#নীলের_পরি (৫)
বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর এক মুহূর্ত দেরি করে নি নীল। পরি কে তৎক্ষণাৎ গাড়িতে বসিয়ে দেয়। পরি এখনো চুপ হয়ে আছে। নীল ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগল। গাড়ি তার আপন গতিতে চলতে লাগল। রাতের আকাশ দেখতে পরির খুব ভালো লাগে। কিন্তু আজ পরি আকাশ দেখছে না। স্থির হয়ে বসে আছে। গাড়ির জানালা দিয়ে মৃদু ফুরফুরে বাতাস মাঝে মাঝে পরি কে ছুঁয়ে যাচ্ছে। আজ না হলে পরি এই মুহূর্তটা কে খুব উপভোগ করত। কিন্তু এখন বিন্দু মাত্র ইচ্ছে জাগছে না তার অন্তরে। বাতাসে হালকা শীত ও লাগছে পরির। যার কারণে বার বার কেঁপে উঠছে। নীল ড্রাইভিং করতে করতে আড় চোখে পরি কে দেখে নিচ্ছে।
কত শত দিন পর পরি কে দেখছে সে। পরি কে দেখার স্বাদ আদৌ কি মিটবে কখনো? পরির দিকে তাকাতেই নীলের বেশ হিংসে হচ্ছে, প্রকৃতি যে বার বার ওর পরি কে স্পর্শ করে যাচ্ছে। কেন ওর পরি কে স্পর্শ করবে? কিন্তু প্রকৃতির স্পর্শ তে যে কোনো কলঙ্ক নেই। আছে শুধু মুগ্ধতা তাই ওর রাগ হচ্ছে না। হচ্ছে কেবল হিংসা। অদ্ভুত প্রেমিক সে।প্রকৃতির হাওয়া যখন পরি কে স্পর্শ করে যাচ্ছে তখন পরি কে বেশ স্নিগ্ধ নিষ্পাপ লাগছে। নীল হঠাৎ লক্ষ্য করল পরি বার বার কেঁপে উঠছে। নীল ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করল কেন কাঁপছে মেয়েটি। কয়েক সেকেন্ড এর মাঝে বুঝে ও গেল শীত প্রকৃতিতে হানা দিচ্ছে যার কারণে বাতাস পরির শরীর কে স্পর্শ করলেই পরি কেঁপে উঠছে। নীল গায়ে ব্লেজার পরে থাকাতে শীতের আগমন বুঝতে পারে নি।
নীল গাড়িটা সাইটে থামিয়ে গায়ের ব্লেজার খুলে নিল।
পরির দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টি তে চেয়ে রইল। কি স্নিগ্ধ এই মুখ, এত মায়াবি মেয়েটা, যার কারণে নীল বারং বার মেয়ে টার প্রেমে পড়ে। একটা মানুষের প্রতি কতভাবে প্রেম হতে পারে? নীল জানে না। জানার ইচ্ছেও নেই। ওর শুধু জানে মেয়েটির প্রতি অসীম ভালোবাসাটা কখনোই মিটবে না।
মৃদু বাতাসে পরির সামনের ছোট চুল গুলো কপালে ছিটকে পড়ছে। যার কারণে পরির বিরক্ত না লাগলে ও নীলের বিরক্ত লাগছে। নীল পরির কপাল থেকে চুল গুলো অতি যত্নে সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিল। নীলের স্পর্শে পরি হালকা নড়ে চড়ে বসল। নীল মৃদু হাসল। তারপর ব্লেজার টা পরির গাঁয়ে জড়িয়ে দিল। পরি উষ্ণতা পেয়ে ব্লেজার খিচে ধরেছে। নীল পরির কপালে চুমু দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসল,কিন্তু কিছু একটা ভেবে চুমু খেল না। মৃদু হেসে পুনরায় ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল। আর পরির কোনো দিকে ধ্যান ই নেই। সে তার ভাবনাতে মজে আছে। নিজের নিশ্বাসটা পাশে বসে আছে এতেই যেন নীল সব সুখ পেয়ে গেছে। কতশত দিনের অপেক্ষার খানিকটা অবসান ঘটেছে আজ। যে ভালোবাসার কোনো রূপ ছিল না। ছিল না নাম পরিচয়। ছিল না প্রকাশ আজ থেকে সেই ভালোবাসা একটি সম্পর্কের নাম পেয়ে গেল। মেয়েটি ওর বউ রূপে বসে আছে। আজ থেকে পরি নীলের বউ। মনের সমস্ত অনুভূতি যেখানে অদৃশ্য দেয়ালের মাঝে বাঁধা ছিল , আজ বুক ফুলিয়ে সারা পৃথিবীকে বলতে পারবে।
