রং_ভুল #তন্নী_তনু #পর্বঃ৩

0
12

#রং_ভুল
#তন্নী_তনু
#পর্বঃ৩

তদন্ত শুরুর আগেই অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার। লাশটি মূলত কার তা জানা যায়নি।কারণ মুখ পুরোটাই থেতলে গেছে। সিনথির সিমকার্ড লাসের কাছ থেকে পাওয়া গেলেও। এই ছোট্ট একটা সিমকার্ডের ভিত্তিতে আন্দাজে ঢিল মেরে কাঁদা ছুড়াছুড়ি করার মানুষ ইরফাদ সিনহা নয়।যা হবে ডিএনএ টেষ্টের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই হবে।তার আগ মূহুর্ত অবধি মেয়েটির শতভাগ প্রাইভেসি দিবেন। মেয়ে মানুষের জীবণ সাদা কাপড়ের ন‍্যায় শুভ্র সাদা। তবে একটু দাগ লাগলেই মোছার উপায় নেই। সত‍্যে মিথ‍্যার যাচাই না করে যে অভিযোগ তোলা হয়। একবার তা রটে গেলে সে মেয়ের জীবণ হয় দুর্বিষহ।তাই জেনে বুঝে অবশ‍্যেই কোনো নিরপরাধ মেয়েকে অপরাধির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেনা ইরফাদ সিনহা।ইনভেস্টিগেশন চলাকালীন সকল তথ‍্য গোপন থাকবে। এমনকি সিনথির সাথে যে রায়হান রাফির প্রেমের সম্পর্ক ছিলো এটিও গোপন থাকবে।

তবে এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে থানার ইনিস্পেক্টর রিজভী শিকদার। সেকথা ইরফাদ সিনহার সামনে না বলতে পারলেও কানাঘুষা ঠিক ই হয়েছে। তবে ইরফাদ সিনহা নিজের সিদ্ধান্তে অটল। তার অভিজ্ঞ চোখ বলে সিনথি এই কেসের সাথে জড়িত নয়। মেইন কালপ্রিট কোনো ক্লু রেখে কাজ করেনি। আর এতো সুক্ষ প্ল‍্যান সফল করা বাইশ বছরের তরুণীর পক্ষে সম্ভব নয়।

ইরফাদ সিনহা গত মাসের ফাইল চেক করছেন।আটটা ফাইলের মধ‍্যে সাতটাই মিসিং কেস। একমাসের মধ‍্যে কয়েকটি জেলার সাত তরুণ নিঁখোজ। পরিবারের দেয়া তথ‍্য অনুযায়ী কেউ চাকরির খোঁজে ঢাকা এসেছেন,কেউ বিদেশ যাবার উদ্দেশ্য। তবে কারোর ই খোঁজ মেলেনি। ফাইল গতমাসের। এই থানার সকল দায়িত্ব রিজভি শিকদারের উপর। কিন্তু তিনি তো এই বিষয়ে কোনো কিছুই তাকে ইনফর্ম করেননি। ইরফাদ সিনহা টেবিলের কোনে থাকা টেলিফোন তুলে নিলেন। রিজভী শিকদারকে ডাকলেন তার রুমে। এতো গুলো মিসিং কেস।ফাইলগুলো আন‍্যান‍্য জেলা হতে এসেছে। যেহেতু বেশীর ভাগ তরুণ ঢাকাতে চাকরির খোঁজে এসে নিখোঁজ হয়েছে সেহেতু ফাইলের কপি পাঠানো হয়েছে রিজভি শিকদারের কাছে। যা গত মাসে পাঠানো হলেও এ বিষয়ে ইরফাদ সিনহাকে কিছুই জানানো হয়নি। রাগে শক্ত হয়ে আসছে তার চোয়াল। এরমধ‍্যে রিজভী শিকদারের ধীর গলা শোনা গেলো দরজার বাইরে। দরজার বাইরে থেকে অনুমতি চাইছেন,

— স‍্যার ডেকেছেন?
চোখ মুখ শক্ত করে ইরফাদ সিনহা বললেন,

— আসুন
দরজা ঠেলে ভেতরে এসে সম্মান প্রদর্শনকারী সেলুট দেয় রিজভী শিকদার। ফাইল ওপেন করে দিয়ে ইরফাদ সিনহা বললেন,

— এগুলো কিসের ফাইল?
রিজভি শিকদার হাতে তুলে নিলেন ফাইল। গতমাসে কয়েক জেলার ফাইল এসেছিলো। সে খুলেও দেখেনি। ইরফাদ সিনহার গম্ভীর গলা,

— ফাইল খুলেছিলেন?

