#রং
#পর্বঃ১৭
Tonni-Tonu
গোধূলি বেলা দরজা-জানালা লাগিয়ে লাউ এর ডগার মতো নেতিয়ে পরা শরীর নিয়ে শুয়ে আছে রিমা। পর্দা চাপানো জানালা দিয়েও মৃদু আলো আসছে। পাশে হাত ধরে বসে আছে তিথি। সে অন্য হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রিমার চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনতা জল।তিথি চোখের কোনা থেকে গড়িয়ে পড়া জল মুছে দেয়।সে রিমাকে শক্ত হওয়ার জন্য বলে,
— আর কাঁদিস না! সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন…
রিমা কথাটুকু চোখ বন্ধ করে ভাবে,” সব ঠিক হওয়ার দিন শেষ।” কথাটি মনে হতেই,বুকের মধ্যে হু হু করে ওঠে রিমার।সে দম বন্ধ করে থাকে কিছুক্ষণ-যদি বুকের যন্ত্রণাটা একটা বারের জন্য কমে। দগ্ধ আগুনে ভুল করে পড়ে যাওয়া বস্তুটি যেমন জ্বলে পুড়ে ওঠে। তার ভেতরটা তেমন করেই পুড়ে উঠছে। এক সেকেন্ডের জন্যে কমে না তার সদ্য জন্ম নেয়া ক্ষতের ব্যাথা। সে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে। আবার হুহু করে কাঁদে। এই নিদারুণ যন্ত্রণা যে- সে আর সহ্য করতে পারছে না। রিমার কান্নারত অবস্থায় তিথিও ব্যকুল হয়ে যায়। আর কতোক্ষণ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রিমাকে শান্তনা দিবে। তবুও আহত গলায় বলে,
–“চুপ যা না! নিজেকে শক্ত কর।”
বুকের মধ্যে আরও দুমরে মুচরে যায় রিমার। সবাই এই একটা কথাই বলবে।কিন্তু শক্ত হওয়া এতো সহজ? পৃথিবীর কেউ তার ব্যাথা বুঝবে না। কেউ না…..কেউ না। শুধু সবাই শান্তনা দিয়ে যাবে। কিন্তু এই ভুলের মাশুল তার একাই গুণতে হবে। এই একাকিত্বে কষ্ট পোহাতে পোহাতে পুরো জীবন চলে যাবে। এক ফোঁটা কষ্টের ভাগ কেউ নিতে পারবে না। তার কি দোষ ছিল? মনে মনে সে চিৎকার দিয়ে বলে,” আমার কি অপরাধ ছিলো! বিনা দোষে কেনো পুড়ছি আমি! বুকের ভেতর যে আমার জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে! আমি আর সহ্য করতে পারছি না।” ফর্সা নাক রক্তলাল হয়ে গেছে রিমার। চোখ দুটো ফুলে একাকার। বাধভাঙ্গা চোখের পানি যেনো এক সেকেন্ডের জন্যে থামছে না। তিথির বাসায় যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কি করে যাবে- এই আহত মানুষটাকে ফেলে। সে কিছুক্ষণ ভাবে তারপর তিথি উঠে দাঁড়ায়। দূরে সরে গিয়ে মামির নম্বরে কল দেয়,
— আসসালামু আলাইকুম মামি!
–ফোন দিছোস ক্যান?
বলার আগেই তিথি দমে যায়। এভাবে কথা বললে-কিছু কি বলার থাকে। বলার আগেই যেনো মুখের উপর ঝাটার বাড়ি। তার কপাল-ই এমন। না আছে কথা বলার শান্তি অর না আছে অন্য শান্তি। সে সব জানে। তাই তার কিছু করার নেই।
–“কথা কস না ক্যারে! তোর মতো আমি বইসা খাই নাকি? আমার কাজ কাম নাই?”
তিথি সম্বিত ফেরে,
–ঐ যে! রিমা! মানে রিমা খুব অসুস্থ। আমি একটা রাত ওর কাছে থাকতে চাচ্ছিলাম।
—তো থাক….না করছে কে?” কথা শুনেই তিথি মনে মনে খুব খুশি হয়। যেভাবেই হোক, রাজি তো হয়েছে।খুশিতে তিথি ফোন কাটতে নেয়। ঠিক ঐ সময়ে ওপাশ থেকে শোনা যায়,
–“দ্যাখ পেট টেট বাজায়া আসিস না!তোর মায়ের পাপ টানতে টানতে আমার জীবন শেষ। আবার তোর পাপ টানতে যেনো না হয়।”
তিথির হৃদয়ের কাছে কেউ যেনো দুম করে একটা বোম ব্লাস্ট করে।আবারো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় হৃদয়। চোখ ফেটে জল উথলে পড়তে চায়। সে যেনো সর্বশক্তি দিয়ে বাঁধা দেয় দুচোখের অশ্রু। তার মতো মেয়ের কাঁদতে নেই। তার কান্না বারণ। ঠিক ঐ মূহুর্তে ফোনটা আবার কেঁপে ওঠে,
— সুহাসিনী!তুমি বললে না যে….কিসের এত দুঃখ তোমার?
