নীলের_পরি (২)

0
17

#নীলের_পরি (২)

প্রান্তের সাথে ই নাকি তার বিয়ে! এই কথা টা পরি কিছুতেই মাথাতে নিতে পারছে না। আর তাছাড়া এমন কি বোঝা হয়ে গেল সে যার কারণে এত তাড়াতাড়ি বিয়ের পিরিতে বসতে হবে তাকে! পরি নির্বাক হয়ে কিছু সময় তাকিয়ে রইল। যেই আম্মু তার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে সাজিয়ে দিত আজ সেই আম্মু তার জীবনের ভয়ঙ্কর রূপের সাজসজ্জা নিয়ে এসেছেন! পরি তার মায়ের কাছে নত হয়ে বসল। মা মেয়ে কে এভাবে বসতে দেখে খানিকটা চমকে গেল। পরিকে দু হাতে উঠিয়ে বললেন, “তোর কি কারো সাথে কোনো সম্পর্ক আছে?”

সম্পর্ক শব্দ টা পরির শরীর কে নাড়িয়ে দিল। সম্পর্ক, কাউ কে এক পাক্ষিক ভালোবাসা কে কি কোনো সম্পর্ক বলা যায়? নাকি নিজের ভালোবাসা টা ,না বলতে পারা কে সম্পর্ক বলা যায়? দুটোর উত্তরই সম্ভবত না হয়। তাই সে কিছুই বলতে পারল না। এই প্রশ্নের জবাব আদৌ কি আছে তার কাছে?

পরির চোখ দিয়ে অনড়গল পানি ঝরছে। রাহেলা মেয়ের মাথা তে হাত দিয়ে বললেন, “তাহলে কি সমস্যা মা? প্রান্ত কে বিয়ে কেন করতে চাচ্ছিস না।”

পরি কিছু বলতে পারল না। কারণ ওর কথা এই মুহূর্তে কেউ বিশ্বাস করবে না। তবু অঝর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে বলল
“প্লিজ আম্মু আমি বিয়ে করব না। প্লিজ আম্মু প্লিজ।”

পরির মা কিছু বললেন না। শুধু ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার তো এক চিন্তা বৃদ্ধ মানুষের ইচ্ছে ফেললে তার সংসারে অকল্যাণ না হয়ে যায়। আর তাছাড়া মেয়ে কে আপন জনের কাছে বিয়ে দেওয়া মানে চাঁদ হাতে পাওয়া।
কখনো কোনো সমস্যা হবে না। তাহলে কেন পরি বিয়ে করতে চাচ্ছে না? না করার কোন কারণ ও তো দেখাতে পারল না। মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে গেলেন রাহেলা। পরি মায়ের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টি তে চেয়ে রইল। তারপর ই হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগল। এ কেমন লীলা খেলা হচ্ছে তার সাথে। বার বার কেন জীবন তাকে হারিয়ে দেয়? প্রকৃতির কাছে কি অন্যায় করেছে সে যার দরুন বারংবার মৃ ত্যু যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে তাকে। সহ্য হচ্ছে না তার , ঘরের সমস্ত জিনিস ছুঁড়ে ফেলে দিল সে।
মনে হচ্ছে কোন এক ম র ন খেলায় মেতে উঠেছে সে।
হাতের বেশ কয়েক জায়গায় খানিকটা কে টে গেল তার।
কিন্তু এই ব্যাথা টা কে ব্যাথা মনে হচ্ছে না, মনের আ ঘা ত টা যে বড্ড বেশি। আজ পরি নিজে ও অবাক হয়ে হাতের লাল র ক্তে র দিকে তাকিয়ে আছে। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে থাকলে ও পরি কোনো কালেই নিজের র ক্ত সহ্য করতে পারত না।
একটু ব্যাথা পেলেই , পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিত। আর আজ এত র ক্ত ও তাকে বিন্দু মাত্র হেলাতে পারছে না। কি অদ্ভুত ব্যপার!