ইরফাদ সিনহার শক্ত চোয়াল, কপালে ফুলে উঠা রগ, মুষ্টি করা হয়ে আসা হাত চোখ এড়ালোনা রিজভী শিকদারের। টেবিলের উপর ফাইল দেখিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ইরফাদ সিনহা বলেন,

— ফাইল কতো তারিখে এসেছে?

তার চোখের ভঙ্গিমা দেখে ঘেমে উঠেন রিজভি শিকদার। গম্ভীর হয়ে আসা পরিবেশ ঝড়ের আভাস তা তিনি জানেন।আড়ালে আবডালে তিনি ইরফাদ সিনহাকে নিয়ে সমালোচনা করলেও সামনে থেকে খুবই ভয় পান।রিজভি শিকদার মাথা নিচু করে উত্তর দিলেন,

— গত মাসে।
— এ বিষয়ে ইনভেস্টিগেশন করেছেন?

রিজভী শিকদার চুপ হয়ে যান।তার দেওয়ার মতো কোনো উত্তর নেই।গত মাসে ফাইলের কপি পাঠিয়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে।মাঝে মাঝে তিনি ফাইল আবর্জনার মতো ফেলে রাখেন। তদন্ত করার কথা ভুলে যান। আবার কিছু ফাইল খুলেও দেখা হয় না। এইখানে বড় কোনো কেস না আসলে হেড কোয়ার্টার থেকে সচারচর ইরফাদ সিনহাকে দেখা যায় না । এই সুযোগে অনেক সুক্ষ কেস গুলো রিজভী শিকদার অবহেলায় ফেলে রাখেন। কিছু সময় আরাম আয়েসে কাটান। তবে এই ফাইলগুলো একবারের জন‍্যে খুলে দেখা হয়নি তার। এই সত‍্যি কথা কি বলা যায়? বললে ইরফাদ সিনহা তার মুখ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে হৃদপিণ্ড ছিড়ে বের করে নিবেন। বিপদ জেনেও রিজভী শিকদার মুখ বন্ধ করে রইলেন।
ইরফাদ সিনহা হাতের মুষ্টি পাকিয়ে সজোড়ে ঘুষি মাড়লেন শক্তপোক্ত টেবিলের উপর। টেবিলটাও যেনো থরথর করে কেঁপে উঠছে। বজ্রকন্ঠে আঘাত হানলো যেনো ইরফাদ সিনহা,

— ইউ কান্ট হিয়ার হোয়াট আই সেইং। আনস‍্যার মি মিস্টার রিজভী শিকদার।

রিজভী শিকদার এবারেও কোনো উত্তর দিলেন না। সে জানে ইরফাদ সিনহা আরও রেগে যাবেন। এতো বড় ফল্ট তিনি কখনোই মানবেন না। ইরফাদ সিনহা রক্ত চক্ষুতে তাকিকে গমগমে গলায় বললেন,

— আপনি ভেবে দেখেছেন? কি হতে পারে? আপনার এমন ভুলের জন‍্যে পুরো ডিপার্টমেন্টের নাম খারাপ হবে। ফাইল গুলো গত মাসের আর আজ কত তারিখ? তারা তো আমাদের উপর আস্থা করে বসে আছে। সাতটা ছেলে নিখোঁজ এই সাত সাতটা ছেলে যদি লাশ হয়ে ফেরে। কি উত্তর দিবেন? সরকার কি আমাদের বসিয়ে বসিয়ে ফিটার খাওয়াবে?

ইরফাদ সিনহা ফাইল গুলো হাত দিয়ে সামনে ঠেলে দিলেন। কথার তালে তালে ভ্রু উচিয়ে বললেন,

— প্রত‍্যেকের পরিবারকে ইনফর্ম করবেন। প্রত‍্যেকের এ টু জেড ডিটেলস বিকেলের মধ‍্যে চাই। অবশ‍্যেই নিজের কাজ নিজে করবেন।

ইরফাদ সিনহা খানিকটা থেমে আবার বললেন,

— কিভাবে এই পোষ্টে এসেছেন জানিনা। সেসব আমার জানার বিষয় নয়। তবে নেক্সট কখনো এমন ভুল হলে চাকরি হারাতে হবে রিজভী শিকদার। কথাটা মাথায় রাখবেন। আউট…