আমার বউ , হ্যাঁ আমার বউ এই মেয়েটি। যাকে ভালোবেসে নীল সব কিছু উৎসর্গ করে দিবে।
দশ মিনিটের মাথাতে নীল তাদের বাসার সামনে চলে এল।
বাসার সামনে গাড়ি থামাতে ই পরি চমকে তাকায়। এটা যে নীলের বাড়ি তা পরি জানত না। কারণ তিন বছর ধরে নীলের সাথে কখনো দেখা তো দূরে থাক কথা ও হয় নি।
নীল গাড়ি থেকে নেমে পরির হাত ধরে নামিয়ে নিয়ে আসে।
পরির কাছে সব কিছুই ঘোলাটে মনে হচ্ছে। পরি যেন বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে। নীল পরির হাত ধরে এক পা আগাতেই পরি আবার জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে নীলের বুকে।
নীল পরি কে দুহাতে জড়িয়ে ধরে। সকাল থেকে কিছুই খায় নি পরি তার উপর এত চাপ নিতে গিয়ে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। নীলের বন্ধুরা , ভাইরা সবাই বাসার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। সবাই এক প্রকার হৈ হৈ শুরু করে দিয়েছে।
ওরা ও যেতে চেয়েছিল কিন্তু নীল নিষেধ করেছে। যার কারণে এখানেই সবাই বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। যদি কোনো সমস্যা হয় তো চটজলদি যেন যেতে পারে। কিন্তু নীল ওদের সাহায্য ছাড়াই পরি কে আনতে পেরেছে। সবাই হৈ হৈ করছে আর নীল কে বাহবা দিচ্ছে। নীল মৃদু হেসে পরি কে কোলে তুলে নেয়। তারপর বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্য পরি কে কোলে নিয়েই পা বাড়ায়। বাড়ির ভেতরে প্রবেশমাত্রই নীলের মা হন্তদন্ত হয়ে আসেন। ব্যস্ত কণ্ঠে বললেন,”নীল পরির কি হয়েছে ওও ঠিক আছে তো?”
নীল শান্ত স্বরে বলল,”আম্মু আপাতত ও সেন্সলেস হয়ে গেছে। কিছু খায় নি বোধহয় আর কেমন পাথরের মতো ও হয়ে গেছে। অনেক চাপ গেছে কি না। এখন ওর একটু রেস্ট প্রয়োজন।”
নীলের মা ও ছেলের কথায় সায় দিলেন। নীল সিঁড়ি বেয়ে উঠে পরি কে নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসে। তারপর যত্ন সহকারে পরি কে বেডে শুঁইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরির হাত ধরে রেখে তারপর মৃদু হেসে উঠে দাঁড়াল। নীলের বোন হাফসা রুমে ঢুকতেই নীল বলল,”ওর একটু খেয়াল রাখ।”
হাফসা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল। তারপর বলল,
“ভাইয়া তুই ফ্রেস হয়ে নেয়। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা চলে গিয়েছিস। ফ্লাইট থেকে নেমে এক মুহূর্ত রেস্ট ও নিলি না।
অসুস্থ হয়ে যাবি। আমি পরি কে দেখে রাখছি তুই যা।”
বোনের কথায় নীল হাসল। তারপর ফ্রেস হতে চলে গেল।
আর যাই হোক নীল পাগল প্রেমিক তো বটেই। তা না হলে কি এভাবে ছুটে আসত?
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি
যারা এখনো “বিয়ে থা” পড়েন নি। পড়ে ফেলুন।
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/286251533935748/?app=fbl