#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#ষষ্ঠ_পর্ব
ঘড়িতে সময় সকাল সাড়ে আটটা। বাইরে তখন তুমুল ঝড় বৃষ্টি। ঝড়ের কারণে হেলে যাচ্ছে গাছ। ঝরছে শুকনো পাতা।
উড়িয়ে দিচ্ছে ধূলো। ভেঙে দিচ্ছে স্বযত্নে গড়া পাখির বাসা।
কালো পিচঢালা রাস্তার বুকে আঁচড়ে পড়ছে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা। মাটির সোদা গন্ধ ভাসছে চারদিকে। আগামীকাল
রাত থেকে শুরু হয়েছে অঝর ধারার বৃষ্টি। যেন ধুয়ে দিচ্ছে তাপদাহের অসহ্যকর গ্লানি। কালকে থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হলেও এখন শুরু হয়েছে ঝড়ের তান্ডব। সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে
অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি। এই মাসেই ‘এসো হে বৈশাখ’ গান গেয়ে বৈশাখকে সাদরে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। পান্তা, ইলিশ, খেয়ে উদযাপন করার হয়েছে নববর্ষ। বৈশাখমাসকে কেন্দ্র করে কত বনাঢ়্য আয়োজন। রাস্তায় রাস্তায় আলপনার বাহার।
রমনার বটমূলে আয়োজিত বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। এসবকিছু
চমৎকারভাবে পালন না করা হয়েছে। ‘এসো হে বৈশাখ’ এত সুন্দর সন্মানিত ডাক শুনে বৈশাখও লেজ নাড়তে নাড়তে আজ ভয়ানক রুপ নিয়ে হাজির হয়েছে। এখন তার রুপের অনলে অসহায় মানুষদের কত ক্ষতি হয় কে জানে। তবে এতদিনের তীব্র তাপদাহ কাঁটিয়ে মিলেছে এক পশলা বৃষ্টির পরশ। জনজীবনে মিলেছে স্বস্ত্বির আভাস। গরমের তীব্রতা, আবহাওয়ার রুষ্টতা, এতদিন ছিল বাঙালির কষ্টের কারণ।
এসব ছাপিয়ে পরিশেষে বৃষ্টির আগমন এক প্রশান্তির বার্তা!
কুহু ঘুম থেকে তাড়াতাড়িই উঠেছে৷ মন খারাপের রেশটুকুও আর নেই। মেজাজ ফুরফুরে। সে বেলকণিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। হাত বাড়িয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে দু’হাত। কখনো বা মুখ এগিয়ে আনায় বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটা ছিঁটকে পড়ছে চোখে মুখে।
অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির স্পর্শ এনে দিচ্ছে অনাবিল সুখানুভূতি।
ঝড়ের তান্ডব ততক্ষণে কমে এসেছে৷ এখন চলছে অবিরত
বৃষ্টির নিত্য। বইছে হিমেল হাওয়া। কোথায় যেন ট্রান্সমিটার ব্লাস্ট হলো। তখন হইহই করে উঠল কিছু লোক। চেঁচামেচিও শোনা গেল। কুহু উঁকিঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করল, পারল না। সম্ভবত মোড়ের দিকে ট্রান্সমিটার ব্লাস্ট হয়েছে। তাদের বাসার কাছাকাছি হলে লোডশেডিং হতো। কুহু বেলকনির গ্রিলের বাইরে হাত বাড়িয়ে গুনগুন করল,
-”আয় বৃষ্টি ঝেপে ধান দিবে মেপে
লেবুর পাতা করমচা যা বৃষ্টি ঝরে যা।”
গুনগুন করে গেয়ে নিজেই হেসে ফেলল। আগে বৃষ্টি এলেই এটা গাইত। চুপিচুপি ছাদে গিয়ে ভিজতো। যদি পরে আম্মুর মারও খেতো। কখনো বাবা আর ভাইয়ার উসিলার বেঁচেও যেতো। ইশ! আগেই দিনগুলোই ভালো ছিল। আর এখন বড়