______

সকাল থানার মধ‍্যে ফিসফিসানি, কানাকানি চললেও এখন পরিবেশ ঠান্ডা। ইরফাদ সিনহার মাথা গরম। থানার পরিবেশ থমথমে। কারো মুখে আর কোনো খুঁচরো কথা নেই। সবাই কাজে ব‍্যস্ত। সিনথিয়া গুনে গুনে ছত্রিশ মিনিট ধরে বসে আছে থানার মধ‍্যে। তার মা বসে আছেন সাথেই। ছত্রিশ মিনিটের মধ‍্যে হওয়া ঘটনা সচক্ষে না দেখলেও ইরফাদ সিনহার বজ্রকন্ঠিত গলা সে ভালোভাবেই শুনেছে। এই মূহুর্তে ইরফাদ সিনহার মুখোমুখি হতে খুব বেশীই ভয় করছে তার। শরীর ঘেমে ঘেমে উঠছে। এদিকে থানায় থাকা পুলিশ সদস্যদের যতোবার মুখোমুখি হয়েছে। তারা যেনো চোখ দিয়েই তাকে গিলে খেয়েছেন সিনথিয়াকে। তাদের চাহুনিতে সিনথিয়ার নিজেকে মানুষ নয় ভয়ংকর জীবজন্তু মনে হচ্ছে। ভুল না করেও তাকে যেবাবে খেসারত দিতে হচ্ছে। তার থেকে জীবণের পরিসমাপ্তি মনে হয় অনেক সহজ। ঘন্টা পেরিয়ে গেলো। এরপর ডাক পড়লো সিনথিয়ার। এসপি ইরফাদ সিনহা তাকে অফিস কক্ষে ঢেকেছেন।শুনেই পা দু’টোতে শক্তি ফুরিয়ে আসছে সিনথিয়ার। সিনথিয়ার লম্বা বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু যে চোরাবালিতে পা পড়েছে মরা না পর্যন্ত তার কোনো বিশ্রাম নেই।আজ কি প্রশ্ন করবে আর সে সে কি উত্তর দেবে ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছে না। তবুও ধীর পায়ে নিজের শরীরটাকে ঠেলেঠুলে এসপির দরজার সামনে দাঁড়ালো সিনথিয়া। মুখে কোনো কথা আসছে না। মনে মনে ভাবছে সব বাদ দিয়ে স্বীকার করবে সেই রাফিকে মেরেছে। এরপর তার ফাঁসি হয়ে যাবে। এতো সত‍্যি বলে হয়রানির চেয়ে মৃত‍্যু ভালো। সিনথিয়া নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

ইরফাদ সিনহা ছোট ছোট কাগজের টুকরো লিখে লিখে পিন গেঁথে দিচ্ছেন দেয়ালে টানানো বোর্ডে। হিসেবের গড়মিলে টুকরোগুলোকে উপর-নিচ, ডান-বাম করে লাগাচ্ছেন। উল্টোদিক ঘুরেই তিনি কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে বললেন,

— কামিং

সিনথি পিপিলিকার ন‍্যায় ধীর পায়ে ভিতরে ঢুকলো। মনে মনে ভাবছে এসপি সাহেব কি করে বুজলেন যে সে এসেছে। প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আর হলো না ইরফাদ সিনহা ঘুড়ে দাঁড়ালেন। লম্বা লম্বা পা ফেলে সিনথিয়ার মুখোমুখি দাঁড়ালেন ইরফাদ সিনহা।দুশ্চিন্তায় ঝিমঝিম করা সিনথিয়ার মাথাটা এখন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এতো লম্বা পাহাড়ের মতো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পিপিলিকা মনে হচ্ছে। দূর্বল শরীরটা আরোও দূর্বল লাগছিলো। সিনথিয়া ভাবছে সামনে দাঁড়ানো মানুষটি এই মূহুর্তে গর্জন দিয়ে পুনরায় তার নামও জিজ্ঞেস করে। তাহলেও সে নিশ্চিত ভুল করবে। একেতো সব চিন্তা ভাবনায় মাথা কাজ করছে না এখন তো ব্রেইন ড‍্যামেজ হওয়ার জোগার।
চোখের ইশারায় সিনথিকে চেয়ার দেখালেন ইরফাদ সিনহা। মুখে শান্ত ধীর গলায় বললেন,