মন টা আরও বিগরে যায়। এতো অশান্তির মধ্যে আবার কোন অশান্তি পিছু লাগলো।রিমা ঠান্ডা মাথায় ভাবে এসপি”র মতো একজন তাকে এসব লিখবে? এটা সম্ভব নয়? তিথি ইংরেজি অক্ষরে লেখে,
–কে আপনি!
–কেনো! যাকে তুমি দুঃখ লিখে পাঠালে..
তিথি নিরবে ভাবে,সেদিন যা হয়েছিলো তা শুধুই মজা। সিনহার মতো একজন এসপি” তার জীবনে আসবে তা সে দুঃস্বপ্নেও ভাবে না। আর এসপি”র পারসোনালিটি”র সাথে এই মেসেজ গুলো মিলছে না। তিথি রিপ্লাই করে,
–আপনি কে?
–বন্ধু!
–আরে পরিচয় কি?
–আমি মানুষ…. এর চেয়ে বড় পরিচয় নেই…
তিথির মনটা এমনিতেই খারাপ। তার উপর ভনিতা সহ্য হচ্ছে না। সে লিখে,
–আরে ব্যাটা নাম কি?
–তুমি যে নাম দাও….
— কু/ত্তা!য় কামড় দিছে?
–কেনো? আমি তোমার বন্ধু হতে পারি না? একটা নাম কি দেয়া যায় না?
–বন্ধু সবাই হতে পারে না।
–কেনো হতে পারে না।
–জানিনা!
–একবার হাত বারাও…..পুরো পৃথিবী ভুলিয়ে দিবো।সব দুঃখ কমিয়ে দিবো….
—হাস্যজ্জ্বল ফুটফুটে দিনের শুরুতেই কালবৈশাখী ঝরের মতো কখনো ঘুটঘুটে অন্ধকার অনুভব করেছেন?কখনো একটা মিনিট-কে তিনশত পয়ষট্টি দিনের মতো দীর্ঘ লেগেছে?বিশাল পৃথিবী ভর্তি মানুষের মধ্যে থেকেও নিজে শূন্য!এটা অনুভব করেছেন?আমি করেছি বহুবার! নিজের গহীনে রাখা অব্যক্ত গল্প গুলো কখনো তিক্ত লোনা জল হয়ে অথবা দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিশে খোলা চিঠির মতো উড়ে গেছে।তখন কেউ তা খুলে দেখেনি। আমার কেউ নেই,কেউ ছিলোনা। আপনি জানলে হাসবেন……. যখন তিক্ত নোনা জলে চোখের পাতা মৌমাছির হূল ফোটানোর মতো ফুলে যেত,চোখের পাতা খুলতে পারতাম না। সে বন্ধ চোখেও এই অবুঝ মেয়ে রাতের আধারে হাত বাড়িয়ে কোনো অদৃশ্য ছায়া”র সঙ্গ চাইতো। শূন্য হাত বাড়িয়ে রাখতো কল্পনার কোনো অস্তিত্বহীন মানুষের অপেক্ষায় -সে ভাবতো যদি কোনো ভ্যাম্পায়ার আসতো! যদি ছোটবেলায় দেখা কার্টুনের সুপারম্যানটা তার জন্যে আসতো! ঐ যে ছোট্ট বেলার “সুন-পরীটা”! সে কি বন্ধু হতে পারে না? আচ্ছা! এই পুরো পৃথিবী জুরে এতো মানুষ তাহলে তার জন্যে একটা বন্ধু নেই কেনো? যাকে সব বলা যায়,সব কিছু। এই ছোট্ট মেয়েটা কি করতো জানেন? অসংখ্য ফিডব্যাকহীন নম্বরে নিজের অব্যক্ত কথাগুলো লিখতো-লিখতো তুমি কি আমার বন্ধু হবে! বাস্তবতা না শেখা পিচ্চি মেয়েটা বুঝতো না এভাবে বন্ধুত্ব হয় না…. কোনো সুপারম্যান,কোনো ভাম্পায়ার কোনো কল্পনার প্রিয় চরিত্র কখনো বাস্তব জীবনে পরিবর্তন করতে পারে না।নিজের দুঃখ নিজেকেই কমাতে হয়। নিজের জীবনের হাল নিজেকেই ধরতে হয়। নিজের জীবনের সুপারম্যান নিজেকেই হতে হয়। এই আবেগ মাখা প্রতিশ্রুতি সবাই দেয়। কিন্তু কেউ সত্যিকার অর্থে দুঃখ ভোলাতে পারে না। দুঃখ হলো একান্ত নিজের জিনিস,ব্যক্তিগত যন্ত্রণা। বিরক্ত করবেন না প্লিজ……
–কিন্তু আমি তো তোমার কথার প্রেমে পড়ে গেলাম সুহাসিনী….. যার কথা এতো সুন্দর। না জানি মনটা কত সুন্দর….