মিসেস রাহেলা একটু আগে এসে জোড় করে শাওয়ার এ পাঠিয়েছেন পরি কে। কোন মতে গোসল করে পরি বেডে হেলান দিয়ে হাঁটু তে মাথা গুঁজে দিয়েছে। তার পৃথিবী কোথাও গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে। কোনো একজন কে খুব করে মনে পড়ছে তার। কিন্তু হাজারো ইচ্ছে রা সব চাপা পড়ে গেছে কোন এক কিন্তুর মাঝে। কেন এত টা দূরত্ব সৃষ্টি করেছিল সে? ভালোবাসার কথা টা ও তাকে বলা হয় নি।
একজন পরিচিত মানুষ হয়ে ও কি কথা বলতে পারত না সে? কেন কেন কেন এমন হলো তার সাথে। পরি দরজা দিয়ে কারো রুমে ঢোকার শব্দ পেয়ে, চোখ মুছে নিল।
সে আর কাঁদবে না, কিছুক্ষণ পর তার পুরো পৃথিবী ই তো কান্না তে মুরে যাবে। এখন না হয় নাই কাদঁল সে। হাঁটু থেকে মাথা উঠিয়ে দেখল মিসেস রাহেলা এসেছেন, আর হাতে রয়েছে মেডিকেল বক্স। মিসেস রাহেলা বেডে বসতেই পরি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “এই সব এর কোনো দরকার ছিল না আম্মু।”

মিসেস রাহেলা মেয়ের হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধতে বাঁধতে বললেন, “তা বললে কি করে হয়। কতটা কে টে গেছে, তার উপর ঐ সব ভারি জামা কাপড় ও তো পড়তে হবে।”

মায়ের কথা তে তাচ্ছিল্যর হাসি হাসল পরি। যার কথার কোনো মূল্য পাচ্ছে না, তার সামান্য ব্যাথার মূল্য দেখানো টা আই ওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে রাহেলা মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে উঠে গেলেন।

ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পরিদের গ্রামের বাসা।
কিছুক্ষণ হলো তারা এসেছে, পরি কে একটা রুমে বসিয়ে দেওয়া হলো। বড্ড চেনা রুম টা ও আজ অচেনা মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ই বিউটিশিয়ান এসে গেল। পরির বড় ফুপি এসে পরির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “মা আজ থেকে তুই আমার বাড়ির বউ হবি রে।”

পরি নিছক ই হাসল,যেই হাসির মানে ‘এই অদ্ভুত বিদঘুটে ভালোবাসা দেখানোর নাটক টা না করলে ও পারতে ফুপি।
বলি দেওয়ার জন্য আমাকে এখানে আনা হয়েছে, তা আমি খুব ভালো করেই জানি।’

বিউটিশিয়ান লাল বেনারসিটা হাতে নিয়ে এগিয়ে আসতেই পরি আঁতকে ওঠল। চোখ থেকে অঝর ধারায় বর্ষন নেমেছে। এই লাল বেনারসি পরেই তো , একজনের বউ হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিল সে। কত শত রঙিন সে স্বপ্ন, নেই কোনো ঝঞ্ঝাট আছে শুধু শান্তি। কিন্তু আজ এই লাল বেনারসি পরেই সে অন্যের জন্য বউ সাজবে? না না এটা ওর দ্বারা সম্ভব না। কিছুতেই পারবে না এটা , কোনো ভাবেই না।

পরি কে আঁতকে উঠতে দেখে রাহেলা বললেন, “কি হয়েছে?
এমন করছিস কেন মা?”

পরি ডান হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল, “আমি বেনারসি পরতে পারব না।”

মা চোখ ছোট করে বললেন,” মানে টা কি?’

পরি চিৎকার করে বলল, “আমি পারব না এই শাড়ি পরতে, কিছুতেই পারব না।”

পরির বড় ফুপি সুলতানা ব্যাপার সুবিধার না বুঝে বুদ্ধি খাটিয়ে বললেন, “আহা পরতে চাইছে না তো পরবে না।
ওকে বরং থ্রি পিস দিচ্ছি সেটাই পরে নিক আর বিউটিশিয়ান রা সাজিয়ে দিক।”

মিসেস রাহেলা ভাবলেন এখন ভনিতা করলে হিতে বিপরীত হবে, তার থেকে ভালো বিয়ে টা হয়ে যাক। কখন না অভিশাপ লেগে যায়। ওনার তো এই একটাই ভয়।