— সিট ডাউন।

গতদিন ও এতো ভয় লাগেনি। যা সত‍্যি তাই বলেছে।কিন্তু সিমকার্ড কি করে লাশের কাছে গেলো সেই উত্তর সে কি করে দিবে। ভয়ে মুখটা চুপসে যাওয়া বেলুনের ন‍্যায় হচ্ছে। ভয়ে সালাম কালাম ভুলে বসেছে। ভয়ে সব গুলিয়ে যাচ্ছে। টেবিলের ওপারে বসা মানুষটিকে সে আর একবারো দেখতে চায় না। তাই মাথা নুইয়ে ফেললো সে। কিন্তু অপর পাশের মানুষটা ভয়ের বদলে আশ্বাস দিলেন,

— বি নরমাল। আই নোউ ইউ আর আ স্ট্রং গার্ল। যা বলবো শুধু ঠিকঠাক উত্তর দিবে। ভয়ের কিছু নেই।

সিনথিতা মাথা ঝাকিয়ে হ‍্যাঁ সম্মতি জানায়।

— কালকের বিষয়ে তো জানো?

সিনথি মাথা ঝাকায়।

–তোমার কি কোনো সিমকার্ড হারিয়ে গেছে?

সিনথি দুদিকে মাথা নাড়ালো। যার অর্থ না।
— কাওকে সিমকার্ড দিয়েছিলে কখনো? মনে করে দেখো।

সিনথি আবারও মাথা ঝাকালো। যার অর্থ না দেয়নি।

ইরফাদ সিনহা টেবিলে দুহাত ভাজ করে এগিয়ে বসলেন। সিনথি মাথা তুলে তাকাচ্ছে না। ইরফাদ সিনহা চাইছেন মেয়েটা তাকে ভয় না পাক। তিনি যথাসাধ‍্য মসৃণ গলায় কথা বলছেন। তিনি আবারও বললেন,

— কয়টা সিমকার্ড তুমি এই অবধি কিনেছিলে। এর মধ‍্যে লাষ্ট টোয়েন্টি ফোর এই ডিজিটের নম্বর তোমার আছে?

সিনথি দৃষ্টি তুলে তাকালো।হাত দুটো দিয়ে টেবিল আকরে ধরলো।তার চোখ মুখে বলছে নম্বরটি তার চেনা।তবে মুখে কিছু বলছে না।ইরফাদ সিনহা ভাবছে গতকাল রিভলবারের নিচে হাত রেখেও মেয়েটি এতো ভয় পায়নি। কিন্তু মেয়েটি আজ ভয় পাচ্ছে।ভয় পাওয়ার ই কথা।এই অল্প বয়সি মেয়ের উপর কি*ডন‍্যাপিং/ মা*র্ডার কেস আসা ব্রেইনে প্রেশার পরার মতোই বিষয়। তিনি চাইলেন সিনথি ইজি হোক। টেবিলের অপর প্রান্তে জড়সড় হয়ে বসে আছে সিনথি। ভয়ে বারবার টেবিল খামছে ধরছে। ইরফাদ সিনহা নিজের শক্তপোক্ত কঠিন হাতটি যথাসাধ‍্য গলিয়ে সিনথির কোমল হাতের পাতার উল্টো পিঠে রাখলেন। তারপর আলতো চাপড় দিয়ে সাহস দিলেন,

— ট্রাই টু বি ইজি।

সিনথির বুকের মধ‍্যে আতশবাজির মতো তীব্র শব্দে কেঁপে উঠলো। তারপর শীতলতায় শান্ত হয়ে গেলো ভেতরটা। ভয়টা কর্পূরের মতো উড়ে গেলো। ঐদিকে ইরফাদ সিনহা আবার বললেন,

— ঐ সিমকার্ডটা কাউকে দিয়েছো? মানে রাফিকে?

সিনথি ধীর গলায় উত্তর দিলো,

— না। ওকে কোনো সিম দেই নি। যে সিমটির কথা বলছেন ঐটা টেলিটক সিম। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়ার পর সিমটা পেয়েছিলাম। আমার বাসায় ঐ সিম ইউস করলে নেটওয়ার্কের সমস‍্যা হয় তাই খুলে রেখে দিয়েছিলাম অনেক আগে।
–তাহলে সিমটা অন‍্যের কাছে গেলো কি করে?
— আমি জানিনা।

— ওই লাশটা যার হোক।এই সিমকার্ডের জন‍্যে তুমি কতো বড় জালে ফাঁসতে পারো বোঝ? কতো ধরনের ক্রাইম হয় এখন। এতো বেখেয়ালি হলে চলবে?