হয়ে ঝামেলার শেষ নেই। এখানে যাবে না, সেখানে যাবে না, এর সঙ্গে কথা বলবে না, তার সঙ্গে মিশবে না, একা কোথাও হবে না, এই করবে না, সেই করবে না, বিধি নিষেধের শেষ নেই। যদিও কলেজ কোচিং ছাড়া একা কোথাও যাওয়া হয় না। পড়াশোনা না করলেও আগে কলেজে যেতে খুব ভালো লাগত। ক্লাস মিস করে বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যেতো। এখানে ওখানে বেড়ানো হতো। অথচ এ দুদিনে আর
ভালো লাগছে না। এত এত অত্যাচার করলে কলেজে টেকা যায়? এখন কলেজে যাওয়ার কথা মনে হলেই গলা শুকিয়ে আসছে। ভয় লাগছে। সে খুব ভালো করেই জানে, রিদ স্যার এবার থেকে কঠিন কঠিন পড়া ধরবে, যখন পারবে না তখন গতকালকের মতো আবার মারবে। এখন ওকে মারের উপর রাখবে। কারণ না পেলে অকারণে মারবে। তবুও সে মারবে।
পাষাণ, নিষ্ঠুর, হৃদয় নিয়ে তার টিচার হওয়ার থেকে কসাই হওয়া উচিত ছিল। কসাই হচ্ছে তার যোগ্য পেশা। মানাতোও বেশ। পরণে চেক লুঙ্গি আর গলায় গামছা ঝুলিয়ে দিলেই পারফেক্ট লুকে আসত। তখন রিদওয়ান রিদ নাম কেটেকুটে
সবাই ডাকত, ‘কসাই রিদ।’
তখন কারো পদধ্বণি শব্দ শুনে কুহু দৌড়ে রুমে চলে গেল। জলদি করে আঁটকে দিলো বেলকনির দরজা। তারপর শুয়ে পড়ল ভদ্রভাবে। চোখজোড়া বন্ধ করল ঝটপট। যেন গভীর ঘুমে নিমগ্ন। তখন ইসমত আরা বেগম দরজা খুলে নিঃশব্দে
মেয়ের রুমে উঁকি দিলেন। রুমে চুপ করে শুয়ে থাকতে দেখে চলে গেলেন। নয়তো এতক্ষণে ভাষণ শুরু হয়ে যেত। ভাষণ গিয়ে মোড় নিতো তার ফোন টিপা নিয়া।আম্মু চলে গেলে সে এবার উঠে আধশোয়া হয়ে বসল। হাত বাড়িয়ে ব্লু টুথ নিয়ে কানে গুঁজে নিলো। তারপর ফোন খুঁজতে গিয়ে তার খেয়াল হলো ফোন কলেজ ব্যাগে। কাল কলেজ থেকে ফেরার পর ফোন হাতে নেওয়া হয় নি। নিবে কিভাবে? হাতের যা অবস্থা।
মনও ভীষণ খারাপ ছিল। তাই ফোনের খোঁজও করা হয় নি।
সে উঠে গিয়ে ব্যাগের চেন খুলে ফোন বের করল। ফোন অন করতেই লকস্কিণে ভেসে উঠল আননোন নাম্বার থেকে আসা একটি ম্যাসেজ। তার ফোনে তো ম্যাসেজ আসে না। বন্ধুরা ম্যাসেঞ্জার নতুবা হটস্ এ্যাপে নক করে।নয়তো সরাসরি কল
করে। সে কৌতুহলবশত ম্যসেজটা সিন করল। তারপর ধীরে সুস্থে পড়ল,
-‘ভি-বেল্টের সঠিক ব্যবহার না জানলে সেটা ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। সেটা নেওয়া যা; না নেওয়াও তা। কলেজে এসে ছেলেদের থেকে গা বাঁচিয়ে চলা এক বুদ্ধিমতী মেয়ের কাজ। কিন্তু যারা সস্তা, তারা ব্যাপারটা আমলেই নেয় না।
ছেলে মেয়ের ফ্রেন্ডশীপ খুবই ভালো। তবে ছেলে হয়ে মেয়ের ভি-বেল্ট ধরে টানাটানি করা জঘন্যতম কাজ। আর জঘন্য কাজটা করার পরেও যদি সেটাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে বুঝতে হবে প্রশ্রয় দু’জনেরই আছে। তারা দু’জনেই চরম বেয়াদব। আর বেয়াদবের শাস্তি বেয়াদব হয়েই দিতে হয়।’
পরপর তিনবার ম্যাসেজটা পড়ল কুহু। তারপর যেই নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে সেই নাম্বারে কল দিলো। কল ঢুকল।
কল কাটার আগ মুহূর্তে রিসিভ হলো। সে আগ বাড়িয়ে কথা বলল না। ফোন কানে চেপে ধরে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল। সে জানতে চায়, যাকে ভাবছে সেই কি না। তার ধারণাকে সত্যি প্রমাণ করে এক পুরুষালি ঘুম জড়ানো কন্ঠস্বর কানে এসে ধাক্কা দিলো, ‘গোয়েন্দাগিরি শুরু হয়ে গেছে? তবে আপনার ধারণা সঠিক আমি ‘রিদ।’
