ধূর! আমি হলে কবে ছেড়ে দিতাম!
— বিয়ে করেছি! ছেড়ে যাবো কেনো?
— রাখ তোর বিয়ে! বিয়ের পর কোনোদিন দেখা করেছিস?এসব মানুষ নিয়ে সংসার হবে? দশ মাসে একবার দেখা করেনা!ফোন করে না! আমি হলে কবেই ফুরুৎ করে নাই হয়ে যেতাম।
— সবাই কি তোর মতো দশটা ছেলের সাথে একসাথে লাইন মারে..
— এটাই প্রেমের মজা! তুই বুঝবি না এসব।
— হ্যাঁ তুই ও বুঝবিনা ভালোবাসা কি? একদিন তুইও কাউকে ভালোবাসবি। তখন বুঝবি…
বলেই রিমা দেখে পাশে ছোট একটা ছেলে বেলী ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছুটে চলে যায় বেলী ফুলের মালা কিনতে। তিথি দেখে নিজের মাথায় হাত দেয়!– হয়েছে! আজ যে কত ঢং দেখতে হবে এই মালা নিয়ে। তার আজ ফটোগ্রাফি করতে করতে হাত শেষ হয়ে যাবে। রিমা ফুল হাতে নিয়ে প্রথমেই নাকের কাছে ধরে। শ্বাস টেনে নেয় আত্মা পর্যন্ত। এরপর দু’জন আবার হাঁটে। তিথি অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে।
— সেদিন একটা ছেলেকে দেখলাম ও…রে কিউট। আমি তো সাথে সাথে ক্রাশ খেয়েছি। তোকে দেখালে তুই ও খাবি।
পাশ থেকে উত্তর আসে না।তিথি ঘুড়ে দাঁড়ায়। তার পাশে রিমা নেই। কোথায় গেলো? কখন গেলো? তিথি হৈন্য হয়ে পুরো রাস্তা খুঁজে বেড়ায়। রিমা কোথাও নেই। আশে-পাশে কোথাও না। কো…থ..থা..ও না…..
ব্রেকিং নিউজ! সারাদিনে নিখোঁজ অন্তত দশ। তারমধ্যে এই শহরের দু’জন। একজন রিজভী শিকদারের মেয়ে চৈতী শিকদার অপর জন রিমা কবীর।
চলবে?
#যারা খেলা দেখেন না তারা হয়তো জানেন না ম্যাচ ফিক্সিং এর এই বিষয়টা! যদিও অনেক ভেঙ্গে ভেঙ্গে লিখেছি তবুও বুঝতে না পারলে জানাবেন। সব পর্ব একই রকম সাসপ্যান্স থাকবে না/ ক্লাইম্যাক্স থাকবে না। সবার সম্পর্কেই জানতে হবে।রীমা”কে খুঁজতে খুঁজতে গল্পের জট খুলবে।সবাই মতামত রাখবেন আশা করছি। পরবর্তী পার্ট একদিন পরপর!