সিনথি জমে গেলো। তার জীবণে আর কি কি দেখার আছে সে সত‍্যিই জানে না।সিমকার্ডটা তার হলেও সে সত‍্যিই জানে না কিভাবে অন‍্যের কাছে গেলো। আর ঐ সিমটা লাগে না বলে কোথায় রেখেছিলো ভালো করে মনেও নেই। এই অযোক্তিক কথা কি কেউ এই মূহুর্তে বিশ্বাস করবে? তার কথা বলার মুখ নেই। কয়েক সেকেন্ড চুপ রইলেন ইরফাদ সিনহা তারপর বললেন,

— বাসায় কে কে থাকে?
— মা, বাবা আর ভাই।

–তোমার ভাইয়ের এইজ? স্টাডি?

— নাইনে পড়ে তেরো চৌদ্দ হবে।

— আজ বাসায় ফিরে ভাইয়ের থেকে শুনবে তার গালফ্রেন্ড আছে কি না। আর তোমার সিমকার্ড নিয়ে তাকে দিয়েছে কি না।
–মানে?

–মানে অনেক সহজ। তোমার ভাই আন্ডার এইটিন। তাই তার কোনো সিমকার্ড থাকার কথা না। তার গার্লফ্রেন্ড থাকলে আন্ডার এইটিন ই হবে। তারও সিম থাকার কথা না। টাকা দিয়ে ফোন পাওয়া গেলেও কিন্তু সিমকার্ড পাওয়া যায় না।তোমার সিমকার্ড দিয়ে যদি তাদের প্রেমের পথ মসৃণ হয়। তারা এই সহজ পথ গ্রহণ করতেই পারে।

— কিন্তু যে মারা গেছে সে তো পুরুষ।

— তাতে কি?যে ফোনে তোমার সিমকার্ড ইউজ হয়েছে সেটি চুরি হতে পারে, অন‍্যকারো হাতে পড়তে পারে আরও অনেক কিছুই হতে পারে। তাদের মধ‍্যের কেউ মারা যেতে পারে।

— আপনি বলতে চাইছেন ওটা রাফি না?
— ধরে নাও তাই।

এমন কথা শুনে সিনথিয়া হা হয়ে রইলো। ইরফাদ সিনহা বললেন,

— হা হওয়ার মতো কিছু হয়নি। এই যুগে অনেক কিছু হতে পারে। খুশি হয়েছো রাফি বেঁচে আছে শুনে?
— আপনি কি করে সিউর হচ্ছেন যে ঐটা রাফি না।
— রাফির ডিএনএ টেষ্টের আগে তার মা আমাকে নিজে ইনফর্ম করেছেন এটি তার ছেলে না। তবুও সবার কনফিউশান দূর করার জন‍্য টেষ্ট করা হয়েছে।একজন মায়ের চোখ ছেলেকে চিনতে ভুল করে না মিস সিন্ড্রেলা।

সিনথির মুখটা ছোট হয়ে গেলো।রাফির ঠকানোর কথা টা মনে পড়ে আবার বুকটা পুড়ে উঠলো। চোখ ভরপুর হয়ে গেলো জলে। ইরফাদ সিনহার চোখে বিষয়টি ধরা পড়লো।ইরফাদ সিনহা একটা রহস‍্য হাসি হাসলেন,

–বোকা মেয়ে ভুল মানুষকে ভালোবেসে কেও কাঁদে নাকি। বরং তুমি শুকরিয়া করো এমন মানুষের জীবন সঙ্গী হতে হয় নি।

সিনথি অপ্রস্তুত হলো আবার। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে নিলো। তারপর বললো,
— আমি কি যাবো এখন?