— নাটক কররবেন না তো….. আমি বিবাহিত….আমার মেয়ে আছে একটা….ডিস্টার্ব করবেন না…
— মিথ্যা বলছো কেনো? একবার হাত বাড়িয়েই দেখোনা..
___________
সকাল বেলা ব্যস্ততার কারণে কথা গুলো শোনা হয়ে ওঠেনি। এখন প্রায় সন্ধ্যা! ইরফাদ সিনথিয়া কে আরেকবার নিজের কেবিনে ডাকে। সাহসী সিনথিয়া ইরফাদের কাছে খুব জড়সড় হয়ে বসে। সেই আগের মতো। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার ভেতরে নিজেকে বাঁচানোর অদম্য শক্তি বিদ্যমান। মুখটা দেখে মনে হয় সেই আদিম যুগের শান্ত অবলা নারী। নাহ অবুঝ বাচ্চা। ইরফাদ নিজের চেয়ার চেনে বসে। তারপর সেই শীতল গলায় বলে,
— আমাকে কোয়েশ্চেন করতে হবে? নাকি নিজেই বলবে….
সিনথিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে ঠিক আগের মতোই। “কোথা থেকে শুরু করবে সে!” ইরফাদ সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে আবার,
–তুমি কি সত্যি বলবে? নাকি সত্যের সন্ধানে আমাকে আবার নামতে হবে। সত্য যত গভীরেই থাকুক। আমার চোখ এড়াবেনা….
সিনথিয়া চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায় না। সামনের মানুষটাকে সে বুঝতে পারে না। কখনো তার কাছে মনে হয় মানুষটির হৃদয় পৃথিবীর সবচেয়ে কোমল জিনিসের মধ্যে একটি। আবার কখনো মনে হয় তার হৃদয় ইস্পাতের চেয়েও কঠিন। ইরফাদের কথা শুনে তার কখনো কখনো মনে হয়,এই পৃথিবীতে এই একটা মানুষ সবচেয়ে বিশ্বাসের,ভরসার।তাকে এতো সুন্দর করে বুঝতে কেউ পারেনি।কেউ না।
আবার কখনো মনে হয় সব মিথ্যা। সব কেবল সত্যি জানার কৌশল। এই মানুষটাকে একবারের জন্যে বুঝে উঠতে পারে না সিনথিয়া। তার কোমল কথাগুলো শুনে মনে হয়- তার বলা সত্যিটা এসপির প্রয়োজন। শুধু সত্যি!
সিনথিয়া টেবিলে নিজের কোমল হাত দুটো রাখে। তারপর ধীর শান্ত গলায় বলে,
–প্রশ্ন করুন….
–মার্সাল আর্ট জানো! তাহলে সেদিন নিজেকে কেনো বাঁচালে না?
— ” নিজেকে বাঁচানো” ঐ প্ল্যানের মধ্যে ছিলো না…..