কুহু কেন জানি চোখ বন্ধ করে নিলো। হাত রাখল বুকের বাঁ পাশে। বুকের ভেতর ধিড়িমধিড়িম করছে কেন বুঝল না সে।
এ আবার কেমন কথা? যাকে অপছন্দ তার নাম শুনে এমন হচ্ছে কেন? তাছাড়া রিদ নামে ডাকার পারমিশন কাউকেই দেয় না। তবে তাকে কেন শুধু রিদ বলে পরিচয় দিচ্ছে। এই লোকের মাথায় সমস্যা আছে। কুহুকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে
রিদওয়ান পাশ বালিশটা কাছে টেনে মুখ গুঁজল। মিটিমিটি হাসল। তার হাসিটা কেউই দেখল না যদি দেখত, মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকল। কুহু দাঁতে দাঁত চেপে থম মেরে বসে আছে।
তখন রিদওয়ান পুনরায় তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘হাতের ব্যথা কমেছে?’
কুহু এবারও নিশ্চুপ। তবে সে ধীরে ধীরে চোখ খুলে অদূরে রাখা ড্রেসিংটেবিলের আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আয়নার উপর ভীষণ বিরক্ত সে। আয়নাতে তার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। পরণে কালো রঙের কুঁচকানো টপস্ আর লং স্কার্ট। এলোমেলো চুল। তেলতেলে মুখ। ইশ! কেমন পাগলি পাগলি ভাব। সে সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাইরে তাকাল। এখনো বৃষ্টি ঝরছে। ধীরে ধীরে আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে। তবে তার মন আকাশে অভিমানের ঘনঘটা। এই মানুষটার উপরে অভিমান করা বৃর্থা জেনেও খুব অভিমান হচ্ছে। রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে দুটো কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু ঠিক করল সে কোনো কথা বলবে না। টু শব্দও করবে না। কাল রাতে রাগ করে রিদওয়ানের দেওয়া টেডিটাও কাছে নেয় নি। সেটাকে রুপকে ঘরে রেখে এসেছে। বলে এসেছে এটা আর নিবে না। কেউ যেন এটাকে তার রুমে রেখে না আসে। মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সে হাতের দিকে তাকাল। রেগে কলটা কাটতে গিয়ে মনে হলো কিছু বলা উচিত। বরং না বলাটাই হবে বোকামি। তখন সে বলল,
-‘ স্যার কিংবা ভাইয়ের বন্ধু কাউকেই কথাগুলো বলা ঠিক হবে না। তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমি ভি বেল্টের ব্যবহার খুব ভালো করে জানি। স্কুল লাইফ থেকে বেল্টের ব্যবহার করে আসছি। আর পরশুদিন ক্যান্টিনে যেটা ঘটেছে সেটা টোটালিই এক্সিডেন্ট। মিরাজ মোটেও ইচ্ছে করে কাজটা করে নি। কোনটা অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ আর কোনটা স্বেচ্ছায় করার স্পর্শ, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি আমার হয়েছে। আর
আমি ডাউনমার্কা স্টুডেন্ট হতে পারি, কারো মতো গড়গড় করে ইংলিশ বলতে না পারি, তবে নিজেকে খুব সন্মান করি। আর যে নিজেকে সন্মান করে সে কখনো কাউকে তার বডি দেখিয়ে সস্তা শো অফ করে না। এখন হয়তো বলবেন কেন মিরাজের সঙ্গে চকলেট নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে গেলাম?