ইরফাদ সিনহা সম্মতি দিলেন।
সিনথি আলগোছে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু দুপায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। ধপাস করে চেয়ারে বসলো সিনথি। ইরফাদ সিনহা মিষ্টি করে ঠোঁট ছড়ালেন,

— এতো দূর্বল হলে চলবে?এই কেসের শেষ পর্যন্ত তোমাকে স্ট্রং থাকতে হবে। কনফিডেন্ট থাকতে হবে। তুমি তো জানো তুমি কিছু করোনি। তাহলে কেনো নিজের দম বন্ধ করে রেখেছো? মন ভরে শ্বাস নাও। আমি আছি তুমি নিশ্চিতে থাকো।

সিনথির মনটা শুভ্র শিউলির ন‍্যায় ফুরফুরে হলো। সে শ্বাস টেনে নিলো লম্বা করে। বকুল ফুলের সুঘ্রাণে বুকের ভেতরটা পরিপূর্ণ হলো যেনো। ইরফাদ সিনহার মতো এসপি তাকে বিশ্বাস করলো। ইরফাদ সিনহার দেয়া আশ্বাসে মরা গাছে যেনো ফুল ফুটলো সিনথির। সিনথি অনেকদিন পর ঠোঁট ছড়িয়ে একটু খানি হাসলো।সে তো স্বপ্নেও ভাবেনি এতো অল্পের মধ‍্যে দিয়ে সে আজ ছাড়া পাবে।সে তো চিন্তায় চিন্তায় নিজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলো। বাবার মুখে কাল রাতে শুনেছিলো ইরফাদ সিনহা একজন সৎ,দক্ষ, ইনটেলিজেন্ট পুলিশ অফিসার। এতো অল্প বয়সে নিজের বুদ্ধিমত্তা, পরিশ্রম, সাহসের জোরে নিজের যোগ‍্য আসন অর্জন করেছেন। তবে সিনথির মনে হচ্ছে এর বাইরে তিনি একজন অমায়িক মানুষ।

__________________

বিকেল বেলা সিনথিয়ার বাবা তাকে বান্ধবির বাড়িতে রেখে যান। যাতে সবার সাথে কথা বলে মনটা হালকা হয়।ঐদিনের পর থেকে নিজেকে ঘরকুনো করে রেখেছিলো মেয়েটা। তাছাড়া ভয়ে বাইরেও বের হতে দেয়নি তার বাবা মা।অনেকদিন পর তার মনে হচ্ছিলো সত‍্যিই তার নিজেকে সময় দেয়া প্রয়োজন।না হলে সে পাগল হয়ে যাবে। বাবাকে বলায় তার বাবা তার বান্ধবির বাসায় তাকে রেখে গেছেন। বলেছেন আবার রাতে এসে নিয়ে যাবেন। সেখান থেকে সিনথিয়া আর রিমা অনেকদিন পর রাস্তায় হাটতে বেড়িয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ পেরিয়েছে তারা। শুনশান গলিতে তেমন মানুষ নেই। একটু পরপর রিকশার দেখা মেলে। সন্ধ‍্যা নামবে তাই তারা একটা রিকশা ডেকে নিলো।সে সময়েই পাশ দিয়ে যাওয়া একটা কার তাকে দেখেই যেনো থামলো। সিনথির বুকটা কু ঢেকে উঠলো। সেদিনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির কথা ভেবে শিউরে উঠলো সিনথি। তড়িঘড়ি করে রিকশায় উঠে বসলো সিনথি। এর মধ‍্যেই গাড়ি থেকে নেমে এলো সেদিনের মতো মুখোশধারী দুটো লোক। রিকশাওয়ালাকে চাকু দেখিয়ে সিনথিকে টেনে হিচড়ে নামালো। রিমা চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে পালালো। সন্ধ‍্যা নেমে গেছে। রাস্তায় তেমন কোনো লোকজন নেই। আর যারা আছে তারা ভয়ে এগিয়ে আসছে না। সিনথিয়া উপায়ন্তর না দেখে লোকটির কবজি বরাবর কামড় বসালো। তারপর সামনের দিক ছুটলো। পেছনে থাকা মানুষ দুটো ছুটলো তার পিছন পিছন। সিনথি ফোনের সেইভ অপসন থেকে নাম্বার বের করলো। পর পর তিনটা কল করলো। কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোন তুললো না। অনেকটা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একটু দাঁড়ালো।তারপর মেসেজ লিখলো,

— আমি মরে গেলাম ইরফাদ সাহেব।

#গল্পটি অনেক বেশী কপি হয়ে গেছে।সবাই বেশী বেশী মেনশন দিবেন যাতে সবাই আমার পেইজটা খুঁজে পায়।
গল্পটির সকল প্রশ্নের উত্তর ধাঁপে ধাঁপে আসবে। ধৈর্য্য হারাবেন না। আশা করি পাশে পাবো সবাইকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here