অনেক আগে থেকে আমার নম্বরে একটা স্প্যাম কল আসতো। আমি প্রথমে কথা বলিনি। পরে একটা ম্যাসেজ আসে। “আমি তোমার খুব কাছের। আমার সাথে তোমার কথা বলার প্রয়োজন আছে।” এরপর থেকে কথা বলা শুরু। প্রথমে-ই সে আমাকে জানায়। সে আমার ভাই,রক্তের ভাই। আমি খুব অবাক হই। প্রথমত বিশ্বাস করিনি। পরে সব বলার পর বিশ্বাস হয় যেহেতু আমি এডপ্টেড ছিলাম। ভাইয়ার সাথে কথা হতো। ভাইয়া বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলো। সব কথা সেয়ার করতাম, কষ্ট পেলে বলতাম। যেদিন আমাকে থানায় ডাকা হলো-সেদিনও ভাইয়া কল দেয়। এরপরে যখন আপনার পারসোনাল নাম্বারটা নিলাম সেদিন ও সব বলি। ভাইয়া আমাকে বলে,”আপনার কাছে আমার বাবা আছে। আপনাকে পেলে আমার বাবাকে দেখতে পাবো। তার জন্যে আমাকে ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে। তা হলো- ভাইয়ার লোকেশন অনুযায়ী আমাকে যেতে হবে। এবং দু”জন লোক আমাকে তাড়া করবে। আমি ছুটবো…. এবং একপর্যায়ে আমি আপনাকে কল দিবো। আপনি আসুন না আসুন ঐটা ম্যাটার না। আপনি যেনো জানেন,রাফির পর আমাকেও কিডন্যাপিং এর ট্রাই করা হয়েছে। আমি বাবাকে দেখার লোভে তাই করি। তবে সেখানে হয় অন্য বিপদ। নির্দিষ্ট সময় পর তারা আমাকে সত্যি ধাওয়া করে। যেহেতু সব প্ল্যান করা। তাই সেদিন কোনো ঝামেলায় জড়াই না। তাদের মারলে যদি আরেকটা কেস হয়। তখন আরও ফেঁসে যাবো। তাই কোনো রকমে পালিয়ে বাড়ি ফিরি। আসার সময় ফোনটা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়। বাড়ির অবস্থা ক্রিটিক্যাল থাকায় আমি সিমকার্ডটা আর অন্যফোনে তুলতে পারিনা।ভাইয়ার সাথে কথাও হয় না। পরের দিন তো আমাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।
–তারপর! চিঠি?
–আপনি জানলেন কি করে?
–যার হাত দিয়ে চিঠি এসেছে তাকে ধরা কি কোনো ব্যাপার! চিঠি তোমার হাতে আসার আগেই আমার হাতে এসেছে…..আর ঐটা রাফির হ্যান্ড রাইটিং এর সাথে ম্যাচ করেনি…..
— “চিঠি” ভাইয়াই পাঠিয়েছে। সে জানে রাফি নিখোঁজ। নিজেকে আড়ালে রেখে সে চাচ্ছে- সেদিনের কিডন্যাপিং বিষয় টা জানুন। বিষয়টা নিয়ে ভাবুন…. না ভাবলেও ভাবানোর ব্যবস্থা নিলয় ভাই করবেন। ঐ চিঠি উদ্দেশ্য না। উদ্দেশ্য আপনাকে বলা। আমি আপনাকে বললে- হয়তো আমাকে সামনে রেখে বিষয়টি ঘেটে দেখবেন। আর ভাই আপনাকে ধরবে….এটা হয়তো একটা চাল! এটা গেস করে বললাম….
–ঐজন্যেই ফোন দিয়ে আমাকে সেদিন জানালে? আর রাস্তা দেখালে? আমাকে ধরার এতো ইচ্ছে তোমার?
নিজের কথায় নিজেই যেনো ফেঁসে গেলো সিনথিয়া। তবে ইরফাদকে ধরার, বিপদে ফেলার ইচ্ছে তো তার কোনোদিন ছিলো না। এর পেছনে যে বড় কোনো সত্য লুকিয়ে আছে ঐটাও মাথা খাটিয়ে দেখেনি সে। তার বাবা”কে দেখার এক অদম্য ইচ্ছে ছিলো। তাকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে ছিলো। তাই তো সব কথা মত ছোট্ট কাজটি করেছিলো সিনথিয়া। তবে এসপি”র বন্ধুসুলভ আচরণ,তাকে সাপোর্ট দেয়া,সাহস দেয়ার জন্যে কবেই সব ভুলে বসেছে। একজীবনে বাবাকে দেখার ইচ্ছা,বাবাকে ছুঁয়ে দেখার আকাঙ্ক্ষা কবেই মাটি দিয়েছে সে। সে কথা এসপি”কে কি করে বুঝাবে সিনথিয়া। কি করে বলবে,” এক বিন্দু বিপদেও যে সিনথি তাকে ফেলতে পারবে না।” পুরো পৃথিবীর ভুল বুঝুক। কিন্তু ইরফাদের ভুল বোঝাটা মোটেও গায়ে সহ্য হচ্ছে না। সিনথিয়া ইরফাদের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
–তাহলে কি যেচে গিয়ে আপনাকে বলতাম?ভুল রাস্তা দেখিয়ে আসতাম? কিডন্যাপিং এর পুরো চাল তো সেই কবেই ঘুচিয়ে এসেছি।
–মানে??