মিসেস রাহেলা সায় দেওয়াতে পরির বড় ফুপি টক টকে জাম রঙের একটা গরজিয়াজ থ্রি পিস দিলেন। বোধহয় আগেই আনিয়েছিলেন। বিউটিশিয়ান রা পরি কে থ্রি পিসের সাথে মেচিং করে সাজিয়ে দিল। পরি এমন ভাবে বসে আছে মনে হচ্ছে এ কোনো পুতুল কে সাজানো হচ্ছে। দেহে বোধহয় প্রান নেই, এ কেমন মানব শরীর। পরি কে সাজিয়ে বিউটিশিয়ান রাই চমকে গেল। হালকা সাজেই এতটা মারাক্তক লাগছে পরি কে , মনে হচ্ছে সত্যি ই কোনো অপ্সরী নেমে এসেছে। কিন্তু এত সুন্দরের মাঝে ও পরি নামটা সার্থকতা পেল না শুধু মাত্র অধর কোণে একটু হাসির অভাবে। পরির সৌন্দর্য কে মনে হচ্ছে প্রাণহীন। বিউটিশিয়ান রা সাজিয়ে চলে যেতেই পরি এক টুকরো খাম বের করল যার মাঝে ইংরেজি অক্ষরে ছোট ছোট করে লেখা ‘Sorry’

কিছুক্ষণ আগেই পরিকে অনুষ্ঠান মঞ্চে বসানো হয়েছে।
কাজী সাহেব দোয়া পড়ে বিয়ের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। পরির ভাবনা তে শুধু একটি মানুষ ই বিভোর হয়ে আছে। ইস আজকে যদি তার সাথে বিয়ে হত পরির, তাহলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত? কিন্তু ভাগ্য যে পরি কে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা বোঝা দায়। কাজী সাহেব যখন পরি কে কবুল বলতে বললেন ঠিক সেই সময়ে ই গু লি র শব্দ পাওয়া গেল। আতঙ্কে সবাই উত্তকে উঠল, হৈ হুল্লর শুরু হয়ে গেল। আবার গু লি র শব্দ হতেই সবাই থমকে গেল।
স্টেজ এর গেট দিয়ে কালো পোশাক ধারী প্রায় ২০ জন ব ন্দু ক হাতে ভেতরে ঢুকছে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেছে সবাই। অন্যদিকে পরির যেন এতে কোন হেলদোল নেই , সে তো মজে আছে তার ভাবনাতে। কালো পোশাক ধারী লোকদের মাঝ থেকে উঠে এল এক সুদর্শন তরুন। সাদা রঙের শার্ট এর সাথে ক্রিম কালারের ব্লেজার। কি স্নিগ্ধ রূপ তার,অনেক নায়ক কেই হার মানাতে সক্ষম শ্যাম রঙা পুরুষ টি। এই আতঙ্কের মাঝে ও তরুনীরা ছেলেটাকে দেখতে মিস করল না। কিন্তু আঁতকে ওঠল তখনি যখন ছেলেটার হাতে বন্দুক দেখল। হঠাৎ করেই ছেলেটা স্টেজ এ উঠে গেল, আর পরির পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। চারপাশের লোকজনের কৌতুহল সীমা নেই। অফুরন্ত কৌতুহল নিয়ে সবাই তাকিয়ে আছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে কেউ কোনো কথা বলতে ও পারছে না। তাই চোখ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে।বেশ কিছুক্ষণ গত হওয়ার পর পরির ধ্যান ভাঙে।
পরি সামনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠে। তার সামনে হাঁটু গেড়ে কেউ একজন বসে আছে। মুখ দেখার জন্য হালকা ঝুকতেই পরির সমস্ত শরীর কাঁপনি দিয়ে উঠে।

‘নীল! ন ওনি কি করে আসবেন? আর কেন ই বা আসবেন, নিশ্চয়ই পরি কোনো স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এই মুহূর্তে মন খুব করে চাইছে,স্বপ্ন টা যেন শেষ না হয়ে যায়। পরি এক দৃষ্টি তে নীলের দিকে চেয়ে থাকে। যখনি মনে আসে আজ অন্য জনের সাথে তার বিয়ে হয়ে যাবে তখনি পরি জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। নীল দুহাতে জড়িয়ে ধরে পরি কে। না চাইতে ও নীলের চোখের কার্নিশে পানি জমে যায়। আজ তার জন্য ই মেয়েটার এই অবস্থা শুধু মাত্র তার জন্য। কী করে পারল সে মেয়েটিকে এত কষ্ট দিতে? যাকে নিজের জীবনের সব টুকু দিয়ে ভালোবেসে গেল, নিজের অজান্তেই তাকে কষ্ট দিয়ে দিল। নীল পরির মাথা তে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আর কোন কষ্ট পেতে দিবে না তার পরি কে। কিছুতেই না কোনো ভাবেই না।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

| ঘুমিয়ে যাওয়ায় গতরাতে গল্প দিতে পারি নি। যাই হোক যারা এখনো “বিয়ে থা” গল্পটি পড়েন নি পড়ে ফেলুন দ্রুত।|
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/280960271131541/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here