কেন ভুলে গেলাম আমি মেয়ে, ব্লা ব্লা। ফ্রেন্ডশীপে, মারামারি কাড়াকাড়ি, মান অভিমান, দুষ্টুমি খুঁনসুটিতে কমন ব্যাপার।
আমার ফ্রেন্ডের মধ্যে মিরাজ আর পিয়াস আমাদের বোনের মতো আগলে রাখে৷ স্কুল লাইফ থেকে দেখে আসছি তাদের, কখনো নোংরা মানসিকতার মনে হয় নি। অযাচিত স্পর্শ’ও করে নি কখনো। কিন্তু সেদিন যা হয়েছে দু’জনের অনিচ্ছায়।
সেই মুহূর্তে মিরাজ সরিও বলেছে বহুবার। শুধু পায়ে ধরতে বাকি রেখেছে ছেলেটা। এরপরেও যদি সেই ঘটনায় ওভার রিয়েক্ট করতাম, তাহলে সত্যিই ঠিক করতাম? এই রিয়েক্টে
আমাদের এতদিনের ফ্রেন্ডশীপের ভীতটা নড়বড়ে হয়ে যেত না? বন্ধুত্ব নষ্ট হতো না? জীবনে হয়তো অনেক বন্ধু পেতাম,
তবে মিরাজ, পিয়াসের মতো এত কেয়ারিং, লয়্যাল, কোনো বন্ধু পেতাম না। তখন সেই মুহূর্তটা কোনোমতে এড়িয়ে যেতে আমরা সকলে অপ্রস্তুতভাবে হেসেছিলাম। অপ্রস্তুতের হাসি আর মনপ্রাণ খুলে হাসা এক নয়। দুটোই ভিন্ন। তবে আপনি কথাটা যেভাবে বললেন, শুনে মনে হলো মিরাজ ইচ্ছে করে আমার ভি বেল্ট ধরে টানাটানি করেছে। টানাটানিতে আমার বেল্ট সম্পূর্ন খুলে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছে। আসলেই কী তাই? উহুম, মোটেও না। অসাবধনতায় বেল্টের হুকটা খুলে গেছে। ব্যাপারটা বুঝে মিরাজ পিয়াস অন্যদিকে ঘুরে গেছে। আর দৌড়ে এসে আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়েছে নিকিতা আর চন্দ্রা। সব দেখায় সত্যি থাকে না। কিছু কিছু দেখা ভুল হতে পারে। বেয়াদবকে বেয়াদব হয়েই শাস্তি দিয়েছে পূর্ণের কাজ করেছেন। তবে পরবর্তীতে যা দেখবেন আগে সত্যটা জেনে নিবেন। নয়তো আমিও চুপ থাকব না।’
-‘কি করবে শুনি?’
-‘স্যার তার স্টুডেন্টকে শিক্ষা দিতে পারে। স্টুডেন্ট হয়ে তো আর স্যারকে শিক্ষা দেওয়া যায় না। দিতেও পারব না। তবে
আমার ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে জন্মের শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব। এই বলে দিলাম।’
-‘বুঝলাম হাতের ব্যথা কমেছে। সেইম সেইম আরেক ডোজ নিতে পারবে।’
-‘দেখুন স্যার পারসোনাল ইশু ক্রিয়েট করে অযথা ঝামেলা সৃষ্টি করবেন না। আমি শিক্ষা বলতে বুঝিয়েছি..!’
-‘তোমার থেকে শিক্ষা নিতে আমি গতকাল রাতেই তোমার বাসায় চলে এসেছি। এখন গেস্ট রুমে আছি। আজকে সারা দিন এখানেই থাকব। তুমি বরং আমাকে স্যার হিসেবে নয়, ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে কি শিক্ষা দেবে সেটা ঠিক করে নাও। আমিও দেখি তোমার শিক্ষার ধারা কতটা কার্যকরী।’
-‘আপনি আমাদের বাসায়? কিন্তু কেন?’