–সিসি ফুটেজ চেক করে কিছু পেয়েছেন? ঐ রাস্তায় তো আমি যাই-ই নি। প্রথমে বাবাকে দেখতে চাওয়ার ইচ্ছেতে-একটা ভুল আমি করেছিলাম। আবার চিঠি পেয়ে হয়তো আমি আপনাকে জানাতে পারিনি।একদিকে বড় ভাই এর কথা আপনাকে বলতে পারিনি। আবার আপনাকেও বিপদে ফেলতে চাইনি। তবে ভাবতাম কিডন্যাপিং এর ড্রামার দিন বাবা থানায় এসেছিলো। আপনি যদি জানেন। হয়তো বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।তাহলে যদি বিপদ হয়? তার আগেই আমি ঐদিন বলেছিলাম। আর ভুল পথ দেখিয়ে কেস সেদিন-ই ঘুড়িয়ে দিয়ে এসেছি। না পাবেন ক্লু, না ধরবেন পথ। আর না কেউ পাতবে জাল। আমি কখনো চাইনি,”আপনার বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হোক।”
–কেনো?আমি কে তোমার?
এসপির বলা কথা কেনো যেনো হৃদয় হালকা দুলিয়ে গেলো সিনথিয়ার। এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে সে!এর উত্তর তো তার কাছে নেই। তবে একটা কথা খুব করে মনে হতেই সিনথিয়া দম নিলো। তারপর বললো,
–যেকারণে আপনি আমাকে বাঁচিয়ে গেলেন! সাপোর্ট দিলেন,সাহস দিলেন।
–প্রত্যেক নির্দোষ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে এই ইরফাদ “সেইম” । তোমার চোখ দেখে যা বুঝেছিলাম-তুমি কারো চালা গুটি। আবেগ প্রবণ, বাস্তব জ্ঞানহীন মেয়ে। তাই সাপোর্ট দিয়েছি। বাকি যা করেছি কেস সলভের জন্যে করেছি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এটাই করতাম।
“এই ছোট্ট সত্য কথাটা কেনো যেনো তীব্র ব্যাথা দিলো সিনথিয়ার ছোট্ট হৃদয়ে। তার কাছে সবাই সমান। আচ্ছা!মনের অজান্তে সে কি স্পেশাল কিছু ভেবে বসেছিলো? এই সত্যটি তাকে কেনো পোড়াচ্ছে!” ইরফাদ মধ্যমা আর বৃদ্ধাঙ্গুলে টোকা দেয় টেবিলে।তারপর বলে,
— তুমি মার্সাল আর্ট জানো! তাহলে তোমার সামনে থেকে রাফি-কে কিভাবে কিডন্যাপ করলো?
— “আমার এতো কনফিডেন্স ছিলো না! যা হয়েছে- আমার কিছু করা আগেই!”
–এই লাস্ট কোয়েশ্চেন!কনফিডেন্স যদি নাই থাকে- আমাকে কেনো বাঁচালে…..!
এই ভয় টাই পেয়েছিলো সিনথিয়া!সেদিন এই প্রশ্নের থেকে কিছুক্ষণের জন্যে মুক্তি পেলেও আজ সে পুরো মুখোমুখি। এই প্রশ্নের উত্তর দিনরাত এক করে সে ভেবেছে? ইরফাদ”কে মারতে দেখে তার রক্ত মাথায় উঠে গেছিলো। সে নিজের জ্ঞানেই ছিলো না। কোথা থেকে এত শক্তি আর কনফিডেন্স পেয়েছিলো সে তো নিজেও জানে না। প্রশ্নের উত্তরে সে নিজেই নিজেকে পাল্টা প্রশ্ন করে।”প্রেমের মধ্যে কি কেউ দ্বিতীয় প্রেমে পড়ে?” একজনের জন্যে কাঁদতে কাঁদতে আবার অন্যের প্রেমে পড়া যায়!সে যদি প্রেমে পড়েই থাকে!তাহলে কি তার চরিত্র ঠিক নেই। সে কি ছলনাময়ী? চরিত্রহীনা! কিন্তু তার মন তাকে বারবার একটাই উত্তর দিয়েছে” তুই প্রেমে পড়িস নি! তুই ভালোবেসেছিস!”
চলবে……..