-‘কেন আমার আসা বারণ? আর এত বড় বড় লেকচার তো শুনতে চায় নি। শুধু ওয়ানিং দিয়েছি, এসব কার্যকলাপ যেন আমার চোখে না পড়ে। যদি পড়ে তাহলে মার কাকে বলে তাই বোঝাব।’
-‘কেন মারবেন আপনি হ্যাঁ? সবার ভি বেল্ট দেখার চাকরি পেয়েছেন আপনি? সরকার আপনাকে এই চাকরি দিয়েছে? লজ্জা করে না একটা মেয়ের ভি বেল্টের দিকে তাকাতে?’
-‘কেউ যদি দেখার সুযোগ করে দেয় তাহলে কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকা যায়?’
-‘স্যার হয়ে এসব বলতে মুখে বাঁধছে না? এই শিক্ষা নিয়ে গড়গড় করে ইংলিশ বলেন?’
-‘কলেজের গেটে প্রবেশমাত্র আমি তোমার স্যার। আর
বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি তোমার ‘কেউ না।’ কথাটা বারবার বলতে পারব না। ফাস্ট এ্যান্ড লাস্ট এই একবারই
বলে দিলাম। কথাটা তোমার জং ধরা মস্তিষ্কে গেঁথে নাও। আর স্যার হয়ে কথা গুলো বলি নাই। স্যার হয়ে বললে তখন কলেজেই বলতে পারতাম। বলেছিলাম, শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে। শুভ মানে ভালো আর শুভাকাঙ্খী মানে মঙ্গলকামী। এবার বুঝলে? আর সবার দিকে তাকানোর মতো সময়, আমার নেই। তুমি আমার চেনা মানুষ। কাছের মানুষও বলা চলে। এজন্যই বলেছিলাম। নয়তো নেকেড হয়ে ঘুরলেও আমার সমস্যা ছিল না।’
এই কথার জবাব দিতে পারল না কুহু। তার আগে কল কেটে গেল। সে হতবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। সত্যিই রিদওয়ান তাদের বাসায় নাকি জানতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কিন্তু ড্রয়িংরুম, গেস্ট রুম, রুপকের রুমসহ আরো কয়েকটা জায়গা খুঁজেও পেল না। তবে কি সে মিথ্যা বলল?
তাই হবে! হয়তো মজা নিচ্ছে। সে নিজের প্রতি নিজে বিরক্ত হয়ে রুমের দিকে পা বাড়াতেই রান্নাঘর থেকে আম্মুর কথা শুনতে পেল। কিছু একটা ভেবে রান্নাঘরে কাজ উঁকি দিতেই দেখে সত্যিই রিদওয়ান দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে ইসমত আরা বেগম পরোটা বেলতে বেলতে বললেন,
-‘কুহু এসেছিস? এই দেখ কে এসেছে? কালকে ছেলেটাকে আমি নিজে গিয়ে জোর করে বাসায় নিয়ে এসেছে। আমার এত বড় বাসা থাকতে নাকি সে হোটেলে থাকবে। শুনো মা, এখন যাও ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে এসো। আর আজ সন্ধ্যা থেকে প্রতিদিন রিদওয়ানের কাছে পড়তে বসবে। সব বিষয় সে হাতে ধরে দেখিয়ে দেবে, বুঝিয়ে দেবে। এবার সিরিয়াস হতে হবে। ভালো করে পড়তে হবে। জানোই তো, পড়াশোনা করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে।’
কুহু কিয়ৎকাল তার আম্মুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কি বলবে শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না সে।এদিকে রিদওয়ান ভদ্রসভ্য যুবকের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তখন কুহু নিজেকে সামলাতে পারল না। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘রিসাত মামাও প্রচুর পড়াশোনা করত। ক্লাসের ফাস্ট বয় ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দিতে গিয়েই গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেল। এর দ্বারায় বোঝা যায়, ‘পড়াশোনা করে যে গাড়ি চাপা মরে সে।’ তাই আমি মরবোও না, পড়বোও না।’
(বি:দ্র:- সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে যদি 1k রিয়েক্ট আসে তাহলে আরেকটা পর্ব দিবো। এখন আরেক পর্ব নির্ভর করছে ঠিক আপনাদের রেসপন্সের উপর)
To be continue………!!
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/